14-06-2022, 04:21 PM
পুলিশকে জানিয়ে দিয়েছে ও ,অন্ধকারে কাউকে চিনতে পারেনি ও। সত্যিই চিনতে পারেনি ওর জীবনটা তছনছ করে দেওয়া মানুষ দুটো অথবা চারটেকে।
শুধু শহরের রাস্তায় কোনো প্রতিবাদী মোমবাতি মিছিল বেরোয়নি ওকে কেন্দ্র করে,কারণ ধর্ষকরা ওকে জীবিত ছেড়েছিল,মেরে ফেলেনি।
ইউনিভার্সিটির লাস্ট পরীক্ষার জন্য পাগলের মত খেটে চলছিল ও। কিন্তু পড়তে বসলেই শুধু সেই কালো মুখগুলো দৃষ্টিপথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিলো। নোনতা জলে ভিজে যাচ্ছিল বইয়ের পাতা।
বাবার সাথে ইন্দ্রানী বসে আছে একজন সাইক্রিয়াটিস্ট এর চেম্বারে। বাবার শরীরটাও যেন ভেঙে গেছে এই সাত দিনে। সেই রাগী রাগী ভাবটা চলে গিয়ে কেমন বিধস্ত চেহারা নিয়েছে। বাবা নিজের মুখটা ঢেকে কেঁদে বলেছিল,মেয়ের বাবার বড় জ্বালা।
ওটা শুনেই বোধহয় সব থেকে বেশি কষ্ট হয়েছিল ইন্দ্রানীর। ওর রাশভারী বাবাকে ভেঙে পড়তে দেখে ভীষণ কষ্ট হয়েছিল ওর।
ডক্টর দিগন্ত রায় বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন ইন্দ্রানীর দিকে। অপলক ...
তারপর বললেন,কি মনে হয় তোমার,রেপ মানে কি?
মনের বিরুদ্ধে জোর করে যে কোনো কাজ! তাই তো?
ঘাড় নাড়লো ইন্দ্রানী।
দিগন্ত বললো,একটু ভালো করে ভেবে বলো তো...জীবনে কত বার তুমি নিজের মনের বিরুদ্ধে গিয়ে কোনো কাজ করেছ?
ইন্দ্রানী বললো, হ্যাঁ করেছি। আমার ইচ্ছে ছিল ইকোনমিক্স অনার্স নিয়ে পড়বো। কিন্তু বাবার ইচ্ছেয় ইংলিশ পড়ছি।
ডাক্তারের মুখে মিষ্টি হাসি। এটা রেপ নয়?
কোনোদিন হয়তো ভেটকি মাছ খেতে না, কারোর অনুরোধে জোর করে ভেটকি ফ্রাই খেলে, সেটাও কিন্তু তোমার মনের বিরুদ্ধেই।
ওই দিন রাস্তায় তুমি মনের বিরুদ্ধেই কিছু মানুষের নোংরামির স্বীকার হয়েছ, কষ্ট হয়েছে তোমার। কিন্তু বাকিগুলোর মত এটা নিয়ে এত কুন্ঠিত কেন তুমি?
বছর সাইত্রিশের ডাক্তারের ঝুলপির কাছে দু একটা সিলভার লাইন। চোখে পাওয়ারের চশমা। শুধু হাসিটা অমলিন। পৃথিবীতে কিছুই যেন খারাপ নেই।
শরীরের বাকি রোগগুলো যদি সারতে পারে তাহলে এটাও সারবে।
কাঁদছিলো ইন্দ্রানী। ফুঁপিয়ে কেঁদে ফেলেছিল।
দিগন্ত বললো, ইন্দ্রানী ..পবিত্রতা শরীরের মত ক্ষণে ক্ষণে রোগে পড়া জায়গায় থাকে না,থাকে মনে।
ইন্দ্রানী জানে না কেন! তবুও একমাত্র দিগন্তর সাথে কথা বললেই ও নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার প্রাণ শক্তি খুঁজে পাচ্ছে।
প্রায় রেগুলারই ফোনে কথা বলে ওরা। ডাক্তার নয় ,দিগন্ত যেন খুব কাছের বন্ধু।
পরীক্ষাটা ভালোই দিয়েছে ইন্দ্রানী। তবে এই ভালো পরীক্ষা দেবার জন্য সম্পুর্ন কৃতিত্ব দিগন্তর। ও যদি এভাবে শক্তিসঞ্চার না করতো, তাহলে হয়তো কোনোদিনই মাথা তুলে দাঁড়াতে পারতো না ইন্দ্রানী।
আজ রাতে দিগন্তের কোনো একটা মিটিং আছে। তাই আজ ইন্দ্রানী কল করেনি ওকে। এই প্রথম ইন্দ্রানী বুঝতে পারলো,দিগন্তকে ইন্দ্রানী অন্য চোখে দেখতে শুরু করেছে। খুব কাছের বন্ধুর বেশিই কিছু।
দিগন্তর বয়েস প্রায় সাইত্রিশ। ইন্দ্রানীর থেকে তেরো বছরের বড়। হয়তো স্ত্রী সন্তানও আছে ওর। ইন্দ্রানীর অসহায় অবস্থায় ওকে সাহায্য করেছে বলেই ,এই ধরণের ভাবনাটা বড্ড ভুল হচ্ছে । কিন্তু কেন কিছুতেই ইন্দ্রানী ওকে ভুলতে পারছে না। ওর বলা সব কথাগুলো বারবার মনে পড়ে যাচ্ছে ওর।
ইন্দ্রানী, জীবনে কখনো ছোট্ট ডোবাকে ভালোবেসো না। ডোবাকে করুনা করো কিন্তু ভালোবেসো সমুদ্রকে। সমুদ্র তোমাকে তার বিশালতা দিয়ে প্রসারতা চেনাবে। আর ডোবা তোমাকে চেনাবে সংকীর্ণতা।
কেন কে জানে আজকাল ইন্দ্রানীর সৌনককে ডোবার মতোই মনে হয়। একটা অন্তত সাধারণ সংকীর্ণ মনের ছেলে। যে ভালোবাসার অর্থই বোঝে না।
রাত তখন প্রায় বারোটা।
আর পারছে না ইন্দ্রানী। উত্তরটা আজ ওকে পেতেই হবে। এতক্ষনে হয়তো দিগন্ত ফিরেছে মিটিং থেকে। হয়তো স্ত্রীর সাথে নিশ্চিন্তে ঘুমুচ্ছে। ফোন করাটা কি ঠিক। তাছাড়া ব্যক্তিগত কথা তো শুধু ইন্দ্রাণীই বলতো ,দিগন্ত তো নিজের ব্যাপারে কখনো কিছু বলেনি।
প্রতিটা রিঙের আওয়াজে বুকের ভিতরে তোলপাড় হচ্ছে ইন্দ্রানীর। অবশেষে ঘুম গলায় ফোনটা ধরলো দিগন্ত।
কি হয়েছে ইন্দ্রানী?
কোনো প্রবলেম?
এ প্রান্তে শুধুই ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজ।দিগন্ত ধীর গলায় বলল,কেঁদো না ইন্দ্রানী। আমি জানি তুমি কি বলতে চাইছো।
আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো। হয়তো আমিও...কিন্তু আমাদের বয়েসের পার্থক্যটা কখনো ভেবেছো? তোমার সামনে সুন্দর ভবিষ্যৎ।
ইন্দ্রানী কান্না ভেজা গলায় বলল, মনের বয়েসটা বুঝি গুরুত্বপূর্ণ নয়? শরীরের বয়েসটাই বুঝি সব?
দিগন্ত খোলা গলায় হেসে বললো, আমি অনাথ। খুব ছোট বেলায় বাবা মা মারা গিয়েছিলেন,পিসির কাছেই মানুষ হয়েছি।
কথা শেষ করতে না দিয়েই ইন্দ্রানী বললো,যদি তেরো বছরের পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও তোমাকে ছেড়ে আমি তেরো সেকেন্ডও না থাকতে পারি, সেটাকে কি বলে ডক্টর দিগন্ত রায়?
বেশ কয়েকমাস হয়ে গেছে ইন্দ্রানী আর দিগন্তর সুখী দাম্পত্যের। ইন্দ্রানী এখন একটা ইংলিশ মিডিয়াম কলেজের শিক্ষিকা।
ইন্দ্রানীর গোছানো সংসারের আদরে এলোমেলো দিগন্ত এখন পরিপূর্ণ।
সেদিনও ছিল এমনি শীতের সন্ধ্যে। দিগন্ত চেম্বারে। চেম্বার সেরে দুজনের যাওয়ার কথা ছিল শপিংএ। গাড়ি নিয়েই ওর চেম্বারের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল ইন্দ্রানী।
হঠাৎই চিৎকারটা কানে এলো ওর। গাড়ি দাঁড় করাতেই চোখে পড়লো একটা গোলাপি শাড়ির অল্পবয়সী মেয়ে..পাগলের মত দিকবিদিক জ্ঞান শুন্য হয়ে ছুটছে। শাড়ীর কয়েক জায়গায় ছেড়া। ইন্দ্রানীর পাঞ্জাবি ড্রাইভার সামনে দাঁড়াতেই পিছনের ছেলে দুটো ছুট লাগলো। মেয়েটি ক্লান্ত...
ইন্দ্রানী গাড়িতে তুলে নিয়ে গেল দিগন্তর চেম্বারে।
প্রাথমিক চিকিৎসার পরেই দিগন্ত বললো, মানসিক ভাবে বিধস্ত। বাড়িতে খবর দাও ইন্দ্রানী।
দিগন্তই ফোন করেছে ওর বাড়িতে।
মেয়েটি কান্না ভেজা গলায় বলল,আজ যদি তুমি না থাকতে দিদি তাহলে আমার সর্বনাশ হয়ে যেত।
হন্তদন্ত হয়ে যে মানুষটি ছুটে চেম্বারে ঢুকছে ,তাকে বছর খানেক আগে জন্মদিনের সন্ধ্যেতে শেষ দেখেছিল ইন্দ্রানী।
মল্লিকা বলে মেয়েটি তাহলে সৌনকের স্ত্রী।
সৌনক ঢুকেই জড়িয়ে ধরেছে নিজের স্ত্রীকে।
ভাগ্যিস...ভাগ্যিস মল্লিকাকে বাঁচাতে পেরেছিল ইন্দ্রানী। নাহলে কি করতো সৌনক! অপবিত্র ধর্ষিতা স্ত্রী কে কি ডিভোর্স করতো!
মল্লিকা কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,এই দিদিই আমাকে আজ..
সৌনকের চোখে বিস্ময়। কোনটা দেখে বিস্ময়? ইন্দ্রানীর সিঁথির লাল রংটা দেখে কি?
ধন্যবাদ...সৌনকের কথাটা শেষ করতে না দিয়েই ইন্দ্রানী বললো,আমার হাজবেন্ড ডক্টর দিগন্ত রায়কে থ্যাংকস জানান। ওই আপনার ওয়াইফের ট্রিটমেন্ট করেছে এই মুহূর্তে।
সৌনকের বিস্মিত ভাবটা কাটার আগেই ইন্দ্রানী বললো, চলো দিগন্ত...আমাদের শপিংয়ের দেরি হয়ে যাচ্ছে।
ইন্দ্রানীর মনে পড়ে গেলো ,দিগন্তর বলা সেই কথাটা..ইন্দ্রানী ডোবাকে নয় সমুদ্রকে ভালোবাসো। যে তোমাকে বিশালতা শেখাবে...
ডোবাকে করুণা কোরো, সমুদ্রকে আলিঙ্গন।
সমাপ্ত
©এক চিলতে রোদ্দুর-কলমে-অর্পিতা সরকার
সমাপ্ত
শুধু শহরের রাস্তায় কোনো প্রতিবাদী মোমবাতি মিছিল বেরোয়নি ওকে কেন্দ্র করে,কারণ ধর্ষকরা ওকে জীবিত ছেড়েছিল,মেরে ফেলেনি।
ইউনিভার্সিটির লাস্ট পরীক্ষার জন্য পাগলের মত খেটে চলছিল ও। কিন্তু পড়তে বসলেই শুধু সেই কালো মুখগুলো দৃষ্টিপথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিলো। নোনতা জলে ভিজে যাচ্ছিল বইয়ের পাতা।
বাবার সাথে ইন্দ্রানী বসে আছে একজন সাইক্রিয়াটিস্ট এর চেম্বারে। বাবার শরীরটাও যেন ভেঙে গেছে এই সাত দিনে। সেই রাগী রাগী ভাবটা চলে গিয়ে কেমন বিধস্ত চেহারা নিয়েছে। বাবা নিজের মুখটা ঢেকে কেঁদে বলেছিল,মেয়ের বাবার বড় জ্বালা।
ওটা শুনেই বোধহয় সব থেকে বেশি কষ্ট হয়েছিল ইন্দ্রানীর। ওর রাশভারী বাবাকে ভেঙে পড়তে দেখে ভীষণ কষ্ট হয়েছিল ওর।
ডক্টর দিগন্ত রায় বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন ইন্দ্রানীর দিকে। অপলক ...
তারপর বললেন,কি মনে হয় তোমার,রেপ মানে কি?
মনের বিরুদ্ধে জোর করে যে কোনো কাজ! তাই তো?
ঘাড় নাড়লো ইন্দ্রানী।
দিগন্ত বললো,একটু ভালো করে ভেবে বলো তো...জীবনে কত বার তুমি নিজের মনের বিরুদ্ধে গিয়ে কোনো কাজ করেছ?
ইন্দ্রানী বললো, হ্যাঁ করেছি। আমার ইচ্ছে ছিল ইকোনমিক্স অনার্স নিয়ে পড়বো। কিন্তু বাবার ইচ্ছেয় ইংলিশ পড়ছি।
ডাক্তারের মুখে মিষ্টি হাসি। এটা রেপ নয়?
কোনোদিন হয়তো ভেটকি মাছ খেতে না, কারোর অনুরোধে জোর করে ভেটকি ফ্রাই খেলে, সেটাও কিন্তু তোমার মনের বিরুদ্ধেই।
ওই দিন রাস্তায় তুমি মনের বিরুদ্ধেই কিছু মানুষের নোংরামির স্বীকার হয়েছ, কষ্ট হয়েছে তোমার। কিন্তু বাকিগুলোর মত এটা নিয়ে এত কুন্ঠিত কেন তুমি?
বছর সাইত্রিশের ডাক্তারের ঝুলপির কাছে দু একটা সিলভার লাইন। চোখে পাওয়ারের চশমা। শুধু হাসিটা অমলিন। পৃথিবীতে কিছুই যেন খারাপ নেই।
শরীরের বাকি রোগগুলো যদি সারতে পারে তাহলে এটাও সারবে।
কাঁদছিলো ইন্দ্রানী। ফুঁপিয়ে কেঁদে ফেলেছিল।
দিগন্ত বললো, ইন্দ্রানী ..পবিত্রতা শরীরের মত ক্ষণে ক্ষণে রোগে পড়া জায়গায় থাকে না,থাকে মনে।
ইন্দ্রানী জানে না কেন! তবুও একমাত্র দিগন্তর সাথে কথা বললেই ও নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার প্রাণ শক্তি খুঁজে পাচ্ছে।
প্রায় রেগুলারই ফোনে কথা বলে ওরা। ডাক্তার নয় ,দিগন্ত যেন খুব কাছের বন্ধু।
পরীক্ষাটা ভালোই দিয়েছে ইন্দ্রানী। তবে এই ভালো পরীক্ষা দেবার জন্য সম্পুর্ন কৃতিত্ব দিগন্তর। ও যদি এভাবে শক্তিসঞ্চার না করতো, তাহলে হয়তো কোনোদিনই মাথা তুলে দাঁড়াতে পারতো না ইন্দ্রানী।
আজ রাতে দিগন্তের কোনো একটা মিটিং আছে। তাই আজ ইন্দ্রানী কল করেনি ওকে। এই প্রথম ইন্দ্রানী বুঝতে পারলো,দিগন্তকে ইন্দ্রানী অন্য চোখে দেখতে শুরু করেছে। খুব কাছের বন্ধুর বেশিই কিছু।
দিগন্তর বয়েস প্রায় সাইত্রিশ। ইন্দ্রানীর থেকে তেরো বছরের বড়। হয়তো স্ত্রী সন্তানও আছে ওর। ইন্দ্রানীর অসহায় অবস্থায় ওকে সাহায্য করেছে বলেই ,এই ধরণের ভাবনাটা বড্ড ভুল হচ্ছে । কিন্তু কেন কিছুতেই ইন্দ্রানী ওকে ভুলতে পারছে না। ওর বলা সব কথাগুলো বারবার মনে পড়ে যাচ্ছে ওর।
ইন্দ্রানী, জীবনে কখনো ছোট্ট ডোবাকে ভালোবেসো না। ডোবাকে করুনা করো কিন্তু ভালোবেসো সমুদ্রকে। সমুদ্র তোমাকে তার বিশালতা দিয়ে প্রসারতা চেনাবে। আর ডোবা তোমাকে চেনাবে সংকীর্ণতা।
কেন কে জানে আজকাল ইন্দ্রানীর সৌনককে ডোবার মতোই মনে হয়। একটা অন্তত সাধারণ সংকীর্ণ মনের ছেলে। যে ভালোবাসার অর্থই বোঝে না।
রাত তখন প্রায় বারোটা।
আর পারছে না ইন্দ্রানী। উত্তরটা আজ ওকে পেতেই হবে। এতক্ষনে হয়তো দিগন্ত ফিরেছে মিটিং থেকে। হয়তো স্ত্রীর সাথে নিশ্চিন্তে ঘুমুচ্ছে। ফোন করাটা কি ঠিক। তাছাড়া ব্যক্তিগত কথা তো শুধু ইন্দ্রাণীই বলতো ,দিগন্ত তো নিজের ব্যাপারে কখনো কিছু বলেনি।
প্রতিটা রিঙের আওয়াজে বুকের ভিতরে তোলপাড় হচ্ছে ইন্দ্রানীর। অবশেষে ঘুম গলায় ফোনটা ধরলো দিগন্ত।
কি হয়েছে ইন্দ্রানী?
কোনো প্রবলেম?
এ প্রান্তে শুধুই ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজ।দিগন্ত ধীর গলায় বলল,কেঁদো না ইন্দ্রানী। আমি জানি তুমি কি বলতে চাইছো।
আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো। হয়তো আমিও...কিন্তু আমাদের বয়েসের পার্থক্যটা কখনো ভেবেছো? তোমার সামনে সুন্দর ভবিষ্যৎ।
ইন্দ্রানী কান্না ভেজা গলায় বলল, মনের বয়েসটা বুঝি গুরুত্বপূর্ণ নয়? শরীরের বয়েসটাই বুঝি সব?
দিগন্ত খোলা গলায় হেসে বললো, আমি অনাথ। খুব ছোট বেলায় বাবা মা মারা গিয়েছিলেন,পিসির কাছেই মানুষ হয়েছি।
কথা শেষ করতে না দিয়েই ইন্দ্রানী বললো,যদি তেরো বছরের পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও তোমাকে ছেড়ে আমি তেরো সেকেন্ডও না থাকতে পারি, সেটাকে কি বলে ডক্টর দিগন্ত রায়?
বেশ কয়েকমাস হয়ে গেছে ইন্দ্রানী আর দিগন্তর সুখী দাম্পত্যের। ইন্দ্রানী এখন একটা ইংলিশ মিডিয়াম কলেজের শিক্ষিকা।
ইন্দ্রানীর গোছানো সংসারের আদরে এলোমেলো দিগন্ত এখন পরিপূর্ণ।
সেদিনও ছিল এমনি শীতের সন্ধ্যে। দিগন্ত চেম্বারে। চেম্বার সেরে দুজনের যাওয়ার কথা ছিল শপিংএ। গাড়ি নিয়েই ওর চেম্বারের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল ইন্দ্রানী।
হঠাৎই চিৎকারটা কানে এলো ওর। গাড়ি দাঁড় করাতেই চোখে পড়লো একটা গোলাপি শাড়ির অল্পবয়সী মেয়ে..পাগলের মত দিকবিদিক জ্ঞান শুন্য হয়ে ছুটছে। শাড়ীর কয়েক জায়গায় ছেড়া। ইন্দ্রানীর পাঞ্জাবি ড্রাইভার সামনে দাঁড়াতেই পিছনের ছেলে দুটো ছুট লাগলো। মেয়েটি ক্লান্ত...
ইন্দ্রানী গাড়িতে তুলে নিয়ে গেল দিগন্তর চেম্বারে।
প্রাথমিক চিকিৎসার পরেই দিগন্ত বললো, মানসিক ভাবে বিধস্ত। বাড়িতে খবর দাও ইন্দ্রানী।
দিগন্তই ফোন করেছে ওর বাড়িতে।
মেয়েটি কান্না ভেজা গলায় বলল,আজ যদি তুমি না থাকতে দিদি তাহলে আমার সর্বনাশ হয়ে যেত।
হন্তদন্ত হয়ে যে মানুষটি ছুটে চেম্বারে ঢুকছে ,তাকে বছর খানেক আগে জন্মদিনের সন্ধ্যেতে শেষ দেখেছিল ইন্দ্রানী।
মল্লিকা বলে মেয়েটি তাহলে সৌনকের স্ত্রী।
সৌনক ঢুকেই জড়িয়ে ধরেছে নিজের স্ত্রীকে।
ভাগ্যিস...ভাগ্যিস মল্লিকাকে বাঁচাতে পেরেছিল ইন্দ্রানী। নাহলে কি করতো সৌনক! অপবিত্র ধর্ষিতা স্ত্রী কে কি ডিভোর্স করতো!
মল্লিকা কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,এই দিদিই আমাকে আজ..
সৌনকের চোখে বিস্ময়। কোনটা দেখে বিস্ময়? ইন্দ্রানীর সিঁথির লাল রংটা দেখে কি?
ধন্যবাদ...সৌনকের কথাটা শেষ করতে না দিয়েই ইন্দ্রানী বললো,আমার হাজবেন্ড ডক্টর দিগন্ত রায়কে থ্যাংকস জানান। ওই আপনার ওয়াইফের ট্রিটমেন্ট করেছে এই মুহূর্তে।
সৌনকের বিস্মিত ভাবটা কাটার আগেই ইন্দ্রানী বললো, চলো দিগন্ত...আমাদের শপিংয়ের দেরি হয়ে যাচ্ছে।
ইন্দ্রানীর মনে পড়ে গেলো ,দিগন্তর বলা সেই কথাটা..ইন্দ্রানী ডোবাকে নয় সমুদ্রকে ভালোবাসো। যে তোমাকে বিশালতা শেখাবে...
ডোবাকে করুণা কোরো, সমুদ্রকে আলিঙ্গন।
সমাপ্ত
©এক চিলতে রোদ্দুর-কলমে-অর্পিতা সরকার
সমাপ্ত