Thread Rating:
  • 114 Vote(s) - 2.66 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কিছু মনের সত্যি কথা
#শরীরের_পবিত্রতা

#অর্পিতা_সরকার
এই দিনরাত এমন ন্যাকামি করো না তো সবই বিয়ের আগে না ,শুনতে শুনতে আমি জাস্ট বিরক্ত হয়ে গেছি ইন্দ্রানী অ্যাট লিস্ট কিস তো করতে দেবে তোমার জুসি ঠোঁট দুটোতে
আমূল কেঁপে উঠলো ইন্দ্রানী 
আধুনিক কালের মেয়ে হলেও মনে মনে ভীষন  সনাতন পন্থী বিয়ের আগে শরীর কেউ ছোঁবে না গোছের মানসিকতার বশবর্তী সৌনক প্রায়ই ভিড় রাস্তায় ইন্দ্রানীর হাত ধরতে গিয়েও টিপ্পনি কেটেছে ওহ..তোমার হাত ধরলে তো আবার পবিত্রতা নষ্ট হয়ে যাবো! আজব প্রেমিকা জুটিয়েছি আমি বটে বন্ধুরা শুনলে আমাকে নিয়ে খিল্লি করবে বুঝলে!
আমি আজ কোনো কথা শুনবো না ইন্দ্রানী তোমাকে আজ ইউনিভার্সিটি পরে আমার বাড়িতে যেতেই হবে আগে প্রমিস করো একরাশ অভিমান গলায় নিয়ে আব্দার জুড়লো সৌনক 
ইন্দ্রানী ভালোবাসার পুরুষের অভিমানী মুখের দিকে তাকিয়েও শেষ চেষ্টা করলো,কিন্তু সৌনক ..রাত হয়ে যাবে যে ইউনিভার্সিটি পরে গানের ক্লাস সেরে আবার তোমাদের বাড়ি!
ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড ইন্দ্রানী...আমার বার্থ ডে আর তুমি প্রেজেন্ট নেই অফিস কলিগরা কি বলবে বলতো!
তাছাড়া আজ মা-বাবার সাথেও তোমার পরিচয়টা করিয়ে দেব সোনা প্লিজ একদিন তোমার বাড়িতে ম্যানেজ করো 
ইন্দ্রানী চিন্তান্বিত মুখে বললো,বেশ দেখছি মুস্কিলটা হলো শীতের দিনে সাড়ে পাঁচটা মানেই সন্ধ্যে গানের ক্লাস মিস করলেই গানের নীলিমা দি ডিরেক্ট মাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করে,কি রে ইন্দ্রানী আজ এলো না কেন! তখন! তখন কি উত্তর দেবে ইন্দ্রানী সৌনকএর কথা এখনো বাড়িতে বলেনি যদিও সৌনকের সাথে ওর বছর দুয়েকের সম্পর্ক তবুও বাবার সামনে দাঁড়ালেই কেমন একটা অজানা ভয় চেপে ধরে ওকে
আসলে ছোট থেকেই যৌথ পরিবারের রক্ষণশীল পরিবেশে বড় হয়েছে ইন্দ্রানী বাবা,জ্যেঠুর সামনে দাঁড়িয়ে নিজের প্রেমের কথা বলবে,এমন সাহসই ওর নেই ওদের বাড়ির কেউ প্রেম করে বিয়ে করেনি অভিভাবকরা দেখা শোনা করে বিয়ে দিয়েছে সকলের এমনকি ইন্দ্রানীর ছোট কাকার বিয়ের সময় ছোট কাকিমাকে কাকুর খুব একটা পছন্দ ছিল নাতবুও জেঠুর মুখের ওপর কোনো কথা না বলতে পেরেই চুপ করে ছাদনা তলায় বসেছিল কাকু ইন্দ্রানীর ভয়ে বুকটা কেঁপে ওঠে,কি করে বলবে সৌনকের কথা!
বিশেষ করে ফেসবুকে পরিচয় ,তারপর প্রেম শুনলেই তো বাবা আর জ্যেঠু ওর ইউনিভার্সিটি যাওয়াই বন্ধ করে দেবে মাঝে মাঝে খুব দমবন্ধ লাগে ওর বান্ধবীরা জিন্স টপ পরে, সেই একটি ফুলহাতা চুড়িদার ক্লাসের বন্ধুরা মজা করে বলে, ওরে আমাদের কাননদেবী এসে গেছে আওয়াজ খেতে খেতে এখন অভ্যস্ত 
মুস্কিলটা হলো,সৌনকের সাথে পরিচয় বা বন্ধুত্ব হলেও প্রেম করতে তেমন আগ্রহী ছিল না ইন্দ্রানী নিজের বাড়ির পরিবেশ তো জানতো কিন্তু নিজের সব কথা সৌনকের সাথে শেয়ার করতে করতে কবে যে ওদের সম্পর্কটা প্রেমে পরিণত হয়ে গেছে ইন্দ্রানী নিজেও জানে না মাঝে মাঝে ওরও মনেহয়, সৌনক বোধহয় এবার বিরক্ত হচ্ছে কোথাও মিট করার কথা হলেই ইন্দ্রানী বলে,দেরি করে ফিরলে বাড়িতে বকবে আজ ওর জন্মদিনে কি করে বলবে ইন্দ্রানী,যে পার্টিতে যাবে না!
কাঁচুমাচু গলায় ইন্দ্রানী বললো,বেশ আমি ট্রাই করছি সৌনক ,কিন্তু আধঘন্টার বেশি থাকবো না কিন্তু 
যা ইচ্ছে করো,তাও এস প্লিজ 
আর হ্যাঁ, আজ একটা শাড়ি পরে এসো কিন্তু 
কথাটা শোনার পর থেকেই ভিতরে ভিতরে  ভয় করতে শুরু হয়ে করেছে ইন্দ্রানীর বন্ধুদের বাড়ির নিমন্ত্রন থাকলে তারা মা বাবার সাথে ফোনে কথা বলে, দল বেঁধে যায় বাড়িতে প্রবলেম হয়না এক্ষেত্রে বলবেই বা কি!
বেশ আমতা আমতা করে ইন্দ্রানী চায়ের টেবিলে গিয়ে বাবার সামনে গিয়ে বলল, বাবা..আজ গানের কলেজ থেকে একটা বান্ধবীর বাড়ি যাবো কিছু নোটসের দরকার বাবা মুখটা  যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফেরা ঔরঙ্গজেবের মত করে বলল, বাড়িটা কোথায়? কি নাম বান্ধবির?
সুলগ্না ...এত মিথ্যে একসাথে বলতে গিয়ে যেন ধরা না পড়ে যায় বাড়ি ওই গাঙ্গুলিবাগানের দিকে ওদের বাড়ি থেকে ওটা একটু দূরে আছে তাও বাবা যাও কয়েদ খানায় নিয়ে যাও না বলে  বললো, বেশি দেরি করো না যেন এই শীতেও ইন্দ্রানীর হাতের তালু ঘেমে গিয়েছিল
যাইহোক,এত কাণ্ডের পর আবার মায়ের কাছে বলবে কি করে,যে শাড়ি পরে যাবে!
অবশ্য মা একচান্সেই বললো,হ্যাঁ শাড়ি পরা অভ্যেস কর আর তো মাত্র তিনটি মাস,তারপরেই তোর ফাইনাল পরীক্ষা হবে আর পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে 
চুপচাপ সৌনকএর পছন্দের হালকা গোলাপি শাড়িটা পরে নিলো ইন্দ্রানী 
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেই লজ্জা পেল মনের মধ্যে একটা অদ্ভুত অনুভূতি বিয়ের পরে যে বাড়িতে সংসার করবে সেই বাড়িতে আজ ওর প্রথম পদার্পন কেমন হবে সৌনকের বাবা মা! ওকে মেনে নেবে তো? বিয়ে মানে তো শুধু স্বামী নয়,একটা সম্পুর্ন অপরিচিত গোটা জগৎ
তাই সৌনকের পরিবারের সকলের সাথেই পরিচয় হওয়াটা জরুরি সৌনক বলেছে এরপরেই ওর বাবা মাকে নিয়ে আসবে ফুলের বুকে আর ওর পছন্দের পারফিউম কিনেই ট্যাক্সি ধরলো ইন্দ্রানী আজ ইউনিভার্সিটিতেও সবাই আড়চোখে তাকাচ্ছিল ওর দিকে অদ্ভুত একটা ভালোলাগা মিশেছিলো ইন্দ্রানীর মনে আজ গানের ক্লাসে গিয়েও মন বসাতে পারছিল না সৌনক একটা সাদা পাঞ্জাবি পরে বাড়ির সামনেই অপেক্ষা করছিল ইন্দ্রানীর জন্য
একমুখ হেসে সৌনক বললো,যাক রাজকুমারীকে অবশেষে সম্রাট ছেড়েছেন সৌনকের বাবা মাও খুব খুশি হবু বৌমাকে পেয়ে সৌনকদের অফিসের কলিগদের সাথে পরিচয়ের আগেই ঘনঘন ঘড়ি দেখছিল ইন্দ্রানী সেটা খেয়াল করেই সৌনক বললো,মাত্র সাতটা বাজে ইন্দ্রানী অন্তত আটটা পর্যন্ত থাকো প্লিজ 
এর মধ্যেই বাবা দুবার ফোন করেছিল অসহায় মুখে বললো,সৌনক আজ আর হবে না ,আমাকে এখুনি যেতে হবে যে 
সৌনকের বেডরুমে এই প্রথম ওকে জড়িয়ে ধরেছিল ইন্দ্রানী কেঁপে উঠছিল প্রথম পুরুষের ছোঁয়ায়
ভালোলাগায় ভাসছিল , তবুও সৌনক মুখটা গম্ভীর করে রেখেছিল এখুনি ঢুকবে ওর অফিস কলিগরা সেই মুহূর্তেই বেরিয়ে গেল ইন্দ্রানী সৌনকই ট্যাক্সি ডেকে তুলে দিল ওকে 
মিনিট দশেক চলার পরেই ট্যাক্সিটা গন্ডগোল করতে শুরু করলো বিরক্ত হয়ে নেমে পড়লো ইন্দ্রানী কয়েক পা হেঁটে ধরে নেবে অন্য ট্যাক্সী বাবার ফোনে ভয়ে ভয়েই বললো, আর ঘন্টাখানেকের মধ্যেই পৌঁছে যাবে বাড়ি 
নির্জন রাস্তা ধরে কয়েকপা হাঁটার পরেই আর কিছু মনে ছিল না ওর 
মুখটা বাঁধা, শরীরে অকথ্য যন্ত্রনা নিয়ে সেন্স ফিরেছিল ওর বেশ কয়েকজন ঘিরে ধরে ছিল ওকে ওর গোলাপি শাড়িতে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ ভিড়ের মধ্যেই দেখতে পেয়েছিল বাবার মুখটা 
বেশ কয়েকদিন বাড়িতে ঘর বন্দী হয়ে বসেছিলো ইন্দ্রানী বাবা নিজের চুলের মুঠি ঝাঁকিয়ে বলেছিল, ইন্দ্রানীর ফোন থেকেই বোধহয় নাম্বারটা পেয়েছিল ওখানের লোকগুলো আমাকে ফোন করে বললো, একটি গোলাপি শাড়ির মেয়ের ...
আর বলতে পারেনি বাবা 
কোনো এক খবরের কাগজের পাতায় ইন্দ্রানীর ছবি ওই ভিড়ের মধ্যে কে যে ওর ছবি তুলেছিল বুঝতেও পারেনি অজ্ঞান ইন্দ্রানী ওকে বাঁচানোর লোকের অভাব ছিল ঠিকই কিন্তু ওর ছবি তোলার লোকের অভাব ছিল না এমনকি মিডিয়ার ভিড় লেগে গিয়েছিলো ওদের বাড়ির সামনে ইন্দ্রানী কারোর সামনে বেরোয় নি 
পাগলের মত সৌনককে ডায়াল করে গেছে  
কিছুতেই ফোন ধরেনি সৌনক শুধু একটা মেসেজ...ক্ষমা করো ইন্দ্রানী আমার বাবা মা সকলে দেখেছে তোমার ছবি কেউ আর মেনে নেবে না এই সম্পর্কটা
কিন্তু সৌনক আমার দোষ কোথায়?
না আর উত্তর আসেনি তরফ থেকে ধর্ষিতা মেয়েরা করুনার পাত্র হতে পারে কিন্তু কারোর প্রেমিকা বা স্ত্রী নয় সত্যিটা খুব সহজেই বুঝে গিয়েছিল ইন্দ্রানী নিজের শরীরের ক্ষতগুলোতে ওষুধ না লাগিয়ে কষ্টটা দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করছিল ইন্দ্রানী আর মনে মনে সঞ্চয় করছিল একরাশ প্রশ্নের সম্মুখীন হবার মত জোর 
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কিছু মনের সত্যি কথা - by ddey333 - 14-06-2022, 04:18 PM



Users browsing this thread: 22 Guest(s)