13-06-2022, 09:27 PM
মেঘ রোদ্দুর-২
সাবলীল ভঙ্গিমায় তুমি হেঁটে যাও
তোমার কোমর দোলে,
তোমার ঠোঁটের কোনায় মিষ্টি হাসি
আমার হৃদয় জুড়ে ঢেউ তুলে।
তোমার চোখে আমার চোখ রেখে
অজান্তেই মেপে যাই গভীরতা
সেখানে পেলাম খুঁজে
না পাওয়ার শূণ্যতা,
ঐখানে আমি হারাতে চাই
দিতে চাই পূর্ণতা।
তোমার হাতে আমার হাত
চলবো আমরা বহুদূর,
তুমি আমার গান হবে
আমি তার সুর।
বলার হয়তো এটাই বাকি,
আমি তোমায় ভালবাসি...।
গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন রুদ্রের সকাল। ঘুমের ঘোরেই উপরের লাইন কটি আওড়িয়ে যাচ্ছে সে, সংবেদনশীল নিউরন গুলোর তড়িৎ বার্তায় আবছা একটা দৃশ্য রেটিনায় প্রতিফলিত হয়ে ধরা দিচ্ছে। তবে সেখানের থাকা বিপরীতের মানুষটার মুখটা কেমন ঝাপসা হয়ে আছে শত চেষ্টাতেও আর ভালো করে বললে সেই নারীর মুখটা স্পষ্ট হচ্ছে না। ধীরে ধীরে যেন সে নারী আর সরে যাচ্ছে দৃষ্টি সীমানার বাইরে।
রান্না ঘরে অঞ্জলি দেবীর সকালের ব্যস্ততা। ভোরেই ঘুম থেকে উঠে ঘরের কাজ গুছিয়ে স্নান শেষে রান্নাঘরে সকলের নাস্তা বানানোতে মনোনিবেশ করেছে৷ ভিজে চুলে গামছা পেচিয়ে খোপা করা, সিঁথি তে সিদুরে রাঙা মুখটা আরও রক্তিম হয়ে উঠেছে গনগনে আগুনের তাপে। কপালের পাশ বেয়ে জমা হওয়া বিন্দু বিন্দু ঘাম মাঝে মাঝে আঁচলের স্পর্শে উধাও হয়ে যাচ্ছে। খানিকটা বিরতিতে পাশে রাখা চা এর কাপে চুমুক দিচ্ছে, সকালে কিছু খাওয়া হোক বা না হোক এক কাপ চা অঞ্জলি দেবীর লাগবেই লাগবে। চা পেটে না পড়া পর্যন্ত মাথা টা কেমন ঝিমঝিম করতে থাকে, না এটা তেমন কোন রোগ নয় সবটাই মনের অসুখ। রুদ্র কতবার কতভাবে বলেছে একটা কাজের মানুষ রাখতে কিন্তু অঞ্জলি দেবী বরাবরই নাছোড়বান্দা সে কাজ গুলো নিজের হাতেই করতে ভালবাসে। অনেক জোরজবরদস্তির পর একটা মহিলা এসে জামাকাপড় ধোঁয়া আর বাড়িঘর ধোয়ামোছার কাজটা করে যায়।
ছোটকি কে এদিকে আসতে দেখে রান্নাঘর থেকেই হাঁক দিয়ে দাদা কে ডেকে দিতে বলে। ছোটকি স্বভাব সুলভ ভঙ্গিতে লম্বা লম্বা পা ফেলে হেঁটে যাচ্ছে বললে ভুল হবে অনেকটা নাচতে নাচতেই রুদ্রের ঘরের দিকে যেতে থাকে। ঘরে ঢুকে দক্ষিণ দিকের জানালার পর্দা টা টেনে দিতেই সকালের সূর্যের আলোতে ঝলমলে হয়ে উঠে পুরো ঘরটা। চোখের উপর আলো পড়তেই ঘুমের বিঘ্ন ঘটে যায়। পিটপিট করে আধো চোখ খুলতেই দেখতে পায় ছুটকির অদ্ভুত নৃত্যভঙ্গি, এ নাচের ফর্ম টা যদি নৃত্যকলায় জায়গা পায় তবে ছুটকিই হবে সেটার সম্রাজ্ঞী। অজান্তেই ঠোঁটের কিনারায় ফুটে উঠে ছোট্ট হাসির রেখা, চোখ বুজে নিতেই নিজের ছোটবেলা টা ভেসে উঠে। এইতো মনে হয় কিছুদিন আগেও সে নিজে যখন ছোট্টটি ছিলো এমন দুরন্তপনার মাঝেই তো দিন কাটতো। সারাদিন হৈ-হুল্লোড় আর নিয়মিত মায়ের আদুরে শাসন বাবার চোখ রাঙানি ইশ এত তাড়াতাড়ি চলে গেল কেন সবকিছু। যখন ওর বোন হলো সে কি আনন্দ ওর মনে, যেন আকাশের চাঁদ টা হাতের নাগালে পেয়েছে। সারাদিন বোন কে নিয়েই পড়ে থাকতো, ওটাই তখন ওর জগত ছিলো। ছুটকিও তেমনি হয়তো বাবা মায়ের চেয়ে দাদাকে কাছে বেশি পেয়েছে বলেই দাদা অন্ত প্রাণ। এমনকি বছর দুয়েক আগ পর্যন্ত ছুটকি ওর সাথেই ঘুমতো তারপর রুম বদলে গেল কিন্তু ভালবাসা, টান সেটা? সেটা দিন দিন বাড়ছেই হয়তো।
-দাদা, এই দাদা মা ডাকছে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা খেতে আয়( রুদ্রকে হালকা করে ধাক্কা দিয়ে কথা গুলো বলে যায়)
-হুম উঠছি।
নাস্তার টেবিলের একপাশে অবিনাশ বাবু পত্রিকায় চোখ বোলাচ্ছে, অন্যপাশে আগে থেকেই ছুটকি বসে পা দোলাচ্ছে স্থির, হওয়াতে নিশ্চিত এলার্জি আছে। ওর পাশের চেয়ার টা টেনে রুদ্র বসতে বসতে মা কে বলতে থাকে
-মা আমি কিন্তু এসে গেছি।
-এইতো হয়ে গেছে, আমি নিয়ে আসছি।
অদ্ভুত এক রিংটোনের আওয়াজে অঞ্জলি দেবীর ফোনটা বেজে উঠে, রুদ্র উঠে গিয়ে শোকেজের কাছ থেকে মোবাইল টা হাতে নিয়ে দেখে আন-নোউন নাম্বার, রিসিভ করে হ্যালো বলতেই দুম করে কলটা ডিসকানেক্ট হয়ে যায়।
-কে রে বাবু?
-জানি না মা, সেভ করা নেই। রিসিভ করে হ্যালো বলতেই কেটে দিলো। টেবিলে রাখলাম ফোনটা।
অঞ্জলি দেবী খাবার গুলো এনে টেবিলে রাখতে থাকে। সবার প্লেটে খাবার বেড়ে দেবার সময় আবার মোবাইল টা বেজে উঠে, এবার অঞ্জলি দেবী নিজেই রিসিভ করে হ্যালো বলে
-আন্টি, গুড মর্নিং।
-কিরে তুই রা... নামটা বলতে গিয়েও বলে না ওপাশের বারণে। গুড মর্নিং কেমন আছিস রে।
-ভালো, তখন মনে হলো ও রিসিভ করেছিলো তাই কেটে দিয়েছিলাম। কি করো?
-এইতো নাস্তা দিচ্ছি ওদের কে।
-কে ফোন করেছে? কার সাথে কথা বলছো মা(রুদ্র জিজ্ঞেস করে)
-আন্টি আমার কথা বলো না, রেগে যেতে পারে তোমার গুনধর ছেলে(তঠস্ত কন্ঠে রাই বলে উঠে)
-আমার পরিচিত একজন, তোর এত জেনে লাভ কি? তাড়াতাড়ি খেয়ে অফিসে যা।
মায়ের এমন করে উত্তর দেয়াটা মনপুত না হলেও এই সকালে সেটাকে নিয়ে ঘাটাঘাটি করার ইচ্ছে হয় না, একবার মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে অন্যরকম একটা প্রফুল্লতার অাভাস পায় মাত্র।
-সকালে কি রান্না করলে গো, আচ্ছা আন্টি ও এখনো কি ডিমপুচ পছন্দ করে?
-হুম, প্রায় দিনই করে দিতে হয় আজ অবশ্য আলু গোল গোল করে কেটে ভাজা করেছি, মাছের কালিয়া করেছি। জানিস ও সেই আগের মতই আছেরে।
-না গো আন্টি আগের মত নেই(মুখ ফসকে কথাটা বলে ফেলে)
-হঠাৎ এই কথা বললি যে!(নিজের ছেলে সম্পর্কে এমন কথা শুনে অবাক হয় অঞ্জলি দেবী)
-অন্য একটা বিষয় মাথায় এসে গেছিলো, সেটাই বলে ফেলেছি। তুমি খাবে না?
-ওদের দিয়ে আমিও বসবো, তুই খেলি?
-এইতো একটু আগে। কতদিন ধরে তোমার হাতে রান্না খাই না।
-একদিন চলে আয় না।
-আসবো একদিন সময় করে। এখন রাখি অফিসে যেতে হবে। নাম্বার টা সেভ করে রেখো।
-আচ্ছা সময় পেলে ফোন দিস কিন্তু।
-ওকে আন্টি,বাই।
নাস্তা শেষে হাত মুখ ধুয়ে বাইরে এসে রুদ্র বাইকে অপেক্ষা করে, একটু পরে ছুটকিও কলেজ ব্যাগ কাঁধে বাসা থেকে বেরিয়ে আসে। ছুটকি কে কলেজে নামিয়ে একটু প্রজেক্ট সাইটে যেতে হবে আগে রুদ্রকে, সেখানের কাজ শেষে অফিসে যাবে। মা কে হাত নাড়িয়ে বিদায় জানায় দুই ভাই বোন।
---★★★---
ক্যান্টিনে এসে দু কাপ কফির অর্ডার দিয়ে রুদ্র কে টেনে নিয়ে পাশের একটা টেবিলে বসে তনয়া।
-ওখানে এমন আচরণ করলে কেন ম্যাডামের সাথে। না হয় দুটো কথা তোমাকে বলেই ফেলেছে, বিষয়টা তো ঠান্ডা মাথাতেও সলভ করা যেত নাকি?
-আমি তো আমার জন্য করিনি।
-তাহলে?
-তোমার জন্য? শুধু আমাকে নিয়ে কথা হলে আমিও তেমন পাত্তা দিতাম না কিন্তু তখন আমার সাথে তোমার নামটাও তো জড়িয়ে ছিল নাকি।
-তা ঠিক, তাই বলে
-তুমি বুঝবে না, তখন যদি ওভাবে রিঅ্যাক্ট না করতাম তবে বাকিরা পেয়ে বসতো। তুমি জানো, ঐ এ্যালিগেশন টার জন্য তোমাকে কত কি ফেস করতে হতো? আমাকে কেউ কিছু বলার সাহস পেতো না আর কেউ কিচ্ছুটি বললেও আমার তেমন কিছু আসে যায় না। কিন্তু তোমাকে কটু কথা বলতো আরও কত কি জড়িয়ে তোমার নামে বদনাম ছড়াতো, তুমি কি সেটা সহ্য করতে পারতে? পারতে না তাই সবার মুখ বন্ধ করার জন্যও ম্যাডামের সাথে ঐ আচরণ টা করে ফেলেছি।
-এখন ম্যাডাম যদি তোমার বিরুদ্ধে কোন এ্যাকশন নেয়? তখন কি হবে? আমার তো সেই ভয় হচ্ছে।
-নিলে নিক, আমি রিজাইন দিয়ে দেব।
-তোমার কাছে সবকিছু কত ইজি তাই না? দুম করে বলে দিলে রিজাইন দিয়ে দিবে, আচ্ছা আমার একটা কথা
রাখবে?
-কি কথা?
-আগে বলো রাখবে প্লিজ!
-আচ্ছা রাখবো, কি কথা সেটা বলো।
-তুমি ম্যাডামের কাছে ক্ষমা চেয়ে নাও, আমি চাই না তোমার কোন ক্ষতি হোক।
-আমার জন্য এত চিন্তা কেন তোমার?? আচ্ছা তুমি যখন বলছো তবে তোমার সামনেই না হয় ক্ষমা চেয়ে নেব। তবে আমার একটা আবদার আছে?
-আবার আবদার কিসের?
-ঐদিনের সন্ধ্যা টা মিস করছি খুব, ইশ আবার যদি একবার...
-(চোখ দুটো বড় বড় করে রাগী ভাব নিয়ে কিছু একটা বলতে চাইছিলো তখনি ওয়েটার এসে কফি দুটো দিয়ে যায়, ওয়েটার চলে যাবার পর তনয়া মাথাটা নিচু করে নেয়)
-কি হলো? তুমি রাজি না হলে আমি জোর করবো না। জোর করে সবকিছু পাওয়া যায় না।
-(মিচকে হাসিতে) বিশেষজ্ঞ মানুষ তুমি, সেটাতে এখনি কথা দিতে পারছি না।
-আচ্ছা তোমার উত্তরের অপেক্ষায় থাকবো। তবে ওটা না হোক( নিজের ঠোঁটের কাছে আঙুল নিয়ে ইশারা করে) এটা তো পেতেই পারি।
-তোমার কি মাথা খারাপ নাকি, এখানে এসব নিয়ে পড়ে আছো।
-বাহ! তোমার কথায় আমি আমার ইগো ভুলে ক্ষমা চাইতে রাজি হলাম আর তুমি একটা ইয়ে দিতে পারবে না? এটা ভারি অন্যায় কিন্তু, দিবে কিনা বলো।
-(মাথা নেড়ে সায় দেয় তনয়া)
তনয়া কে নিয়ে রুদ্র উঠে লিফটের কাছে চলে যায়, লিফটে ঢুকে ডোর লক করে এগিয়ে যায় তনয়ার দিকে। পিছু হাটতে গিয়ে খুব বেশি লাভ হয় না তনয়ার ছোট্ট লিফটের দেয়াল ওকে আটকে দেয়। মুচকি হাসিতে এগিয়ে যায় রুদ্র, দু হাতে তনয়ার মুখটা আজলা করে তুলে আনে নিজের আরও কাছে। দুহাতের দুর্বল বাঁধায় প্রেয়সী কে আটকাতে না পেরে চোখ বন্ধ করে নেয় তনয়া। চুমো খাওয়ার সময় নিজ থেকেই দুচোখ কোন এক অজানা শারীরিক ক্রিয়ার জন্য বন্ধ হয়ে আসে সেটা বিজ্ঞানীরা আজও আবিষ্কার করতে পারলো না। লেখক নিজেও এটার কুলকিনারা করতে পারে নি আজ অব্দি, যতই ভেবে রাখি আজ চোখ খোলা রাখবো কিন্তু অন্তিম মূহুর্তে দুচোখ কোন এক মায়াবলে বুজেই আসে। একটু পরে চোখ খোলার চেষ্টা করলে, চোখ হয়তো খোলা যায় কিন্তু সেই ফিলিংস টা পাওয়া যায় না। এত চুমো খেলাম কিন্তু চোখ খোলা বন্ধের কানেকশন টা ধরতে পারলাম না। ঐদিকে রুদ্রের পুরুষালী ঠোঁটের মাঝে মিলিয়ে যায় তনয়ার ঈষৎ কাঁপতে থাকা নরম কমলার কোঁয়ার মত ঠোঁট দুটি। ঘর্ষনে তড়িৎ গতিতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে মস্তিষ্কের স্নায়ু তন্ত্রে, প্রেরিত বার্তা পৌঁছে যায় সমস্ত শরীরের কোণে। সচল হয়ে উঠে স্পর্শকাতর সংবেদনশীল অঙ্গগুলো, রক্তে তাপ বাড়তে শুরু করে সেই উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে সবখানে লিফটের বাতাসটাও যেন তাতেই গরম হয়ে উঠেছে। বুড়ো আঙুলে ভর দিয়ে নিজেকে আরেকটু উঁচু করে রুদ্রের কাছাকাছি নিয়ে আসে তনয়া, চুমোটা যেন আরও গভীরে নিয়ে যাওয়া যায়। ঠোঁট বদলে আবারও তীব্র চোষনে রক্ত জমাতে শুরু করে ফর্সা অনুভূতি প্রবণ মাংস গুলোতে। হঠাৎ করেই দুহাতে জড়িয়ে ধরে তনয়াকে শূন্যে তুলে ধরে রুদ্র, শেষবারের মত ঠোঁট গুলো আরেকটু ভিজিয়ে নেয় সে। কিছুটা উপরে উঠে আসায় চুম্বনটা আরও উপভোগ করতে থাকে তনয়া। কিছুটা সময় পাগলের মত চুষতে থাকা অবস্থায় যখনি নিজেকে শূন্যে আবিষ্কার করে তখনি
-(ঠোঁট ছাড়িয়ে নিয়ে) পাগল হলে নাকি, নিচে নামাও আমাকে পড়ে যাবো তো।
-(মুখে কিছু না বলে তনয়ার বুকের কাছে নাক ঘসে দেয় রুদ্র)
দুহাতে আলতো করে চড় দেয় রুদ্রে পিঠে
-প্লিজ এখন আর না, নিচে নামাও আমাকে।
রুদ্র নামিয়ে দিতেই লিফটের গ্লাসের প্রতিবিম্বতে একটু ঠিকঠাক করে নেয় নিজেকে। চুলগুলো হালকা হাত দিয়েই টেনে নেয়।
-চলো এখন ম্যাডামের রুমে।
বাধ্য ছেলের মত তনয়ার পিছনে যেতে থাকে, ম্যানেজারের রুমের কাছে এসে তনয়া কাঁচের দরজা টা একটু সরিয়ে
-মে আই কাম ইন?
-(সামনের দিকে তাকিয়ে) ইয়েস
-তনয়ার পিছন পিছন রুদ্রও রুমে ঢুকে।
-কি বলবেন? এনি প্রবলেম?
-(তনয়া কনুই দিয়ে রুদ্রকে ধাক্কা দেয়) ম্যাডাম তখনকার বিষয় টা নিয়ে।
ম্যাডাম কিছু বলতে যাবে এর আগেই রুদ্র বলে উঠে
-আই এম রিয়েলি সরি ম্যাডাম, তখন ওভাবে কথা গুলো বলা ঠিক হয় নি।সত্যি বলতে তখন হঠাৎ মাথা টা গরম হয়ে গিয়েছিল, সবার সামনে ঐ বিহেভিয়ার টা করা আসার উচিত হয় নি, আর ম্যাচিউর ভাবে বিষয়টা হ্যান্ডেল করা দরকার ছিল। আই এম রিয়েলি সরি।
-(গদগদ কন্ঠে তনয়া বলতে থাকে) ম্যাডাম সবটাই একটা ভুল বুঝাবুঝি ছিল, আপনি দয়া করে এটা নিয়ে আর কিছু ভাববেন না। এমনটা আর হবে না।
-ইটস ওকে, আমি বিষয়টা তখনি ভুলে গিয়েছি। তারপরও উনি সরি ফিল করছেন সেটাই অনেক। আমি চাই না আজকের এই ঘটনাটা আগামীতে কোন কাজে ইমপ্যাক্ট ফেলুক। সেটা নিয়ে আর কোন কথা নয়, আজ এখন এই মূহুর্তেই ঘটনাটা ভুলে যান।
-থ্যাংকস ম্যাডাম, এখন যাই।
খুশি মনে তনয়া বের হয়ে আসে রুদ্রকে নিয়ে ম্যাডামের রুম থেকে, সবাই একবার ডেস্ক থেকে মাথা উঁচিয়ে ওদের দিকে তাকায়। রুদ্র কে এদিকে ঘুরতে দেখেই সবাই আবার আগের পজিশনে চলে যায়। তনয়া নিজের ডেস্কে বসে পড়ে রুদ্র রুমের দিকে হাঁটতে থাকে।
---★★★---
ছুটকি কে কলেজে পৌঁছে দিয়ে সাইটে চলে গিয়েছিল প্রজেক্টের কাজ দেখতে। সেখানের কাজ শেষে আবার অফিসের দিকে যাত্রা করে রুদ্র, এদিকটায় অনেকগুলো কলেজ কলেজ আছে। প্রভাতী শাখার ছুটি হওয়াতে রাস্তায় অভিভাবকদের ব্যক্তিগত গাড়ির চাপে প্রচন্ড জ্যাম। আজকাল শহরে মধ্যবিত্তদেরও নিজের একটা গাড়ি চড়ার যে খায়েশ উঠেছে তাতে আর যাই হোক শহুরে জীবনের নাভিশ্বাস ঠিকই বাড়ছে। জ্যাম এড়াতে রুদ্র উল্টো দিকে গার্লস কলেজের রাস্তাটা দিকে অন্য গাড়ির ফাঁক গলে এগিয়ে যায়। গার্লস কলেজের পাশেই বাস স্টপেজ, যাদের ব্যক্তিগত গাড়ি নেই তাদের এই সিটি সার্ভিস ই ভরসা৷ মিনিট পাঁচেক পরপর বিভিন্ন রুটের বাস আসার কথা থাকলেও জ্যামের কারণে সেটা মাঝে মাঝে ঘন্টাও পার হয়ে যায় অনায়াসে। স্টপেজ এর বোর্ডটার কাছেই অনেক গুলো ছেলে মেয়ে দাড়িয়ে আছে, থেমে থেমে চলা গাড়ির কারণে বাইকের স্পিড চাইলেও বেশি তুলতে পারছে না। অল্প অল্প করে বাইকটা এগিয়ে চলেছে, হঠাৎ করেই রুদ্র বাইকটা পেছাতে শুরু করে। পিছিয়ে স্টপেজের এখানে গিয়ে দাড় করায়, চলেই যাচ্ছিলো কিন্তু ছেলে গুলোর কিছু বাজে কমেন্ট ওর কানে বাজাতে আবার ফিরে আসে। বাইক থেকে নেমেই ছেলেগুলোর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়, হঠাৎ একটা ষণ্ডামার্কা লোক কে সামনে এভাবে দাড়াতে দেখে ছেলেগুলো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়।
-কিরে কি বলছিলিস রে তখন? আরেকবার বলতো শুনি।(উঁচু গলায় ধমকের সুরে বলা কথা গুলো আশেপাশে সবার কানেই পৌঁছায়, সবাই এইদিকে তাকিয়ে ঘটনা কি সেটা দেখতে থাকে)
ছেলে গুলো কিছু বলতে পারে না, একদুটোর তো পা কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে গেছে। ওরা পালিয়ে যেতে পারলেই বাঁচে।
-কি ব্যাপার তখন কি যেন বলছিলি ঐ দিকে ইশারা করে, আরেকবার বলতো আমিও শুনি।
-ন...নাআআআ না কই কিছু বলিনি তো আমরা (কাঁপা গলায় দলের লিডার হয়তো কথা গুলো বলে ফেলে)
-ওমা তরা এত সাধু কবে থেকে হলি, আমি কি তাহলে ভুল শুনলাম? (মেয়ে গুলোর দিকে তাকিয়ে) কিরে ওরা কি সত্যিই তোদের কিছু বলে নি নাকি?
একটা মেয়ে একটু একটু করে এগিয়ে আসে, রুদ্রের পেছনে দাড়িয়ে আতঙ্কিত নিচু গলায় বলে
-ওও....ওরা প্রতিদিনই এখানে দাড়িয়ে বা...ব..বাজে বাজে কথা বলে আ..আমাদেরকে লক্ষ্য করে।
-আরে না না ওরা তো ভাল ছেলে, তোদের কোথায় ভুল হয়েছে। কিরে ঠিক বলিনি(ছেলেগুলোকে ইশারা করে)
আর কোনদিন যদি তোদের এখানে দাড়িয়ে মেয়েদের টিজ করতে দেখি তবে আজ তো শুধু মুখে বলছি পরের দিন হাত কথা বলবে। হাত পা ভেঙে মা বাবা কে ডেকে তাদের হাতে তুলে দেব মনে থাকবে তো??
ছেলে গুলো অনেকদিন ধরেই এমন কাজ করলেও কারও কাছ থেকে তেমন বাঁধা পায় নি কিন্তু আজ রুদ্রের রুদ্র রূপের কাছে ওরা ধরাশায়ী মুখ দিয়ে আওয়াজ বের করতে যেন অক্ষম। সবগুলো মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। রুদ্রের কথার প্রেক্ষিতে একবার মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানায়।
-আজকের পর আর যেন এমন না হয়। মা বাবা পড়াশোনার জন্য কলেজে পাঠায় এসব করার জন্য না। ভুলেও যেন এসব কাজে আর কখনো না দেখি।
পেছনে একটা বাস এসে দাড়ায়, আগে থেকেই বাসটার ভেতরে একদম মানুষে ভর্তি তারপরও কিছু মানুষ নামতেই কয়েকটা ছেলে মেয়ে গাদাগাদি করেই বাসটায় উঠে পড়ে, কয়েকজন তো দরজার কাছেই ঝুলে আছে এমন অবস্থাতেই বাসটা আবার চলতে শুরু করে। নিজের বাইকের দিকে এগুতে গিয়ে খেয়াল করে ওর পেছনে যে মেয়েটি ছেলেগুলোর নামে নালিশ করেছিল সে তখনো সেখানেই দাড়িয়ে।
-কি ব্যাপার তুমি গেলে না, তোমার বাস কত নাম্বার?
-ছয়
-সেটাতো মাত্রই গেলো।
-যে ভিড় ছিল উঠতাম কি করে?
-আরেক বাস কখন আসে কে জানে? তোমার বাসা কোথায়?
-সেন বাড়ি রোড থেকে একটু ভেতরে যেতে হয়।
-এসো আমি পৌঁছে দিচ্ছি।
ভাগ্যিস ঠিক সময়ে লোকটা এসেছিল, নইলে আজ ওদের সাহস যেন আরও বেড়ে গিয়েছিল। প্রতিদিন এমন সহ্য হয় নাকি, কলেজ শেষে বাসের জন্য অপেক্ষা টা প্রথমে যেমন রোমাঞ্চকর ছিল আজকাল সেটা বিভীষিকা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ছেলে গুলো দলবেঁধে এখানে এসে মেয়েদের টিজ করে চলে। আজেবাজে কথা বলার পাশাপাশি অশ্লীল আর কুৎসিত অঙ্গভঙ্গি করে মেয়েদের দিকে। আশেপাশের মানুষ গুলো সং এর মত দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখে, কেউ কিচ্ছুটি বলে না। সবাই নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত, ততক্ষণ পর্যন্ত হুশ হয়না যতক্ষণ না বিষয়টা নিজের সাথে না জড়ায়। কয়েকটা তো বাসে উঠেও পিছু নেয়, খুব বিরক্তিকর লাগে এসব কিছু। তবে আজ যে দাবড়ানি টা খেয়েছে তাতে কিছুদিনের জন্য হলেও ওদের উৎপাত টা কমবে সেটাই স্বস্তির।
লোকটা আগে কোন দিন এলো না কেন সেটাই আফসোস হচ্ছে৷ আজ আবার তাকে পৌঁছেও দিচ্ছে বাসায়। মেয়েদের মনে সহজে জায়গা করে নেয়ার জন্য এমন পদক্ষেপ যথেষ্ট। পোশাকে যতটুকু বুঝা যাচ্ছে তাতে তো মনে হয় চাকরি করে নয়তো বড় ক্লাসে পড়ে ইউনিভার্সিটি হবে হয়তো। ছেলে গুলোকে যখন ধমকাচ্ছিলো তখন লোকটার চোখ মুখের মাঝে একটা অদ্ভুত হিংস্রতা ছিল কিন্তু এখন আবার একদম শান্ত৷ চেহারা বলতে গেলে তেমন কোন ড্যাশিং হিরোর মত না তবে একটা মায়াবী ভাব আছে এই শান্ত অভিব্যক্তি তে। মেয়েদের পটতে এটাই অনেক, যেমন সে নিজেই অনেকাংশে পটে আছে। ধুর বাবা কখন থেকে কি সব ভেবে যাচ্ছে সে, এখনি যদি একটা থমক দেয় তবেই কেঁদে কেটে এক করে দিবে সে।আর বয়সের ফারাকটাও তো অনেক। মেয়েরা অনেক কিছু সহ্য করতে পারে কিন্তু যার কাছে মন দুর্বল হয়ে পড়ে তার একটুখানি রাগ ভাবও হৃদয়ে আঘাত করে চোখ ভেজায় ঝর্ণা ধারায়। সেটা খুব অল্পেই সহ্যের বিপদসীমা অতিক্রম করে চলে যায়, তখন মস্তিষ্ক কাজ করে কম হৃদয়ের প্রভাব থাকে বেশি।
-এখন কোন দিকে যেতে হবে?
লোকটার ডাকে সম্বিত ফিরে মেয়েটার। কিসব আবোল তাবোল ভাবছে সেই কখন থেকে। এই বয়সেই কত কি ভেবে ফেলেছে সে, এ জন্যই মা বলে সে ইঁচড়েপাকা হয়ে গেছে।
-এই সামনে বা দিকে যে রাস্তা টা।
একটা বহুতল বিল্ডিং এর সামনে এসে বাইকটা দাড় করাতে বলে।
-এই বিল্ডিংটার ছয় তলায় আমাদের ফ্ল্যাট।
-ওহ, তা তোমার নাম কি?
-আমি তনু, ইয়ে মানে ভাল নাম ত্বন্বী চৌধুরী।
-আমার নাম রুদ্র রায়। তোমার বয়সি আমার একটা বোন আছে, তাই মনে হয় তোমাকে তুমি করে বলাটা কেমন দেখায়। তা তোমার বাসায় কে কে আছে?
-আমরা দু বোন, মা বাবা। আসো না বাসায় মা আছে দেখা করে যাও।
-না না আজ হবে না, কাজ আছে অফিসে যেতে হবে।
-বাহ! মাত্রই বললে আমি তোমার বোনের মত আর আমারও কোন দাদা নেই তাহলে বোনের একটা কথা রাখবে না?
-সত্যি বলছি আজ হবে নারে, বাসা তো চিনে গেলাম আরেকদিন ঠিক আসবো।
-কথা দিলে তো?
-হুম দিলাম, তোর সাথে দেখা করতে আসবো।(পকেট থেকে মানিব্যাগ টা বের করে তার থেকে একটা কার্ড তুলে নিয়ে) এই কার্ড টা রাখ। দরকার পড়লে ফোন দিবি, ছেলে গুলো যদি আবার ডিস্টার্ব করে তবে আমাকে একটা ফোন করবি শুধু দেখিস আমি কি করি।
-(হু হু করে হাসতে থাকে তনু) ঠিক আছে দাদাভাই, তবে মনে হয় আজ যে ঔষধ পড়েছে তাতে আর কোনদিন এমন করার সাহস পাবে না।
-হয়েছে এখন তুই যা আমাকে অফিসে যেতে হবে এখন
তনু হাত নেড়ে বিদায় জানাতে জানাতে বিল্ডিং দিকে এগিয়ে যায়। রুদ্র বাইক স্টার্ট করে অফিসের দিকে যাত্রা শুরু করে।
সবার কাছে তাদের প্রথম চুমোর অভিজ্ঞতা আর অনুভূতি টা জানতে চাই....
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।