11-06-2022, 04:19 PM
জীনের আসর (নন ইরটিক)
কলিমুদ্দিন শেখ বেশ চিন্তিত , বেশ কয়দিন রাতের বেলা ঘুমান না । চোখে কোটরের ভেতর ঢুকে যাচ্ছে , দেখতে ভয়ংকর বৃদ্ধ মনে হচ্ছে ওনাকে । এমনিতে ৬১ বছর বয়সেও বেশ তাগড়া শরীর । কিন্তু গত কয়েক দিনের ধকলে বেশ কাহিল হয়ে গেছেন । দেখে মনে হয় রাতারাতি বয়স বেড়ে গেছে ২০ । কারো সাথে ভালো করে কথা বলছেন না , যেই কথা বলতে আসছে খেঁকিয়ে উঠছেন । ভয়ে কেউ সামনেও আসছে না । দু দিনের মাঝে পরপর তিন বউ মার খেয়েছে , যা এই পর্যন্ত রেকর্ড । এখন ওনার স্ত্রীরা ও ওনার সাথে রাত্রি জাপন করতে চাচ্ছেন না । রাত হলেই বড় বউ মেজো বউয়ের দিকে তাকায় , মেজো বউ ছোট বউয়ের দিকে ।
এইতো গতকাল রাতে ছোট বউ মার খেলো , এক দিনে বড় বউ সকালে আর মেজো বউ ঘুমের সময় মার খেয়ে কেউ সেই রাতে কলিম এর ঘরে যাওয়ার সাহস পাচ্ছিলো না । তখন ছোট বউ আছিয়া এসে বলল “ এতো ভয় পাওন এর কি আছে খাটাস বুইরারে , আমি যাইতাসি , গায়ে হাত তুল্লে হাত ভাইঙ্গা দিমু”। কিন্তু আধা ঘণ্টা পার না হতেই ছোট বউ এর চিৎকার ভেসে এলো । বাড়ির সবাই আরও ভয় পেয়ে গেলো । ছোট বউ আছিয়া বড় পেয়ারের বউ কলিম এর । বছর তিনেক হলো বিয়ে করেছেন ছোট বউ কে । এখনো বাচ্চা কাচ্চার দেখা নেই , হবে বলেও মনে হয় না । তবুও কলিম বাকি দুই বউয়ের চেয়ে ছোট বউ কে আদর করেন বেশি । অবশ্য আদর করার মতই বউ এই আছিয়া , নাদুস নুদুস শরীর , কোমর পর্যন্ত লম্বা চুল । মুখ খানাও দেখার মতন ।
আজ সেই বউয়ের গায়ে হাত তোলা !!! তাই বাড়ির সবাই আরও বেশি চিন্তিত হয়ে পরলো । ভয়ে সারাদিন কেউ কাছে যায়নি । অবশ্য কলিমুদ্দিন এর এমন রাগ হওয়ার কারন ও আছে । যে ঘটনা ঘটেছে সেটা কম দুসচিন্তার বিষয় নয় । মোট সাত কন্যা আর তিন পুত্রের জনক কলিমুদ্দিন , মোট চার স্ত্রীর গর্ভে জম্ন এদের । প্রথম ছয় কন্যার বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন সময় মত । কিন্তু একেবারে ছোট কন্যার সখ হয়েছিলো পড়ালেখা করার। সাথে কন্যার মায়ের ও সখ হয়েছিলো । সেবার কি মনে করে জানি কমিল্মুদ্দিন মেনে নিয়েছিলেন সেই সখ । কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজ এর পা রাখতে দিয়েছিলেন । আর সেখান থেকেই বিপত্তির শুরু ।
প্রথম কিছুদিন মেয়েকে কড়া শাসনে বডিগারড সহ কলেজে পাঠিয়েছিলেন । কিন্তু ধিরে ধিরে অন্য দিকে মনোযোগ চলে যাওয়ায় শিথিল হয়ে আসে সেই অনুশাসন । মোল্লা বাড়ির সাথে পূবের বিলের জমি নিয়ে বিরোধ শুরু হওয়ায় এদিকে আর মনোযোগ দিতে পারেন নি । আর সেই সুযোগে মেয়ে বংশের মুখে চুনকালি দিয়েছে । আজ পর্যন্ত শেখ বাড়ির মেয়েদের দিকে কেউ চোখ তুলে তাকাতে সাহস করেনি । এর শেখ বাড়ির মেয়েরাও বেগানা মরদ এর দিকে চোখে তুলে তাকায় নি । আর সেই শেখ বাড়ি মেয়ে হয় চোখ তুলে তাকা তাকি তো বাচ্চাদের খেইল । একদম পোয়াতি হয়ে বাড়ি এসেছে !!!!
বাজারে ইতিমধ্যে গুঞ্জন উঠেছে , দেদারসে টাকা ঢালছেন কলিমুদ্দিন , তাই কিছুটা কমতির দিকে । তবে মোল্লা বাড়ির লোকজন ও খবর পেয়েছে কিছুটা , ওরাও চেষ্টার কমতি করছে না । কলিমুদ্দিন এর ভাগ্য ভালো যে মোল্লা বাড়ির অবস্থা আর আগের মতন নেই । নইলে আরও বেগ পেতে হতো এই কলঙ্ক ধামা চাপা দিতে । কিন্তু যত কিছুই করুক কলিমুদ্দিন, এসব ব্যাপারে মানুষ এর মুখ আটকানো সম্ভব নয় । কিছু কিছু ফিস ফিস এখনো চলছে । লোকে মুখ গুজে হাসছে , সেই দেখে কলিম এর গা জ্বলে যাচ্ছে ।
কলিম একবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো মেয়েকে খুন করবে । যে মেয়ে বাপ দাদার মুখে চুনকালি দেয় সেই মেয়ের বেঁচে থাকার দরকার নেই । এই ব্যাপারে কলিমুদ্দিন এর তিন ছেলে ও একমত । তারাও এই নিয়ে বেশ লজ্জিত বোধ করছে । সিদ্ধান্ত পাকা করে মেয়ের ঘরে গিয়েছিলো , হাতে ছিলো দড়ি , ভেবেছিলো মেয়েকে ফাসিতে ঝুলিয়ে বলবে আত্মহত্যা । কলিম কে দেখেই গগন বিদারী চিৎকার দিয়ে উঠেছিলো মেয়ে । কি জানি কি হয়েছিলো কলিম এর , হয়ত মায়া , কিন্তু কলিম স্বীকার করে না । তবে মেয়ের চিৎকার শুনে কয়েক মুহূর্ত থমকে যাওয়ায় এক নতুন ফন্দি এসেছে মাথায় ।
কলিম দুদিন ধরে সেটা নিয়েই চিন্তা করছে । অত্র এলাকার সবচেয়ে মান্যগণ্য ব্যাক্তি হলো কেবলা বাবা ফকির লালু চান্দ । এই ফকির লালু চান্দ এর সাথে শেখ বাড়ির সাথে ভালো সম্পর্ক । যদিও সবাই জানে ফকির বাবা নিরপেক্ষ লোক , এক মাত্র মাওলা ছাড়া কারো কাছে নতি স্বীকার করেন না । কলিমুদ্দিন সিদ্ধান্ত নিলেন ফকির বাবার সাথে পরামর্শ করবেন ।
শেষে সব চিন্তার অবসান ঘটিয়ে রওনা করেন , সাথে বিশ্বস্ত সহকারি সফিক কে নিয়ে। এই সফিক ছেলেটা কলিমুদ্দিন এর নতুন সংগ্রহ । তবে এর পেছনে ইনভেস্ট করেছেন অনেক । ছোট বেলা থেকে পড়াশুনা করিয়েছেন পিতৃ হীন সফিক কে , উকিল বানিয়েছেন । তবে বিনিময়ে কিনে নিয়েছেন সফিক এর আত্মা । চোখ বুজে সফিক কলিমুদ্দিন এর সব হুকুম মেনে চলে ।
ফকির বাবার কাছে আসার সময় , সাথে করে আরও একটি জিনিস এনেছে কলিম , সেটা হচ্ছে মোটা মোটা দশটা এক হাজার এর বান্ডেল । ফকির বাবার পদতলে সেই বান্ডেল গুলি রাখতেই ফকির বাবা হাত রাখেন কলিমুদ্দিন এর মাথায় । অমনি সব দুশ্চিন্তা গায়েব , কিছুক্ষন চোখ বুজে থেকে ফকির বাবা মুখ খোলেন “ মাইয়ারে কাইট্টা গাঙ্গে ভসাও নাই ক্যান কলিম? মায়া লাগসে বুঝি?”
“ আপনে বললে সেটাই করুম বাবা” নত শীর কলিম উত্তর দেয় ।
“ উহু , ওইটা তো ভালা পথ না , মাওলার দরবারে আইসো , এখন মাওলার পথে চলবা , নইলে আমি মাওলার কাছে জবাব দিমু কি?”
“ তাইলে আপনেই কন কি করুম”
“ বিয়া দিবা , আর কি করবা, সেয়ানা মাইয়া আরও আগে বিয়া দাও নাই সেইটাই তো অন্যায় হইসে”
“ কে বিয়া করবো বাবা , এই বলে ডুকরে কেঁদে ওঠে কলিম , একদম বাচ্চা ছেলের মতন”
“ আছে আছে , পাত্র সামনেই আছে” বাবা স্মিত হেসে বলেন।
কলিম ধন্দে পরে যায় , বাবা কি নিজে বিয়ে করতে চাচ্ছে নাকি ? ভেবে পায় না । তবে এটা হলে মন্দ হয় না মনে মনে ভাবে কলিম । বাবার বিবি হলে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাবে না । কিন্তু সরাসরি জিজ্ঞাস করতে সাহস পায় না কলিম । নষ্ট হয়ে যাওয়া মেয়েকে কিভাবে বাবা কে অফার করে? চুপ করে থাকে কলিম , ভাবে বাবাই বলুক ।
কিছুক্ষন ভেবে বাবা বলে “ তোমার সাথের মানুষ কি বিশ্বাসযোগ্য?”
“ একদম বাবা , ওরে কইলে এহন জান দিয়া দিবো” কলিম নির্দ্বিধায় বলে । শুনে বাবা কিছুক্ষন আবার চুপ থাকে তারপর বলে
“ শালিস ডাকো, মোল্লা বাড়ির উপরে শালিস ডাকো”
অবাক হয় কলিম , মোল্লা বাড়ির উপর শালিস ডেকে কি হবে ভেবে পায় না । তবে বাবার কথা শেষ হয়নি দেখে কিছু বলার ও সাহস পায় না। এদিকে বাবা আবারো বলতে শুরু করেন ।
“ অভিযোগ করো , মোল্লা বাড়ির লোকজন তোমার বাড়িতে জীন পাঠাইসে , হেই জীন তোমার মাইয়ারে পোয়াতি করসে” এটুকু বলে বাবা আবারো একটু চুপ থাকে । কলিম উদ্দিন পেছনে নাড়াচাড়ার শব্দ পায় । বিরক্ত হয় সফিক এর উপর , পাছে বাবা ক্ষেপে যায় এই ভেবে।
“ শালিসে তুমি বিচার চাইবা হইলো , মোল্লা বাড়ির পোলার লগে জানি তোমার মাইয়ার বিয়া হয় , আর তুমি যৌতুক হিসাবে বিলের জমি দিয়া দিবা”
এবার কলিম একটু বেজার হলো , জমি যাবে এতে ওর আপত্তি আছে ।
“ না খোস হইলা ব্যাটা?” স্মিত হেসে জিজ্ঞাস করলো ফকির বাবা ,
“ আপনের আদেশ মাথার উপর রাখমু বাবা , আপনে সব কিছু দিয়া দিতে কইলে সব দিয়া দিমু” মিথ্যা বানিয়ে বলল কলিম।
“ তাইলে তাই করো, তয় বুঝলা কলিম , তমারে আমি ভালবাসি , নএতো চিন্তা কইরা তোমার লইগা এই সুযোগ তৈয়ার করতাম না , সাপ ও মরল লাঠি ও ভাংলো না । পোয়াতি মাইয়া গোছাইয়া দিলা লগে বিবাদ ও মিট্টা গেলো হা হা হা হা”
“ কিন্তু লোকে কি বিশ্বাস করবো?” কলিম একটু দ্বিধায় ছিলো , প্রশ্নটা তাই করলো ,
“ হেইটা তুমি আমার উপরে ছাইরা দেও, আর হো , কইসিলা না তোমার লগের মানুষটা তোমার লইগা জান দিতে পারবো , হের জানটা আমি নিয়া নিমু” খুব স্বাভাবিক ভাবে বলল ফকির বাবা , কিন্তু কলিম একেবারে হতবাক হয়ে গেলো । এটা বাবা কি বলছে , সফিক এর মতন এমন ছেলেকে মারতে হবে কেনো? কত কাজের ছেলে । প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকালো কলিম ফকির বাবার দিকে ।
বাবা বলল “ পথের কাঁটা” আর কিছু বলল না , ইতিমধ্যে সফিক কে দুজন লোক ধরে ফেলেছে , টেনে নিয়ে যাচ্ছে । কলিম জিজ্ঞাসু দৃষ্টে বাবার দিকে আবার তাকালো ।
বাবা হেসে বললেন “ সব মাওলার কৃপা, যা তোমরা দেখো না তা আমি দেখি”
কলিম এর বুঝতে বাকি রইলো না ঘটনা কি ? এই সফিক ওনার মেয়ের পেটের বাচ্চার বাবা । একটা কথা জিজ্ঞাস করবে কিনা কলিম বুঝতে পারছে না । তবে সফিক পোলাটা অনেক কাজের , একে হাত ছাড়া করতে মন চাইছে না । আগে কেনো এই বুদ্ধি মাথায় এলো না সেটাই বুঝতে পারছে না কলিম । সফিক এর সাথে মেয়ের বিয়ে দিলে ই হয়ে যেত । অবশ্য আগে কলিম জানত ও না , সফিক এমন বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে সেটা কলিম কিছুতেই আন্দাজ করতে পারেনি । আর না করতে পারলেও কি , সফিক যদি এই কাজ নাও করতো তবুও কলিম এর কথা ফেলতে পারত না । কলিম এর পোয়াতি মেয়ে কে বিনা বাক্যে বিয়ে করে ফেলত । অবশ্য এতে বদনাম কিছু থেকেই যেত , মনে মনে ভাবে কলিম ।
“ কলিম মনে পরস্ন থাকলে কইরা ফালাও?” হঠাত ফকির বাবা বলে ওঠেন , না রাগ করেনি ফকির বাবা সেটা দেখে হাপ ছেড়ে বাঁচে কলিম । বলে
“ না না বাবা আমি নাদান , ক্ষমা করেন আমারে”
“ বড্ড ভালবাসি তোমারে কলিম , রাগ গোস্বা করি নাই তোমার উপর , তয় মনে রাখবা , যে একবার বিশ্বাস ভাঙ্গে সে আবার ওর বিশ্বাস ভাঙতে পারে”
কলিম উঠে চলে আসে একা । পরদিন রটে যায় সফিক ছেলেটা , বিশ ভরি স্বর্ণ আর দশ লক্ষ টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে । সাথে বিধবা মা কেও নিয়ে গেছে ।
এর পরের শুক্রবার শালিস বসে , কলিম নালিশ করেছে মোল্লা বাড়ির বিরুদ্ধে । যেহেতু নালিশ এর ধরন অলৌকিক তাই শালিস এর প্রধান করা হয়েছে ফকির বাবা কে । উনি তন্ত্র মন্ত্র করে সেই নালিশ এর সত্যতা বিচার করলেন । শেষে কলিম এর নালিশ টিকে গেলো , আমজাদ মোল্লা প্রথমে অখুসি হলেও , পরে বিলের ১৫০ বিঘা জমিন পেয়ে খুশিতে ডগোমগো হয়ে গেলো । সেদিন সন্ধার পর বিয়ে হয়ে গেলো , শেখ বাড়ির জীন দ্বারা পোয়াতি মেয়ে গেলো মোল্লা বাড়ি, সাথে নিয়ে গেলো ১৫০ বিঘা জমিন ।
সফিক এর লাশ পাওয়া গেলো চারদিন পর , নদীতে ভেসে থাকতে , পকেটে কিছু স্বর্ণ অলংকার সহ । তবে সফিক এর মায়ের কোন হদিস কেউ দিতে পারলো না ।
(সমাপ্ত)
কলিমুদ্দিন শেখ বেশ চিন্তিত , বেশ কয়দিন রাতের বেলা ঘুমান না । চোখে কোটরের ভেতর ঢুকে যাচ্ছে , দেখতে ভয়ংকর বৃদ্ধ মনে হচ্ছে ওনাকে । এমনিতে ৬১ বছর বয়সেও বেশ তাগড়া শরীর । কিন্তু গত কয়েক দিনের ধকলে বেশ কাহিল হয়ে গেছেন । দেখে মনে হয় রাতারাতি বয়স বেড়ে গেছে ২০ । কারো সাথে ভালো করে কথা বলছেন না , যেই কথা বলতে আসছে খেঁকিয়ে উঠছেন । ভয়ে কেউ সামনেও আসছে না । দু দিনের মাঝে পরপর তিন বউ মার খেয়েছে , যা এই পর্যন্ত রেকর্ড । এখন ওনার স্ত্রীরা ও ওনার সাথে রাত্রি জাপন করতে চাচ্ছেন না । রাত হলেই বড় বউ মেজো বউয়ের দিকে তাকায় , মেজো বউ ছোট বউয়ের দিকে ।
এইতো গতকাল রাতে ছোট বউ মার খেলো , এক দিনে বড় বউ সকালে আর মেজো বউ ঘুমের সময় মার খেয়ে কেউ সেই রাতে কলিম এর ঘরে যাওয়ার সাহস পাচ্ছিলো না । তখন ছোট বউ আছিয়া এসে বলল “ এতো ভয় পাওন এর কি আছে খাটাস বুইরারে , আমি যাইতাসি , গায়ে হাত তুল্লে হাত ভাইঙ্গা দিমু”। কিন্তু আধা ঘণ্টা পার না হতেই ছোট বউ এর চিৎকার ভেসে এলো । বাড়ির সবাই আরও ভয় পেয়ে গেলো । ছোট বউ আছিয়া বড় পেয়ারের বউ কলিম এর । বছর তিনেক হলো বিয়ে করেছেন ছোট বউ কে । এখনো বাচ্চা কাচ্চার দেখা নেই , হবে বলেও মনে হয় না । তবুও কলিম বাকি দুই বউয়ের চেয়ে ছোট বউ কে আদর করেন বেশি । অবশ্য আদর করার মতই বউ এই আছিয়া , নাদুস নুদুস শরীর , কোমর পর্যন্ত লম্বা চুল । মুখ খানাও দেখার মতন ।
আজ সেই বউয়ের গায়ে হাত তোলা !!! তাই বাড়ির সবাই আরও বেশি চিন্তিত হয়ে পরলো । ভয়ে সারাদিন কেউ কাছে যায়নি । অবশ্য কলিমুদ্দিন এর এমন রাগ হওয়ার কারন ও আছে । যে ঘটনা ঘটেছে সেটা কম দুসচিন্তার বিষয় নয় । মোট সাত কন্যা আর তিন পুত্রের জনক কলিমুদ্দিন , মোট চার স্ত্রীর গর্ভে জম্ন এদের । প্রথম ছয় কন্যার বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন সময় মত । কিন্তু একেবারে ছোট কন্যার সখ হয়েছিলো পড়ালেখা করার। সাথে কন্যার মায়ের ও সখ হয়েছিলো । সেবার কি মনে করে জানি কমিল্মুদ্দিন মেনে নিয়েছিলেন সেই সখ । কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজ এর পা রাখতে দিয়েছিলেন । আর সেখান থেকেই বিপত্তির শুরু ।
প্রথম কিছুদিন মেয়েকে কড়া শাসনে বডিগারড সহ কলেজে পাঠিয়েছিলেন । কিন্তু ধিরে ধিরে অন্য দিকে মনোযোগ চলে যাওয়ায় শিথিল হয়ে আসে সেই অনুশাসন । মোল্লা বাড়ির সাথে পূবের বিলের জমি নিয়ে বিরোধ শুরু হওয়ায় এদিকে আর মনোযোগ দিতে পারেন নি । আর সেই সুযোগে মেয়ে বংশের মুখে চুনকালি দিয়েছে । আজ পর্যন্ত শেখ বাড়ির মেয়েদের দিকে কেউ চোখ তুলে তাকাতে সাহস করেনি । এর শেখ বাড়ির মেয়েরাও বেগানা মরদ এর দিকে চোখে তুলে তাকায় নি । আর সেই শেখ বাড়ি মেয়ে হয় চোখ তুলে তাকা তাকি তো বাচ্চাদের খেইল । একদম পোয়াতি হয়ে বাড়ি এসেছে !!!!
বাজারে ইতিমধ্যে গুঞ্জন উঠেছে , দেদারসে টাকা ঢালছেন কলিমুদ্দিন , তাই কিছুটা কমতির দিকে । তবে মোল্লা বাড়ির লোকজন ও খবর পেয়েছে কিছুটা , ওরাও চেষ্টার কমতি করছে না । কলিমুদ্দিন এর ভাগ্য ভালো যে মোল্লা বাড়ির অবস্থা আর আগের মতন নেই । নইলে আরও বেগ পেতে হতো এই কলঙ্ক ধামা চাপা দিতে । কিন্তু যত কিছুই করুক কলিমুদ্দিন, এসব ব্যাপারে মানুষ এর মুখ আটকানো সম্ভব নয় । কিছু কিছু ফিস ফিস এখনো চলছে । লোকে মুখ গুজে হাসছে , সেই দেখে কলিম এর গা জ্বলে যাচ্ছে ।
কলিম একবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো মেয়েকে খুন করবে । যে মেয়ে বাপ দাদার মুখে চুনকালি দেয় সেই মেয়ের বেঁচে থাকার দরকার নেই । এই ব্যাপারে কলিমুদ্দিন এর তিন ছেলে ও একমত । তারাও এই নিয়ে বেশ লজ্জিত বোধ করছে । সিদ্ধান্ত পাকা করে মেয়ের ঘরে গিয়েছিলো , হাতে ছিলো দড়ি , ভেবেছিলো মেয়েকে ফাসিতে ঝুলিয়ে বলবে আত্মহত্যা । কলিম কে দেখেই গগন বিদারী চিৎকার দিয়ে উঠেছিলো মেয়ে । কি জানি কি হয়েছিলো কলিম এর , হয়ত মায়া , কিন্তু কলিম স্বীকার করে না । তবে মেয়ের চিৎকার শুনে কয়েক মুহূর্ত থমকে যাওয়ায় এক নতুন ফন্দি এসেছে মাথায় ।
কলিম দুদিন ধরে সেটা নিয়েই চিন্তা করছে । অত্র এলাকার সবচেয়ে মান্যগণ্য ব্যাক্তি হলো কেবলা বাবা ফকির লালু চান্দ । এই ফকির লালু চান্দ এর সাথে শেখ বাড়ির সাথে ভালো সম্পর্ক । যদিও সবাই জানে ফকির বাবা নিরপেক্ষ লোক , এক মাত্র মাওলা ছাড়া কারো কাছে নতি স্বীকার করেন না । কলিমুদ্দিন সিদ্ধান্ত নিলেন ফকির বাবার সাথে পরামর্শ করবেন ।
শেষে সব চিন্তার অবসান ঘটিয়ে রওনা করেন , সাথে বিশ্বস্ত সহকারি সফিক কে নিয়ে। এই সফিক ছেলেটা কলিমুদ্দিন এর নতুন সংগ্রহ । তবে এর পেছনে ইনভেস্ট করেছেন অনেক । ছোট বেলা থেকে পড়াশুনা করিয়েছেন পিতৃ হীন সফিক কে , উকিল বানিয়েছেন । তবে বিনিময়ে কিনে নিয়েছেন সফিক এর আত্মা । চোখ বুজে সফিক কলিমুদ্দিন এর সব হুকুম মেনে চলে ।
ফকির বাবার কাছে আসার সময় , সাথে করে আরও একটি জিনিস এনেছে কলিম , সেটা হচ্ছে মোটা মোটা দশটা এক হাজার এর বান্ডেল । ফকির বাবার পদতলে সেই বান্ডেল গুলি রাখতেই ফকির বাবা হাত রাখেন কলিমুদ্দিন এর মাথায় । অমনি সব দুশ্চিন্তা গায়েব , কিছুক্ষন চোখ বুজে থেকে ফকির বাবা মুখ খোলেন “ মাইয়ারে কাইট্টা গাঙ্গে ভসাও নাই ক্যান কলিম? মায়া লাগসে বুঝি?”
“ আপনে বললে সেটাই করুম বাবা” নত শীর কলিম উত্তর দেয় ।
“ উহু , ওইটা তো ভালা পথ না , মাওলার দরবারে আইসো , এখন মাওলার পথে চলবা , নইলে আমি মাওলার কাছে জবাব দিমু কি?”
“ তাইলে আপনেই কন কি করুম”
“ বিয়া দিবা , আর কি করবা, সেয়ানা মাইয়া আরও আগে বিয়া দাও নাই সেইটাই তো অন্যায় হইসে”
“ কে বিয়া করবো বাবা , এই বলে ডুকরে কেঁদে ওঠে কলিম , একদম বাচ্চা ছেলের মতন”
“ আছে আছে , পাত্র সামনেই আছে” বাবা স্মিত হেসে বলেন।
কলিম ধন্দে পরে যায় , বাবা কি নিজে বিয়ে করতে চাচ্ছে নাকি ? ভেবে পায় না । তবে এটা হলে মন্দ হয় না মনে মনে ভাবে কলিম । বাবার বিবি হলে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাবে না । কিন্তু সরাসরি জিজ্ঞাস করতে সাহস পায় না কলিম । নষ্ট হয়ে যাওয়া মেয়েকে কিভাবে বাবা কে অফার করে? চুপ করে থাকে কলিম , ভাবে বাবাই বলুক ।
কিছুক্ষন ভেবে বাবা বলে “ তোমার সাথের মানুষ কি বিশ্বাসযোগ্য?”
“ একদম বাবা , ওরে কইলে এহন জান দিয়া দিবো” কলিম নির্দ্বিধায় বলে । শুনে বাবা কিছুক্ষন আবার চুপ থাকে তারপর বলে
“ শালিস ডাকো, মোল্লা বাড়ির উপরে শালিস ডাকো”
অবাক হয় কলিম , মোল্লা বাড়ির উপর শালিস ডেকে কি হবে ভেবে পায় না । তবে বাবার কথা শেষ হয়নি দেখে কিছু বলার ও সাহস পায় না। এদিকে বাবা আবারো বলতে শুরু করেন ।
“ অভিযোগ করো , মোল্লা বাড়ির লোকজন তোমার বাড়িতে জীন পাঠাইসে , হেই জীন তোমার মাইয়ারে পোয়াতি করসে” এটুকু বলে বাবা আবারো একটু চুপ থাকে । কলিম উদ্দিন পেছনে নাড়াচাড়ার শব্দ পায় । বিরক্ত হয় সফিক এর উপর , পাছে বাবা ক্ষেপে যায় এই ভেবে।
“ শালিসে তুমি বিচার চাইবা হইলো , মোল্লা বাড়ির পোলার লগে জানি তোমার মাইয়ার বিয়া হয় , আর তুমি যৌতুক হিসাবে বিলের জমি দিয়া দিবা”
এবার কলিম একটু বেজার হলো , জমি যাবে এতে ওর আপত্তি আছে ।
“ না খোস হইলা ব্যাটা?” স্মিত হেসে জিজ্ঞাস করলো ফকির বাবা ,
“ আপনের আদেশ মাথার উপর রাখমু বাবা , আপনে সব কিছু দিয়া দিতে কইলে সব দিয়া দিমু” মিথ্যা বানিয়ে বলল কলিম।
“ তাইলে তাই করো, তয় বুঝলা কলিম , তমারে আমি ভালবাসি , নএতো চিন্তা কইরা তোমার লইগা এই সুযোগ তৈয়ার করতাম না , সাপ ও মরল লাঠি ও ভাংলো না । পোয়াতি মাইয়া গোছাইয়া দিলা লগে বিবাদ ও মিট্টা গেলো হা হা হা হা”
“ কিন্তু লোকে কি বিশ্বাস করবো?” কলিম একটু দ্বিধায় ছিলো , প্রশ্নটা তাই করলো ,
“ হেইটা তুমি আমার উপরে ছাইরা দেও, আর হো , কইসিলা না তোমার লগের মানুষটা তোমার লইগা জান দিতে পারবো , হের জানটা আমি নিয়া নিমু” খুব স্বাভাবিক ভাবে বলল ফকির বাবা , কিন্তু কলিম একেবারে হতবাক হয়ে গেলো । এটা বাবা কি বলছে , সফিক এর মতন এমন ছেলেকে মারতে হবে কেনো? কত কাজের ছেলে । প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকালো কলিম ফকির বাবার দিকে ।
বাবা বলল “ পথের কাঁটা” আর কিছু বলল না , ইতিমধ্যে সফিক কে দুজন লোক ধরে ফেলেছে , টেনে নিয়ে যাচ্ছে । কলিম জিজ্ঞাসু দৃষ্টে বাবার দিকে আবার তাকালো ।
বাবা হেসে বললেন “ সব মাওলার কৃপা, যা তোমরা দেখো না তা আমি দেখি”
কলিম এর বুঝতে বাকি রইলো না ঘটনা কি ? এই সফিক ওনার মেয়ের পেটের বাচ্চার বাবা । একটা কথা জিজ্ঞাস করবে কিনা কলিম বুঝতে পারছে না । তবে সফিক পোলাটা অনেক কাজের , একে হাত ছাড়া করতে মন চাইছে না । আগে কেনো এই বুদ্ধি মাথায় এলো না সেটাই বুঝতে পারছে না কলিম । সফিক এর সাথে মেয়ের বিয়ে দিলে ই হয়ে যেত । অবশ্য আগে কলিম জানত ও না , সফিক এমন বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে সেটা কলিম কিছুতেই আন্দাজ করতে পারেনি । আর না করতে পারলেও কি , সফিক যদি এই কাজ নাও করতো তবুও কলিম এর কথা ফেলতে পারত না । কলিম এর পোয়াতি মেয়ে কে বিনা বাক্যে বিয়ে করে ফেলত । অবশ্য এতে বদনাম কিছু থেকেই যেত , মনে মনে ভাবে কলিম ।
“ কলিম মনে পরস্ন থাকলে কইরা ফালাও?” হঠাত ফকির বাবা বলে ওঠেন , না রাগ করেনি ফকির বাবা সেটা দেখে হাপ ছেড়ে বাঁচে কলিম । বলে
“ না না বাবা আমি নাদান , ক্ষমা করেন আমারে”
“ বড্ড ভালবাসি তোমারে কলিম , রাগ গোস্বা করি নাই তোমার উপর , তয় মনে রাখবা , যে একবার বিশ্বাস ভাঙ্গে সে আবার ওর বিশ্বাস ভাঙতে পারে”
কলিম উঠে চলে আসে একা । পরদিন রটে যায় সফিক ছেলেটা , বিশ ভরি স্বর্ণ আর দশ লক্ষ টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে । সাথে বিধবা মা কেও নিয়ে গেছে ।
এর পরের শুক্রবার শালিস বসে , কলিম নালিশ করেছে মোল্লা বাড়ির বিরুদ্ধে । যেহেতু নালিশ এর ধরন অলৌকিক তাই শালিস এর প্রধান করা হয়েছে ফকির বাবা কে । উনি তন্ত্র মন্ত্র করে সেই নালিশ এর সত্যতা বিচার করলেন । শেষে কলিম এর নালিশ টিকে গেলো , আমজাদ মোল্লা প্রথমে অখুসি হলেও , পরে বিলের ১৫০ বিঘা জমিন পেয়ে খুশিতে ডগোমগো হয়ে গেলো । সেদিন সন্ধার পর বিয়ে হয়ে গেলো , শেখ বাড়ির জীন দ্বারা পোয়াতি মেয়ে গেলো মোল্লা বাড়ি, সাথে নিয়ে গেলো ১৫০ বিঘা জমিন ।
সফিক এর লাশ পাওয়া গেলো চারদিন পর , নদীতে ভেসে থাকতে , পকেটে কিছু স্বর্ণ অলংকার সহ । তবে সফিক এর মায়ের কোন হদিস কেউ দিতে পারলো না ।
(সমাপ্ত)