15-06-2022, 05:50 PM
অর্ক ছুটতে ছুটতে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। ওর হাত পা সব ঠান্ডা।
-কিরে ঠান্ডা মেরে গেছিস যে।
-দারুণ এক্সপিরিয়েন্স।
-মালটা সাজিয়ে নে গিয়েই নামাতে হবে।
-সায়ন্তন।
-দাদা লাইভ ছবি তুলেছি।
-অর্ক একটা ফোন মেরে দে অফিসে, আমরা ঘন্টা খানেকের মধ্যে পৌঁছে যাচ্ছি।
-ঠিক আছে দাদা।
মুখার্জীর ফোনটা বেজে উঠলো।
-হো হো করে হাসছেন। তাই। ঠিক আছে আমাদের কাজও শেষ। আমরাও বেরোচ্ছি।
আমাদের দিকে তাকালেন।
-আপনাকে আর ছাড়া যাবেনা।
-কেনো।
-এক দিনে দুটো এ্যাসাইনমেন্ট কে দেবে বলুন।
-ওটা কি মাল এবং বামাল সমেত।
-অবশ্যই।
-ওই মালটা পাবো কি করে।
-আপনি অফিসে যান পৌঁছে দিচ্ছি।
-এবার ফেরার ব্যবস্থা করুণ।
-আমার গাড়িটা নিয়ে চলে যান। আমাদের যেতে যেতে মিড নাইট হয়ে যাবে।
-আপনি যা পারুন করুন আমাকে গিয়ে নিউজ ধরাতে হবে। হ্যাঁ রে সায়ন্তন সবার ছবি নিয়েছিস।
-হ্যাঁ দাদা।
-নামের গন্ডগোল করবি নাতো।
-সব লিখে নিয়েছি।
আমরা মুখার্জীর গাড়িতে চেপে বসলাম। গাড়ি ছাড়লো। ঘরির দিকে তাকালাম সাড়ে দশটা।
একটা সিগারেট ধরালাম।
-অনিদা তুমি একটা ফোন করো এবার। সবাই খুব টেনসনে।
-কি করে বুঝলি। দাদা মল্লিকদা সবাই আমার কথা শোনার জন্য ছুটে এসেছিলো।
-ঠিক আছে আগে সিগারেটটা খেতে দে।
-তোমার কোনো টেনসন হচ্ছে না।
-একেবারে না।
-সত্যি জীবনে প্রথম লাইভ এ্যাকসন দেখলাম।
-কিরকম লাগলো বল।
-গিয়ে লিখে প্রকাশ করবো।
-সায়ন্তন।
-দাদা আমাকে একটু আপনার পাশে থাকতে দিন।
-আছিস তো।
-আমি খুব ভাগ্যবান। আপনার কথা শুনেছি আপনার সঙ্গে প্রথম কাজ করলাম। তাও টেররিস্ট ভার্সেস এনএসজি।
-দাদা এরা সব সাদা পোষাকে কেনো। অর্ক বললো।
ড্রাইভার সাহেব বলে উঠলেন। সাদা পোষাক না হলে পাখি উড়ে যাবে। গাড়ি গুলো দেখেছো কোনো বোর্ড নেই খালি একটা করে কোড নম্বর লেখা রয়েছে।
-সত্যি।
-হ্যাঁ।
-আপনি চালাতে পারেন।
-প্রয়োজন পরলে চালাই।
-এইরকম কেস এর আগে হ্যান্ডেল করেছেন।
-না। এই প্রথম।
-কেনো।
-আমাদের কাছে খবর আসতে আসতে পাখি উড়ে যায়।
-কেনো।
-আমাদের মধ্যেই খেয়োখেয়ি আছে।
আমি মোবাইলটা বার করলাম। ছোট্ট একটা ম্যাসেজ লিখলাম। কলকাতায় ঢুকে পরেছি। অক্ষত শরীরে। কোনো টেনসন করার দরকার নেই। পর পর সবাইকে ম্যাসেজটা করে দিয়ে মোবাইল অফ করে দিলাম।
অফিসে যখন পৌঁছলাম গেটের মুখে বেশ ভিড় দেখলাম। একটু অবাক হলাম। সন্দীপ নিচে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে গাড়ি থেকে নামতে দেখে এগিয়ে এলো।
-কিরে! সব ঠিক আছে।
-কি দেখছিস চোখে নেবা হয়েছে। ভিড় কেনো ?
-সবাই অফিসের স্টাফ।
-এখানে ভিড় করেছে কেনো।
-কাগজ দেরি করে বেরোবে। কেনো বেরোবে।
-কে বলেছেন। গলাটা একটু চড়া হয়ে যেতেই দেখলাম ভিড়টা পাতলা হতে শুরু করলো।
-স্যার আপনি অনিবাবু।
-হ্যাঁ।
-মুখার্জী বাবু এই চিপটা দিতে বললেন।
-আর কিছু দেন নি ?
-সরি স্যার।
ভদ্রলোক ছুটে গাড়িতে চলে গেলেন। একটা ফাইল আমার হাতে দিয়ে বললেন
-সব ইনফর্মেসন এখানে আছে।
-অসংখ্য ধন্যবাদ ভেতরে এসে একটু কফি খেয়ে যান। সায়ন্তন।
-দাদা।
-দেখতো তোর ক্যামেরায় ঢোকে কিনা।
-ঢুকলে কপি করে নেবো।
-মেরিটে জায়গা থাকলে করে নে। নাহলে ওপরে চল। সন্দীপ ওনাদের একটু জল আর কফির ব্যবস্থা করো।
ওনাদের দিকে তাকিয়ে, আপনারা পাঁচ মিনিট একটু বসে যান।
সোজা ওপরে চলে এলাম।
নিউজরুমে ঢুকতেই দাদা মল্লিকদা এগিয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।
-সবাইকে কেনো কষ্ট দিস।
-আমি কাউকে কষ্ট দিইনি। অর্ক লিখতে বসে যা। তুই নিউজ কর, আমি গল্প লিখছি।
-অরিত্র।
-দাদা।
-দ্বীপায়নকে ডাক।
-এখানেই আছে, টয়লেটে গেছে।
-সায়ন্তন।
-দাদা।
-ছবিগুলো ঘপা ঘপ রেডি করে দাদাকে দেখিয়ে নে।
দাদার দিকে তাকিয়ে বললাম কিছু খাওয়াবে। তুমি ওরকম ভাবে তাকিয়ে আছো কেনো। মল্লিকদাকে বললাম।
মল্লিকদা কোনো কথা বলছে না।
আমি আমার টেবিলে বসে গেলাম।
অর্ক আমার পাশে।
-সায়ন্তন।
ছুটে আমার কাছে এলো।
-দাদা
-তুই মল্লিকদাকে গল্পটা বল আর ছবিগুলে দেখা। আর একটা লেখা তৈরি কর।
-ঠিক আছে।
আমি লিখতে বসে গেলাম। যেনো পরীক্ষা দিতে বসেছি। হাতটা ঝড়ের মতো চলতে শুরু করলো। এক একটা পাতা রাখছি নিমেষে চলে যাচ্ছে কমপোজের জন্য। যখন লেখা শেষ করলাম তখন রাত সাড়ে বারোটা। অর্ক তখনো লিখে চলেছে।
-কিরে আর কতোটা লিখবি।
-থামছে না।
-তুই কি উপন্যাস লিখছিস।
-কি করবো, শেষ হচ্ছেনা।
-শেষ কর শেষ কর।
আমি মল্লিকদার টেবিলে এসে বসলাম। আমার লেখার প্রুফ দেখছে। আমার দিকে তাকালো। ফিক করে হাসলো।
-কি হলো হাসছো যে।
-এসেই বোমা ফাটালি।
-তোমরা খামোকা টেনসন নিলে।
-বাড়িতে একবার ফোন কর।
-করবো না।
-কেনো।
-একটু কষ্ট পাক।
-তুই তোর দিকটা দেখছিস।
-এই জায়গাটায় আমি খুব সেলফিস। বলতে পারো একরোখা।
-যদি কোনো অঘটন ঘটতো।
-ঘটলে ঘটতো। পৃথিবীতে কারুর জন্য কিছু থেমে থাকে।
মল্লিকদা হাসি হাসি চোখে আমার দিকে তাকিয়ে।
-কেমন নামালাম বলো।
-তুই যেকোনো কাগজের এ্যাসেট।
-গ্যাস মারতে শুরু করলে। দেখো দাদা চা খাওয়ালোনা।
-তোর টেবিলটা দেখ।
জিভ বার করলাম।
-কখন দিয়ে গেছে।
-অনেকক্ষণ। তোকে কেউ ডিস্টার্ব করেনি।
-দাঁড়াও ঠান্ডা চা খাই।
-যাঃ তা হয়। মালিক বলে কথা।
-ছোট মনে হয় আজকাল এইভাবে কথা বলতে বলেছে।
-অফিসে।
-খোঁজ নিতে হবে।
সন্দীপ কাছে এসে দাঁড়ালো।
বটাদা চা নিয়ে এলো। সবাইকে দিলো।
-রাজ্য জয় করে এলে।
-তুমি খেপে যাচ্ছ কেনো।
-তোমার কিছু হলে আমরা না খেতে পেয়ে মরবো।
-গুরু আমাকে নিয়ে যেতে পারতিস।
-তোর বৌ বিধবা হলে কাকে জবাবদিহি করতাম।
-ইস। এইসব বাচ্চা বাচ্চা ছেলে গুলো আছে।
-একবার সার্কুলেসনের ভদ্রলোককে খবর দেনা।
দাদার ঘরে এসে হত্যে দিয়ে পরে আছে। সব কিছু দেখে বলে এক লাখ ইমপ্রেসন বেশি দেবে।
-দাদা কি বলছে।
-পঞ্চাশের বেশি উঠতে চাইছে না।
হাসলাম।
মল্লিকদার ফোনটা বেজে উঠলো। নম্বর দেখেই বললো, তোকে চাইছে।
-মহা মুস্কিল।
-একবার কথা বলনা। মহাভারত অশুদ্ধ হবেনা।
-দাও।
-বল।
-লেখা শেষ হলো।
-হ্যাঁ।
-আমরা সবাই তোর জন্য অপেক্ষা করছি।
-ঘুমিয়ে পর।
-কেনো।
-আমি ফিরবোনা।
-প্লিজ।
-দেখছি।
-মল্লিকদাকে দে।
-ধর।