14-06-2022, 07:19 PM
এবার আমরা রওনা দিলাম ফুরফুরা শরিফের দিকে। গাড়ি যেন হাওয়ায় ভাসছে। জীবনে কোনোদিন এনকাউন্টারের সাক্ষী থাকিনি। যতোবার এনকাউন্টার করিয়েছি সব ঘোষ সাহেবকে দিয়ে, খালি জায়গা বলে দিয়েছি। কাজ করে চলে এসেছে। কাগজে লিখেছি। ওদের নাম ফেটেছে। ইনক্রিমেন্ট হয়েছে। রিওয়ার্ড জুটেছে কপালে।
আমরা যখন স্পটে পৌঁছলাম তখন সাড়ে আটটা বাজে। চারিদিকে ঘুট ঘুটে অন্ধকার। একেবারে গ্রামের পরিবেশ। এরই মধ্যে মনে হচ্ছে যেন নিশুতি রাত। দূরে একটা পোড়ো বাড়ি দেখা যাচ্ছে। তার সামনে একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে। মুখার্জীর গাড়ি থামলো। পেছন পেছন সব গাড়ি থামলো। মুখার্জী অর্কর কাছ থেকে সব কিছু জেনে নিয়ে ছক কষে নিলো। এই টিমে কুড়িজন আছে। সবাইকে দেখে মনে হচ্ছে ভীষণ সিম্পল। নো টেনসন ডু ফূর্তি। ব্যাপারটা এরকম অনেকদিন পর খাবার পাওয়া গেছে। হরির নামে খাবলা খাবলা করে খেতে হবে। নিমেষের মধ্যে ষোলো জন ছেলে রেডি হয়ে হাওয়া হয়ে গেলো।
-আমরা যাবো না ?
-দাঁড়ান মশাই তাড়া হুড়ো করলে হবে। পাখি ফুরুত হয়ে যেতে পারে।
আমরা সবাই চুপচাপ। ঝিঁঝি পোকার ডাক। আকাশ ভরা তারা।
মুখার্জীর ফোনটা বেজে উঠলো।
-হ্যাঁ স্যার খবর পাক্কা। তবে টের পেয়ে গেছে। আপনি অনুমতি দিলে স্টার্ট করতে পারি।
-ওদের ফার্স্ট ডিস্টার্ব করো। কি রিটার্ন দেয় দেখো। সেই বুঝে পজিসন নাও। পারলে ধরবে, না হলে মেরে দেবে।
-ঠিক আছে স্যার।
অর্ক. সায়ন্তন গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়িয়ে ঠক ঠক করে কাঁপছে।
-কিরে।
-আমরা চলে যাবো।
মুখার্জী এক ধমক দিলো।
পেছনে কিসের একটা আওয়াজ হলো।
একজন ছুটে চলে গেলো। তারপর দেখলাম আকিবকে গাড়ি থেকে বার করে আধমরা করে ফেললো। একটা কথা ভেসে এলো, অনিদা তোমাকে রাজনাথ ছাড়বে না।
মুখার্জী আমার দিকে তাকালো।
-এটা কি রাজনাথের স্কিম।
আমি হাসলাম।
-আপনিতো মশাই বড়ো ঘাঘু লোক। দেখবেন আমাকে যেনো না ফাঁসায়।
-কেনো ওই কেসটার কথা আপনার মনে নেই।
-আছে। ওটা আমি অন্য ভাবে মেটাবো।
-সে সুযোগ আর পাবেন না।
-কেনো।
-কালকেই সাসপেনসনের চিঠি ধরাবার ব্যবস্থা করবো।
-অনিমেষবাবু জানেন ?
-জানে না। জেনে যাবে।
-আপনি একটু আমাকে দেখবেন।
-এইতো দেখছি। মলের কেশের ফাইল প্রসেস হচ্ছে। তারপর এই ফাইলটা প্রসেসে যাবে।
মুখার্জী হো হো করে হেসে ফেললো।
গুলির আওয়াজ পেলাম। একটা দুটো তারপর পটকার মতো ফাটতে লাগলো। নিস্তব্ধ রাতের মেদুরতা গুলির শব্দে খান খান হয়ে ভেঙে পরছে। দূরে কোথাও আলোর ছটা দেখতে পাচ্ছি। হাল্কা একটা হৈ হৈ শব্দ।
-চলুন গাড়িতে উঠুন। কাছে যাবেন তো।
-হ্যাঁ।
-চলুন।
আমরা গাড়িতে উঠলাম।
সয়ন্তন ক্যামেরা অন করেছে।
অর্ক আমার পাশে সিঁটিয়ে বসে আছে।
আমি সন্দীপকে ফোন করলাম।
-কিরে তুই কোথায়।
-কথা বলার সময় নেই।
-প্লিজ।
-শোন কাগজ এখন প্রেসে পাঠাবি না। আমি না যাওয়া পর্যন্ত।
-কেনো!।
-কোনো প্রশ্ন করবিনা।
-দাদা রাগ করছে। খুব টেনসনে আছে।
-থাকুক।
-অর্ক নেই, সায়ন্তন নেই।
-তোকে তার কৈফিয়ত নিতে হবে না।
-কিরে গুলির আওয়াজ পাচ্ছি!
-শুনে যা, কুত্তার মতো চেঁচাচ্ছিস কেনো। মল্লিকদার গলা পেলাম। বুঝতে পারলাম। মল্লিকদা সন্দীপের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।
-তুই আমাকে ফোনটা দে। তোকে কথা বলতে হবেনা।
-তুই কোথায়। মল্লিকদা
-যেখানেই থাকি জানতে হবেনা। আমি না যাওয়া পর্যন্ত কাগজ বেরোবে না।
-প্লিজ তুই বল। সবাই কান্নাকাটি করছে।
-আমি মরতে এসেছি। হয়েছে।
-রাগ করছিস কেনো।
-এখন কথা বলার সময় নেই।
-কিরে গুলির আওয়াজ পাচ্ছি।
-গুলি চলছে, তাই।
কেটে দিলাম।
আসল কাজ শুরু হলো। ভেতর থেকে প্রচন্ড পরিমাণে রেসপন্স এলো। একঘন্টা ধরে রুদ্ধশ্বাস গুলির লড়াই চললো।
মুখার্জী এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
-সাতজনের মধ্যে ছটা মরলো একটা বেঁচে রইলো।
সবাই আমার সঙ্গে এসে হ্যান্ডসেক করলো।
-আপনারা কেউ ইনজিওরড হন নিতো।
-ব্যাটারা প্রিপেয়ার্ড ছিলোনা।
-সত্যি বলেছেন অনিবাবু, প্রচুর আর্মস।
মুখার্জী বাবুর দিকে তাকালাম।
-আপনার ইনটেলিজেন্স ?
-কালকে কথা বলতে হবে।
-একটা রিকোয়েস্ট করবো।
-বলুন।
-যেটাকে নিয়ে এলাম ওটাকে সেঁটিয়ে দিন।
-আপনার কাজে লাগবে না!
-হাসলাম। না।
অর্ক আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে।
সায়ন্তন ঢোক গিলছে।
মুখার্জী ইশারা করলো।
একজন এগিয়ে গেলো।
-যা তোকে ছেড়ে দিলাম।
অন্ধকারেও স্পষ্ট দেখলাম। বাঁচার জন্য আকিব গাড়ি থেকে নেমে তীর বেগে দৌড়তে শুরু করলো। একটা ছোট্ট আওয়াজ শরীরটা দুমড়ে মুচড়ে মাটিতে আছাড় খেয়ে পরলো। অর্ক সায়ন্তন চোখ বন্ধ করলো।
কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখলাম। আকিবের বডিটা টেনে হিঁচড়ে আমাদের সামনে দিয়ে নিয়ে চলে গেলো।
-তোরা দাঁড়িয়ে রইলি কেনো প্রত্যেকটা ছবি তুলে নে।
ওরা দৌড়ে ভেতরে চলে গেলো।
আমি মুখার্জীকে বললাম এবার একটা সিগারেট দিন।
মুখার্জী সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বার করে আমাকে দিলেন। আমি ধরালাম।
-লোকাল থানায় খবর দিয়েছেন।
-আগে দিইনি এখন দিলাম।
-কেনো ?
-ঘিটা ওরা খেয়ে নিতো।
-আপনার টিম লিস্টটা আমাকে দিন। প্রত্যেকের ছবি নিয়ে নিচ্ছি।
-কেনো।
-কালকে এটাই কাগজের মেইন স্টরি। কতটা মাইলেজ পাবেন বলুনতো।
-কিন্তু রাজনাথের কি ব্যবস্থা করবেন।
-ওটা দ্বিতীয় মল।
-বলেন কি।
-ঠিক বলছি।
-তাহলে ঝেড়ে দিই।
-তার আগে তিনটে ব্যাঙ্ক এ্যাকাউন্ট আপনাকে দেবো। মুজফ্ফরপুরের। ওটা সিল করে দিন।
-দিন।
-অফিসে আছে। কাজ শেষ হলে আপনি একটা ফোন করবেন।
-ঠিক আছে।
-আমাদের একটু আগে পাঠিয়ে দেবার ব্যবস্থা করুণ। গিয়ে নিউজটা করি।