Thread Rating:
  • 63 Vote(s) - 2.92 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়)
-আমি তিনটে ঘর রেডি করতে পেরেছি অনি। দামিনী মাসি বললো।
-যথেষ্ট। এই নাও তোমার মিত্রা।
দামিনী মাসি এগিয়ে এসে মিত্রাকে জড়িয়ে ধরলো। মিত্রা প্রণাম করতে যাচ্ছিল দামিনী মাসি ওর হাতটা ধরলো। চোখের ভাষায় বুঝিয়ে দিলো। না মা তোর প্রণাম আমি নিতে পারবোনা।
-কেনো!
-তুই অনির বৌ। আমার বুকে থাকবি।
আমরা সবাই বসার ঘরে এসে বসলাম। কবিতা শরবতের গ্লাস ট্রেতে করে সাজিয়ে নিয়ে এসেছে।
-বড়মা।
বড়মা আমার দিকে তাকালো।
-কবিতা।
-এটা কবিতা! সেদিন ওর ওইরকম গলার স্বর!
কবিতা সেন্টার টেবিলে ট্রেটা নামিয়ে সকলকে প্রণাম করলো।
-মাসি আমার ঘর রেডি?  মিত্রা জিজ্ঞাসা করলো।
-ওপরে তোর আর ছোটর ঘর রেডি করেছি। নীচে এই ঘরটা রান্না ঘর আর দাদার ঘর।
-খাওয়া কি মাসি। বেরোবো? আমি বললাম।
-তুই কোথায় বেরোবি। বড়মা আমার দিকে বড়ো বড়ো চোখ করে তাকালো।
-আমাকে এখন দু’তিন দিন পাবেনা।
-তার মানে! প্রত্যেকদিন বাড়ি ফিরবি। ছোটমা বললো।
-তোমার মেনুটা বলো। মাসির দিকে তাকালাম।
-খাবার সময় দেখবি।
-আমায় খেতে দাও কেটে পরি।
-তোর কোথাও যাওয়া হবেনা। ছোটমা বললো।
-প্রচুর কাজ, অনেক সময় নষ্ট হয়েছে।
-আমরাও একবার অফিসে যাবো, কি বল মল্লিক। দাদা বললো।
-আমাকেও বেরোতে হবে। ইসলাম ভাই বললো।
-তোরা সকলেই বেরিয়ে যা না। ছোটমা চেঁচিয়ে উঠলো।
-তোমরা বসো আমি আসছি।
-তুই আগে যাবিনা। আমি যাবো। মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো।
-তুই ছোটর ঘরে যা।
-তুই যা।
আমি বেরিয়ে এলাম। ওপরে এসে আমার চোখের পলক পরছে না। মাসি দারুণ রং করেছে আমার ঘরটা। হাল্কা কচি কলাপাতা রং। বাথরুমে সাদা টাইলস বসিয়েছে। একবারে ধব ধবে সাদা। আমূল পরিবর্তন করে দিয়েছে ঘরটার। কিন্তু টেবিলটা যেমন অগোছালো ঠিক তেমনি আছে।
ফোনটা বেজে উঠলো। দেখলাম টিনা ফোন করেছে।
-হ্যালো।
-বলো টিনা।
-বাড়ি পৌঁছলাম।
-ওরা ?
-সবাই পৌঁছে গেছে, নির্মাল্য আমাকে শেষে নামালো।
-নির্মাল্য চলে গেছে।
-না আমার ঘরে বসে।
-কেমন লাগলো তোমাদের।
-তুমি এলে তোমাকে বলবো।
-ঠিক আছে দেখি সময় করতে পারি কিনা।
-তারমানে!
-কলকাতায় আসা মানে আবার মূল স্রোতে মিশে যাওয়া, কোথায় টেনে নিয়ে যায় দেখি।
টিনা খিল খিল করে হেসে ফেললো।
-রাখি।
-আচ্ছা।
আলনা থেকে টাওয়েলটা কাঁধে নিলাম। গেঞ্জি প্যান্ট খুলে বাথরুমে ঢুকে গেলাম। ভালো করে ফ্রেস হয়ে বেরিয়ে এলাম। আলমারিটা খুলে একটা প্যান্ট গেঞ্জি বার করে নিলাম। দেখলাম যেখানে যা রেখে গেছিলাম সব ঠিক আছে। ড্রেস করে নিচে নেমে এলাম।
দেখলাম খাওয়ার সাজানো হয়ে গেছে টেবিলে। আমার আগেই মিত্রা রেডি হয়ে গেছে।
-তুই একটা মেয়ে।
মিত্রার দিকে তাকালাম।
-ঠিক আছে ঠিক আছে পরে বলিস। সবার সামনে বলতে হবেনা।
নীপা হাসছে। বড়মা ছোটমা রান্নাঘরে।
-ভজু।
-যাই অনিদা।
ভজু এলো।
-কিগো।
-শাকের আঁটি গুলো নামিয়েছিস।
-হ্যাঁ।
দামিনী মাসির দিকে তাকালাম।
-আমি দেখেছি।
-পছন্দ?
দামিনী মাসি হাসছে।
-কিগো ছোটমা চারটে জায়গা।
-তোরা চারজন খেয়ে আগে বেরো তারপর আমরা সবাই খাব।
-মিত্রা।
-তোকে চিন্তা করতে হবেনা, আমি সব টেস্ট করে নিয়েছি।
-বড়মা।
-বল।
-রাতে কি এ বাড়িতে না ও বাড়িতে।
-এখনো কিছু ঠিক করিনি।
-আমি কিন্তু নাও ফিরতে পারি।
-কেনো? ছোটমা বললো।
-দরকার আছে।
-তুই ফিরে আসবি।
-কথা দেবোনা।
-একিরে মিত্রা একা থাকবে।
-নীপা আছে।
-তুই কি সেই জন্য নীপাকে নিয়ে এসেছিস।
-হ্যাঁ গো ডাক্তারদাদা কোথায় খাবে।
-আগে আমার কথার উত্তর দে।
-দেওয়া হয়ে গেছে।
-তুই ফিরে আসবি।
-ঠিক আছে।
-ডাক্তার স্নান করে আসছে।
আমরা চারজন খেতে বসেছি। দামিনী মাসি ফ্রাইড রাইস আর চিকেন করেছে। ঘপা ঘপ খেতে শুরু করলাম, খেতে ঠিক ইচ্ছে করছে না। মিত্রা দু’টো চিকেন তুলে নিল। আমি কিছু বললাম না। ওরা সবাই লক্ষ্য করেছে। ছোটমা একবার মুখ টিপে হাসলো।
-তোমার সঙ্গে নেক্সট কবে দেখা হচ্ছে। ইসলাম ভাই-এর দিকে তাকিয়ে বললাম।
-তুই যখন চাইবি।
-বুঝেছি।
-এরি মধ্যে বুঝে গেলি!
-হ্যাঁ।
-তোমরা অফিসে আসছো তো ? দাদাকে বললাম।
-হ্যাঁ।
আমি খুব তাড়াতাড়ি খাচ্ছি।
-তুই যে আজকের কাগজে ওটা ছাপলি, লেখাটা ?
-ওটা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবেনা।
-পুরোটা খেতে পারছি না। মিত্রার দিকে তাকালাম। খেয়ে নিবি ?
-তোর ওঠার অপেক্ষায়।
আমি উঠে দাঁড়ালাম।
-কিরে তুইতো কিছুই খেলি না। বড়মা কাছে এসে দাঁড়ালো।
-অনেক খেয়েছি ভালো লাগছেনা। রাতে কোথায় থাকছো, এ বাড়িতে না ও বাড়িতে আমাকে একবার জানিয়ো।
-তোর কি খুব তাড়া। ইসলাম ভাই বললো।
-খুব। পেছনে লোক লাগিয়ো না। প্রইভেট বাসে করে ঘুরবো। ধরে ফেলবো।
দামিনী মাসি ইসলাম ভাই হো হো করে হেসে ফেললো।
-তুই একটা মালিক। দামিনী মাসি বললো।
-সেই জন্য প্রাইভেট বাস।
দাঁড়ালাম না। মুখ ধুয়ে বেরিয়ে এলাম। মিত্রা গেট পর্যন্ত এলো। ঘ্যানোর ঘ্যানোর। রাতে ফিরে আয়। যত রাত হোক।
-দেখি।
বেরিয়ে এলাম।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - by MNHabib - 11-06-2022, 01:23 PM



Users browsing this thread: