Thread Rating:
  • 63 Vote(s) - 2.92 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়)
খেঁজুর গাছে উঠে রস পেরে নিয়ে এলাম।
রস খাওয়া হলো। মিত্রা দেখালো রস খাওয়ার পর আমি কিভাবে ওকে নাচতে বলেছিলাম, তারপর কিভাবে ও নেচে ছিলো। ওরা হেসে গড়িয়ে পরে।
-তখন নতুন, বুঝলি টিনা। ও যা বলছে তাই অন্ধের মতো বিশ্বাস করেছি। ও যে অতো বড়ো বাঁদর তাতো জানতাম না।
-তুমি আর নেচোনা।
আমি হাসছি।
-আচ্ছা অনি তোর কি একটুও দয়া মায়া হয়নি তখন। দেবা বললো।
-দয়া মায়া। বারবার বলেছি ওখানে গেলে তোর অসুবিধে হতে পারে। না আমি যাবো। তো চল। ঠেলা বোঝ।
-শয়তান। মিত্রা আমার কোমরে খোঁচা মারলো।
-চল বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে সামন্ত কাকা চলে আসবে।
আমরা হাঁটতে হাঁটতে পদ্মপুকুরে এলাম।
টিনা বললো, অনিদা তুমি এখানে চুপ্টি করে বসে থাকবে। কোথাও যাবেনা। আমাদের কথা চিন্তাও করতে হবেনা। আমরা আমাদের কাজ সেরে আসছি।
আমি হো হো করে হেসে ফেললাম।
-তোমায় কিন্তু আজ কোনো ডিস্টার্ব করিনি। মিলি বললো।
-এতো সুন্দর সকালে প্রাতঃকৃত্য। তাও আবার প্রকৃতির কোলে। নির্মাল্য বললো।
-তোকে কাব্যি করতে হবেনা। যাবি।
-যাবোনা মানে। রস কি তুমি একা খেয়েছো?
-দেবা প্যাকেটটা।
দেবা প্যাকেটটা ছুঁড়ে দিলো।
-তুই নিলি না।
-নিয়েছি।
ওরা চলে গেলো। আজ ওদের পথ প্রদর্শক মিত্রা। আমি পদ্মপুকুরের ধারে বসলাম। ভোর হয়েছে। চারিদিকে পাখির কুজন। মনটা আনমনা হয়ে গেলো। কাল থেকে অর্কর ম্যাসেজ আর পড়িনি। মোবাইলটা বার করে ম্যাসেজগুলো পড়তে আরম্ভ করলাম। এক জায়গায় এসে থমকে দাঁড়ালাম। ম্যাসেজটা পরে আমার চোয়াল দুটো শক্ত হয়ে গেলো। শুয়োরের বাচ্চা এতদূর এগিয়ে গেছে। আজ তুই খামটা পেলেই তোর দৌড় থেমে যাবে। তখন তুই নিজের প্রাণ বাঁচাতে দৌড়ো দৌড়ি শুরু করবি। তোর মতো অনেক খানকির ছেলেকে আমি সোজা করে দিয়েছি।
অর্ককে একটা ফোন লাগালাম। দেখলাম ফোন বাজছে।
-কিগো অনিদা এতো সকালে।
-তোর ম্যাসেজগুলো পড়লাম।
-ঠিক আছে ?
-হ্যাঁ।
-তুই ঠেকাগুলো দেখেছিস।
-বলতে পারো আশেপাশে ঘুরেছি। আজ আটটায় ডেকে পাঠিয়েছে। দুটো চামকি জোগাড় করেছি। আজ নিয়ে যাবো।
-কোথা থেকে জোগাড় করলি।
-বসিরহাটের মাল। ওরা লাইনের।
-পাখি পড়ার মতো পড়িয়ে নিস।
-ও তোমাকে ভাবতে হবেনা। সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে, বাঁকা আঙুলে তুলবো তোমার মতো। তোমাকে ভাবতে হবে না, তুমি নিশ্চিন্ত থাকো।
-আচ্ছা। রবিবার তোর সঙ্গে দেখা হবে।
-ঠিক আছে।
-ওরা সবাই এলো। দেখলাম নির্মাল্যের হাতে নিমডাল। আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।
-কি অনিদা তোমার মতো পেরেছি ?
হাসলাম।
-কিরে বুবুন তোর হাসিটা কেমন ফ্যাকাশে ফ্যাকাশে।
-তোর কি ঠিক মতো ক্লিয়ার হয়নি ?
-আমার কথাটা এড়িয়ে যাচ্ছিস।
-একবারে না। আমি খুব স্বাভাবিক।
-যাওয়ার সময় তোর চোখটা এরকম ছিলোনা।
-বাবাঃ সাইকোলজিস্ট। চল বেলা হয়ে যাচ্ছে। নেক্সট কোনটা।
-তোর কলেজ। মিত্রা আমার চোখের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে।
-নির্মাল্য দে একটা ডাল ভেঙে।
নির্মাল্য সবাইকে দিলো।
আমরা আবার সেই পথে চলেছি। মিত্রা লিড করছে। আমি সবার পেছনে। আমার মনটা এখানে নেই। তবু বুঝতে দেওয়া চলবেনা। মিত্রা এখন বেশ পাকা পোক্ত হয়ে উঠছে। ওকে ফাঁকি দিতে হবে। ওরা প্রাণভরে সমস্ত আনন্দ উপভোগ করছেহাসি মশকরা করছে। আমি মাঝে মাঝে যোগ দিচ্ছি। একসময় আমরা পৌঁছে গেলাম আমার কলেজে। কলেজের টিউবওয়েলে সকলে মুখ ধুলাম। মিত্রা ওদের নিয়ে কলেজের ভেতর ঢুকলো। সবাইকে গল্প বলছে। আজ কিন্তু মিত্রা আমার মতো করেই বলছে। ওর ইমোশনগুলো বেশ সুন্দর। তারপর বকুল গাছের তলায় এলো। মিত্রা ওদের দেখালো কি ভাবে বাঁশি তৈরি করতে হয়। সবাই মিলে লেগে পরলো বাঁশি তৈরি করতে।
-বুবুন আজ কিন্তু আমি সেফটিপিন নিয়ে এসেছি।
-কোথা থেকে পেলি।
-কাল রাতে বড়মার হাত থেকে খুলে নিয়েছি।
-বড়মা বুঝতে পারেনি।
-না।
-ওরা এক একজনে তিনটে চারটে করে বাঁশি তৈরি করলো। একসঙ্গে সকলে বকুল বাঁশি বাজাচ্ছে। হাসছে দৌড়োদৌড়ি করছে। মনের দুয়ার খুলে মুঠো মুঠো আনন্দে পরিপূর্ণ করে তুলছে নিজের মনকে।
আমি বললাম, চল একটু কলেজের বারান্দায় বসি।
-কেনোরে? দেবাশিষ বললো।
-তুই কালকে বলছিলিনা তোদের কি দায়িত্ব দেবো।
টিনা আমার দিকে হাসি হাসি মুখ করে তাকালো।
-তুমি সত্যি আমাদের দায়িত্ব দেবো।
-কেনো তোমাদের বিশ্বাস হচ্ছেনা।
-চলো।
-মাটির ওপর বসতে অসুবিধে হবেনা।
-কেনো তুমি আমাদের ক্লাস ওয়ানে বসাবে।
-বসতে চাইলে বসাবো। অনিদা ওখান থেকেই তার জীবন শুরু করেছিলো।
আমরা গাছের তলায় এসে সবাই গোল হয়ে বসলাম।
মিত্রা টিনা আমার দু’পাশে। টিনার পাশে মিলি তারপাশে অদিতি দেবাশিষ নীপা নির্মাল্য।
ওরা সবাই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।
-টিনা।
-বলো।
-তোমায় যদি চাকরি ছাড়তে বলি তুমি ছেড়ে দেবে।
-একমাস সময় দিতে হবে।
-চাকরি ছেড়ে দিলে খাবে কি?
-তুমি চাকরি দেবে।
-মিলি ?
-টিনা চাকরি ছেড়ে দিতে পারলে আমিও দেবো।
মিত্রার দিকে তাকালাম।
-কিরে ওদের চাকরি দিবি তো।
-আমি কেনো দেবো! তুই চাকরি দিবি। আমাকে সই করতে বলবি সই করে দেবো।
-দেবা শুনলি তোর বান্ধবীর কথা।
দেবা হাসছে।
অদিতি বললো। তুমি আমাকে কিছু বললেনা।
-তোমার কাছে একটু পরে আসছি।
-ভুলে যেওনা যেনো।
-আমার এ্যাডের কি হবে।
-ওটা নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবেনা। টিনা বললো।
-দেবা আমার প্ল্যানটা বলছি ভালো করে শোন। তোমরাও শোনো, পারলে আমাকে এ্যাটাক করবে। ঝগড়া করবে।
-তোমার সঙ্গে! টিনা বললো।
-হ্যাঁ। আমি ভগবান নই, ভুল করতে পারি।
-বলো।
-আমি দামিনী মাসির ওখানে একটা এনজিও করবো, মূল কাজ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সচেতনতা। মাসি, ইসলাম ভাই ছাড়া তোরা থাকবি। নিজেদের কাজ করার পর ওখানে সময় দিতে হবে। হিমাংশু ফর্মেসনটা তৈরি করছে। তার আগে আমি অদিতি, মিলি আর টিনাকে আমাদের অফিসের এক একটা ব্রাঞ্চের মাথায় বসাবো। আমাদের অফিসের তিনটে ব্রাঞ্চ খুব প্রবলেম দায়ক।
আমার কথা শেষ হবার আগেই তিনজনে হৈ হৈ করে উঠে মিত্রাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে আরম্ভ করলো।
সে এক অদ্ভূত দৃশ্য। মিত্রার প্রাণ ওষ্ঠাগত।
-ওরে তোরা ছাড় আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। মিত্রা বললো।
তারপর আমাকে ঘপা ঘপ প্রণাম করলো।
-আমার কি হবে। নির্মাল্য বড়ো বড়ো চোখ করে বললো।
-তোর কপালে ঘেঁচুকলা। মিলি বললো।
-অনিদা হবেনা। আমার একটা ব্যবস্থা করো।
-আমিতো কথা শেষ করিনি।
দেবা হাসছে।
-টিনা তোর ল্যাপটপটা থেকে আজই রিজাইন লেটার পাঠিয়ে দেবো। তাহলে আজ থেকে একমাস কাউন্ট হবে। মিলি বললো।
-এবার আমাদেরটা বল। দেবাশিষ বললো।
-আমি এখানে তিনশো একর জমি নিচ্ছি। হয়তো ওটা বাড়তেও পারে। আমি একটা কৃষি খামার তৈরি করবো। পাশাপাশি পোলট্রি এবং কান্ট্রিক্লাব। আরও বাই প্রোডাক্ট বেরোবে।
-দারুণ আইডিয়া।
-তুই নির্মাল্য সমস্ত ব্যাপারটার দায়িত্ব নিতে পারবি ?
-কি বলছিস তুই!
-ঠিক বলছি। এর মার্কেটিং থেকে আরম্ভ করে সমস্ত কিছু। একটা প্রজেক্ট রিপোর্ট তৈরি কর। ভাব কি করতে চাস। আমার আর হিমাংশুর হেল্প পাবি। আমি মনে মনে একটা ছবি এঁকে রেখেছি। মিত্রা সমস্ত প্রজেক্ট দেখে কমেন্ট পাস করবে। তার আগে ওকে জানাতে পারবিনা, তোরা কি করতে চাস।
-আমার ভয় করছে।
-কেনো।
-কয়েক হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট আমি হ্যান্ডেল করবো!
-পারবি বলেই বলছি নাহলে পাতি চাকরির অফার দিতাম।
দেবাশিষ মাথা নীচু করলো।
-কেনো দেবাদা তুমি ভয় পাচ্ছো। অনিদাতো আছে। মাথায় রাখবে তোমার সব কাজেই তুমি অনিদার হেল্প পাবে। টিনা বললো।
-সেটা ঠিক। আমি এ ধরণের কাজ আগে কোনোদিন করিনি।
-অদিতিকে প্রেম করার আগে কি ভাবে মেয়ে পটাতে হয় জানতিসকিভাবে চুমু খেতে হয় জানতিস।
-এই তোর মটকা গরম হয়ে গেলো।
-ছাগলের মতো কথা বলবিনা। পৃথিবীতে জন্মেই কেউ হাঁটতে শেখে না।
-কবে শুরু করবি।
-মাস ছয়েকের মধ্যে। এই কদিন যেখানে আছিস সেখানেই থাকবি। মাঝে মাঝে এসে ডেভালপমেন্টের কাজ দেখবি। টোটাল প্ল্যান প্রোগ্রাম তৈরি করবি। নিজের টিম তৈরি করবি।
-আমাকে একটু মেন্টালি প্রিপারেসন নিতে দে।
-অনিদা, দেবাদা মেন্টাল প্রিপারেসন নিক আমাকে আমার ব্যাপারটা বুঝিয়ে দেবে। আমি দৌড়তে শুরু করে দেবো। নির্মাল্য বললো।
-সত্যি মিত্রাদি তোমার নামটা কেনো ছাগল দিয়েছিলো এখন বুঝি। অদিতি কপট রাগ করে বললো।
-এই দেখছিস সকলে চাটতে শুরু করে দিলো।
-তুই ভাব। আমার কোনো আপত্তি নেই। পারলে আমাকে একবার জানাস।
-এইতো খোঁচা মারলি।
-আমাদের দায়িত্বগুলো একবার বলো। টিনা বললো।
-তোমাদের এই মুহূর্তে কোনো পার্টিকুলার দায়িত্ব দেবোনা। কিন্তু আমার অফিসের লোকদের বুঝিয়ে দেবো তোমাদের আয়ু শেষ হয়ে এসেছে।
-কি রকম! টিনা বললো।
-ধরো আমাদের অফিসে এই মুহূর্তে এ্যাডম্যানেজার চম্পক দা। আমি তোমাকে এ্যাডের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার বানিয়ে দিলাম। তার মানে সমস্ত ক্ষমতাটা চম্পকদার হাত থেকে খাতা কলমে তোমার কাছে চলে এলো। কিন্তু চম্পকদা তার জায়গায় বহাল তবিয়তেই থাকবে। ঠিক তেমনি মিলি অদিতিরাও একই পোস্ট হোল্ড করবে।
-কি অদিতি তুমিকি তোমার বরের মতো ঢোক গিলবে।
-ওর সঙ্গে আমাকে গোলাবেনা। ও ওর মতো, আমি আমার মতো। কাজের জায়গায় আমি যা ডিসিসন নেবো সেটাই ফাইন্যাল।
-গুড। এই স্পীড না থাকলে কিছু করতে পারবেনা।
-সবচেয়ে বড় কথা তোমাকে পাশে পাবো। এর থেকে আর বেশি কি চাই।
-ঠিক বলেছিস। আমাদের বসগুলো হারামী নম্বর ওয়ান। মিলি বললো।
-এই। মিত্রা ধমক দিলো।
-সরি সরি মিত্রাদি। অন্যায় হয়ে গেছে। মিলি জড়িয়ে ধরলো মিত্রাকে।
-সত্যি বলছি তুমি টিনাকে জিজ্ঞাসা করো। আমি অদিতি টিনা কি ভাবে কাজ করি সেটা আমরাই জানি।
-ঠিক আছে। এবার তোদের বস যদি ওরকম করে।
-তুমি আছো। সোজা চলে যাবো তোমার কাছে।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
-কবে থেকে যাবো। টিনা বললো।
-তোমাদের অফিসের কাজগুলো আগে গোছাও।
-অফিসের কাজ গোছানোর কিছু নেই।
-তারমানে! তুমি ছাড়তে চাইলে ছেড়ে দেবে।
-আমার জায়গায় আর একজন চলে আসবে।
-আমাকে সাতদিন সময় দাও। এর মধ্যে অফিসে না পারো বাড়িতে আসবে মিত্রাদি তোমাদের অফিসের গল্পগুলো শোনাবে। আমাকে হয়তো নাও পেতে পারো। আগে গল্প শুনে নাও, কোথায় কোথায় সমস্যাগুলো তৈরি হয়ে আছে। তাহলে তোমাদের কাজ করতে সুবিধা হবে। সেই ফাঁকে আমি তোমাদের তিনটে ঘর রেডি করি।
[+] 4 users Like MNHabib's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - by MNHabib - 07-06-2022, 07:32 PM



Users browsing this thread: