07-06-2022, 06:24 AM
নীপা ছুটে এসে মিত্রার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিস ফিস করে কি বললো। মিত্রা মুচকি হাসলো। উঠে দাঁড়ালো। আমার দিকে তাকিয়ে বললো
-আমি একটু আসছি।
-যা।
-কি টিনা ম্যাডাম, শিব ঠাকুর কি বললো তোমায়। তিনি কবে আসছেন।
-প্রার্থনা করলাম যেনো না আসেন।
-কিরে দেবা! বলে কি ?
-এই বেশ ভালো আছি অনিদা।
-কেনো।
-একটা ছবি মনের মধ্যে গাঁথা হয়ে আছে। যদি সেটা নষ্ট হয়ে যায়।
-হুঁ। বেশ জটিল। তবে কি জানো টিনা। জীবনের সব ছবিই জলছবি। তুমি নিজে আবার মনের মতো করে এঁকে নিতে পারো।
টিনা আমার দিকে তাকালো। কিছু বলতে চায়। পারলো না। মাথা নীচু করলো।
-মিলি ম্যাডাম।
-আমি কিছু চাইনি। তবে প্রার্থনা করেছি অনিদার মতো যেন হতে পারি।
-খুব কষ্ট।
হোক না, ক্ষতি কি অনিদা।
-দেবা ?
-অদিতি চেয়েছে, আমি কিছু চাইনি।
-তুই আমাকে জিজ্ঞাসা করবিনা? চিকনা বললো।
-তুইতো সঞ্জুর মতো একটা খুঁজে দিতে বলেছিস।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
-কিরে আমি যা বললাম, সত্যি ?
-তুই কি করে জানলি। চিকনার মাথা নীচু।
-হবে। সবুরে মেওয়া ফলে। তোর এখন অনেক কাজ। এটা মাথায় রাখিস। অনেক দায়িত্ব। পাশাপাশি বাসু অনাদি সঞ্জুরও। এটা ভেবেছিস।
-হুঁ।
-চাইবিনা কোনো দিন। চাইলেই ফুরিয়ে যাবে। না চাইতেই তুই যদি পাস। ক্ষতি কি।
চিকনা আমার দিকে তাকালো। চোখদুটো চক চক করছে। ফিক করে হেসে ফেললো।
-আর কোনোদিন কোনো কিছু চাইবো না।
-তুই খালি তোর কাজটা মন দিয়ে করে যা। দেখবি ধরে রাখতে পারছিসনা।
-আমি করবো অনি। তুই যা বলবি তাই করবো।
-সোমবার থেকে একেবারে সময় নষ্ট করবিনা।
-চিকনা মাথা দোলাচ্ছে।
-মাথায় রাখিস।
ফোনটা বেজে উঠলো। দেখলাম হিমাংশু। হঠাৎ এই সময়!
-হ্যালো।
-তুই কোথায়।
-কেনো।
-কাল দুটো কাজ ক্যানসেল হয়েছে। তাই কাল কোনো কাজ নেই, যদি সকালের দিকে বেরোই।
-খুব ভালো। কখন আসবি বল।
-একবারে ভোর ভোর বেরিয়ে যাবো।
-চলে আয়।
-আমার সঙ্গে আমার এ্যাসিসটেন্ট যাবে।
-আমি দেখেছি?
-না।
-ছেলে না মেয়ে।
হিমাংশু হো হো করে হেসে ফেললো।
-ছেলে।
-আমাকে চেনে।
-না। তোর নাম শুনেছে।
-সব কাগজ সঙ্গে নিয়ে আসবি।
-ঠিক আছে।
-হ্যাঁ রে চেকগুলো ক্যাশ হয়েছে।
-হয়ে গেছে।
-একটা টেনসন মিটলো। চিঠি সার্ভ করেছিস।
-আমার কাছে এ্যাকনলেজ ফিরেও এসেছে।
-গুড।
-এবার বল কি ভাবে যাবো।
-যেভাবে তোকে রুট চার্ট দিয়েছি।
-ওখান থেকে ?
-ওটা নিয়ে তোকে ভাবতে হবেনা।
ঠিক আছে।
-আমাকে ফোন করিস কিন্তু।
-আচ্ছা।
-কে রে, হিমাংশু? দেবাশিষ বললো।
-হ্যাঁ।
-ও আসছে?
-হ্যাঁ।
-তুইতো আমাদের কি দায়িত্ব দিবি বললিনা।
-সময় এখনো ফুরিয়ে যায়নি।
দেবা চুপ করে গেলো।
-এবার উঠতে হবে। ওখানে দু’জন মাত্র রয়েছে।
-সঞ্জু চলে গেছে। অনাদি বললো।
-কেনো।
-লাইটের কি হয়েছে। ওকে ফোন করেছিলো।
-ও। লতা, রেবা কোথায় ?
-কাকীর কাছে।
-চল দেবা। এবার এগোই, এদের বসিয়ে রাখলে সারারাতে গল্প শেষ হবেনা।
আমরা উঠলাম। বাইরে এলাম। খুব জোরে গল্প চলছে। মিত্রা মধ্যমনি হয়ে বড়মা ছোটমার মাঝখানে। আমায় দেখেই ডাক্তারদাদা বলে উঠলো
-কি অনিবাবু যাবার সময় হয়েছে ?
-হ্যাঁ।
-স্যারের কাছে তোর অনেক অজানা কথা জানলাম।
আমি মাথা নীচু করলাম।
-সব ভালো, একটুও খারাপ নয়।
-স্যার কখনো ছাত্রের নিন্দা করেন না।
-তুই সেই ছাত্র নোস যে তোর নিন্দা করবে। তোর প্ল্যান মতো সব কথা স্যারের কাছ থেকে আদায় করে নেওয়া হয়েছে।
মনে মনে বললাম, আমি সব শুনেছি।
-তুই খুশী।
মাথা দোলালাম।
-তোর কিন্তু অনেক দায়িত্ব বেড়ে গেলো।
আমি চুপ করে থাকলাম।
সবাই মিলে একসঙ্গে বেরিয়ে এলাম। স্যার ডাক্তার দাদা, দাদার হাত ধরে বললেন আবার আসবেন।
বাড়ি পৌঁছলাম রাত সাড়ে আটটা। খেয়ে দেয়ে শুতে শুতে সেই রাত বারোটা।
সকালে দেবার ডাকে ঘুম ভাঙলো।
-কিরে যাবিনা ?
-তোরা যাবি।
-হ্যাঁ। আমরা সবাই রেডি।
-চল।
মিত্রাকে ডাকলাম। ও তড়াক করে লাফিয়ে উঠলো। মুখ হাতপায়ে জল দিয়ে সবাই বেরিয়ে এলাম।
আজ মিত্রা সবার গাইড, খুশিতে কল কল করছে, সকলকে দেখাতে দেখাতে নিয়ে আসছে।
-বুবুন।
-উঁ।
-তুই পেঁপে পাতা ছিঁড়লিনা।
-ওখানে কিন্তু ফাঁকা মাঠ, কোনো ঝোপাঝাড় নেই, দেখেছিস তো।
-চেপে রাখবো। কি বলিস মিলি।
মিলি চুপ করে রইলো।
-হ্যাঁ মিত্রাদি। টিনা বললো।
-কিরে দেবা।
-অনি আগে ব্যবস্থা করুক তারপর দেখা যাবে।
-অনিদা তুমি পেঁপে পাতাটা আগে জোগাড় করতো। মিলি বললো।
-চল ভূততলায় যাই।
-আবার ভূত।
-কিছু হবেনা। দেখবি জায়গাটা দারুণ সুন্দর। মিত্রা বললো।
আমরা ভূততলা পেরিয়ে নদীর ধারে চলে এলাম। মিত্রা সব গল্প ওদের শোনাচ্ছে। সেই খেঁজুর গাছ। দেখলাম কলসি ঝুলে রয়েছে।
-যা নিয়ে আয়। মিত্রা আমাকে ঠেলা দিলো।
-আবার বলছি, ভেবে দেখ।
-ভেবে দেখার সময় নেই তুই যা তো।
মিলি টিনা অদিতি চারিদিক চেয়ে চেয়ে দেখছে।
-যাওনা অনিদা, দেরি কোরোনা প্লিজ, কেউ যদি চলে আসে খাওয়া হবেনা। মিলি বললো।
আমি হাসলাম।