Thread Rating:
  • 63 Vote(s) - 2.92 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়)
দেখলাম স্যার বাড়ির বারান্দায় বসে কাগজ পড়ছেন। আমরা বাইক রেখে ভেতরে এলাম। স্যারকে প্রণাম করলাম। স্যার মুখের কাছ থেকে কাগজ সরিয়ে বললেন, কে?
-স্যার আমি, অনি।
সঙ্গে সঙ্গে স্যার চেঁচামিচি শুরু করে দিলেন।
-ও বড় বৌ দেখো কে এসেছে। ধুমকেতু দেখবে এসো।
আমি হেসে ফেললাম।
-ওরা কারা?
-চিকনা আর বাসু।
-তুই তো আবার একলা আসতে পারবিনা। তোর সাগরেদ দরকার।
চিকনা স্যারের কথায় মাথা চুলকোচ্ছে। বাসু মুখ নীচু করে আছে। ওরা স্যারের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো।
কাকীমা, মিনতি বেরিয়ে এলো ভেতর থেকেআমি কাকীমাকে প্রণাম করলাম। মিনতি আমাকে প্রণাম করলো।
-বোস।
-না এখন বসবোনা।
-তাহলে এলি কেনো। স্যার বললেন।
-মিনতিকে নিতে এলাম। দাদারা সব শিবের মন্দিরে আসছেন। ওকে একটু নিয়ে যাই। ঘন্টা দুয়েক পর সবাই আসবো।
-তার মানে‍!
-হ্যাঁ সবাই আসবো।
-তুই কি বলছিস বুঝতে পারছিনা
-কলকাতা থেকে আমার কয়েকজন বন্ধুও এসেছে, ওরাও আসবে আপনার সঙ্গে কথা বলতে চায়।
-কেনো?
-ওদের ব্যক্তিগত ব্যাপার।
-ওরাও কি তোর মতো সাংবাদিক।
-না স্যার, ওরা সব বড় বড় কোম্পানির চিফ। বাসু বললো।
-তোর কথা আমার মাথায় ঢুকছেনা।
-ঠিক আছে আমি এখন মিনতিকে নিয়ে যাচ্ছি। শিবের মন্দির থেকে আসছি। ওরা হয়তো এতোক্ষণে এসে পরেছে।
-কিগো বড়বৌ মিনু যাবে?
-কেনো যাবেনা, অনি বড় মুখ করে ওকে নিতে এসেছে।
মিনতির দিকে তাকিয়ে বললাম, তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।
মিনতি ছুটে ঘরের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে গেলো।
-হ্যাঁরে অনি।
-স্যার।
-তোর বাড়িতে নাকি সামন্ত ডাক্তার এসেছে।
-এখানেও আসবে।
-আমার বাড়িতে!
-হ্যাঁ। ওনারা সবাই এসেছেন।
-মনা ?
-কাকাও এসেছেন।
-বড় বৌ শুনলে অনির কথা।
-শুনছি।
-অতিথিরা আসছেন।
-আমি কি করবো।
-কিছু ব্যবস্থা করো।
-কি করবো।
সব মান্য গণ্য ব্যক্তিরা আসছেন তাদের জন্য খাবার কিছু রেখেছো? ঋজুকে একটা ফোন করে দাও। বাজার থেকে মিষ্টি কিনে আনুক।
-স্যার আমি একটা কথা বলবো।
-বল শুনি। তোর গেস্ট। আমারও গেস্ট।
-ঢেঁকি ছাঁটা চিড়ে ভেজে শুকনো লঙ্কা দিয়ে আর কিছু ছোলা ভাজা দিয়ে মেখে রাখুন আর চা।
-গর্ধভ কোথাকার। এখনো তোর সেই মোটা বুদ্ধি গেলোনা।
আমি মাথা নীচু করলাম।
-আমি বলছি স্যার ওঁরা খুব আনন্দ করে খাবে, দেখবেন।
-আবার কথা বলে। কতদিন বেতের বাড়ি খাসনি। মান্যগণ্য লোকেদের আমি চিঁড়ে ভাজা, শুকনো লঙ্কা ভাজা খাওয়াবো।
-তাহলে আপনার যা মন চায় তাই করুণ, কিন্তু নষ্ট হবে।
-তুই যা, তোকে পাকামো করতে হবেনা। তুমি ঋজুকে ফোন করে আমাকে দাও।
মিনতি কাপর পরে বেরিয়ে এলো। বেশ মিষ্টি লাগছে। ঠোঁটে হাল্কা লিপস্টিক লাগিয়েছে। কপালে ছোট্ট একটা টিপ।
-রেডি।
-হ্যাঁ। অনিদা।
-স্যার আমি আসছি।
-কখন আসবি।
-মন্দিরটা ঘুরেই আপনার বাড়ি।
-ওদেরকে তুই হাঁটিয়ে আনছিস নাকি।
-না। অনাদি ট্রলি ঠিক করেছে।
-তোর বড়মার কোমর ঠিক আছে তো -?
-হ্যাঁ হ্যাঁ।
আমরা বেরিয়ে এলাম।
খামার পেরিয়ে গাড়ির কাছে এলাম। মিনতি আমার পেছনে। চিকনা একটু দূরে এসে আমাকে ঢিপ করে প্রণাম করলো।
-কি হলো।
-গুরু তুমি কতো বড় খেলোয়ার!
-কেনো।
-সকালে সঞ্জু আমাকে বলেছিলো বলে তুমি মিনতিকে তুলে আনলে।
-না না, সবাই আমরা আনন্দ করবো সঞ্জুর মনটা খারাপ হয়ে যাবে, তাই।
-শালা আমার কেন কেউ নেই বাসু।
-চিকনাদা আমি নীপাকে বলে দেবো। মিনতি বললো।
-তুইতো বহুত নম্বরি। তোর জন্য এতো কষ্ট করলাম, তুই নীপাকে বলে দিবি। আজ সঞ্জুকে আমি খাবো।
-মিনতি তুই চিকনার পেছনে বোস, আমি বাসুর পেছনে বসে পরি।
মিনতি চিকনার পেছনে গিয়ে বসলো। আমরা মিনিট পাঁচেকের মধ্যে চলে এলাম।
সঞ্জু দূর থেকে দেখতে পেয়েছে। এগিয়ে এসেছে। মিত্রারাও দেখেছে। সবে মাত্র বিকেল হয়েছে। মন্দিরের সামনে বিশাল একটা দীঘি। দীঘির জলে কমলা রংয়ের সূর্যের আলো পড়ে চারিদিকে ঠিকরে পরছে।
আমরা এসে ওদের সামনে দাঁড়ালাম।
সঞ্জু গম্ভীর। চিকনা চক চকে। মুখে হাসি আর ধরছেনা। নীপা ছুটে এলো।
-কিরে তুই।
-অনিদা নিয়ে এলো।
-নীপা মিনতিকে জড়িয়ে ধরলো।
-বড়মা বললো, এটা আবার কেরে?
সঞ্জুর দিকে তাকালাম, মুখ লুকিয়েছে।
-সকাল বেলা আমার গামছা ধরে খুব করকিয়ে ছিলি মনে আছে। চিকনা চেঁচিয়ে উঠলো।
সঞ্জু দাঁত কিরমির করছে।
আমি অনাদি বাসু হাসছি। মিত্রা মিনতিকে জড়িয়ে ধরলো। ডাক্তারদাদা কাছে এসে বললো
-কি অনিবাবু ব্যাপারটা কি ?
-সুভদ্রা হরণ করতে গেছিলাম।
-তোমার কি আরো দরকার?
-আমার না, অন্যের জন্য।
-তিনি কে ?
মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো।
-ওই যে তোমার পেছনে।
-লাইট ম্যান।
সকলে হো হো করে হেসে ফেললো।
-আমার গামছা ধরে টান মারবি। বাইকে করে নিয়ে এলাম। চিকনা সবার সামনে সঞ্জুকে ক্যারি কেচার করে দেখাচ্ছে।
-সেই জন্য তুই শোধ নিলি। বড়মা বললো।
-নেবোনা মানে। অনি আমার গুরু। গুরু শিষ্যকে হেল্প করবেনা।
সকলের হাসি আর থামে না। মিনতি মিত্রার থেকে চালান হয়ে চলে গেছে মিলিদের কাছে।
-তোমরা মন্দির দেখেছো? বড়মার দিকে তাকিয়ে বললাম।
-না। মন্দির বন্ধ। তোর কাকা ',কে ডাকতে গেছে।
অনাদির দিকে তাকালাম।
-তোরা যেতে পারলিনা।
-আমাকে যেতে দিলে তো। তবুতো পাঁচুকে সঙ্গে পাঠিয়েছি।
-বড়মাদের ঘুরে দেখিয়েছিস।
-দেখাতে পারতাম কিন্তু তোর মতো গল্প বলতে পারবোনা।
-কি নেতা হয়েছিস।
-ঠিক কথা। ডাক্তার দাদা বললো।
-কিগো তুমি চুপচাপ কেনো। ছোটমার গলা জড়িয়ে ধরলাম।
-তুই এই কারণ আগে আগে বেরিয়ে ছিলি।
-হ্যাঁ। স্যারের কাছে গেলামআর বলে এলাম একটু পরে আমরা সবাই আসছি।
-ভালো করেছিস তোর উনা মাস্টারের বাড়িটাও এই ফাঁকে দেখা হয়ে যাবে। বড়মা বললো।
-স্যার আজকেও অনিকে বলেছে, কতোদিন বেত পিঠে পরেনি। বাসু বললো।
-দাঁড়া তোর উনা মাস্টারকে গিয়ে দেখাচ্ছি। বড়মা বললো।
আমি বড়মাকে জড়িয়ে ধরে গালে গাল ঘোষে বললাম
-ওটা স্নেহের মার। তুমি ছোট মাযে কান ধরো।
বড়মা আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে।
-চলো বেলা পরে আসছে। এই ঝিলটা দেখেছো। কতো পদ্মফুল বলোতো।
-ওই দেখ মেয়েগুলো জলে নেমেছে।
-নামতে দাও। প্রাণভরে দেখে নিক।
-আবার জোঁকে ধরবে।
-ধরুকনা ক্ষতি কি।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - by MNHabib - 04-06-2022, 08:50 AM



Users browsing this thread: