Poll: How is the story
You do not have permission to vote in this poll.
Good
100.00%
16 100.00%
Bad
0%
0 0%
Total 16 vote(s) 100%
* You voted for this item. [Show Results]

Thread Rating:
  • 118 Vote(s) - 3.43 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Misc. Erotica চন্দ্রকান্তা - এক রাজকন্যার যৌনাত্মক জীবনশৈলী
Wink 
[Image: 284736692_chapter-34-2.png]


৩৪
যুক্তির ওপারে
৪ঠা এপ্রিল, মঙ্গলবার


স্টুপিড… স্টুপিড… স্টুপিড… 

হাঁটতে হাঁটতে নিজের করা সগোতক্তিগুলো নিজেরই কানে বাজে আমার… ওই রাতের অন্ধকারে… নির্জন বনভুমীর মধ্যে দাঁড়িয়ে… এত বড় বোকামীটা করলাম কি করে আমি? ভেবেই কুল কিনারা পাই না… ইচ্ছা করছিল ওখানে দাঁড়িয়ে নিজেই নিজের চুল ছিঁড়ি…

এখানে আসার বেশ কিছুদিন পর একটা সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি কিনেছিলাম আমি… হস্পিটাল বাড়ি করতে সুবিধা হয় বলে… ভেনাই খোঁজ এনে দিয়েছিল… ততদিনে হাতে বেশ কিছু টাকাও জমে গিয়েছিল… তাই ও যেদিন গাড়ির কথাটা বলল, আর দ্বিরুক্তি করি নি… দেখেও বেশ লেগেছিল গাড়িটা… একটু পুরানো, কিন্তু চলন সই… অন্তত আমার বাড়ি হস্পিটাল করার পক্ষে একেবারে ইউনিক বলা যেতে পারে… সাধারনতঃ একাই যাতায়াত করবো, আর কখন সখনও যেদিন ভেনার আগে ডিউটি শেষ হয়ে যেত, সেদিন ভেনা আমার সাথে ফিরে আসতো… কারন মার্ক হস্পিটাল সুপার, তাই ওর পক্ষে অত তাড়াতাড়ি নিজের অফিস ছাড়া সম্ভব হতো না… তাছাড়া মার্কের নিজস্ব গাড়ি রয়েছে… তাই আমার সাথে মার্কের ফেরার কোন প্রশ্নও থাকতো না বিশেষ…

হস্পিটাল ছাড়াও, হাতে ছুটি পেলে এদিক সেদিকে গাড়িটা নিয়ে বেরিয়ে পড়তাম… লং ড্রাইভে… প্রথম দিকে মাঝে সাঝে… কিন্তু দিন গড়াবার সাথে এটা আমার যেন একটা নেশার মত হয়ে গিয়েছিল… উদ্দেশ্যহীন ভাবে গাড়ি নিয়ে মাইলের পর মাইল পাড়ি দেওয়া… এক শহর থেকে আর এক শহর… তারপর সারাটাদিন সেখানে কাটিয়ে আবার সন্ধ্যের আগে ফিরে আসা নিজের ডেরায়…

গত বুধবারও বেরিয়ে পড়েছিলাম এই নেশার টানেই… আগের দিন আমার ডবল ডিউটি ছিল… তাই পরের দিনটা অফ দিয়েছিল মার্ক… প্রথমে ভেবেছিলাম বাড়ি ফিরে সারাটাদিন গড়িয়ে কাটাবো, কিন্তু ভেনা নেই… ওর মায়ের শরীরটা নাকি কিছুদিন ধরেই খারাপ যাচ্ছে, তাই তার দিন দুয়েক আগে ও মায়ের কাছে চলে গিয়েছিল, বাড়ি ফাঁকা… ইচ্ছা করল না ডিউটি সেরে আবার বাড়ি ফিরে কিছু রান্না করতে… মার্ককে বলে গাড়িটা নিয়ে একেবারে হস্পিটাল থেকেই রওনা দিয়েছিলাম বারাক দ্য ফ্রাস্লএর উদ্দেশ্যে… মোটামুটি মার্সেই থেকে বারাক দ্য ফ্রাস্লে বা বারাকভাইল বলে থাকে সকলে, তার দূরত্ব ১৮০ থেকে ১৮২ কিলোমিটারের মধ্যে… এই জায়গাটার সম্বন্ধে অনেকের কাছেই অনেক কথা শুনেছিলাম… ভিষন সুন্দর নাকি জায়গাটা… দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এখানকার সমস্ত ঘর বাড়ি ভেঙে প্রায় ধূলিস্যাত হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু আবার এরা নতুন করে নিজেদের গড়ে তুলেছে… বেসিকালি এটা একটা ফার্মল্যান্ড বলা চলে… তাই এখানে শহরের মত কোলাহল একেবারেই নেই… প্রকৃতির সাথে একাত্মতা হওয়ার এই সুযোগটা অনেকদিন ধরেই আমি খুঁজছিলাম… সেই বেলাডাঙা যেন মাঝে মাঝেই আমায় হাতছানি দিতো… সেই কারণেই যখন এই জায়গাটার কথা শুনলাম, তখনই মনে মনে ঠিক করে নিয়েছিলাম, সময় সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়বো বারাকভাইলের উদ্দেশ্যে… কিছুটা সময় কাটিয়ে আসবো প্রকৃতির শান্ত নির্ঝুম কোলে… 

তাই সেদিন সুযোগটা এসে যেতে আর সেটা অপচয় করিনি… হস্পিটাল থেকেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম বারাকভাইলের উদ্দেশ্যে… পথে টুকটাক কোথাও না কোথাও ব্রেকফাস্ট সেরে নেবো ভেবে…

সকাল বেলা রওনা হয়ে যখন বারাকভাইলে পৌছলাম… তখন সূর্য বেশ মাথা উপরে উঠে গিয়েছে… ওসিটানিয়া প্রদেশের অন্তর্গত এই শহরটি… এটির উত্তর দিকে বয়ে গিয়েছে আভেইরণ নদী… গিয়ে মিশেছে মেয়জ্যাকের কাছে ট্যাম নদীর সাথে… এখানে মার্সেই থেকে আসতে গিয়ে পথে পেলাম একটা বেশ বড় বনভূমি… সকালের মিঠে রোদের মধ্যে সেই বনভূমির বুক চিরে গাড়ি নিয়ে ছোটানো যে কি ভিষন ভালো লাগার সে আর কি বলবো…

এই বারাকভাইলকে চার পাশে ঘিরে রয়েছে প্রায় আটটা ছোট ছোট শহর বা শহরতলি, একে ঠিক মাঝখানে রেখে… উত্তরে তিনটি… ময়রেজেস, ড্রুএল্ল আর অলিম্পস… দক্ষিণে রয়েছে কুইন্স, ক্যাম্বোলাজেট আর ম্যানহ্যাক এবং বারাকভাইলের দুইপাশে বৌস্যাক ও প্রেভিঙ্কুইরেস… অতীতে নাকি এই ছোট ছোট শহর থেকেই চাষিরা অন্য শহরে যাতায়াত করত ছোট ছোট গরুর গাড়ি করে মাল নিয়ে এই জায়গার উপর দিয়ে… কিন্তু যেতে যেতে তারা ক্লান্ত হয়ে পড়তো বলে মিস্টার ফ্রায়স এখানে একটি ব্যারাক বা বড় বাড়ি তৈরী করে দেন ওই সমস্ত যাত্রিদের কিছুটা সময় থাকার জন্য… তারা এখানে এসে বিশ্রাম নিত, তারপর আবার পাড়ি দিত তাদের যাত্রাপথের উদ্দেশ্যে… ধীরে ধীরে জায়গাটিতে আরো লোক এসে বসবাস করতে শুরু করলো… এবং একটু একটু করে এখানে বসতি গড়ে উঠতে লাগলো… এই ভাবেই আজকের বারাকভাইল তৈরী হয়েছে… কিন্তু এখানের মানুষজন অতি শান্তি প্রিয়… নিজের নিজের কাজ নিয়েই থাকতে ভালো বাসে… আর ভিষন অতিথি বৎসল… তাই জায়গাটার খোঁজ পেতেই আমার মনটা উচাটন হয়ে ওঠে একবার অন্তত ঘুরে যাবার জন্য…

সারাটা দিন মাঠে ঘুরেই কাটিয়ে দিলাম প্রায়… কোথা থেকে যে দিন কেটে গেলো বুঝতেই পারলাম না… দুপুরে আসার সময়ই রাস্তা থেকে কিছু স্যান্ডিউচ আর চিপস্ কিনে নিয়েছিলাম, তাই দিয়েই লাঞ্চ সেরে ফেললাম… আভেইরণ নদীর পাড়ে বসে ঠান্ডা নদীর জলে পা ডুবিয়ে বসে রইলাম কতক্ষন… ভিষন ভাবে মনে পড়ে যাচ্ছিল গ্রামের কথা… মনে পড়ে যাচ্ছিল আমার সাথিদের কথা… কত বছর… ওদের দেখি নি… সঙ্গ পাই নি ওদের… এখানে আছি ঠিকই… কিন্তু সেই মাটির টানটা যেন প্রতি পদে মিস করি… আনমনেই গুনগুনিয়ে গেয়ে উঠি… 

          আমি বাংলায় গান গাই
          আমি বাংলার গান গাই
          আমি, আমার আমিকে চিরদিন
          এই বাংলায় খুঁজে পাই

আমি বাংলায় দেখি স্বপ্ন
আমি বাংলায় বাঁধি সুর
আমি এই বাংলার মায়া ভরা পথে
হেঁটেছি এতোটা দূর...

          বাংলা আমার জীবনানন্দ
          বাংলা প্রাণের সুখ
          আমি একবার দেখি, বার বার দেখি
          দেখি বাংলার মুখ...

আমি বাংলায় কথা কই
আমি বাংলার কথা কই
আমি বাংলায় ভাসি
বাংলায় হাসি
বাংলায় জেগে রই...

          আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে
          করি বাংলায় হাহাকার
          আমি সব দেখে শুনে ক্ষেপে গিয়ে করি
          বাংলায় চিৎকার...

বাংলা আমার দৃপ্ত স্লোগান
ক্ষিপ্ত তির ধনুক
আমি একবার দেখি, বার বার দেখি
দেখি বাংলার মুখ...

          আমি বাংলায় ভালোবাসি
          আমি বাংলাকে ভালোবাসি
          আমি তারই হাত ধরে
          সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে আসি...

আমি যা কিছু মহান বরণ করেছি
বিনম্র শ্রদ্ধায়
মিশে তেরো নদী, সাত সাগরের
জল গঙ্গা পদ্মায়...

          বাংলা আমার তৃষ্ণার জল
          তৃপ্ত শেষ চুমুক
          আমি একবার দেখি, বার বার দেখি
          দেখি বাংলার মুখ...


হটাৎ করে পেছন থেকে ক্ষিন হাততালির শব্দে ঘুরে তাকাই… দেখি দুটো বাচ্ছা ছেলে মেয়ে কখন এসে দাঁড়িয়েছে আমার পেছনে… আমার গান শেষ হতেই তারাই বোধহয় হাততালি দিয়ে উঠেছিল… আমি ওদের দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে জিজ্ঞাসা করি ফ্রেঞ্চ ভাষাতেই… “তোমরা শুনছিলে আমার গান?”

আমার প্রশ্ন ঘাড় নাড়ে ওরা… তারপর বলে ওঠে… “কি সুন্দর সুর গানটার…”

ওদের মধ্যে মেয়েটা বড়… ও আরো দু পা এগিয়ে আসে আমার দিকে… আমার কাঁধে হাত রেখে ফ্রেঞ্চেই জিজ্ঞাসা করে… “এটা কোন ভাষা?”

আমি ওর প্রশ্নে হেসে ফেলি… ভাষা না বুঝেও শুধু সুরের জাদুতে কেমন আকৃষ্ট হয়ে এগিয়ে এসেছে এই দুটো বাচ্ছা… গান শেষ না হওয়া অবধি মহিত হয়ে অপেক্ষা করেছে চুপটি করে… তারপর হাততালি দিয়ে উঠেছে সুরের মুর্ছনায় মিশে গিয়ে… আমি উত্তরে বলি, “এটা বেঙ্গলি ল্যাংগুয়েজ…”

মাথা হেলায় মেয়েটি… একটা মিষ্টি হাসি উপহার দিয়ে বলে ওঠে, “আমি তোমার ভাষার কিছুই বুঝিনি… কিন্তু বেশ মিষ্টি লাগলো শুনতে…”

ওর কথায় আমি ফের হাসি… মনে মনে একটা কেমন গর্ব বোধ হয় যেন… আমিও ঘাড় নাড়ি… “হ্যা… সবচেয়ে মিষ্টি ভাষা এই বাংলা ভাষা…”

ছেলেটি এর মধ্যেই কখন এগিয়ে এসেছে খেয়াল করি নি… সেও তার দিদির মতই আমার অপর দিকে দাঁড়িয়ে আমার আর এক কাঁধে হাত রেখে প্রশ্ন করে, “তুমি এখানে থাকো না?”

আমি ঘাড় নেড়ে না বলি… “উহু… না… আমি তো তোমাদের শহরে বেড়াতে এসেছি…”

বিজ্ঞের মত ঢকঢক করে ঘাড় নাড়ে ছেলেটি… তারপরেই ওর দিদির দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে… “চল দিদি… যাই… দেরি হলে মা বকবে…”

ওর দিদিও দেখি মায়ের কথা বলতেই সোজা হয়ে দাঁড়ায়… “হ্যা… চল… পালাই...” বলেই ছোট্ট ছোট্ট পায়ে দুজনে দৌড় লাগাই সামনের দিকে… আমি চুপ করে বসে চেয়ে থাকি ওদের দৌড়ে যাওয়া ছোট্ট দুটো শরীরের দিকে… যেন ছোট্ট তিতাসই দৌড়ে চলে যাচ্ছে তার এক সাথির সাথে বাড়ির পথে… পৃথিবীর বোধহয় সমস্ত শিশুর অভিব্যক্তিই এক… 

সূর্য ডোবার সাথে সাথে এত তাড়াতাড়ি অন্ধকার নেবে আসবে বুঝতে পারি নি আমি… আমি ওখান থেকে রওনা হওয়ার আগেই যেন অন্ধকারটা চারপাশ থেকে ভিষন দ্রুততায় চেপে বসতে শুরু করে দিল… আমি জোরে পা চালিয়ে নিজের গাড়ির কাছে এসে পৌছে রওনা দিয়ে দিলাম বাড়ির উদ্দেশ্যে… ওখান থেকে বাড়ি পৌছাতে মোটামুটি ঘন্টা তিনেক লাগবে… বেশ খানিকটা পথ যে আমায় জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে সেটা জানি… তবে একটা ব্যাপারে নিশ্চিন্ত আমি… এখানে হাতির উপদ্রব নেই… তাই রাস্তায় হটাৎ করে হাতির মুখোমুখি হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই আমার… নিশ্চিন্তেই তাই গাড়ি ড্রাইভ করতে শুরু করলাম… ড্যাশবোর্ডে রেডিও অন করে দিয়ে… গাড়ি চালাবার সময় হাল্কা গান শুনতে বেশ ভালোই লাগে…

ঘন্টা দুয়েক চলে এসেছি ততক্ষনে… মাঝে বেশ কয়েকটা শহরতলি ক্রশ করেছি… তবে থামিনি… কারণ রাতে শুধু শুধু থেমে কোন লাভ নেই… মাঝখান থেকে দেরী হবে বেকার… তার চেয়ে যত তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে পারবো তত তাড়াতাড়ি স্নান সেরে বিছানায় উঠতে পারবো… গত কালকের সারাদিনের ডিউটি আর তারপর সেদিনের পুরো দিনের ঘোরাঘুরিতে একটু তো ক্লান্ত লাগছেই… মাঝে মধ্যেই লং ড্রাইভে বেরোই ঠিকই… কিন্তু এতটাও ড্রাইভ করি নি আগে… তাই রাস্তা এখন যেন শেষ হলেই বাঁচি…

হটাৎ করেই গাড়িটা কেমন বার দুয়েক হেঁচকি তুললো… আমি গাড়ি নেবার পর আজ পর্যন্ত কিন্তু এটা আমায় কোন বেগ দেয় নি কোথাও… আমি অবাকই হলাম… অটমেটিকালি আমার চোখটা গাড়ির ফুয়েল মিটারের দিকে আগে গেলো…

সর্বনাশ!!!!!

এটা কি দেখছি? ফুয়েলএর কাঁটা তো একেবারে শেষ দেখাচ্ছে? এটা কি করে সম্ভব?

তারপরেই আমার মনে পড়ে গেলো… সত্যিই তো!... বিগত বেশ কিছুদিন আমার তো পেট্রল পাম্পে যাওয়াই হয় নি… তাই গাড়িতে তেলও ভরা হয়ে ওঠে নি… আর সেদিন বেরিয়ে পড়েছিলাম হটাৎই বলতে গেলে… রাতে হস্পিটালে থাকতেই ডিশিসনটা নিয়েছিলাম বেরিয়ে পড়ার… যেহেতু ভেনা ক’দিনের জন্য ওর মায়ের কাছে গিয়েছে বলে… ইসসসস… এত বড় বোকামীটা করলাম কি করে? একবার তো রওনা দেওয়ার দেখে নিলেই ল্যাঠা চুকে যেত… এই ঝামেলায় পড়তেই হত না আমায়…

ভাবনার মধ্যেই গাড়িটা আরো বার দুয়েক হেঁচকি তুলে থেমে গেলো… কোন রকমে রাস্তার এক পাশে গাড়িটাকে রেখে আমি হতাশ হয়ে খানিকক্ষন নিঃশেষিত তেলের কাঁটার দিকে তাকিয়ে নেমে পড়লাম গাড়ি থেকে… আমার ঘড়ি বলছে তখন রাত আটটা… মানে যে সময় আমি ওখান থেকে রওনা দিয়েছি, তাতে মোটামুটি আরো বেশ মাইল কুড়ি বাকি অন্তত একটা শহরের কাছা কাছি আসতে… 

গাড়ির হেডলাইটটা নেবাতেই যেন চতুর্দিক থেকে অন্ধকারটা আমায় জড়িয়ে ধরল নিমেশে… একদম নিস্তব্দ… হাওয়ার শোঁ শোঁ শব্দ বেতিরেকে আরো কোন শব্দ নেই কোথাও… আমার মনে হলো যেন আমি একটা একেবারে অন্য গ্রহে এসে দাঁড়িয়েছি… সম্পূর্ণ একা… পুরো দুনিয়াটায় কেউ কোথাও নেই… উদ্ভিদ ছাড়া একটা কিছুও জীবন্ত নয়… সব স্থবির… নিশ্চুপ…

গাড়ির দরজা খুলে রাস্তা নেমে দাঁড়ালাম… রাস্তার অ্যাস্ফাল্টের উপরে আমার পায়ের জুতোর ঠোকা লেগে উঠে আসা শব্দটাও যেন কি ভিষন জোরালো শোনালো আমার কানে… আমি আরো একবার যেদিক থেকে এসেছি আর যেদিকে যাবো… রাস্তা দুই পাশটাই ভালো করে তাকালাম… নাহ!... কেউ কোথাও নেই… সাধারনতঃ এই রাস্তাটা এমনিতেই ফাঁকাই থাকে… খুব একটা গাড়ি যাতায়াত করে না… আর যদি বা করে, তাও দিনের আলোতেই… রাতের অন্ধকারে সচরাচর কোন গাড়ি আসে না এদিকটায়… কারন আর কিছুই না… এই বনভূমির দুই প্রান্তে অবস্থিত দুটো শহরের মধ্যের দূরত্বটা অনেকটাই… তাই পেট্রল পাম্প পাওয়াটা খুবই কষ্ট সাধ্য… একান্ত কারুর যাওয়ার থাকলে তারা সর্বদা ট্যাঙ্ক ফুল করে নিয়েই যায়… আমার মত গর্ধবের কাজ করে না… নিজেই নিজেকে ধরে চড়াতে ইচ্ছা করছিলো তখন… 

একা থাকাটা কোন ব্যাপার নয় আমার কাছে… ভয় আমি কিছুতেই পাই না… সেটা কথা নয়… কিন্তু মানুষকে ভয় না পেলেও… বুনো জন্তু জানোয়ার তো আছেই… আর সেটা যদি বা না আমার সামনে এলো… কিন্তু এই এতটা রাস্তা এখন হেঁটে ফেরাও তো রীতিমত দুষ্কর… কষ্টসাধ্য… কোথায় বাড়ি ফিরে স্নান সেরে আরাম করে বিছানায় টান টান হয়ে শুয়ে ঘুমাবো, তা না অন্ধকার রাস্তায় একা জঙ্গলের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি মর্কটের মত… নিজের নির্বুদ্ধিতার কারণে… 

মিনিট পনেরো তাও দাঁড়ালাম আমি গাড়ির পাশে… যদি কপাল করে অন্তত একটা গাড়ি জুটে যায় এই সময়… কিন্তু সে ভাগ্য কি আর আছে? পনেরো মিনিটের মধ্যে গাড়ি কেন? একটা কুকুরকেও পাশ দিয়ে যেতে দেখলাম না… শুধু হটাৎ করে কোথার মধ্যে থেকে একটা বিশাল পেঁচা বিচ্ছিরি ডাক দিয়ে উড়ে গেলো মাথার উপর দিয়ে… এতটাই নীচ দিয়ে যে ওর পাখার হাওয়ার ঝাপটা এসে লাগলো আমার উপরে…

নাহ!... আর দাঁড়িয়ে থাকার কোন মানে হয় না… মনে মনে ভাবলাম আমি… কিন্তু এখন যদি রাস্তা ধরে যাই, তাহলে যতটা হাঁটতে হবে, তার থেকে যদি এই বনের মধ্যে দিয়ে আড়াআড়ি চলি, তাহলে কিছুটা হলেও আমার হাঁটাটা একটু কমতে পারে… যেমন ভাবা তেমন কাজ… গাড়িটা ওখানেই রাস্তার ধারে লক করে রেখে ঢুকে পড়লাম রাস্তা পেরিয়ে জঙ্গলের মধ্যে… কোন রকমে আন্দাজে হাতড়ে হাতড়ে চলতে শুরু করলাম আমি… জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে চলা আমার কাছে জল ভাত… গড়ের জঙ্গলে বড়ো হয়েছি… তাই বনভূমির মধ্যে দিয়ে কি করে চলতে হয়, সেটা অন্তত আমায় শেখাতে হবে না…

দিনের বেলা জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে হাঁটা আর রাতের আঁধারে কোন লাইট ছাড়া হাঁটার মধ্যে যে কি পার্থক্য… সেটা হাড়ে হাড়ে অনুভব করতে শুরু করলাম আমি… প্রতি পদে ঠোক্কর খেতে খেতে এগোতে লাগলাম… যেন জঙ্গলের সমস্ত বাধা আমারই সামনে নিজের থেকে এসে উপস্থিত হচ্ছে তখন মনে হলো… আর যত ঠোক্কর খাই… তত নিজেকে নিজেই গালাগালি দিতে থাকি…

এরপর যেটা হলো, সেটা একেবারেই উচিত হল না বলতে পারি… এটা অন্তত আমার সাথে না হলেই ভালো ছিল… কিন্তু কি করে বুঝবো ওই অন্ধকারের মধ্যে? যে আমার সামনেই ও রকম একটা জমে থাকা কাদা জল থাকবে? দিনের বেলা হলে হয়তো চোখে পড়তো নিশ্চয়ই… কিন্তু সেই রাতের অন্ধকারে পা গিয়ে পড়লো একেবারে সরাসরি ওটার উপরে… আর ফল স্বরূপ একদম পপাৎ ধরণিতল… উফফফ… পা হড়কে একদম সজোরে আছাড় একটা… হাতের কুনুই, পায়ের হাঁটু তো ছেঁচে গেলোই… আর সেই সাথে ওই জমা জলের মধ্যে একেবারে মাখামাখি আমি… সারা পোষাক আষাক একদম কাদায় ভর্তি… 

আমি তো কতক্ষন যে ঐ ভাবেই ওই খানে বসেছিলাম জানি না… তখন মনে হচ্ছিল হাত পা ছুঁড়ে কাঁদি… তাতে যদি কিছুটা মনের ভার লাঘব হয়…

অতি কষ্টে উঠে দাঁড়ালাম… অন্ধকারে দেখাও যাচ্ছে না… তাও বুঝতে অসুবিধা হলো না যে আমার পরণের পুরো পোষাকটাই সম্পূর্ণ কাদায় মেখে গিয়েছে… এখন এই ভাবে কি করে হেঁটে যাবো? ভাবতেই কান্না পেলো আমার… যতটা এসেছি… সেখান থেকে তখনও গাড়িটা দেখা যাচ্ছে রাস্তা ধারে দাঁড় করানো… কিন্তু গাড়িতেও জলের বোতল আছে কি না বা থাকলেও সেটাতে আদৌ জল আর অবশিষ্ট আছে কি না মনে পড়ল না কিছুতেই… তাই ফিরে যাবো না এগোবো ভাবতে ভাবতেই পেছন থেকে গলার আওয়াজে আমি প্রায় আঁৎকে উঠলাম বলতে গেলে… প্রায় চিৎকার করে উঠলাম সভয়ে…

“ম্যাম… আমি আপনাকে কোন হেল্প করতে পারি?” পরিষ্কার গলায় আমার পেছন থেকে একটা ভারী পুরুষ কন্ঠ প্রশ্নটা করল…

ভীতু… এই সঙ্গাটা আমায় অন্তত কেউ দিতে পারবে না… কিন্তু সেই মুহুর্তে ঐ রকম একটা পরিস্থিতি আর পারিপার্শিক অবস্থায় ভয় পাওয়াটা খুব কি অস্বাভাবিক? 

“প্লিজ ম্যাম… শান্ত হোন… আসলে আমার কুকুর গুলো চ্যাঁচাচ্ছিলো, তাই আমি ভাবলাম দেখি এগিয়ে কি হলো… আর এসে আপনাকে দেখলাম…” শান্ত গলায় বলে উঠল পুরুষ কন্ঠটি… “আপনি ঠিক আছেন তো!”

আপনি ঠিক আছেন তো!!!!!!... প্রশ্নটা শুনে আমার পিত্তি যেন জ্বলে উঠল একেবারে… ন্যাকা!!!... দেখতে পাচ্ছে না আমার কি হালৎ হয়েছে… আর এই ভাবে এই রকম একটা বিদ্ঘুটে জায়গায় এই ভাবে প্রশ্ন? আমি প্রায় খেঁচিয়েই উঠলাম দাঁতে দাঁত চিপে পিছনে এসে দাঁড়ানো গাছের আড়ালের অন্ধকারে থাকা আবছায়া মানুষটার উদ্দেশ্যে… “পাগল নাকি? দেখতে পাচ্ছেন না আমার কি অবস্থা?” 

আমি সাধারনত এই ভাবে অপরিচিত কারুর সাথে কথা বলি না… কিন্তু ঐ সময় ওই অবস্থায় মাথার ঠিক থাকে? এমনিতেই নিজের মুর্খামীর জন্য নিজের উপরেই মেজাজটা খিঁচড়ে ছিল… তারপর এই ভাবে কাদা মাখা… আর এখন এই প্রশ্ন… সভাবতই যেন মেজাজটা তিরিক্ষি হয়ে উঠলো আমার… 

“ওহ!... সরি… ঠিক আছে… ভালো থাকুন…” বলে পেছনের লোকটি ঘুরে হাঁটা দিতে শুরু করে দিলো… বোধহয় যে দিক থেকে এসেছিল সেই দিকেই… আর সাথে সাথে যেন চারপাশের অন্ধকার মানুষটার শরীরটাকে গিলে নিলো…

লোকটির শরীরটা চোখের সামনে থেকে হারিয়ে যেতেই যেন সম্বিত ফিরে আসে আমার… একি করলাম আমি? এই সময় এই রকম একটা সাহায্যকে নিজের মেজাজের জন্য হারালাম? এ বাবা… ছি ছি… এটা হয় না… 

আমি দ্রুত পা চালালাম মিলিয়ে যাওয়া শরীরটার দিকে উদ্দেশ্য করে… “এই যে… শুনছেন… সরি… আসলে… শুনুন না একবার… প্লিজ…”

“হ্যা বলুন… শুনছি…” উত্তরটা এলো... কিন্তু এবারেও আমার পেছন থেকে…

আমি পুরো একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে গেলাম… এটা কি করে হলো? লোকটা তো ওই দিকে চলে যাচ্ছিল… তাহলে ঘুরে আমার পেছনে কি করে এলো? আমি অবাক হবো না ভাববো বুঝে উঠতে পারলাম না… কিছু না ভেবেই প্রশ্নটা করে ফেললাম… “আপনি এ পাশে কি করে এলেন?”

“আপনি ভুল দিকে এগিয়ে গিয়েছিলেন… আমি এদিকেই ছিলাম…” চওড়া কাঁধ ঝাঁকিয়ে উত্তর দেয় অন্ধকারের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা আবছায়া লোকটি…

ততক্ষনে অন্ধকারটা অনেকটাই সয়ে এসেছে চোখে… সামনে দাঁড়ানো মানুষটাকে বেশ সুপুরুষ মনে হলো… হাইটটা খুব ভালো… আমার থেকে অনেকটাই বেশি… ছ’ফুটের ওপর তো হবেই… আর সেই সাথে বেশ সবল… কাঁধটা অনেকটা চওড়া… মুখের চোয়াল দেখে বোঝাই যায় বেশ শক্তিশালি মানুষটা… এক কথায় হ্যান্ডসাম বলাটা ভুল কিছু নয়… সেই সাথে আরো একটা কথাও মনের মধ্যে যেন উঁকি দিয়ে গেলো… ডেঞ্জারাসও হতে পারে…

“কি নাম আপনার?” আমার দিকে তাকিয়ে সরাসরি প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিল লোকটি যেন…

আপনা থেকেই মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো আমার নাম… “চন্দ্রকান্তা… চন্দ্রকান্তা চৌধুরী…” তারপর একটু থেমেই ঘুরিয়ে আমিও জিজ্ঞাসা করি… “আপনার?”

“পার্কার গ্রীন… ভালো লাগলো আপনার সাথে আলাপ হয়ে…” উত্তর দিল লোকটি… সচারাচর এখানে সকলেই নিজের নাম বললে হাত বাড়িয়ে দেয়… করমর্দন করতে… কিন্তু লোকটি সে সবের দিকে গেলো না… নিজের জায়গাতেই সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো আমার দিকে ফিরে…

“ওহ! আচ্ছা…” আমি একটা নার্ভাস হাসি হাসলাম ওর দিকে তাকিয়ে… “এখানেই থাকেন? মানে কাছে পীঠেই?”

“হ্যা… এই তো কাছেই… ওই রাস্তাটার একটু দূরেই…” উত্তর দেয় লোকটি…

“কিন্তু আমি তো কোন কুকুরকে ডাকতে শুনি নি এর মধ্যে?” প্রশ্ন করি ফের… গলায় তখন আমার একটু সন্দেহের উঁকি…

“উহু… ওরা ডাকে না… গরগর করে… তাই শুনতে পান নি ওদের গলার আওয়াজ… ওরা বাড়ির মধ্যেই থাকে…” একটু থেমে ফের বলে উঠলো লোকটি… “আমার সাথে গেলে ওদের দেখতে পাবেন… আসলে ওদের কথা আমি ঠিক বুঝতে পারি… তাই তো ভাবলাম একটু এগিয়ে দেখি… আর এসে দেখলাম আপনাকে…”

লোকটির কথায় অনেকটা আস্বস্থ হলাম আমি… কিন্তু সন্দেহটা যে একেবারে পুরোপুরি কেটে গেলো তাও নয়… তাও… মন্দের ভালো… অন্তত এই রাতের অন্ধকারে একজন কাউকে তো পাওয়া গেলো… না হলে তো… 

আমি লোকটিকে বললাম… আমার এখানে এসে পড়ার কারন… গাড়ির তেল শেষ হয়ে যাওয়া… বনের মধ্যে দিয়ে শর্টকাট নেওয়া… যতটা সম্ভব… যাতে অন্তত কিছু সাহায্য পাওয়া যায় এই মুহুর্তে…

পার্কার চুপ করে আমার পুরো কথা গুলো শুনলো… আমার কথার মধ্যে একটাও না কথা বলে… তারপর আমি চুপ করলে সামান্য হেসে বলে উঠল… “বুঝেছি… ঠিক আছে… কোন চিন্তা করবেন না… আপনি নিশ্চিন্দে আমার বাড়িতে আসতে পারেন… এসে একটু রেস্ট নিন… আমি ততক্ষনে আপনার গাড়ির তেলে ব্যবস্থা করে ওটাকে নিয়ে এসে রাখছি আমার বাড়ির সামনে…” 

সত্যি বলতে সেই মুহুর্তে আমার না বলার মত অবস্থা ছিল না… এতটাই এক্সহস্টেড তখন আমি… আমি ঘাড় নেড়ে ধন্যবাদ দিলাম পার্কারকে… সে আমায় পথ দেখিয়ে ওর বাড়ির দিকে নিয়ে চলল… প্রথমটা যাবো কি না ভাবছিলাম, কিন্তু সেই মুহুর্তে আমার যা অবস্থা, তাতে না গিয়েও কোন উপায় নেই… অন্তত একটু তো ফ্রেশ হওয়া যাবে… আর যদি লোকটার কোন দুরভিসন্ধি থাকে!... ওটা সামলে নেওয়া আমার কাছে কোন ব্যাপার নয়… তাহলে লোকটার হাত পা ভাঙবে মাঝখান থেকে জোর করে কিছু করতে এলে আমার সাথে… সেই আত্মবিশ্বাস আমার নিজের উপরে আছে…
[+] 9 users Like bourses's post
Like Reply


Messages In This Thread
চন্দ্রকান্তা - এক রাজকন্যার যৌনাত্মক জীবনশৈলী - by bourses - 21-05-2022, 03:30 PM



Users browsing this thread: 33 Guest(s)