31-05-2022, 11:30 PM
-অনি ডাক্তার সব সত্যি কথা বলছে! আমার গা ছুঁয়ে বল। বড়মা বললো।
-আবার শপথ করাচ্ছ। সেদিনকার কথাটা ভুলে গেছো।
-আচ্ছা আচ্ছা আর বলবোনা। কিন্তু ডাক্তার কি বলছে সব গুলিয়ে যাচ্ছে।
-দাঁড়াও আগে চা খাই।
-বান্ধবী ওর পেট থেকে বার করতে পারবেনা। তোমাকে পড়াশুনো করতে হবে।
-এই বুড়ো বয়সে সেটা হয়।
-তাহলে চুপচাপ থাকো।
মিলি চায়ের কাপ নিয়ে এলো। হাতে নিলাম।
-তুমি দাঁড়িয়ে রইলে কেনো। নিজের জায়গায় গিয়ে বোসো।
নিরঞ্জনদা চলে গেলো।
-কিরে তোর কি এখনো ঘোর কাটেনি। ঘাড়টা ব্যাথা হয়ে গেলো।
-হোক। তোকে ছুঁয়ে থাকলে যদি কিছু শিখি।
-অনেক শিখেছিস আর শিখতে হবেনা। খিদে পাচ্ছেনা।
-পাচ্ছে তো, উঠতে ইচ্ছে করছেনা।
-আচ্ছা ডাক্তার তোমরা দুজনে কথা দিয়ে এমন সব ছবি আঁকলে আসল প্রশ্নের উত্তরটা পেলামনা। দাদা বললো।
-তোমায় পেতে হবেনা যে প্রশ্ন করেছে সে ঠিক উত্তর পেয়ে গেছে।
-বুঝলি অনি ফ্রয়েডের প্রিকনসাস নিয়ে আমার কিছু কিছু জায়গায় খটকা আছে।
-আমার একেবারে নেই।
-তোর সঙ্গে বসবো।
-তোমাদের আলোচনায় আমরা থাকবোনা। টিনা বলে উঠলো।
-নিরস সাবজেক্ট।
-নিরস কইগো বেশতো শুনতে ভালো লাগছিলো। বড়মা বললো।
-চলো এবার উঠি অনেক বেলা হলো।
আমি উঠে দাঁড়ালাম।
-আমি তাহলে রেজুলেসন তৈরি করতে বলে দিচ্ছি। ডাক্তারদাদার দিকে তাকিয়ে বললাম।
-সেটা কি তুই বাকি রেখেছিস।
হেসে ফেললাম।
-হাসিসনা। সবকিছু হাসি দিয়ে ঢাকা যায়। তুই যেমন একা একা কাঁদিস আমরাও কাঁদি। একটু বলতে অসুবিধে কোথায়।
মাথা নীচু করে থাকলাম।
বড়রা সবাই বাথরুমে স্নান করলো। আমরা সবাই পুকুরে নামলাম। জল তোলপাড় করে স্নানপর্ব চললো। দেবাশিষ সাঁতার জানেনা। ও পুকুর পাড়েই বসে বসে স্নান করলো। চিকনা জলে ডুবে পুকুরের মাটি তুলে আনার খেলা দেখালো। টিনা, মিলি, অদিতি, নীপা ওর পাশে পাশে সাঁতার কাটছে। সবাই বেশ মজা করছে। আমি এমনিই সাঁতার কাটছিলাম। বাসু অনাদির সঙ্গে কথা বলছিলাম।
চিকনা চেঁচিয়ে বললো, অনি তুই পারবি। তোর এখন আর দম নেই।
আমি হাসলাম।
-যদি পারি কি দিবি।
-তোকে যেখান থেকে বলবো সেখান থেকে ডুবে মাটি তুলে আনতে হবে।
-ঠিক আছে, চেষ্টা করবো। তার আগে বল কি দিবি।
-তোকে পাটালি খাওয়াবো।
-ওতো তুই রেগুলার খাওয়াচ্ছিস।
-আজ তুই আমাদের গাছের রস চুরি করে খেয়েছিস।
-নাম লেখা আছে। তোদের গাছ।
-আমাদের জমির গাছ।
-হারুজানার কালা ইজমালি।
-কখনই না। আমরা মেপে দেখেছি ওটা আমাদের জায়গা।
-কাকাকে দলিলটা নিয়ে আসতে বল।
-অনাদি দেখছিস। চুরি করবে আবার…….।
ঝপ করে জলে ডুব মারলাম। ডুব সাঁতারে চিকনার কাছে পৌঁছে, ওর গামছা খুলে নিয়ে চলে এলাম।
জলে ভেসে উঠতেই চিকনার সে কি তর্জন গর্জন।
নীপা হাততালি মারছে।
-অনিদার সঙ্গে চ্যালেঞ্জ। বুঝতে পেরেছিলে অনিদা এই কু-কীর্তি করবে।
প্রথমে মিলিরা বুঝতে পারেনি। বোঝার পর ওদের হাসি ধরেনা।
দেবাশিষ ওপর থেকে চেঁচাচ্ছে।
-কি চিকনাবাবু চ্যালেঞ্জ করবে নাকি অনির সঙ্গে।
-আর জীবনে করবোনা। তুই গামছাটা দে।
-অনাদি ওকে জিজ্ঞাসা কর ওই গাছটা ওদের কিনা। ও আমার নামে সকালে বড়মাকে রিপোর্ট করেছে।
-আমি গ্রামসভা ডাকবো।
-ডাক। আমি উঠলাম।
-তোর পায়ে ধরি। তুই গামছাটা দে।
সবাই হো হো করে হাসছে।
-আমি বড়মাকে ডাকবো।
-ডাক।
চিকনা কিছুতেই কাছে আসতে পারছেনা। এক গলা জলে দাঁড়িয়ে। সাঁতারও কাটতে পারছেনা।
-মিলি ওর কাছে যাওতো।
মিলি যেই সাঁতার দিলো
-আমি কিন্তু ডুবে মরে যাবো অনি।
-তুই মরে দেখা তুই মরেছিস।
-দেনা ভাই, দাদা আমার।
-উঃ কি রসের কথা শোন।
-বড়মা গো। আমাকে অনি মেরে ফেললে। পুকুরে দাঁড়িয়েই চেঁচিয়ে উঠলো।
-সাঁতার কাট দারুন লাগবে।
চিকনার তারস্বর চিৎকারে সবাই ঘাটের ধরে চলে এসেছে। আমি মাঝ পুকুরে জলে ভেসে রয়েছি। চিকনা একগলা জলে দাঁড়িয়ে। আমার পাশে মিত্রা অদিতি টিনা নীপা মিলি। সবাই হাসছে।
-কিরে তোরা জল থেকে ওঠ এবার। বড়মা ওপর থেকে চেঁচালো।
আমি চেঁচিয়ে বললাম আগে চিকনাকে উঠতে বলো, তারপর আমরা উঠবো। ও আমাদের উঠতে দিচ্ছেনা।
দেবা বাসু জল থেকে হাসতে হাসতে উঠে গেলো। সবাই হাঁসছে।
-চিকনা বাবা উঠে আয়না। ওরা কি তোর সঙ্গে পারে।
চিকনা কোনো কথা বলতে পারছেনা। গুম হয়ে আছে। রাগে গর গর করছে।
বাসু বড়মার কাছে গিয়ে ফিস ফিস করে বললো। বড়মা প্রথমে আমার দিকে তাকালো চোখে হাসি মুখে গম্ভীর। ছোটমা একটা মাটির ঢেলা তুলে আমাকে ছুড়লো আমি জলে ডুব মারলাম।
কথাটা সকলে জেনে ফেললো, সবাই হাসছে। ইসলাম ভাই হাসতে হাসতে বসে পরলো।
-কি হলো চিকনা গুরু বিট্রে করলো।
চিকনা কোনো কথা বলতে পারছেনা।
-কিরে আমি তোদের গাছের রস চুরি করে খেয়েছি।
-না।
-ওটা কাদের গাছ।
-এজমালি।
-বড়মা শুনলে চিকনা কি বললো।
বড়মা হাসছে।
-তোর মাথায় এরকম বদ বুদ্ধি আসে কি করে বলতো।
দেবাশিষ চেঁচিয়ে উঠলো
-চিকনা চ্যালেঞ্জ করছিলো অনির সঙ্গে। দেখছো আমরা যারা ওর সঙ্গে কলেজ লাইফে চ্যালেঞ্জ করেছিলাম। তারা এখন কোথায় আছি। চিকনারও হাল সেইরকম হবে। একটু অপেক্ষা করো।
-ও তোদের মতোই হোক।
-চিকনা আমি ডুবে মাটি তুলছি।
-না তোকে ডুবতে হবেনা। তুই আমাকে ছুঁড়ে দে।
-একটু অপেক্ষা কর।
আমি ডুব মেরে চিকনার কাছে গিয়ে ওর পায়ে হাত দিয়ে গামছাটা দিলাম। বুঝতে পারলাম চিকনা আমার হাত ধরতে গেলো, পারলোনা ছিটকে বেরিয়ে এলাম। ও ডুব মারলো। বেশ কিছুক্ষণ জলে দুজনে দাপাদাপি করলাম। দুজনেই হাঁপিয়ে গেছি। পারে উঠে এলাম।
চিকনা হাসছে। তোর এখনো এতো দম।
মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো
-কিরে ওপারে যাবিনা।
-আজ থাক বেলা হয়ে গেছে।
ছোটমা দাঁত খিঁচিয়ে উঠলো,
-শখ দেখো মেয়ের।
আবার আমি আর চিকনা জলে ঝাঁপ মারলাম। ওদের সবাইকে নিয়ে ওপার থেকে ঘুরে এলাম। খুব এনজয় করলো ওরা। টিনা বললো
-মিত্রাদি জলটা কি ভারি গো।
নির্মাল্য হাঁপাতে হাঁপাতে বললো
-এটাকি তোমার সুইমিং পুলের জল।
আমরা পারে উঠে এলাম গা মুছে টাওয়েলটা মিত্রার দিকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে চলে এলাম। চিকনা আমার পেছন পেছন।
দেখলাম সঞ্জু এসে পথ আগলে দাঁড়িয়েছে।
-কিরে!
-তুই আর কিছুক্ষণ দাঁড় করিয়ে রাখতে পারলিনা। আমি এসে জল খাওয়াতাম। চিকনার গামছা ধরলো।
চিকনা তারস্বরে চেচিয়ে উঠলো।
-বড়মা....
বড়মা ভেতর বারান্দা থেকে চেঁচিয়ে উঠলো,
-কি হলোরে চিকনা।
-দেখোনা সঞ্জুটা।
-সঞ্জু....
-নাগো বড়মা মিথ্যে কথা বলছে।
আস্তে করে দাঁত কিড়মিড় করে বললো,
-দাঁড়া খাওয়া হোক তোকে বমি করাবো।
আমি ওপরের ঘরে চলে গেলাম। চিকনা নিচের বারান্দায় ওর নিজের জায়গা থেকে জামা কাপড় পরলো।
নিচে চেঁচামেচির শব্দ। হুড়মুড় করে সবাই চলে এলো।