Thread Rating:
  • 63 Vote(s) - 2.92 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়)
-বুবুন।
মিত্রার ডাকে ফিরে তাকালাম।
আমার একেবারে পেছনে মিত্রা দাঁড়িয়ে আছে। মিত্রাও কাঁদছে। কখন এসে দাঁড়িয়েছে জানিনা।
-আজও আমাকে মার কাছে নিয়ে গেলিনা। মাথাটা নীচু করলো।
আমি মিত্রাকে জড়িয়ে ধরলাম। চোখের জলের বাঁধ মানছে না।
-কাঁদিস না। তোকে মন খারাপ করতে দেখলে কারুর মন ভালো থাকে না। ও বাড়িতে সবাই বসে আছে।
-তুই যা। আমি একটু একা থাকি। ঠিক হয়ে যাবে।
মিত্রা আমার মুখের দিকে ভাসা ভাসা চোখে তাকালো।
-কেনো গেলি?
-দেবারা যেতে চাইলো।
মিত্রা আমার চোখে আঙুল ছোঁয়ালো।
-তুই কাঁদলে আমার মন ভালো থাকে ?
-ঠিক আছে আর হবেনা।
-ও বাড়িতে চল।
-আমি একটু বসি। তুই একটু চা খাওয়াবি।
-ওদের ডাকি।
-নিয়ে আয়।
-তুই একটু মুখে চোখে জল দিয়ে নে। চোখদুটো কেমন ফুলিয়ে ফেলেছিস।
মিত্রাকে বুকের সঙ্গে জাপ্টে ধরলাম।
-পায়ের ব্যাথা কমেছে।
-হ্যাঁ। ডাক্তার দাদা কি বলেছে জানিস।
-কি।
-তুই ডাক্তার দাদার ভাত মেরে দিবি।
হাসলাম।
-মায়ের ফটোটা তুলে রাখ।
আমি মিত্রার কথা মতো ফটোটা ঠিক জায়গায় রেখে আলমারিটা বন্ধ করলাম।
-আমি চা নিয়ে আসি।
-আয়।
মিত্রা বেরিয়ে গেলো। আমি মুখটা ভালো করে জল দিয়ে ধুলাম। ঘরে এসে টাওয়েল দিয়ে মুখ মুছলাম। সিঁড়িতে ধুপ ধাপ আওয়াজ পেলাম। কেউ দৌড়ে আসছে। তাকাবার আগেই চিকনা ঘরে এসে জড়িয়ে ধরলো।
আমি ওর দিকে তাকালাম।
দেখলাম বাসু, অনাদি, পলা, সঞ্জীব দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে। ওদের মুখটা ভারি। আমার মুখের দিকে তাকিয়েই মাথাটা নীচু করে নিলো।
-তুই মন খারাপ করলে আমরা কোথায় যাবো। তোকে নিয়ে যে আমাদের অনেক স্বপ্ন।
আমি চিকনার দিকে তাকিয়ে আছি। ওদের মুখ বলে দিচ্ছে ওরা কষ্ট পাচ্ছে।
-আয় ভেতরে আয় ওখানে দাঁড়িয়ে রইলি কেনো।
চিকনা আমাকে ছেড়ে দিলো। আমি খাটের ওপর বসলাম। ওরা যে যার মতো করে বসলো। আমার একপাশে বাসু একপাশে অনাদি।
আমি মোবাইলটা বার করে ম্যাসেজগুলো এক ঝলকে দেখে নিলাম। বুঝলাম অর্ক ঠিক ঠিক ভাবে কাজ এগোচ্ছে।
ওদের দিকে তাকালাম। সবাই চুপ চাপ বসে আছে।
-চিকনা একটা সিগারেট খাওয়াবি।
বাসু পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বার করলো।
আমার দিকে এগিয়ে দিলো। আমি হেসে ফেললাম।
-এই হচ্ছে রিয়েল অনি। আর একবার হাস।
-তুই সিগারেটের প্যাকেট পকেটে রাখছিস।
-তোর মতো, ইচ্ছে হলে খাই, না হলে খাইনা।
আমি একটা বার করে অনাদির হাতে দিলাম।
-বাসু, তুই একটা বার করে নে আমি, সঞ্জু, পলা কাউন্টার করে নেবো।
-আমি অনির কাউন্টার নেবো। আগে বলে দিচ্ছি একেবারে ঝামেলা করবি না। সঞ্জু চেঁচিয়ে উঠলো।
-ঝামেলা করতাম কিন্তু এখন করবো না। ডিউ স্লিপ রইলো।
-কখন বেরিয়েছিলি। অনাদি বললো।
-সকাল বেলা।
-না। আরো আগে!
হাসলাম।
-আজও অপকর্ম করেছিস?
-কে বললো?
-ম্যাডামদের পেটে কিছু থাকে।
হৈ হৈ করে সকলে ঘরে ঢুকে পরলো। ঘর ভরে গেলো। মিলি এসে আমার পায়ের কাছে বসলো।
-টিনা একটু ধরতো। মিত্রা বললো।
টিনা চায়ের ট্রেটা ধরে মিট সেফের ওপর রাখলো।
-মন ভালো হয়েছে। মিলি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললো।
আমি মিলির মুখটা ধরে গালটা টিপে দিলাম।
-মন খারাপ হয়নি, হঠাৎ লোড শেডিং হয়ে গেছিলো।
-তাহলে, কি বলেছিলাম। চিকনা চেঁচিয়ে উঠলো।
-কি বলেছিলি! সঞ্জু খেঁকিয়ে উঠলো।
-কাল রাতে তোর জেনারেটর ফেল করেছিলো।
সঞ্জু নিমেষের মধ্যে উঠে দাঁড়িয়ে জলন্ত সিগারেটটা চিকনার মুখের কাছে নিয়ে গিয়ে বললো
-দেবো মুখ পুরিয়ে। দেখতে পাবি।
-ম্যাডাম আপনি সাক্ষী রইলেন। দুই নম্বর হলো। মনে রাখিস।
-আবার কথা।
মিলি একটু ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেছিলো।
মিত্রা মিটসেফের কাছ থেকে চেঁচিয়ে উঠলো
-মিলি ভয় পাসনা। মানিকজোড় সারাদিন এরকম খেয়ো-খেয়ি করে। আবার একজন আর একজনকে দেখতে না পেলে বাড়িতে গিয়ে হাজির হয়।
চিকনা মিলির দিকে তাকিয়ে বললো।
-ম্যাডাম মিছে কথা বললো।
মিলি চিকনার কথা বলার ভঙ্গিতে ফিক করে হেসে ফেললো।
-ম্যাডাম একটু গরম জল দেন মুখটা ধুই। চিকনা চেঁচালো।
-শুধু বুবুনের জন্য।
-তাই দেন আমি কাউন্টার মারবো।
-আমিও আছি। সঞ্জু বললো।
-সিগারেটে তুই ফার্স্ট আমি সেকেন্ড। চায়ে তুই সেকেন্ড আমি ফার্স্ট।
-অনাদি তুই সাক্ষী রইলি আমি যেনো পাই। সঞ্জু বললো।
-আমি নেই এর মধ্যে।
-অনিদা কি খাবেতোমাদের যদি দিয়ে দেয়। মিলি বললো।
-খালি কাপটা দিলেই যথেষ্ট, ধুয়ে ভাগ করে নেবো।
মিলি আর থাকতে পারলোনা। হাসতে হাসতে আমার কোলে মাথা রাখলো।
-কিছু বুঝলি মিলি। মিত্রা বললো।
ওরা সবাই হাসছে।
আমার ফোনটা ঢং ঢং করে বেজে উঠলো। মিত্রা আমার দিকে তাকালো।
-মিলি ফোনটা নিয়ে আয়তো।
মিত্রার কথায় দেবাশিষ ফিক করে হেসে ফেললো।
-তুই হাসলি কেনো।
-প্রাইভেট ম্যাসেজ দেখছিস কিনা।
-তোর কি।
দেবাশিষ হাসছে।
-টিনা তোরা একটু ওগুলো দিয়ে দে সবাইকে। আমি এখুনি আসছি।
মিলি আমার পায়ের কাছ থেকে উঠে মিটসেফের কাছে চলে গেলো।
টিনা মিলি অদিতি সবাইকে চায়ের কাপ এগিয়ে দিলো।
-তুমি কিছু খাবেনা অনিদা। টিনা বললো।
-ভালো লাগছেনা।
-আমরা তোমার তুলে আনা শাক ভাজা দিয়ে পান্তা খেলাম। দারুন।
-তুই কলাই শাক কার ক্ষেত থেক তুললি? অনাদি বললো।
-কেনো শ্মশানে যেতে গিয়ে ডান দিকের ক্ষেতটা।
-খেয়েছে। চিকনা বললো।
-কেনো!
-হায়রে। কাঞ্চন মাসির খেত। জানতে পারলে বুড়ি মরা বাপকে জ্যান্ত করে দেয়। তবে তুই তুলেছিস জানলে মাটিতে মুখ ঘষে রক্ত বার করে দেবে।
-তার মানে! দেবাশিষের চোখ বড় বড়।
-বুঝলেন না।
টিনা আমাকে চায়ের কাপ দিতে এসে ঘরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে পরেছে। চিকনার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে।
-না।
-অনিকে মাসি খুব ভালবাসে। না জেনে গালাগাল করবে, সাপ সাপান্তর করবে। যেই জানবে অনি তুলেছে অমনি যেই মুখ দিয়ে গালাগাল দিয়েছে সেই মুখটা মাটিতে ঘষবে। সে এক ব্যাপার, ঘটনা ঘটলে জানতে পারবেন।
-ও শিট। টিনার মুখ থেকে বেরিয়ে এলো।
-হিট না ম্যাডাম হক কথার এক কথা।
-ম্যাডাম ইংরাজী বলেছে। বাসু বললো।
-ক্ষমা দেন ম্যাডাম ইংরাজী বুঝি নাই ভুল ভাল বলে ফেলেছি।
মিলি চিকনার কথা শুনে হো হো করে হেসে ফেললো।
আমি চায়ের কাপটা চিকনার দিকে এগিয়ে দিলাম।
-মনে রাখিস, আমি এখানে বসে আছি। সঞ্জু বললো।
-বিকেলেরটা নিস।
দেবাশিষ চিকনার কীর্তি দেখে হো হো করে হেসে ফেললো।
-কি পলাবাবু চুপচাপ যে।
-তোকে নেমন্তন্ন করতে এসেছি।
-আমাকে! কেনো ?
-কাল যাত্রা কালীপূজো উপলক্ষে একবার আসবি।
-কখন ?
-সন্ধ্যে বেলা।
টিনা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। ইশারায় বলছে যাবো, তুমি বলে দাও। মিলিও একি কথা বলছে।
বাসু ফিক করে হেসে ফেললো।
-কিরে পলা তুই ম্যাডামদের নেমন্তন্ন করলিনা।
-অনি গেলে ওনারাও যাবেন। লজ্জা লজ্জা মুখ করে বললো।
-সেগগগগগগগো......
সঞ্জু চিকনার মুখটা চেপে ধরলো চিকনা গোঁ গোঁ করছে।
-এই জন্য বলে চাষা। সঞ্জু চিবিয়ে চিবিয়ে বললো।
চিকনা আমার দিকে মুখ করে ফিক করে হেসে ফেললো।
-এই কান মুলছি দেখিস আর হবেনা।
-নীপাকে ডাকবো। অনাদি বললো।
-ডাকিসনা, ঝেঁটিয়ে বিষ ঝেরে দেবে।
দেবা হাসছে।
-খুব জোর আড্ডা মারছিস। ইসলাম ভাই ভেতরে এলো।
-এসো গুরুদেব তুমি আমার পাশে। চিকনা সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালো। ইসলাম ভাই এসে বসলো। মিত্রা হাসতে হাসতে ঘরে ঢুকলো।
-বুবুন ইসলাম ভাই চুরি করে দেখে ফেলেছে।
আমি ইসলাম ভাই-এর দিকে তাকিয়ে হাসলাম।
-দেখে কি করবো বল, ওটা আমার হাতের বাইরে। তোর সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবোনা।
আমি তাকিয়ে আছি।
-তাকাসনা। সত্যি বলছি। কালকে থেকে দামিনী অনেক জ্বালিয়েছে। কোনো কথার উত্তর দিতে পারিনি। আজকে কিছুটা অন্ততঃ বলতে পারবো।
ঘরের সবাই হাঁ করে আমার আর ইসলাম ভাই-এর কথা শুনছে।
-সন্দীপ ফোন করেছিলো। তোর কথা মতো কাজ হয়ে গেছে। মিত্রা বললো।
-তুই এক ঢিলে সব পাখি মারবি।
-এক ঢিলে একটাই মরবে। বাকি সব প্রাণের ভয়ে পালিয়ে যাবে। ওই তল্লাটে আর বাসা বাঁধবেনা।
-দারুণ বললি কথাটা। অদিতি স্টক করো। কলকাতায় গিয়ে ছাড়তে হবে।
-দেবাদা, অনির কথা লেখতে গেলে মহাভারত হয়ে যাবে। চিকনা বলে উঠলো।
সবাই হো হো করে হেসে উঠলো।
-মামনি আমি একটু পাবোনা।
-ফ্লাস্কে আছে। টিনা একটু ঢেলে দে।
 
-এইবার ভাইদা আর অনি। আমরা কেউ খাবোনা। চিকনা বললো।
-কাউন্টারও পাবিনা। সঞ্জু বললো।
-বড়দের কথার মাঝখানে ফুট কাটিস কেনো।
সঞ্জু সজোরে একটা ঘুসি মরলো চিকনার পিঠে। ভাইদা গো মরে গেলাম।
সবাই হেসে উঠলো।
দুজনে হাতাহাতি শুরু হয়ে গেলো।
-আরে আরে করছো কি। ইসলাম ভাই বলে উঠলো।
-মনে রাখিস এ অপমান আমি সইবোনা। রাতে যদি জেনারেটর বিগড়োয় তুলে নিয়ে গিয়ে পচা পুকুরের জলে ফেলবো
সঞ্জু আবার কিল তুলেছিলো ইসলাম ভাই ধরে নিলো।
মিত্রা টপকে টপকে চলে এসে আমার আর দেবার মাঝখানে বসে পরলো। আমার হাতে মোবাইলটা ধরিয়ে দিলো।
-গুরু আমার একটা আর্জি রাখবে। চিকনা আস্তে করে বললো।
আমি চিকনার দিকে তাকালাম।
-নির্মাল্যদার নামটা একটু ছোটো করে দেবে।
-কেনো।
-দাঁত খুলে যাচ্ছে।
দেবাশিষ খিক খিক করে হেস ফেললো।
নির্মাল্য দেবার দিকে তাকলো।
-তাকাচ্ছিস কিরে চোখ গেলে দেবো। মিলি বললো।
-অনিদা তুমি মার্ক করো ব্যাপারটা। নির্মাল্য বললো।
-নিমু বলবি।
আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই, চিকনা আমার পায়ে আঙুল ঠেকিয়ে জিভে আঙুল ঠেকালো।
-কি হলো ?
-ধুলো খেলাম।
-কেনো ?
-ইনসট্যান্ট।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
টিনা চায়ের কাপ নিয়ে এগিয়ে এলো। আমি এক কাপ ইসলাম ভাই আর একটা কাপ টিনার হাত থেকে নিলাম।
-ম্যাডাম তলানি কিছু আছে।
চিকনার কথায় টিনা একবার তাকালো।
-তুই ওর কথা বুঝতে পারলিনা। ইসলাম ভাই বললো।
-না।
-এবারের কাউন্টার সঞ্জু নেবে চিকনা কি পাবে।
-ও হরি... টিনা হো হো করে হেসে ফেললো।
-সেদিনকার কথাটা বলবো বুবুনকে। মিত্রা বললো।
-আমি তাহলে আত্মহত্যা করবো।
মিত্রা হো হো করে হেসে ফেললো।
-তুই কি পাতা তুলে এনেছিসরে। ইসলাম ভাই বললো।
-কেনো।
-ওবাড়িতে বড়দি আর ডাক্তারবাবু ফাটা ফাটি করছে।
-সঠিক নাম বলতে পারবোনা। ছোটবেলা থেকে শুনেছি দই আঁতি পাতা।
-ভাজা খায়, না রস করে খায়।
-রস করে চিনি মিশিয়ে একটা বাটিতে রেখে দিলে দই-এর মতো বসে যাবে। তারপর দই যেমন করে খায় সেই ভাবে খাও।
-ডাক্তারবাবু বলে ভাজা খাবো। নীপা বলে রস করে খেতে হয়। বড়দি বলে অনি আসুক এ বাড়িতে তরপর হাত দিবি।
আমি হো হো করে হেসে ফেললাম।
[+] 4 users Like MNHabib's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - by MNHabib - 28-05-2022, 07:43 AM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)