19-05-2022, 05:08 PM
বাড়ি ফেরা ও দুটি বিনিদ্র রাত
বাড়িতে এসেই ফেটে পরল মলি, কষে একটা চড় বসিয়ে দিলো মাহিনের গালে , এই জন্য এত কষ্ট করে তোকে পড়াচ্ছি , মারপিট করার জন্য , হারামজাদা আজ তোকে মেরেই ফেল্বো । গুন্ডা হয়েছিস , কলেজে মারামারি করিস …… চড় খেয়ে মাহিনের চোখের উপরের ব্যান্ডেজ খুলে গেছে কিন্তু সেদিকে নজর নেই মলির । বারবার প্রিন্সিপ্যাল এর অস্লিল ইঙ্গিত মনে পরে যাচ্ছে , আর মাহিনের উপর তার ঝাল তুলছে । জীবনে এই প্রথম মাহিনকে এত মারছে ।
এদিকে মাহিন কিছুক্ষন চুপচাপ মার খেয়ে হঠাত গর্জে উঠলো …… এর জন্য তুমিও দায়ি , আমার একার দোষ নেই। ছেলের কথা শুনে স্তব্দ হয়ে গেলো মলি। বলে কি এই ছেলে , কলেজে নিজের সবচেয়ে ভালো বন্ধুর সাথে মারপিট করেছে আর বলছে এর জন্য ও দায়ি । মলির এই হঠাত থেমে যাওয়ার সুজগে মাহিন ঘর থেকে বেড়িয়ে যায় । স্তব্দ মলি ধপ করে সোফায় বসে পরে । কি বলল মাহিন, কি এমন ও করেছে যে মারামারি করতে হয়েছে ।
গভির চিন্তায় পরে যায় মলি, ঘন্তাখানেক চুপচাপ ভেবেই এর কোন কুল কিনারা পায় না । যতই ভাবে ততই অথৈ সাগরে আরও ডুবে যায় । ছেলের দিকে তো শত ভাগ নজর রেখেছে ও , কোন কিছুর কমতি হতে দেয় নি । এমন কি ছেলের কথা ভেবে নিজের জীবনের সখ আহ্লাদ ও বাদ দিয়েছে । এই ভরা যৌবনে একা একা দিন পার করছে ।
ভরা যৌবন এর কথা মনে হতেই প্রিন্সিপ্যাল এর কথা মনে পরে গেলো । লোকটা একেবারে স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়ে দিয়ে দিয়েছে সে কি চাইছে। কিন্তু এতদুর যাওয়া কি ওর পক্ষে সম্ভব? প্রশ্নটা নিজেকে করে আবার নিজেই নিজেকে ধিক্কার দিতে লাগলো । এই কথা মাথায় কেনো আসছে , অন্য উপায় নিশ্চয়ই আছে । বসে বসে ভাবতে লাগলো কি করা যায় । এমন কেউ কি নেই যে এই বজ্জাত প্রিন্সিপ্যাল কে সায়াস্তা করতে পারবে।
ভাবতে ভাবতে হঠাত মনে পরল সুহান এর মায়ের কথা । মাহিন এর সাথে এক কলেজে পরে । বেশ ভালো খাতির হয়েছে মলির সাথে , প্রায় মাঝে মাঝে ফনে কথা হয় । সুহানের বাবার তো গভর্নিং বডি তে পরিচিত লোক আছে , তাইতো এমন হাবা ছেলে কে এই কলেজে দিতে পেরেছে । তৎক্ষণাৎ নিজের মোবাইল ফোন বের করে কল করে । দুবার রিং হতেই রিসিভ করে সুহান এর মা
আল্লা ভাবি কি শুনলাম এসব…… মাহিন কে নাকি টিসি দিবে? উতকঠা যেন উপচে উপচে পরতে থাকে সুহান এর মায়ের কণ্ঠ থেকে । হ্যাঁ ভাবি এর জন্যই ফোন দিলাম , এখনো টিসি দেয়নি , তবে যে কাজ করেছে কি হবে কে জানে , একটাই ছেলে আমার…… কথাটা বলে মলির গলা ধরে আসে ।
না না ভাবি ভেঙ্গে পড়বেন না , কিছু একটা ব্যাবস্থা ঠিক হয়ে যাবে… ফাকা সান্তনা দেয় সুহানের মা । এই ফাকে মলি নিজেকে একটু শান্ত করে। নিউজ টা জানার পর এই প্রথম কারো কাছে শেয়ার করছে , তাই একটু ভেঙ্গে পরেছিলো । সত্যি সত্যি মলি ভীষণ চিন্তিত , প্রিন্সিপ্যাল এর ঘর থেকে বেরুনোর পর ছেলের উপর রাগে পুরো চিত্রটা মাথায় ঠিক খেলেনি । এখন বুঝতে পারছে কতটা অসহায় ও ।
সেই জন্যই তো আপনাকে কল করলাম ভাবি … এটা বলে একটু থাম্লো মলি তারপর বলল , ভাইয়ের তো গভর্নিং বডি তে লোক আছে , যদি কিছু করা যায়? শেষের বাক্যটি বলার সময় মলি আবারো ফুঁপিয়ে উঠলো ।
ভাবি প্লিজ কাদবেন না , আমি সুহানের আব্বু কে বলবো , আপনি কিচ্ছু চিন্তা করবেন না , সব ঠিক হয়ে যাবে ।
এর পর আরও কিছুক্ষন কথা হলো দুজনের মাঝে । মলি নিজের দুক্ষের কথা সুহানের মা কে বলে অনেকটাই শান্ত হলো । সেই সাথে আশার আলো ও দেখতে পেল । এবং মনে মনে এও ঠিক করলো , এই ঝামেলা মিটে গেলে প্রিন্সিপ্যাল কে একটা শিক্ষা দিতে হবে ।
<><><>
এদিকে জলির অবস্থা আরও খারাপ , ছেলেকে বেদম পিটুনি দিয়েছে । এতবড় ছেলেকে মেরে নিজেই হাঁপিয়ে উঠেছে । বার বার জিজ্ঞাস করেছে কেনো এসব করেছে । কিন্তু ছেলে কোন উত্তর দেয়নি , মুখ বুজে মার খেয়েছে । শেষে হাঁপিয়ে উঠে নিজের ঘরে এসে খিল দিয়েছে । নিজেকে খুব অসহায় লাগছে , কার কাছে বলবে , হেল্প করার মত ও কেউ নেই । আত্মীয় সজন ও নেই তেমন । আক বড় বোন আছে সে বিদেশ থাকে স্বামী সন্তান নিয়ে । তাছাড়া শ্বশুর বাড়ির কারো সাথেই ভালো সম্পর্ক নেই । ওরা শুনলে উল্টো মুখ টিপে হাসবে । বলবে ঐযে হয়েছে ছেলে একটা গুন্ডা । আর বার বার প্রিন্সিপ্যাল এর প্রস্তাব এর কথা মনে পড়ছে । বালিসে মুখ গুজে কাঁদতে থাকে জলি । অসহায়ত্ব আর একাকীত্ব এর কান্না ।
কাঁদতে কাঁদতে কখন ঘুমিয়ে পরেছে তার হিসাব ছিলো না । হঠাত ঘুম ভাঙ্গে মোবাইল ফোন বাজার শব্দে । ফোন রিসিভ করার কোন ইচ্ছা ছিলো না , কিন্তু নামটা দেখে রিসিভ করলো । কাপা গলায় বলল হ্যালো……
অপাশ থেকে যা শুনল তার পর আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না জলি , হু হু করে কেঁদে ফেলল । ব্যাপারটা ইতিমধ্যে জানাজানি হয়ে গেছে , ফোন করেছে ওর প্রয়াত স্বামীর এক ফুপাত ভাই । এই একজন শ্বশুর বাড়ির মানুষ এর সাথে মাঝে মাঝে যোগাযোগ হয় জলির । আসলে এই লোকটাই যোগাযোগ করে । জলি কে বেশ কিছু হেল্প ও করেছে , যেমন স্বামীর ইস্নুরেন্স এর টাকা ঠিক যায়গায় বিনিয়োগ করিয়ে দিয়েছে । যার টাকা দিয়ে জলির সংসার চলে । এছাড়া শ্বশুর বাড়ির গ্রামের কিছু সম্পদ পাইয়ে দিয়েছে । যা থেকেও বছরে ভালো একটা ইঙ্কাম আসে । তাই এমন ভীষণ প্রয়জনে সৎ এই লোকের যেচে এগিয়ে আসায় নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলো না জলি । সব দুঃখ বের করে দিলো মন থেকে। আগেও ফরিদ জলি কে হেল্প করেছে , কিন্তু ওইগুলি এত বড় সমস্যা ছিলো না । কিন্তু এবার ওর এক মাত্র সন্তান এর জীবন নিয়ে টানাটানি।
অনেক্ষন সান্ত্বনা দিলো ফরিদ , তারপর গিয়ে শান্ত হলো জলি । আলুথালু চুল মুখে লেপটে জাওপ্যা কাজল নিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ালো । ফর্সা মুখটা কালো কাজলে ভরে গেছে । অনেক্ষন ধোয়ার পর সেই কালি উঠলো । তারপর ছেলের কথা মনে হলো , অনেক মেরেছে তাই একটু রাগ কমেছে । এখন রাগের জায়গা নিয়েছে চিন্তা । এতবড় ছেলে মার খেয়ে আবার কিছু করে বসলো নাকি , আজকাল এসব কত হয় । এই বয়সী ছেলে মেয়ে গুলি হুট হাট কিছু করে ফেলে । প্রায় দৌরে গেলো ছেলের ঘরে , এসে দেখে ছেলেও ঘুমাচ্ছে । বুকের উপর থেকে একটা পাথর নেমে গেলো । বড় দুশ্চিন্তা আগেই দূর হয়ে গেছে । ফরিদ ভাইয়ের অনেক লিকং সেটা জলি জানে । ফরিদ ভাই কথা দিয়েছে কিছু একটা করবে । আগামিকাল আসছেন উনি দেখা করার জন্য । ফরিদ লোকটার জন্য মন শ্রদ্ধায় ভরে গেলো , লোকটা ওর জন্য কত কিছুই না করেছে । অথচ বিনিময়ে কিছুই চায়নি । আজকাল দুনিয়ায় এমন মানুষ ও আছে !!! অবাক হয় জলি ।
সাথে সাথে মনটা বিষিয়ে ও যায় , একদিকে ফরিদ ভাই অন্যদিকে ওই বদমায়েশ প্রিন্সিপ্যাল । বয়সে ওর বাবার কাছাকাছি হবে । অথচ কেমন সুযোগ বুঝে কু প্রস্তাব দিয়ে দিলো । গা রিরি করে উঠলো জলির , অস্ফুস্ত স্বরে বলল …হারামির বাচ্চা … কিন্তু জলি অবাক হয়ে লক্ষ করলো ঘেন্নার সাথে সাথে একটা অন্য অনুভুতি ও হচ্ছে ওর। লোকটার চাহুনি মনে পড়ছে বার বার । পথে ঘাটে এখানে সেখানে কত মানুষ ই তো তাকায় ওর শরীর এর দিকে । কিন্তু এমন কোনদিন হয়নি । আজ ওই লুচ্চা বুড়োর চাহুনিতে ও এমন কিছু দেখছে যা বার বার মনে ভাসছে ।
ছিঃ ছিঃ কি ভাবছিস জলি…… এই বলে নিজেকে ধিক্কার দেয় ও । তারপর ছেলের কাছে যায় আলগোছে মাথায় হাত বুলায় । সাথে সাথে মাথা গরম হয়ে ওঠে রাগে , এই রাগ গিয়ে পরে এককালের বান্ধবী মলির উপর । যদি জিসান এর কিছু হয় মলি কে ও ছারবে না এই সিদ্ধান্ত নেয় মনে মনে।
<><><>
মলি অপেক্ষার প্রহর গুনছে , বারবার ঘরের ভেতর ই হাঁটাহাঁটি করছে । সময় যত যাচ্ছে উথকন্ঠা ততই বাড়ছে। গতকাল সুহানের মায়ের সাথে কথা বলে কিছুটা আশ্বস্ত হয়েছিলো । আজ সকালেও দুবার কথা হয়েছে , সুহানের মা জানবে বলেছিলো কিন্তু বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা হচ্ছে কিছুই জানাচ্ছে না । আর গত দুই ঘণ্টা যাবত ফোন ই রিসিভ করছে না । মত্র একদিন সময় হাতে আছে , আগামিকাল প্রিন্সিপ্যাল এর সাথে দেখা করার কথা । তার উপর ছেলে ওকে সম্পূর্ণ এভয়েড করছে । প্রশ্ন করলে উত্তর দেয় না , মলি এখনো বুঝতে পারছে না এসবে ওর কি দোষ । ছেলে ওকে কোন দোষে দোষী করছে ।
একে তো ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা তার উপর , নিজে কি এমন করেছে সেটা খুঁজে না পাওয়া । এই দুই চিন্তায় মলির সাড়া শরীর বার বার ঘেমে উঠছে । গলায় একটা কান্না এসে দলা পাকছে । কারো কাছে শেয়ার ও করতে পারছে না ব্যাপারটা । মলির স্বামী একমাত্র সন্তান ছিলো । তাই শ্বশুরবাড়ি দিক থেকে কারো সাথে ঘনিষ্ঠতা নেই ওর । আর বাবার বাড়ির কারো সাথে যোগাযোগ করে লাভ নেই । ওর ভাইয়েরা একেকটা নিষ্কর্মার ঢেঁকী । আজ রাতের পর র কোন উপায় থাকবে না , এক মাত্র উপায় ওই বুড়া প্রিন্সিপ্যাল এর কাছে যাওয়া ।
তখনি মনে পরল জলির কথা , আর রাগে সমস্ত শরীর এর রক্ত এসে জমা হলো মাথায় । ওর ছেলের যদি কিছু হয় জলি কে ও কিছুতেই ছাড়বে না এই প্রতিজ্ঞা করলো মনে মনে ।
রাত বারোটার দিকে আরও একবার কল করলো সুহান এর মাকে । এবার আর কল ঢুকলই না , নিশ্চয়ই নাম্বার ব্লক করে রেখছে । মলির সমস্ত শরীর ঠাণ্ডা হয়ে এলো । এর মানে আর কোন উপায় নেই । হ্যাঁ ও চাইলে প্রিন্সিপ্যাল এর বিরুদ্ধে নালিশ করতে পারে গভর্নিং বডির কাছে । কিন্তু সেটা কতটা কাজে আসবে । প্রিন্সিপ্যাল যে ওকে কু প্রস্তাব দিয়েছে তার কোন প্রমান নেই । আছে একজন , কিন্তু তার কাছে যাওয়া যাবে না । দেখা যাবে প্রিন্সিপ্যাল এর সাথে মিলে নিজের ছেলে কে বাচিয়ে নেবে । ফাকে মাহিন এর জীবন নষ্ট হবে । এসব ভাবতে ভাবতে মলির রাগ এর পারদ বাড়তে লাগলো ধিরে ধিরে । কিন্তু রাগ দেখানোর কেউ নেই ।
<><><>
জলি সারাদিন অনেকটাই নির্ভার ছিলো । কারন গতরাত বিনিদ্র কাটার পর সকালে ফরিদ এমন এক নিউজ দিয়েছে যে মনটা আনন্দে নেচে উঠেছে। এমনকি জিসান কেও অনেকটা মাফ করে দিয়েছে । যদিও ছেলে তেমন একটা সামনে আসেনি , তবুও দুই একবার কথা হয়েছে। তবে জিসান কে আর মারামারি কারন জানার জন্য চাপ দেয় নি ।ভেবেছে আগের সমস্যা আগে সল্ভ করে তারপর ওই নিয়ে চিন্তা করা যাবে ।
ফরিদ সকালে ফোন করে বলেছে …… জলি তুমি একদম চিন্তা করো না , এক ফোনে সব কাজ হয়ে যাবে । আজ দুপুরে আসছি তুমি ভালো করে রান্না করে রাখো । ফরিদ লোকটির উপর অগাধ বিশ্বাস থাকায় , লকটিকে খুসি করার জন্য সব রকম প্রস্তুতি নিয়েছে । এত বড় একটা কাজ নিজে যেচে এসে করে দিচ্ছে এটুকু তো সে প্রাপ্য ।
সকালে নিজেই বাজারে গিয়েছে , ভালো চিংড়ি , বড় রুই , আর মাংস কিনে এনেছে । নিজেই সব রান্না করেছে , এমনিতে রান্না ঘরে তেমন যায় না জলি । এই বেপারটাও শুরু হয়েছিলো মলির সাথে রেষারেষি করে । মলি যখন প্রেগন্যান্ট হলো তখন রান্নার করার লোক রাখলো । দেখাদেখি জলি ও । জলির স্বামী বুয়ার রান্না খেতে পারত না , তবে স্ত্রী প্রেগন্যান্ট বলে মেনে নিয়েছিলো । কিন্তু বাচ্চা হওয়ার বছর খানেক পর যখন বুয়া ছাড়িয়ে দেয়ার কথা বলেছিলো । তখন জলি প্রচুর ঝগড়া করে বুয়া রেখে দিয়েছিলো । সেই থেকে রান্না ঘরে যাওয়া প্রায় হয় ই না । তবে জলির হাতের রান্না বেশ ভালো ।
সকাল থেকে কোটা বাছা করে , রন্না করতে করতে অনেকটা সময় পার হয়ে গেছে । এক পদ রান্না তো নয় , ফরিদ আবার ভর্তা খেতে পছন্দ করে তাই জলি তিন পদের সুধু ভর্তাই করেছে । রান্না শেষে গোসল করে কি ভেবে নতুন একটা সাড়ি পরেছে । আর এরি মাঝে ফরিদ এর আগমন। ৫৫ এর ফরিদ হাব ভাব চলাফেরায় একটা আভিজাত্য আছে । প্রায় ছ ফুটি দেহ , কালচে শ্যামলা গায়ের রং , কেতা দুরস্ত পোশাক, দেখেলে যে কেউ বলবে বেশ বড়সড় পজিসন এর লোক ।
দরজা খুলেই বিগলিত হাঁসি উপহার দিলো জলি , ভাইজান আসেন আসেন…… তারপর সোফায় বসিয়ে সরবত অফার করলো । স্বামীর চেয়ে বয়সে বড় হওয়ায় সব সময় ভাইজান ডাকা হয় ফরিদ কে । খুব হালকা পরিবেশে খাওয়া দাওয়া সম্পন হয় । ফরিদের কোথা শুনে তো আশ্বস্ত হয়েই ছিলো , সয়ং ফরিদ কে দেখে যেন ভয় ডর একদম চলে গিয়েছে জলির । এরি মাঝে ফরিদ জিসান এর সাথেও বেশ কয়েকবার ঠাট্টার ছলে কথা বলল । এতে জলি আরও আপ্লুত ধরেই নিলো কাজটা হয়েই গেছে ।
দুপুরের খাবার শেষে ফরিদ একটু বিশ্রাম করতে চাইলো , বিগলিত জলি একদম নিজের বেড রুমেই ফরিদ এর বিশ্রাম এর ব্যাবস্থা করলো । আর বিশ্রাম নেয়ার সময় ই কিভাবে কি হলো সব জেনে নেয়ার সিধান্ত নিলো ।
জলির বেডে সেন্ডো গেঞ্জি পরা ফরিদ বালিশে হেলন দিয়ে আধ শোয়া , আর জলি সামনে একটা চেয়ার নিয়ে বসা , অনেকটাই ঝুকে আছে ফরিদ এর দিকে । চোখে মুখে জিজ্ঞাসা এবং আনন্দ ।
ভাইজান কি করে কি করলেন? ঝলমলে চোখে প্রশ্ন করলো জলি
কি? আড়মোড়া ভাংতে ভাঙতে বলল ফরিদ
একটু অবাক জলি , তারপর বলল…… জিসান এর ব্যাপারটা ?
ওহ … এমন ভাবে বলল ফরিদ যেন কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না …… আরে ওই কলেজ এর চেয়ারম্যান এর সালা আমার খুব কাছের বন্ধু । একটা ফোন করেলেই হয়ে যাবে ।
এবার জলি একটু থমকে গেলো , এর মানে কাজ এখনো হয়নি, মুখ মলিন করে বলল …… ও ও আচ্ছা
আরে তুমি এই নিয়ে কোন চিন্তা করো না জলি , এসব ওয়ান টু এর কাজ ,
ফরিদ এর উত্তর তেমন একটা পছন্দ হলো না জলির , মনে মনে চিন্তা করলো ওয়ান টু এর কাজ ই যদি হয় তাহলে শেষ করে ফেল্লেই হয় । দুজনেই কিছুক্ষন চুপ করে রইলো । বিরতি ভঙ্গ করলো ফরিদ নিজেই
আজকাল শরীর টা ভালো যায় না জলি বুঝছ , বাড়িতে একা থাকি , হটেলে খাই । আজকে অনেক দিন পর ঘরের রান্না খেলাম ।
কথাটা শুনে জলি চকিতে একবার ফরিদ এর দিকে চাইলো , অমনি একটু গুটিয়ে গেলো । বিপদে পরে ফরিদ এর ব্যাপারে শোনা একটা কথা ভুলেই গিয়েছিলো জলি । ভাসা ভাসা কানে এসেছিলো ফরিদ এর বউ চলে গেছে । যাওয়ার কারন ফরিদ এর ক্যারেক্টার । এখন ফরিদ এর দৃষ্টি কেমন জনি লাগছে ওর কাছে । নিজের অজান্তেই বুকের কাপর ঠিক করে নিলো । এতক্ষন ফরিদ কে ওর নিজের আপন ভাইয়ের মত মনে হচ্ছিলো তাই শরীর এর দিকে নজর ছিলো না ।
বুঝলে জলি , একা থাকা বড় কষ্ট…… এই বলে বড় একটা নিঃশ্বাস ফেলল ফরিদ , তারপর আবার বলা শুরু করলো……… দুটো মনের কথা বলার মানুষ নাই , জীবনটা ফাকা ফাকা লাগে, তাইতো মানুষ এর কাজে বেগার খেঁটে বেড়াই ।
জলি কি বলবে ভেবে পেল না । চুপ চাপ বসে রইলো , মনে মনে বলতে চাইছে এসব কথা বাদ দিয়ে কাজের কথায় আসতে । কিন্তু সেটা সরাসরি বলতে পারছে না । একটা মানুষ নিজে থেকে উপকার করতে এসেছে , আগেও উপকার করেছে তাকে তো সরাসরি কিছু বলা যায় না। জলি কে চুপ দেখে ফরিদ আবার শুরু করলো …… যতই মানুষের উপকার করি বুঝেছো জলি , কেউ সেই উপকারের দাম দেয় না , এক মাত্র তোমাকে আপন মনে হয় তাই এসব তোমাকে বলছি ।
কিছু একটা বলা উচিৎ বুঝতে পারছে জলি , কিন্তু কি বলবে , ওর মাথায় এখন সুধু একটাই চিন্তা , কিভাবে জিসান এর টিসি ঠেকানো যায় , কি করে ফরিদ ভাইয়ের আলতু ফালতু কথা বন্ধ করে কাজের কথা তোলা যায় । কিন্তু ফরিদ যেন আজ থামবেই না । বলেই যেতে লাগলো……
তুমি বিরক্ত হচ্ছো নাতো জলি , আস বিছানায় এসে বসো , মনের কথা কারো সাথে বলতে না পেরে মনটা মরেই গেছে মনে হয় ।
না না কি বলছেন বিরক্ত হবো কেনো ? আপনার মত পরউপকারি মানুষ এর জন্য কিছু করতে না পারি মনের কথা গুলো তো শুনতে পারবো……, মনের বিরক্তি ভাব লুকিয়ে মুখে একটা সহানুভুতির ছাপ ফেলে বলল জলি , তবে বিছানায় গিয়ে বসার ব্যাপারটা এড়িয়ে গেলো । যেমন ক্যারেক্টার এই লোকের তার সাথে বেড রুমে বসাই এখন জলির কাছে ভুল মনে হচ্ছে তার উপর প্রায় অর্ধ উলঙ্গ লোকটার সাথে এক বিছানায় বসে গল্প করার তো প্রশ্নই আসে না ।
আহা এমন বলছো কেনো? চাইলেই তুমি আমার জন্য কত কিছু করতে পারো …… এবার জলির বুকটা কেঁপে উঠলো , ফরিদ এর মুখের কথা গুলি তেমন ভয়ংকর না হলেও বলার ভঙ্গিটা লালসায় পূর্ণ , একজন নারী হয়ে এই ভঙ্গি এবং দৃষ্টির আসল অর্থ বুঝতে সমস্যা হলো না জলির।
এই যে আজ রান্না করে খাওয়ালে এত কিছু এটাই কম কি……… এবার ফরিদ হালকা স্বরে বলল । তারপর বিছানায় একটা চাপর মেরে বলল…… আরে আসো তো এখানে এসে বসো দুজনে গল্প করি একটু মনের দুঃখ জুরাই , তুমি আমার দুঃখ বুঝতে পারবে , আমরা দুজন তো একি নৌকার যাত্রী , একাকীত্ব কি জিনিস এটা আমাদের চেয়ে আর কে ভালো জানবে ।
জলি নিজের একাকীত্বের দুঃখ বুঝলেও ফরিদ এর একাকীত্ব কতটা সত্য তাই নিয়ে ওর যথেষ্ট সন্দেহ আছে । শোনা যায় বেশ কয়েকটি মহিলার সাথে ফরিদ এর সম্পর্ক আছে , এমন কি কাজের মহিলাদের ও ছাড় দেয় না । বাছবিচার বলতে কিছু নেই ফরিদ এর এ ব্যাপারে ।
ভাইজান আপনি রেস্ট নেন আমি চা করে আনি …… কেটে পরার উপায় বার করে জলি । উঠতে যায় অমনি ফরিদ খপ করে একটা হাত ধরে ফেলে । প্রায় চিৎকার করে উঠতে যাচ্ছিলো জলি । কিন্তু পরমুহুরতে নিজেকে সামলে নেয় , মুচড়িয়ে হাত ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করে । কিন্তু সম্ভব হয় না , সাড়াশির মত কঠিন হাত । জলির ফর্সা কমল ত্বকে লালচে দাগ হয়ে যায় নিমিষে ।
কি করছেন ফরিদ ভাই ছাড়েন …… কপাল কুঁচকে বিরক্ত স্বরে বলে জলি ।
কিন্তু ফরিদ ছারার বদলে উল্টে নিজের দিকে টেনে নেয় …… নিচু স্বরে বলে , জলি তুমি বোঝ না কেনো বারবার নিজে থেকে তোমার কাছে আসি , তুমিও একা আমিও একা , আমারা দুজন দুজনের একটু খেয়াল রাখলে ক্ষতি কি । বলতে বলতে জলি কে জড়িয়ে ধরে ফরিদ ,
ছিঃ ফরিদ ভাই , আপনাকে নিজের ভাইয়ের মত মনে করতাম । আর আপনি ছিঃ ছিঃ …… শরীর মুচড়ে ফরিদ এর বাহু বন্ধন থেকে ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা করে জলি । কিন্তু ফল পায়না কোন । জরে শব্দ করতেও ভয় হচ্ছে , পাশের ঘরেই ছেলে , এসব দেখলে কি হবে কে জানে । এমনিতেই ছেলের মাথায় কি চলছে না চলচে জানা নেই । উৎকণ্ঠায় জলির ফর্সা মুখ লাল হয়ে ওঠে , ধস্তাধস্তিতে জরে জরে শ্বাস নেয়ার সময় নাকের পাটা ফুলে ফুলে ওঠে ।
ফরিদ এসব এর ভুল অর্থ বুঝে নেয় , মনে করে জলি গরম হয়ে উঠেছে , তাই জলিকে চুমু খাওয়ার চেষ্টা করে আর বলতে থাকে , আর লজ্জা করে কি লাভ , তোমার এমন শরীর এ কি পরিমান খিধে সেটা আমি বুঝতে পারছি , কেউ টের পাবে না কেউ জানবে না ,
এমন সময় ডলির মাথায় বুদ্ধি আসে ফরিদ এর ফাক করে রাখা পায়ের মাঝ বরাবর হাঁটু চালায় , অমনি ফরিদ এর মুখ দিয়ে হোৎ করে একটা শব্দ বের হয় আর ফরিদ এর বাহু বন্ধন আলগা হয়ে যায় সুযোগে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয় জলি । সাড়ি পরে থাকায় পা তেমন উপরে ওঠেনি , তাই আঘাত ও জোরদার হয় নি । তাই ফরিদ বেশ দ্রুত সামলে উঠলো , তারপর রক্ত চক্ষু তে তাকালো জলির দিকে ,
খানকি মাগি , তুই কি মনে করেছিস , মুলা ঝুলিয়ে আমার কাছ থেকে সব কাজ আদায় করে নিবি , জামাই মরল তোর টাকার বেবস্থা করে দিলাম, শ্বশুর বাড়ির সম্পদ পাইয়ে দিলাম , কি দিলি আমাকে খালি তোর খানকি পাছার ঠমাকনি দেখালি , এবার কি এমনি এমনি করে দেবো ভেবেছিস , যদি তোর ছেলের ভালো চাস তবে দরজা লাগিয়ে তোর খানকি রান দুটি ফাক কর আমার জন্য ।
জলি ভয়ে একদম কাঁদা হয়ে গেলো , গলা সুকিয়ে আসছে , ছ ফুটি দানব ফরিদ এর সামনে ও কিছুই না । এমন কি জিসান ও ফরিদ এর সামনে দুধের বাচ্চা । ফরিদ যদি এখন ওর উপর ঝাপিয়ে পরে তাহলে কি হবে । এই ভেবে থর থর করে কাঁপছে জলির পুরো শরীর । কিন্তু জলি জানে এখন ভয় পেলে চলবে না ,
আমি পুলিশে কল দেবো , পাশের ঘরেই আমার ছেলে আছে , চুপ চাপ চলে যান নইলে চিৎকার করে ছেলে কে ডাকবো । জলি যত সম্ভব নিজের গলার স্বর ঠিক রেখে বলল । এদিকে আঘাত তেমন গুরুতর না হলেও , বিশেষ স্থানে আঘাত তো , এখনো পুরপুরি ঠিক হয়ে উঠতে পারেনি ফরিদ, ব্যাথার চোটে কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম । তা ছাড়া জলি যদি সত্যি সত্যি ছেলে কে ডাক দেয় , এই ভয়ে একটু কাবু হলো সে । নরম গলায় বলল… ওকে ঠিক আছে , ঠিক আছে , আমি একটু বেশি ই করে ফেলেছি , কিন্তু এ কথা কি অস্বীকার করতে পারবে যে তোমার মনে দুঃখ নেই , শরীরে ক্ষুধা নেই । এটা একটা সুযোগ ছিলো তোমার জন্য , তা ছাড়া তোমার ছেলের ভবিষ্যৎ……
চুপ আর একটা কথাও না , বের হয়ে যান আমার বাড়ি থেকে …… জলি চাপা স্বরে গর্জে উঠলো , ফরিদ নরম হয়ে আসায় একটু শক্তি ফিরে পেয়েছে ও । তা ছাড়া ফরিদ এর সাথে কিছু করার প্রশ্নই আসে না , হ্যাঁ শরীর এর ক্ষুধা ওর আছে একটু বেশি ই আছে । কিন্তু ফরিদ এর সাথে কিছু করলে শ্বশুর বাড়িতে রটে যাবে , আর সেখানে ওর শত্রুর অভাব নেই । ছেলেও জেনে যাবে অল্পদিনের মাঝে । এত বড় রিস্ক ও নিতে পারবে না। নিতে চায় ও না ।
ফরিদ একটা নোংরা হাঁসি দেয় , তারপর ধিরে ধিরে নিজের সার্ট পড়তে থাকে । সার্ট পরার সময় বলতে থাকে …… ভালো ভাবে বললাম সুনলি না মাগি , তোর ওই খানকি শরীর আমার নিচে এনে না ফেলেছি তো আমার নাম ফরিদ না , এখনো সময় আছে , আজ রাতের মাঝে কল করে তুই আমাকে ডাকবি , না হলে এখন তোর ছেলে যেন আর কলেজে যেতে না পারে সেই ব্যবস্থা আমি করবো । কথা গুলি শেষ হতেই ফরিদ এর সার্ট পরা শেষ হয়ে গেলো , তারপর বিশ্রী কিন্তু হিংস্র একটা হাঁসি দিয়ে বেড়িয়ে গেলো ।
ধপ করে বিছানায় বসে পরল জলি , হাত পা গুলি অনিয়ন্ত্রিত ভাবে কাঁপছে । শেষে যে কথাটা বলে গেলো ফরিদ সেটা ওর কলিজা শুকিয়ে ফেলেছে । রাতে কোন খাবার খেলো না ও , বিছনায় শুয়ে ছটফট করতে লাগলো , মনে একটাই চিন্তা এখন কি হবে । ছেলের লেখা পরায় বিঘ্ন সৃষ্টি হলে কি আগের মত ভালো রেজাল্ট হবে নাকি উচ্ছনে যাবে । সারারাত ভেবে ভেবে শেষে সিদ্ধান্ত নিলো , যা হবার হবে , এক বছর গ্যেপ যাবে এতে আর এমন কি , তার জন্য কারো কাছে শরীর দেয়া যাবে না ।
বাড়িতে এসেই ফেটে পরল মলি, কষে একটা চড় বসিয়ে দিলো মাহিনের গালে , এই জন্য এত কষ্ট করে তোকে পড়াচ্ছি , মারপিট করার জন্য , হারামজাদা আজ তোকে মেরেই ফেল্বো । গুন্ডা হয়েছিস , কলেজে মারামারি করিস …… চড় খেয়ে মাহিনের চোখের উপরের ব্যান্ডেজ খুলে গেছে কিন্তু সেদিকে নজর নেই মলির । বারবার প্রিন্সিপ্যাল এর অস্লিল ইঙ্গিত মনে পরে যাচ্ছে , আর মাহিনের উপর তার ঝাল তুলছে । জীবনে এই প্রথম মাহিনকে এত মারছে ।
এদিকে মাহিন কিছুক্ষন চুপচাপ মার খেয়ে হঠাত গর্জে উঠলো …… এর জন্য তুমিও দায়ি , আমার একার দোষ নেই। ছেলের কথা শুনে স্তব্দ হয়ে গেলো মলি। বলে কি এই ছেলে , কলেজে নিজের সবচেয়ে ভালো বন্ধুর সাথে মারপিট করেছে আর বলছে এর জন্য ও দায়ি । মলির এই হঠাত থেমে যাওয়ার সুজগে মাহিন ঘর থেকে বেড়িয়ে যায় । স্তব্দ মলি ধপ করে সোফায় বসে পরে । কি বলল মাহিন, কি এমন ও করেছে যে মারামারি করতে হয়েছে ।
গভির চিন্তায় পরে যায় মলি, ঘন্তাখানেক চুপচাপ ভেবেই এর কোন কুল কিনারা পায় না । যতই ভাবে ততই অথৈ সাগরে আরও ডুবে যায় । ছেলের দিকে তো শত ভাগ নজর রেখেছে ও , কোন কিছুর কমতি হতে দেয় নি । এমন কি ছেলের কথা ভেবে নিজের জীবনের সখ আহ্লাদ ও বাদ দিয়েছে । এই ভরা যৌবনে একা একা দিন পার করছে ।
ভরা যৌবন এর কথা মনে হতেই প্রিন্সিপ্যাল এর কথা মনে পরে গেলো । লোকটা একেবারে স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়ে দিয়ে দিয়েছে সে কি চাইছে। কিন্তু এতদুর যাওয়া কি ওর পক্ষে সম্ভব? প্রশ্নটা নিজেকে করে আবার নিজেই নিজেকে ধিক্কার দিতে লাগলো । এই কথা মাথায় কেনো আসছে , অন্য উপায় নিশ্চয়ই আছে । বসে বসে ভাবতে লাগলো কি করা যায় । এমন কেউ কি নেই যে এই বজ্জাত প্রিন্সিপ্যাল কে সায়াস্তা করতে পারবে।
ভাবতে ভাবতে হঠাত মনে পরল সুহান এর মায়ের কথা । মাহিন এর সাথে এক কলেজে পরে । বেশ ভালো খাতির হয়েছে মলির সাথে , প্রায় মাঝে মাঝে ফনে কথা হয় । সুহানের বাবার তো গভর্নিং বডি তে পরিচিত লোক আছে , তাইতো এমন হাবা ছেলে কে এই কলেজে দিতে পেরেছে । তৎক্ষণাৎ নিজের মোবাইল ফোন বের করে কল করে । দুবার রিং হতেই রিসিভ করে সুহান এর মা
আল্লা ভাবি কি শুনলাম এসব…… মাহিন কে নাকি টিসি দিবে? উতকঠা যেন উপচে উপচে পরতে থাকে সুহান এর মায়ের কণ্ঠ থেকে । হ্যাঁ ভাবি এর জন্যই ফোন দিলাম , এখনো টিসি দেয়নি , তবে যে কাজ করেছে কি হবে কে জানে , একটাই ছেলে আমার…… কথাটা বলে মলির গলা ধরে আসে ।
না না ভাবি ভেঙ্গে পড়বেন না , কিছু একটা ব্যাবস্থা ঠিক হয়ে যাবে… ফাকা সান্তনা দেয় সুহানের মা । এই ফাকে মলি নিজেকে একটু শান্ত করে। নিউজ টা জানার পর এই প্রথম কারো কাছে শেয়ার করছে , তাই একটু ভেঙ্গে পরেছিলো । সত্যি সত্যি মলি ভীষণ চিন্তিত , প্রিন্সিপ্যাল এর ঘর থেকে বেরুনোর পর ছেলের উপর রাগে পুরো চিত্রটা মাথায় ঠিক খেলেনি । এখন বুঝতে পারছে কতটা অসহায় ও ।
সেই জন্যই তো আপনাকে কল করলাম ভাবি … এটা বলে একটু থাম্লো মলি তারপর বলল , ভাইয়ের তো গভর্নিং বডি তে লোক আছে , যদি কিছু করা যায়? শেষের বাক্যটি বলার সময় মলি আবারো ফুঁপিয়ে উঠলো ।
ভাবি প্লিজ কাদবেন না , আমি সুহানের আব্বু কে বলবো , আপনি কিচ্ছু চিন্তা করবেন না , সব ঠিক হয়ে যাবে ।
এর পর আরও কিছুক্ষন কথা হলো দুজনের মাঝে । মলি নিজের দুক্ষের কথা সুহানের মা কে বলে অনেকটাই শান্ত হলো । সেই সাথে আশার আলো ও দেখতে পেল । এবং মনে মনে এও ঠিক করলো , এই ঝামেলা মিটে গেলে প্রিন্সিপ্যাল কে একটা শিক্ষা দিতে হবে ।
<><><>
এদিকে জলির অবস্থা আরও খারাপ , ছেলেকে বেদম পিটুনি দিয়েছে । এতবড় ছেলেকে মেরে নিজেই হাঁপিয়ে উঠেছে । বার বার জিজ্ঞাস করেছে কেনো এসব করেছে । কিন্তু ছেলে কোন উত্তর দেয়নি , মুখ বুজে মার খেয়েছে । শেষে হাঁপিয়ে উঠে নিজের ঘরে এসে খিল দিয়েছে । নিজেকে খুব অসহায় লাগছে , কার কাছে বলবে , হেল্প করার মত ও কেউ নেই । আত্মীয় সজন ও নেই তেমন । আক বড় বোন আছে সে বিদেশ থাকে স্বামী সন্তান নিয়ে । তাছাড়া শ্বশুর বাড়ির কারো সাথেই ভালো সম্পর্ক নেই । ওরা শুনলে উল্টো মুখ টিপে হাসবে । বলবে ঐযে হয়েছে ছেলে একটা গুন্ডা । আর বার বার প্রিন্সিপ্যাল এর প্রস্তাব এর কথা মনে পড়ছে । বালিসে মুখ গুজে কাঁদতে থাকে জলি । অসহায়ত্ব আর একাকীত্ব এর কান্না ।
কাঁদতে কাঁদতে কখন ঘুমিয়ে পরেছে তার হিসাব ছিলো না । হঠাত ঘুম ভাঙ্গে মোবাইল ফোন বাজার শব্দে । ফোন রিসিভ করার কোন ইচ্ছা ছিলো না , কিন্তু নামটা দেখে রিসিভ করলো । কাপা গলায় বলল হ্যালো……
অপাশ থেকে যা শুনল তার পর আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না জলি , হু হু করে কেঁদে ফেলল । ব্যাপারটা ইতিমধ্যে জানাজানি হয়ে গেছে , ফোন করেছে ওর প্রয়াত স্বামীর এক ফুপাত ভাই । এই একজন শ্বশুর বাড়ির মানুষ এর সাথে মাঝে মাঝে যোগাযোগ হয় জলির । আসলে এই লোকটাই যোগাযোগ করে । জলি কে বেশ কিছু হেল্প ও করেছে , যেমন স্বামীর ইস্নুরেন্স এর টাকা ঠিক যায়গায় বিনিয়োগ করিয়ে দিয়েছে । যার টাকা দিয়ে জলির সংসার চলে । এছাড়া শ্বশুর বাড়ির গ্রামের কিছু সম্পদ পাইয়ে দিয়েছে । যা থেকেও বছরে ভালো একটা ইঙ্কাম আসে । তাই এমন ভীষণ প্রয়জনে সৎ এই লোকের যেচে এগিয়ে আসায় নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলো না জলি । সব দুঃখ বের করে দিলো মন থেকে। আগেও ফরিদ জলি কে হেল্প করেছে , কিন্তু ওইগুলি এত বড় সমস্যা ছিলো না । কিন্তু এবার ওর এক মাত্র সন্তান এর জীবন নিয়ে টানাটানি।
অনেক্ষন সান্ত্বনা দিলো ফরিদ , তারপর গিয়ে শান্ত হলো জলি । আলুথালু চুল মুখে লেপটে জাওপ্যা কাজল নিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ালো । ফর্সা মুখটা কালো কাজলে ভরে গেছে । অনেক্ষন ধোয়ার পর সেই কালি উঠলো । তারপর ছেলের কথা মনে হলো , অনেক মেরেছে তাই একটু রাগ কমেছে । এখন রাগের জায়গা নিয়েছে চিন্তা । এতবড় ছেলে মার খেয়ে আবার কিছু করে বসলো নাকি , আজকাল এসব কত হয় । এই বয়সী ছেলে মেয়ে গুলি হুট হাট কিছু করে ফেলে । প্রায় দৌরে গেলো ছেলের ঘরে , এসে দেখে ছেলেও ঘুমাচ্ছে । বুকের উপর থেকে একটা পাথর নেমে গেলো । বড় দুশ্চিন্তা আগেই দূর হয়ে গেছে । ফরিদ ভাইয়ের অনেক লিকং সেটা জলি জানে । ফরিদ ভাই কথা দিয়েছে কিছু একটা করবে । আগামিকাল আসছেন উনি দেখা করার জন্য । ফরিদ লোকটার জন্য মন শ্রদ্ধায় ভরে গেলো , লোকটা ওর জন্য কত কিছুই না করেছে । অথচ বিনিময়ে কিছুই চায়নি । আজকাল দুনিয়ায় এমন মানুষ ও আছে !!! অবাক হয় জলি ।
সাথে সাথে মনটা বিষিয়ে ও যায় , একদিকে ফরিদ ভাই অন্যদিকে ওই বদমায়েশ প্রিন্সিপ্যাল । বয়সে ওর বাবার কাছাকাছি হবে । অথচ কেমন সুযোগ বুঝে কু প্রস্তাব দিয়ে দিলো । গা রিরি করে উঠলো জলির , অস্ফুস্ত স্বরে বলল …হারামির বাচ্চা … কিন্তু জলি অবাক হয়ে লক্ষ করলো ঘেন্নার সাথে সাথে একটা অন্য অনুভুতি ও হচ্ছে ওর। লোকটার চাহুনি মনে পড়ছে বার বার । পথে ঘাটে এখানে সেখানে কত মানুষ ই তো তাকায় ওর শরীর এর দিকে । কিন্তু এমন কোনদিন হয়নি । আজ ওই লুচ্চা বুড়োর চাহুনিতে ও এমন কিছু দেখছে যা বার বার মনে ভাসছে ।
ছিঃ ছিঃ কি ভাবছিস জলি…… এই বলে নিজেকে ধিক্কার দেয় ও । তারপর ছেলের কাছে যায় আলগোছে মাথায় হাত বুলায় । সাথে সাথে মাথা গরম হয়ে ওঠে রাগে , এই রাগ গিয়ে পরে এককালের বান্ধবী মলির উপর । যদি জিসান এর কিছু হয় মলি কে ও ছারবে না এই সিদ্ধান্ত নেয় মনে মনে।
<><><>
মলি অপেক্ষার প্রহর গুনছে , বারবার ঘরের ভেতর ই হাঁটাহাঁটি করছে । সময় যত যাচ্ছে উথকন্ঠা ততই বাড়ছে। গতকাল সুহানের মায়ের সাথে কথা বলে কিছুটা আশ্বস্ত হয়েছিলো । আজ সকালেও দুবার কথা হয়েছে , সুহানের মা জানবে বলেছিলো কিন্তু বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা হচ্ছে কিছুই জানাচ্ছে না । আর গত দুই ঘণ্টা যাবত ফোন ই রিসিভ করছে না । মত্র একদিন সময় হাতে আছে , আগামিকাল প্রিন্সিপ্যাল এর সাথে দেখা করার কথা । তার উপর ছেলে ওকে সম্পূর্ণ এভয়েড করছে । প্রশ্ন করলে উত্তর দেয় না , মলি এখনো বুঝতে পারছে না এসবে ওর কি দোষ । ছেলে ওকে কোন দোষে দোষী করছে ।
একে তো ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা তার উপর , নিজে কি এমন করেছে সেটা খুঁজে না পাওয়া । এই দুই চিন্তায় মলির সাড়া শরীর বার বার ঘেমে উঠছে । গলায় একটা কান্না এসে দলা পাকছে । কারো কাছে শেয়ার ও করতে পারছে না ব্যাপারটা । মলির স্বামী একমাত্র সন্তান ছিলো । তাই শ্বশুরবাড়ি দিক থেকে কারো সাথে ঘনিষ্ঠতা নেই ওর । আর বাবার বাড়ির কারো সাথে যোগাযোগ করে লাভ নেই । ওর ভাইয়েরা একেকটা নিষ্কর্মার ঢেঁকী । আজ রাতের পর র কোন উপায় থাকবে না , এক মাত্র উপায় ওই বুড়া প্রিন্সিপ্যাল এর কাছে যাওয়া ।
তখনি মনে পরল জলির কথা , আর রাগে সমস্ত শরীর এর রক্ত এসে জমা হলো মাথায় । ওর ছেলের যদি কিছু হয় জলি কে ও কিছুতেই ছাড়বে না এই প্রতিজ্ঞা করলো মনে মনে ।
রাত বারোটার দিকে আরও একবার কল করলো সুহান এর মাকে । এবার আর কল ঢুকলই না , নিশ্চয়ই নাম্বার ব্লক করে রেখছে । মলির সমস্ত শরীর ঠাণ্ডা হয়ে এলো । এর মানে আর কোন উপায় নেই । হ্যাঁ ও চাইলে প্রিন্সিপ্যাল এর বিরুদ্ধে নালিশ করতে পারে গভর্নিং বডির কাছে । কিন্তু সেটা কতটা কাজে আসবে । প্রিন্সিপ্যাল যে ওকে কু প্রস্তাব দিয়েছে তার কোন প্রমান নেই । আছে একজন , কিন্তু তার কাছে যাওয়া যাবে না । দেখা যাবে প্রিন্সিপ্যাল এর সাথে মিলে নিজের ছেলে কে বাচিয়ে নেবে । ফাকে মাহিন এর জীবন নষ্ট হবে । এসব ভাবতে ভাবতে মলির রাগ এর পারদ বাড়তে লাগলো ধিরে ধিরে । কিন্তু রাগ দেখানোর কেউ নেই ।
<><><>
জলি সারাদিন অনেকটাই নির্ভার ছিলো । কারন গতরাত বিনিদ্র কাটার পর সকালে ফরিদ এমন এক নিউজ দিয়েছে যে মনটা আনন্দে নেচে উঠেছে। এমনকি জিসান কেও অনেকটা মাফ করে দিয়েছে । যদিও ছেলে তেমন একটা সামনে আসেনি , তবুও দুই একবার কথা হয়েছে। তবে জিসান কে আর মারামারি কারন জানার জন্য চাপ দেয় নি ।ভেবেছে আগের সমস্যা আগে সল্ভ করে তারপর ওই নিয়ে চিন্তা করা যাবে ।
ফরিদ সকালে ফোন করে বলেছে …… জলি তুমি একদম চিন্তা করো না , এক ফোনে সব কাজ হয়ে যাবে । আজ দুপুরে আসছি তুমি ভালো করে রান্না করে রাখো । ফরিদ লোকটির উপর অগাধ বিশ্বাস থাকায় , লকটিকে খুসি করার জন্য সব রকম প্রস্তুতি নিয়েছে । এত বড় একটা কাজ নিজে যেচে এসে করে দিচ্ছে এটুকু তো সে প্রাপ্য ।
সকালে নিজেই বাজারে গিয়েছে , ভালো চিংড়ি , বড় রুই , আর মাংস কিনে এনেছে । নিজেই সব রান্না করেছে , এমনিতে রান্না ঘরে তেমন যায় না জলি । এই বেপারটাও শুরু হয়েছিলো মলির সাথে রেষারেষি করে । মলি যখন প্রেগন্যান্ট হলো তখন রান্নার করার লোক রাখলো । দেখাদেখি জলি ও । জলির স্বামী বুয়ার রান্না খেতে পারত না , তবে স্ত্রী প্রেগন্যান্ট বলে মেনে নিয়েছিলো । কিন্তু বাচ্চা হওয়ার বছর খানেক পর যখন বুয়া ছাড়িয়ে দেয়ার কথা বলেছিলো । তখন জলি প্রচুর ঝগড়া করে বুয়া রেখে দিয়েছিলো । সেই থেকে রান্না ঘরে যাওয়া প্রায় হয় ই না । তবে জলির হাতের রান্না বেশ ভালো ।
সকাল থেকে কোটা বাছা করে , রন্না করতে করতে অনেকটা সময় পার হয়ে গেছে । এক পদ রান্না তো নয় , ফরিদ আবার ভর্তা খেতে পছন্দ করে তাই জলি তিন পদের সুধু ভর্তাই করেছে । রান্না শেষে গোসল করে কি ভেবে নতুন একটা সাড়ি পরেছে । আর এরি মাঝে ফরিদ এর আগমন। ৫৫ এর ফরিদ হাব ভাব চলাফেরায় একটা আভিজাত্য আছে । প্রায় ছ ফুটি দেহ , কালচে শ্যামলা গায়ের রং , কেতা দুরস্ত পোশাক, দেখেলে যে কেউ বলবে বেশ বড়সড় পজিসন এর লোক ।
দরজা খুলেই বিগলিত হাঁসি উপহার দিলো জলি , ভাইজান আসেন আসেন…… তারপর সোফায় বসিয়ে সরবত অফার করলো । স্বামীর চেয়ে বয়সে বড় হওয়ায় সব সময় ভাইজান ডাকা হয় ফরিদ কে । খুব হালকা পরিবেশে খাওয়া দাওয়া সম্পন হয় । ফরিদের কোথা শুনে তো আশ্বস্ত হয়েই ছিলো , সয়ং ফরিদ কে দেখে যেন ভয় ডর একদম চলে গিয়েছে জলির । এরি মাঝে ফরিদ জিসান এর সাথেও বেশ কয়েকবার ঠাট্টার ছলে কথা বলল । এতে জলি আরও আপ্লুত ধরেই নিলো কাজটা হয়েই গেছে ।
দুপুরের খাবার শেষে ফরিদ একটু বিশ্রাম করতে চাইলো , বিগলিত জলি একদম নিজের বেড রুমেই ফরিদ এর বিশ্রাম এর ব্যাবস্থা করলো । আর বিশ্রাম নেয়ার সময় ই কিভাবে কি হলো সব জেনে নেয়ার সিধান্ত নিলো ।
জলির বেডে সেন্ডো গেঞ্জি পরা ফরিদ বালিশে হেলন দিয়ে আধ শোয়া , আর জলি সামনে একটা চেয়ার নিয়ে বসা , অনেকটাই ঝুকে আছে ফরিদ এর দিকে । চোখে মুখে জিজ্ঞাসা এবং আনন্দ ।
ভাইজান কি করে কি করলেন? ঝলমলে চোখে প্রশ্ন করলো জলি
কি? আড়মোড়া ভাংতে ভাঙতে বলল ফরিদ
একটু অবাক জলি , তারপর বলল…… জিসান এর ব্যাপারটা ?
ওহ … এমন ভাবে বলল ফরিদ যেন কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না …… আরে ওই কলেজ এর চেয়ারম্যান এর সালা আমার খুব কাছের বন্ধু । একটা ফোন করেলেই হয়ে যাবে ।
এবার জলি একটু থমকে গেলো , এর মানে কাজ এখনো হয়নি, মুখ মলিন করে বলল …… ও ও আচ্ছা
আরে তুমি এই নিয়ে কোন চিন্তা করো না জলি , এসব ওয়ান টু এর কাজ ,
ফরিদ এর উত্তর তেমন একটা পছন্দ হলো না জলির , মনে মনে চিন্তা করলো ওয়ান টু এর কাজ ই যদি হয় তাহলে শেষ করে ফেল্লেই হয় । দুজনেই কিছুক্ষন চুপ করে রইলো । বিরতি ভঙ্গ করলো ফরিদ নিজেই
আজকাল শরীর টা ভালো যায় না জলি বুঝছ , বাড়িতে একা থাকি , হটেলে খাই । আজকে অনেক দিন পর ঘরের রান্না খেলাম ।
কথাটা শুনে জলি চকিতে একবার ফরিদ এর দিকে চাইলো , অমনি একটু গুটিয়ে গেলো । বিপদে পরে ফরিদ এর ব্যাপারে শোনা একটা কথা ভুলেই গিয়েছিলো জলি । ভাসা ভাসা কানে এসেছিলো ফরিদ এর বউ চলে গেছে । যাওয়ার কারন ফরিদ এর ক্যারেক্টার । এখন ফরিদ এর দৃষ্টি কেমন জনি লাগছে ওর কাছে । নিজের অজান্তেই বুকের কাপর ঠিক করে নিলো । এতক্ষন ফরিদ কে ওর নিজের আপন ভাইয়ের মত মনে হচ্ছিলো তাই শরীর এর দিকে নজর ছিলো না ।
বুঝলে জলি , একা থাকা বড় কষ্ট…… এই বলে বড় একটা নিঃশ্বাস ফেলল ফরিদ , তারপর আবার বলা শুরু করলো……… দুটো মনের কথা বলার মানুষ নাই , জীবনটা ফাকা ফাকা লাগে, তাইতো মানুষ এর কাজে বেগার খেঁটে বেড়াই ।
জলি কি বলবে ভেবে পেল না । চুপ চাপ বসে রইলো , মনে মনে বলতে চাইছে এসব কথা বাদ দিয়ে কাজের কথায় আসতে । কিন্তু সেটা সরাসরি বলতে পারছে না । একটা মানুষ নিজে থেকে উপকার করতে এসেছে , আগেও উপকার করেছে তাকে তো সরাসরি কিছু বলা যায় না। জলি কে চুপ দেখে ফরিদ আবার শুরু করলো …… যতই মানুষের উপকার করি বুঝেছো জলি , কেউ সেই উপকারের দাম দেয় না , এক মাত্র তোমাকে আপন মনে হয় তাই এসব তোমাকে বলছি ।
কিছু একটা বলা উচিৎ বুঝতে পারছে জলি , কিন্তু কি বলবে , ওর মাথায় এখন সুধু একটাই চিন্তা , কিভাবে জিসান এর টিসি ঠেকানো যায় , কি করে ফরিদ ভাইয়ের আলতু ফালতু কথা বন্ধ করে কাজের কথা তোলা যায় । কিন্তু ফরিদ যেন আজ থামবেই না । বলেই যেতে লাগলো……
তুমি বিরক্ত হচ্ছো নাতো জলি , আস বিছানায় এসে বসো , মনের কথা কারো সাথে বলতে না পেরে মনটা মরেই গেছে মনে হয় ।
না না কি বলছেন বিরক্ত হবো কেনো ? আপনার মত পরউপকারি মানুষ এর জন্য কিছু করতে না পারি মনের কথা গুলো তো শুনতে পারবো……, মনের বিরক্তি ভাব লুকিয়ে মুখে একটা সহানুভুতির ছাপ ফেলে বলল জলি , তবে বিছানায় গিয়ে বসার ব্যাপারটা এড়িয়ে গেলো । যেমন ক্যারেক্টার এই লোকের তার সাথে বেড রুমে বসাই এখন জলির কাছে ভুল মনে হচ্ছে তার উপর প্রায় অর্ধ উলঙ্গ লোকটার সাথে এক বিছানায় বসে গল্প করার তো প্রশ্নই আসে না ।
আহা এমন বলছো কেনো? চাইলেই তুমি আমার জন্য কত কিছু করতে পারো …… এবার জলির বুকটা কেঁপে উঠলো , ফরিদ এর মুখের কথা গুলি তেমন ভয়ংকর না হলেও বলার ভঙ্গিটা লালসায় পূর্ণ , একজন নারী হয়ে এই ভঙ্গি এবং দৃষ্টির আসল অর্থ বুঝতে সমস্যা হলো না জলির।
এই যে আজ রান্না করে খাওয়ালে এত কিছু এটাই কম কি……… এবার ফরিদ হালকা স্বরে বলল । তারপর বিছানায় একটা চাপর মেরে বলল…… আরে আসো তো এখানে এসে বসো দুজনে গল্প করি একটু মনের দুঃখ জুরাই , তুমি আমার দুঃখ বুঝতে পারবে , আমরা দুজন তো একি নৌকার যাত্রী , একাকীত্ব কি জিনিস এটা আমাদের চেয়ে আর কে ভালো জানবে ।
জলি নিজের একাকীত্বের দুঃখ বুঝলেও ফরিদ এর একাকীত্ব কতটা সত্য তাই নিয়ে ওর যথেষ্ট সন্দেহ আছে । শোনা যায় বেশ কয়েকটি মহিলার সাথে ফরিদ এর সম্পর্ক আছে , এমন কি কাজের মহিলাদের ও ছাড় দেয় না । বাছবিচার বলতে কিছু নেই ফরিদ এর এ ব্যাপারে ।
ভাইজান আপনি রেস্ট নেন আমি চা করে আনি …… কেটে পরার উপায় বার করে জলি । উঠতে যায় অমনি ফরিদ খপ করে একটা হাত ধরে ফেলে । প্রায় চিৎকার করে উঠতে যাচ্ছিলো জলি । কিন্তু পরমুহুরতে নিজেকে সামলে নেয় , মুচড়িয়ে হাত ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করে । কিন্তু সম্ভব হয় না , সাড়াশির মত কঠিন হাত । জলির ফর্সা কমল ত্বকে লালচে দাগ হয়ে যায় নিমিষে ।
কি করছেন ফরিদ ভাই ছাড়েন …… কপাল কুঁচকে বিরক্ত স্বরে বলে জলি ।
কিন্তু ফরিদ ছারার বদলে উল্টে নিজের দিকে টেনে নেয় …… নিচু স্বরে বলে , জলি তুমি বোঝ না কেনো বারবার নিজে থেকে তোমার কাছে আসি , তুমিও একা আমিও একা , আমারা দুজন দুজনের একটু খেয়াল রাখলে ক্ষতি কি । বলতে বলতে জলি কে জড়িয়ে ধরে ফরিদ ,
ছিঃ ফরিদ ভাই , আপনাকে নিজের ভাইয়ের মত মনে করতাম । আর আপনি ছিঃ ছিঃ …… শরীর মুচড়ে ফরিদ এর বাহু বন্ধন থেকে ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা করে জলি । কিন্তু ফল পায়না কোন । জরে শব্দ করতেও ভয় হচ্ছে , পাশের ঘরেই ছেলে , এসব দেখলে কি হবে কে জানে । এমনিতেই ছেলের মাথায় কি চলছে না চলচে জানা নেই । উৎকণ্ঠায় জলির ফর্সা মুখ লাল হয়ে ওঠে , ধস্তাধস্তিতে জরে জরে শ্বাস নেয়ার সময় নাকের পাটা ফুলে ফুলে ওঠে ।
ফরিদ এসব এর ভুল অর্থ বুঝে নেয় , মনে করে জলি গরম হয়ে উঠেছে , তাই জলিকে চুমু খাওয়ার চেষ্টা করে আর বলতে থাকে , আর লজ্জা করে কি লাভ , তোমার এমন শরীর এ কি পরিমান খিধে সেটা আমি বুঝতে পারছি , কেউ টের পাবে না কেউ জানবে না ,
এমন সময় ডলির মাথায় বুদ্ধি আসে ফরিদ এর ফাক করে রাখা পায়ের মাঝ বরাবর হাঁটু চালায় , অমনি ফরিদ এর মুখ দিয়ে হোৎ করে একটা শব্দ বের হয় আর ফরিদ এর বাহু বন্ধন আলগা হয়ে যায় সুযোগে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয় জলি । সাড়ি পরে থাকায় পা তেমন উপরে ওঠেনি , তাই আঘাত ও জোরদার হয় নি । তাই ফরিদ বেশ দ্রুত সামলে উঠলো , তারপর রক্ত চক্ষু তে তাকালো জলির দিকে ,
খানকি মাগি , তুই কি মনে করেছিস , মুলা ঝুলিয়ে আমার কাছ থেকে সব কাজ আদায় করে নিবি , জামাই মরল তোর টাকার বেবস্থা করে দিলাম, শ্বশুর বাড়ির সম্পদ পাইয়ে দিলাম , কি দিলি আমাকে খালি তোর খানকি পাছার ঠমাকনি দেখালি , এবার কি এমনি এমনি করে দেবো ভেবেছিস , যদি তোর ছেলের ভালো চাস তবে দরজা লাগিয়ে তোর খানকি রান দুটি ফাক কর আমার জন্য ।
জলি ভয়ে একদম কাঁদা হয়ে গেলো , গলা সুকিয়ে আসছে , ছ ফুটি দানব ফরিদ এর সামনে ও কিছুই না । এমন কি জিসান ও ফরিদ এর সামনে দুধের বাচ্চা । ফরিদ যদি এখন ওর উপর ঝাপিয়ে পরে তাহলে কি হবে । এই ভেবে থর থর করে কাঁপছে জলির পুরো শরীর । কিন্তু জলি জানে এখন ভয় পেলে চলবে না ,
আমি পুলিশে কল দেবো , পাশের ঘরেই আমার ছেলে আছে , চুপ চাপ চলে যান নইলে চিৎকার করে ছেলে কে ডাকবো । জলি যত সম্ভব নিজের গলার স্বর ঠিক রেখে বলল । এদিকে আঘাত তেমন গুরুতর না হলেও , বিশেষ স্থানে আঘাত তো , এখনো পুরপুরি ঠিক হয়ে উঠতে পারেনি ফরিদ, ব্যাথার চোটে কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম । তা ছাড়া জলি যদি সত্যি সত্যি ছেলে কে ডাক দেয় , এই ভয়ে একটু কাবু হলো সে । নরম গলায় বলল… ওকে ঠিক আছে , ঠিক আছে , আমি একটু বেশি ই করে ফেলেছি , কিন্তু এ কথা কি অস্বীকার করতে পারবে যে তোমার মনে দুঃখ নেই , শরীরে ক্ষুধা নেই । এটা একটা সুযোগ ছিলো তোমার জন্য , তা ছাড়া তোমার ছেলের ভবিষ্যৎ……
চুপ আর একটা কথাও না , বের হয়ে যান আমার বাড়ি থেকে …… জলি চাপা স্বরে গর্জে উঠলো , ফরিদ নরম হয়ে আসায় একটু শক্তি ফিরে পেয়েছে ও । তা ছাড়া ফরিদ এর সাথে কিছু করার প্রশ্নই আসে না , হ্যাঁ শরীর এর ক্ষুধা ওর আছে একটু বেশি ই আছে । কিন্তু ফরিদ এর সাথে কিছু করলে শ্বশুর বাড়িতে রটে যাবে , আর সেখানে ওর শত্রুর অভাব নেই । ছেলেও জেনে যাবে অল্পদিনের মাঝে । এত বড় রিস্ক ও নিতে পারবে না। নিতে চায় ও না ।
ফরিদ একটা নোংরা হাঁসি দেয় , তারপর ধিরে ধিরে নিজের সার্ট পড়তে থাকে । সার্ট পরার সময় বলতে থাকে …… ভালো ভাবে বললাম সুনলি না মাগি , তোর ওই খানকি শরীর আমার নিচে এনে না ফেলেছি তো আমার নাম ফরিদ না , এখনো সময় আছে , আজ রাতের মাঝে কল করে তুই আমাকে ডাকবি , না হলে এখন তোর ছেলে যেন আর কলেজে যেতে না পারে সেই ব্যবস্থা আমি করবো । কথা গুলি শেষ হতেই ফরিদ এর সার্ট পরা শেষ হয়ে গেলো , তারপর বিশ্রী কিন্তু হিংস্র একটা হাঁসি দিয়ে বেড়িয়ে গেলো ।
ধপ করে বিছানায় বসে পরল জলি , হাত পা গুলি অনিয়ন্ত্রিত ভাবে কাঁপছে । শেষে যে কথাটা বলে গেলো ফরিদ সেটা ওর কলিজা শুকিয়ে ফেলেছে । রাতে কোন খাবার খেলো না ও , বিছনায় শুয়ে ছটফট করতে লাগলো , মনে একটাই চিন্তা এখন কি হবে । ছেলের লেখা পরায় বিঘ্ন সৃষ্টি হলে কি আগের মত ভালো রেজাল্ট হবে নাকি উচ্ছনে যাবে । সারারাত ভেবে ভেবে শেষে সিদ্ধান্ত নিলো , যা হবার হবে , এক বছর গ্যেপ যাবে এতে আর এমন কি , তার জন্য কারো কাছে শরীর দেয়া যাবে না ।