21-05-2022, 02:37 PM
-চল আমরা যাবো।
-গু-বন কিন্তু।
-সেটা আবার কি গো।
-ওরে ওখানে পটি করে। মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো।
-এমা গো! টিনা বললো।
-তাহলে এখানে দাঁড়াও। জোরে কথা বলবেনা।
-আমি যাবো তোর সঙ্গে। দেবাশিষ বললো।
-না তুমি যাবেনা পায়ে নোংরা লেগে যাবে। অদিতি বললো।
হাসলাম।
-আয়।
-চল।
-নির্মাল্য?
-না অনিদা একবার শিক্ষা হয়েছে। আর না।
টিনা খিল খিল করে হেসে ফেললো। নীপা মুখে হাত চাপা দিলো।
-নীপা তুমি এরকম করোনা।
-বাবাঃ তুমি যা খেল দেখালে। সকালে মিত্রাদির ক্যারিকেচার দেখবে।
-মিত্রাদি কি দেখাবে আমি যা দেখাবোনা। মিলি বললো।
আমি কিছুক্ষণের মধ্যে রসের কলসি নামিয়ে নিয়ে এলাম।
দেবাশিষ এসেই বললো
-অদিতি, অনি বাঁদরের মতে তড়তড় করে গাছে উঠে গেলো।
-বাঁদর নয় হনুমান বল।
-ভাগ পাবিনা।
-উঁ।
-পটি পেয়ে যাবে।
-ওইতো জল আছে। তায় অন্ধকার কেউ দেখতে পাবে না।
-মিত্রাদি। টিনা বলে উঠলো।
আমি পেঁপের ডালগুলো একসঙ্গে করে এদিক ওদিক তাকালাম।
-কি খুঁজছিস।
-টিনা তোমার ওর্ণাটা দাওতে।
-কেনো।
-দাওনা।
টিনা ওর্ণাটা দিলো। আমি ভালো করে পেঁপের ডালের একদিকে বেঁধে কলসির মধ্যে ঢুকিয়ে দিলাম। যার যারটা নিয়ে টানতে আরম্ভ কর। বেশি দেরি করা যাবে না। লোক এসে পরলে পেঁদানি মাথায় রাখবি।
-উরি বাবারে কি ঠান্ডা। দেবাশিষ বললো।
-প্রথমটা একটু লাগবে পরে দেখবি ঠিক হয়ে যাবে।
-অনিদা দারুণ টেস্ট। টিনা বললো।
সবাই গোল হয়ে বসে টানতে আরম্ভ করলাম। কারুর মুখে কোনো কথা নেই। চোঁ চাঁ আওয়াজ।
দেবাশিষ পেঁপে নল থেক মুখ উঠিয়ে বললো। বিউটি ফুল।
-ছাগল কথা বলিসনা। কম পরে যাবে। দেখছিস টিনা মিলি কেমন টানছে। যেনো পেপসি খাচ্ছে।
হো হো করে সবাই হেসে ফেললো।
-বুবুন আর পারছিনা।
-কিরে এরি মধ্যে কেলসে গেলি।
-যদি পটি পেয়ে যায়।
-টান টান। পটি পেলে জায়গা আছে।
-তুইতো আবার নাচতে বলবি।
নীপা নল ছেড়ে হাসতে হাসতে পেছনে ধপাস করে পরলো।
-কিহলো নীপা।
-আমি আর পারবোনা অনিদা।
-কিরে হলো।
-আর একটু দাঁড়া।
-সব খাওয়া যাবেনা। একটু রাখতে হবে।
-উঃ কি টেস্ট। টিনা বললো।
মিলি গঁ গঁ করে উঠলো।
-কি হলো মিলি ।
-কথা বলোনা কম পরে যাবে।
নির্মাল্য টেনে যাচ্ছে।
-শয়তান ঢেমনা। এবার ছাড়। মিলি বললো।
-তুমি খাওনা ডিস্টার্ব করছো কেনো।
-এবার ছাড়, এবার ছাড় কলসি তুলে রেখে আসি।
ওরা উঠে দাঁড়ালো।
আমি আবার ছুট লাগালাম কলসি তুলে এসেই বললাম
-এখানে আর দাঁড়ানো যাবেনা। সময় হয়ে গেছে লোক আসার চল এখান থেকে কেটে পরি।
-কোথায় যাবি।
-কলেজে।
-তোর সেই কলেজে।
-না।
-আমাদের কলেজে। নীপা বললো।
-থাম তোর কলেজ।
-বারে আমিও ওই কলেজ থেকে এবার উচ্চ মাধ্যমিক দিলাম।
-এটা ঠিক কথা মিত্রাদি। নির্মাল্য বললো।
-ওরে! এটা আবার কবে থেকে সাহুকিরি করতে শিখলো।
আমি সামনে হেঁটে চলেছি ওরা পেছন পেছন আসছে ফিস ফিস করে কথা বলছে সবাই। আমার অনুসন্ধিৎসু চোখ চারিদিকে বন বন করে ঘুরছে। কেউ এদিকে আসছে কিনা। আমাদের কেউ দেখে ফেললো কিনা। কানে এলো….
-আমি বলবোনা, তুই বল।
-তুই বল অনিদা তোকে ভালোবাসে।
-দুর গালাগালি খাবে কে।
-চেপে থাক।
-দূর চাপা যায়। আমি আর পারছিনা।
-তুই বল। দেবার গলা।
-বুবুন?
-কি হলো।
-অতো তাড়াতাড়ি হাঁটছিস কেনো একটু দাঁড়া না।
-ধরতে পারলে পেঁদিয়ে লাশ বানিয়ে দেবে।
-খাওয়াতে গেলি কেনো।
-খেলি কেনো।
-মনে হচ্ছে কাজ করতে শুরু করেছে।
-কি!
ফিরে দাঁড়ালাম। দেখলাম সবাই হন হন করে এগিয়ে আসছে।
-তুই বিশ্বাস কর।
-বলেছিনা কু…..।
-প্লিজ তুই আর বলিসনা। সকালে খালি পেটে…..।
-চোব্য চষ্য খাবি।
-আমার একার নয়…..।
-অনিদা আমারও…মিলি আমার দিকে কাকুতি মিনতি করে তাকালো।
টিনার দিকে তাকালাম। টিনা মাথা নীচু করে নিয়ে মিটি মিটি হাসছে।
-ওরা বলতে পারছে না। আমি বলে ফেললাম।
দেবাশীষের দিকে তাকালাম।
-আমরা এই পাশে যাই, ওরা ওই পাশে যাক। এখনতো অন্ধকার। অসুবিধে কোথায়। তোর পায়নি। দেবাশিষ বললো।
-এখানে জল নেই ঘাসে মুছতে হবে। না হলে পাতায়।
-তাই করবো।
-তুই এরকম জায়গায় নিয়ে এলি কেনো।
-আর মিনিট পাঁচেক চল। একটা পুকুর আছে।
-সামন্তদের পুকুর পার। নীপা বললো।
-ওটাতো পেরিয়ে এসেছি।
-অন্ধকারে কিছুই বুঝতে পারছিনা।
-তুই কিন্তু ব্যবস্থা কর, নাহলে কেলেঙ্কারী কান্ড হয়ে যাবে।
-ঠিক আছে।
একটু এগিয়ে এসেই শবরপাড়ার গায়ে সেই পুকুর ধারে এলাম। চারিদিক শুনশান লোকজন নেই।
-নে যে যার মতো উধাও হয়ে যা।
-দেবা আমাকে সিগারেটের প্যাকেটটা দে।
দেবা একটা সিগারেট বার করে ধরিয়ে প্যাকেটটা আমাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে দে দৌড়। নিমেষের মধ্যে সকলে হাওয়া হয়ে গেলো। আমি মাঠের মাঝখানে একা বসে পরলাম।
এপাসের মাঠে ধান কাটা হয়ে গেছে ধান তোলাও হয়ে গেছে। এবার সরষে বোনা হবে। কেউ কেউ এরি মধ্যে বুনেও দিয়েছে। চাঁদের আলোটা সামান্য ফিকে হয়ে এসেছে। পূব আকাশটা ফর্সা হয়ে এসেছে। দূরে দিগন্ত রেখাটা আস্তে আস্তে চোখের সামনে স্পষ্ট হয়ে আসছে। সিগারেট ধরালাম। মৌতাত করে সিগারেট খেতে আরম্ভ করলাম। সকালবেলা সিগারেটটা খেতে বেশ ভালো লাগছে। হাল্কা হাল্কা হাওয়া বইছে। শীতটা এখনো সেই ভাবে জাঁকিয়ে বসেনি।
-অনি। চেঁচিয়ে ডাকলো দেবাশিষ।
চমকে পেছনে তাকালাম। চারিদিক থেকে অনি কথাটা রিনি রিনি করে ছড়িয়ে পরলো। দেখলাম দেবাশিষ শ্যালো টিউবওয়েলের খড়ের ছাউনি ঘরটার পাশ দিয়ে হেঁটে আসছে। আমি তাকাতেই হাত নাড়লো। এখান থেকে বুঝতে পারছি মুখে হাসি হাসি ভাব। নির্মাল্যকে দেখতে পেলাম না।
এদিকে দূরে পুকুর পারের ঝোপ থেকে একে একে সবাই লাইন দিয়ে বের হলো। ওরা সবাই কাছে এলো। নির্মাল্যকে দেখতে পেলামনা।
-অদিতি তোমার এক্সপিরিয়েন্সটা কেমন আগে বলো তারপর আমারটা শেয়ার করবো। দেবাশিষ বললো।
আমি ওদের দিকে তাকিয়ে আছি।
টিনা, মিলি, নীপা মুখ টিপে হাসছে।
-সত্যি অনিদা তোমার গ্রামে এসে মার্ভেলাস এক্সপিরিয়েন্স। অদিতি বললো।
-সাবান তো পেলে না কি করলে।
-কেনো কি সুন্দর মাটি।
-তোমদের অবস্থা দেখে আমার গোপাল ভাঁড় আর কৃষ্ণচন্দ্রের গল্পটা মনে পরে যাচ্ছে।
-প্লিজ আর বলতে হবেনা। টিনা বললো।
-সত্যি অনি গল্পটার সারার্থ আজ উপলব্ধি করলাম।
-শালা।
-ওই দূরে মোড়াম রাস্তাটা দেখতে পাচ্ছিস।
-হ্যাঁ।
-কাল ওই রাস্তায় এসেছিলাম।
-উরি শালা এতটা চলে এসেছি।
-আমরা কিন্তু ওই বনের ভেতর দিয়ে এসেছি।
-সত্যি অনি ভাবলেই অবাক লাগছে।
-নির্মাল্যটা গেলো কোথায় ?
-ও শালা এখনো বসে আছে।
-তার মানে!
-প্রথমবার বসে ছিলো। তারপর চেঁচিয়ে উঠলো, দেবাদা গো মরে গেলাম।
আমি ঝট করে উঠে দাঁড়ালাম।
-তুই বোস, কিছু হয়নি।
ওই দিকে তাকিয়ে দেখলাম নির্মাল্য হন হন করে আসছে। দেবা খিল খিল করে হাসছে।
-তুমি শালা বহুত বেইমান। নিজেরটা যেই হয়ে গেলো ফুটে এলে।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
-কেনো তোকে ছুচু করিয়ে দেবে। মিলি বললো।
নির্মাল্য মিলির কথাটা গায়েই মাখলোনা।
-কি বিশাল একটা সাপ।
মিত্রা আমার কাছে চলে এলো।
-কোথায় দেখলি।
-সবে মাত্র বসেছি। পেছন দিকে সরসর আওয়াজ। তাকিয়ে দেখি এই মোটা এই লম্বা। এঁকে বেঁকে চলে যাচ্ছে।
-কিরকম দেখতে ?
-হলুদের ওপর মেরুন কালারের ছোপ।
-ঢেমনা সাপ। ইঁদুর খেতে বেরিয়ে ছিলো।
-রাখো তোমার ঢেমনা।
-সত্যিরে লেজটা ধরে কতোবার আছাড় মেরে মেরেছি। তারপর গোড়ালি দিয়ে মুখটা থঁতলে দিয়ে মাটিতে পুঁতে দিয়েছি।
-কামড়ালে কি করতে।
-ওর বিষ নেই।
-টিনা কখন আমার হাতটা শক্ত করে ধরেছে বুঝতে পারিনি।
-তোর বুকটা এখনো ধক ধক করছে।
-করবেনা।
টিনা ফিক করে হাসলো।
-একবারে চাটবেনা টিনা দি।
মিত্রা আমার কাঁধে মাথা রেখেছে।
-তোর আবার কি হলো।
-সেদিন কাকা তোর এই কীর্তির কথা ডাক্তারদাদা মল্লিকদা দাদাকে বলছিলো, নীপাকে জিজ্ঞাসা কর।
নীপা ফিক ফিক করে হাসছে।
-সত্যি। মিত্রা বললো।
-তাতে তুই কেলসে গেলি কেনো।
-তুই এখনো এইসব করবি।
মিলি এগিয়ে এসে আমার হাতটা ধরে দেখতে লাগলো।
-হ্যাঁ রে। মিত্রা টিনা আর মিলির দিকে তাকালো। শুনে বুকটা হিম হয়ে গেছিলো। সাগরেদ কে চিকনা ভানু।
-তুই এখন ঠিক আছিসতো। নির্মাল্যের দিকে তাকিয়ে বললাম।
-হ্যাঁ।
-দেবা ওকে একটা সিগারেট দে।
-না খাবোনা।


![[+]](https://xossipy.com/themes/sharepoint/collapse_collapsed.png)