20-05-2022, 11:40 AM
বেরোবার মুখে সবাইকে বললাম কেউ জোরে কথা বলবেনা। আর কোনো প্রশ্ন করবেনা।
-সে কি করে হয় অনিদা। টিনা বললো।
-ঠিক আছে ফিস ফিস করে বলবে।
-কিরে বুবুন পেছন দিক দিয়ে কেনো। সামনের দিক দিয়ে বেরোবি না।
-অনিদা আমরা শ্মশানে যাবো! নীপা বললো।
আমি মুখে আঙুল দিয়ে বললাম, ফিস ফিস করে।
-আচ্ছা আচ্ছা।
দেখলাম মিলির চোখ দুটে উত্তেজনায় ফেটে পরছে।
বাঁশঝাড়ের ভেতর দিয়ে সরু রাস্তা ধরে আমরা হাঁটছি।
-ওরে বাবা কি সর সর করে উঠলো। মিলি আমার কাছে চলে এলো। চোখে ভয়।
হাসলাম কিছুনা।
লাইন দিয়ে আমরা হাঁটছি। ডানদিকে খাল। খাল বাঁধে বাঁশঝাড়ের ঘন বন। মাঝ খানে একফালি সরু রাস্তা। আমি সবার আগে আমার পেছনে মিত্রা, টিনা, মিলি। সবার পেছনে নির্মাল্য তার ঠিক আগে নীপা।
ছেঁড়া ছেঁড়া কথা চলছে। কোথাও মাথা নীচু করে কোথাও ঝুঁকে পরে আমার খালের ধার বরাবর চলে এলাম খাঁড়ে গড়ার বিলে।
-এইটা কিসের মাঠ রে অনি।
-এটা খাস জমি গরু চরে দিনের বেলা। এক কথায় বলতে পারিস ভাগার। মিলি আমার হাতটা ধরলো মিত্রাও আমার হাত ধরে আছে। আর এক পাশের হাত ধরেছে টিনা।
আমি ওদের দিকে তাকালাম। জ্যোৎস্নাভেঁজা ওদের চোখে বিস্ময়।
-দেখ দেবা আমি কি ভাগ্যবান। আমার তিনটে বউ। তোর একটা।
-যাও তোমার হাত ধরবোনা। টিনা হাত ছেড়ে দিলো।
-টিনা এখানে কিন্তু ভূতের উপদ্রব আছে।
তিনজনেই আমাকে জাপ্টে ধরলো। দেবা, অদিতিও ছুটে এলো আমার কাছে। নীপা, নির্মাল্য আর জায়গা পাচ্ছে না।
-সত্যি তোদের ভূতে এতো ভয়।
-তুই শালা এই জায়গায় নিয়ে এলি কেনো।
-একবার আকাশটার দিকে তাকা।
সবাই আকাশের দিকে তাকলো।
-সত্যি তো অনিদা এতো সুন্দর চাঁদের আলো। কতো তারা দেখ টিনা। পটা পট মিলি, টিনা, মিত্রা মোবাইলের ক্যামেরা ফিট করলো।
-তোরা একটু ছবি টবি তোল আমি একটু আসছি।
-না তুই যাবিনা। মিত্রা বললো।
-আচ্ছা তুমি কি একটু অনিদাকে টয়লেটেও যেতে দেবেনা। টিনা বললো।
-ও টয়লেটে যাচ্ছেনা, মাথায় কিছু দুর্বুদ্ধি আছে, তুই জানিসনা।
মিলি টিনা হো হো করে হেসে ফেললো।
-আচ্ছা পাঁচ মিনিট। দুটো ধেড়ে ছেলে আছে তোর ভয় কি।
-ওগুলো এখানে মেয়ে।
মিলি, টিনা হো হো করে হেসে ফেললো।
-মিত্রাদি। অদিতি চেঁচিয়ে উঠলো।
-চেঁচাসনা। একটু পরে ঠেলা বুঝবি।
-তাহলে এলি কেনো। নীপাতো আছে।
-ও আর একজন, দেখলিনা কেমন ছুটে চলে এলো।
-ঠিক বলেছে মিত্রা। দেবা বললো।
-ঠিক আছে। আমি যাবো আসবো।
মিত্রার হাতটা ছাড়িয়ে আমি হাঁটতে হাঁটতে সামনের বনের মধ্যে ঢুকে গেলাম। দূর থেকে পেঁপে গাছটাকে লক্ষ্য করেছিলাম। গুনে গুনে আটটা পেঁপে পাতা ভাঙলাম। ভালো করে পরিষ্কার করে নিলাম। ঝোপের ফাঁক দিয়ে দেখলাম সবাই গোল হয়ে খুব ক্লোজে দাঁড়িয়ে ঝোপের দিকে তাকিয়ে। আমি ওখান থেকে শেয়ালের ডাক ডাকলাম। দু’চারবার ডাকার পরই দেখলাম, ওরা আমার নাম ধরে চেঁচাতে শুরু করে দিয়েছে তারস্বরে। হিতে বিপরীত। আমি দৌড়তে দৌড়তে কাছে এলাম। মিত্রা শক্ত কাঠের মতো দাঁড়িয়ে আছে। দু’দিকে টিনা মিলি।
আসতেই আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
-ওই দেখ শেয়াল।
-কোথায় শেয়াল! শেয়ালতো তুই দেখেছিস আগে।
-তুই বাড়ি চল। আমার ঘোরার দরকার নেই। দেবাশিষ বললো।
-আমি এতদিন এখানে থাকলাম কানারাতে কোনোদিন বেরোইনি। আমারও কেমন ভয় ভয় করছে মিত্রাদি। নিপা বললো।
-দেখলি কেমন সাহস।
-অনিদা তোমার হাতে ওটা কিগো। মিলি বললো।
-তুই আবার খেজুর রস চুরি করবি। মিত্রা বললো।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
-দেখি দেখি মালটা। দেবাশিষ এগিয়ে এলো।
-শালা এই জন্য তুই ওই ঝোপে গেছিলি। মিত্রা ঠিক কথা বলেছে।
অদিতি হাসছে খিল খিল করে।
-কিরে খাবিতো। মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম।
-জলের ব্যবস্থা রাখিস যদি পটি পেয়ে যায়।
-উঃ মিত্রাদি তুমি না কেমন।
-ওর সঙ্গে এইভাবে কথা না বললে বিপদ আছে, দেখবি দাঁড়ানা।
-চল খালটা পেরোতে হবে।
-আবার সেই পচা পাতা, কাদা জল। কিরে নীপা।
-ওটাতো ওইদিকে। আমরা অন্য রাস্তায় এসেছি।
-সেই জায়গা মিত্রাদি। মিলি বললো।
-উঃ দাঁড়াও না তোমরা।
-নীপা কোথা দিয়ে আমরা পেরোবো গো। টিনা বললো।
-সত্যি বলবো টিনাদি আমি এই রাস্তা দিয়ে কোনোদিন আসিনি। এই রাস্তায় মানুষ বিশেষ চলাফেরা করেনা।
-কেনো!
-ওই যে অনিদা বললো, ভাগাড়। এই রাস্তায় লোক গরু, মরা ফেলতে আসে।
-ওরে বাবারে অনি এ তুই কি করলি বেঘোরে প্রাণ যাবে। দেবাশিষ বললো।
-গ্রাম দেখতে বেরিয়েছিস। গল্প উপন্যাস পড়ে লোকের কাছে গল্প ঝাড়িস, এইবার ডাইরেক্ট দেখ।
-তাবলে তুই ভাগাড়ে নিয়ে যাবি।
-যেতে হয় চল নাহলে তোরা নীপার সঙ্গে চলে যা।
-আমি তোমার সঙ্গে যাবো অনিদা চলো। নির্মাল্য এগিয়ে এলো।
-কে রে আমার সাহসী পুরুষ। মুতে নাম লিখতে জান কেলিয়ে গেছিলো। মিলি টোন কাটলো।
-মিলিদি খুব খারাপ হয়ে যাবে। আমি এবার শুরু করবো।
-তুই কি বলবি, চুমুর কথা। মিত্রাদি সবাইকে বলে দিয়েছে।
আমি হো হো করে হেসে ফেললাম।
-ওরে মিলি তুই থাম। মিত্রা বললো।
সবাই হাসছে।
আমি হাঁটতে আরম্ভ করলাম। ওরা আমার পেছন পেছন। আমরা খালের ধারে এলাম।
-দেখ এইখান দিয়ে পেরিয়ে যাবো।
-জল আছে।
-না।
-তুইকি ভালো রে। মিত্রা আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
-ধ্যাত বাচ্চা বাচ্চা মেয়েগুলো আছে। আমি বললাম।
-ওরে ওরা বাচ্চা নয়, চৌবাচ্চা।
দেবা হো হো করে হেসে ফেললো।
-অনি সিগারেট খাবি।
-এখন খাসনা। মজা পাবিনা।
আমরা ধীরে ধীরে নদীর ধারে এলাম।
-বুবুন আমি তেকে ধরে নামবো।
-অনিদা আমিও। মিলি বললো।
-আমিই বা বাদ যাই কেনো। টিনা বললো।
-তোমাদের আগে আমি নেমে যাচ্ছি। ড্যাম স্মার্টের মতো নির্মাল্য বললো।
আমি বারণ করলাম
-দাঁড়া তাড়াহুড়ো করিসনা।
-কেনো।
-নির্মাল্য দা শুকনো মাটি, রাত ভোর কুয়াশা পরে স্যঁতসেঁতে পা হড়কাবে। নীপা বললো।
-হুঁ। নির্মাল্য এগিয়ে গেলো।
-সত্যি সত্যি একটু নামতেই ব্যালেন্স রাখতে পারলোনা। কাঁকড় মাটিতে পা হড়কালো গড়িয়ে একেবারে নিচে।
মিলি চেঁচিয়ে উঠলো কিরে পাঁঠা এবার সাধ মিটিছে।
আমি দৌড়তে দৌড়তে নীচে নেমে গেলাম। দেখলাম নির্মাল্যের হাত ছড়ে গেছে। পরে গিয়ে কাতরাচ্ছে।
-কেনো তুই তাড়াহুড়ো করলি। আমি বারণ করলাম।
-বুঝতে পারিনি অনিদা।
-কোথায় লেগেছে।
-পাছায়।
-কোমরে লাগেনি তো।
-না।
-দাঁড়া।
ওপরে তাকিয়ে দেখলাম নীপা, অদিতি, দেবাশিষকে ধরে ধরে নামাচ্ছে। ওরা তিনজন দাঁড়িয়ে আছে।
-দাঁড়া আমি আসছি।
নদীর জল এখন শুকনো। এখানে ওখানে সামান্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। আমি রুমাল ভিঁজিয়ে এনে ওর কনুই মুছিয়ে দিলাম। নির্মাল্য পাজামা পাঞ্জাবী পরেছে। হাঁটুর কাছে কাদা লেগে গেছে। আমি নদীর এপারে এসে ককসীমা পাতা খুঁজে বার করলাম। আবার নামলাম। দাঁত দিয়ে চিবিয়ে তার রসটা লাগিয়ে দিলাম নির্মাল্যের কনুইতে।
-কি জ্বালা করছে গো অনিদা।
-এটা ডেটলের বাবা। একটু পরেই দেখবি ব্যাথা কমে যাবে।
এ-টা কি পাতাগো অনিদা। নীপা বললো।
-ককসীমা।
-নামই শুনিনি।
-তুমিতো শহরের মেয়ে।
-টিজ করবেনা বলে দিচ্ছি।
-দেখছো অদিতি ওইটুকু ছোট্ট শরীরে কি রাগ।
অদিতি দেবা হাসছে।
-তুই ওপরে যা তুই না গেলে ওরা নামবেনা।
-তোরা নদীটা পেরিয়ে যা। নীপা নিয়ে যাও ওদের, আমি ওগুলোকে নামাই। বালি দেখে দেখে নিয়ে যেও।
আমি আবার তড় তড় করে ওপরে উঠো এলাম।
-জুতো খোল।
-খালি পায়ে নামবো। পায়ে যদি লাগে। মিত্রা বললো।
-নির্মাল্যের মতো হড়কাবি।
-এই রাস্তা ছাড়া তোর সর্টকাট রাস্তা নেই।
-আছে। সেই রাস্তা এলে লোকে জেগে যাবে তোদের কথায়। তারপর চোর চোর করে চেঁচিয়ে উঠে রাম পেঁদান পেঁদাবে।
-পেঁদানি খেতাম।
টিনা মিলি হাসছে।
অগত্যা তিনজনে জুতো খুললো।
-টিনাকে বললাম তুমি ডান হাতটা ধরে আগে নামো মিত্রা আমার বাম হাত ধরলো মিলি মিত্রার হাত ধরলো। ধীরে ধীরে পা টিপে টিপে নামালাম। এর মাঝে মিলি একবার হড়কেছিলো। দু’জনে মিলে আমাকে জাপ্টে ধরলো।
-সত্যি অনিদা মিত্রাদি ঠিক বলেছে তুমি আর জায়গা পেলেনা।
-কষ্ট করলে কেষ্ট মেলে।
-আমার কেষ্টর দরকার নেই, তোমাকে পেয়েছি এই যথেষ্ট।
মিত্রা ফিক করে হেসে ফেললো।
-এবার অনিদা জিনিষটা কি বুঝতে পারছিস।
-হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।
আমরা নদী পেরিয়ে আবার বাঁশ বাগানের মধ্যে দিয়ে হারু জানার কালায় এলাম।
-এই পচা পুকুরের ধারে কি করতে এলি। দেবাশিষ বললো।
-এটা হারুজানার কালা।
-তোর সেই বার।
-হ্যাঁ।
নীপা এগিয়ে এলো। সত্যি মিত্রাদি পাঁচ বছর হয়ে গেলো এখানে আছি, নাম শুনেছি কোনোদিন আসিনি।
-হ্যাঁ রে এখন পাওয়া যায়।
-বিকেলের দিকে এলে পাওয়া যায়।
-জায়গাটা কি নিঃঝুম। আশেপাশে কোনো লোক নেই।
-হাফ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো বসতি নেই।
-বলিস কি!
নির্মাল্য বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলো।
-কি শুঁকছিস।
-তোমার কথাটা মনে করে গন্ধ পাওয়ার চেষ্টা করছি।
-শালা হারামী। দেবাশিষ বললো।
-তোরা দাঁড়া আমি আসছি।
-আবার কোথায় যাবি।
-ওই যে গাছটা দেখা যাচ্ছে, দেখতে পাচ্ছিস।
-হ্যাঁ। ওটা থেকে নামাবি।
আমি মিত্রার দিকে তকিয়ে হেসে ফেললাম।


![[+]](https://xossipy.com/themes/sharepoint/collapse_collapsed.png)