19-05-2022, 07:40 AM
-কিরে উঠবিনা।
-তুই না বললে উঠি কি করে।
মিত্রা ফিক করে হাসলো।
-খালি ঠুকে ঠুকে কথা বলা না।
-কোথায় ঠুকলাম। দাঁড়া ঠুকে দিচ্ছি। দিলাম দুবার কোমর নাচিয়ে।
-উঃ।
-কি হলো! লাগলো।
মিত্রা চোখ বন্ধ করে। মুখে যন্ত্রনার ছাপ। ভয় পেয়ে গেলাম। তাড়াতাড়ি ওর শরীর থেকে উঠতে গেলাম। মিত্রা আমাকে জাপ্টে ধরে ফিক করে হেসে ফেললো।
-কিরে!
-তোকে কিরকম ভয় পাইয়ে দিলাম বলতো।
-তার মানে।
-তুইও তাহলে মিত্রাকে ভয় পাস।
দিলাম ঠোঁটটা কামড়ে
আবার মিত্রা উঃ করে উঠলো।
আমি তাকিয়ে তাকিয়ে মিট মিটি হাসছি।
-এবার কিন্তু আমার লেগেছে।
-লাগুক।
-আমিও কামড়ে দেবো।
-দে না।
মিত্রা মাথাটা তুলে কামড়াতে গেলো আমি ওকে জাপ্টে ধরে বিছানায় শুইয়ে দিলাম।
-উঃ তোর গায়ে অসুরের মতো শক্তি।
-সেদিন তোর বরকে এই অসুরের শক্তি দিয়ে মেরেছি।
মিত্রা চুপ করে গেলো। আমার দিকে ফ্যল ফ্যাল করে তাকিয়ে। মনে পরে গেলো ওর কথাটা।
-সরি।
আমার মুখে হাত বোলালো।
-সেদিন তোর লাগেনিতো।
-পা টা একটু ব্যথা ব্যথা করছিলো। রাতে তোর সঙ্গে কথা বলার পর, একটু মুভ লাগিয়েছিলাম।
-জানিস বুবুন তখন আমার ভীষণ আনন্দ হচ্ছিলো। তুই বিশ্বাস করতে পারবিনা।
মিত্রার চোখদুটো চিক চিক করে উঠলো।
-এখন আমার কোনো টেনসন নেই।
আমি মিত্রার কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালাম। মিত্রা চোখ বন্ধ করলো।
-বড়মারা খুব ভয় পেয়ে গেছিলো না।
-ভয় না। একটা টেনসন। তারপর দাদা মল্লিকদার সঙ্গে কথা বলে ফুর ফুরে হয়ে গেলো।
-তুই কি দেবাশিষদের সব বলেছিস?
-প্রায়।
-কেনো বলতে গেলি।
-তখন চিকনা যা করলো।
-সত্যি ব্যাটা একটা ঘাউড়া।
-নারে তোকে অন্ধের মতো ভালোবাসে। আমার থেকেও।
-যাঃ।
-একদিন আমি একটু তোর নামে বেফাঁস কথা বলে ফেলেছিলাম। ইয়ার্কির ছলে। ওমনি আমাকে বললো, ম্যাডাম আপনার জায়গায় অন্য কেউ হলে এখুনি খালের জলে ভাসিয়ে দিতাম। আমি ওর কথা শুনে হাসবো না কাঁদবো।
মিত্রার চোখ হাসি হাসি।
-ওর সামনে তোর সম্বন্ধে কোনো কথা বলা যাবেনা। তারপর অবশ্য অনাদি মনে হয় ওকে বুঝিয়েছে। রাতে এসে আমার পা ধরে সে কি কান্না। ম্যাডাম তুমি অনিকে কিছু বলবেনা। বড়মা ছোটমা ওর কান্না থামাতে পারেনা। শেষে ইসলাম ভাই ওকে বাইরে নিয়ে গিয়ে বোঝায়।
-বুঝলি ও হচ্ছে মাস্টার ডগ। মাস্টার ছাড়া কাউকে পাত্তা দেয়না।
-আজও তাই দেখ তোকে জড়িয়ে ধরে কি না করলো। তারপর বাসুর বাড়িতে গিয়ে দেবাশিষের পা ধরে কি কান্না আমাকে ক্ষমা করুন। আমি অন্যায় করেছি। দেবাশিষ প্রথমে বুঝতে পারেনি ব্যাপারটা। ওরা সবাই অস্বস্তিতে পরে গেছিলো। তারপর আমি বললাম ঠিক আছে তুমি অনির জন্য পাটালি আর ছোলা সেদ্ধ নিয়ে যাও। মুহূর্তের মধ্যে চিকনা চেঞ্জ। নাচতে নাচতে বেরিয়ে গেলো।
-তারপর দেবাশিষ তোকে চেপে ধরলো।
-দেবাশিষ নয় টিনা। আমি ওদের বললাম কাল এই ঘটনা ঘটেছিলো। শুনে দেবাশিষ খেপে লাল। অনি শালা ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির।
আমি হাসলাম।
-টিনাও তোকে ভীষণ ভালোবাসে।
-কি করে বুঝলি।
-ওর চোখ সেই কথা বলে।
-হ্যাঁ, টিনার একটা গল্প আছে। সেটা আমি উদ্ধার করলাম দেবাশিষের কাছ থেকে। মাস পাঁচেক আগে। তোকে একদিন সময় করে বলবো।
-এখন বল।
-কটা বাজে।
আমি মিত্রার শরীর থেকে বিছানায় এলাম। মিত্রা আমার বুকে উঠে এলো। ঠ্যাং তুলে দিলো আমার ওপর। আমি যেনো ওর পাশ বালিশ।
-কিরে তিনটে দশ। ঘুমের পুঁটকি সারা।
-আর ঘুমুতে হবেনা।
জানলার দিকে চোখ চলে গেলো।
-বাইরেটা দেখ কেমন সুন্দর চাঁদের আলো।
মিত্রা চোখ ফেরালো।
-বুবুন।
-উঁ।
-থাক পরে বলবো।
-কেনো!
-ওটা মেয়েদের মনের কথা। তোকে এখন শুনতে হবেনা।
-ঠিক আছে পরে মনে থাকলে বলিস। তুইতো আবার ভুলে যাস।
-ওমনি ঠুকে দিলি।
-ঠুকলাম কোথায় তোর মুনুতে হাত দিয়ে শুয়ে আছি।
-মিত্রা আরও সরে এলো। আমি আর ওবাড়িতে যাবোনা।
-সে কি করে হয়।
-তাহলে তোকে যেতে হবে।
-ভাগাভাগি করে থাকতে হবে। বড়মা ছোটমাকে দেখেছিসতো।
-সব বুঝি তবু নিজের মনকে বোঝাতে পারিনা।
-ঠিক আছে এবার একটু ঘুমো।
-ঘুম আসছেনা। খালি তোকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে।
-শরীরটার দিকে নজর দে।
-আমার কি হয়েছে বলতো? ডাক্তারদাদা খালি আমার মুখ দেখে আর বলে এইবার ফ্রেশ ফ্রেশ লাগছে।
-অনেক অত্যাচার করেছিস। কিছু একটা বাধিয়েছিস।
-আমি যদি তোর আগে মরে যাই তুই আমার মুখে আগুন দিস।
-এই যে বললি বাধিয়েছিস। তাহলে আমি দেবো কেনো।
-আমি সাসপেক্ট করছি।
-ঠিক আছে তুই বক বক কর আমি একটু ঘুমোই।
-না তুই ঘুমুবিনা।
-অনি এই অনি। দরজার সেকল ধরে নাড়ার শব্দ। দেবাশিষের গলা।
মিত্রার দিকে তাকালাম। মিত্রা ফিক ফিক করে হাসছে। ব্যাপারটা এরকম কেমন মজা দেখ।
-চোখ দুটো ভালো করে ডলে নে।
-কেনো!
-ঘুমোচ্ছিলি সেটা বোঝাতে হবেতো।
-দিলো আমার ঠোঁটে একটা ঘুঁসি। শয়তান।
-কাপড়টা পর নাহলে আমি দরজা খুললে তোকে দেখে ওর আবার দাঁড়িয়ে যাবে।
-শয়তান....
আমি উঠে পাজামা পাঞ্জাবীটা পরলাম। মিত্রা কাপড়টা আটপৌরে করে কোনো প্রকারে শরীরে জড়িয়ে নিলো। আমি লাইট জ্বাললাম। দরজা খুললাম। একটা হাই তুললাম। দেখলাম নীপা শুয়ে আছে। দেবা আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘরের মধ্যে ঢুকলো।
-কিরে কি হলো!
-তুই আমাকে নতুন জীবন দিলি।
আমি ওর দিকে অবাক হয়ে তাকালাম। মিত্রাও অবাক হয়ে গেছে। দেবার চোখদুটো জলে ভেঁজা।
-আজকে আমি প্রথম অদিতিকে স্যাটিসফায়েড করতে পারলাম।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম। মিত্রা আমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো।
-হ্যাঁ রে মিত্রা বিশ্বাস কর। আজ দু বছর বিয়ে হয়েছে আমাদের। স্বামী-স্ত্রী কি জানতাম না। আজ কলকাতা থেকে আসার সময় অনি একটা কথা বলেছিলো। খুব স্ট্রাইক করেছিলো মনে। আমি নিজেকে ভেঙে ফেললাম আজকে। আবিষ্কার করলাম আমি একজন সুস্থ্য স্বামী হবার অধিকারী।
দেবাশিষ মাথা নীচু করে আছে। ঘরের ধরজা ভেজানো। আমি দেবাশিষের কাঁধটা ঝাঁকিয়ে বললাম
-সবাইকে আস্তে আস্তে ডাক এই সময় বেরোতে না পারলে আর মজা করা যাবেনা।
-সত্যি নিয়ে যাবি।
-হ্যাঁ।
দেবাশিষ বেরিয়ে গেলো। আমি পেছন থেকে বললাম
-দশ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে নিবি।
-আচ্ছা।
ঘরের দরজা ভেজালাম। মিত্রা আমার কাছে এগিয়ে এলো। আমাকে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রাখলো।
-তুই সবাইকে বদলে দিলি আমাকে দিলিনা।
আমি আমার বুক থেকে মিত্রার মুখটা তুলে ধরলাম। কপালে চুমু খেয়ে বললাম
-কেনো তোকে আশ্রয় দিয়েছি। তুইতো এটা চেয়েছিলি।
মিত্রার চোখ দুটো ছল ছল করে উঠলো।
আমরা সবাই বেরিয়ে এলাম খিড়কি দরজা দিয়ে।