Thread Rating:
  • 63 Vote(s) - 2.92 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়)
বাড়ি থেকে মিনিট পাঁচেক দূরত্বে চলে এসেছি। খামারে আস্তে দেখলাম। সবাই বারান্দায় বসে গল্প করছে। যেমন দেখে গিয়েছিলাম সেইরকম। আমি কাকার বাড়িতে না ঢুকে নিজের বাড়িতে চলে এলাম। বাইরের দরজায় শেকল তোলা। তারমানে এই বাড়িতে কেউ নেই। নিচের ঘরগুলোয় দেখলাম লাইট জ্বলছে। আমি সিঁড়ি দিয়ে সোজা ওপরে উঠে চলে এলাম। ঘরের দরজা ভেজানো। আমি ঠেলে ভেতরে ঢুকলাম। আজ ঘরটা অনেক বেশি ডেকোরেটেড। বিছানায় একটা নতুন চাদর পাতা হয়েছে।

আমি বিছানায় একটু বসলাম। ঘুটিগুলো আবার ঠিকঠাক ভাবে সাজাতে হবে। হাতে মাত্র চারদিন সময়। চুপচাপ বসে ভাবছিলাম। হঠাৎ নিচের দরজাটা খোলার শব্দ পেলাম। একটা হৈ হৈ শব্দ। বুঝলাম মিত্রারা সবাই ঢুকলো। উঠে দাঁড়িয়ে পরলাম। আলনার কাছে গিয়ে পাজামা পাঞ্জাবী আর টাওয়েলটা বার করে কাঁধে নিলাম। মিটসেফের কাছে গিয়ে পকেট থেকে মানি পার্টস, কাগজগুলো বার করে রাখলাম।
-কিরে তুই এখানে। তোকে কখন থেকে খুঁজছি।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম। মুখটা চকচক করছে। একদৃষ্টে ওর দিকে তাকলাম। ওর চোখটা ভালো করে লক্ষ্য করলাম। সবাই ওর পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে।
-কি দেখছিস?
-সকাল থেকে তোমায় দেখেনি তাই দেখছে। মিলি বললো।
-ধ্যাত।
-বলনা এতোক্ষণ কোথায় ছিলি। মিত্রা কল কল করে উঠলো।
-কেনো এই বাড়িতে বসে ছিলাম।
-হতেই পারে না।
-বিশ্বাস কর।
-ইসলাম ভাই বললো তুই বাথরুমে গেছিস।
হাসলাম।
-টিনা দেখ, কিরকম মিচকে পোড়া হাসি। অদিতি বললো।
-দাঁড়িয়ে রইলে কেনো, ভেতরে এসো।
-ওরা ভেতরে এলো।
-অনিদা। টিনা বললো।
আমি টিনার দিকে তাকালাম।
-তুমি এটা ঠিক করলেনা।
-কি বলোতো!
-সবাইকে আমাদের কথা…..।
-তোমরা হয়তো বিশ্বাস করবেনা আমি বলিনি।
-তুই এভাবে বলিসনা। তোর গুণকীর্তন করতে গিয়ে বলে ফেলেছি। মিত্রা হাসতে হাসতে বললো।
-শুনলে টিনা।
টিনা হাসছে।
-তোর মুডটা অফ মনে হচ্ছে। দেবাশিষ বললো।
-না রে সকাল থেকে স্নান করিনি। ভাবছি এখন স্নান করবো কিনা।
-এই ঠান্ডায়।
-হ্যাঁ।
-তোমার ঠান্ডা কম লাগে!
-দেবা, তোরা একটু বোস আমি ঝট করে সেরে আসি।
-সত্যি তুই স্নান করবি।
-হ্যাঁরে নাহলে একটা অস্বস্তি হচ্ছে।
আমি পাজামা, পাঞ্জাবী, সাবান আর টাওয়েলটা নিয়ে বেরিয়ে এলাম। বাড়ির খিড়কি দরজা দিয়ে পুকুর ঘাটে এলাম। বেশ ঠান্ডা লাগছে। না স্নান করবো না। মাথাটা ধুয়ে টাওয়েল দিয়ে গা-হাত-পা মুছে নিই। যেমন ভাবা তেমন কাজ। খুব তাড়াতাড়ি কাজ সেরে ঘরে ফিরে এলাম।
-কিরে সত্যি তুই স্নান করলি।
-না। মাথা ধুলাম।
-বড়মা ডাকতে এসেছিলো খেতে যেতে বলেছে।
-নির্মাল্যকে দেখছিনা।
-এদিক সেদিক কোথাও ঘুরছে। দেবাশিষ বললো।
-তোরা কোথায় কোথায় ঘুরলি।
-ঘুরলাম কোথায়! নারকেল কোড়া দিয়ে মুড়ি মাখা খেলাম আর চা। চুটিয়ে আড্ডা। দেবাশিষ বললো।
টিনার দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে ফেললাম।
-একবারে হাসবেনা। আমাদের ছেড়ে দিয়ে নিজে বেশ ফুর্তি করে এলে।
-কেনো মিত্রাদি ছিলোনা।
-আমি না বলেছি।
-ঠিক আছে কালকে সারাদিন সময় দেবো।
-ঘেঁচু। মিত্রাদির মুখ থেকে তোমার সব প্রোগ্রাম জানা হয়ে গেছে।
-কিরে পেট পাতলা রুগী।
-দেবোনা পেটের মধ্যে একটা গুঁতো। মিত্রা তেড়ে এলো।
আমি ওর হাতদুটো ধরে ফেললাম।
-বলনা তোর মুখটা অমন শুকনো শুকনো লাগছে কেনো।
-সারাদিন কি ভাবে কাটলো বলতো।
-কই, দেবাদের মুখটা ওরকম লাগছেনা।
-দেবা আমার থেকে দেখতে সুন্দর।
-শালা হারামী। দেবাশিষ উঠে এলো।
-অদিতি তোমার বরের হাত থেকে বাঁচাও।
-ওসব তোমাদের ব্যাপার আমরা দর্শক।
-বলনা, সত্যি তোকে বেশ ফিউজ লাগছে। দেবা বললো।
-বিশ্বাস কর কিছু হয়নি।
-কাল সকালে নিয়ে যাবি। আমি ওদের বলেছি, ওরা রাজি।
-নিশ্চই ওই গল্পগুলো ঝেরেছিস। টিনার দিকে তাকালাম।
টিনা ফিক করে হেসে মাথা নীচু করলো।
মিলি এগিয়ে এলো।
-মিত্রাদি তুমি পেছন থেকে ধরো আমি সামনে থেকে গুঁতো মারি যদি মুখ থেকে কিছু বেরোয়।
-তাহলে কাল যাওয়া বন্ধ।
-মিলি ছেড়েদে ছেড়েদে। কাল যাবে বলেছে।
-ওমা তোমরা কি করছো। অনিদাকে মারছো। নীপা বড় বড় চোখ করে ঘরে ঢুকলো।
-তুমি কোথায় ছিলেগো অনিদা। কেউ তোমাকে খুঁজে পায়না।
-আমি তো এদের হাতে মার খাচ্ছি।
-চলো চলো খাবার জায়গা হয়ে গেছে।
সবাই এলাম। বারান্দায় লম্বা লাইন করে খাবার জায়গা হয়েছে। খেতে খেতে হৈ হট্টগোল। বড়মা ডাক্তার দাদার তরজা। আমার মিত্রার খুনসুটি। এর মাঝেও ইসলাম ভাই খালি আমাকে মেপে যাচ্ছে। চোখে চোখ পরতেই জিজ্ঞাসার চিহ্ন, আমি হাসছি। খাওয়া শেষ হওয়ার পর মুখ ধোওয়ার সময় খালি ইসলাম ভাই বললো।
-কিরে কাজ শেষ করলি? আমি একবার ইসলাম ভাই-এর দিকে তাকিয়ে ফিক করে হাসলাম।
-আরে, তোমরা বস লোক। তোমাদের সঙ্গে কি পারি।
ইসলাম ভাই আমার দিকে তাকিয়ে ফ্যাকাশে হাসি হাসলো।
-চল একটা সিগারেট খাই।
-না। তুমি কথা বলতে চাইলে যেতে পারি।
-তাই চল।
মিত্রাকে বললাম তোরা যা আমি যাচ্ছি।
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে একবার হাসলো।
আমি ইসলাম ভাই খামারে এসে দাঁড়ালাম। ইসলাম ভাই একটা সিগারেট ধরালো।
-কিরে কি কথা হলো।
-কিসের বলোতো।
-যার সঙ্গে কথা বললি।
-কারুর সঙ্গে কথা বলিনি। অফিসে কথা বলছিলাম। কাজের ব্যাপারে।
ইসলাম ভাই আমার চোখে চোখ রাখলো।
-হাসলাম। চিকনা সব খবর তোমায় দিতে পারেনি।
ইসলাম ভাই আমার কাঁধটা ধরে ঝাঁকিয়ে দিলো।
-তুই গুরু এটা মানতেই হবে।
-কেনো।
-ওই অন্ধকারে তুই দেখলি কি করে।
-আমিযে মাকড়শা। আমার মাথায় আটটা চোখ আছে।
-আমি তোর মাত্র একটা উইং বন্ধ করতে পেরেছি।  তোর সঙ্গে পারবোনা।
-তাহলে লড়ছো কেনো।
ফোনটা বেজে উঠলো।
পকেট থেকে বার করলাম। 
-হ্যালো।
-দাদা আমি অর্ক।
-কিরে কাগজ বেরিয়ে গেছে।
-হ্যাঁ দাদা, দারুন এক্সপিরিয়েন্স।
-গুড। এখুনি বেরিয়ে যাবি।
-না। বেরোতে বেরোতে দুটো বাজবে।
-আমি তোকে একটু বাদে ফোন করছি। এইটা তোর মোবাইল নম্বর।
-হ্যাঁ দাদা।
-আমি সেভ করে নিলাম।
-ঠিক আছে।
আমি নম্বরটা সেভ করলাম। ইসলাম ভাই-এর দিকে তাকালাম। ইসলাম ভাই আমার দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হাসছে।
-হেসে লাভ নেই। এই গেমটা তোমাদের জন্য নয়। তোমরা তোমাদের গেম খেলো। আমি আমার গেম খেলবো।
-কাজ শুরু করে দিয়েছিস।
-অবশ্যই। আমার সব গোছানো থাকে। তোমাকে সেদিনও বলেছিলাম, আমি দাবা খেলি।
ইসলাম ভাই মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
-তুই জানলি কি করে রাজনাথবাবু এর মধ্যে ইনভলভ।
-তুমি রাজনাথবাবুর নাম পর্যন্ত শুনতে পেয়েছো তারপর আর পারোনি?
-সত্যি বলছি আর কিছু জানতে পারিনি।
-তুমি এও জানো অনিকে জিজ্ঞাসা করলে উত্তর পাওয়া যাবেনা।
-তোর ক্ষতি হোক চাইনা। বড়মাকে প্রমিস করেছি।
-আমার একটা ভুলের জন্য তোমাদের সকলের ক্ষতি হোক এটা চাও।
-কখনই না।
-তাহলে আমাকে বাধা দেবেনা। তোমাদের ট্রিটমেন্ট দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়া। আর আমি সেই লোকটাকে জীবনমৃত করে রেখে দেবো। ভিক্ষা করা ছাড়া তার কিছুই জুটবেনা। কোনটা বেটার।
-তোর পথ আর আমার পথ আলাদা।
-কিরে মুন্না শুবি না?
ছোটমা বারান্দায় দাঁড়িয়ে চেঁচালো।
-যাচ্ছি তুমি শুয়ে পরো।
-তোর সঙ্গে কি অনি।
-হ্যাঁ।
-ওকি আবার গন্ডগোল করছে নাকি ?
-না। এমনি কথা বলছি।
-আয় আয়।

-মাসি কাল কখন ছাড়বে বলেছে।
-কলকাতায় নিয়ে চলে এসেছে। ওর বাড়িতে আছে।
-তোমার লোকজন।
-ওরা চলে এসেছে।
-আমাকে বললেনা। দাদাকে জানাতে হবে।
-এইতো কিছুক্ষণ আগে ফোন করলো।
-যাও শুয়ে পরো। কাল অনেক কাজ আছে।
ইসলাম ভাই আমার দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলো। তারপর চলে গেলো।
খামার থেকে ঘরে এলাম। নিচে সবাই আড্ডা মারছে। মিত্রা মাঝখানে বসে আছে।
-কিরে তোদের শোয়ার ব্যবস্থা কি হলো। আরি বাবা নীপা ম্যাডাম হেবি দিয়েছে।
নীপা আমার দিকে চোরা চাহুনি ঝারলো।
দেবাশিষ হাসলো। আয়।
আমি ভেতরে গেলাম।
-আমি অদিতি এই ঘরে।
-পছন্দ হয়েছে অদিতি। এ কিন্তু তোমার বাড়ির…..।
-থাক আর বলতে হবেনা। কথা বলার সুযোগ পেলেই……।
আমি হো হো করে হেসে ফেললাম।
-দেবাশিষ শুধু তোরা দুজন! এই ঠান্ডায়!
-শালা…..
দেবা কিছু বলতে যাচ্ছিল অদিতি মুখটা চেপে ধরলো।
-টিনা, মিলি, নির্মাল্য?
-টিনা, মিলি এক ঘরে। নির্মাল্য বারান্দায়। নীপা নীপার জায়গায়। মিত্রা বললো।
-টিনা মিলি!
-কেনো তোমার অসুবিধে আছে। টিনা বললো।
-না, টিনা মিলি, মিত্রা, আমি নীপা……।
-দাঁড়া তোকে দেখাচ্ছি। মিত্রা তেড়ে এলো।
-আচ্ছা আচ্ছা অন্যায় হয়েছে।
-সত্যি কথা বলতে কি আমার নির্মাল্যর জন্য চিন্তা হচ্ছে। বেচারা।
-এনি কম্বিনেশনে আমার কোনো অসুবিধে নেই।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
-শখ দেখো। দম আছে! মিলি বললো।
-প্রমাণ করে দেখ।
-এইতো কথা ফুটেছে।
-কি মিলি ম্যাডাম হয়ে যাক এসপার নয় ওসপার।
-না আমার দরকার নেই। আবার ট্রেন কেস খেতে রাজি নই।
-দেবা তাহলে মিলি হেরে গেলো।
-না হারি নি। নির্মাল্যর জায়গায় তুমি হলে ভাবা যেতো।
-এই মুখপুরি আমি কোথায় যাবো। মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো।
-আচ্ছা আচ্ছা বাবা তোমার জিনিষে আমি হাত দেবোনা। মিলি মিত্রাকে জড়িয়ে ধরলো।
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে বাঁকা চোখে হাসছে। চোখের ভাষা এরকম, আমাকে পেয়ে তোর শান্তি নেই।
টিনার দিকে তাকিয়ে বললাম।
-কেমন এনজয় করছো ম্যাডাম।
-দারুণ। তোমার কীর্তি কলাপ শুনে মনে হচ্ছে, কলেজে তুমি কিছুই করোনি।
-সত্যি তুই গাছে উঠতে পারিস। দেবা বললো।
-চল কাল সকালে দেখাবো। অন্ধকার থাকতে উঠতে পারবিতো।
-তুই বললে সারারাত ঘুমবোনা।
-তুই সারারাত ঘুমো না ঘুমো আমি তোর ঘরে উঁকি মারতে যাবোনা।
-দেখলি মিত্রা, এবার আমি শুরু করলে।
-না ঘুমিয়ে পর আমি ঠিক সময়ে ডাকবো। একটা কথা নীপা আমাদের সঙ্গে যাবেনা।
-মিত্রাদি!
-গুড নাইট। মিত্রা উঠে এলো।
আমি বললাম তুই ওপরে যা আমি একটু আসছি।
-কোথায় যাবি তুই ?
-পাঁচ মিনিট।
-আমি যাবো?
-কিরে মিত্রা। দেবাশিষ ঘর থেকে চেঁচিয়ে উঠলো।
-দেখনা ও আবার কিছু প্ল্যান ভেঁজেছে।
দেবাশিষ ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। পেছন পেছন ওরা সবাই।
-কিরে অনি।
-কিছুনা তোরা যা।
-আমি তোর সঙ্গে যাবো ব্যাশ।
-চল আমি পি করবো তুই পাহারা দিবি।
-তাই দেবো।
ওরা সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
-তখন তুই বাথরুমের নাম করে দু’ঘন্টা কাটিয়ে এসেছিস।
-আচ্ছা আমার কি কোনো কাজ কর্ম নেই।
-তোর সব কাজ এই কানা রাতে।
-তখন মিত্রার মুখে সব শুনলাম। সত্যি অনি তোর কাজ কর্মের বহর দেখে আমাদেরই আত্মারাম খাঁচা ছাড়া ও বেচারা কি করবে। দেবা বললো।
-ঠিক আছে চল। যাবো না।
মিত্রা মুচকি হেসে বললো
-পি করতে যাবিনা।
আমি ওর মুখের দিকে তাকালাম। টিনা মিলি নীপা মিটি মিটি হাসছে।
-আসিরে দেবা। আমি ওপরে উঠে এলাম।
[+] 4 users Like MNHabib's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - by MNHabib - 15-05-2022, 11:55 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)