14-05-2022, 12:31 PM
-কি করি বলোতো ইসলাম ভাই?
-কি করবি, তোর কলকাতা ছেড়ে কোথাও যাওয়া হবেনা। মাত্র দুদিন এখানে ছিলিনা। বড়দির মুখ ভার, দিদির মুখ ভার। তুই ওদিকে ওইসব করছিস শুনে চিকনারা এই কলকাতায় চলে যায়। সব সামলাতে সামলাতে আমি হিমসিম খেয়ে গেছি। বাধ্য হয়ে আমাকে সব শোনাতে হয়েছে। তাওতো গতকাল আমি, মামনি পালিয়ে পালিয়ে বেরিয়েছি।
-বাইক কবে কিনলে?
-তুই যে দিন গেলি সেদিন।
-তুমি গেছিলে?
-না। সঞ্জুকে টাকা দিয়েছিলাম। ও অনাদি গিয়ে কিনে এনেছে।
-চলো অনেক রাত হলো, ওখানে আবার হুলুস্থূল কান্ড বেঁধে যাবে।
-চল।
আমরা দুজনে হাঁটতে হাঁটতে চলে এলাম। সঞ্জুর দোকানটা হাফ বন্ধ দেখলাম। এখন মরা হাট। হাতে গোনা কয়েকজন লোক এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। দূরে দেখলাম বাসুর দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। ইসলাম ভাই বাইকে স্টার্ট দিলো। আমি পেছনে বসলাম।
-কিগো রাতে চালাতে পারবেতো?
-ঠিক করে বোস, কথা বলিসনা।
ফিক করে হেসে ফেললাম।
ইসলাম ভাই বেশ জোরেই চালিয়ে নিয়ে এলো। উঁচু নীচু রাস্তার জন্য যেটুকু নাচা নাচি করেছি। খামারে এসে দাঁড়াতেই দেখলাম আলো ঝলমলে পরিবেশ। চারিদিকে লাইটে লাইট। বাইক থেকে নেমে দাঁড়ালাম। ইসলাম ভাই বাইকটাকে স্ট্যান্ড করলো। ভজু এগিয়ে এলো। জরিয়ে ধরলো।
-কেমন আছো অনিদা?
-তুই কেমন আছিস।
-ভালো। তোমাকে নাকি মেরেছে!
-কে বললো তোকে?
-মা, জানো মা না আমাকে বোকেছে।
-সেই জন্য আমি মাকে বকে দিয়েছি।
দেখলাম নীপা বারান্দায় ছিলো, ছুটে ভেতরে চলে গেলো। কাকারা বাইরের বারান্দায় টিভির নিউজ দেখছে। সবার পোষাক বদল হয়ে গেছে। আমি ইসলাম ভাই-এর দিকে তাকিয়ে বললাম।
-মাসি কখন ফোন করবে?
-আজ হবেনা কাল হবে?
-কেনো।
-কলকাতার বাইরে রেখেছে।
-খেয়েছে
-মাসি জানলো কি করে বলোতো।
-ওই পাড়ার পার্টির দাদারা এসেছিলো। গন্ধে গন্ধে কিছু পেয়েছে হয়তো। এই ক্ষেত্রে যা হয় আরকি। দামিনীকে চাপ দিয়েছে। শেষে ও বলে দিয়েছে। অনি না বললে ছাড়বোনা। এবার বাবুরা ঠুসে গেছে। সব জায়গায়তো টাকা ছড়িয়ে রেখেছে।
-ফিরে যাই সোমবার থেকে সিরিয়াল মারবো। কোন বাপ ওকে বাঁচায় আমি দেখবো।
-এই তোর মাথা বিগড়ে গেলো।
কথাটা একটু জোড়ে বলা হয়ে গেছিলো। দেখলাম দাদা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে এদিকে তাকালো। মল্লিকদা দাদার দেখা দেখি উঠে দাঁড়িয়েছে। এদিকে তাকিয়ে আছে। আমি চুপ করে গেলাম। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম।
-কি ভাবছিস।
-না। তুমি ভেতরে যাও। আমি একটু টয়লেট করে আসছি। সিগারেটের প্যাকটটা দাও।
ইসলাম ভাই আমার দিকে সন্দেহের চোখে তাকিয়ে। আমার কথাটা ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না। পকেট থেকে প্যাকেটটা বার করে আমার হাতে দিলো।
আমি আলো থেকে অন্ধকারের দিকে এগোলাম। সোজা চলে এলাম তেঁতুল তলায়।
চারিদিক শুনশান। আকাশে আলোর লেশমাত্র নেই। আজ মনে হয় চাঁদ উঠবে সেই মাঝ রাতে। আকাশ ভরা তারার মেলা। কেউ যেন আকাশের গায়ে টুনিবাল্ব জালিয়ে দিয়েছে। আমি রাসমঞ্চের গাঁ ঘেষে বসলাম। পকেট থেকে ফোনটা বার করে সনাতন বাবুকে ধরলাম।
-ছোটবাবু?
আপনি এখন কোথায় ?
-অফিসে।
-মিত্রার ঘরের চাবিটা কোথায়?
-আমার কাছে।
-সন্দীপকে চাবিটা দিন। আমাকে একবার মিস কল করতে বলুন।
-ছোটবাবু আবার কোনো গন্ডগোল……
-না। যা বলছি করুন।
-ঠিক আছে।
পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা বার করলাম। একটা সিগারেট বার করে ধরালাম। মনে মনে বললাম শালা শুয়োরের বাচ্চা। তুমি অনেক বড় খেলোয়ার। নিজেকে বড্ড সেয়ানা মনে করো।
ফোনটা বেজেই থেমে গেলো।
পকেট থেকে বার করে দেখলাম সন্দীপ। রিং ব্যাক করলাম।
-কিরে আবার কি হলো?
-কিছু হয়নি। কাগজের খবর কি?
-ফার্স্ট ক্লাস। দারুণ স্মুথ এগোচ্ছে।
-তুই এখন কোথায়?
-দাদার ঘরের সামনে
-আশেপাশে কেউ আছে?
-না।
-চাবি পেয়েছিস?
-হ্যাঁ।
-মিত্রার ঘরের দরজাটা খোল ভেতরে গিয়ে ইন্টার লক করে দে।
-কেনোরে!
-তোকে হুকুম করছি, তামিল কর। কোনো প্রশ্ন করবিনা।
-বাবা এতো কড়া কড়া কথা বলছিস কেনো। যাচ্ছি।
ফ্লোরে সন্দীপের বুটের আওয়াজ পেলাম। এই সময় নিউজরুম ছাড়া সারা অফিস শুনশান। বুঝতে পারছি সন্দীপ কানে মোবাইলটা ধরে রেখে, মিত্রার ঘরের লক খুললো। ভিতরে গিয়ে ইন্টার লক করলো।
-অনি?
-বল।
-ম্যাডামের ঘরের ভেতর।
-আমার কথা পরিষ্কার শুনতে পাচ্ছিস?
-পাচ্ছি।
-তোকে একটা দায়িত্ব দিচ্ছি। তুই আমি ছাড়া কেউ জানতে পারবেনা। এমনকি তোর বউ পর্যন্ত নয়, মাথায় রাখিস। যদি আমি বুঝতে পেরেছি তুই, আমি ছাড়া তৃতীয় কোনো ব্যক্তি জানতে পেরেছে তাহলে তোর বউ বিধবা হবে।
-ইস তুই এইভাবে বলছিস।
-যা বলবো তার গুরুত্ব কতটা তাহলে বুঝতে পেরেছিস।
-পেরেছি পেরেছি। তুই বল।
-মিত্রার চেয়ারের দিকে মুখ কর।
-করেছি।
-এবার ডানদিকে তিনটে আলমারি দেখতে পাচ্ছিস?
-পাচ্ছি।
-প্রথম আলমারিটা খুলবি। ওটায় কোনো চাবি নেই। সব সময় খোলা থেকে। কিছু অবাঞ্ছিত কাগজপত্র ওই আলমারিতে ভরা আছে। একটা চেয়ার নিয়ে আলমারির সামনে যা।
-দাঁড়া।
বুঝতে পারছি সন্দীপ একটা চেয়ার টানতে টানতে ওখানে নিয়ে যাচ্ছে।
-এসেছি।
-আলমারির পাল্লা খোল।
-খুলেছি। তুই যা বললি একেবারে কারেক্ট।
-হুঁ। চেয়ারের ওপর ওঠ।
-দাঁড়া জুতোটা খুলি। উঠেছি।
-এবার চারতলাটা তোর হাতের কাছে চলে এসেছে।
-হ্যাঁ। কি নোংরা রে কাল হরিদার ছেলেটাকে দিয়ে পরিষ্কার করাবো।
-শুয়োর, তোকে বলেছি পরিষ্কার করাতে!
-আচ্ছা আচ্ছা আর বলবোনা। বল কি করবো?
-একেবারে পেছন দিকে হাত দে।
-জামায় নোংরা লেগে যাবে।
-আচ্ছা গান্ডু তো।
-খিস্তি দিসনা, চেয়ার থেকে পরে যাবো। হ্যাঁ হাত ঢুকিয়েছি।
-একটা প্লাস্টিকের ফাইলে হাতে ঠেকেছে।
-হ্যাঁ।
-ওটা টেনে বার কর, সাবধানে, কোনো কিছু যেন পরে না যায়।
-আচ্ছা।
-বার করেছিস?
-দাঁড়া কাগজগুলো সরাই। ধলোয় চোখ মুখ ভরে গেলো।
-রাত্রে বাড়িতে ফিরে বউকে বলিস ক্লিনজার দিয়ে পরিষ্কার করে দিতে।
-আচ্ছা। তোর মটকাটা আজ গরম কেনো?
-যা বলছি তাড়াতাড়ি কর।
-বার করেছি।
-চেয়ার থেকে নেমে মিত্রার টেবিলের টেবিল ল্যাম্পটা জ্বালা।
-দাঁড়া নামি আগে। আলমারির পাল্লা বন্ধ করবো?
-না। তুই যখন এই ঘরে ঢুকলি কেউ দেখিছিলো।
-না।
-গুড।
-তোর কাছ থেকে এইটুকু শিখেছি। গোপন কাজ গোপনে করতে হয়।
-কথাটা মাথায় রাখবি।
-প্রমিস কোনোদিন ভুল হবেনা।
-লাইট জ্বাললি।
-জ্বাললাম।
-ফাইলটা খুলে দেখ দশটা খাম আছে।
-গুনিনি।
-গুনতে হবেনা। দেখ রাজনাথ বাবুর নামে একটা খাম রয়েছে।
পেছন দিকের ঝোপটায় সর সর করে একটা আওয়াজ হলো। চমকে পেছনে তাকালাম। জোড়ে চেঁচিয়ে উঠলাম
-কে ওখানে? কথা বলছ না কেনো? সামনে এগিয়ে গেলাম। কাউকে দেখতে পেলাম না।
-অনি অনি।
-দাঁড়া পরে বলছি।
-কি হয়েছে বলবি তো।
-কিছু হয়নি।
-কে ওখানে?
কোনো সাড়া শব্দ নেই। আমি তুলসীমঞ্চের গা থেকে একটু দূরে ফাঁকা জায়গায় চলে এলাম।
-কি হয়েছে রে।
-একটা সরসর আওয়াজ পেলাম সাপ-টাপ হবে হয়তো। পেয়েছিস খামটা।
-পেয়েছি।
-খোল খামটা।
-আঠা দিয়ে আটকানো আছে। ছিঁড়বো।
-হ্যাঁ।
-উরি শালা এতো এ্যাটম বোম। তুই পেলি কোথা থেকে।
-তোকে জানতে হবেনা।
-ছবিগুলো ঠিক আছে?
-একেবারে ঝকঝকে।
-খামটা টেবিলে রেখে ফাইলটা ওপরে তুলে দিয়ে আয়। যেমনভাবে ছিলো ঠিক তেমনভাবে। পারলে নোংরা কাগজগুলো একটু ঠেলে দিস।
-আচ্ছা।
বুঝতে পারছি সন্দীপ আমার কথা মতো কাজ করলো।
-এবার বল?
-রাত্রিবেলা এটা নিজের হাতে জেরক্স করবি। উইথ ছবি। ঠিক ঠিক ভাবে। কেউ যেনো দেখতে না পায়।
-আচ্ছা।
-অফিসের একটা বড় খাম নিয়ে আর্টিকেলটা ভরবি, ওপরে নাম এ্যাড্রেস লিখবি রাজনাথবাবুর। সেন্ডারে আমার নাম এবং ফোন নম্বর।
-মোবাইল?
-হ্যাঁ। কাল অফিসে আসার পথে জিপিও থেকে রেজিস্টার্ড পোস্টে ওঠা পাঠাবি। এ্যাকনলেজটা ফিরে এলে গুছিয়ে রাখবি।
-এইকাজ।
-গান্ডু। কি বলতে ভুলে গেলাম বলতো তোকে?
-বলতে পারবোনা!
-তাহলে এইকাজ বলে খেঁচালি কেনো।
-বল কি ভুলে গেলি?
-খামের ওপর কনফিডেনসিয়াল লিখতে ভুলবিনা।
-ঠিক।
-খামটা গুছিয়ে রাখবি। কেউ যেনো জানতে না পারে। আর মিত্রার ঘরের চাবি সনাতনবাবুকে দেওয়ার দরকার নেই তোর কাছে রাখবি। আমি গেলে আমার হাতে দিবি।
-যদি কিছু বলে।
-আমাকে ফোন করতে বলবি।
-মালটা ছাপবিনা।
-এখন না।
-দূর শালা হাতে গরম জিনিষ এইভাবে ছেড়ে দিবি।
-যা বলছি করবি। আর একটা কাজ করতে হবে।
-বল।
-মিঃ ব্যানার্জীর ছবি তোর কাছে আছে।
-আছে।
-রবিবার ফ্রন্টপেজে একেবারে বাঁদিকের ওপরের কলমে। ছবি দিয়ে লিখবি ওনার সঙ্গে আমাদের কাগজের এখন কোনো সম্পর্ক নেই। কেনো নেই তা আমরা মঙ্গলবারের কাগজে ধারাবাহিক লেখায় জানাবো। আট দশ লাইনের ভেতর একটা গল্প লিখবি।
-ঠিক আছে।
-আর একটা কাজ করতে পারবি।
-বল চেষ্টা করবো।
-একটা আনকোরা ফ্রিলেন্সার জোগাড় করতে পারবি। ওই ছেলেদুটোর মতো ইনটেলেক্ট হওয়া চাই।
-পারবোনা।
-তাহলে এক কাজ কর।
-বল।
-তুই কি কাগজ সামলে নিতে পারবি।
-পারবো।
-তাহলে ওদের একজনকে রাজনাথবাবুর পোঁদে লাগিয়ে দে। ব্যাপারটা এরকম কখন ও বাথরুমে যাচ্ছে কতোক্ষণ বাথরুমে কাটাচ্ছে আমাকে জানতে হবে।
-পারবে?
-আমাকে ফোন করতে বল। আমি বুঝিয়ে দেবো। ওগুলোর নাম ভুলে যাই।
-ওদেরও আক্ষেপ তুই ওদের নাম ধরে ডাকিস না।
-নাম কি বলতো।
-একটার নাম অরিত্র আর একটার নাম অর্ক।
-ফর্সাটার নাম কি ?
-অরিত্র।
-তাহলে এক কাজ কর অর্ককে আমায় ফোন করতে বল। এই কদিন ও অফিসে আসবেনা। আমি কলকাতায় না যাওয়া পর্যন্ত। আর অরিত্রকে বাকি নার্সিংহোমগুলো কভার করে নিতে বল।
-আচ্ছা।
-চিঠিটা পোস্ট করে আমাকে জানাবি।
-আচ্ছা।
ফোনটা কেটে একটা সিগারেট বার করে ধরালাম। দু’চারটে সুখটান দিলাম। তারপর ধীর পায়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিলাম।


![[+]](https://xossipy.com/themes/sharepoint/collapse_collapsed.png)