Thread Rating:
  • 63 Vote(s) - 2.92 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়)
-অনি ওর প্রবলেমগুলো এখনো সারেনি!
সবাই দেবাশিষের দিকে তাকালো। বুঝলাম দেবাশিষ ওদের কিছু বলেনি। ওরা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে, উত্তরের অপেক্ষায়। কি বলবো এদের সামনে। মিথ্যে বললেও আজ নয় কাল ওরা জানতে পারবে।
-না। সারতে সময় লাগবে।
-ডাক্তার দাদা?
-ওখানেই আছে।
-তোর বাড়িতে!
-হ্যাঁ।
-সত্যি ট্রিপটা দারুণ হবে।
-কিগো দেবাদা মিত্রাদির কি হয়েছে? টিনা বললো।
-গলা শুনে কিছু বুঝলেনা।
-না।
-পরে বলবো।
দেবা এমন করে বললো। সবাই চুপ করে গেলো।
আমি নিস্তব্ধে খেয়ে যাচ্ছি।
-নিরঞ্জনদার ব্যাপারটা শেষ কর।
-হাসলাম। এখনো দু’আড়াই ঘন্টা যেতে হবে।
-ঠিক আছে তুই বল।
-মলের কেসটা যেদিন ঘটালাম।
-হ্যাঁ। ওটাতো কাগজে সিরিয়াল করলি। দারুন লিখেছিস।
-এরপর কত জল যে গঙ্গা দিয়ে সমুদ্রে চলে গেলো তার ইয়ত্তা নেই। এখনো তার রেশ কাটেনি লড়ে চলেছি।
-দামিনী মাসি তার জন্য।
-এইতো তার মাথা কাজ করতে শুরু করে দিয়েছে।
-তোর পাশে আছিনা।
হাসলাম।
-সেদিন সকাল থেকে যা যা ঘটেছিল সব বললাম। আমার কথা শুনে ওদের চোখ চড়কগাছ।
-কি বলছিস তুই।
-হ্যাঁ। ঠিক বলছি।
-কোথাকার জল কোথায় এসে গড়িয়েছে। তুই চম্পকটাকে দূর কর।
-ঠিক সময়ে করবো। তোদের নিয়ে যাচ্ছি। অনেক সময় পাবো। বসে আলোচনা করবো। আশা রাখি তোরা আমাকে হেল্প করবি।
-করবো মানে! তোর বিশ্বাস নেই।
-তোরা প্রত্যেকে প্রফেশনাল। আমি জীবিকাকে আগে প্রধান্য দিই।
-গুলি মার। যা কামিয়েছি। এখন কিছু না করলেও সারাজীবন নুনভাত জুটবে।
-এটা তোর ইমোশনের কথা।
-সময় আসুক প্রমাণ করে দেবো।
টিনা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মিলি ন্যাপকিনে হাতটা মুছে নির্মাল্যকে বললো
-তুই এদিকে আয় আমি এতক্ষণ শুনলাম এবার অনিদার সঙ্গে একটু ঝগড়া করি।
-দেবা হাতাহাতি হলে বাঁচাস।
ওরা হো হো করে হেসে ফেললো।
-এবার আমার পাশে এসে বসতে পারো মিলি।
-তুমিতো প্রথমেই পেরেক ঠুকে দিলে।
-তুই অনির সঙ্গে পারবি? কেনো ঠোকা ঠুকি করছিস।
-দাঁড়াও ওখানে গিয়ে আগে দল ভারী করি, তারপর।
আবার হাসি।
কফি এলো। খেয় দেয়ে আমরা বেরিয়ে এলাম। নিচে আসতেই ম্যানেজার ভদ্রলোক সব গাড়ির পেছনে উঠিয়ে দিলেন।
-নষ্ট হয়ে যাবেনা তো?
-স্যার আমি এমন ভাবে প্যাক করে দিয়েছি রাত দশটা পর্যন্ত গরম থাকবে।
আমি ম্যানেজার ভদ্রলোকের সঙ্গে হাত মেলালাম। রবিবার ফিরছি।
-আচ্ছা স্যার। আমাকে যদি একটু আগে ফোন করে দেন।
-আপনার কোনো কার্ড।
উনি ছুটে গিয়ে কার্ড নিয়ে এলেন। আমরাও সবাই উনাকে কার্ড দিলাম।
-স্যার আপনাদের কাছ থেকে কোনোদিন পয়সা নেওয়া যাবেনা।
-কেনো!।
-আমার দোকানটা উনার কোম্পানী সাজিয়ে দিয়েছে। দেবাশিষের দিকে তাকিয়ে বললো।
আমি দেবাশিষের দিকে তাকালাম।
-দেবাশিষ হাসছে। তোর কাছ থেকে শিখছি।
ম্যানেজার ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে বললো।
-আপনার এই স্পটে যদি আরো বিজ্ঞাপন করা যায় আপনার আপত্তি আছে।
-একেবারে না স্যার।
-সব কটা কার্ড ভালো করে দেখুন।
-আমার দেখা হয়ে গেছে স্যার।
-আসার দিন জমিয়ে গল্প হবে।
-আচ্ছা স্যার।
নির্মাল্য এইবার ড্রাইভিং সিটে বসলো। আমি বললাম
-এবার আমি সামনের সিটে বসি, দেবা তুই পেছনে বোস।
-কেনো।
-এইবার তোদের পথ দেখাতে দেখাতে নিয়ে যেতে হবে।
-দারুণ হবে। তুমি পেছনে এসো। অদিতি বললো।
দেবা পেছনে এসে অদিতির পাশে বসলো। গাড়ি চলছে। টুক টাক কথা চলছে। কলেজ লাইফের কিছু কথা। ওরা গান করলো। আমি শুনলাম।
-অনি?
-কি।
-তোর কলেজে লাস্ট ফেস্টের কথা মনে আছে।
-আছে।
-অনেকদিন তোদের ডুয়েটে শ্রুতি নাটক শুনিনি।
-মনে করাসনা, বিপদ আছে।
-সত্যিতো দেবাদা একেবারে মনে ছিলোনা। টিনা বললো।
-মিলি তুমি ওদের ডুয়েট কোনোদিন দেখেছো?
-না।
-ওরা দু’জনে কতো প্রাইজ নিয়ে এসেছে কলেজের জন্য জানো।
-কলেজ লেভেল কমপিটিশনে।
-ইয়েস।
-আমরা ওদের ডুয়েটে শ্রুতিনাটক শুনতে যেতাম। কলেজ থেকে আমাদের ইয়ারের ছাত্র-ছাত্রীরা ছাড়াও অন্য ইয়ারের ছাত্র-ছাত্রীরা যেতো। আমরা হাততালি দেওয়া শুরু করলেই হল ফেটে পরতে হাততালিতে। সেই সব দিন আর ফিরে আসবেনা।
-আসবে রে দেবাশিষ, আসবে। চেষ্টা করলে অতোটা হয়তো আসবেনা। তবে কিছুটা অবশ্যই আসবে।
-এবার শোনাতে হবে। টিনা বললো।
-সময়ের দরকার বুঝলে টিনা। আর মুড। এটা না থাকলে চেষ্টা করলেও হবেনা।
-ওসব জানিনা শোনাতে হবে।
-দেখিনির্মাল্য সামনের যে মোড়টা আসছে ওখান থেকে বাঁদিকে ঘুরবি।
-আচ্ছা।
গাড়ি চলছে। আমরা চুপচাপ।
-এই মোড়টা অনিদা? সামনের মোড় দেখে নির্মাল্য বললো
-হ্যাঁ।
-দেবা?
-বল।
-এই বাঁদিকে যে নার্সিংহোমটা দেখছিস….
-হ্যাঁ।
-ওটা কালকে ট্রান্সফার করলাম।
-আরি বাবা এতো বিশাল ক্যাম্প্যাসরে।
-হ্যাঁ। সব মিত্রার পয়সা।
-বলিস কি!
-ঈশ্বর ওকে সব দিক থেকে মেরেছে। খালি কিছু পয়সা ছিলো বলে এ যাত্রায় বেঁচে গেলো।
-সত্যি, যা বলেছিস।
-ওরা জানলা দিয়ে সবাই মুখ বার করে দেখলো।
-নির্মাল্য?
-দাদা।
-এখানের রাস্তাটা ভালো নয় একটু আস্তে চালাস।
-আচ্ছা।
-আর একটা কথা বলি মন দিয়ে শোন।
-বলো।
-এখানে মানুষকে ধাক্কা দিলে তোর ফাইন হবে না। কিন্তু ছাগল বা মুরগিকে মারলে তোর জেল পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
-ছাড়তো তোর গুল।
-এক বর্ণও মিথ্যে কথা বলছিনা। যেতে যেতে দেখবি। ছাগলগুলো রাস্তার মাঝখানে চলে আসে। হর্ণ মারলে সরে না। তোকে গাড়ি দাঁড় করিয়ে হ্যাট হ্যাট করলে তারপর সরবে। সাবধান।
টিনা আমাকে ঠেলা মারলো। দাঁড়াও মিত্রাদিকে গিয়ে বলবো।
-মিত্রাদি ফেঁসেছিলো, তাই নির্মাল্যকে সাবধান করলাম।
-অনি?
-বল।
-যেতে যেতে তোর সেই পীরসাহেবের থান শ্মশানটা দেখা যাবে।
-দেখা যাবে।
-রাতে যাওয়া যাবে।
-তুই গেলে আমার নিয়ে যেতে আপত্তি নেই।
-না তোমাকে যেতে হবেনা। অদিতি বললো।
-দেখ তোর বউ তোকে আগলাতে শুরু করে দিয়েছে।
-অনিদা খারাপ হয়ে যাবে বলে দিচ্ছি।
-টিনা কিছু বলবে?
-না অনিদা ওর জিনিষ আমি বলতে গিয়ে খারাপ হবো কেনো।
-দাঁড়া মুখপুরি তোর হচ্ছে।
-দেখলে অনিদা তুমি বেমক্কা আমাকে গালাগাল খাওয়ালে।
-মিলি চুপচাপ কেনো বল তো?
-মাপছে। মাপা শেষ হলে ডায়লগ ঝাড়বে।
-আবার আমাকে চাটতে শুরু করলি। বেশতো অদিতি চলছিলো।
-নির্মাল্য হর্ণ মার।
সামনে একটা ছাগলের বাচ্চা দাঁড়িয়ে সত্যি সত্যি সে সরলোনা। নির্মাল্য গাড়ি থামাতে বাধ্য হলো। আমি নেমে গিয়ে তাকে কোলে তুললামচেঁ চেঁ করছে। অদিতির কাছে নিয়ে এসে বললাম
-একবার হাত দাও দেখতে পাবে। অদিতি হাত দিতেই বাচ্চাটা ছটফট করে উঠলো।
-দাঁড়াও দাঁড়াও টিনা মোবাইলটা বার করে একটা ছবি নিলো।
-কিরে শেষপর্যন্ত ছাগলের সঙ্গে অনিদা। মিলি বললো।
আমি হাসছি।
গাড়ি চলতে শুরু করলো।
-মিলি।
-উঁ।
-কালকে ফ্রন্ট পেজে যদি আমার এই ছবিটা ছাপা হয় আর…….
-সরি সরি আর বলবোনা।
-কেনো তুই খাপ খুলতে গেলি। অদিতি বললো।
-দূর ছাই অতো কি মনে থাকে।
আবার হাসির রোল।
আমরা চকে এসে দাঁড়ালাম।
গাড়িটা নির্মাল্যকে সাইড করতে বললাম।
[+] 2 users Like MNHabib's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - by MNHabib - 04-05-2022, 06:54 AM



Users browsing this thread: