27-04-2022, 11:18 PM
পর্ব- তেইশ
হকারের ডাকে চোখ খুলে তাকায় তথা৷ না একটু চা খেতেই হবে, মাথাটা কেমন ধরেছে। নিলয় প্রতিদিন সন্ধ্যায় চা করে দিয়ে অভ্যাস টা করে ফেলেছে। এখন চা না খেয়ে থাকতেই পারে না। পাশের সীট টা এখনো ফাঁকা। তাহলে এতক্ষণ যা ছিল সেটা কি নিছকই কল্পনা। ভাবতে ভাবতেই চোখ দুটো ভারি হয়ে আসে। মনের কল্পনা ছাড়া আর কি হবে। ও তো এখন জানে নিলয় অন্যকাউকে ভালোবাসে। তথার প্রতি যেটুকু ছিল সেটা কেবলি দায়িত্ববোধ আর সহানুভূতি। কিন্তু তথা যে ওকে ভালবেসে ফেলেছে। সেটা তো আর বলা হয়ে উঠলো না। আর কখনো কি সেই সুযোগ আসবে৷ যদি সুযোগ আসে তথা কি পারবে সব বাঁধা কাটিয়ে সমস্ত জড়তার অবসান ঘটিয়ে নিলয়কে বলতে "আমি তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি" আমি তোমার মায়ার বাঁধনে নিজেকে বেঁধে ফেলেছি। তথার ডাক কি নিলয়ের কান ভেদ করে হৃদয় পর্যন্ত পৌছাবে। নিলয় কি কাছে টেনে নিবে তথা কে। যদি নিলয় ওকে গ্রহন না করে না করুক তবুও তথা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ এবার ফিরে গিয়ে মনের সব কথা ওর কাছে উগড়ে দিবে। যা হবার হবে, তবুও সে নিজের অনুভূতির কথা ভালোবাসার কথা নিলয়কে জানাবেই।
হকারের কাছ থেকে চা নিয়ে চুমুক দেয় তথা। না সেই চির চেনা স্বাদ টা নেই। চা তো চা -ই কিন্তু তারপরও ঐ চা টাতে এমন কিছু ছিল যেটা তথার মন শরীর দুটোই চনমনে করে দিতো। হয়তো সেটাতে নিলয়ের স্পর্শ থাকতো বলে। নাকি নিলয়ের পরম যত্নে চা য়ে আলাদা স্বাদ যুক্ত হতো৷ আচ্ছা চায়ে কি ভালবাসা মেশানো যায়৷ না মেশানো গেলে চা খেয়ে কিভাবে ভালবাসার অনুভূতি জেগে উঠে। এটা কি মনের ভ্রম নাকি ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ। ট্রেন ছুটে চলেছে আপন গতিতে। চলার পথে ট্রেনে একটা আলাদা সুরের তৈরী করে সেটা হৃদয়ে আলোড়ন তুলে। মন সেই সুর শব্দে বিভোর হয়ে যায়। কিন্তু ভেঙে যাওয়া তথার মনে শুধুই বিচ্ছেদের সুর।
স্টেশন থেকে বাসাটা আজ সবচেয়ে দীর্ঘ পথ লাগছে নিলয়ের কাছে। এই পথ টা আজ আর ফুরোতে চাইছে না। মনে হচ্ছে শরীরের কোন একটা অংশ আজ আলাদা হয়ে গেছে ওর কাছ থেকে। নিজেই যেন আলাদা করে দিলো সব কিছু৷ অদ্ভুত যন্ত্রণায় কাতর হয়ে আছে শরীর আর হৃদয়টা৷ এ জীবনে কত দুঃখ, কত কষ্ট- যন্ত্রণার মুখোমুখি হতে হয়েছে কিন্তু সেই সব তো হাসি মুখে পাড় করে গেছে। তবে আজ কেন পারছে না৷ আজ যেন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারছে না। একেক বার মনে হচ্ছে ও হয়তো পালিয়ে এসেছে, পালাতে চেয়েছে তথার কাছ থেকে৷ নিজেকে তথার ভালবাসার কাছে সমর্পণ না করে দুনিয়ার চোখে হয়তো জিতে গেছে কিন্তু নিজের কাছে হেরে গেছে সে। আজ কাছের একজন কে বিদায় দিয়ে এসেছে, না না ফেলে রেখে এসেছে ঐ ভীড় স্টেশনে।
বাসায় ফিরে এসে বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে নিজের রুমে যাবার সময় এতদিনের অভ্যাস বশত উকি দেয় তথার রুমে। রুম টা খালি দেখে খা খা করে উঠে নিলয়ে পুরুষ হৃদয় টা৷ পুরো বাড়ি আজ নিস্তব্ধ৷ কদিন আগেও যেখানে নিলয় বাসায় ফিরার পর তথার ব্যস্ততা ঘরটা মাতিয়ে তুলতো সেখানে আজ শ্মশানের নীরবতা৷ আবার একা হয়ে গেল, নাকি নিজেকে ইচ্ছে করে একা করে দিল সেটাই ভাবতে থাকে নিলয়৷ মেয়েটা তো থেকে যেত চাইলো কিন্তু নিলয় নিজেই তো ওকে দূরে সরিয়ে দিল। নিজেকে নিজের কাছে স্বার্থপর লাগছে নিলয়ের। বুকের উপর চেপে বসা যন্ত্রনাটা লাঘবের জন্য চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে হয় নিলয়ের। কিন্তু পৃথিবী যে এক অদ্ভুত নিয়ম তৈরি করে রেখেছে পুরুষের কাঁদতে নেই। ভিতরে গুমড়ে গুমড়ে মরে যাও তবু চোখে জল আসা যাবে না। তোমার ভিতরটা যতই শূন্যতায় কাতর হোক চোখ জল আসা যাবে না। যতই একাকীত্ব তোমাকে গ্রাস করে নিক, হতাশা তোমাকে জাপটে ধরুক তবুও তোমার চোখে জল আসা যাবে না। ব্যাথা টা শরীরে হোক কিংবা মনে ভুল করে হলেও তোমার চোখে জল আসা যাবে না। পুরুষের আবেগ থাকতে নেই, অনুভূতির প্রকাশ করতে নেই।
গলাটা শুকিয়ে আসে, কই আজ তো কেউ ছুটে আসবে না শরবতে গ্লাস নিয়ে৷ পায়ের ধব ধব শব্দে হৃদয় নাচাবে না৷ মাথাটা প্রচন্ড ধরেছে কিন্তু শরীর অনুমতি দিচ্ছে না উঠে যেতে। কই আগে তো এমন হয়নি। এর বাজে অবস্থায় ও চা করতে গেছে, রান্না করেছে৷ তবে সে সব কি নিজের জন্য নয়, অন্য কারও টানে৷ নিলয়ের ভিতরের মানুষটা যেন চিৎকার করে বলছে "এনজয় ইট, আজ থেকে তুমি মুক্ত, তুমি স্বাধীন। আর কেউ নেই এখানে তোমার উপর রাগ দেখানোর, তোমার সাথে ঝগড়া করার৷ সেই প্রাণ টা আজ তুমি রেখে এসেছো যে কারণে অকারণে জেদ করতো, তোমার উপর খবরদারী চালাতো, তোমার উপর চেঁচাতো, অভিমানে চোখের জল ফেলতো। কিচ্ছু নেই আর। তুমি মুক্ত, তুমি স্বাধীন, এখন থেকে ঘুড়ির মতই ইচ্ছে স্বাধীন উড়তে পারবে আকাশে। কারণ সেই নাটাই টা আজ আর নেই এখানে।" নিলয় চিৎকার করে নিজের ভিতরের মানুষটাকে দমাতে চায়৷ এমন মুক্তি তো সে কখনো চায় নি। কিন্তু নিজেকে নিজে বুঝাতে চায় ও যা করেছে সবার ভালোর জন্য করেছে। ওর কাছে দেবার মত কিছুই নেই তথাকে। কিসের মায়ায় সে আটকে রাখবে তথা কে৷ তথার ভালোর জন্যই সে সব করেছে। এখানে থাকলে তথা কখনো ভাল থাকবে না৷ তথার জন্য সে সব করতে পারে৷ ওর জন্য নিজের এমন হাজারো অনুভূতির সমাধি দিতে পারে।
রাত গড়িয়ে চলেছে। তথা কি কিছু খেয়েছে কিনা জানতে ইচ্ছে করে। কিন্তু কল করে কথা বলার মত জোর গলায় পায় না। শুকিয়ে যাওয়া গলা দিয়ে আওয়াজ বের হয় না নিলয়ের। নিজেরও খেতে ইচ্ছে করছে না। গত সাত দিন ধরে দুজনার কথা বলা বন্ধ হবার পর থেকেই নিলয়ের গলা দিয়ে খাবার নামে নি। না আর থাকতে পারছে না নিলয়, একটু কথা বলার জন্য উশখুশ করছে মনটা। অনেক ভেবে একটা মেসেজ করে।
-খেয়েছো কিছু?
-(মোবাইল টা হাতে নিয়েই বসে ছিল তথা। সাথে সাথে টাইপিং করে) না, তুমি?
-হুম খেয়েছি। রাত অনেক হয়েছে খেয়ে নাও।
-মিথ্যে বলছো?
-মিথ্যে বলবো কেন? সত্যি বলছি। প্লিজ তুমি খেয়ে নাও।
-আমার কথা তুমি না শুনলেও, তোমার কথা আমি ফেলতে পারবো না, কারণ আমি তোমাকে না থাক.... খেয়ে নিচ্ছি।
-খেয়াল রেখো নিজের। পৌঁছে ফোন করো।
-ঠিক আছে।
অনেক দূরত্বের মাঝেও কোন এক মায়ার টানে দু'জোড়া চোখ যেন একইসাথে ছল ছল করে উঠে।
মোবাইলটা পাশে রেখে হাত পা ছড়িয়ে বিছানায় ছোড়ে দেয় নিজের শরীরটা নিলয়৷ মাথা টা বনবন করে ঘুরছে। চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে। চোখ বন্ধ করে ঘুমোতে চেষ্টা করে।
----★★★----
ভোর ছয়টার দিকে "বিজয় এক্সপ্রেস" চট্রগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে প্রবেশ করে। ট্রেন থেকে নেমে নিলয়ের দেয়া নাস্বারে ফোন করতেই একজন মেয়ে ওর দিকে হেটে আসতে থাকে। মেয়েটি এসে পরিচয় দেয় ও নিলয়ের বন্ধুর বোন বর্নালী। স্টেশন থেকে বের হবার আগে নিলয়কে ফোন করে পৌছার সংবাদ দেবার জন্য৷ বার দুয়েক ফোন করার পর নিলয়ের সাথে কথা হয়। কন্ঠ শুনে বুজতে পারে ঘুমে ছিল। স্টেশন থেকে বেরিয়ে ঐ মেয়ের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয় ওরা। আজ ওখানেই থাকা হবে। কাল বর্ণালীর সাথে চট্টগ্রাম মেডিকের কলেজে যাবে ভর্তি হতে, সেখান থেকে কলেজ হোষ্টেলে নাম এন্ট্রি করতে হবে। তারপর পরদিন আর কোন কাজ নেই কিন্তু ট্রেনের ফিরতি টিকিট আগামী পরশুর তাই মাঝখানে দুদিন এখানেই থাকতে হবে। নতুন শহর, নতুন আকাশ, নতুন সকাল অন্য কেউ হলে হয়তো এসব উপভোগ করতো। কিন্তু এসব উপভোগ করার জন্য যে হৃদয়ের দরকার সেটা তো সে রেখে এসেছে অনেক দূরে৷ মনের ভিতরে কি ভীষন যন্ত্রনা হয়ে চলেছে সেটা ওর মুখ দেখে কেউ কি বুঝতে পারবে না৷ আশেপাশের প্রকৃতির সৌন্দর্য এই সকালের নীরব শহরের অপরূপ রূপ দেখা হয়ে উঠে না তথার।
বাসায় পৌঁছে সারা রাতের ট্রেন জার্নির ক্লান্তিতে জামা কাপড় বদলে ঘুমিয়ে পড়েছিল। কতক্ষণ ধরে ঘুমোচ্ছিল সেটার খেয়াল নেই। দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য ডাক দেয়াতে ঘুম ভাঙে তথার৷ মোবাইলটা হাতে নিয়ে সময়টা দেখে। তিনটে বাজতে চললো। তথা খোঁজ করে কোন কল বা মেসেজ এসেছে কিনা। কতক গুলো মেসেজ এসেছে কিন্তু সেখানে সবগুলোই সিম কোম্পানির মেসেজ। নিলয়ের কোন মেসেজ কল নেই দেখে অবাক হয় তথা। একবারও কল করলো না দেখে হতবাক হয়ে যায় তথা৷ নিলয় কি করছে, দুপুরের খাবার খেল কিনা তা জানার জন্য নিজেই ফোন করলো রিং হচ্ছে কিন্তু কেউ ধরছে না। বার কয়েকবার ফোন করলেো কেউ ধরলো না। দুশ্চিন্তা ঘিরে ধরে তথা কে। কি হলো নিলয় ফোন কেন তুলছে না। দুশ্চিন্তা নিয়েই খাবার খেতে চলে যায়৷ খাবার খেয়ে এসে মোবাইলটা আবার হাতে নেয় কোন কল বা মেসেজ এসেছে কিনা চেক করা করার জন্য। নিলয় একটা মেসেজ পাঠিয়েছে-
"কোম্পানির মিটিং এ আছি, দুপুরের খাওয়া দাওয়া করেছো কি, করে নাও। আর সাবধানে থেকো"
মেসেজটা পেয়ে মনটা শান্ত হয় তথার। একটু আগেও মনে হচ্ছিলো কেউ হয়তো নিলয়কে কেড়ে নিয়েছে। সত্যই তো নিলয় তো আর ওর নেই। রাতেও ঐ মেসেজেই কথা হলো৷ তথা ফোন করলেও নিলয় ফোন রিসিভ করার বদলে মেসেজ পাঠায়। মনটা খুব খারাপ হয়ে যায় নিলয়ের এমন আচরণে। কি দোষ করেছে তথা যে নিলয় ওর সাথে এমন আচরণ করছে। একরাশ অভিমান জমা হয় তথার বিদীর্ণ হৃদয়ে।
সকালে উঠে তৈরী হয়ে কলেজের উদ্দেশ্যে বের হয়ে যায়। কলেজ পৌঁছে সব কাগজ পত্র জমা করা, ভর্তি ফি জমা করা, বিভিন্ন কাগজে সই সাবুদ এসব নিয়ে দুপুর হয়ে যায়। বাইরেই একটা রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবার খেয়ে নেয়। কলেজের কাজ শেষ করে কলেজ হোষ্টেলের দিকে যেতে যেতে মোবাইল টা চেক করতে থাকে। না আজ সকাল থেকে কোন কল মেসেজ কিছুই আসেছি। ব্যতিব্যস্ত হয়ে ফোন করে তথা। টানা পাঁচ বার ফোন করে চলেছে কিন্তু রিসিভ করছে না৷ টেনশন হচ্ছে খুব৷ কিন্তু কাউকে কিছু বলতে পারছে না। হোষ্টেলের কাজ শেষে বাসায় ফিরে আসে।
এই রোদের মাঝে সারাদিনে দৌড়ঝাঁপ আর নিলয়কে নিয়ে টেনশনে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে তথা। বাসায় এসে নাস্তা করে শরীর এলিয়ে দিয়ে ঘুমের দেশে চলে যায়। খুব বাজে একটা স্বপ্নে ঘুমটা ভেঙে যায়৷ হুড়মুড় করে উঠে বসে। বিছানা ছেড়ে বাথরুমে যায় চোখে সুখে জল দিতে। বাথরুম থেকে শুনতে পায় ফোনটা বেজে চলেছে। বিদ্যুৎ গতিতে দৌড়ে আসে ফোনটা রিসিভ করার জন্য৷ ও ভেবেছিল নিলয় ফোন করেছে হয়তো। মোবাইলটা হাতে নিতেই দেখে কোম্পানি সার্ভিস কল এসেছে। আশাহত হয়ে মুষড়ে পরে তথা। সারাদিনে একবারও খবর নিলো না। দুশ্চিন্তা আর রাগ দুটোউ হচ্ছে। তথা ভাবে এই একদিনেই এতপর হয়ে গেল সে। আবার দুশ্চিন্তা হয়, কোন বিপদ হয়নি তো নিলয়ের। না আর বসে থাকতে পারছে না সে, উঠে যায় বর্ণালীর কাছে। ওর ভাইকে একটা ফোন করে নিলয়ের খবর জানার জন্য অনুরোধ করে৷ ফোন করে জানতে পারে তার ভাইয়ের সাথে আজ যোগাযোগ হয়নি। ফোন করেছিল কিন্তু ফোন তোলেনি হয়তো ব্যস্ত আছে।
রাতে খাওয়া শেষে মোবাইল নিয়ে অপেক্ষা করে নিলয় কখন ফোন করে সেই আশায়৷ অপেক্ষা করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিল মনে নেই। খুব সকালে ঘুম ভাঙে তথার। খেয়াল করে মোবাইলটা এখনো হাতে ধরা আছে। শোয়া থেকেই নিলয়ের নাম্বারে ফোন করে। কিন্তু কল ঢুকে না। বারবার সংযোগ দেয়া সম্ভব না বলছে। একের পর এক ফোন করে যাচ্ছে কিন্তু সংযোগ হচ্ছে না।
তথার মনটা ভার হয়ে যায়। সে ভাবতে শুরু করে তবে কি নিলয় তাকে এড়িয়ে যেতে চাইছে। তাই ইচ্ছে করে কোন ফোন করছে না মেসেজ করছে না। আর এদিকে সে বারবার ফোন করছে দেখে নিলয় ওর নাম্বার টা ব্লক করে দিয়েছে। ও কি এতই বুঝা হয়ে গেছে নিলয়ের কাছে। নিলয় হয়তো ঐ মেয়েটাকেই ভালবাসে তাই ইচ্ছে করেই তথা কে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। অভিমান জমতে শুরু করে তথার অন্তরে। তথা ভাবে নিলয় যদি এটাই চায় তবে তাই হবে। তথা চলে যাবে নিলয়ের জীবন থেকে। ওর ভালবাসা ওর নিজের অন্তরেই চাপা দিবে। ও চায় না আর নিলয়কে কোন কষ্ট দিতে, নিলয়ের কাছে বুঝা হয়ে থাকতে। নিলয় যদি ঐ মেয়েকে নিয়ে সুখে থাকে তবে তাই হোক। ও আগামীকাল গিয়ে বাকি সব জিনিসপত্র নিয়ে একেবারেই চলে আসবে এখানে৷ আর কখনো যাবে না নিলয়ের কাছে।
সারাটাদিন কিভাবে কেটেছে বলতে পারে না তথা৷ মাঝে মাঝে নিলয়ের ফোনে কল দেবার চেষ্টা করেছে কিন্তু উত্তর সেই একি। পরদিন সকাল আট টায় "বিজয় এক্সপ্রেস" এ ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় তথা৷ শেষবারের মত ফিরে যাচ্ছে....
হকারের ডাকে চোখ খুলে তাকায় তথা৷ না একটু চা খেতেই হবে, মাথাটা কেমন ধরেছে। নিলয় প্রতিদিন সন্ধ্যায় চা করে দিয়ে অভ্যাস টা করে ফেলেছে। এখন চা না খেয়ে থাকতেই পারে না। পাশের সীট টা এখনো ফাঁকা। তাহলে এতক্ষণ যা ছিল সেটা কি নিছকই কল্পনা। ভাবতে ভাবতেই চোখ দুটো ভারি হয়ে আসে। মনের কল্পনা ছাড়া আর কি হবে। ও তো এখন জানে নিলয় অন্যকাউকে ভালোবাসে। তথার প্রতি যেটুকু ছিল সেটা কেবলি দায়িত্ববোধ আর সহানুভূতি। কিন্তু তথা যে ওকে ভালবেসে ফেলেছে। সেটা তো আর বলা হয়ে উঠলো না। আর কখনো কি সেই সুযোগ আসবে৷ যদি সুযোগ আসে তথা কি পারবে সব বাঁধা কাটিয়ে সমস্ত জড়তার অবসান ঘটিয়ে নিলয়কে বলতে "আমি তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি" আমি তোমার মায়ার বাঁধনে নিজেকে বেঁধে ফেলেছি। তথার ডাক কি নিলয়ের কান ভেদ করে হৃদয় পর্যন্ত পৌছাবে। নিলয় কি কাছে টেনে নিবে তথা কে। যদি নিলয় ওকে গ্রহন না করে না করুক তবুও তথা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ এবার ফিরে গিয়ে মনের সব কথা ওর কাছে উগড়ে দিবে। যা হবার হবে, তবুও সে নিজের অনুভূতির কথা ভালোবাসার কথা নিলয়কে জানাবেই।
হকারের কাছ থেকে চা নিয়ে চুমুক দেয় তথা। না সেই চির চেনা স্বাদ টা নেই। চা তো চা -ই কিন্তু তারপরও ঐ চা টাতে এমন কিছু ছিল যেটা তথার মন শরীর দুটোই চনমনে করে দিতো। হয়তো সেটাতে নিলয়ের স্পর্শ থাকতো বলে। নাকি নিলয়ের পরম যত্নে চা য়ে আলাদা স্বাদ যুক্ত হতো৷ আচ্ছা চায়ে কি ভালবাসা মেশানো যায়৷ না মেশানো গেলে চা খেয়ে কিভাবে ভালবাসার অনুভূতি জেগে উঠে। এটা কি মনের ভ্রম নাকি ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ। ট্রেন ছুটে চলেছে আপন গতিতে। চলার পথে ট্রেনে একটা আলাদা সুরের তৈরী করে সেটা হৃদয়ে আলোড়ন তুলে। মন সেই সুর শব্দে বিভোর হয়ে যায়। কিন্তু ভেঙে যাওয়া তথার মনে শুধুই বিচ্ছেদের সুর।
স্টেশন থেকে বাসাটা আজ সবচেয়ে দীর্ঘ পথ লাগছে নিলয়ের কাছে। এই পথ টা আজ আর ফুরোতে চাইছে না। মনে হচ্ছে শরীরের কোন একটা অংশ আজ আলাদা হয়ে গেছে ওর কাছ থেকে। নিজেই যেন আলাদা করে দিলো সব কিছু৷ অদ্ভুত যন্ত্রণায় কাতর হয়ে আছে শরীর আর হৃদয়টা৷ এ জীবনে কত দুঃখ, কত কষ্ট- যন্ত্রণার মুখোমুখি হতে হয়েছে কিন্তু সেই সব তো হাসি মুখে পাড় করে গেছে। তবে আজ কেন পারছে না৷ আজ যেন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারছে না। একেক বার মনে হচ্ছে ও হয়তো পালিয়ে এসেছে, পালাতে চেয়েছে তথার কাছ থেকে৷ নিজেকে তথার ভালবাসার কাছে সমর্পণ না করে দুনিয়ার চোখে হয়তো জিতে গেছে কিন্তু নিজের কাছে হেরে গেছে সে। আজ কাছের একজন কে বিদায় দিয়ে এসেছে, না না ফেলে রেখে এসেছে ঐ ভীড় স্টেশনে।
বাসায় ফিরে এসে বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে নিজের রুমে যাবার সময় এতদিনের অভ্যাস বশত উকি দেয় তথার রুমে। রুম টা খালি দেখে খা খা করে উঠে নিলয়ে পুরুষ হৃদয় টা৷ পুরো বাড়ি আজ নিস্তব্ধ৷ কদিন আগেও যেখানে নিলয় বাসায় ফিরার পর তথার ব্যস্ততা ঘরটা মাতিয়ে তুলতো সেখানে আজ শ্মশানের নীরবতা৷ আবার একা হয়ে গেল, নাকি নিজেকে ইচ্ছে করে একা করে দিল সেটাই ভাবতে থাকে নিলয়৷ মেয়েটা তো থেকে যেত চাইলো কিন্তু নিলয় নিজেই তো ওকে দূরে সরিয়ে দিল। নিজেকে নিজের কাছে স্বার্থপর লাগছে নিলয়ের। বুকের উপর চেপে বসা যন্ত্রনাটা লাঘবের জন্য চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে হয় নিলয়ের। কিন্তু পৃথিবী যে এক অদ্ভুত নিয়ম তৈরি করে রেখেছে পুরুষের কাঁদতে নেই। ভিতরে গুমড়ে গুমড়ে মরে যাও তবু চোখে জল আসা যাবে না। তোমার ভিতরটা যতই শূন্যতায় কাতর হোক চোখ জল আসা যাবে না। যতই একাকীত্ব তোমাকে গ্রাস করে নিক, হতাশা তোমাকে জাপটে ধরুক তবুও তোমার চোখে জল আসা যাবে না। ব্যাথা টা শরীরে হোক কিংবা মনে ভুল করে হলেও তোমার চোখে জল আসা যাবে না। পুরুষের আবেগ থাকতে নেই, অনুভূতির প্রকাশ করতে নেই।
গলাটা শুকিয়ে আসে, কই আজ তো কেউ ছুটে আসবে না শরবতে গ্লাস নিয়ে৷ পায়ের ধব ধব শব্দে হৃদয় নাচাবে না৷ মাথাটা প্রচন্ড ধরেছে কিন্তু শরীর অনুমতি দিচ্ছে না উঠে যেতে। কই আগে তো এমন হয়নি। এর বাজে অবস্থায় ও চা করতে গেছে, রান্না করেছে৷ তবে সে সব কি নিজের জন্য নয়, অন্য কারও টানে৷ নিলয়ের ভিতরের মানুষটা যেন চিৎকার করে বলছে "এনজয় ইট, আজ থেকে তুমি মুক্ত, তুমি স্বাধীন। আর কেউ নেই এখানে তোমার উপর রাগ দেখানোর, তোমার সাথে ঝগড়া করার৷ সেই প্রাণ টা আজ তুমি রেখে এসেছো যে কারণে অকারণে জেদ করতো, তোমার উপর খবরদারী চালাতো, তোমার উপর চেঁচাতো, অভিমানে চোখের জল ফেলতো। কিচ্ছু নেই আর। তুমি মুক্ত, তুমি স্বাধীন, এখন থেকে ঘুড়ির মতই ইচ্ছে স্বাধীন উড়তে পারবে আকাশে। কারণ সেই নাটাই টা আজ আর নেই এখানে।" নিলয় চিৎকার করে নিজের ভিতরের মানুষটাকে দমাতে চায়৷ এমন মুক্তি তো সে কখনো চায় নি। কিন্তু নিজেকে নিজে বুঝাতে চায় ও যা করেছে সবার ভালোর জন্য করেছে। ওর কাছে দেবার মত কিছুই নেই তথাকে। কিসের মায়ায় সে আটকে রাখবে তথা কে৷ তথার ভালোর জন্যই সে সব করেছে। এখানে থাকলে তথা কখনো ভাল থাকবে না৷ তথার জন্য সে সব করতে পারে৷ ওর জন্য নিজের এমন হাজারো অনুভূতির সমাধি দিতে পারে।
রাত গড়িয়ে চলেছে। তথা কি কিছু খেয়েছে কিনা জানতে ইচ্ছে করে। কিন্তু কল করে কথা বলার মত জোর গলায় পায় না। শুকিয়ে যাওয়া গলা দিয়ে আওয়াজ বের হয় না নিলয়ের। নিজেরও খেতে ইচ্ছে করছে না। গত সাত দিন ধরে দুজনার কথা বলা বন্ধ হবার পর থেকেই নিলয়ের গলা দিয়ে খাবার নামে নি। না আর থাকতে পারছে না নিলয়, একটু কথা বলার জন্য উশখুশ করছে মনটা। অনেক ভেবে একটা মেসেজ করে।
-খেয়েছো কিছু?
-(মোবাইল টা হাতে নিয়েই বসে ছিল তথা। সাথে সাথে টাইপিং করে) না, তুমি?
-হুম খেয়েছি। রাত অনেক হয়েছে খেয়ে নাও।
-মিথ্যে বলছো?
-মিথ্যে বলবো কেন? সত্যি বলছি। প্লিজ তুমি খেয়ে নাও।
-আমার কথা তুমি না শুনলেও, তোমার কথা আমি ফেলতে পারবো না, কারণ আমি তোমাকে না থাক.... খেয়ে নিচ্ছি।
-খেয়াল রেখো নিজের। পৌঁছে ফোন করো।
-ঠিক আছে।
অনেক দূরত্বের মাঝেও কোন এক মায়ার টানে দু'জোড়া চোখ যেন একইসাথে ছল ছল করে উঠে।
মোবাইলটা পাশে রেখে হাত পা ছড়িয়ে বিছানায় ছোড়ে দেয় নিজের শরীরটা নিলয়৷ মাথা টা বনবন করে ঘুরছে। চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে। চোখ বন্ধ করে ঘুমোতে চেষ্টা করে।
----★★★----
ভোর ছয়টার দিকে "বিজয় এক্সপ্রেস" চট্রগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে প্রবেশ করে। ট্রেন থেকে নেমে নিলয়ের দেয়া নাস্বারে ফোন করতেই একজন মেয়ে ওর দিকে হেটে আসতে থাকে। মেয়েটি এসে পরিচয় দেয় ও নিলয়ের বন্ধুর বোন বর্নালী। স্টেশন থেকে বের হবার আগে নিলয়কে ফোন করে পৌছার সংবাদ দেবার জন্য৷ বার দুয়েক ফোন করার পর নিলয়ের সাথে কথা হয়। কন্ঠ শুনে বুজতে পারে ঘুমে ছিল। স্টেশন থেকে বেরিয়ে ঐ মেয়ের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয় ওরা। আজ ওখানেই থাকা হবে। কাল বর্ণালীর সাথে চট্টগ্রাম মেডিকের কলেজে যাবে ভর্তি হতে, সেখান থেকে কলেজ হোষ্টেলে নাম এন্ট্রি করতে হবে। তারপর পরদিন আর কোন কাজ নেই কিন্তু ট্রেনের ফিরতি টিকিট আগামী পরশুর তাই মাঝখানে দুদিন এখানেই থাকতে হবে। নতুন শহর, নতুন আকাশ, নতুন সকাল অন্য কেউ হলে হয়তো এসব উপভোগ করতো। কিন্তু এসব উপভোগ করার জন্য যে হৃদয়ের দরকার সেটা তো সে রেখে এসেছে অনেক দূরে৷ মনের ভিতরে কি ভীষন যন্ত্রনা হয়ে চলেছে সেটা ওর মুখ দেখে কেউ কি বুঝতে পারবে না৷ আশেপাশের প্রকৃতির সৌন্দর্য এই সকালের নীরব শহরের অপরূপ রূপ দেখা হয়ে উঠে না তথার।
বাসায় পৌঁছে সারা রাতের ট্রেন জার্নির ক্লান্তিতে জামা কাপড় বদলে ঘুমিয়ে পড়েছিল। কতক্ষণ ধরে ঘুমোচ্ছিল সেটার খেয়াল নেই। দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য ডাক দেয়াতে ঘুম ভাঙে তথার৷ মোবাইলটা হাতে নিয়ে সময়টা দেখে। তিনটে বাজতে চললো। তথা খোঁজ করে কোন কল বা মেসেজ এসেছে কিনা। কতক গুলো মেসেজ এসেছে কিন্তু সেখানে সবগুলোই সিম কোম্পানির মেসেজ। নিলয়ের কোন মেসেজ কল নেই দেখে অবাক হয় তথা। একবারও কল করলো না দেখে হতবাক হয়ে যায় তথা৷ নিলয় কি করছে, দুপুরের খাবার খেল কিনা তা জানার জন্য নিজেই ফোন করলো রিং হচ্ছে কিন্তু কেউ ধরছে না। বার কয়েকবার ফোন করলেো কেউ ধরলো না। দুশ্চিন্তা ঘিরে ধরে তথা কে। কি হলো নিলয় ফোন কেন তুলছে না। দুশ্চিন্তা নিয়েই খাবার খেতে চলে যায়৷ খাবার খেয়ে এসে মোবাইলটা আবার হাতে নেয় কোন কল বা মেসেজ এসেছে কিনা চেক করা করার জন্য। নিলয় একটা মেসেজ পাঠিয়েছে-
"কোম্পানির মিটিং এ আছি, দুপুরের খাওয়া দাওয়া করেছো কি, করে নাও। আর সাবধানে থেকো"
মেসেজটা পেয়ে মনটা শান্ত হয় তথার। একটু আগেও মনে হচ্ছিলো কেউ হয়তো নিলয়কে কেড়ে নিয়েছে। সত্যই তো নিলয় তো আর ওর নেই। রাতেও ঐ মেসেজেই কথা হলো৷ তথা ফোন করলেও নিলয় ফোন রিসিভ করার বদলে মেসেজ পাঠায়। মনটা খুব খারাপ হয়ে যায় নিলয়ের এমন আচরণে। কি দোষ করেছে তথা যে নিলয় ওর সাথে এমন আচরণ করছে। একরাশ অভিমান জমা হয় তথার বিদীর্ণ হৃদয়ে।
সকালে উঠে তৈরী হয়ে কলেজের উদ্দেশ্যে বের হয়ে যায়। কলেজ পৌঁছে সব কাগজ পত্র জমা করা, ভর্তি ফি জমা করা, বিভিন্ন কাগজে সই সাবুদ এসব নিয়ে দুপুর হয়ে যায়। বাইরেই একটা রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবার খেয়ে নেয়। কলেজের কাজ শেষ করে কলেজ হোষ্টেলের দিকে যেতে যেতে মোবাইল টা চেক করতে থাকে। না আজ সকাল থেকে কোন কল মেসেজ কিছুই আসেছি। ব্যতিব্যস্ত হয়ে ফোন করে তথা। টানা পাঁচ বার ফোন করে চলেছে কিন্তু রিসিভ করছে না৷ টেনশন হচ্ছে খুব৷ কিন্তু কাউকে কিছু বলতে পারছে না। হোষ্টেলের কাজ শেষে বাসায় ফিরে আসে।
এই রোদের মাঝে সারাদিনে দৌড়ঝাঁপ আর নিলয়কে নিয়ে টেনশনে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে তথা। বাসায় এসে নাস্তা করে শরীর এলিয়ে দিয়ে ঘুমের দেশে চলে যায়। খুব বাজে একটা স্বপ্নে ঘুমটা ভেঙে যায়৷ হুড়মুড় করে উঠে বসে। বিছানা ছেড়ে বাথরুমে যায় চোখে সুখে জল দিতে। বাথরুম থেকে শুনতে পায় ফোনটা বেজে চলেছে। বিদ্যুৎ গতিতে দৌড়ে আসে ফোনটা রিসিভ করার জন্য৷ ও ভেবেছিল নিলয় ফোন করেছে হয়তো। মোবাইলটা হাতে নিতেই দেখে কোম্পানি সার্ভিস কল এসেছে। আশাহত হয়ে মুষড়ে পরে তথা। সারাদিনে একবারও খবর নিলো না। দুশ্চিন্তা আর রাগ দুটোউ হচ্ছে। তথা ভাবে এই একদিনেই এতপর হয়ে গেল সে। আবার দুশ্চিন্তা হয়, কোন বিপদ হয়নি তো নিলয়ের। না আর বসে থাকতে পারছে না সে, উঠে যায় বর্ণালীর কাছে। ওর ভাইকে একটা ফোন করে নিলয়ের খবর জানার জন্য অনুরোধ করে৷ ফোন করে জানতে পারে তার ভাইয়ের সাথে আজ যোগাযোগ হয়নি। ফোন করেছিল কিন্তু ফোন তোলেনি হয়তো ব্যস্ত আছে।
রাতে খাওয়া শেষে মোবাইল নিয়ে অপেক্ষা করে নিলয় কখন ফোন করে সেই আশায়৷ অপেক্ষা করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিল মনে নেই। খুব সকালে ঘুম ভাঙে তথার। খেয়াল করে মোবাইলটা এখনো হাতে ধরা আছে। শোয়া থেকেই নিলয়ের নাম্বারে ফোন করে। কিন্তু কল ঢুকে না। বারবার সংযোগ দেয়া সম্ভব না বলছে। একের পর এক ফোন করে যাচ্ছে কিন্তু সংযোগ হচ্ছে না।
তথার মনটা ভার হয়ে যায়। সে ভাবতে শুরু করে তবে কি নিলয় তাকে এড়িয়ে যেতে চাইছে। তাই ইচ্ছে করে কোন ফোন করছে না মেসেজ করছে না। আর এদিকে সে বারবার ফোন করছে দেখে নিলয় ওর নাম্বার টা ব্লক করে দিয়েছে। ও কি এতই বুঝা হয়ে গেছে নিলয়ের কাছে। নিলয় হয়তো ঐ মেয়েটাকেই ভালবাসে তাই ইচ্ছে করেই তথা কে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। অভিমান জমতে শুরু করে তথার অন্তরে। তথা ভাবে নিলয় যদি এটাই চায় তবে তাই হবে। তথা চলে যাবে নিলয়ের জীবন থেকে। ওর ভালবাসা ওর নিজের অন্তরেই চাপা দিবে। ও চায় না আর নিলয়কে কোন কষ্ট দিতে, নিলয়ের কাছে বুঝা হয়ে থাকতে। নিলয় যদি ঐ মেয়েকে নিয়ে সুখে থাকে তবে তাই হোক। ও আগামীকাল গিয়ে বাকি সব জিনিসপত্র নিয়ে একেবারেই চলে আসবে এখানে৷ আর কখনো যাবে না নিলয়ের কাছে।
সারাটাদিন কিভাবে কেটেছে বলতে পারে না তথা৷ মাঝে মাঝে নিলয়ের ফোনে কল দেবার চেষ্টা করেছে কিন্তু উত্তর সেই একি। পরদিন সকাল আট টায় "বিজয় এক্সপ্রেস" এ ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় তথা৷ শেষবারের মত ফিরে যাচ্ছে....
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।