25-04-2022, 11:53 AM
# অন্য_রূপকথা
এই তো, একটু আগের ঘটনা।
এক বন্ধুর সঙ্গে নাগেরবাজারের কাছের মলটায় গেছিলাম। শনিবার, তাই বেশ ভিড় ছিল। আর বেরোনোর মুখেই একজন ভদ্রমহিলা আমাকে বেশ জোরে ধাক্কা দিয়ে এগিয়ে গেলেন। সেই রামধাক্কার চোটে কিঞ্চিৎ টলোমলো হয়ে গেছি - আর তখনই চোখে পড়লেন তিনি।
একজন নিপাট ভদ্রলোক। হাতে শ্যাম্পুর শ্যাসের মতো কিছু একটা! আর, মলের বাইরের অনেক বিক্রেতার মাঝে তেমন কিছুই বলে উঠতে পারছেন না। শুধু তাকিয়ে লোকজনের আসা- যাওয়া দেখছেন।
হঠাৎ কি যে হলো, এগিয়ে গেলাম ওনার দিকে। আমাকে দেখে যেন হাজার ওয়াটের বিদ্যুৎ খেলে গেল ওনার মুখে। অত্যন্ত মার্জিত স্বরে বলে উঠলেন "নেবেন, মা? আনারদানা এগুলো। ভাল খেতে খুব। আমি খেয়ে দেখেছি। দেব, মা?"
একেই আমি 'মা' বলে কেউ আমাকে ডাকলে এক্কেবারে গলে যাই, আর তারমধ্যে এমনি সুভদ্র কণ্ঠ! অবাক হয়েছিলাম খুব। তাই জিজ্ঞেস করে উঠলাম "কাকু, আপনি কোথায় থাকেন?"
"বনগাঁয় থাকি মা। এই গতবছরের লকডাউনে কাজ চলে গেল। কত চেষ্টা করলাম... আর কোনো কাজ পেলাম না। ছেলের সখ ছিল ফটো তোলা শিখবে, এখন সেসব ভুলে চাকরির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছে। তাই... ভেবে দেখলাম, কোনো কাজই তো ছোট না। অন্য কিছু না পেয়ে, এই হকারি করছি মা। নেবেন? ভাল জিনিস।"
"তাহলে এত আস্তে আস্তে কথা বলেন কেন কাকু? কেউ তো শুনতেই পাবেন না!" জিজ্ঞেস করলাম আমি।
উনি বলে উঠলেন "এখনও শিখে উঠতে পারিনি মাগো! শিখে যাব জোরে কথা বলা... আসলে আমার স্বর্গত বাবা পছন্দ করতেন না... তাই অভ্যাসটা নেই আর কি..."
চোখ উপচে জল আসছিল। তাও জিজ্ঞেস করলাম "বনগাঁ থেকে রোজ আসেন এতদূরে?"
"হ্যাঁ মা, দুপুরে আসি, রাত এগারোটা পর্যন্ত থাকি। কেউ যদি কেনেন... তারপর হাঁটতে হাঁটতে দমদম স্টেশান যাই, সাড়ে এগারোটার বনগাঁ লোকাল ধরে দেড়টায় নামি... দুটো বাজে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে..."
"এতটা হাঁটেন, কষ্ট হয় তো খুব!" বোকার মতো বলে উঠেছিলাম।
উনি একটু হাসলেন। তারপর বললেন "কষ্ট আর কি! পেটের ভাত জুটছে বাড়ির সবার... এইটুকু পায়ের কষ্ট আর এমন কি..."
পনেরোটাকার প্যাকেট আনারদানা। কতগুলোই বা দিনে বিক্রি হয়! তাও, একটা পরিবারের অন্ন আসে সেখান থেকে... আর হয়ত তাঁরা স্বপ্ন দেখেন, আবার সবকিছু 'আগের মতো' হয়ে যাবে?
যদি কেউ এইদিকে আসেন, কিনবেন এই কাকুর কাছ থেকে, প্লিজ? ওনার নাম অরিজিৎ মুখোপাধ্যায়। ঠিক ডায়মন্ড প্লাজা মলের সামনেই থাকেন, সপ্তাহের প্রতিদিন। কারণ, ওই যে... পেট চালাতে হবে! আর কে না জানে, এই পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান সুগন্ধ হলো গরম ভাতের গন্ধ... কোনো পারফিউমের সাধ্যি কি, তার সাথে পাল্লা দেয়!
এই তো, একটু আগের ঘটনা।
এক বন্ধুর সঙ্গে নাগেরবাজারের কাছের মলটায় গেছিলাম। শনিবার, তাই বেশ ভিড় ছিল। আর বেরোনোর মুখেই একজন ভদ্রমহিলা আমাকে বেশ জোরে ধাক্কা দিয়ে এগিয়ে গেলেন। সেই রামধাক্কার চোটে কিঞ্চিৎ টলোমলো হয়ে গেছি - আর তখনই চোখে পড়লেন তিনি।
একজন নিপাট ভদ্রলোক। হাতে শ্যাম্পুর শ্যাসের মতো কিছু একটা! আর, মলের বাইরের অনেক বিক্রেতার মাঝে তেমন কিছুই বলে উঠতে পারছেন না। শুধু তাকিয়ে লোকজনের আসা- যাওয়া দেখছেন।
হঠাৎ কি যে হলো, এগিয়ে গেলাম ওনার দিকে। আমাকে দেখে যেন হাজার ওয়াটের বিদ্যুৎ খেলে গেল ওনার মুখে। অত্যন্ত মার্জিত স্বরে বলে উঠলেন "নেবেন, মা? আনারদানা এগুলো। ভাল খেতে খুব। আমি খেয়ে দেখেছি। দেব, মা?"
একেই আমি 'মা' বলে কেউ আমাকে ডাকলে এক্কেবারে গলে যাই, আর তারমধ্যে এমনি সুভদ্র কণ্ঠ! অবাক হয়েছিলাম খুব। তাই জিজ্ঞেস করে উঠলাম "কাকু, আপনি কোথায় থাকেন?"
"বনগাঁয় থাকি মা। এই গতবছরের লকডাউনে কাজ চলে গেল। কত চেষ্টা করলাম... আর কোনো কাজ পেলাম না। ছেলের সখ ছিল ফটো তোলা শিখবে, এখন সেসব ভুলে চাকরির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছে। তাই... ভেবে দেখলাম, কোনো কাজই তো ছোট না। অন্য কিছু না পেয়ে, এই হকারি করছি মা। নেবেন? ভাল জিনিস।"
"তাহলে এত আস্তে আস্তে কথা বলেন কেন কাকু? কেউ তো শুনতেই পাবেন না!" জিজ্ঞেস করলাম আমি।
উনি বলে উঠলেন "এখনও শিখে উঠতে পারিনি মাগো! শিখে যাব জোরে কথা বলা... আসলে আমার স্বর্গত বাবা পছন্দ করতেন না... তাই অভ্যাসটা নেই আর কি..."
চোখ উপচে জল আসছিল। তাও জিজ্ঞেস করলাম "বনগাঁ থেকে রোজ আসেন এতদূরে?"
"হ্যাঁ মা, দুপুরে আসি, রাত এগারোটা পর্যন্ত থাকি। কেউ যদি কেনেন... তারপর হাঁটতে হাঁটতে দমদম স্টেশান যাই, সাড়ে এগারোটার বনগাঁ লোকাল ধরে দেড়টায় নামি... দুটো বাজে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে..."
"এতটা হাঁটেন, কষ্ট হয় তো খুব!" বোকার মতো বলে উঠেছিলাম।
উনি একটু হাসলেন। তারপর বললেন "কষ্ট আর কি! পেটের ভাত জুটছে বাড়ির সবার... এইটুকু পায়ের কষ্ট আর এমন কি..."
পনেরোটাকার প্যাকেট আনারদানা। কতগুলোই বা দিনে বিক্রি হয়! তাও, একটা পরিবারের অন্ন আসে সেখান থেকে... আর হয়ত তাঁরা স্বপ্ন দেখেন, আবার সবকিছু 'আগের মতো' হয়ে যাবে?
যদি কেউ এইদিকে আসেন, কিনবেন এই কাকুর কাছ থেকে, প্লিজ? ওনার নাম অরিজিৎ মুখোপাধ্যায়। ঠিক ডায়মন্ড প্লাজা মলের সামনেই থাকেন, সপ্তাহের প্রতিদিন। কারণ, ওই যে... পেট চালাতে হবে! আর কে না জানে, এই পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান সুগন্ধ হলো গরম ভাতের গন্ধ... কোনো পারফিউমের সাধ্যি কি, তার সাথে পাল্লা দেয়!