Thread Rating:
  • 159 Vote(s) - 3.41 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
WRITER'S SPECIAL গোলকধাঁধায় গোগোল (সমাপ্ত)
[Image: Polish-20220318-194749538.png]

(৬)

অটো করে 'ওপেন ইউনিভার্সিটির' উল্টোদিকের ফুটপাতে নামলো অরুন্ধতী .. এমনিতেই গরম পড়তে শুরু করেছে, তার ওপর দুশ্চিন্তায় আরো বেশি করে ঘামতে শুরু করলো সে। এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখতে পেলো ইউনিভার্সিটির প্রধান ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে আছে নিশীথ বটব্যাল। "সরি, আমার জন্য আপনার আজ কলেজে যেতে দেরি হয়ে যাবে, তাই না? .. খুব খারাপ লাগছে" রাস্তা পেরিয়ে হেডস্যারের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বললো অরুন্ধতী।

"এবার থেকে এই কথাগুলো বলা ছেড়ে দাও। বন্ধুত্বের মধ্যে 'সরি' আর 'খারাপ লাগছে' এইসব কথা একেবারেই চলে না। তুমি আমার সম্বন্ধে কি ভাবো জানিনা, তবে গতকাল রাত থেকে আমি তোমাকে আমার একজন বিশেষ বন্ধু বলে মনে করতে শুরু করেছি, আর আমার বন্ধুর জন্য আমি সবকিছু করতে পারি। এখন আর কথা না বাড়িয়ে ভেতরে চলো।" অপরূপা অরুন্ধতীর রূপ-লাবণ্য অবলোকন করতে করতে কথাগুলো বলে ওকে নিয়ে ভেতরে ঢুকে গেলেন নিশীথ বাবু।

ওখানে নিশীথ বাবুর ভালরকম চেনাজানা এবং প্রতিপত্তি আছে সেটা বেশ বোঝা গেলো। যদিও অরুন্ধতী উনার কলেজের ছাত্রের মা, নাকি অন্য কিছু - এ বিষয়ে জানতে বিন্দুমাত্র আগ্রহ প্রকাশ করেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বরং নিশীথ বাবুই বারকয়েক তাকে নিজের বান্ধবী বলে উল্লেখ করেছেন। ফর্ম ফিলাপের সময় অরুন্ধতীর আধার কার্ডে নিশীথ বাবু দেখলেন তার কলেজের ছাত্রের মায়ের বয়স ছত্রিশ বছর। ফর্ম ফিলাপ করা, টাকা জমা দেওয়া, স্টাডি মেটেরিয়াল সংগ্রহ করা - ইত্যাদি অফিশিয়াল কাজ মিটতে প্রায় ঘণ্টাখানেকের বেশি সময় লেগে গেলো। "সাড়ে এগারোটা বাজতে চললো .. রান্নাবান্না কিচ্ছু করে আসা হয়নি, আজ বরং আমি বাড়ি যাই, কাল না হয় সাপোর্টিং স্টাডিজের জন্য বাকি বইগুলো কেনা যাবে।" ইউনিভার্সিটির অফিস-রুমের দেওয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো অরুন্ধতী।

"যে কোনো কাজ কালকে করবো বলে ফেলে রাখলে কোনোদিন জীবনে এগোতে পারবে না। এখনই আমরা বাকি বইগুলো কিনতে যাবো আর রান্না করা নিয়ে এতো চাপ নিচ্ছ কেনো? দুপুরে তো তুমি একাই লাঞ্চ করবে বাড়িতে। অনির্বাণ খেয়ে কলেজে চলে গিয়েছে আর তোমার হাজব্যান্ড তো অফিস ক্যান্টিনে লাঞ্চ করে। আজ না হয় এই অধমের সঙ্গে কোথাও একটা লাঞ্চ করে নিও .. এটা এক বন্ধুর প্রতি আরেক বন্ধুর অনুরোধ।" এইটুকু বলে অরুন্ধতীকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তাকে নিয়ে ইউনিভার্সিটি থেকে বেরিয়ে তার মারুতি এইট হান্ড্রেড গাড়ি করে মার্কেটের দিকে রওনা হলেন নিশীথ বাবু।

সাপোর্টিং স্টাডিজের জন্য বেশ কয়েকটা বই কেনা হলো। এরপর নিশীথ বাবু একটি কম্পিউটার এন্ড এক্সেসরিজ এর দোকানে ঢুকলেন অরুন্ধতীকে নিয়ে। প্রথমে এর মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারলো না সে। তারপর যখন একটি দামী ব্র্যান্ডের মিনি ল্যাপটপ তার জন্য প্যাক করতে বলা হলো, তখন অনেকবার বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলো অরুন্ধতী। "এটা তোমার পড়াশোনা এবং চাকরি উভয় ক্ষেত্রেই কাজে লাগবে। আমি জানি তোমার বাড়িতে তোমার স্বামীর ল্যাপটপ আছে। কিন্তু আমি চাই না তুমি অন্য কারোর জিনিস ব্যবহার করো।" এইরূপ উক্তি করে অরুন্ধতীর কোনো বাধা না শুনে শেষমেষ ল্যাপটপ কেনা হলো।

এলাকার সব থেকে নামী রেস্টুরেন্টে ভাপা ইলিশ, ডাব চিংড়ি আর চিকেন ডাকবাংলো সহযোগে লাঞ্চ করতে করতে নিশীথ বাবুকে অনেকবার অনুনয়-বিনয় করে জিজ্ঞাসা করার পর ইউনিভার্সিটির এডমিশন ফি, এক বছরের অগ্রিম মাইনে, যাবতীয় বই এবং ল্যাপটপ - সব মিলিয়ে প্রায় এক লক্ষ টাকার উপর খরচ হয়ে গিয়েছে, একথা যখন অরুন্ধতী জানতে পারলো, মাথায় বাজ ভেঙে পড়লো তার।

"এত টাকা আমি কি করে ফেরত দেবো আপনাকে স্যার? কবে চাকরি পাবো তার ঠিক নেই, আর যদি পেয়েও যাই তবে কতোই বা স্যালারি পাবো, যে সেখান থেকে এই টাকা আপনাকে শোধ দিতে পারবো!" চিন্তিতভাবে কথাগুলো বললো অরুন্ধতী।

"কয়েকদিনের মধ্যেই আমার পার্টনারদের সঙ্গে তোমার একটা মিটিং ফিক্স করছি। আশা করি ওই দিন সবকিছু কনফার্ম হয়ে যাবে। হ্যাঁ তবে স্যালারি হয়তো খুব বেশি পাবে না। কিন্তু তুমি যদি ভেবে থাকো আজকের খরচ হওয়া টাকাগুলো আমি তোমার কাছ থেকে ফেরত নেবো, তাহলে তুমি মূর্খের স্বর্গে বাস করছো। তুমি একটা ভালো কাজে অগ্রসর হতে যাচ্ছ এবং বন্ধু হিসাবে আমি তোমার পাশে থাকতে পারছি এটাই অনেক .. এরমধ্যে টাকা পয়সার কথা বলো না প্লিজ।" অরুন্ধতীকে অবাক করে দিয়ে নিজের স্বভাবসিদ্ধ গম্ভীর গলায় কথাগুলো বললেন নিশীথ বটব্যাল। তারপর নিজের গাড়ি করে যাবতীয় বই এবং ল্যাপটপ সহ অরুন্ধতীকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে তৎক্ষণাৎ রওনা দিলেন কলেজের উদ্দেশ্যে। যদিও তার কলেজের ছাত্রের মায়ের সঙ্গে তারই বাড়িতে আরও কিছুক্ষণ নিভৃতে কাটানোর ইচ্ছা ছিলো নিশীথ বাবুর, কিন্তু এই সময় নিজের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল রাখাটা ভীষন জরুরী।

★★★★

সকালে অরুন্ধতী বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসার পর এক কাণ্ড ঘটেছে। কলিং বেল বাজার পর দরজা খুলে আর্দালি দেখে মোটাসোটা কুমড়ো পটাশের মতো দেখতে একজন মধ্য পঞ্চাশের বয়স্কা বিধবা মহিলা হাতে একটা সুটকেস আর একটা বড় পুঁটুলি নিয়ে দাঁড়িয়ে। আগে কোনদিন উনাকে দেখেনি বলে কিছুক্ষন অবাক হয়ে মহিলাটির দিকে তাকিয়েছিল আর্দালি। "হাঁ করকে কেয়া দেখতা হ্যায়? তোমার সাহেবের মামী-শাশুড়ি হ্যায় হাম। জিনিসপত্রগুলো ভিতরে লে কে আও। অরুন্ধতী .. মা আমার .. কোথায় তুই?" ওই মহিলার মুখ থেকে এইরূপ অদ্ভুত বাংলা এবং হিন্দি মিশ্রণের বাক্যবাণ শুনে বিশেষ কিছুই অনুধাবন করতে পারলো না আর্দালি। তবে ওই মহিলার সঙ্গে আনা সুটকেস আর পুঁটুলি ভেতরে নিয়ে গেলো এবং সেইসঙ্গে অনিরুদ্ধর বাংলোতে পা রাখলেন লতিকা দেবী‌।

আর্দালি দুপুরের দিকে নিজের কোয়ার্টারে ফিরে যায়, আবার পরের দিন সকালে আসে। অরুন্ধতীকে আসতে দেখে সে "মেমসাহেব, কোই মেহমান আয়া হ্যায়, ম্যায় চালতা হুঁ.." এই বলে বিদায় নিলো সে।  বাড়িতে ঢুকে তার মামীকে দেখে যৎপরোনাস্তি অবাক হয়ে গেলো অরুন্ধতী। "আমার ছেলে এখন বৌমার কথায় উঠছে বসছে .. ছেলে আমার পর হয়ে গেছে .. ওই বাড়িতে আর টিকতে পারছি না রে .." লতিকা দেবীর মুখে পারিবারিক অশান্তির এইরূপ বিবরণ শুনে (যা অবশ্য কিছুটা নিজের চোখে দেখেও এসেছিল সে) অরুন্ধতী তার মামীকে আশ্বস্ত করলো - তিনি যতদিন চান এই বাড়িতে থাকতে পারেন।

ঘরে ঢুকে অরুন্ধতী বইগুলো টেবিলের উপর গুছিয়ে রেখে ল্যাপটপটা আলমারির মধ্যে ঢুকিয়ে রাখলো, পাছে তার স্বামী ওটা দেখে বকাবকি করে .. দু'দিন পরে না হয় ওটার কথা বলা যাবে। গোগোল কলেজ থেকে চার'টে নাগাদ ফিরে খেয়েদেয়ে খেলতে বেরিয়ে গেছে। অনিরুদ্ধ ফিরলো সন্ধ্যার কিছু আগেই‌। লতিকা দেবীকে হঠাৎ এই বাড়িতে দেখে এবং তার আসার কারণ সম্পর্কে শুনে অনিরুদ্ধ জানিয়ে দিলো - তিনি যতদিন খুশি থাকতে পারেন। তবে এই বাড়িতে থাকা চলবে না তার, তাকে থাকতে হবে অর্থাৎ রাত্রিবাস করতে হবে তাদের বাংলোর পেছনের আউট হাউসে। যদিও সেটাকে আউট হাউস না বলে সার্ভেন্ট'স কোয়ার্টার বলা যুক্তিযুক্ত। এই কোম্পানির প্রত্যেক উচ্চপদস্থ অফিসারের জন্য দুটি করে ঘর দেওয়া হয় বাড়িতে যারা কাজ করে তাদের জন্য। একটিতে আর্দালি থাকে, আরেকটি ফাঁকা পড়ে আছে .. ঠিক হলো সেখানেই লতিকা দেবী থাকবেন। তার স্বামীর এই সিদ্ধান্তে প্রথমে অরুন্ধতী প্রতিবাদ করলেও, লতিকা দেবী তার ভাগ্নিকে থামিয়ে এককথায় ব্যাপারটা মেনে নিলেন। এই মুহূর্তে তার একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই দরকার .. পরের কথা পরে ভাবা যাবে।

তার স্বামীর আচরণ সকালের থেকেও অনেক বেশি স্বাভাবিক এবং প্রাণবন্ত মনে হলো অরুন্ধতীর কাছে। ঠিক যেন সেই আগের মতো, যখন প্রথম প্রথম ওরা এই ক্যাম্পাসে এসেছিলো। তার স্বামী নিশ্চয়ই নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে .. এবার বোধহয় তাদের সুখের দিন ফিরতে চলেছে। সন্ধ্যেবেলা কফির পেয়ালা আর কিছু ভাজাভুজি ‌ নিয়ে স্টাডিরুমে প্রবেশ করলো অরুন্ধতী। অনিরুদ্ধ তার স্ত্রীকে ইশারায় ডেকে পাশে বসালো। তারপর গলাটা একটু ঝেড়ে নিয়ে নরম স্বরে বললো "এত ব্যস্ততার মধ্যে থাকি যে তোমাকে বলাই হয়নি। আগামীকাল অফিস ট্যুরে দিন পাঁচেকের জন্য মন্দারমণিতে যেতে হচ্ছে আমাকে .. দু'টো সেমিনার আছে। অফিশিয়াল কাগজপত্র আমি আমার ব্যাগে নিয়ে নিচ্ছি, জামা কাপড়গুলো তুমি একটু গুঝিয়ে দাও .. ও হ্যাঁ, নীল রঙের ব্লেজারটা বের করে রেখো। কালকে ওটাই পড়ে যাবো। কাল যেমন অফিসে বের হই, সেই টাইমেই বেরোবো, তারপর ওখান থেকে দুপুরের দিকে বাই কার রওনা হবো।"

এতক্ষণে সে বুঝতে পারলো তার স্বামীর হঠাৎ করে পাল্টে যাওয়া আচরণের আসল কারণ। "আর কে কে যাচ্ছে তোমার সঙ্গে?" গম্ভীরভাবে জিজ্ঞাসা করলো অরুন্ধতী।

- "অফিশিয়াল ট্যুর যখন, সহকর্মীরাই যাবে .. এটাই তো স্বাভাবিক।"

- "সেই সহকর্মীদের মধ্যে বৈশালী আছে নিশ্চয়ই?"

- "এইজন্য তোমাকে আজকাল কোনো কথা বলি না আমি। সবকিছুর মধ্যে একটা অন্য মানে খোঁজার চেষ্টা করো .. অর্ধশিক্ষিতা মহিলাদের এই এক প্রবলেম। বৈশালী যে পোস্টে কাজ করে তার জন্য ওখানে যাওয়াটা ওর সব থেকে জরুরি। যাগ্গে, তোমাকে এতো কৈফিয়ৎ দিতেই বা যাচ্ছি কেন আমি! পারলে জিনিসপত্রগুলো গুঝিয়ে দিও না পারলে ছেড়ে দাও আমি নিজেই গুছিয়ে নেবো।" স্ত্রীর কথায় তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠে তাকে এইরূপ বাক্যবাণে জর্জরিত করলো অনিরুদ্ধ।

"না না, ঠিক আছে .. আমারই ভুল .. যা বুঝিনা তা নিয়ে কথা বলাটাই অন্যায়। তুমি চিন্তা করো না, আমি সবকিছু গুছিয়ে দিচ্ছি।" কথাগুলো বলে নিজেকে সামলে নিয়ে স্টাডিরুম থেকে বেরিয়ে গেলো অরুন্ধতী। কতটা বদলে গিয়েছে তার স্বামী .. এই কথা ভাবতেই মুহুর্তের মধ্যে তার গভীর চোখদুটো জলে ভরে উঠলো। নিজের কাজ, নিজের জগৎ নিয়ে  এতটাই সে ব্যস্ত যে তার স্ত্রীর পড়াশোনার ব্যাপারে একটা কথাও জিজ্ঞাসা করলো না। আজ সকালে অরুন্ধতী যেখানে গেলো সেখানে কি হলো, আদৌ সে চান্স পেলো কিনা, কতো টাকা লাগলো .. এইসব ব্যাপারে কোনো আগ্রহই দেখালো না! যদিও হেডমাস্টারমশাই টাকা ফেরত নেবেন না .. একথা বলেছিলেন। কিন্তু সে মনে মনে ভেবেছিলো তার স্বামীর কাছ থেকে পুরো টাকাটা নিয়ে তাকে ফেরত দিয়ে দেবে।

অরুন্ধতী জানে .. সে যদি এই মুহুর্তে তার স্বামীকে গিয়ে টাকার কথা বলে, তাহলে মুখে হয়তো দু' কথা শোনাবে .. কিন্তু টাকাটা হয়তো অবশ্যই সে দিয়ে দিতো। কিন্তু যে ব্যক্তি তাকে ভালোবাসা তো দূরস্ত, তার প্রতি এত উদাসীন .. সেই ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা চেয়ে নিজেকে আর ছোটো করতে পারবে না। তাই সে ঠিক করলো তার পড়াশোনা এবং চাকরির বিষয় তার স্বামীর সঙ্গে ভবিষ্যতে আর কোনো আলোচনা করবে না।

রাতে খাওয়ার পর অনিরুদ্ধ যখন বললো "আমি স্টাডিরুমে যাচ্ছি, একটু কাজ আছে, কিছুক্ষণের মধ্যেই আসছি।" অভিমানী অরুন্ধতী তখন নিজের গলাটা যতটা সম্ভব স্বাভাবিক করে বললো "আজ আমি খুব টায়ার্ড, তুমি রাতে শুতে এলে তো আলো জ্বালাবে, তাতে আমার ডিস্টার্ব হবে। তুমি প্লিজ অন্যদিনের মতো আজ পাশের রুমটাতেই শুয়ে পড়ো।" স্ত্রীর মুখে এইরূপ উক্তিতে কিছু সময়ের জন্য কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলো অনিরুদ্ধ। তারপর চুপচাপ স্টাডিরুমে ঢুকে দরজা আটকে দিলো।

★★★★

জীবনে এই প্রথমবার তার তরফ থেকে নিজের স্বামীকে শয়নকক্ষে আসতে বারণ করার পর মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল অরুন্ধতীর। তারপর গত কয়েকদিন যাবত ঘটে যাওয়া ঘটনাবলী, বিশেষত আজ সন্ধ্যের কথাগুলো ভেবে নিজেকে সামলে নিয়ে নিজের মোবাইল থেকে তার ছেলের কলেজের প্রধান শিক্ষককে ফোন করলো অরুন্ধতী। কিন্তু ওপাশ থেকে ফোনটা ধরলেন না নিশীথ বাবু , কিছুক্ষণ ফোন বেজে যাওয়ার পর কেটে গেলো। তার ফোন হেডমাস্টারমশাই ধরলেন না এ কথা ভেবে প্রথমে কিছুটা অবাক হয়ে গেলো অরুন্ধতী। তারপর ভাবলো হয়তো কোনো কাজে ব্যস্ত আছেন তিনি।

ওদিকে নিশীথ বাবু একটি ডিজিটাল ভিডিও ডিস্কের উপর কিছু একটা লিখতে ব্যস্ত ছিলেন। ডিস্কের উপর লেখা সম্পন্ন করে সেটিকে একটি সুদৃশ্য কভারের মধ্যে ঢুকিয়ে খাটের পাশের টেবিলটার উপর রেখে দিয়ে মনে মনে ভাবলেন - 'এটাই এবার অনুঘটকের কাজ করবে, তার আগে অবশ্য অগ্নিতে কিছুটা ঘৃতাহুতির প্রয়োজন।' তারপর নিজের ফোনটা নিয়ে অরুন্ধতীর মোবাইলে কল করলেন।

- "ফোন করেছিলে? ডিনার করে পরীক্ষার কয়েকটা খাতা দেখছিলাম, তাই ধরতে পারিনি .. বলো।"

- "না মানে, দুঃখিত আপনাকে এত রাতে ডিস্টার্ব করার জন্য। আসলে বাড়িতে আসার পর থেকে আপনার সঙ্গে আর যোগাযোগ করা হয়নি তো, তাই ফোন করেছিলাম। আজ আপনি আমার জন্য যা যা করলেন তার জন্য আপনার কাছে চিরদিন ঋণী হয়ে থাকবো। শুধু একটু দেখবেন যাতে চাকরিটা আমার হয়ে যায়। খুব দরকার নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার।"

- "তোমাকে আজ সকালেই বলেছি না 'সরি' এই শব্দটা বন্ধুত্বের মধ্যে একেবারেই অবাঞ্ছিত। আসলে আমার বাকি দুই পার্টনার নিজেদের কাজ নিয়ে এখন একটু ব্যাস্ত আছে। ওরা ফ্রি হলেই আমি তোমার সঙ্গে ওদের একটা মিটিং ফিক্স করিয়ে দেবো। চাকরি তুমি অবশ্যই পাবে .. এটা নিয়ে চিন্তা করো না। মেয়েদের নিজের পায়ে দাঁড়ানো যে কতটা জরুরী সেটা আমি জানি। ভালো কথা, তুমি এত রাতে ফোনে কথা বলছো! তোমার স্বামী কি ঘুমিয়ে পড়েছে?"

- "না মানে, আগামীকাল উনি একটা অফিস ট্যুরে বাইরে যাচ্ছেন কিছুদিনের জন্য। তাই এখানকার অফিসের কিছু জমে থাকা কাজ শেষ করে নিচ্ছেন .. উনি পাশের ঘরে আছেন।"

কথাটা শুনে মনে মনে উৎফুল্ল হয়ে উঠলেন তিনি। অনিরুদ্ধর সঙ্গিনী হিসেবে বৈশালীর কালকে অফিস ট্যুরে যাওয়াকে কেন্দ্র করেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়েছে এবং তার ফলশ্রুতি হিসেবে আলাদা ঘরে শয়নের ব্যবস্থা - এটা বুঝতে অভিজ্ঞ এবং ধূর্ত নিশীথ বাবুর খুব খুব বেশি অসুবিধা হলো না। অরুন্ধতী আর অনিরুদ্ধর কনজুগল লাইফ একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে .. এই ব্যাপারে তিনি ১০০% নিশ্চিত হয়ে বললেন "তাই বুঝি? উনার অফিসের এত কাজ জমে থাকে যে এরকম একজন সুন্দরী যুবতী ‌ স্ত্রীকে ‌উপোসী রেখে একা একা শুতে যান। কিছু মনে করো না অরুন্ধতী, হয়তো আমার কথাটা তোমার খারাপ লাগলো কিন্তু আমি সোজা কথা সোজা ভাবেই বলতে পছন্দ করি।"

এই ধরনের শব্দ প্রয়োগ তাকে কেউ কখনো করেনি। বিশেষ করে একজন পর পুরুষের মুখে "উপোসী" শব্দটি শুনে লজ্জায় রাঙা হয়ে গেলো অরুন্ধতী। আমতা আমতা করে বললো "না না সেরকম কিছু নয়, উনি আসলে ব্যস্ত থাকেন তো, তাই .."

অরুন্ধতীকে তার কথা শেষ করতে না দিয়েই পুনরায় নিশীথ বাবু বলে উঠলেন "বুঝেছি বুঝেছি, ব্যস্ততাটা কাজের নয় .. অন্য কিছুর উপর আসক্তির জন্য। না হলে এরকম কেউ করে? তোমার স্বামীর জায়গায় আমি থাকলে তো একটা রাতের জন্যও তোমাকে নিস্তার দিতাম না। শুধু রাত কেনো .. সারাদিন আদরে আদরে ভরিয়ে রাখতাম তোমাকে।"

ছিঃ এসব কি বলছে তার সন্তানের কলেজের প্রধান শিক্ষক .. এগুলো যে শোনাও পাপ - আপাতভাবে অরুন্ধতীর মন সাময়িক বাধা প্রদানের চেষ্টা করলেও, কথাগুলো তার শরীরের মধ্যে কোথাও একটা নিষিদ্ধ শিহরন সৃষ্টি করতে লাগলো। তার শরীরের সবথেকে সংবেদনশীল অঙ্গ স্তনবৃন্ত দুটি উত্তেজনায় শক্ত হয়ে উঠলো, ‌ থর থর করে কেঁপে উঠতে লাগলো তার তলপেট, অরুন্ধতী অনুভব করলো তার দুই পায়ের মাঝে একটা অদ্ভুত শিরশিরানি .. মুহুর্তের মধ্যে ভিজে উঠলো তার যৌনাঙ্গ। কিন্তু এগুলো যে কিছুতেই প্রকাশ করা যাবে না ফোনের অপর প্রান্তের মানুষটির কাছে। নিজেকে অতি কষ্টে সংযত করে সে "যাহ্, আপনার মুখে কিছুই আটকায় না, আমি এখন রাখি, অনেক রাত হলো।" কাঁপা কাঁপা কন্ঠে এইটুকু বলে ফোনটা কেটে দিলো অরুন্ধতী।

★★★★

কথায় বলে 'সুন্দর মুখের জয় সর্বত্র' .. তাই প্রভাব, প্রতিপত্তি, পদমর্যাদা .. এই সবকিছু থাকা সত্ত্বেও অফিসে ধীরে ধীরে মিস্টার কামরাজের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠছিল অনিরুদ্ধ। তবে চারিত্রিক দিক দিয়ে সুনামের থেকে দুর্নামটাই বেশি ছিল অত্যন্ত নিষ্ঠুর, চরিত্রহীন এবং বদমেজাজি এই কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার মিস্টার কামরাজের। ক্যাম্পাসের মধ্যে বেশকিছু অধঃস্তন কর্মচারীর স্ত্রী এবং বাইরে কতো মহিলার যে সর্বনাশ করেছে এই মানুষটি তা গুনে শেষ করা যাবে না। তবে উনাকে মানুষ না বলে বনমানুষ বলাটাই সমীচীন। অল্প বয়সে অ্যালোপেসিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ার ফলে মাথার বেশিরভাগ চুল ঝরে গিয়ে টাক পড়ে গেলেও সারা দেহে চুলের আধিক্য এতটাই বেশি যে দেখে মনে হতে পারে এই ব্যক্তির শরীরে যেনো চুলের চাষ হয়। গায়ের রঙ মিশকালো, গাট্টাগোট্টা চেহারার অধিকারী, সারা মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, বাঁ'দিকের চোখের ভুরু'র কিছু অংশ কাটা, অত্যধিক ড্রাগ সেবনের ফলে রক্তবর্ণ চোখদুটো এতটাই ঢুলুঢুলু যে দেখে মনে হয় এইমাত্র ঘুম থেকে উঠে এসেছে .. এইরূপ কদাকার, কুৎসিত দর্শন ব্যক্তি লোকজনের, বিশেষত শিশুদের ভয়ের কারণ ছিলো। ক্যাম্পাসের অন্যান্য অফিসারদের স্ত্রীর মতো অরুন্ধতীও তার ছেলে গোগোল খেতে না চাইলে বা খাওয়া নিয়ে বায়না করলে "ওই যে কামরাজ আঙ্কেল আসছে. " এই বলে ভয় দেখাতো।

যে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অংশীদার এই কামরাজ সেটি লোকসমাজে 'নারীকল্যাণ সমিতি' বলে পরিচিত হলেও, এই সংস্থার আড়ালে মধুচক্র এবং নারী পাচারের মতো ঘৃণ্য কাজ হয়। তার পরম বন্ধু এবং সকল প্রকার দুষ্কর্মের দোসর নিশীথ বটব্যাল ছাড়াও আরো একজন পার্টনার আছে এই সংস্থার। তিনি এই এলাকার এমএলএ মানিক সামন্ত। এই তিন ব্যক্তি বিশেষত মানিকবাবু এতটাই প্রভাবশালী যে লাঞ্ছিতা, অত্যাচারিতা মহিলারা প্রতিবাদটুকু করতে পর্যন্ত ভয় পায় আর যারা সাহস সঞ্চয় করে এই সমস্ত ঘৃণ্য কাজের প্রতিবাদ করে থানা পুলিশের দ্বারস্থ হয়, তারা হঠাৎ করেই হারিয়ে যায় সমাজের বুক থেকে।

বছর পাঁচেক আগে এই কোম্পানিতে জয়েন করার কয়েকদিনের মধ্যেই তার স্ত্রী এবং পুত্রকে এখানে নিয়ে আসে অনিরুদ্ধ। সেই বছর হোলির দিন অরুন্ধতীকে প্রথম দেখেন বছর পঞ্চাশের সাউথ ইন্ডিয়ান অথচ অবলীলায় বাংলা বলতে পারা মিস্টার কামরাজ। তখন অরুন্ধতীর বয়স আরো অল্প, নতুন জায়গায় এসে হোলিতে আনন্দ করার মনোবাসনা আটকাতে পারেনি সে। ওইদিন একটি সাদা রঙের সুতির শাড়ি এবং সাদা অর্ডিনারি সুতির ব্লাউজ পরেছিল অরুন্ধতী।

পরমাসুন্দরী না হলেও কাঁধের নিচ পর্যন্ত লম্বা ঘন কালো চুল, তার গভীর কালো মণিযুক্ত বড় বড় চোখ দুটির দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখ ফিরিয়ে নেওয়া দুঃসাধ্য ব্যাপার। ঈষৎ বোঁচা নাক এবং পুরু ঠোঁট সমগ্র মুখমন্ডলের মধ্যে কোথাও যেনো একটি আদুরে অথচ কামুকী ভাবের সৃষ্টি করেছে। হাসলে গালে পড়া দুটো টোল অরুন্ধতীর মুখের ইউএসপি বলা চলে। এ হেন গুরু নিতম্বিনী এবং ভারী বক্ষযুগলের অধিকারিণী অরুন্ধতীর রূপ এবং যৌবন দেখে নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারেনি কামরাজ। মুখে লেগে থাকা আবির পরিষ্কার করার জন্য অরুন্ধতী যখন ক্যাম্পাসের মধ্যেই এম্প্লয়িস ক্লাব সংলগ্ন ওয়াশরুমের বেসিনের সামনে দাঁড়িয়ে নিভৃতে নিজের মুখ ধুচ্ছিলো, ঠিক তখনই পিছন থেকে সন্তর্পনে এসে নিজের হাতের দুটো বিশালাকার থাবা দিয়ে অরুন্ধতীর দুটো স্তন আঁকড়ে ধরেছিলো মিস্টার কামরাজ। তারপর প্রবল বেগে মর্দন করতে শুরু করেছিল। প্রথমে শঙ্কিত এবং হতচকিত হয়ে কি করবে বুঝে উঠতে পারছিল না অরুন্ধতী। তারপর দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে চকিতে ঘুরে গিয়ে সপাটে একটি চড় কষিয়েছিলো তার সম্মানহানি করতে চাওয়া আগুন্তুকের গালে।

দু'জনের চোখাচোখি হতেই অরুন্ধতী তার স্বামীর অফিসের জোনাল ম্যানেজারকে চিনতে পেরে অতিমাত্রায় ভয় পেয়ে গিয়ে কয়েক পা পিছিয়ে এসে কাঁপা গলায় বলছিলো "স্যার আমি বুঝতে পারিনি .. কিন্তু আপনি এখানে এভাবে?" এরকম পরিস্থিতিতে জীবনে পড়েনি অর্থাৎ মহিলাদের হাতে কোনোদিন থাপ্পর খাওয়া তো দূরস্ত, একথা কল্পনাতেও আনেনি কামরাজ। তাই প্রথমে কয়েক মুহুর্ত কিংকর্তব্যবিমূঢ়ের মতো দাঁড়িয়েছিল সে। তারপর অরুন্ধতীর কথায় মুহূর্তের মধ্যে নিজেকে সামলে নিয়ে শান্ত গলায় বললো "ইট'স ওকে .. ইউ হ্যাভ নো রিসন টু বি সরি ম্যাডাম .. আসলে দোষটা আমারই .. আপনাকে পেছন থেকে ঠিক আমার ওয়াইফের মতো লাগছিলো আর কোইন্সিডেন্টলি আপনারা আজ দু'জনে একই রঙের শাড়ি পরেছেন। তাই এই হারকাত করে ফেলেছি। এর জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী .. আশা করবো এই ব্যাপারটা আমাদের দুজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।"

মিস্টার কামরাজের কথায় অনেকটা ধাতস্থ হয়েছিল সে এবং এই ব্যাপারটা শুধুমাত্র তাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে - এই আশ্বাস দিয়ে দ্রুত পায়ে ওখান থেকে বিদায় নিয়েছিলো অরুন্ধতী। মুখে যাই বলুক তার অধঃস্তন সহকর্মী অনিরুদ্ধর স্ত্রীর থাপ্পড়টা তার গালে নয় একদম অন্তরাত্মায় গিয়ে আঘাত করেছিল। এমনিতেই অনিরুদ্ধকে সহ্য করতে পারে না কামরাজ। তাকে উচিৎ শিক্ষা দেওয়ার জন্য এবং ওর স্ত্রীকে তার জীবনে এখনো পর্যন্ত দেখা সবচেয়ে আকর্ষনীয়া মনে হওয়ার জন্য - সেই দিন থেকেই মনে মনে ছক কষছিলেন অরুন্ধতীকে ভোগ করার। তারপর যেদিন তার বন্ধুর মুখে কলেজের অডিটোরিয়ামের সেই রাতের কথা শুনলেন মিস্টার কামরাজ, সেদিন থেকে ব্যাপারটা তার কাছে আরো সহজ হয়ে গেলো .. কারণ দুই শিকারীর লক্ষ্য একজনের উপরেই নিবন্ধ।

অফিসে যে কজন মহিলা কর্মচারী কাজ করে, তাদের মধ্যে অনেককেই ছলে, বলে, কৌশলে, ভয় দেখিয়ে, চাপ সৃষ্টি করে ভোগ করেছে এই কামরাজ। কিন্তু দুধের স্বাদ কি ঘোলে মেটে? অরুন্ধতীকে কাছে পাওয়ার আগ্রাসনটা যেন তার প্রতিদিন উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছিলো। কোম্পানিতে এতদিন বিভিন্ন ক্লারিক্যাল এবং স্টেনোগ্রাফারের পোস্টে বেশকিছু মহিলা কর্মচারী কাজ করলেও, মিস্টার কামরাজ নিজের পার্সোনাল সেক্রেটারির পদে এই প্রথম কোনো মেয়ে অ্যাপয়েন্ট করার কথা ভেবেছিলেন।

বৈশালীকে প্রথম দিন দেখেই মাথা ঘুরে গিয়েছিল কামরাজের। সুন্দরী, শিক্ষিতা, স্মার্ট এবং এইরকম একজন এফিসিয়েন্ট সেক্রেটারি তো তিনি চাইছিলেন। বৈশালীর সঙ্গে কথা বলে এবং তার চালচলন দেখে কয়েকদিনের মধ্যেই বুঝতে পেরেছিলেন এই মেয়েটি অসম্ভব অর্থলোভী। অর্থই হলো সকল প্রকার অনর্থের মূল। তাই এই মেয়েকে নিজের শয্যাসঙ্গিনী করতে বেশিদিন সময় লাগবে না তার। কিন্তু এই অফিসে বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর যখন তার কানে অনিরুদ্ধ এবং বৈশালীর সম্পর্কে গুঞ্জনের কথা এলো। তখন তিনি এটা আটকানোর বদলে বৈশালীকে অতিমাত্রায় উৎসাহিত করতে লাগলেন সম্পর্কটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। এর ফলে তিনি এক ঢিলে দুই পাখি মারলেন .. প্রথমটা অবশ্যই অফিসে সবার চোখের মণি হয়ে ওঠা অনিরুদ্ধকে পরকীয়া প্রেমের দোহাই দিয়ে হেয় প্রতিপন্ন করা। আর দ্বিতীয়টা এই পরকীয়া সম্পর্কের উপর নির্ভর করেই তার শিকারকে ভোগ করার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করা। বলাই বাহুল্য শুধুমাত্র অনিরুদ্ধ এবং বৈশালীর জন্য মন্দারমনির ট্যুরটাও কামরাজের অনুপ্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয়ে।

কৈশোরকাল থেকেই ঐশ্বর্য লাভের বাসনা বৈশালীকে চরিত্রহীনা করে তুলেছিল। তার রূপ যৌবনের আগুনে ঝাঁপ দিয়ে কত পুরুষের যে পিপীলিকার মতো অবস্থা হয়েছিল তা হয়তো গুনে শেষ করা যাবে না। এ হেন পুরুষঘেঁষা বৈশালীর বিবাহ বছর তিনেক আগে হয়েছিল ঠিকই এবং তার স্বামীর নাম শুভঙ্কর এটাও ঠিক। কিন্তু তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন খারাপ এবং গয়নার মূল্য হিসেবে তার কাছ থেকে অর্থের দাবি করছে .. এইসব কথা সর্বৈব মিথ্যা। আসলে বৈশালীর স্বভাবটাই হলো তার পছন্দসই পুরুষের (অবশ্যই তাকে অর্থবান হতে হবে) সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে একটু একটু করে তার থেকে সবকিছু নিঙড়ে বের করে নেওয়া। অনিরুদ্ধর সঙ্গে তার সম্পর্কটাও এই লেনদেনের অভিসন্ধির বাইরে নয়।

তবে বৈশালীর এই অভিসন্ধির কথা জেনেও তাকে প্রশ্রয় দেওয়ার পিছনে দুটো শর্ত দিয়েছিলেন মিস্টার কামরাজ। অনিরুদ্ধর সঙ্গে তার সম্পর্কের খুঁটিনাটি এবং এর ফলে ওদের সাংসারিক প্রভাব .. সবকিছু তাকে জানাতে হবে আর তার সঙ্গে যেটা না বললেই নয় সেটা হলো নারীমাংস লোভী কামরাজ যখন ইচ্ছা তখন তার নতুন পার্সোনাল সেক্রেটারিকে ভোগ করতে পারবে, অবশ্যই অর্থের বিনিময়ে। এর কোনোটাতেই অসম্মত হওয়ার কারণ বৈশালীর ছিল না।

সপ্তাহ খানেক আগে একটি রবিবারে জনমানবহীন অফিসে অতিমাত্রায় উত্তেজনার বশবর্তী হয়ে কোথায় যাওয়াটা নিরাপদ সেটা বুঝতে না পেরে অনিরুদ্ধ তার সঙ্গিনী বৈশালীকে নিয়ে খোদ জেনারেল ম্যানেজারের কেবিনের লাগোয়া এন্টিচেম্বারে যৌনক্রিয়ায় মত্ত হয়েছিল। কিন্তু দু'জনের কেউ জানত না ওটা মিস্টার কামরাজের দুষ্কর্মের একটি গোপন স্থান। ওই ঘরে জোরালো অডিও স্পিকার লাগানো লুকোনো সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে দু'জনের অজান্তে তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও রেকর্ড হয়ে যায়। দিন কয়েক পরে সিসিটিভিতে রেকর্ড হওয়া অপ্রাসঙ্গিক ভিডিও ডিলিট করতে গিয়ে এই ভিডিওটি নজরে আসে তার। চোরের উপর বাটপারি করার স্বভাব মিস্টার কামরাজের বহুদিনের। তাই তৎক্ষণাৎ ভিডিওটির একটি ডিভিডি বানিয়ে নিয়েছিলেন তিনি ভবিষ্যতের জন্য

(ক্রমশ)

ভালো লাগলে লাইক এবং রেপু দিয়ে উৎসাহিত করবেন

[Image: Animation-resize-gif-f3b601eb23d95beeb4e...911ac0.gif]


Like Reply


Messages In This Thread
RE: গোলকধাঁধায় গোগোল (চলছে) - by Bumba_1 - 22-04-2022, 09:15 PM



Users browsing this thread: 62 Guest(s)