30-04-2022, 02:30 PM
কবিতা বেরিয়ে গেলো।
-রতন।
-বলো।
-শেষ খবর আমাকে দিলিনা।
-তোমাকে মাসি কিছু বলেনি।
-না।
-তোমাকে ভাবতে হবেনা। তুমি চাইলেও জানতে পারবেনা। সব পথ বন্ধ করে দিয়েছি।
-সেটা জানতাম।
-ব্যাস তাহলে জানতে চাইছো কেনো। আমাদের কাজ আমাদের করতে দাও। তোমার কাজ তুমি করো।
-তোদের নিয়ে আমারও চিন্তা হয়।
-হোক। তবু জানতে চাইবেনা।
-কিগো মাসি।
মাসির দিকে তাকালাম। মাসি মাথা নীচু করে আছে। আস্তে করে বললো। রতনতো তোর প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে।
-মাসি তোমার রংয়ের লোক রেডি করে দিয়েছি। নীচে সব চলে এসেছে। বুঝিয়ে দাও।
-দাঁড়া অফিসে একটা ফোন করি টাকা আনাই।
-এই লোকটা মহা ঝামেলা কারক লোক তো।
মাসি হাসছে।
-তোরা কি ভেবেছিস বলতো।
-বসকে গিয়ে বলবে। আমাদের কিছু বলবেনা।
-আমার রংয়ের দরকার নেই।
-তুমি বললে হবেনা ওখান থেকে হুকুম এলে বন্ধ হবে।
কবিতা চা আর রতনের জন্য কচুরী নিয়ে এলো। রতন কবিতার হাত থেকে প্লেটটা ছিনিয়ে নিয়ে দুবারে সব কচুরী খেয়ে ঢক ঢক করে একগ্লাস জল খেলো।
-বুঝলে মাসি সকাল থেকে কুত্তার মতো ঘুরেছি। জোগাড় করার জন্য। কেউ দেয়না। তারপর পেলাম।
-কে দিলো।
-বেনিয়া বেটা।
বাইরে গাড়ির হর্নের আওয়াজ পেলাম। বুঝলাম দেবারা চলে এসেছে। বারান্দায় গিয়ে উঁকি মারলাম। দেবা নিচ থেকে চেঁচিয়ে উঠলো কিরে রেডি।
আমি ইশারায় ওপরে আসতে বললাম।
-কেরে ওরা এলো।
-হ্যাঁ।
প্যান্ট গেঞ্জিটা নিয়ে বাথরুমে চলে গেলাম। টাওয়েলটা নিয়ে ভালো করে গাহাত-পা মুছে ড্রেস করে বেড়িয়ে এলাম। দেখলাম ওরা জমপেশ করে গল্প করছে। প্রত্যেকেই আজ বেশ দারুণ দারুণ শালোয়ার কামিজ পরেছে। সাজেনি কিন্তু সেজেছে। ভীষণ মার্জিত লাগছে ওদেরকে। কবিতা এক রাউন্ড চা এনে দিয়েছে।
-কখন উঠলি।
-দশটা।
-তাও ঠেলা খেয়ে উঠেছে। টিনা বললো।
-রতনের সঙ্গে পরিচয় হলো।
-তোকে আর দয়া করে পরিচয় করাতে হবেনা।
হাসলাম।
-বেরোবি তো।
-হ্যাঁ। তোদের গাড়িতে জায়গা আছে।
-কিসের জন্য বল।
-দুটো জিনিষ উঠবে।
মিলি ফিক করে হাসলো।
-হাসলে কেনো।
-তোমার কথা শুনে।
-দেখছো মাসি বিনয়ের অবতার। টিনা বললো।
-কবিতা ওদের একটু মিষ্টি এনে দে।
-বাক্স থেকে খুলে দেবো।
-দে।
কবিতা বেরিয়ে গেলো।
-কিসের মিষ্টি মাসি।
-মেয়ের জন্য পাঠাচ্ছে। আবদার করে সকালে ফোন করে বলেছে।
-মাসি তোমার মেয়ের কাছে ওটা পৌঁছবেনা।
-না বাবা সময় থাকলে তোদের জন্যও নিয়ে আসতাম।
-কেনো নিয়ে আসোনি। এই প্রথমবার পরের বার হলে গন্ডগোল হয়ে যাবে।
-আচ্ছা আর ভুল হবেনা।
নির্মাল্য ফিক ফিক করে হাসছে।
মাসি নির্মাল্যের দিকে তাকিয়ে বললো। তোদের মধ্যে ও খুব শান্ত।
-টিনা চেঁচিয়ে উঠলো। মিচকে পোরা শয়তান তুমি জানোনা। অনিদা আছে বলে।
-কেনো অনিকে ভয় পায়।
-ভয় পায়না। অনিদা মাঝে মাঝে টুক টুক করে এমন দেয় ওর প্রেসটিজ……।
-শুধু আমার না তোদের নেই। নির্মাল্য চেঁচিয়ে উঠলো।
মাসি হাসছে।
কবিতা মিষ্টি আনলো। নলেন গুড়ের কাঁচা সন্দেশ, রসোগোল্লা।
-দেবা মুখে তুলেই বললো, ও মাসি তুমি এসব কোথা থেকে পাও বলোতো। টেস্টই আলাদা।
-তোদের একদিন পেট ভরে খাওয়াবো।
-দাঁড়াও অনির ওখান থেকে ঘুরে আসি। তারপর তোমায় পাকরাও করবো।
-অনিদা ওগুলো তুলে দিই।
-রতন পেছনটা খোলা আছে। ঢুকিয়ে দাও। দেবাশিষ বললো।
-আমি যাবো। নির্মাল্য বললো।
-না দাদা তোমরা খাও আমি তুলে দিচ্ছি।
রতন বেরিয়ে গেলো।
-কবিতা জলের গ্লাস নিয়ে এলো।
খাওয়া পর্ব শেষ আমি মাসিকে প্রণাম করলাম। ওরাও সকলে আমার দেখা দেখি মাসিকে প্রণাম করলো। মাসির চোখ দুটো ছলছলে হয়ে গেলো। বেরিয়ে এলাম। আসার সময় ছগনলালকে সব বলে এলাম।
দেবাশিষ আজ ড্রাইভ করছে। সামনের সিটে নির্মাল্য। আমরা চারজন মাঝের সিটে। আমি একদিকের জানলার ধারে অদিতি আর একদিকের জানলার ধারে। মাঝে টিনা মিলি। টিনা আমার গা ঘেঁষে বসেছে। দ্বিতীয় হুগলী সেতু পেরিয়ে কোনা বাইপাসে উঠতে দেবাশিষ প্রথম কথা বললো।
-অনি অনেকদিন পর লং ড্রইভে বেরিয়েছি।
-কেনো।
-সময় কোথায় বলতো। আমার সময় হলে অদিতির হয়না অদিতির হলে আমার হয়না।
-আজকে হলো কি করে।
-এটা একটা দামি কথা বলেছিস। কেনো জানিনা কালকে টিনার মুখ থেকে সব শোনার পর মনটা কেমন হয়ে গেলো। এসপার নয় ওসপার। চলো বেড়িয়ে পরি। বেরিয়ে পরলাম।
-এই মেন্টালিটি রাখলে তুই কোনোদিন হারবিনা।
-দারুন বললি কথাটা।
-একটু ভেবে দেখ। তুই যখন কলেজে অদিতিকে প্রথম ভালোবাসতে চাইলি তখন তোর মধ্যে এই রোলটা প্লে করেছিলো।
-একদম ঠিক।
আমি ভিউইংগ্লাস দিয়ে দেবাশিষের চোখ লক্ষ্য করছি। ওর উত্তেজিত চোখ দুটো সামনের রাস্তার ওপর।
-বিশ্বাস কর। তোর সঙ্গে দেখা হওয়ার পর সব কেমন যেন ওলট পালট হয়ে যাচ্ছে।
-কেনো।
-তোকে বলতে দ্বিধা নেই। অদিতির সঙ্গে আমার একটা মেনটাল ব্লক তৈরি হয়ে গেছিলো। দূরত্বও বেড়ে যাচ্ছিল। বেশ কয়েকদিন অদিতির সঙ্গে কথা বন্ধ করে দিলাম। তোর আর মিত্রার কথা ভাবলাম। পথ পেয়ে গেলাম। অদিতি তোর পাশে। জিজ্ঞাসা কর আমি একবর্ণও মিথ্যে বলছিনা। আমি মিলির কাছে কনফেস করেছি। টিনার কাছে কনফেস করেছি। সত্যি কথা বলতে কি নির্মাল্য আমাদের থেকে তিন বছরের জুনিয়র। ওর কাছেও কনফেস করেছি।
-এতে তুই উপকার পেয়েছিস।
-অফকোর্স।
-কেনো।
-সেইটা সার্চ করে দেখিনি।
-জানিস দেবা আমরা প্রত্যেকে আশ্রয় চাই। মা তার সন্তানের কাছে আশ্রয় চায়। একটা শিশু তার মার কোলে আশ্রয় চায়। প্রমিক প্রেমিকার কাছে আশ্রয় চায়। এরকম উদাহরণ দিতে গেলে তোকে অসংখ্য উদাহরণ দিতে পারি। তুই অদিতিকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিস। অদিতি তোকে ভালোবেসে বিয়ে করেছে। এটা সত্য। মিথ্যে নয়। কিন্তু ভালোবাসার পরিণতি কি ? শরীর না মন। এটা কখনো ভেবে দেখেছিস।
আদিতি জানলা থেকে মুখ সরিয়ে নিয়ে আমার মুখের দিকে তাকালো। কালো কাঁচে ঢাকা চশমায় ওর চোখ ভালো করে দেখতে পাচ্ছিনা। তবে এটা ঠিক ও আমার এই কথায় দারুণ সক্ড। টিনা আমার দিকে ফিরে তাকিয়ে আছে। মিলি আমার কথা শুনে হাঁ করে রয়েছে।
-সত্যি বলছি অনি কখনো ভাবিনি।
-ভেবে দেখিস উত্তর পাবি।
-তুই বল।
-না। এটা সম্পূর্ণ তোর ব্যক্তিগত। তুই যে উত্তরটা পাবি সেটা তোর ভালোবাসার জনের সঙ্গে শেয়ার করিস, দেখবি মিলে যাবে।
-আমি অদিতিকে বলেছি অনি মিত্রার সম্পর্কটা দেখো কত জটিল। তবু অনি সব হাসি মুখে মেনে নিচ্ছে। কেনো? শুধু অর্থের জন্য। তাই যদি হয় মিত্রাকে বাঁচানোর জন্য ও আমাদের কাছে এ্যাডের জন্য ছুটে এসেছে কেনো। সেকেন্ডলি মিত্রার শরীর খারাপ। সেই দিন আমি বড় ধাক্কাটা পেলাম তোর কাছ থেকে। যে মিত্রাকে তুই এত ভালোবাসিস তার কাছ থেকে অতবড়ো আঘাত পেয়েও তুই বুক দিয়ে তাকে আগলে রেখেছিস। সেইদিন তোর বাড়ি থেকে ফিরে এসে আমি অদিতি সারারাত ঘুমোতে পারিনি। তোর কথা ভেবে।
-কালকেরটা বলো। অদিতি বললো।
-সত্যি দামিনী মাসি।
-দেবাশিষদা ওই ভদ্রমহিলাকে দেখলে কখনো মনে হয় উনি ওই এলাকায় বসবাস করেন।
-বসবাস কি বলছো টিনা। কাল রাতে বাড়ি ফিরে অদিতির সামনে আমার কয়েকজন পরিচিত, তথাকথিত মাস্তানকে ফোন করেছিলাম। তারা আমার হাতে পায়ে ধরে দামিনীমাসির সঙ্গে পরিচয় করার জন্য। অদিতিকে জিজ্ঞাসা করো আমি ভয়েজ অন করে ওকে শুনিয়েছি। জানিস অনি তোর জন্য এটাও আমাদের বড় প্রাপ্তি।
-কেনো।
-নাহলে একটা ভুলকে চিরদিন সত্য বলে মেনে নিতাম।
-এরকম কতো ভুলকে আমরা সত্য বলে মানছি প্রত্যেকদিন প্রতিটি মুহূর্ত তার খবর রাখিস।
-তোকে অনেকদিন পর পেয়েছি। তোর পাশে থেকে এই বোধগুলো তৈরি করার চেষ্টা করবো।
-খুব শক্ত। পারবি ?
-পারতেই হবে।
-আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলাম দামিনী মাসি আমার মাথায় শিয়রে বসে আমার মাথায় হাত বোলাচ্ছে। কবিতা পায়ের কাছে স্থানুর মতো বসে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
-তোকে ডাকে নি।
-না।
-স্ট্রেঞ্জ।
তারপর সমস্ত ঘটনা একটুও এডিট না করে ওদের বললাম।
টিনা রুমাল দিয়ে চোখ মুছলো। মিলির চোখ দুটো কেমন ভারি ভারি। অদিতি চোখ থেকে স্নানগ্লাসটা খুলে ব্যাগে রাখলো।
সবাই নিস্তব্ধ। ভিউইংগ্লাস দিয়ে দেখলাম। দেবাশিষের চোখে পলক পরছেনা। স্থির চোখদুটো রাস্তার ওপর স্থির হয়ে আছে।