Thread Rating:
  • 63 Vote(s) - 2.92 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়)
মিত্রা একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো। আমি শুনতে পেলাম। আমি চুপচাপ। মিত্রাও চুপচাপ। ও কোনো কথা বলছেনা।
-কিরে।
-দূর তোর সঙ্গে আর কথা বলতে ভালো লাগছেনা।
-আবার কাঁদে।
-কেনো তুই জিজ্ঞাসা করলি। সকাল থেকে কতো ভালো ছিলাম।
-ঠিক আছে আমার অন্যায় হয়েছে। আর কখনো জিজ্ঞাসা করবোনা।
-সিডি আর ছবি তোর কাছে।
-হ্যাঁ।
-সিডিটা ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে দে। ছবিগুলো পুরিয়ে ফেল। ওগুলো দেখে তোর মন খারাপ হয়নি।
-হয়েছে। মন খারাপের থেকে বেশি রাগ হয়েছিলো। তাই ভদ্রলোকের গায়ে হাত তুলেছিলাম।
-ও কবে ভদ্রলোক ছিলো। এটা আমার জীবনের একটা ক্ষত।
-বুঝি। আমার কাজ এখনো শেষ হয়নি।
-কি করবি।
-ও যাতে আত্মহত্যা করে তার ব্যবস্থা করবো।
-পারবি।
-তোকে কথা দিলাম।
-দাদা বলছিলো তনু তোকে মেইল করে সব জানিয়েছে।
-হ্যাঁ।
-সেই তনু যে লন্ডনে আছে।
-হ্যাঁ। ও এখন বিবিসিতে রয়েছে।
-তোকে খুব ভালোবাসে না।
-হ্যাঁ।
-আমাকে ছেড়ে যাসনা।
-আবার পাগলামো করে।
-বলনা।
-কালকে যাবোনা।
-আচ্ছা আচ্ছা আর বলবো না।
-এবার ঘুমিয়ে পর।
-আর একটু কথা বলি।
-না। কাল সকালে অনেক কাজ আছে।
-তোর তো কোনো কাজ নেই।
-আছে।
-কি কাজ আছে।
-বাড়ি ঘর দোর রং করার ব্যবস্থা করেছি। বুঝিয়ে দিতে হবে।
-কেনো রে।
-বিয়ে করবো।
-কাকে।
-জানতে হবেনা।
-আমি তাহলে কি করবো।
-তুইও থাকবি।
-আমি কোথায় থাকবো।
-দুজনে দুপাশে শুবি।
-পিট্টি বুঝেছিস। পেটের মধ্যে এমন গুঁতো মারবোনা।
-তাহলে জিজ্ঞাসা করলি কেনো।
-বেশ করেছি। বলেছিনা আমি মালকিন।
-মালকিনের কাছে বিয়ের ব্যাপার বলা যায়। নেমন্তন্নের কার্ড দেওয়া যায়।
-তুই কাল আয় তোর ফড়ফড়ানি বার করছি।
-এবার ঘুমো।
-ঘুম আসেনা যে।
-চেষ্টা কর। ওষুধ খেয়েছিস।
-এই যা ভুলে গেছি। সকালেও খাওয়া হয়নি।
-কেমন মেয়ে তুই দেখ। তুই নিজে মরবি আমাকেও মারবি।
-সরি সরি এখুনি খেয়ে নিচ্ছি।
-যা শুয়ে পর আর বক বক করতে হবেনা।
-তুই রাগ করছিস কেনো।
-চুমা দেবো।
-দিবি! দেনা।
-রাখছি।
-আর একটু।
-একবারে না। আমার ঘুম পাচ্ছে।
-আচ্ছা রাখ।
-গুড নাইট।
-শুভ রাত্রি।
 
 
সকাল বেলা চোখ মেলে তাকাতেই দেখলাম। দামিনী মাসি মাথার শিয়রে বসে আছে। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আমার পায়ের কাছে কবিতা। আমার গায়ে চাদর ঢাকা। কাল আমি চাদর গায়ে দিয়ে শুই নি, বেশ মনে আছে। আমি জিভ বার করে তড়িঘড়ি উঠে বসলাম।
ফিক করে হেসে বললাম, কখন এসেছো।
-আধঘন্টা।
-ডাকোনি কেনো।
-কাল অতরাত পর্যন্ত গল্প করেছিস।
-মাথা নীচু করলাম। তুমি জানলে কি করে।
-আমি জানবোনা তো কে জানবে।
আমি মাসির কাঁধে হেলান দিলাম।
-সব কাগজপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখে ঘুমোচ্ছিস।
-কে আসবে।
-কেউতো আসতে পারতো।
-ছগনলাল ঢুকতে দিতোনা।
-ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কি বক বক করছিলি।
কবিতার দিকে তাকালাম। ফিক ফিক করে হাসছে।
-তুই কি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে মিত্রার সঙ্গে ঝগড়া করিস।
-ধ্যুস।
-ধ্যুস কিরে। নিজের কানে শুনলাম।
-তুমি শুনেছো, আমিতো শুনিনি।
কবিতার দিকে তাকিয়ে বললো- বসে আছিস কেনো যা না একটু চা কর।
আমি বিছানা থেক নেমে টেবিলের কাছে গেলাম। ব্রাশে মাজন লাগাতে লাগাতে মাসির দিকে তাকিয়ে বললাম। কটা বাজে বলোতো।
-দশটা।
-বলো কি এখুনি ওরা এসে পরবে।
-টিনা ফোন করেছিলো।
-তুমি কথা বলেছো।
-বললাম। বাবু এখনো ঘুমোচ্ছে। শুনে টিনা বললো ঠেলে তুলে দাও।
হাসলাম। দাঁড়াও ঝট করে মুখটা ধুয়ে আসি।
বাথরুমে গিয়ে ভালো করে মুখ ধুয়ে ফ্রেস হয়ে বেরোলাম।
-স্নান করবিনা।
-ওখানে গিয়ে করবো।
-কেনো।
-এখানে করলেও ওখানে গিয়ে করতে হবে।
কবিতা ঘরে ঢুকলো। ট্রেতে কচুরী মিষ্টি।
-কি রে।
-মাসিকে বলো। আমাকে বকবেনা।
-তুই নিয়ে এলি মাসিকে বলবো কেনো।
-মাসি নিয়ে এসেছে। আর একটা পেটি ভর্তি করে মিষ্টি নিয়ে এসেছে। সঙ্গে নিয়ে যাবে।
-কি গো মাসি।
-আমারতো কিছু দিতে ইচ্ছে করে।
-বুঝেছি।
-তুই খাবিনা।
-খাবো। কবিতা শুধু কি আমার জন্য।
-না।
-বাকি নিয়ে আয়।
-তুমি খাও তারপর খাবো।
-তা হবেনা।
-যা কবিতা যা। গোঁয়াড় গোবিন্দকে নিয়ে পারবোনা। আমাদের আছে কিনা দেখে তবে উনি খাবেন।
কবিতা কোমর দুলিয়ে চলে গেলো।
-মিত্রার সঙ্গে কথা হলো।
-তুই কি করে জানলি।
-তুমি যেমন ভাবে জানো, আমিও ঠিক তেমন ভাবে জানি।
মাসি হো হো করে হেসে ফেললো।
 
-তুমিতো দেখোনি। গলা শুনে কেমন মনে হচ্ছে।
-আমার থেকে তুই ভালো জানবি।
-তোমার চোখ আর আমার চোখের মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে।
মাসি আমার দিকে তাকালো।
-ভুল বললাম।
মাসি মাথা দোলাচ্ছে। মুখ তুললো।
-দুচোখ ভরে দেখতে ইচ্ছে করছে।
-রবিবার চলে আসবো। ভজুবাবু।
-বললো তো ভালো আছি। ডাক্তার ওকে গিয়েই দেখেছে।
-আমার সঙ্গে ভজুবাবুর কথা হয়নি।
-হ্যাঁরে ভালো হবে।
-ডাক্তার বলেছে সত্তর ভাগ ভালো হবে। বাকিটা হবেনা।
-যতটা হয় ততটা মঙ্গল।
-আমরা চেষ্টা করতে পারি বুঝলে মাসি।
-হ্যাঁ রে। তবু তোর কাছে এসে পরেছিলো বলে চিকিৎসাটা হচ্ছে।
-এইভাবে বলছো কেনো।
মাসি আমার দিকে তাকলো। চোখের কোল দুটো চিক চিক করছে।
-আবার মন খারাপ করে।
-কালকে থেকে অনেক ভাবলাম তোদের দুটোকে নিয়ে।
-ভেবে কি পেলে।
-আর একটু আগে জানতে পারলে ভালো হতো।
-সব কিছু কি আর মনের মতো হয় মাসি।
কবিতা ঘরে ঢুকলো।
প্লেট নামিয়ে রাখলো।
-কিগো তুমি আবার কাঁদছো।
আমি কবিতার দিকে তাকালাম।
-কাল সারারাত ঘুমোয়নি। খালি কেঁদেছে। সকালে দুজনে বাগবাজারের গঙ্গায় গিয়ে স্নান করে সোজা তোমার কাছে চলে এসেছি। আসার সময় শ্যামপুকুরের চিত্তরঞ্জন থেকে মাসি মিষ্টি কিনেছে।
মাসি মাথা নীচু করে বসে আছে। আমি উঠে গিয়ে মাসির মুখটা তুলে ধরলাম। চোখ বন্ধ করে আছে। চোখের কোল বেয়ে জল গড়িয়ে পরছে। আমাকে জাপ্টে ধরে মাসি ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। কবিতা মাথা নীচু করে বসে আছে। ওরও চোখে জলে টল টল করছে। আমি ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারলামনা। মাসিকে এই ভাবে কাঁদতে কখনো দেখিনি। অনেকক্ষণ কারুর মুখে কোনো কথা নেই।
কবিতা আমার দিকে তাকালো। ইশারায় ওকে জিজ্ঞাসা করলাম। কবিতা মাতা দোলাচ্ছে। বলবে না। তুমি জিজ্ঞাসা করো।
-কিগো বলবেনা। মাসির মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বোললাম।
-তুই আমাকে ভুলে যাবিনা।
-আমার দিকে তাকাও।
মাসি চোখ বন্ধ করে আছে।
-চোখ খোলো।
মাসি আস্তে আস্তে চোখ খুললো। জলে ভরা চোখ দুটোয় মিনতি। করুণ আর্তি।
-কেনো বললে ও কথা।
-তুই এখন কতো বড়ো হয়ে গেছিস।
-তাতে কি হয়েছে বলো।
-তোর কতো প্রতিপত্তি।
-মাকে কেউ ভুলতে পারে।
মাসি আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউ হাউ করে কেঁদে উঠলো।
-তুমি কাঁদলে আমার খারাপ লাগে।
-আমি যে মা হতে পারিনি।
-কে বলেছে বলো।
-না অনি না অনি। তুই আমাকে দুর্বল করে দিসনা। তুই মায়াবী।
-তুমি আমাকে ভুলে যেতে পারবে।
মাসি মাথা দোলাচ্ছে।
-কেঁদোনা। তোমরা এরকম করলে আমি কাজ করবো কি করে। তুমি চাওনা আমার পাশে থাকতে।
-চাই।
-তাহলে। এরকম দুর্বল হলে চলে। তোমার এখনো কতো কাজ।
-আর পারছিনা অনি। আমাকে একটা সুস্থ্য জীবন দে।
-একটু অপেক্ষা করো। আমি সব ব্যবস্থা করেছি।
-কেঁদোনা। দেখো তোমাকে দেখে ওই মেয়েটাও কাঁদছে।
মাসি আমাকে ছেড়ে কাপরের খোঁট দিয়ে চোখ মুছলো। নাও মিষ্টি খেয়ে জল খাও।
আমি মাসিকে নিজে হাতে একটা মিষ্টি খাইয়ে দিলাম। মাসির কান্না থামেনা। সবাই একসঙ্গে খেলাম অনেকক্ষণ পর মাসি একটু ঠান্ডা হলো।
-কালকে মিত্রা তোমায় কি বললো।
-আমি ওকে বোঝালাম বেচারা কাঁদছিলো। মেয়েদের মন তোকে কি করে বোঝাই।
ফোনটা বেজে উঠলো। দেখলাম মিত্রা ইচ্ছে করে ভয়েজ অন করলাম।
-কিরে। কখন উঠলি।
-সাড়ে পাঁচটা।
-একবারে মিথ্যে কথা বলবিনা।
-তুই কবে থেকে সত্যবাদী যুধিষ্ঠির হলি।
-আমি খবর নিয়েছি। তুই ভোঁস ভোঁস করে ঘুমোচ্ছিস।
-বুঝেছি। নে কথা বল।
-কেরে।
-কথা বল।
-বল মামনি।
-ওমা তুমি ওখানে।
-হ্যাঁ।
-গঙ্গায় স্নান করেছো।
-করেছি।
-আমার মিষ্টি কিনেছো।
-হ্যাঁ।
-বুঝেছি তোর জন্য মাসি মিষ্টি কিনে এনেছে।
-বেশ করেছি তুই কিছু করতে পারবি।
-দাঁড়া একবার যাই।
মাসি হাসছে।
 
-জানো মাসি কাজ শেষ। আমি আজ মুক্ত বিহঙ্গ।
-ভালো ভাবে মিটেছে।
-ফার্স্টক্লাস। নাও ভজুবাবু কথা বলবে।
-মা।
-বল।
-পান্তা খেলাম।
-ভালো করেছিস।
-তুমি ভালো আছো।
-হ্যাঁ। কবে আসবি।
-অনিদা আসুক চলে যাবো।
-আচ্ছা।
-শোন পরে কথা বলবো। এখন জিলিপি এলো। খাওয়া হবে।
-ইসলাম ভাই কোথায়।
-ওখানে কাগজপত্র বুঝছে।
-ঠিক আছে।
-মাসি জোড় হাত করে কপালে ঠেকালো।
-ওটা আবার কি হলো।
-ভালোয় ভালোয় হয়ে গেলো।
-না হবার কি আছে। আমি মন থেকে চেয়েছি।
রতন হন্ত দন্ত হয়ে ঘরে ঢুকলো।
-কিরে কি হয়েছে!
-তুমি এখানে। ফোন বন্ধ করে রেখেছো কেনো।
মাসি হাসছে।
-সকাল থেকে তোমায় খুঁজতে খুঁজতে কুত্তা বনে গেছি।
-কেনো বলবি তো।
-রতন বারান্দায় চলে গেলো। চেঁচিয়ে কাকে বললো নিয়ে আয়।
আমি ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেছি। ওদের চোখে কোনো বিকার দিখতে পেলাম না।
-একটা ছেলে একটা ভিআইপি স্যুটকেস নিয়ে এলো।
-এটা কিরে।
-নিয়ে যাবে বসের হুকুম।
-তারমানে। তোরা কি আমাকে মারার ধান্দা করেছিস।
-আমরা থাকতে কেউ তোমার শরীরের একটা লোম ছুঁতে পারবেনা। সব শুনেছি। তুমি আমাদের জন্য অনেক করেছো। বসকে নতুন জীবন দিচ্ছ। তার মানে আমাদেরও দিচ্ছ।
আমি মাসির দিকে তাকালাম।
মাসি মাথা নীচু করে হাসছে।
-তোমার ওখানে যে কাজ করবো তার জন্য লাগবে। মাসি এগুলো তোমার কাছে রাখো।
-ইসলাম কাল আমায় বলেছে। তুই নিয়ে যা। তোর এখন অনেক কাজ।
-কবিতা কচুরী আছে।
-কয়েকটা আছে।
-যা রতনের জন্য নিয়ে আয়।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - by MNHabib - 29-04-2022, 07:57 AM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)