25-04-2022, 07:19 AM
-সত্যি তোমার মুখ থেকে ভদ্রমহিলার গল্প শুনেছিলাম। আজ দেখলাম। স্বপ্নের দেখা আর বাস্তবের দেখার সঙ্গে আকাশ পাতাল তফাৎ।
বিছানা থেকে উঠে এসে, টেবিলের ওপরে রাখা জলের বোতল থেকে ঢক ঢক করে কিছুটা জল খেলাম। বাথরুমে গেলাম। বিছানায় এসে চাদর মুড়ি দিয়ে বসলাম। একবার ভাবলাম ল্যাপটপটা খুলি। তারপর ভাবলাম না থাক। সন্দীপকে একবার ফোন করি। ব্যাটা সকাল থেকে একা লড়ছে। কি হলো একবার জিজ্ঞাসা করি।
-তোমার সঙ্গে সবাই কি একমত।
-ওরাতো বললো অনিদা আমাদের গুল মেরেছে।
হাসলাম।
-জানো অনিদা ওনার একটা কথা আমার ভীষণ ভালো লাগলো। যদিও দেবাশিষ কথাটা ওনাকে রিপিট করতে বললো।
-কোনটা বলোতো।
-ওইযে, কবিতা যখন বললো, নষ্ট মেয়ে।
-হ্যাঁ হ্যাঁ। মনে পরেছে।
-তখন বুঝলাম ভদ্রমহিলার গভীরতা কতটা।
-মাসি বিশেষ পড়াশুনো করেনি।
-তাই।
-হ্যাঁ। ষোলো বছর বয়সে পেটের জ্বালায় ওই পাড়ায় আসে। এখন মাসির বয়স সত্তরের কাছাকাছি।
-দেখে বোঝা যায়না।
-ছোটবেলা থেকে শরীরটার যত্ন নিতে শিখেছে যে। না হলে খরিদ্দার আসবেনা।
-কি অদ্ভূত লাইফ।
-তুমি শুনেছো। চোখে দেখোনি। না দেখলে বিশ্বাস করতে পারবেনা।
-আমাকে একবার তোমার সঙ্গে নিয়ে যাবে।
-তোমাদের নিয়ে একটা কাজ করার ইচ্ছে আছে। তখন নিয়ে যাবো।
-আমি সব সময় রাজি।
-দায়িত্ব নিয়ে করতে হবে। খুব সেন্সেটিভ জায়গা।
-কথা দিচ্ছি পারবো।
-তার আগে ওদের সম্বন্ধে একটু জানতে হবে।
-কতটুকু জানতে পেরেছি বলো ওদের সম্বন্ধে। কাগজে কলমে পরে যা জেনেছি। তুমি ওখানে আঠারো মাস কাটিয়েছো। এখনো রেগুলার তোমার সঙ্গে ওদের যোগাযোগ।
-বলতে পারো ওই পাড়াটা আমার ঘরবাড়ি। কত লাইফ আছে ওখানে না গেলে বুঝতে পারবেনা।
-আচ্ছা অনিদা তোমার অস্বস্তি হয়না।
-তুমি যখন নতুন কাজে জয়েন করেছিলে তোমার কোনো অস্বস্তি ছিলো ?
-হ্যাঁ।
-তারপর তুমি আস্তে আস্তে নিজেকে মানিয়ে নিলে।
-হ্যাঁ।
-তুমি এখন তোমার অফিসের একটা অঙ্গ।
-হ্যাঁ।
-ধরেনাও ওরা যা করছে ওটাও ওদের একটা অফিস। আমি সেখানে গেছিলাম। প্রথমে ওই অফিসে ঢুকতে একটু অস্বস্তি হয়েছিলো। তারপর মানিয়ে নিলাম। আমি এখন ওই অফিসের একটা অঙ্গ।
-দারুন বললে তো।
-এটা ফ্যাক্ট। একে তুমি অমান্য করবে কি করে। তুমি যেমন জীবিকার জন্য কাজ করো, ওরাও তেমন জীবিকার জন্য দেহ বেচে। তুমি যেমন তোমার পার্টির কাছে ঝোপ বুঝে কোপ মারো। ওরাও ওদের পার্টির কাছে ঝোপ বুঝে কোপ মারে।
-দারুন এক্সাইটিং।
-সেক্সটাকে ওদের কাছে কোনো ব্যাপার নয়।
-তারমানে।
-জানো টিনা আমি অনেক ভেবে একটা সিদ্ধান্তে এসেছি। বলতে পারো এটা আমার একেবারে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।
-কি।
-ওখানে যে মেয়েগুলো থাকে ওদের দেহটা সর্বধর্ম সমন্বয়ে তৈরি।
-বুঝতে পারলাম না। আবার বলো।
-ধরো তোমার কাছে যারা কাজের জন্য আসে তাদের তুমি কখনো জিজ্ঞাসা করো তারা কোন ধর্মের কোন জাতের।
-একবারে না।
-সেখানে তোমার উদ্দেশ্য থাকে সে তোমার ক্লায়েন্ট তাকে ঠিক ভাবে এনটারটেইন করা।
-একবারে ঠিক।
-ওদের কাছেও যে পুরুষেরা আসে তাদের ওরা নাগর বলে।
-কি বললে।
-নাগর। আর যাদের বাঁধা ধরা পুরুষ থাকে তারা বাবু।
-ভেরি ইনটারেস্টিং।
-ওদের নাগরদের কোনো ধর্ম নেই। নাগরকে স্যাটিসফায়েড করা ওদের উদ্দেশ্য। ওরা স্যাটিসফায়েড করে। তার বিনিময়ে পয়সা পায়।
-হাউ স্ট্রেঞ্জ। আচ্ছা ওদের তৃপ্তি অতৃপ্তি বলে কিছু নেই।
-তুমিতো আমাকে বলেছিলে টিনা অনিদা তোমাকে এই কাজটা পেতে গেলে এটা দিতে হবে। গিভ এন্ড টেক পলিসি। সেখানে তৃপ্তি অতৃপ্তি বলে কিছু আছে। ওটা ভেক ব্যাপার।
-ঠিক।
-জানো টিনা এমনও বহুদিন গেছে। নাগরের অত্যাচারের তাড়নায় মেয়েটা অসুস্থ হয়ে পরেছে। মাসি আমাকে মাঝরাতে এসে ডেকে নিয়ে গেছে। সারারাত ধরে তার ক্ষতের সেবা শুশ্রুষা করেছি। কখনো মনের মধ্যে কোনো সেক্স জাগেনি।
-কি বলছো তুমি।
-এক বর্ণও তোমায় বানিয়ে বানিয়ে বলছিনা। বিশ্বাস করো।
টিনা চুপচাপ।
-এই মেয়েগুলো আমাকে ভাইফোঁটা দিতো। রাখি পরাতো।
-সত্যি অনিদা তুমি অনেক ভাগ্যবান।
-সেটা বলতে পারবোনা। তবে ওদের বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছিলাম।
-সেই জন্য মাসি তোমায় এতো ভালোবাসে।
-তারও অনেক কারণ আছে।
-বলো।
-না এখন থাক। বলতে গেলে ভোর হয়ে যাবে।
-হোক না।
-না।
-বাবুদের ব্যাপারটা বলো।
-বাবুদের বাঁধা মেয়েছেলে থাকে। তারা অন্য কোনো মেয়ের ঘরে যায়না। মেয়েটিকে তারা মাসোহারা পয়সা দেয়। মেয়েটিও বাবুর জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় রেখে দেয়।
-বাকি সময়।
-অন্য নাগরকে সময় দিয়ে পয়সা ইনকাম করে। ওটা উপরি বলতে পারো।
-কি বলছো তুমি।
-ঠিক বলছি এবার ঘুমোও। কাল অনেকটা জার্নি করতে হবে।
-তোমার সঙ্গে কথা বললে কতোকিছু জানা যায়। বিশ্বাস করো তোমার মতো করে এতোদিন এদের বিষয় নিয়ে ভাবিনি।
-হ্যাঁ। খালি চোখে ওদের আমরা সেক্স ওয়ার্কার বলি, গণিকা বলি, বেশ্যা বলি। একটু ভেবে দেখো। যারা বিবাহিত জীবন যাপন করছে সেই সব মেয়েরা কি সেক্স ওয়ার্কার নয়!
-কি পাগলের মতো বলছো তুমি।
-আমি তোমাকে ভাবতে বলেছি।
-পাগলামো করোনা।
-তোমায় একটা গল্প বলে শেষ করছি।
-বলো।
-আমাদের একজন মনিষী ছিলেন। নামটা তোমায় বলছিনা। নামটা তুমি খুঁজে বার করে আমায় বলবে। খালি একটা ক্লু দিলাম তোমায়।
-বলো।
-ব্রিটিশ আমলের ঘটনা।
-সেতো একশো বছর আগের ঘটনা।
-হাঁ। তিনি যখন আইএএস পরীক্ষায় পাশ করলেন তখন তার ইন্টারভিউ-এর ডাক এলো।
-হুঁ।
-তিনি ইন্টারভিউ দিতে গেলেন।
-হুঁ।
-ঘরে ঢুকে চেয়ারে বসার আগেই সাহেব প্রথমেই তাকে বললেন ইওর মাদার ইজ এ প্রস্টিটিউট।
-কি বললে।
-ইওর মাদার ইজ এ প্রস্টিটিউট।
-যাঃ।
-আমি যা বলছি ঠিক বলছি। তা সেই মনিষী প্রথমে একটু ঘবড়ে গেলেন। তারপর ভাবলেন ইন্টারভিউ বোর্ড। সাহেব আমাকে এই ধরণের প্রশ্ন করতেই পারেন। রাগ করলে চলবেনা।
-কি উত্তর দিলেন সেই মনিষী।
-কি উত্তর দিতে পারেন বলে তোমার মনে হয়।
-মাথায় আসছে না। আমি হলে ইন্টারভিউ বোর্ড থেকে বেরিয়ে আসতাম। আমার চাকরির দরকার নেই।
-তুমি হেরে গেলে।
-তা কেনো।
-তিনি কি বলেছিলেন জানো।
-বলো শুনি।
-ইয়েস মাই ফাদার ইজ এ লিগাল কাসটোমার।
-স্ট্রেঞ্জ। কি নাইস অ্যানসার।
-হ্যাঁ। তারপর সেই সাহেব মনিষীকে বুকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। চাকরি তিনি পেয়েছিলেন। তবে করেন নি। সারাজীবন ধরে দেশোদ্ধার করেছিলেন।
-কে বলোনা।
-নাম বলবোনা। তোমায় সেকেন্ড ক্লুটা দিলাম।
-বলো।
-তাঁর মৃত্যুর দিন আমরা এখনো জানিনা।
-উঃ তুমি ভীষণ সাসপেন্সে রাখো।
-রাখি। কাল দেখা হচ্ছে।
-ভীষণ ভীষণ ভালো লাগলো।
-এবার নিশ্চই তোমার ঘুম আসবে।
-আসবে।
ফোনটা কেটে দিলাম। মোবাইলের ঘড়ির দিকে তাকালাম। একটা বাজে। মিত্রা ফোন করবে বলেছে। এখনো করলোনা। ওখানে কি কোনো সমস্যা হলো?বিছানা থেকে উঠে এসে, টেবিলের ওপরে রাখা জলের বোতল থেকে ঢক ঢক করে কিছুটা জল খেলাম। বাথরুমে গেলাম। বিছানায় এসে চাদর মুড়ি দিয়ে বসলাম। একবার ভাবলাম ল্যাপটপটা খুলি। তারপর ভাবলাম না থাক। সন্দীপকে একবার ফোন করি। ব্যাটা সকাল থেকে একা লড়ছে। কি হলো একবার জিজ্ঞাসা করি।
ফোন করতেই ওপার থেকে ভেসে এলো।
-গান্ডু, কানা রাতে ফোন করার সময় হলো।
-তোর বউ তোকে বানান করে গালি দিতে বলেছে।
সন্দীপ হো হো করে হেসে উঠলো।
-খবর কি বল?
-জীবনে প্রথম একা হাতে কাগজ বার করলাম।
-স্যাটিসফায়েড।
-অবশ্যই। প্রথম কনসিভ করলাম এবং ডেলিভারি করলাম। কি আনন্দ হচ্ছে জানিস না।
-তোকে আলাদা করে বলতে হবেনা। তোর কথা শুনেই বুঝতে পারছি।
-শোন আমার তিনটে নার্সিংহোম ক্লিয়ার হয়ে গেছে।
-কি বুঝলি।
-কম বেশি সবেতেই ঘোটালা আছে।
-বাকিগুলো এখুনি করতে হবেনা। নিউজটা আগামী সপ্তাহে মারবো। ফিরে এলে ছেলেদুটোকে পাঠাস।
-বাঁচালি।
-কেনো।
-আজকেই হিমশিম খাচ্ছিলাম। ওরা আসতে কাজ তুলতে পারলাম। কিছু হারামী এখনো আছে।
-মার্ক করে রাখ।
-সব কটাকে দূর কর। আমি আর কয়েকটাকে বেছে রেখেছি। ভালো কাজ করছে।
-দু’একটা কচি রাখিস।
-কেনো মালকিনকে নিয়ে সখ মিটছে না। আরো কচি লাগবে।
-আরে কলির কেষ্ট বলে কথা।
-হারামী।
হাসলাম।
-দাঁড়া ম্যাডাম আসুক।
-চাকরি চলে যাবে।
-এখন আর যাবেনা।
হো হো হো।
-লাস্ট আপডেট কি।
-দাদারা একটা নাগাদ বেরিয়ে গেলো। আমি বাড়িতে একা। তারপর মাসি এলো সন্ধ্যার সময়। সাড়ে এগারোটা নাগাদ গেলো।
-সত্যি তোর দামিনী মাসি একটা ক্যারেকটার।
-বউকে গল্প করেছিস।
-করিনি। বলেছি বাড়িতে গিয়ে বলবো।
-কাগজ বেরিয়ে গেছে।
-ক্যালকাটা এডিসন প্রিন্ট হচ্ছে।
-দেখেছিস।
-হ্যাঁ।
-প্রেসরুমের কি অবস্থা।
-অতীশবাবু ছাড়া দিব্যি চলছে।
-সনাতনবাবু।
-শালা সকালে এসে দেখি মিলিটারি মেজাজে চারিদিকে ঘুরছে।
-বলেছিস।
-দাদা ফোন করে বলে দিয়েছে।
-এইবার ঝটপট তৈরি হয়ে যা।
-হ্যাঁ। এই কয়দিনে অনেক অভিজ্ঞতা হবে।
-দাঁড়া দাঁড়া একটা ফোন ঢুকছে। তোকে পরে ফোন করছি।
-ঠিক আছে।
ফোনটা ধরার আগেই মিস কল হয়ে গেলো। দেখলাম মিত্রার নম্বর।
আমি ফোন করতে গেলাম। তারপর ভাবলাম না। ওর ফোনে যদি রিং বাজে সবাই জেনে ফেলবে। তার থেকে বরং মিত্রাই ফোন করুক।