Thread Rating:
  • 63 Vote(s) - 2.92 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়)
-তোমায় একটা কথা বলবো মাসি।
-বল।
-রাগ করবেনা।
-না।
-আমি ওখানে একটা একটা এনজিও ফর্ম করবো। ওই পাড়ার মেয়েদের নিয়ে। ওরাতো জীবনে কিছু পায়নি। অন্ততঃ পক্ষে ছেলেমেয়েগুলো হাতের কাজ শিখে কিছু করে কম্মে খেতে পারবে।
-কারা থাকবে।
-তুমি ইসলাম ভাই, অদিতি, টিনা, মিলি, মিত্রা। বেশির ভাগ মেয়েরা থাকবে।
-পারবি।
-আমার মনের ইচ্ছা। ইসলাম ভাইকে একটা আওয়াজ দিয়েছিলাম।
-কি বলেছে।
-হেসেছে। বলেছে তুই ভীষণ ঝানু।
-আমিও তাই বলছি।
-কেনো।
-আমাদের ভালো করতে চাইছিস।
-অন্যায় করছি।
-না। সমাজ সেটা মেনে নেবেনা।
-আমি কিন্তু কখনো কারুর স্বাধীনতায় হাত দেবোনা। আমি তিনটে বিষয় নিয়ে কাজ করবো।
-বল।
-শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুনর্বাসন।
-সেটা কি রকম।
-যারা নেক্সট জেনারেশনে প্রফেসনে আসতে চাইবেনা তাদের জন্য কাজের ব্যবস্থা করবো। তোমার সময়কার কজন তোমার মতো হতে পেরেছে। তাদের জন্য কিছু করবো।
-এতে ব্যবসার ক্ষতি হবেনা
-না।
-তোমাদের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেওয়ার জন্য ফ্রি ক্লিনিক তৈরি করবো।
-কারা যাবে। তারা গিয়ে আবার এই রকম ডাক্তার হবেনা তো।
-সামন্ত ডাক্তারকে বলবো ভেবেছি। তুমিতো ডাক্তার দাদাকে দেখেছো।
-লোকটা ভালো।
-মিত্রার নার্সিংহোমের দায়িত্ব ডাক্তার দাদার হাতে দেবো ভাবছি। মিত্রা আর বড়মাকে দিয়ে বলাবো।
-খুব ভালো হবে।
-একটা কলেজ তৈরি করবো ওখানে।
-টাকা পাবি কোথায়।
-ভূতে দেবে।
-আবার ফাজলামো করে।
-দেবারা জোগাড় করতে পারবে।
-ওখানে যে বিশাল সাম্রাজ্য তৈরি করছিস।
-তোমাদের এখানে যারা আর কাজ করতে পারবেনা তাদের ওখানে নিয়ে গিয়ে কাজে লাগাবো।
-'র কি করবি।
-ইসলাম ভাই থাকবে তবে বলেছি রতনকে আস্তে আস্তে সব বুঝিয়ে দিতে। ইসলাম ভাই অনেকের টার্গেট হয়ে গেছে।
-হ্যাঁ। ঠিক খবর পেয়েছিস।
-আমার ওই জায়গাটা এমন তুমি ঢুকতে পারবে কিন্তু কাজ করে বেরোতে পারবেনা।
-আমাকে একবার নিয়ে যাবি।
-কালকে চলো।
-এদিকের কাজ করবে কে।
-ঠিক আছে। আমি পনেরো দিন পর আবার যাবো তখন চলো।
-যাবো। কেউ যদি কিছু মনে করে।
-আমারতো পরিবার নেই কে কি মনে করবে।
-তোর বন্ধুরা।
-তুমি দেখলে বলতে পারবে তারা কেমন।
-ঠিক আছে।
-এই রবিবারের পরের রবিবার এই বাড়িতে একটা অনুষ্ঠান করার ইচ্ছে আছে।
-তোর বিয়ে উপলক্ষে।
-তুমি যা বলবে। তবে অনিমেষদা নেমন্তন্ন খাবে বলেছে।
-বাবা এর মধ্যে আমি নেই।
-ওই বিষয়টা আমার ওপর ছেড়ে দাও।
-আমাকে বললি কেনো তাহলে।
-বাড়ি-ঘরগুলো রং করবো এই চার পাঁচদিন খালি ফেলে রাখবো কেনো। তোমারতো অনেক পরিচিত লোক আছে তাদের দিয়ে কাজটা শুরু করে দাও।
-মাসি আমার বরকে বলবো।
-ওকি এই কাজ করে।
-তাহলে কি করে। তুমি জানোনা।
-তোর বিয়ের সময় ওতো লেদে কাজ করতো।
-সে সব গেছে। এখন কিসব কন্ট্রাকটরি করে।
-ও মাসি কতা বলছোনা কেনো
-ও পারবে রে কবিতা।
-তুমি বললে পারবে।
-কালকে একবার ডাকিস।
-আচ্ছা।
-অনেক রাত হলো এবার ওঠো। তোমাদের এতটা যেতে হবে।
-শোন দুটো ছেলে আজ থাকবে। কালকে থেকে কাজ শুরু হলে আর চিন্তা নেই।
-ওদের শোবার ব্যবস্থা করতে হবেতো।
-তুই দেখেছিস ওরা সকালে ছিলো।
-এমা ওরা কি খাবে।
-ওদের খাবার গাড়িতে আছে তোকে চিন্তা করতে হবেনা।
-ঠিক আছে।
-আমি কাল তোর বেরোবার আগে আসবো।
-আচ্ছা।
 
মাসি কবিতা চলে গেলো। একটা গাড়ি রেখে গেলো। দুটো ছেলে রয়েছে। তার মধ্যে একটাকে আমি চিনি। সকাল বেলা একবার রতন ওকে নেপলা বলে চেঁচিয়ে উঠেছিলো। আমি ওদের বললাম ভেতরে শোবে চল।
-না অনিদা আমরা গাড়িতেই থাকবো।
-কেনো।
-রতনদার হুকুম।
-আমি কথা বাড়ালাম না।
ছগনলালকে বললাম। তুমি শুয়ে পরো। নিচের সব তালা লাগিয়ে দাও।
-আচ্ছা ছোটবাবু।
আমি ওপরে চলে এলাম। দরজা জানলা বন্ধ করে দিলাম। একটু একটু ঠান্ডা পরেছে। বাথরুমে গেলাম। মুখ হাত পায়ে ভালো করে জল দিয়ে এসে বিছানায় বসলাম। একটা সিগারেট ধরালাম।
মাসি মনে হয় আমাকে আর কিছুই বলবেনা। এবার থেকে যা কাজ করার ওরাই করবে। আমার সব সোর্স এরা। মাসি মনে হয় এই বিষয়ে আমার সব সোর্সকে অফ করে দেবে। আজকে মাসির সঙ্গে কথোপকথনে তাইই বুঝলাম। একটাই কথা তোকে ভাবতে হবেনা। তুই তোর কাজ কর।
না আর ভাবতে ভালো লাগছেনা। সকাল থেকে নানা ঝামেলা গেলো। কাগজপত্রগুলো ঠিকঠাকভাবে গুছিয়ে নিলাম। আলমারিতে তুলে রাখলাম। দাদারা কখন পৌঁছলো জানতে পারলাম না। ওরাও আমাকে কেউ ফোন করেনি। হয়তো বিরক্ত করতে চায়নি।
কালকের কাজটা ঠিক-ঠাক ভাবে হয়ে গেলে বাঁচি। ওইদিকের বিষয় নিয়ে আবার চিন্তা করতে হবে। মিত্রা কি করছে? ভাবতেই মনটা কেমন উসখুশ করে উঠলো। একবার ভাবলাম ফোন করি। তারপর ভাবলাম না থাক ও নিজে ফোন করবে বলেছে। ফোনটা কাছে টেনে নিলাম। দেখলাম মিসড কল। অপারেট করতে দেখলাম টিনার নম্বর। তারমানে টিনা ফোন করেছিলো! কল রেজিস্টারে গিয়ে দেখলাম টিনা আধঘন্টা আগে ফোন করেছিলো। আমি তখন নীচে ছিলাম।
টিনাকে ডায়াল করলাম
-হ্যালো। টিনার গলা। একটু ভারি ভারি।
-ঘুমিয়ে পরেছিলে নাকি।
-নাগো অনিদা। ঘুম আসছেনা।
-শরীর খারাপ।
-না।
-তাহলে।
-জানিনা। তোমার বাড়ি থেকে ফিরে আসার পর থেকে কেমন যেন লাগছে। বার বার তোমার মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠছে।
-আমার জন্য ভেবোনা। আমি ঠিক আছি।
-একটু আগে মিলির সঙ্গে কথা হচ্ছিল।
-কি বলছে মিলি।
-ওরও আমার মতো দশা।
-তোমরা আমাকে নিয়ে এতো ভেবোনা।
-ভাবতে চাইনা। তিনমাস আগে কি তোমাকে নিয়ে ভাবতাম।
-তাহলে।
-কি করে বোঝাবো তোমাকে। কই তিন মাস আগে এমন ভাবে মনে আসতোনা। এখন আসে।
-তোমরা আমাকে ভীষণ ভালোবাসো তাই।
টিনার একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস পরলো। আমি শুনতে পেলাম।
-মিত্রাদি ফোন করেছিলো?
-না।
-তুমি করোনি?
-না।
-কেনো।
-সবাইকে জানিয়ে লাভ।
-সত্যি তুমি না।
-হ্যাঁগো টিনা নিজের টেনসন নিজের কাছে রাখা ভালো।
-মাসি।
-মাসি এই একটু আগে গেলো।
-এতোরাতে।
-হ্যাঁ। আমাকে খাইয়ে দিয়ে গেলো।
[+] 3 users Like MNHabib's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - by MNHabib - 23-04-2022, 05:47 AM



Users browsing this thread: