20-04-2022, 08:15 PM
জানো মাসি অনি বলছিলো ও কবিতার বিয়ে দিয়েছে। বিয়ে কারা দেয়?
নারে দেবাশিষ ও শুধু কবিতার বিয়ে দেয়নি। কন্যাদানও করেছিলো। সাক্ষী আমি।
-বলো কি।
-হ্যাঁ।
-সত্যি ওর মানুষ জন্মটা সার্থক।
-সে বলতে পারবোনা। তবে ওকে প্রথম দিন দেখে আমারও খুব ভালো লেগেছিলো। ওর চোখ দুটো ভীষণ লোভনীয়। কাঁচা বয়স হলে ওকে ছাড়তামনা।
-বারে তুমি সব নিলে আমরা কি করবো। টিনা বললো।
-ওরে দুষ্টু মেয়ে। তোর পেটে পেটে এতো।
সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
-তোরা এক কাজ করনা।
-বলো।
-অনির তো মন মেজাজটা ভালো নয়। ওখানে আর একটা পরে আছে। তারও মনের অবস্থা আমি জানি। তোরা কয়েকদিন অনির সঙ্গে ওর দেশের বাড়িতে ঘুরে আয়না। ওরও মনটা ভালো লাগবে। যেটা ওখানে পরে পরে গুমড়োচ্ছে ওর মনটা একটু হাল্কা হবে।
-খারাপ বলোনি। কিরে নির্মাল্য তোর অফিসের হাওলা কি।
-আমার কোনো অসুবিধে নেই। প্রোগ্রাম হলে এক পায়ে খাঁড়া।
-টিনা।
-অনিদার দেশের বাড়ি! গল্প শুনেছি। ইনভাইট করুক আগে।
আমি হাসলাম।
-ঠিক বলেছে টিনা। দেবাশিষ আমার দিকে তাকিয়ে বললো।
-মাসি বললে যাবোনা অনিদা নিজে মুখে একবার অন্ততঃ বলুক। মিলি বললো।
-কতোবার খেঁচাবার পর পেট থেকে কথা বেরোলো বলোতো। অদিতি বললো।
-তোরা অনির ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা কর। দেবাশিষ বললো।
-সব সময় এ্যাডভান্টেজ অনিদা তা হবেনা। টিনা বললো।
আমি হাসছি। দামিনী মাসি হাসছে।
-আচ্ছা অনির হয়ে আমিতো তোদের নেমন্তন্ন করছি।
-ঠিক আছে যাওয়া হবে।
আমার দিকে তাকিয়ে বললো। কাল কখন যাবি।
-তোরা বল।
-দশটার আগে হবেনা। একবার অফিসে ঢুঁ মারতে হবে সকলকে।
-এই যা ভুলে গেছি। কবিতা মিষ্টির বাক্স গাড়িতে আছেনা? মাসি বললো।
-হ্যাঁ।
-তুইও একটা গাঢ়ল। মনে করাবি তো। যা ছুটে নিয়ে আয়।
কবিতা ছুটে চলে গেলো।
-তাহলে কখন যাবি বল। টিনা বললো।
-কিরে অনি বল।
-তোরা কাজ সেরে চলে আয়না। এগারোটা নাগাদ বেরোবো।
-পাক্কা। তুই কোথায় থাকবি।
-আমি এইখানেই থাকবো।
-কিরে ওখানে বড় গাড়ি যাবে তো।
-কি নিয়ে যাবি।
-স্করপিও। নির্মাল্যেরটা।
-কে ড্রাইভ করবে।
-ড্রাইভারের অভাব, তুই ছাড়া সকলে ড্রাইভ করতে পারে।
-বাই রুটে চালাতে হবে।
-তোকে চিন্তা করতে হবেনা।
কবিতা মিষ্টি নিয়ে এলো। হৈ হৈ করে সকলে মিষ্টি খেলাম। দেবাশিষ বলে বসলো মাসি মিষ্টিটা কোথাকার।
-কেনো রে?
-সাউথে এরকম মিষ্টি পাওয়া যায়না।
-নকুর সন্দেশ। দেড়শো বছরের দোকান। চার পুরুষ ধরে ব্যবসা চালাচ্ছে।
-নির্মাল্য নোট করে রাখ নামটা, একদিন পেট ভরে খালি মিষ্টি খাবো।
মাসি হাসছে।
-তুমি হাসছো কেনো।
-তোর কথা শুনে।
-অনি এবার উঠি। কাল ঠিক সাড়ে দশটার মধ্যে চলে আসবো।
-কবে ফিরবে জিজ্ঞাসা করেছো। অদিতি বললো।
-এটা ঠিক বলেছো। কবে রে।
-রবিবার ফেরার কথা।
-সোমবার অফিসে জয়েন করতে পারবো তো।
-রবিবার বিকেলের দিকে করতে পারিস।
-দেখলে দেখলে অদিতি, কি রকম ছুঁয়ে দিলো। তোকে এমন দেবো না। দেবাশিষ ঘুসি তুললো।
ওরা চলে গেলো। আমি ওদের নীচ পর্যন্ত এগিয়ে দিলাম। নীচে নামার সময় টিনা আমার হাতটা একবার ছুঁলো। আমি ওর দিকে তাকালাম। টিনার চোখ অনেক কথা বলতে চায়। চোখের ইশারায় বললাম রাতে ফোন কোরো।
আমি ওপরে এলাম।
-কিরে মন ঠিক হলো।
-ঠিক হতে সময় লাগবে মাসি। ওদের সামনে তোমার সঙ্গে কথা বলাই হলোনা।
মাসি হাসছে।
-জানো মাসি এই পাঁচজন আমার কাগজটাকে বাঁচিয়ে দিলো।
-কি করে।
-এ্যাড জোগাড় করে দিয়ে।
-টিনা মেয়েটাকে তোকে খুব ভালবাসে।
-কি করে বুঝলে।
-ওর চোখমুখ বলছে।
-আমি জানতাম না। মালিক হওয়ার পর দেবার কাছে যেদিন প্রথম যাই, সেদিন জানতে পারলাম।
-তার মানে!
-কলেজ লাইফে মিত্রা ছাড়া আমি কোনো মেয়ের সঙ্গে সেইভাবে মিশতাম না। অদিতি, মিলি, টিনা এরা আমার জুনিয়র। একমাত্র দেবাশিষ আমার সঙ্গে পড়তো। অদিতি আমাকে চিঠি দিয়েছিলো। ওকে একদিন বোঝালাম। তারপর দেবাশিষের পাল্লায় পরলো, বিয়ে হলো।
-টিনা?
-টিনার ভালোবাসাটা অন্তরমুখী আমি কোনোদিন বুঝিনি।
-ভারি অদ্ভূত।
-হ্যাঁ। টিনা মুখে স্বীকারও করেছে। দেখেছো কবিতা কেমন আমার কথা গিলছে।
-তোমাকে আমিও ভালোবেসেছিলাম।
-সেই জন্য থাপ্পর খেয়েছিলি।
-আমি এখন বড় হয়েগেছি মাসির সামনে আর বলবেনা।
আমি কবিতার কানটা ধরে একটু নেড়ে দিলাম। কবিতা উঃ করে উঠলো।
-এদেরও অনেক কষ্ট বুঝলে মাসি। যখনই যে আমাকে একা পায় তখন মনের কথা খুলে বলে।
-সত্যি।
হ্যাঁগো তোমায় একদিন বলবো। আমার অনেক জ্বালা বুঝলে।
-দেখছি তাই।
-মাসি ওদিককার খবর বলো।
-কবিতা নিচে গিয়ে অনির খাবার রেডি কর। ওকে খাইয়ে যাবো।
-গ্যাস ঠিক মতো জ্বালাতে পারবি তো।
-পারবো।
কবিতা বেরিয়ে গেলো।
-আমাকে ওই লোকটাকে দেখা।
-যে সিডিটা পাঠালে ওটা দেখবে।
-না। নিজের ছেলের বউ-এর ওই অবস্থা দেখতে পারবো না।
আমি স্টিল ছবিগুলো আলমারি থেকে বার করলাম। মাসির হাতে খামটা দিলাম।
-তুই ওদের এইসব বলেছিস নাকি।
-না। খালি ডাক্তারের ব্যাপারটা বলেছি।
-ডাক্তারের ব্যাপার ওরা জানে।
-আগের থেকেই কিছু কিছু জানে। ডাক্তারের ভাগ্না সুনিত, ওইতো বাজারে চাউর করলো। আমাদের অফিসের কয়েকজন গাঢ়ল আছে। কাকে কি বলবো বলোতো।
-মেয়েটার কথা ভাবলে মনটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
-তুমি বিশ্বাস করো মাসি, খালি মিত্রার দিকে তাকিয়ে আমি এই কাজ করছি।
-পাগল। আমাকে তুই কি বলবি আমি সব জানি।
মাসি ছবিগুলো ভালো করে দেখলো। চোখ মুখের চেহারা কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে।
-কিগো তুমি ভদ্রলোককে চেনো মনে হচ্ছে।
-হ্যাঁ। মাসির গলার স্বর বদলে গেলো।
-কোথায় দেখলে।
-তোকে জানতে হবেনা।
-আমাকে খুঁজে বার করতেই হবে।
-পারবিনা।
-তুমি চাইলে পারবো না। ইসলামভাই-এর সঙ্গে কথা বলেছো।
-তোর কথা ঠিক।
-কি ঠিক।
-ও কাজ শুরু করে দিয়েছে।
মাসির দিকে তাকিয়ে হাসলাম।
-তুমি বললে না চিনলে কি করে।
-পরে বলবো।
-কাজ শেষ হবার পর।
মাসি আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
-ঠিক আছে তোমাকে বিরক্ত করবো না।
-এবার খেতে চল। তোকে খাইয়ে আমি বাড়ি যাবো।
-চলো।
আমি ল্যাপটপ বন্ধ করে মাসির সঙ্গে নিচে চলে এলাম। কবিতা টিভি চালিয়ে দেখছে।
-কিরে খাবার সব গরম করেছিস।
-হ্যাঁ।
-নিয়ে আয়।
-কবিতা একসঙ্গে তিনজনের জন্য।
-জানি। নাহলে তুমি যে খাবেনা মাসি আগে বলেছে।
-কি এনেছো। মাসির দিকে তকিয়ে বললাম।
-দেখনা কি এনেছি।
-ডাক্তার ঠিক আছে।
-তোকে বলেছিনা তুই তোর কাজ কর। তোকে এইসব ব্যাপার নিয়ে আজ থেকে ভাবতে হবেনা।
-আমি না ভাবলে তুমি ভাববে। এইতো।
-হ্যাঁ।
-তোর পথের কাঁটাগুলোকে সব সরিয়ে দেবো।
-আমি এইভাবে চাইনা।
-তুই যেইভাবে চাইবি সেইভাবে হবে।
-তাহলে ঠিক আছে।
মাসি তড়কা তন্দুরি রুটি আর চিকেন নিয়ে এসেছে।
তিনটে প্লেটে কবিতা নিয়ে এলো।
খাওয়া শুরু করলাম। আমি মাঝখানে কবিতা মাসি আমার দু’পাশে।
-তোরা কবে ফিরছিস।
-রবিবার।
-কখন আসবি।
-বিকেলের দিকে।
-মিত্রার শরীর এখন কেমন।
-খুব একটা ভালো নয়। ডাক্তার দাদা তোমায় সকালে কিছু বলেনি।
-একটু একটু বলেছে।
-এখন কনটিনুয়াস ট্রিটমেন্টে থাকতে হবে। মনের ওপর কোনো স্ট্রেস দেওয়া চলবেনা।
-কি ভাবছিস।
-ওর জীবনে একটাই পথের কাঁটা আছে।
-কোনটা।
-টোডি।
-তোকে বলেছিনা ওটাকে নিয়ে ভাববি না।
-আমি কি ভাবছি। তুমি জিজ্ঞাসা করলে বললাম।
-মেয়েটাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করে।
-দেখাবো। একটু সময় দাও।
-ভজু দিদিমনি বলতে পাগল।
-হ্যাঁ। আমি না থাকলে ভজুর সঙ্গে খুনসুটি করে। অনেকটা বাচ্চা মেয়ের মতো হয়ে গেছে। জেদ বেড়ে গেছে।
-হবে। কম ঝক্কি যায়নি শরীরের ওপর দিয়ে।
-সাগির অবতারের খবর কি।
-তোমায় মাসি বলেছেনা ওইসব নিয়ে ভাববে না। কবিতা ধমকে উঠলো।
-তুই ধমকাচ্ছিস কেনো।
মাসি হো হো করে হেসে ফেললো।