Thread Rating:
  • 114 Vote(s) - 2.66 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কিছু মনের সত্যি কথা
অগ্নিবাণ


এই এত্ত গরমের মধ্যেও শাড়ি পরে অফিস গেছিল সুমি। স্মোকি আইজ, লাল টুকটুকে লিপস্টিক এঁকেছিল। কিন্তু কোনো কাজেই এলো না! ধ্যাত!
এমনিতে প্রতিবছরই "পরব না, পারব না, যা গরম, এপ্রিল মাসেই এই, মে জুন মাসে কি হবে" - এইসব ডায়ালগ দিয়েও পয়লা বৈশাখে শাড়িই পরে সুমি। বছরের কিছু কিছু দিন ট্রাডিশনাল সাজ ছাড়া মানায় না, এমনটাই মনে হয় ওর। কিন্তু এইবছর এত ইউটিউব ভিডিও আর ইন্সটাগ্রাম রিলস দেখে স্মোকি আই বানাতে শিখল, আবার খরচা করে চিক টিন্ট কিনে গাল রাঙা করল, কিন্তু ওই কথায় বলে না, "অভাগা যেদিকে যায় সাগর শুকায়?" নইলে এত্তগুলো বছর পরে যে মর্কটটাকে একটু একটু মনে ধরেছিল ওর, সে কিনা সেদিন হাফ ডে লিভ নিয়ে ভাগলবা হবার প্ল্যান বানিয়ে রেখেছিল! আর তাই, বাকি অর্ধেক দিন জুড়ে কাজের পাহাড় নিয়ে বসেছিল!
ভেবেই নিজের ওপরেই রাগ হচ্ছে সুমির!
ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে ফাইনান্স ডিপার্টমেন্টে জয়েন করেছে ময়াঙ্ক নামের ছেলেটি। এমনিতে খুব সাধারণ দেখতে হলেও ইয়ার এন্ডের কাজের সময় দেখেছে ছেলেটির যেমন ঠান্ডা মাথা, তেমনি কাজে দক্ষতা। আর "আমি সি এ, আমি যা বলব তাই ঠিক" মার্কা ইগো নেই। আর সবসময় মুখে হাসি। একত্রিশে মার্চ, ইয়ার এন্ডের সব ডকুমেন্টের সাবমিশান হয়ে যাবার পর সবাই যখন হাল্কা মেজাজে তখন উনিও গুনগুন করে মোবাইল দেখতে দেখতে গান করছিলেন। সেই গান, যেটা ইন্সটাগ্রামে অনেক রিলেই শুনেছে সুমি। কানের দুল নিয়ে এত সুন্দর গান শুনে মুগ্ধ ও হয়েছে, কিন্তু ময়াঙ্কের গুনগুন শুনেই বেশ একটা "ওয়াও" ফিল এসেছে ওর।
তা, সেই ময়াঙ্ককে একটু মুগ্ধ করবে ভেবেছিল পয়লা বৈশাখে। আর একটু জানার চেষ্টা করবে ছেলেটা কেমন... কিন্তু চান্সই পেল না। অফিসের সবাই সবাইকে "শুভ নববর্ষ" "কী সুন্দর লাগছে!" "আয়, একটা সেলফি তুলি" নিয়ে যখন ব্যস্ত, তখন একবার "হ্যাপি বেঙ্গলি নিউ ইয়ার" বলেই কাজে বসে গেছিল ও।
ময়াঙ্ক, না আস্ত মর্কট!
ছুটি নিলেই ভাল হতো তারচেয়ে!
যাই হোক, সেদিন এমনি অফিসে মজা হয়েছে বেশ। সবাই মিলে অনেক ছবি তোলা হয়েছে। লেগ পুলিং হয়েছে। পারচেজের অনীকদা "তোকে তো একদম নতুন বৌ লাগছে, শুধু সিঁদুরটাই নেই" বলে পেছনে লেগেছে।
কিন্তু এতকিছুর মধ্যেই মর্কটটাকেও মিস করেছে সুমি।
তবে শুক্রবার ওই হুটোপুটির পরে খুব ক্লান্ত ছিল। তাই শনিবারটা মোটামুটি ঘুমিয়ে আর জাস্ট ল্যাদ খেয়েই কাটিয়েছে ও। একটা সুপারহিট দক্ষিণী ছবির সিকোয়েল এসেছে, সেটাও দেখতে যেতে ইচ্ছে করেনি। আজও সকালে উঠে ফেসবুকের নিউজফিড স্ক্রোল করছে অলস হাতে, হঠাৎ একটা 'টুং' আওয়াজ। হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ।
আর সেন্ডারের নাম দেখেই হাত থেকে প্রায় ফোনটা পড়ে যাচ্ছিল সুমির।
সেই হনুমানটা।
অর্থহীন একটা রাগ তাড়া করে বেড়াচ্ছে ওকে। তাই প্রথমেই মনে হল "আমার পারসোনাল নাম্বারে মেসেজ করল কেন? অফিসের নাম্বারে না করে?" তারপর তড়িঘড়ি মেসেজটা খুলল।
"হাই। ইউ দেয়ার?"
"হ্যাঁ, আছি।"
"সেন্ডিং আ ফাইল। উইল লুক ফরোয়ার্ড টু ইয়োর ফিডব্যাক।"
নির্ঘাত কোনো কাজ দেবে। ওদের ইন্টার-ডিপার্টমেন্টাল কাজ হয় কিছু।
তাও না তো করা যায় না। তাই বেজার মুখে "শিওর" লিখল ও। আর তারপরেই অফলাইন হয়ে গেল। ব্যাটা বুঝুক, ও সবসময় অ্যাভেলেবেল থাকে না ছুটির দিনে।
এক্কেবারে স্নান-টান সেরে, লাঞ্চ করে আবার মোবাইলটা হাতে নিল ও। নোটিফিকেশন এ দেখে যা ভেবেছে তাই। প্রায় আট -ন'টা মেসেজ নোটিফিকেশন এসেছে উজবুকটার কাছ থেকে। একটা ভয়েজ নোট ও আছে। হয়ত যে কাজটা দিয়েছে সেটা কিভাবে করতে হবে তার নির্দেশিকা আছে।
বিরক্ত হয়েই খুলল হোয়াটসঅ্যাপ টা।
"হাই, সুমি। স্যরি তোমাকে সানডে তে মেসেজ করছি।" প্রথম মেসেজ।
উঃ! নেকু! মনে মনে ভাবল ও!
"বাই দ্য ওয়ে, দ্যাট ডে, তোমাকে র‍্যাভিশিং লাগছিল!"
"মানে ইউ লুক গুড এভরি ডে। কিন্তু সেইদিন... ওয়াজ স্পেশ্যাল।"
"আমি জানতাম না সেদিন বেঙ্গলি নিউ ইয়ার। একটা কাজে হাফ ডে নিয়েছিলাম। স্যরি!"
বাব্বা, এ কী ফ্লার্ট করছে নাকি! মেসেজ ঘাঁটতে ঘাঁটতে ভাবছিল সুমি। এরপরেই আছে ভয়েজ নোট টা। কাজ দেবার আগে মাখন লাগিয়েছে আরকি!
ভয়েজ নোটটা খোলে সুমি।
আর গান বেজে ওঠে "এসোওও হে বৈশাখ এসো এসো..."
ময়াঙ্কের গলায় রবীন্দ্রসঙ্গীত! তাও সেই গান, যেটা দিয়েই নববর্ষের শুরু হয়। আর একটু অবাঙালি টান থাকলেও মোটের ওপর সুন্দর গেয়েছে।
ওর জন্যেই গেয়েছে কি?
একটু একটু করে গলে যাচ্ছিল সুমি।
"থ্যাংকইউ। তুমি খুব ভাল গান করো।" মেসেজ করল ও।
"রিয়্যালি? থ্যাংকইউ! " সাথে সাথে মেসেজ ঢুকল প্রায়।
"একদম।"
"তবে..."
"কি?"
"সেদিনের গানটা বেশি ভাল গেয়েছিলাম, তাই না?"
"সত্যি বলব? হুম! তবে, এটাও ভাল।"
"এটা কাল সারাদিন প্র‍্যাকটিশ করে তুলেছি। তাও সেভাবে পারিনি।"
"একদিনে? তাহলে তো খুব ভাল হয়েছে।"
"সেদিনেরটা বেশি ভাল কেন হয়েছিল জানো?"
"কেন?"
"তুমি সেদিন চান্দ-বালিয়া পরা চাঁদ হয়ে ছিলে যে!"
"ধ্যাত!"
"আরে, সাচ্চি-মুচ্চি!"
হঠাৎ করে খুউউউউব আনন্দ হচ্ছে সুমির।
উজবুক, হনুমান, মর্কটটার পেটে পেটে এত!
ধ্যাত! ধ্যাত! ধ্যাত!
খুব হাসছিল সুমি।
আয়না দেখেনি ও... দেখলে বুঝতে পারত, ওর গালদুটো লাল টুকটুকে হয়ে আছে - এর সামনে কোথায় লাগে কেমিক্যাল প্রোডাক্ট!
দারুণ অগ্নিবাণেও কিউপিড নিজের কাজ করেই যাচ্ছেন যে!
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কিছু মনের সত্যি কথা - by ddey333 - 20-04-2022, 10:40 AM



Users browsing this thread: 22 Guest(s)