Thread Rating:
  • 60 Vote(s) - 3.33 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance মায়া - আমরা সবাই বাঁধা যেখানে (সমাপ্ত)
পর্ব- চৌদ্দ




পার্থ কদিন ধরেই বলছিলো ওর জন্মদিনে তথা কে ওদের বাসায় যেতেই হবে। বাসার কথা শুনে তথা প্রথমেই সাফ না করে দিয়েছিল। বাসায় অনুষ্ঠান মানেই অনেকেই থাকবে। ওদের ফ্যামিলির লোকজন, আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশি ওদের মাঝে তথা গিয়ে কি করবে। পরিচয়ে কি বলবে, বন্ধু? মেয়ে বন্ধু এভাবে বাসায় যায় নাকি। এর চেয়ে ভাল সে যাবে না।


কিন্তু ও দিকে পার্থ নাছোড়বান্দা, তথা কে যেতেই হবে। বাসায় অনুষ্ঠানে শুধু বন্ধু-বান্ধবরাই থাকবে। পার্থের বাবা মা চাকরি করে তাই তারা দিনে বাসায় থাকে না তখনি বন্ধু রা মিলে সেলিব্রেট করবে। বারবার করে পার্থ এমন ভাবে তথাকে মানানোর চেষ্টা করেই চলেছে। শেষ পর্যন্ত তথাকে রাজি হতেই হলো, বলতে গেলে বাধ্যই হলো। ভালবাসার মানুষ জন্মদিনে মন খারাপ করে থাকুক সেটা তথা নিজেও চায় না। আজকাল তথার পুরো পৃথিবীটাই জুড়ে পার্থ। পার্থের জন্য ওর ভালবাসার জন্য সব কিছু করতে পারে তথা।

টিউশন নিয়ে টেনশনে ছিল সেটাও না থাকাতে পার্থের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যাওয়ার সুযোগ টা আরও ভালভাবে তৈরী হয়ে যায়। বাসা থেকে বেরিয়ে আগে চলে যায় গাঙ্গিনাপাড় ঘড়ির মার্কেটে। গত দু মাসের জমানো টাকা দিয়ে পার্থ কে গিফট দেবার জন্য একটা ঘড়ি কিনবে। ঘড়ি কিনে শাপলা স্কয়ারে এসে পার্থকে ফোন করে। একটু পরেই বাইকে এসে তথা কে বাসায় নিয়ে যায়।

সকাল থেকে আকাশ টা মেঘলা হয়ে আছে, মাঝে সাঝে ঝড়ো বাতাস বইছে৷ পার্থের বাসায় যাবার পথেই ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়তে শুরু করলো৷ বৃষ্টির বেগ বাড়ার আগেই ওরা বাসায় পৌঁছে গিয়েছিল। ওদের বাসাটা নাহা রোডের একটু ভিতরের দিকে। একটা ৮ তলা বিল্ডিং এর তিন তলার একটা ইউনিটে পার্থ রা থাকে। ভালই বড়সড় ইউনিট টা। তিনটে রুম, দুটো বাথরুম, রান্নাঘর, ডাইনিং রুম, বারান্দা সবই আছে। বাসায় ঢুকে কাউকে দেখতে না পেয়ে অবাক হয় তথা।

-তোমার বাকি বন্ধুরা কোথায়? তুমি না বলেছিলে তোমার কলেজের বন্ধু-বান্ধবীরা আসবে।

-হুম আসবে তো। বৃষ্টির কারণে আটকে গেছে। একটু আগেই কথা হয়েছে এইতো কিছুক্ষণের মাঝে এসে পড়বে।

-একটা তোয়ালে দিবে, চুল গুলো ভিজে গেছে।

-এইতো এনে দিচ্ছি।

তোয়ালে দিয়ে চুল গুলো মুছে নিয়ে পার্থের রুমে গিয়ে বসে তথা। খুব ছিমছাম করে সাজানো রুমটা। একপাশের দেয়ালে সুন্দর সুন্দর ছবি আর্ট করা। টেবিলের উপরে পার্থের একটা বড় বাধানো ছবি তার চারপাশে ছোট ছোট নানা রঙের বাতি জ্বলছে।

-তা আমার জন্য কি গিফট এনেছো। দেখাবে না??

-যেটুকু টাকা জমিয়েছিলাম সেটা দিয়ে একটা ঘড়ি এনেছি।( ব্যাগ থেকে ঘড়িটা বের করে) তোমার পছন্দ হয়েছে।

-অনেক সুন্দর, আমার হাতে পড়িয়ে দাও।

-সত্যি?

-হুম সত্যিই জান। অনেক সুন্দর মানিয়েছে। তা আমার যে আরেকটা গিফট পাওনা সেটা??

-(অবাক হয়ে)আর কিসের গিফট?

-কেন, মনে নেই? আমি যেটা চেয়েছিলাম।

-না না। ওসব হবে না৷

-(কাঁদু কাঁদু মুখ করে) প্লিজ জান। একটা শুধু একটা কিস করবো প্লিজ।

-আমি পারবো না৷ এমন করো না।

-একবার, শুধু একবার জান। আমি কি কখনো তোমাকে অন্যদের মত জোর করেছি? কখনো এসব চেয়েছি। আজ আমার জন্মদিনে একটা বার চাইছি আর তুমি এমন করছো।

-তুমি না একটা, আমার এসব কেমন যেন লাগে। আমি পারবো না।

-তুমি পারবে, আমি শিখিয়ে দেব। তোমার লজ্জা লাগলে চোখ বন্ধ করে রাখো।

আর কোন যুক্তি খোঁজে পায় না তথা। হয়তো চেষ্টাও করে না খোঁজার। এত যুক্তি খোঁজে কি হবে, তাতে যদি ভালবাসার মানুষটা কষ্টই পায়। একটা চুমোতে যদি ও খুশি থাকে তাহলে কেন আটকাবে। ওর খুশিতেই তো আমার খুশি, আমি তো ওকে ভালবাসি।

চোখ বন্ধ করে নেয় তথা আর অপেক্ষা করা পার্থের চুমো গ্রহন করার। এগিয়ে আসে পার্থ তথার লিপস্টিকে গোলাপি হয়ে উঠা ঠোঁট দুটোর দিকে। পার্থের নিশ্বাস গুলো নিজের মুখের কাছে অনুভব করে তথা৷ পার্থের ঠোঁট জুড়ো নেমে আসে তথার ঠোঁটের কাছে, আলতো করে স্পর্শ করে ওর উষ্ণ ঠোঁটে।
চোখ খোলে না তথা, ওর ঠোঁট গুলো তিড়তিড় করে কাঁপছে। সেই সুযোগে আবারো তথার ঠোঁটের উপর নিজের ঠোঁট গুলো চেপে ধরে। অল্প অল্প করে চালিত হতে থাকে দু'জোড়া ঠোঁট। একজনের প্রেম রস নিংড়ে নিতে থাকে আরেকজন। রস ধারায় ভিজে উঠে দুজনার অনুভূতির সচল ঠোঁট। একে অপরকে আকড়ে ধরে উষ্ণ আলিঙ্গনে। তথার ঠোঁটের পাটি দুটো পালা করে চোষে চলে পার্থ। যেন ওগুলে কারো ঠোঁট নয় মধুভান্ড। চুম্বনের উষ্ণতায় গলতে থাকে তথার শরীর। রক্তের তাপে কিংবা কামের উত্তেজনায় শরীরে শিহরনের ঢেউ উঠে। আরও এলিয়ে দেয় নিজেকে পার্থের বুকে। পার্থের হাত গুলো ওর পিঠে চড়ে বেড়ায়। আস্তে আস্তে স্পর্শ পায় নিজের পেটের উপর নাভির কাছে। শরীরটা মাঝে মাঝে কাঁপুনি দিয়ে উঠে। হাত গুলো উপরে দিকে উঠতে থাকে। নিজের বুকের উপর হাতের আলতো স্পর্শ পায় তথা৷ ধীরে ধীরে হাতের আঙুল গুলো খেলে যাচ্ছে ওর স্তনের উপর। নিচে ব্রা থাকায় সহসাই তথার স্তন বোটার হদিস পায় না পার্থ। তাই ব্যর্থ চেষ্টায় হালকা মুচড়ে দেয় ওর স্তন দুটো। ব্যাথা আর উত্তেজনা দুটোর মিলনে সীৎকার করে উঠে তথা।

ওঘরে টেলিফোনটা আগেও দুবার বেজে বেজে বন্ধ হয়ে গেছে। এবার আবার বাজতেই দুই কপোত-কপোতীর হুস ফিরে। সাথে সাথেই লজ্জায় নিজেকে পার্থের বাহুডোর থেকে নিজেকে আলগা করে নেয়। তথার মুখমন্ডলে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে উঠেছে। সেগুলোতে আলো পড়ে চিকচিক করছে।
পার্থ ফোন রিসিভ করার জন্য পাশের রুমে চলে যায়। তথা বসে এদিক সেদিক দেখতে থাকে। কাছেই বিছানার উপর পার্থের মোবাইলটা পড়ে আছে। খুব দামি ফোন, ফোনের ডিজাইন, ক্যামেরা সবকিছু অনেক ভাল। মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখতে থাকে তথা৷ কলেজে, টিউশনে অনেকের হাতেই এমন দামি ফোন দেখে ইচ্ছে জাগে নিজের এমন একটা মোবাইলের। হঠাৎ বিপ বিপ করে আওয়াজ করে একটা মেসেজ আসে। মোবাইল টা লক করা কিন্তু স্ক্রিনে যেটুকু মেসেজ আছে সেটা দেখে হতভম্ব হয়ে যায় তথা৷ মেসেজে লেখা
"কিরে ব্যাটা এক বছরে আর কতগুলা জন্মদিন সেলিব্রেট করবি। মাল কি পটে গেছে? আজকেই খেয়ে দিবি নাকি? একা একা সব মজা নিস না। আমাদের দেখার জন্য কিছু...." বাকিটা দেখা যাচ্ছে না।
কি করবে বুঝতে পারে না তথা৷ এখানে এসে যে কতবড় ভুল করেছে সেটা বুঝতে পারছে। হাত পা কাঁপতে থাকে তথার। ওর ব্যাগটা হাতে নিয়ে ওঘরে উকি দেয়। পার্থ এখনো কারও সাথে কথা বলছে। এই সুযোগ তথা দৌড়ে ফ্ল্যাট থেকে বেড়িয়ে আসে। বিল্ডিং থেকে নেমে দৌড়াতে থাকে, শুধু সামনের দিকে দৌড়াতে থাকে। মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে সেদিকে কোন খেয়াল নেই ও শুধু দৌড়ে যাচ্ছে।



                              ---★★★---

কাঁধে মাথা রেখে সেই কখন থেকে কেঁদেই চলেছে মেয়েটা। কান্না করে যদি মনটা হালকা হয় তবে কান্না করুক। চোখের জলে সব কষ্ট, গ্লানি, মলিনতা ধুয়েমুছে সাফ হয়ে যাক।

-(চুলের মাঝে আঙুল দিয়ে বিলি কাটতে কাটতে)বোকা মেয়ে কোথাকার। এভাবে কেউ কাঁদে নাকি। এই দেখো আশেপাশে মানুষ দেখে কি ভাবছে হুম। অনেক হয়েছে এবার চোখ মুছো।

-(কান্নাটা থেমে আসে কিন্তু সেটার রেশ থাকে ফোঁপানোর মাঝে)

-পাগলি মেয়ে, আমি তো জানতাম তুমি অনেক সাহসী, মনের দিক থেকে শক্তিশালী। তা ভিতরে ভিতরে যে এত বোকা সেটাতো জানতাম না। তুমি কান্না করছো কেন হুম।

-আমি যে অন্যায় করেছি। এমন কিছু করা তো আমার উচিত হয়নি।

- অন্যায় করবে কেন? কাউকে ভালবাসা কি অন্যায়? অন্যায় করলে ঐ ছেলেটা করেছে। সে তোমার ভালবাসার মর্যাদা দিতে পারে নি। তবে হ্যাঁ  তুমি ভুল করেছো, ভুল মানুষকে ভালবেসেছো। তবে ভুল করাটা খারাপ কিছু না। আমরা যদি ভুল না করি তবে শিখবো কি করে। ভুল কি তুমি একা করো? না তো আমরা সবাই করি। 

-আমার উপর তুমি এখনো রেগে আছো না?

-আরে না! রাগ করবো কেন। কিন্তু হ্যাঁ এখন যদি কান্না বন্ধ করে স্বাভাবিক না হও তবে রাগ করবো, ভীষন রাগ করবো।

ওড়না দিয়ে চোখের মুছে সোজা হয়ে বসে তথা।

-এবার একটু হাসো তো। দেখি কখন তোমাকে বেশি সুন্দর লাগে হাসার সময় নাকি চোখ মুখ ফুলিয়ে কান্না করার সময়। 

না চাইতেও হালকা হাসি চলে আসে তথার মুখমন্ডলে।

-এইতো এবার ঠিক আছে। এখন চলো রাত ভালই হয়েছে বাসায় ফিরতে হবে তো নাকি। আজ রাতে ভাল করে একটা ঘুম দিবে আর সব কিছু ভুলে যাবে। কিচ্ছু হয়নি বুঝেছো। আরও খারাপ কিছু হতে পারতো। কাল থেকে নতুন সকাল, সব কিছু নতুন করে শুরু। বাকি সময়টা শুধু সামনের দিকে মনোযোগ দিবে। চলো এখন উঠো।

নিলয়ের হাত ধরে উঠে দাঁড়ায় তথা। রেললাইন ধরে হাটতে থাকে মেইন রোডের দিকে৷ আকাশের মেঘলা ভাবটা অনেকটা কেটে গেছে, চাঁদের আলোতে আশপাশটা আগের থেকে স্পষ্ট। ফুরফুরে বাতাস বইছে, বাতাসে তথার খোলা চুল গুলো এলোমেলো করে উড়ছে।
Shy হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
 দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।। Shy
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মায়া - আমরা সবাই বাঁধা যেখানে - by nextpage - 18-04-2022, 08:56 PM



Users browsing this thread: 16 Guest(s)