Thread Rating:
  • 159 Vote(s) - 3.41 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
WRITER'S SPECIAL গোলকধাঁধায় গোগোল (সমাপ্ত)
[Image: Polish-20220325-195122978.jpg]

(৫)

কথায় বলে স্মৃতি সর্বদা সুখের হয়। কিন্তু কিছু কিছু স্মৃতি কোনো নির্দিষ্ট ঘটনার জন্য মানুষের কাছে আজীবন লজ্জাজনক হয়ে থাকে। বছরখানেক আগে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের সেই রাতে কলেজের শৌচালয়ে ঘটে যাওয়া ওই ঘটনার কথা মনে পড়লে ভেতর ভেতর আজও লজ্জাতে কুঁকড়ে যায় অরুন্ধতী। হঠাৎ করে মূত্রের বেগ এসে যাওয়া, তার জন্য প্রধান শিক্ষকের ওয়াশরুম ব্যবহার করা, এমনকি তারপর একটি অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে পড়ে যাওয়া .. এর কোনোটাই অস্বাভাবিক বলে মনে হয়নি তার কাছে। কিন্তু কলেজের অডিটোরিয়ামে ফিরে আসার পরে কিছু টের না পেলেও, অনুষ্ঠান শেষে গোগোলকে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসার সময় অরুন্ধতী অনুভব করেছিলো তার পরনে নিম্নাঙ্গের অন্তবাস নেই। মুহূর্তের মধ্যে তাঁর মনে পড়ে গিয়েছিল - প্রধান শিক্ষকের ওইরকম বাজখাঁই গলা শুনে নার্ভাস হয়ে গিয়ে তাড়াহুড়োতে বেরোতে গিয়ে বাথরুমে ছেড়ে আসা প্যান্টিটা আর পড়া হয়নি তার। "ইশ্ ছিঃ ছিঃ .. এইরকম ভুল আমি করলাম কি করে! ওটা যদি নিশীথ বাবু দেখতে পায় বা অন্য কেউ দেখতে পায় তাহলে কি ভাববে তার সম্বন্ধে.. এখনতো উপায়ও নেই ওটা কে নিয়ে আসার" এটা ভেবেই বারবার লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছিলো অরুন্ধতী।

গোগোলের ঠিক পেছনে এসে দাঁড়ানো নিশীথ বটব্যালকে দেখে অরুন্ধতীর আবার সেই এক বছর আগের রাতের ঘটনাটির কথা মনে পড়ে গেলো। শ্রবণেন্দ্রিয়ে তালা লেগে যাওয়া অপ্রস্তুত অরুন্ধতীর‌ কানে তার সন্তানের শেষ কথাগুলো পৌঁছালো না। "নমস্কার মিসেস মুখার্জি .. ভালো আছেন নিশ্চয়ই .. আমাদের তো সম্ভবত আগে একবার পরিচয় হয়েছে .. আপনার ছেলেকে পৌঁছে দিয়ে গেলাম .. বড্ড কান্নাকাটি করছিল .." প্রধান শিক্ষকের কথায় চমক ভাঙলো অরুন্ধতীর। অন্যমনস্ক হয়ে গিয়ে মা যে তার কোনো কথাই শুনছে না এটা লক্ষ্য করে অতি উৎসাহী এবং আহ্লাদিত গোগোল পুনরায় তার মাতৃদেবীকে আজ সকালে কলেজে পৌঁছানো এবং সেখান থেকে তার বাড়ি ফিরে আসার সমস্ত ঘটনা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে বর্ণনা করলো।

'সেই রাতে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি আর পাঁচটি ঘটনার মতোই সাধারণ এবং অপ্রীতিকর অবস্থায় পড়ার জন্য তার নির্বুদ্ধিতাই দায়ী, এর জন্য  সুপুরুষ এবং সজ্জন প্রধানশিক্ষক মহাশয়কে কোনরূপ দোষ দেওয়া যায় না। বরং তার ছেলেকে স্বয়ং বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছে যে ব্যক্তি তাকে ভেতরে না আসতে বললে গৃহস্থের অকল্যাণ হতে পারে' - এইসব ভেবে, অরুন্ধতী হাসিমুখে নিশীথ বাবুকে ভেতরে আসতে আহ্বান জানালো।

বাড়িতে থাকলে অরুন্ধতী আগে শাড়িই পরতো সব সময়। অনিরুদ্ধর হাজার অনুরোধ সত্বেও অন্য কিছু পড়ার কথা কল্পনাতেও অনেনি সে। ইদানিং হয়তো লোকমুখে শোনা আপডেটেড বৈশালীর অনুপ্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয়ে বা অন্য কোনো কারণেও হতে পারে অরুন্ধতী বাড়িতে শাড়ি পড়া ছেড়ে নিজেকে হাফস্লিভ সুতির কাপড়ের ম্যাক্সিতে আপডেট করেছে। তবে ওইটুকুই .. পোশাকের দিক থেকে এর বেশি আর এগোনোর কথা ভাবতেই পারেনা অরুন্ধতী। এমত অবস্থায় বাইরের লোক কেউ এলে ম্যাক্সির উপরে স্বভাবতই একটা ওড়না জড়িয়ে নেয় রুচিশীলা অরুন্ধতী। কিন্তু এক্ষেত্রে বাইরে থেকে শুধুমাত্র গোগোলের গলার আওয়াজ শুনে সে ভাবতেও পারেনি তার ছেলের সঙ্গে অন্য কেউ বিশেষত তারই কলেজের প্রধান শিক্ষক এসেছে। ভিতরে উর্ধাঙ্গের অন্তর্বাস ছাড়াই শুধুমাত্র নিম্নাঙ্গের অন্তর্বাসের ওপর একটি পাতলা সুতির সাদার উপর গোলাপি ববি প্রিন্টেড হাফস্লিভ ম্যাক্সি পরেছিলো সে। হঠাৎ করে ঘটে যাওয়া এইরকম একটি ঘটনার ফলস্বরূপ প্রথমে এতটাই অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছিল যে নিজের বর্তমান পোশাক সম্পর্কে বিন্দুমাত্র সতর্ক না হয়েই নিশীথ বাবুকে বৈঠকখানার ঘরে সোফাতে বললো অরুন্ধতী।

 আকর্ষণীয় দেহবল্লরীর অধিকারিণী লাবণ্যময়ী স্বাস্থ্যবতী অরুন্ধতীকে উর্ধাঙ্গের অন্তর্বাসহীন পাতলা সুতির কাপড়ের হাফস্লিভ ম্যাক্সিতে সেই মুহূর্তে ভয়ঙ্কর উত্তেজক লাগছিল। এতদিন তার মনের মণিকোঠায় সযত্নে থাকা তারই কলেজের একজন ছাত্রের মাকে এইরূপে দেখতে পাবে এটা বোধহয় স্বপ্নেও ভাবেনি নিশীথ বাবু। কথা বলার তালে তালে ম্যাক্সির ভিতরে বক্ষবন্ধনিহীন দোদুল্যমান পুরুষ্টু স্তনজোড়ার নৃত্যশৈলী এবং সামনেথেকে ঝলমলে রোদের আলো পড়ে খুব প্রচ্ছন্নভাবে পাতলা সুতির কাপড়ের ভেতর থেকে স্তনবৃন্তের আভাস চোখ এড়ালো না অভিজ্ঞ নিশীথ বটব্যালের। প্রধান শিক্ষকের চোখের দৃষ্টি অনুসরণ করে এক লহমায়  নিজের বর্তমান পোশাক সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হয়ে "স্যার একটু বসুন .. আমি চা নিয়ে আসছি.." এইটুকু বলে প্রতুত্তরে নিশীথ বাবুকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ঘরের ভেতরে অন্তর্হিত হয়ে গেলো অরুন্ধতী।

ততক্ষণে প্যান্টের উপর দিয়ে দুই পায়ের মাঝখানে তাঁবু বানিয়ে ফেলা হেডমাষ্টার মশাই তার ছাত্র অনির্বাণের অবান্তর কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে নিজের উত্তেজনাকে প্রশমিত করতে লাগলো। মিনিট পনেরো পর চায়ের কাপ সঙ্গে প্লেটে করে ডালমুট আর ক্রিম দেওয়া বিস্কুট নিয়ে বৈঠকখানার ঘরে প্রবেশ করলো অরুন্ধতী। নিশীথ বাবু লক্ষ্য করলো ম্যাক্সির উপর একটি হাউসকোট চাপিয়ে এসেছে গোগোলের মাতৃদেবী। 'সত্যিই একজন সতী-সাধ্বী এবং রুচিশিলা ভদ্রমহিলা এই মিসেস মুখার্জী। তবে এই ধরনের পবিত্র নারীকে অপবিত্র করার খেলায় তো সে সিদ্ধহস্ত।' - মনে মনে কথাগুলো ভাবতে লাগলো নিশীথ বাবু।

সব অভিভাবকরাই চায় কলেজে তাদের সন্তানের পারফরম্যান্স সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল হতে। কিন্তু টিচার্স এন্ড পেরেন্টস মিটিং এর দিন স্বভাবতই অত্যধিক জনসমাগম হওয়ার ফলে নিজের সন্তানের ব্যাপারে আলাদা করে সেই অর্থে কিছুই জানা যায় না। এহেন  প্রধান শিক্ষক স্বয়ং তার বাড়িতে এসে পড়ায় সেই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইলো না অরুন্ধতী। উল্টোদিকের সোফায় বসে বিদ্যালয়ে তার ছেলের কার্যকলাপের ব্যাপারে নিশীথ বটব্যালের কাছে টুকটাক খোঁজখবর নিতে লাগলো গোগোলের মাতৃদেবী। অপরদিকে 'তিনি সমগ্র বিদ্যালয়ের ছাত্রদের খুব ভালোবাসেন এবং পড়াশোনায় ভালো হওয়ার জন্য বিশেষত অনির্বাণকে অতিমাত্রায় স্নেহ করেন' - এইরূপ উক্তি করে ধূর্ত নিশীথ বাবু অরুন্ধতীর মন অতিমাত্রায় প্রসন্ন করার চেষ্টা করতে লাগলো। তার মাতৃদেবীর নির্দেশে গোগোল ততক্ষণে কলেজের জামাকাপড় ছেড়ে ফ্রেশ হতে চলে গিয়েছে ভেতরে।

- "গত বছর আমাদের কলেজের প্রতিষ্ঠা দিবসের দিন আপনার সঙ্গে দেখা হয়েছিল, কিন্তু সেভাবে পরিচয় হয়নি। আপনি কি হাউস ওয়াইফ .. নাকি কোথাও কাজ করেন?" চায়ের পেয়ালায় চুমুক দিয়ে অরুন্ধতীর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করলো নিশীথ বাবু।

- "না না, আমি একজন গৃহবধূ। বাইরে কোথাও কাজ করি না ঠিকই, তবে আপনারা পুরুষরা যারা বাইরে কাজ করেন তারা কি মনে করেন .. গৃহবধূরা শুধু বাড়িতে চুপচাপ বসে থাকে? শুধু আপনারা কেনো, অনেক কর্মরত মহিলাও এটা মনে করে থাকেন। আমাদের পরিশ্রম আপনাদের থেকে কয়েক গুণ বেশি। আমরা আছি বলেই আপনারা বাইরে গিয়ে টেনশন মুক্ত হয়ে কাজ করতে পারেন। কারণ আপনারা জানেন বাড়িতে ফিরে এলে সবকিছু হাতের কাছে পেয়ে যাবেন।"

- "ওরে বাবা .. আপনি তো দেখছি খুব মনোক্ষুন্ন হয়েছেন, আপনাকে গৃহবধূ বলেছি বলে। তবে আপনি একদম ১০০% সত্যি কথা বলেছেন। আপনারা বাড়িতে থাকেন বলেই আমরা বাইরে নিশ্চিন্তে কাজে যেতে পারি। কিন্তু তার সঙ্গে এটাও বুঝলাম আপনি বাইরে কাজ করা ব্যক্তিদের প্রতি বিশেষত ওয়ার্কিং লেডিদের প্রতি একটু হলেও জেলাস। কি, ঠিক বললাম তো? তবে আমি মনে করি, এটাকে অনধিকার চর্চাও বলতে পারেন .. আপনার নামের মতোই আপনি একজন দশভূজা নারী। তাই আপনার মতো একজন শিক্ষিতা মহিলার পক্ষে বাড়ির কাজ সামলে বাইরের কাজ করা খুব সহজ।"

- "জেলাস মোটেও নয় আমি, যেটা সত্যি সেটাই বলেছি। আর শিক্ষিতা? আপনার বোধহয় কোথাও একটু ভুল হচ্ছে। পড়াশোনা নিয়ে থাকতে আমি খুব ভালোবাসি এবং বিয়ের পর আমি উচ্চশিক্ষা করতেও চেয়েছিলাম কিন্তু সেটা যে কোনো কারণেই হোক সম্ভবপর হয়নি। তবে আমি কিন্তু উচ্চশিক্ষিতা নই .. আমি সামান্য উচ্চ মাধ্যমিক পাস। কে চাকরি দেবে আমাকে? তাছাড়া সন্তান-সংসার সামলে বাইরে কাজ করা আমার পক্ষে বোধহয় সম্ভব হবে না।"  

- "আপনি বললেন বিয়ের পর উচ্চশিক্ষা করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু হয়ে ওঠেনি। তখন হয়নি তো কি হয়েছে, এখন হতেই পারে। আমাদের এলাকায় যে 'মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়টি' আছে আপনি বললে সেখান থেকে আমি নিজে আপনার গ্রাজুয়েশন করার ব্যবস্থা করে দেবো। তাছাড়া শিক্ষাগত যোগ্যতা চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধা সৃষ্টি করে না ম্যাডাম। আমি একটা ক্ষুদ্র স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত আছি, সেই সংস্থায় আমি ছাড়াও দু'জন পার্টনার আছে। তাদের মধ্যে একজন আপনার হাজব্যান্ডের কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার মিস্টার কামরাজ .. চেনেন  নিশ্চয়ই। আপনি যদি চান তাহলে ওনাদের সঙ্গে কথা বলে ওখানে কিছু একটা ব্যবস্থা করতে পারি আপনার জন্য।

এক বছর আগের সেই রাতে ঘটে যাওয়া ওইরকম একটি অপ্রীতিকর ঘটনা তার মনে নিশীথ বাবুর সম্পর্কে হয়তো কোথাও একটি নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি করেছিল। ওই চরিত্রটির সঙ্গে হয়তো সে কোনোদিন সামনাসামনি আর সাক্ষাৎ করতে চায় নি। কিন্তু আজ এই মুহূর্তে তার ছেলের কলেজের প্রধান শিক্ষকের কথাগুলো অবিশ্বাস্য এবং অদ্ভুত লাগছিল অরুন্ধতীর কাছে। কিছুক্ষণ আগে মাত্র আলাপ হওয়া এক ব্যক্তি তার উচ্চশিক্ষা এবং চাকরির জন্য তাকে যে প্রস্তাব দিলেন তা বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও ভাবতে খুব ভাল লাগছে গোগোলের মাতৃদেবীর। যদিও হঠাৎ এরমধ্যে মিস্টার কামরাজের নাম শুনে বুকটা ছ্যাঁৎ করে উঠলো অরুন্ধতীর।

"আমার বহুদিনের ইচ্ছা স্নাতক হওয়ার। সেটা মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হলেও আমার কাছে খুব মূল্যবান হবে। একবার গোগোলের বাবাকে জিজ্ঞাসা করে দেখি, উনার যদি আপত্তি না থাকে তবে আমি নিশ্চয়ই গ্রাজুয়েশন করবো। কিন্তু চাকরি করা তো আমার পক্ষে সম্ভব হবে না স্যার। আমার ছেলে এখনো ছোট, তারপর বাড়িতে এত কাজ থাকে .. এগুলো সামলে আমি চাকরিতে যাবো কি করে? আর আমার ছেলে কলেজ থেকে বাড়িতে ফিরে যদি আমাকে না পায় তাহলে ওইটুকু ছেলে একা একা নিজের কাজ করবে কি করে?" কুণ্ঠিতভাবে কথাগুলো বললো অরুন্ধতী।

- "আপনার স্বামীকে অবশ্যই জিজ্ঞাসা করুন, এই ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই। তবে নিজের সিদ্ধান্ত নিজেকেই নিতে হয় .. আপনার নিজের ভালো আপনার থেকে ভালো আর কেউ বুঝবে না। যদি বুঝতো তাহলে এতদিন উনিই আপনাকে উচ্চশিক্ষার জন্য এগিয়ে নিয়ে যেতেন। আর চাকরির ক্ষেত্রে আপনাকে রোজ রোজ বাড়ির বাইরে যেতে হবে এ কথা কে বললো? সপ্তাহে একদিন বা দুইদিন হয়তো যেতে হতে পারে, তবুও সেটা আপনার সুবিধা অনুযায়ী। আপনার হাসব্যান্ডের তো অফিস ক্যান্টিন আছে। উনি সম্ভবত ওখানেই লাঞ্চ করেন, অর্থাৎ সন্ধ্যের আগে ফেরেন না। অনির্বাণও দুপুরবেলা কলেজেই থাকবে এবার থেকে .. যদি আপনার দিবানিদ্রার অভ্যাস না থাকে তাহলে দরকার পড়লে সময় করে দুপুরবেলাই না হয় আমাদের সংস্থা অর্থাৎ আপনার কর্মস্থলে যাবেন। একটা কথা সবসময় মনে রাখবেন আমি আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী, আপনার খারাপ হোক সেটা কখনো চাইবো না। ভাবুন, ভাবতে থাকুন আর কি সিদ্ধান্ত নিলেন অবশ্যই জানাবেন .. আমার কার্ড'টা রাখুন, এখানে মোবাইল নাম্বার দেওয়া আছে আমার। অনেক কথা হলো, এবার চলি মিসেস মুখার্জী। অত বড় কলেজের দায়িত্ব আমার, প্রচুর কাজ পরে আছে।" গুরুগম্ভীর গলায় মধু ঢেলে কথাগুলি বলে একটি পার্সোনাল কার্ড অরুন্ধতীর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বিদায় নিলো নিশীথ বটব্যাল।

★★★★

সন্ধ্যের বেশকিছু আগেই অনিরুদ্ধ বাড়ি ফিরে এলো। গোগোল তখনো ক্যাম্পাসের মাঠে খেলছে। তবে সে একা আসেনি, সঙ্গে তার সহকর্মী বৈশালী এসেছে .. আজকাল 'অফিসের বাকি কাজ বাড়িতে করার অছিলায়' বৈশালীকে প্রায়শই বাড়িতে নিয়ে আসে অনিরুদ্ধ। স্টাডিরুমের দরজা বন্ধ না করলেও পর্দা টানা থাকে। ঘন্টার পর ঘন্টা সময় কাটতে থাকে .. অফিসিয়াল কাজকর্ম কতটা হয় তা জানা নেই, তবে ভেতর থেকে হাসাহাসির শব্দ মাঝেমধ্যেই শোনা যায়। অনিরুদ্ধ এবং বৈশালীর জন্য কফি করে একবার নিয়ে যাওয়া ছাড়া ওই ঘরে সেই অর্থে প্রবেশাধিকার নেই অরুন্ধতীর।

গোগোল খেলার মাঠ থেকে বাড়িতে ফিরে ফ্রেশ হয়ে জলখাবার খেয়ে পড়তে বসে গিয়েছে অনেকক্ষণ হলো। ঘড়ির কাঁটা স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে নিজের গতি পথে অগ্রসর হয়ে সন্ধ্যে গড়িয়ে ক্রমশ রাতের দিকে এগোতে লাগলো। এতক্ষণ তো কোনোদিন থাকে না ওরা। হেডমাস্টার মশাইয়ের দেওয়া প্রস্তাবের কথাগুলো তার স্বামীকে বলার জন্য মনটা আনচান করছিল অরুন্ধতীর। তখন প্রায় রাত সাড়ে আটটা বাজে .. কফির জন্য পুনরায় হুকুম এলো স্টাডিরুম থেকে। কথাগুলো হয়তো রাতে খাওয়ার সময় বলা যেতে পারতো .. কিন্তু নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে সকালবেলা নিশীথ বাবুর মুখে এতো ভালো ভালো কথাগুলো শোনার পর থেকে নিজের মনকে আর স্থির রাখতে পারছিল না অরুন্ধতী। তাই সে সিদ্ধান্ত নিলো এখনই বলবে কথাগুলো। সেই মুহূর্তে কলিংবেল বেজে উঠলো। গোগোলকে দরজা খুলতে বলে ট্রে'র উপর দুটি কফির কাপ নিয়ে স্টাডিরুমে প্রবেশ করলো অরুন্ধতী। "হ্যাঁ গো শুনছো .. জানো তো আজ গোগোলের কলেজ হয়নি .. কাল থেকে শুরু হবে। হেডস্যার মিস্টার বটব্যাল নিজে এসে পৌঁছে দিয়ে গেছেন ওকে। উনার সঙ্গে তো আগে আলাপ হয়নি, আজ প্রথম আলাপ হলো .. খুবই সজ্জন ব্যক্তি। এই জানো .. উনি না কথাপ্রসঙ্গে আমাকে হায়ার স্টাডি করার জন্য বলছিলেন। আমাদের এখানে যে 'ওপেন ইউনিভার্সিটি' আছে, সেখানে উনি আমার গ্রাজুয়েশন করার ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন। এছাড়া একটা চাকরির অফারও দিয়েছেন। আমি তো বাবা বলে দিয়েছি আমার স্বামীকে না জিজ্ঞাসা করে আমি কিচ্ছু করতে পারবো না। তুমি কি বলো .. ওনার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যাবো? আমারও তো অনেকদিনের শখ বলো .. তাই তোমার মতামতটা জানতে এসেছি।" এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বললো অরুন্ধতী।

"কি? হোয়াট রাবিশ .." বিরক্তি প্রকাশ করে বলে উঠলো অনিরুদ্ধ।

"হা হা হা হা .. আমি ইন্টারফেয়ার না করে পারলাম না অনিরুদ্ধ, আই মিন স্যার। এই বয়সে তুমি গ্রাজুয়েশন করবে? তাছাড়া ওইসব ওপেন ইউনিভার্সিটি থেকে গ্র্যাজুয়েট হয়ে কোনো লাভ হয় না, কেউ দাম দেবে না তোমার এই পাশের .. শুধু শুধু লোক হাসানো। বাই দ্যা ওয়ে এই কোয়ালিফিকেশনে তোমাকে কে চাকরি দেবে শুনি? হ্যাঁ, তবে দোকানে সেলস গার্লের কাজ পেতেই পারো। তুমি কি বাই এনি চান্স আমার সঙ্গে কম্পিটিশনে নেমেছো? মানে ঘরে-বাইরে কাজ করে সবাইকে চমকে দেবে! সরি টু সে, ওটা সবার দ্বারা হয় না.." উচ্চহাসিতে ফেটে পড়ে বৈশালীর এইরূপ ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য শুনে লজ্জায় অপমানে কুঁকড়ে গেলো অরুন্ধতী, মুহুর্তের মধ্যে ছল ছল করে উঠলো তার চোখ।

"কথাগুলো বলার আগে একটুও ভাবলে না? ছেলে বড় হচ্ছে, ওর পড়াশোনার চাপ বাড়ছে। সর্বোপরি সংসারের এত কাজ ফেলে তুমি ড্যাং ড্যাং করে পড়তে যাবে, চাকরি করতে যাবে বাইরে? তাছাড়া এই কথাগুলো তো তুমি পরেও বলতে পারতে, দেখছো আমরা কাজ করছি, এখনই তোমাকে এসে বিরক্ত করতে হবে?" বৈশালীর তালে তাল মিলিয়ে শ্লেষ মিশ্রিত কথাগুলো নিজের স্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলে তাকে আরও কোণঠাসা করে দিতে লাগলো অনিরুদ্ধ।

"তোমার স্ত্রী এখন কথা বলবে না তো কখন বলবে .. মাঝরাত্তিরে? তুমি আর বৈশালী অফিস থেকে বেরিয়েছো পাঁচটার সময়, এখন বাজে রাত ন'টা .. অফিশিয়াল কাজ করে উদ্ধার করে দিচ্ছো সবাইকে। এই ফার্মে ৩০ বছর সার্ভিস করা হয়ে গেলো আমার .. এত কাজের বহর আমি বাপের জন্মেও দেখিনি। সবকিছুর একটা সীমা থাকা দরকার, সীমা অতিক্রম করে গেলে একটু আগে যে সংসারের দোহাই দিচ্ছিলে, সেটা যে কোনো সময় ভেঙ্গে যেতে পারে। বাইরে থেকে দাঁড়িয়ে অন্যের কথা শোনা উচিৎ নয়, সেটা আমি জানি। ফোনে জানানো সম্ভব নয় বলে, কালকে সাপ্লায়ারদের সঙ্গে মিটিংয়ের ব্যাপারে তোমাকে একটা ছোট্ট কথা বলতে এসেছিলাম, তাই বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে দাঁড়িয়ে কথাগুলো আমি শুনে ফেলেছি। বৌমার পড়াশোনা এবং চাকরি করা নিয়ে আমার কোনো ব্যক্তিগত মত নেই। শুধু একটাই কথা বলবো .. সংসারের সবদিক সামলে যদি অরুন্ধতী তার পড়াশোনা বা অন্যান্য বাইরের কাজ করতে পারে তাহলে ওকে বাধা দেওয়া উচিৎ নয়। সংসার টিকিয়ে রাখা মানে একজন শুধু অপরের হুকুম তামিল করে যাবে আর অন্যজন রোজগার করছে বলে তার সুযোগ নিয়ে যাবে এটা বোধ হয় ঠিক নয়।" হঠাৎ করে আগত চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার মিস্টার চক্রবর্তীর মুখে কথাগুলো শুনে ঘরে উপস্থিত সবাই চমকে উঠলো।

"স্যার আমি আপনাকে সম্মান করি .. কিন্তু এটা আমাদের একান্ত পার্সোনাল ব্যাপার। এখানে মনে হয় আপনার মতামত প্রকাশ করাটা উচিত হচ্ছে না।" খোঁচা খাওয়া বাঘের মত অনিরুদ্ধ এইরূপ উক্তি করলো।

"পার্সোনাল আর রাখলে কোথায় ভায়া? একজন বাইরের মহিলা যেভাবে একটু আগে তোমার স্ত্রীকে অপমান করলো এবং তুমি তার বিরোধিতা না করে তাকে সাপোর্ট করলে, তাতে করে তুমি নিজেই ব্যাপারটাকে পাবলিক করে ফেলেছো। যাইহোক আমি বোধহয় এবার সত্যিই অনধিকার চর্চা করে ফেলছি। যে কাজটার জন্য এসেছিলাম সেটা এখন আর হবে না কারন আমি আর কনসেনট্রেট করতে পারবো না। কাল অফিসেই বাকি কথা হবে .. চললাম।" এই বলে মিস্টার চক্রবর্তী বেরিয়ে যেতে গেলে তার পথ আগলে দাঁড়ালো অরুন্ধতী।

তারপর ঘরে উপস্থিত সবার উদ্দেশ্যে একটুও গলা না কেঁপে দৃঢ়তার সঙ্গে বললো "আমার তো বাবা নেই .. আপনাকে আমি বাবার মতোই দেখি। আপনি কোনো অনধিকার চর্চা করেন নি। একটু আগে আমি আমার স্বামীর অনুমতি নেওয়ার জন্য এসেছিলাম এই ঘরে, কিন্তু এখন আমি আমার সিদ্ধান্ত জানাচ্ছি। চাকরি পাবো কিনা জানি না, কিন্তু উচ্চশিক্ষা করতে আগ্রহী আমি। তবে এটাও ঠিক সংসারের বাইরে গিয়ে আমি কিছু করতে চাই না। যদি মনে করি বাইরে বের হলে সংসারের ক্ষতি হচ্ছে, আমার সন্তানের ক্ষতি হচ্ছে, তবে সেই মুহূর্তে আমি পড়াশোনা ছেড়ে দেবো। কিন্তু একবার যখন একটা সুযোগ এসেছে, এই সুযোগটা আমি নিতে চাই।"

রাতে খাবার টেবিলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একটাও কথা হলো না এই প্রসঙ্গে। বেশিরভাগ দিনের মতো অনিরুদ্ধ নিজের বালিশ নিয়ে অন্য ঘরে শুতে চলে গেলো। অন্য সময় হলে অরুন্ধতীর মনোকষ্ট অবশ্যই হতো, কিন্তু আজ এইরকম কিছু একটা ঘটবে সেটা সে আগে থেকেই জানতো। তাই গোগোলকে নিয়ে বেডরুমে ঢুকে ভেতর থেকে দরজা আটকে দিলো।

★★★★

ওদিকে ডিনার সমাপ্ত করে বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এলেন নিশীথ বাবু। পরনে শুধু একটি সবুজ রঙের শর্টস .. রাত তখন প্রায় সাড়ে দশটা। গুরুকুল বিদ্যামন্দিরের প্রধান শিক্ষকের শোবার ঘরের এলইডি টিভিতে সেই সময় একটি ভারতীয় অশ্লীল সি-গ্রেড মুভি চলছে। টিভি স্ক্রীনে চোখ রেখে আয়েশ করে বিছানায় এসে বসতেই তার মোবাইল ফোনটি বেজে উঠলো। অচেনা একটি নাম্বার থেকে ফোন এসেছে .. কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই ট্রু-কলারে ফোনের ওপাশের অচেনা ব্যক্তির আসল নাম দৃশ্যমান হতেই মুখে একটা চওড়া হাসি ফুটে উঠলো নিশীথ বাবুর, কলটা রিসিভ করলেন তিনি।

- "হ্যালো .. কে বলছেন?"

- "আ.. আমি অনির্বাণের মা বলছি। আ...পনি মিস্টার বটব্যাল তো? আপনার দেওয়া কার্ড থেকে নম্বর নিয়ে আপনাকে ফোন করছি। এত রাতে আপনাকে ডিস্টার্ব করার জন্য দুঃখিত।"

- "আরে না না, ডোন্ট সে সরি প্লিজ। এত তাড়াতাড়ি আমি শুয়ে পড়ি না। আপনার স্বামী তাহলে শেষ পর্যন্ত আপনার পড়াশোনা আর চাকরির ব্যাপারে অনুমতি দিয়েছে .. তাই তো?"

- "কারোর অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই আমার। আপনি তখন ঠিকই বলেছিলেন .. নিজের সিদ্ধান্ত নিজেকেই নিতে হয় .. আমার নিজের ভালো আমার থেকে ভালো আর কেউ বুঝবে না। আমি আপনার প্রস্তাবে রাজি। শুধু একটাই কথা সংসারের বাইরে গিয়ে আমি কিছু করতে চাই না .. যদি মনে করি বাইরে বের হলে সংসারের ক্ষতি হচ্ছে, আমার সন্তানের ক্ষতি হচ্ছে, তাহলে তখন কিন্তু পড়াশোনা আর চাকরি - দুটোই ছেড়ে দেবো।"

বুদ্ধিমান নিশীথ বাবু বুঝতে পারলেন অরুন্ধতী মানসিক দিক থেকে আস্তে আস্তে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার চেষ্টা করছে, এই সময় অতি সাবধানে এবং যত্নসহকারে খেলতে হবে .. না হলে মাছ জাল ছিড়ে বেরিয়ে যেতে পারে। "তার মানে আপনার স্বামী সেই অর্থে অনুমতি দেয়নি। কি তাই তো? এই সময় আপনার পাশে উনার সবথেকে বেশি করে থাকার দরকার ছিল। আমি যে আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী সেটা বুঝতে পেরেছেন নিশ্চয়ই .. আপনার এগিয়ে যাওয়ার পথে আপনাকে সবরকম মেন্টাল সাপোর্ট আমি দেবো। আপনার পড়াশোনার ব্যাপারে ওখানে আমার খোঁজ নেওয়া হয়ে গিয়েছে। শুধুমাত্র কলা বিভাগে গ্রাজুয়েশন করতে পারবেন আপনি .. সর্বোপরি আপনাকে তো ডিস্টেন্সে পড়তে হবে, আপনি তো আর রেগুলার ক্যান্ডিডেট হচ্ছেন না। তাই, বাড়িতে থেকেই পড়াশোনা করতে পারবেন। শুধু পরীক্ষার সময় ইউনিভার্সিটিতে আসতে হবে। আপনার সংসারের কোনো ক্ষতি হবে না .. আই প্রমিস। কালকেই আপনার নাম এন্ট্রি করিয়ে দেবো আমি .. আর ওখান থেকেই আপনাকে স্টাডি মেটেরিয়াল দিয়ে দেওয়া হবে। বাকি সাপোর্টিং স্টাডির জন্য যে সমস্ত বই লাগবে সেগুলো আমি কালকেই কিনে দেবো।"

- "আমি বাড়িতে থেকেই পড়াশোনা করতে পারবো? তাহলে তো কোনো সমস্যাই নেই। আচ্ছা কালকেই যখন সবকিছু হয়ে যাবে, তাহলে তো অনেক টাকার ব্যাপার! আমাকে একটু দয়া করে বলতে পারবেন কত টাকা লাগবে?"

- "আপনি তো বর্তমানে চাকরি করেন না। টাকার জন্য তো আপনার স্বামীর কাছেই হাত পাততে হবে। যে মানুষটা আপনার এই এগিয়ে যাওয়ার পথে মানসিকভাবে আপনার সঙ্গে নেই তার কাছ থেকে হাত পেতে টাকা চাইতে ভালো লাগবে? তার থেকে আমি বলি কি .. কালকের এডমিশনের এবং বই কেনার যাবতীয় বিল আমি পেমেন্ট করে দিচ্ছি। আপনি তো কয়েকদিনের মধ্যেই চাকরি পেয়ে যাচ্ছেন, তখন না হয় আপনার স্যালারি থেকে একটু একটু করে শোধ করে দেবেন। কথাটা কি খুব ভুল বললাম? ও হ্যাঁ, আর একটা কথা .. আমি যদি ওখানে আপনাকে আমার কলেজের ছাত্রের মা হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়ে সব সময় 'মিসেস মুখার্জী' আর 'আপনি' করে কথা বলি তাহলে ব্যাপারটা দৃষ্টিকটু লাগবে .. কারণটা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। ওখানে আমি বলেছি - আপনি আমার বান্ধবী। তাই বাধ্য হয়ে আপনাকে নাম ধরে আর 'তুমি' সম্মোধন করে ডাকতে হবে। আশা করি এই ব্যাপারটার জন্য আপনি ক্ষমা করে দেবেন আমাকে।"

কথাগুলো স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছিলো অরুন্ধতীর কাছে। যে মানুষটা শুধু মানসিকভাবে নয় অর্থনৈতিক ভাবেও এই পরিস্থিতিতে তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। সে যদি তাকে নাম ধরে 'তুমি' সম্বোধন করে ডেকেই থাকে, তাহলে ক্ষতি কি! কথায় বলে "পেহলে দর্শনধারী পিছে গুণবিচারী" সুদর্শন, পুরুষালি চেহারার নিশীথ বটব্যালের গুণের কথাও তো অস্বীকার করার জায়গা নেই অরুন্ধতীর কাছে .. তিনি তার সন্তানের কলেজের প্রধান শিক্ষক। "ছিঃ ছিঃ এতে ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই উঠছে না। আমি তো আপনার থেকে বয়সে অনেকটাই ছোট, তাই আপনি আমাকে 'তুমি' করে বলতেই পারেন। আপনি যেটা ভালো মনে করেন, সেটাই করবেন। সবকিছুই আপনাদের হাতে ছেড়ে দিলাম।"

কার্যসিদ্ধির প্রথম ধাপ যে ভালোভাবে অতিক্রম করা গিয়েছে, সেটা বুঝতে পারলেন নিশীথ বাবু। "ঠিক আছে তাহলে আগামীকাল অনির্বাণ কলেজে বেরিয়ে যাওয়ার পর দশটা নাগাদ তুমি ওপেন ইউনিভার্সিটির সামনে চলে এসো, ওখানে আমি অপেক্ষা করবো তোমার জন্য। তারপর থেকে বাকি দায়িত্ব আমার। বলছিলাম তোমরা কি শুয়ে পড়েছো? না মানে ফোনে কথা বলছো তো, মিস্টার মুখার্জি মনে হয় ঘুমিয়ে পড়েছেন।"

নিশীথ বাবুর শেষের কথাগুলো একটু অন্যরকম শোনালেও অরুন্ধতীর তাতে কোনো অসঙ্গতি মনে হলো না। বরং সাধারণ একটা প্রশ্ন বলেই মনে হলো .. উনি আর কি করে জানবেন তার স্বামী তার সঙ্গে বেডরুমে নেই .. আজকাল প্রায়ই অন্য ঘরে শোয়।  কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বোকার মতো বলে ফেললো "আসলে উনি পাশের ঘরে আছেন .. অফিসের কাজ করছেন।"

বুদ্ধিমান নিশীথ বাবুর বুঝতে বাকি রইলো না আজ অরুন্ধতীর পড়াশোনা আর চাকরি করা নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তুমুল অশান্তি হয়েছে, যার ফলস্বরূপ স্বামী তার সুন্দরী বউকে ছেড়ে পাশের ঘরে রাত কাটাচ্ছে। সম্পূর্ণরূপে কার্যসিদ্ধির জন্য এই অশান্তিটাই জিইয়ে রাখতে হবে দু'জনের মধ্যে - বাকি কাজ তো তার পার্টনার স্বহৃদয় বন্ধু কামরাজের পার্সোনাল সেক্রেটারি অজান্তেই করে দিচ্ছে। আজ সকালে গোগোলকে নিয়ে গাড়িতে আসার সময় এবং কিছুক্ষণ আগে তার বন্ধুর সঙ্গে কথা বলে অনেক কিছুই জানতে পেরেছেন প্রধানশিক্ষক মহাশয় .. বাকিটা ক্রমশ প্রকাশ্য।

★★★★

গতকাল রাতে মিস্টার চক্রবর্তীর মুখে উচিৎ কথাগুলি শুনে বোধোদয় হওয়ার জন্যই হোক বা নিজের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার জন্যই হোক পরেরদিন সকালে অরুন্ধতীর কাছে কিছুটা স্বাভাবিক মনে হলো তার স্বামীর আচরণ। ব্রেকফাস্ট করে অফিসে সাত তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যাওয়ার আগে অনিরুদ্ধ তার স্ত্রীকে বলে গেলো "তুমি তোমার কেরিয়ার নিয়ে যা করতে চাইছো করতে পারো, আই হ্যাভ নো প্রবলেম।"

সকালে উঠে আজ আগেই স্নান করে নিয়েছিল অরুন্ধতী। গোগোল সোয়া ন'টার সময় গাড়ি করে কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার পর বেরোনোর জন্য তৈরি হতে লাগলো সে। গোলাপি রঙের একটি কাঁথা স্টিচ শাড়ি এবং তার সঙ্গে ম্যাচিং চিকনের থ্রি কোয়ার্টার ব্লাউজ পরলো অরুন্ধতী। মুখে অল্প মেকআপ .. ছোট্ট টিপ, হালকা লিপস্টিক এবং চওড়া করে সিঁদুর পরিহিতা অরুন্ধতীর এই রূপ-লাবণ্য সত্যিই মনমুগ্ধকর। তারপর বেরিয়ে পড়লো নিশীথ বাবুর বলে দেওয়া গন্তব্যে।

(ক্রমশ)

ভালো লাগলে লাইক এবং রেপু দিয়ে উৎসাহিত করবেন

[Image: Animation-resize-gif-f3b601eb23d95beeb4e...911ac0.gif]


Like Reply


Messages In This Thread
RE: গোলকধাঁধায় গোগোল (চলছে) - by Bumba_1 - 17-04-2022, 08:52 PM



Users browsing this thread: 60 Guest(s)