16-04-2022, 08:18 PM
পর্ব- বার
চা নিয়ে দরজায় টুকা দিতেই রুমের দরজা খোলে গেল। কি ব্যাপার মেয়েটা কি করছে এখনও, দরজাটাও খোলা রয়ে গেছে। ভিতরে তাকাতেই দেখে সেই ভিজে কাপড়েই চেয়ারে বসে আছে তথা৷ একটা ফোঁপানোর আওয়াজ হচ্ছে, হয়তো মেয়েটা কাঁদছে। ওর বসে থাকা দেখে রাগ বাড়তে থাকে নিলয়ের।
-কি ব্যাপার হ্যাঁ, তোমাকে যে বললাম চেঞ্জ করে নিতে। কথাটা কানে গেল না।
-(আচমকা আওয়াজে ঘাবড়ে যায় তথা)
-এতক্ষণ ধরে কেউ ভিজে কাপড়ে বসে থাকে নাকি, এক্ষুনি চেঞ্জ করে নাও। চা টা টেবিলে রেখে যাচ্ছি। ৫ মিনিট সময় দিলাম। কথার হেরফের যেন না হয়। জ্বর না বাধিয়ে ছাড়বে না বুঝি।
-(বাধ্য মেয়ের মত) মাথা নাড়ায় তথা।
রুম থেকে বেরিয়ে আসে নিলয়। মেজাজ টা একটু ঠান্ডা হয়। মিনিট পাঁচেক পর আবার তথার রুমে যায়। দেখে জামাকাপড় চেঞ্জ করে জড়োসড়ো হয়ে খাটে বসে আছে মেয়েটা। মাথায় একটা তোয়ালে প্যাচানো। চোখ দুটো এখনো লাল হয়ে আছে। মুখটা শুকিয়ে আছে
-(গম্ভীর স্বরে) চুপটি করে বিশ্রাম নেও এখন। আমি ভাত বসিয়ে খাবার গরম করে দিচ্ছি। আর এই ট্যাবলেট গুলো টেবিলে রেখে গেলাম। যদি দেখ জ্বর আসছে তাহলে খেয়ে নিবে। বারবার যেন বলতে না হয়।
মাথা তুলে তাকায় না তথা। নিলয়ের চোখের দিকে তাকানোর সাহস আজ নেই। খাবার গরম করে নিলয় ডাকতেই সুড়সুড়িয়ে খেতে চলে যায়। খাওয়া দাওয়া শেষে যে যার রুমে চলে যায়। নিলয় স্টকের হিসাব আর আগামীকালের সেলস সামারি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কাজে ডুবে ছিল কতক্ষণ কে জানে। মোবাইলে সময় দেখতেই দেখে রাত ১১ টা বাজতে চললো। বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি হয়ে চলেছে। বৃষ্টির কারণে সব কিছু কেমন নিস্তব্ধ হয়ে আছে বলে রাত আরও গভীর মনে হচ্ছে। মাঝে মাঝে বাজ পড়ার শব্দে ঘরটা কেঁপে উঠছে। নাহ নিজেকেও এখন বিশ্রাম দিতে হবে, তাই শোবার প্রস্তুতি শুরু করে দেয় নিলয়।
বাথরুম থেকে ফেরার পথে ভাবে একবার তথাকে দেখা আসা দরকার। ওর রুমের ভিতরে গিয়ে দেখে গুটিসুটি দিয়ে শোয়ে আছে তথা। শরীরটা কাঁপছে হয়তো মেয়েটার। ভাল করে দেখার জন্য আরেকটু সামনে যেতেই হালকা গোঙানির আওয়াজ কানে আসে নিলয়ের। দুশ্চিন্তার ঘিরে ধরে ওকে, জ্বর বাঁধালো নাকি মেয়ে টা কে জানে। কাছে গিয়ে কপালে হাত দিয়ে জ্বর আছে কিনা দেখার জন্য হাত বাড়িয়ে ইতস্তত বোধে আবারও গুটিয়ে নেয় ও।
না এত ভাবলে চলবে না। জ্বর উঠেছে কিনা না দেখলে চলবে না। কপালে হাত রাখতেই শরীরটা আগুনে পোড়ানো লোহার মত মনে হয় নিলয়ের। আগুনের মত গরম সারা শরীর। খুব বেশিই জ্বর উঠেছে তথার। টেবিলের দিকে তাকাতেই দেখে ঔষধ ওভাবেই পড়ে আছে। না মেয়ে টাকে নিয়ে আর পাড়া গেল না- ভাবতে থাকে নিলয়। বার দুয়েক গায়ে ধাক্কা দিয়ে তথাকে ডেকেও কোন লাভ হলো না। একদম বেহুশের মত পড়ে আছে আর কাঁপছে। মাথায় জল ঢালতে হবে, তাই সেটার ব্যবস্থা করতে যায় নিলয়।
মিনিট ত্রিশের মত জল ঢেলে চলেছে তথার মাথায়। আবার কপালে হাত দিয়ে জ্বর টা কমলো কিনা বুঝার চেষ্টা, কিন্তু তেমন কোন তফাৎ পায় না। এবার ঔষধ খাওয়াতে হবে, না হলে চলছে না। কিন্তু আগে তো তাপমাত্রা টা মাপা দরকার ভেবে থার্মোমিটার টা নিয়ে আসে ওর ঘর থেকে নিলয়। থার্মোমিটার টা তো দিতে গিয়ে অস্বস্তি বোধ হয় ওর। পরক্ষণেই চিন্তা করে এখন এসব নিয়ে ভাবার সময় নেই, আগে ওকে সুস্থ করা দরকার। নিলয় ওর হাতটা তথার বুকের দিকে জামার ভিতরে ঢুকিয়ে দেয় আর থার্মোমিটারটা ডান বগলের মাঝে দিয়ে দেয়। মিনিট দুয়েক পরে আবার হাত ঢুকিয়ে থার্মোমিটার টা বের করে আনে। তাপমাত্রা প্রায় ৩ ডিগ্রির কাছাকাছি। না এখন ঔষধ টা তো খাওয়াতে হবে। কিন্তু তথা তো বেহুশের মত পড়ে আছে। নিলয় দুহাতে ওকে তুলে বসানোর চেষ্টা করে। তথাকে নিজের বুকের সাথে ঠেস দিয়ে ধরে রেখে কোন ভাবে ঔষধ গুলো খাইয়ে দিয়ে ওকে আবার শুইয়ে দেয়।
শরীরটা ভিজে তোয়ালে দিয়ে স্পঞ্জ করে দিলে ভাল হত৷ কিন্তু নিলয়ের কেমন যেন অস্বস্তি হয়। আবার ভাবে এই অবস্থায় বসে থাকলে তো চলবে না, আমি তো যা করছি ওর সুস্থতার জন্যই। ও উঠে গিয়ে তোয়ালে টা নিয়ে আসে আর ভাল করে ভিজিয়ে জল ঝড়িয়ে প্রথম হাত দুটো স্পঞ্জ করে দেয়৷ পালা করে গলা ঘাড় ভাল করি মুছিয়ে দেয়। বুকে, পেটে, পিঠে স্পঞ্জ করার সময় অস্বস্তি এড়াতে চোখ বন্ধ করে রাখে নিলয়। পায়াজামা গুটিয়ে থাই পর্যন্ত তুলে দিয়ে পা দুটো ভাল করে মুছে নিয়ে আবার পায়জামা ঠিক করে দেয়।
তথা অনুভব করছে কেউ ওর সারা শরীরে ঠান্ডা কিছু দিয়ে মুছে দিচ্ছে, কিন্তু এর চোখ দুটো ভীষন ভাবে জ্বালা করছে তাই ইচ্ছে হলে চোখ মেলে দেখতে পারে না। গলা টা কেমন শুকনো হয়ে আছে কোন আওয়াজ করতে পারছে না। ওর ঠোঁট দুটো যেন নিষ্প্রাণ হয়ে যাচ্ছে। অবশের মত হয়ে পড়ে আছে বিছানায়। আরও কিছুক্ষণ মাথায় জল ঢেলে মাথাটা ভাল করে মুছিয়ে দিয়ে দুটো কাঁথা একসাথে করে জড়িয়ে দেয় তথার শরীরে। আর চেয়ার টা টেনে ওখানেই বসে থাকে, আজ আর চোখের আড়াল করা যাবে না। চেয়ারে বসতেই টেবিলের নিচে তথার ব্যাগটা চোখে পড়ে, ভিজে ব্যাগ থেকে জল গড়িয়ে চলেছে। হাত বাড়িয়ে ব্যাগটা নিয়ে ভিতর থেকে বই খাতা গুলো বের করে আনে। না বই খাতা গুলো তেমন একটা ভিজে নি। সেগুলো টেবিলে রেখে দিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বুজে দেয় নিলয়।
টিফিনের ঘন্টা পড়তেই সবাই ক্যান্টিনের দিকে চলতে থাকে। ফাঁকা ক্লাস রুমে তিন চার জনের দস্যিপনা চলছে। নিলয় আর ওর দুই তিন বন্ধুদের এটা নিয়মিত কাজ। সবাই ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেলেই ওরা মেয়েদের ব্যাগে হানা দেয়। ওরা জানে মেয়েদের ব্যাগে কোনায় বা বইয়ের পাতার ভাজে এক্সট্রা কিছু টাকা থাকবেই থাকবে। নিয়ম করে সেই টাকা বের করে ওদের টিফিনের ব্যবস্থা করে নিলয় রা। মজার বিষয় হলো এদের এই কীর্তি টা মোটামুটি সবাই জানে, তবুও কেউ কিছু বলে না ওদের। বন্ধু দের এমন দুষ্টুমি টা বাকিদের কাছে গা সওয়া। কিন্তু বাকিদের থেকে একটু আলাদা দোলন ও যেন ইচ্ছে করেই ব্যাগে টাকা রেখে দেয় নিলয়ের জন্য। দোলন জানে হাতে টাকা দিতে গেলে নিলয় নেবে না কিন্তু চোখের আড়াল হতেই ব্যাগ থেকে ঠিকই নিবে। এই কাজে যে কি আনন্দ পায় কে জানে।
প্রথম সারির জানালার পাশের বেঞ্চ টাতেই দোলনের ব্যাগ। নিলয় গিয়ে ওর ব্যাগ খুলে টাকার খোঁজ চালায়। একটা পার্টে বই খাতা এসব। উপরের দিকের একটা পার্টের চেইন খুলতেই দেখে ভিতরে ছোট চিরুনী, হাত আয়না, টিপের পাতা, লিপস্টিক, একটা নূপূর, জোড় কয়েক বিভিন্নরকম চুড়ি আরও কত কি। নিলয় ভাবে এটা কি কলেজ ব্যাগ নাকি ছোটখাটো কসমেটিকস এর দোকান কে জানে। পাশেই ছোট একটা বক্স খুলতেই দু-তিনটে দশ- বিশ টাকার নোট। হাসি খেলে যায় নিলয়ের মুখে। এই পাগলি নিজে না খেয়ে থাকলেও এখানে টাকা রাখবেই। দুটো নোট পকেটে পুরে ক্যান্টিনের দিকে হাটতে থাকে।
চা নিয়ে দরজায় টুকা দিতেই রুমের দরজা খোলে গেল। কি ব্যাপার মেয়েটা কি করছে এখনও, দরজাটাও খোলা রয়ে গেছে। ভিতরে তাকাতেই দেখে সেই ভিজে কাপড়েই চেয়ারে বসে আছে তথা৷ একটা ফোঁপানোর আওয়াজ হচ্ছে, হয়তো মেয়েটা কাঁদছে। ওর বসে থাকা দেখে রাগ বাড়তে থাকে নিলয়ের।
-কি ব্যাপার হ্যাঁ, তোমাকে যে বললাম চেঞ্জ করে নিতে। কথাটা কানে গেল না।
-(আচমকা আওয়াজে ঘাবড়ে যায় তথা)
-এতক্ষণ ধরে কেউ ভিজে কাপড়ে বসে থাকে নাকি, এক্ষুনি চেঞ্জ করে নাও। চা টা টেবিলে রেখে যাচ্ছি। ৫ মিনিট সময় দিলাম। কথার হেরফের যেন না হয়। জ্বর না বাধিয়ে ছাড়বে না বুঝি।
-(বাধ্য মেয়ের মত) মাথা নাড়ায় তথা।
রুম থেকে বেরিয়ে আসে নিলয়। মেজাজ টা একটু ঠান্ডা হয়। মিনিট পাঁচেক পর আবার তথার রুমে যায়। দেখে জামাকাপড় চেঞ্জ করে জড়োসড়ো হয়ে খাটে বসে আছে মেয়েটা। মাথায় একটা তোয়ালে প্যাচানো। চোখ দুটো এখনো লাল হয়ে আছে। মুখটা শুকিয়ে আছে
-(গম্ভীর স্বরে) চুপটি করে বিশ্রাম নেও এখন। আমি ভাত বসিয়ে খাবার গরম করে দিচ্ছি। আর এই ট্যাবলেট গুলো টেবিলে রেখে গেলাম। যদি দেখ জ্বর আসছে তাহলে খেয়ে নিবে। বারবার যেন বলতে না হয়।
মাথা তুলে তাকায় না তথা। নিলয়ের চোখের দিকে তাকানোর সাহস আজ নেই। খাবার গরম করে নিলয় ডাকতেই সুড়সুড়িয়ে খেতে চলে যায়। খাওয়া দাওয়া শেষে যে যার রুমে চলে যায়। নিলয় স্টকের হিসাব আর আগামীকালের সেলস সামারি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কাজে ডুবে ছিল কতক্ষণ কে জানে। মোবাইলে সময় দেখতেই দেখে রাত ১১ টা বাজতে চললো। বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি হয়ে চলেছে। বৃষ্টির কারণে সব কিছু কেমন নিস্তব্ধ হয়ে আছে বলে রাত আরও গভীর মনে হচ্ছে। মাঝে মাঝে বাজ পড়ার শব্দে ঘরটা কেঁপে উঠছে। নাহ নিজেকেও এখন বিশ্রাম দিতে হবে, তাই শোবার প্রস্তুতি শুরু করে দেয় নিলয়।
বাথরুম থেকে ফেরার পথে ভাবে একবার তথাকে দেখা আসা দরকার। ওর রুমের ভিতরে গিয়ে দেখে গুটিসুটি দিয়ে শোয়ে আছে তথা। শরীরটা কাঁপছে হয়তো মেয়েটার। ভাল করে দেখার জন্য আরেকটু সামনে যেতেই হালকা গোঙানির আওয়াজ কানে আসে নিলয়ের। দুশ্চিন্তার ঘিরে ধরে ওকে, জ্বর বাঁধালো নাকি মেয়ে টা কে জানে। কাছে গিয়ে কপালে হাত দিয়ে জ্বর আছে কিনা দেখার জন্য হাত বাড়িয়ে ইতস্তত বোধে আবারও গুটিয়ে নেয় ও।
না এত ভাবলে চলবে না। জ্বর উঠেছে কিনা না দেখলে চলবে না। কপালে হাত রাখতেই শরীরটা আগুনে পোড়ানো লোহার মত মনে হয় নিলয়ের। আগুনের মত গরম সারা শরীর। খুব বেশিই জ্বর উঠেছে তথার। টেবিলের দিকে তাকাতেই দেখে ঔষধ ওভাবেই পড়ে আছে। না মেয়ে টাকে নিয়ে আর পাড়া গেল না- ভাবতে থাকে নিলয়। বার দুয়েক গায়ে ধাক্কা দিয়ে তথাকে ডেকেও কোন লাভ হলো না। একদম বেহুশের মত পড়ে আছে আর কাঁপছে। মাথায় জল ঢালতে হবে, তাই সেটার ব্যবস্থা করতে যায় নিলয়।
মিনিট ত্রিশের মত জল ঢেলে চলেছে তথার মাথায়। আবার কপালে হাত দিয়ে জ্বর টা কমলো কিনা বুঝার চেষ্টা, কিন্তু তেমন কোন তফাৎ পায় না। এবার ঔষধ খাওয়াতে হবে, না হলে চলছে না। কিন্তু আগে তো তাপমাত্রা টা মাপা দরকার ভেবে থার্মোমিটার টা নিয়ে আসে ওর ঘর থেকে নিলয়। থার্মোমিটার টা তো দিতে গিয়ে অস্বস্তি বোধ হয় ওর। পরক্ষণেই চিন্তা করে এখন এসব নিয়ে ভাবার সময় নেই, আগে ওকে সুস্থ করা দরকার। নিলয় ওর হাতটা তথার বুকের দিকে জামার ভিতরে ঢুকিয়ে দেয় আর থার্মোমিটারটা ডান বগলের মাঝে দিয়ে দেয়। মিনিট দুয়েক পরে আবার হাত ঢুকিয়ে থার্মোমিটার টা বের করে আনে। তাপমাত্রা প্রায় ৩ ডিগ্রির কাছাকাছি। না এখন ঔষধ টা তো খাওয়াতে হবে। কিন্তু তথা তো বেহুশের মত পড়ে আছে। নিলয় দুহাতে ওকে তুলে বসানোর চেষ্টা করে। তথাকে নিজের বুকের সাথে ঠেস দিয়ে ধরে রেখে কোন ভাবে ঔষধ গুলো খাইয়ে দিয়ে ওকে আবার শুইয়ে দেয়।
শরীরটা ভিজে তোয়ালে দিয়ে স্পঞ্জ করে দিলে ভাল হত৷ কিন্তু নিলয়ের কেমন যেন অস্বস্তি হয়। আবার ভাবে এই অবস্থায় বসে থাকলে তো চলবে না, আমি তো যা করছি ওর সুস্থতার জন্যই। ও উঠে গিয়ে তোয়ালে টা নিয়ে আসে আর ভাল করে ভিজিয়ে জল ঝড়িয়ে প্রথম হাত দুটো স্পঞ্জ করে দেয়৷ পালা করে গলা ঘাড় ভাল করি মুছিয়ে দেয়। বুকে, পেটে, পিঠে স্পঞ্জ করার সময় অস্বস্তি এড়াতে চোখ বন্ধ করে রাখে নিলয়। পায়াজামা গুটিয়ে থাই পর্যন্ত তুলে দিয়ে পা দুটো ভাল করে মুছে নিয়ে আবার পায়জামা ঠিক করে দেয়।
তথা অনুভব করছে কেউ ওর সারা শরীরে ঠান্ডা কিছু দিয়ে মুছে দিচ্ছে, কিন্তু এর চোখ দুটো ভীষন ভাবে জ্বালা করছে তাই ইচ্ছে হলে চোখ মেলে দেখতে পারে না। গলা টা কেমন শুকনো হয়ে আছে কোন আওয়াজ করতে পারছে না। ওর ঠোঁট দুটো যেন নিষ্প্রাণ হয়ে যাচ্ছে। অবশের মত হয়ে পড়ে আছে বিছানায়। আরও কিছুক্ষণ মাথায় জল ঢেলে মাথাটা ভাল করে মুছিয়ে দিয়ে দুটো কাঁথা একসাথে করে জড়িয়ে দেয় তথার শরীরে। আর চেয়ার টা টেনে ওখানেই বসে থাকে, আজ আর চোখের আড়াল করা যাবে না। চেয়ারে বসতেই টেবিলের নিচে তথার ব্যাগটা চোখে পড়ে, ভিজে ব্যাগ থেকে জল গড়িয়ে চলেছে। হাত বাড়িয়ে ব্যাগটা নিয়ে ভিতর থেকে বই খাতা গুলো বের করে আনে। না বই খাতা গুলো তেমন একটা ভিজে নি। সেগুলো টেবিলে রেখে দিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বুজে দেয় নিলয়।
টিফিনের ঘন্টা পড়তেই সবাই ক্যান্টিনের দিকে চলতে থাকে। ফাঁকা ক্লাস রুমে তিন চার জনের দস্যিপনা চলছে। নিলয় আর ওর দুই তিন বন্ধুদের এটা নিয়মিত কাজ। সবাই ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেলেই ওরা মেয়েদের ব্যাগে হানা দেয়। ওরা জানে মেয়েদের ব্যাগে কোনায় বা বইয়ের পাতার ভাজে এক্সট্রা কিছু টাকা থাকবেই থাকবে। নিয়ম করে সেই টাকা বের করে ওদের টিফিনের ব্যবস্থা করে নিলয় রা। মজার বিষয় হলো এদের এই কীর্তি টা মোটামুটি সবাই জানে, তবুও কেউ কিছু বলে না ওদের। বন্ধু দের এমন দুষ্টুমি টা বাকিদের কাছে গা সওয়া। কিন্তু বাকিদের থেকে একটু আলাদা দোলন ও যেন ইচ্ছে করেই ব্যাগে টাকা রেখে দেয় নিলয়ের জন্য। দোলন জানে হাতে টাকা দিতে গেলে নিলয় নেবে না কিন্তু চোখের আড়াল হতেই ব্যাগ থেকে ঠিকই নিবে। এই কাজে যে কি আনন্দ পায় কে জানে।
প্রথম সারির জানালার পাশের বেঞ্চ টাতেই দোলনের ব্যাগ। নিলয় গিয়ে ওর ব্যাগ খুলে টাকার খোঁজ চালায়। একটা পার্টে বই খাতা এসব। উপরের দিকের একটা পার্টের চেইন খুলতেই দেখে ভিতরে ছোট চিরুনী, হাত আয়না, টিপের পাতা, লিপস্টিক, একটা নূপূর, জোড় কয়েক বিভিন্নরকম চুড়ি আরও কত কি। নিলয় ভাবে এটা কি কলেজ ব্যাগ নাকি ছোটখাটো কসমেটিকস এর দোকান কে জানে। পাশেই ছোট একটা বক্স খুলতেই দু-তিনটে দশ- বিশ টাকার নোট। হাসি খেলে যায় নিলয়ের মুখে। এই পাগলি নিজে না খেয়ে থাকলেও এখানে টাকা রাখবেই। দুটো নোট পকেটে পুরে ক্যান্টিনের দিকে হাটতে থাকে।
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।