14-04-2022, 08:25 PM
(This post was last modified: 14-04-2022, 08:27 PM by nextpage. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
পর্ব- দশ
সকাল ৭ টা নাগাদ কয়েকবার ফোন করা হয়ে গেছে দোলনের। বাবারে কি মেয়ে এটা একটু দম নেবার ফুসরত দেয় না। আউটডোরে ডাক্তার ১ টা নাগাদ থাকবে, এত তাড়া কিসের ওর কে জানে। মনে হচ্ছে শরীর আমার না ওর খারাপ করেছে। শেষ কবার তাই ইচ্ছে করে ফোন ধরলো না নিলয়।
১০ টা নাগাদ স্নান আর নাস্তা করে তৈরী হয়ে নেয় নিলয়। নাস্তা করার সময়ই খেয়াল করেছে মোবাইলে দোলনের মেসেজ এসেছে, ওকে দূর্গাবাড়ির সামনে থেকে নিয়ে যেতে হবে। নাস্তার টেবিলে বসার পর থেকেভ খেয়াল করছে তথা মোবাইলে কিছু নিয়ে ব্যস্ত হয়ে আছে, আর মাঝে সাঝে মিটিমিটি হাসছে। কিছুটা খটকা লাগে নিলয়ের৷ তথাকে আগে এভাবে মোবাইলে বিভোর থাকতে দেখে নি কখনো। ইদানীং কেমন একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করছে তথার মাঝে। প্রায়ই আনমনে থাকে, যেন কি যেন ভেবে চলেছে সবসময়। এ বিষয়ে বেশি মাথা ঘামায় না ও। দুজনে নাস্তা সেরে একসাথে নিচে নেমে আসে। তথা অটোতে উঠে পরতেই নিলয় একটা রিক্সা নিয়ে নেয়।
দূর্গাবাড়ি পৌঁছাতেই খেয়াল করে দোলন জনতা ব্যাংকের ওদিকটায় দাঁড়িয়ে আছে। রিক্সা ওর সামনে দাঁড়াতেই ও উঠে পড়ে। রিক্সা চলতে থাকে চরপাড়া হাসপাতালের দিকে।
-কিরে তর কি কোন কান্ড জ্ঞান নেই, এত দেরি হলো কেন?
-দেরি করলাম কই? আর এত সকালে গিয়ে কি করবো। তুই জেদ করছিস তাই ডাক্তারের কাছে যাচ্ছি, নইলে এমনি কদিন রেস্ট নিলে ঠিক হয়ে যেতাম।
-(রাগ ভাব নিয়ে) তুই যে কেমন রেস্ট নিবি সেটা তো আমাকে আর জানাতে হবে না। ঐ তো সকাল থেকে বিকাল অব্দি বাইরে দৌড়াদৌড়ি করিস। এই যে বলি একটু নিজের যত্ন নে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। তোর বউও তো পারে একটু যত্নআত্তি করতে নাকি। আমার আর কি নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়াই।
-তুই এমন কেন রে। কোথাকার কথা কোথায় নিয়ে যাস। তুই ছাড়া আমার কাছের বলতে কে আছে বল। তুই আমার দেখভাল না করলে আর ঐ বউ বউ করতে না করেছি তো নাকি।
-(নিলয়ের হাত টা হাতে নিয়ে) আমারও তর মত কাছের কেউ নেই।
-(দুষ্টু হাসি দিয়ে) তাই বুঝি? দাড়া তোর বিয়ের ব্যবস্থা করি, তাতে কাছের আরেকজন হবে।
-(চোখ দুটো বড় বড় করে) তবে রে তোকে এখনি রিক্সা থেকে ঠেলে ফেল দেব বলে দিলাম। (একটু বিরতি নিয়ে) তুই বিয়ে করবি আমাকে?
- ছি ছি কি বলিস। তুই না বললি ঘরে আমার বউ আছে। একটা থাকতে আরেকটা। আমাকে কি জেলে পাঠাতে চাস?
-(মুখ ফুলিয়ে) ও আমাকে বিয়ের কথা বলতেই এখন বউ এসে হাজির। যা যা আমাকে তর বিয়ে করতে হবে না। তুমি তোমার ঐ তথা সোনাকে নিয়েই ইটিশপিটিশ কর গিয়ে।
-(দোলনের মুখে হাত চাপা দিয়ে) তর মুখে কিছু আটকায় না। কোথায় আছি সেটা তো দেখবি একবার, চুপ কর এখন।
কথা বলতে বলতে হাসপাতালের নতুন ভবনের আউটডোর গেটের সামনে রিক্সা এসে দাঁড়ায়। ভিতরে গিয়ে টিকিট কেটে ডাক্তারের রুমের দিকে যেতে থাকে। অনেক লম্বা লাইন হয়ে গেছে, ইশ ওর কথা মত আরেকটু আগে আসলেই ভাল হত ভাবে নিলয়। মিনিট পনের পর ওদের সিরিয়াল আসে। ভিতরে একজনের বেশি প্রবেশ করতে দেয় না, কিন্তু দোলন নাছোড়বান্দা সে ভিতরে যাবেই। অগত্যা ওকে নিয়েই রুমে গেলাম।
ডাক্তার বিপি চেক করলো, চোখ, জিহবা এসব দেখলো, সাথে আরও কিছু চেকআপ চললো। রোজকার মত কিছু টেস্ট আর কিছু মেডিসিন লেখে দিল। টেস্টের রিপোর্ট নিয়ে পরদিন আবার দেখা করতে বললো। বের হতে যাবে তখনি ডাক্তার বলে উঠলো
-উনার বিপি অনেক কম, হয়তো টেনশন করে কিছু নিয়ে। আর খাওয়া দাওয়া ঠিকমত করে না তাই শরীর দুর্বল। আপনার স্বামীর খেয়াল রাখবেন। নিয়মিত ঔষধ গুলো খাওয়াবেন।
ডাক্তারের মুখে আপনার স্বামী কথাটা শুনে লজ্জায় মুখ লাল হয়ে যায় দোলনের। প্রতিত্তোরে শুধু 'ঠিক আছে' বলে হনহন করে হাঁটতে শুরু করে ও। নিলয়ও ওর পিছন পিছন চলতে শুরু করে। হাঁটতে হাঁটতে হাসপাতালের বাইরে চলে আসে।
-টেস্ট গুলো করে কাল রিপোর্ট গুলো দেখিয়ে নিস।
-(অবাক হয়ে) কাল তুই আসবি না আমার সাথে।
-না।
-(ওকে খোচা মেরে) কেনরে? ডাক্তার কি বললো শুনলি না, তর স্বামীর খেয়াল রাখতে।
-(তেড়ে এসে) আমি কি তোর বিয়ে করা বউ নাকি যে তর সাথে সাথে আমাকে আসতে হবে। যা তর তথা কে নিয়ে আসিস, আমি পারবো না।
নিলয় বুঝলো দোলন ক্ষ্যাপে গেছে, ওর মাথা ঠান্ডা করা দরকার। নিলয় দোলনের হাত ধরে বলে
-হুম বুঝেছি, চল এখন।
-কোথায় যাবো?
-গেলেই দেখতে পারবি।
রিক্সায় উঠে দুজনে। রিক্সাকে কৃষি ভার্সিটি যেতে বলে দেয়। এখন আর কথা বলে না কেউ। অন্যদিকে তাকিয়ে আছে দোলন, নিজের চোখ আড়াল করতে চাইছে নিলয়ের কাছ থেকে। কিন্তু নিলয়ের হাত টা তখনো ওর মুঠোতে বন্দি। নিলয় বুঝতে পারে, দোলনের ভিতরে কি চলছে। তাই ওকে আর ঘাঁটতে যায় না ও। ভার্সিটি ক্যাম্পাসে পৌঁছে রিক্সা ভাড়া দিয়ে হাঁটতে থাকে দুজনে।
-নীলু, খিদে পেয়েছে রে।
-চল, কিছু খেয়ে আসি।
দুজনে হাঁটতে হাঁটতে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের এদিকে চলে আসে। একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণীতে এখানেই পড়েছে নিলয়। কলেজের উত্তর দিকের গেটের পাশেই একটা ঝালমুড়ির দোকান আছে, সেদিকেই যাচ্ছে ওরা। কলেজে পড়ার সময় এখান থেকে ঝালমুড়ি- চানাচুর এসব খেতো ওরা। এখনো মাঝে মাঝে আসে নিলয় এখানে। আসলেই এখানের ঝালমুড়ি খাওয়া চাই। কাছে এসেই হাঁক দেয় নিলয়
-মামা দুটো স্পেশাল ঝালমুড়ি বানাও।
কণ্ঠস্বর টা পরিচিত লাগছে হয়তো তাই ঝালমুড়ি ওয়ালা মাথা বাড়িয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে চিনতে পারে সে।
-কি খবর মামা? এবার ম্যালা দিন পর আইলা। লগে কেডা? এইলারে তো মনে অয় না আগে দেখচি।
-আমার বন্ধু। একসাথে কলেজে পড়তাম, তাই দেখো নাই।
-তা মামা আফনের এই বন্ধু রে কি হেই আগের মত নিজে মুড়ি বানাইয়া দিবাইন নাকি।
কথাটা খারাপ লাগে না নিলয়ের। তাই উঠে পড়ে সে নিজেই ঝালমুড়ি বানাতে।
-কিরে তুই কি সত্যিই ঝালমুড়ি বানাবি?
-তর জন্য আমি সব পারি, ঝালমুড়ি তো কিছুই না।
নিলয় গিয়ে ঝালমুড়ি বানাতে শুরু করে। প্রথমে মুড়ি নেয় তাতে চিড়ে ভাজা, চানাচুর, বাদাম, চানা বুট মাখা দেয়। তারসাথে শশা, টমেটো, গাজর, মরিচ কুচি আর ধনেপাতা কুচি মিশিয়ে দেয়। শেষে লেবুর রস লবণ আর সরষে তেল, একটু তেঁতুল টক মিশিয়ে কাঠি দিয়ে ভাল করে নাড়িয়ে দেয়। ব্যস ঝালমুড়ি তৈরী।
মুখে দিয়েই অনবদ্য স্বাদের দেখা পায় দোলন। চোখ বন্ধ করে স্বাদটা আরও ভাল করে উপভোগ করতে চায় সে। বাকি মশলা, বুট-বাদাম কিংবা গাজর-শশার স্বাদের বাইরেও আরেকটা স্বাদের সন্ধান পায় সে। কি সেটা? অন্যরকম ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে সারা মুখের ভিতরে। না না শুধু মুখের ভিতরে না স্বাদটা গলা, পাকস্থলী, শিরা, উপশিরা হয়ে কোষে কোষে পৌঁছে গেছে। কত ঝালমুড়ি খেয়েছে কিন্তু আজকের মত কখনো হয়নি। আজ আলাদা লাগছে কেন? নীলু ওর নিজ হাতে বানিয়েছে বলে। নীলুর স্পর্শে সব কিছুর স্বাদ কি এভাবেই বেড়ে যায়??
আরও কিছুক্ষণ হাটাহাটি করে ওরা ফিরে আসে। দোলন কে বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে নিলয় চলে যায় ওর সেলসের কাজে।
আজ সেলসের কাজ একটু আগেভাগেই শেষ করে নিলয়। এখন বাসায় ফিরে একটু রেষ্ট নিয়ে আবার টেষ্ট গুলোর জন্য যেতে হবে। বিকেলের সময়টাতে রাস্তায় প্রচুর জ্যাম হয়, তাই হেঁটেই বাসার দিকে যেতে থাকে। হঠাৎ কিছু একটা চোখে পড়ে নিলয়ের। তথার মত কাউকে দেখলো রাস্তার ঐপাশ দিয়ে যেতে। মোবাইল বের করে সময়টা দেখে নেয় নিলয়৷ এ সময়টাতে তথার ফিজিক্স টিউশন থাকে। ও ওখানেই আছে হয়তো। নিলয় ভাবে সে ভুল দেখেছে। আবার হাঁটতে শুরু করে, কিন্তু মাথা থেকে বিষয়টা ফেলতে পারছে না। ও চোখ বন্ধ করে আবার ভাবে। না ভুল নয়, ওটা তথাই ছিল। ওই ছেলেটা কে তাহলে?তথা যার সাথে বাইকে ছিল।
সন্দেহ কাটাতে টিউশন স্যারের কাছে ফোন করে নিলয়৷ স্যার জানায় আজ তথা টিউশনে যায় নি। এবার বুঝতে এই তাহলে গত কিছুদিনের পরিবর্তনের কারণ। মোবাইলে এই ছেলের সাথেই কথা বলার সময় এমন ভাবে হাসে ও। লেখাপড়ায় ফাঁকি দিয়ে এসব চলছে। কারও সাথে রিলেশনে জড়িয়েছে তথা সেটা নিয়ে কোন অভিযোগ নেই ওর মনে। কারণ ওটা ওর স্বাধীনতা, সেখানে কিছু বলার এখতিয়ার ওর নেই সেটাই ভাবে নিলয়। কিন্তু তাই বলে পড়াশোনায় সেটার প্রভাব পড়ুক সেটা চায় না নিলয়। এটা নিয়ে ওর সাথে কথা বলবে সুবিধাজনক সময়ে। আপাতত এটা নিয়ে মাথা ঘামায় না আর। বাসার দিকে হাটতে থাকে নিলয়।
সকাল ৭ টা নাগাদ কয়েকবার ফোন করা হয়ে গেছে দোলনের। বাবারে কি মেয়ে এটা একটু দম নেবার ফুসরত দেয় না। আউটডোরে ডাক্তার ১ টা নাগাদ থাকবে, এত তাড়া কিসের ওর কে জানে। মনে হচ্ছে শরীর আমার না ওর খারাপ করেছে। শেষ কবার তাই ইচ্ছে করে ফোন ধরলো না নিলয়।
১০ টা নাগাদ স্নান আর নাস্তা করে তৈরী হয়ে নেয় নিলয়। নাস্তা করার সময়ই খেয়াল করেছে মোবাইলে দোলনের মেসেজ এসেছে, ওকে দূর্গাবাড়ির সামনে থেকে নিয়ে যেতে হবে। নাস্তার টেবিলে বসার পর থেকেভ খেয়াল করছে তথা মোবাইলে কিছু নিয়ে ব্যস্ত হয়ে আছে, আর মাঝে সাঝে মিটিমিটি হাসছে। কিছুটা খটকা লাগে নিলয়ের৷ তথাকে আগে এভাবে মোবাইলে বিভোর থাকতে দেখে নি কখনো। ইদানীং কেমন একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করছে তথার মাঝে। প্রায়ই আনমনে থাকে, যেন কি যেন ভেবে চলেছে সবসময়। এ বিষয়ে বেশি মাথা ঘামায় না ও। দুজনে নাস্তা সেরে একসাথে নিচে নেমে আসে। তথা অটোতে উঠে পরতেই নিলয় একটা রিক্সা নিয়ে নেয়।
দূর্গাবাড়ি পৌঁছাতেই খেয়াল করে দোলন জনতা ব্যাংকের ওদিকটায় দাঁড়িয়ে আছে। রিক্সা ওর সামনে দাঁড়াতেই ও উঠে পড়ে। রিক্সা চলতে থাকে চরপাড়া হাসপাতালের দিকে।
-কিরে তর কি কোন কান্ড জ্ঞান নেই, এত দেরি হলো কেন?
-দেরি করলাম কই? আর এত সকালে গিয়ে কি করবো। তুই জেদ করছিস তাই ডাক্তারের কাছে যাচ্ছি, নইলে এমনি কদিন রেস্ট নিলে ঠিক হয়ে যেতাম।
-(রাগ ভাব নিয়ে) তুই যে কেমন রেস্ট নিবি সেটা তো আমাকে আর জানাতে হবে না। ঐ তো সকাল থেকে বিকাল অব্দি বাইরে দৌড়াদৌড়ি করিস। এই যে বলি একটু নিজের যত্ন নে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। তোর বউও তো পারে একটু যত্নআত্তি করতে নাকি। আমার আর কি নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়াই।
-তুই এমন কেন রে। কোথাকার কথা কোথায় নিয়ে যাস। তুই ছাড়া আমার কাছের বলতে কে আছে বল। তুই আমার দেখভাল না করলে আর ঐ বউ বউ করতে না করেছি তো নাকি।
-(নিলয়ের হাত টা হাতে নিয়ে) আমারও তর মত কাছের কেউ নেই।
-(দুষ্টু হাসি দিয়ে) তাই বুঝি? দাড়া তোর বিয়ের ব্যবস্থা করি, তাতে কাছের আরেকজন হবে।
-(চোখ দুটো বড় বড় করে) তবে রে তোকে এখনি রিক্সা থেকে ঠেলে ফেল দেব বলে দিলাম। (একটু বিরতি নিয়ে) তুই বিয়ে করবি আমাকে?
- ছি ছি কি বলিস। তুই না বললি ঘরে আমার বউ আছে। একটা থাকতে আরেকটা। আমাকে কি জেলে পাঠাতে চাস?
-(মুখ ফুলিয়ে) ও আমাকে বিয়ের কথা বলতেই এখন বউ এসে হাজির। যা যা আমাকে তর বিয়ে করতে হবে না। তুমি তোমার ঐ তথা সোনাকে নিয়েই ইটিশপিটিশ কর গিয়ে।
-(দোলনের মুখে হাত চাপা দিয়ে) তর মুখে কিছু আটকায় না। কোথায় আছি সেটা তো দেখবি একবার, চুপ কর এখন।
কথা বলতে বলতে হাসপাতালের নতুন ভবনের আউটডোর গেটের সামনে রিক্সা এসে দাঁড়ায়। ভিতরে গিয়ে টিকিট কেটে ডাক্তারের রুমের দিকে যেতে থাকে। অনেক লম্বা লাইন হয়ে গেছে, ইশ ওর কথা মত আরেকটু আগে আসলেই ভাল হত ভাবে নিলয়। মিনিট পনের পর ওদের সিরিয়াল আসে। ভিতরে একজনের বেশি প্রবেশ করতে দেয় না, কিন্তু দোলন নাছোড়বান্দা সে ভিতরে যাবেই। অগত্যা ওকে নিয়েই রুমে গেলাম।
ডাক্তার বিপি চেক করলো, চোখ, জিহবা এসব দেখলো, সাথে আরও কিছু চেকআপ চললো। রোজকার মত কিছু টেস্ট আর কিছু মেডিসিন লেখে দিল। টেস্টের রিপোর্ট নিয়ে পরদিন আবার দেখা করতে বললো। বের হতে যাবে তখনি ডাক্তার বলে উঠলো
-উনার বিপি অনেক কম, হয়তো টেনশন করে কিছু নিয়ে। আর খাওয়া দাওয়া ঠিকমত করে না তাই শরীর দুর্বল। আপনার স্বামীর খেয়াল রাখবেন। নিয়মিত ঔষধ গুলো খাওয়াবেন।
ডাক্তারের মুখে আপনার স্বামী কথাটা শুনে লজ্জায় মুখ লাল হয়ে যায় দোলনের। প্রতিত্তোরে শুধু 'ঠিক আছে' বলে হনহন করে হাঁটতে শুরু করে ও। নিলয়ও ওর পিছন পিছন চলতে শুরু করে। হাঁটতে হাঁটতে হাসপাতালের বাইরে চলে আসে।
-টেস্ট গুলো করে কাল রিপোর্ট গুলো দেখিয়ে নিস।
-(অবাক হয়ে) কাল তুই আসবি না আমার সাথে।
-না।
-(ওকে খোচা মেরে) কেনরে? ডাক্তার কি বললো শুনলি না, তর স্বামীর খেয়াল রাখতে।
-(তেড়ে এসে) আমি কি তোর বিয়ে করা বউ নাকি যে তর সাথে সাথে আমাকে আসতে হবে। যা তর তথা কে নিয়ে আসিস, আমি পারবো না।
নিলয় বুঝলো দোলন ক্ষ্যাপে গেছে, ওর মাথা ঠান্ডা করা দরকার। নিলয় দোলনের হাত ধরে বলে
-হুম বুঝেছি, চল এখন।
-কোথায় যাবো?
-গেলেই দেখতে পারবি।
রিক্সায় উঠে দুজনে। রিক্সাকে কৃষি ভার্সিটি যেতে বলে দেয়। এখন আর কথা বলে না কেউ। অন্যদিকে তাকিয়ে আছে দোলন, নিজের চোখ আড়াল করতে চাইছে নিলয়ের কাছ থেকে। কিন্তু নিলয়ের হাত টা তখনো ওর মুঠোতে বন্দি। নিলয় বুঝতে পারে, দোলনের ভিতরে কি চলছে। তাই ওকে আর ঘাঁটতে যায় না ও। ভার্সিটি ক্যাম্পাসে পৌঁছে রিক্সা ভাড়া দিয়ে হাঁটতে থাকে দুজনে।
-নীলু, খিদে পেয়েছে রে।
-চল, কিছু খেয়ে আসি।
দুজনে হাঁটতে হাঁটতে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের এদিকে চলে আসে। একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণীতে এখানেই পড়েছে নিলয়। কলেজের উত্তর দিকের গেটের পাশেই একটা ঝালমুড়ির দোকান আছে, সেদিকেই যাচ্ছে ওরা। কলেজে পড়ার সময় এখান থেকে ঝালমুড়ি- চানাচুর এসব খেতো ওরা। এখনো মাঝে মাঝে আসে নিলয় এখানে। আসলেই এখানের ঝালমুড়ি খাওয়া চাই। কাছে এসেই হাঁক দেয় নিলয়
-মামা দুটো স্পেশাল ঝালমুড়ি বানাও।
কণ্ঠস্বর টা পরিচিত লাগছে হয়তো তাই ঝালমুড়ি ওয়ালা মাথা বাড়িয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে চিনতে পারে সে।
-কি খবর মামা? এবার ম্যালা দিন পর আইলা। লগে কেডা? এইলারে তো মনে অয় না আগে দেখচি।
-আমার বন্ধু। একসাথে কলেজে পড়তাম, তাই দেখো নাই।
-তা মামা আফনের এই বন্ধু রে কি হেই আগের মত নিজে মুড়ি বানাইয়া দিবাইন নাকি।
কথাটা খারাপ লাগে না নিলয়ের। তাই উঠে পড়ে সে নিজেই ঝালমুড়ি বানাতে।
-কিরে তুই কি সত্যিই ঝালমুড়ি বানাবি?
-তর জন্য আমি সব পারি, ঝালমুড়ি তো কিছুই না।
নিলয় গিয়ে ঝালমুড়ি বানাতে শুরু করে। প্রথমে মুড়ি নেয় তাতে চিড়ে ভাজা, চানাচুর, বাদাম, চানা বুট মাখা দেয়। তারসাথে শশা, টমেটো, গাজর, মরিচ কুচি আর ধনেপাতা কুচি মিশিয়ে দেয়। শেষে লেবুর রস লবণ আর সরষে তেল, একটু তেঁতুল টক মিশিয়ে কাঠি দিয়ে ভাল করে নাড়িয়ে দেয়। ব্যস ঝালমুড়ি তৈরী।
মুখে দিয়েই অনবদ্য স্বাদের দেখা পায় দোলন। চোখ বন্ধ করে স্বাদটা আরও ভাল করে উপভোগ করতে চায় সে। বাকি মশলা, বুট-বাদাম কিংবা গাজর-শশার স্বাদের বাইরেও আরেকটা স্বাদের সন্ধান পায় সে। কি সেটা? অন্যরকম ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে সারা মুখের ভিতরে। না না শুধু মুখের ভিতরে না স্বাদটা গলা, পাকস্থলী, শিরা, উপশিরা হয়ে কোষে কোষে পৌঁছে গেছে। কত ঝালমুড়ি খেয়েছে কিন্তু আজকের মত কখনো হয়নি। আজ আলাদা লাগছে কেন? নীলু ওর নিজ হাতে বানিয়েছে বলে। নীলুর স্পর্শে সব কিছুর স্বাদ কি এভাবেই বেড়ে যায়??
আরও কিছুক্ষণ হাটাহাটি করে ওরা ফিরে আসে। দোলন কে বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে নিলয় চলে যায় ওর সেলসের কাজে।
আজ সেলসের কাজ একটু আগেভাগেই শেষ করে নিলয়। এখন বাসায় ফিরে একটু রেষ্ট নিয়ে আবার টেষ্ট গুলোর জন্য যেতে হবে। বিকেলের সময়টাতে রাস্তায় প্রচুর জ্যাম হয়, তাই হেঁটেই বাসার দিকে যেতে থাকে। হঠাৎ কিছু একটা চোখে পড়ে নিলয়ের। তথার মত কাউকে দেখলো রাস্তার ঐপাশ দিয়ে যেতে। মোবাইল বের করে সময়টা দেখে নেয় নিলয়৷ এ সময়টাতে তথার ফিজিক্স টিউশন থাকে। ও ওখানেই আছে হয়তো। নিলয় ভাবে সে ভুল দেখেছে। আবার হাঁটতে শুরু করে, কিন্তু মাথা থেকে বিষয়টা ফেলতে পারছে না। ও চোখ বন্ধ করে আবার ভাবে। না ভুল নয়, ওটা তথাই ছিল। ওই ছেলেটা কে তাহলে?তথা যার সাথে বাইকে ছিল।
সন্দেহ কাটাতে টিউশন স্যারের কাছে ফোন করে নিলয়৷ স্যার জানায় আজ তথা টিউশনে যায় নি। এবার বুঝতে এই তাহলে গত কিছুদিনের পরিবর্তনের কারণ। মোবাইলে এই ছেলের সাথেই কথা বলার সময় এমন ভাবে হাসে ও। লেখাপড়ায় ফাঁকি দিয়ে এসব চলছে। কারও সাথে রিলেশনে জড়িয়েছে তথা সেটা নিয়ে কোন অভিযোগ নেই ওর মনে। কারণ ওটা ওর স্বাধীনতা, সেখানে কিছু বলার এখতিয়ার ওর নেই সেটাই ভাবে নিলয়। কিন্তু তাই বলে পড়াশোনায় সেটার প্রভাব পড়ুক সেটা চায় না নিলয়। এটা নিয়ে ওর সাথে কথা বলবে সুবিধাজনক সময়ে। আপাতত এটা নিয়ে মাথা ঘামায় না আর। বাসার দিকে হাটতে থাকে নিলয়।
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।