18-04-2022, 10:56 PM
বেশ কয়েকজনের হই হই শব্দ কানে এলো। সবাই সিঁড়ি দিয়ে উঠে আসছে। কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে দেবারা। আমার ধরনা ঠিক। দেবারা হই হই করতে করতে ঘরে ঢুকলো।
-কিরে শালা ভূতের মতো এতো বড়ো বাড়িতে বসে বসে কি করছিস।
-তোদের ছগনলাল ঢুকতে দিলো ?
-মানে!
-ছগনলাল সকাল থেকে আমার পারমিসন ছাড়া কাউকে ঢুকতে দিচ্ছে না।
-তোর নাম বলতেই গেট খুলে দিলো।
টিনা অদিতি আমার দুপাশে এসে বসলো। মিলি আমার সামনে। ল্যাপটপটা খোলাই আছে। দেবা ইজি চেয়ারে হেলান দিল নির্মাল্য খাটের এক পাশে এসে বসলো। সবাই আমার দিকে অনুসন্ধিতসু চোখে তাকিয়ে। যেনো গিলে খাচ্ছে।
-তোকে কিন্তু ফ্রেশ ফ্রেশ লাগছে না।
-তোর চোখে নেবা (জনডিস) হয়েছে।
-দেবাদার চোখে নেবা হয়েছে। আমাদের চোখে। টিনা অদিতি মিলি তিনজনে একসঙ্গে আমার দিকে হুমড়ি খেয়ে তাকালো। চোখে চোখ।
-বিশ্বাস করো আমার কিছু হয়নি।
-তাহলে বললে কেনো। ছগনলাল গেট খুললো তোদের।
-এমনি।
-সামথিংস রং। টিনা ফের বললো।
-মিত্রাদি কোথায়। অদিতি বললো
-বড়মা কোথায়। মিলি বললো।
-বাবা তোমরা একসঙ্গে প্রশ্ন করলে উত্তর দেবো কি করে।
-ঠিক আছে তুমি বলো। টিনা বললো।
-দাঁড়াও একটু চা করি আগে।
-তোমায় করতে হবে না। আমরা করবো।
-না, তা হয় নাকি। তোমরা আমার গেস্ট।
-তুমি এড়িয়ে যাচ্ছ।
-তুমি আগে বলো তারপর চা খাবো।
ছগনলালকে গেটের মুখে এসে দাঁড়াতে দেখলাম।
-কি ছগনলাল?
-ছোটোবাবু নিয়ে আসবো।
-তোমার হয়ে গেছে।
-হ্যাঁ। কয়েকটা করেছি।
-তুমি একা করছো না আর কেউ তোমার সঙ্গে আছে ?
-আমার দেশোয়ালী ভাইরা আছে।
-কজন?
-দুজন।
-ঠিক আছে তুমি নিয়ে এসো।
ছগনলাল চলে গেলো।
-কিগো অনিদা।
-একটা জিনিষ খাওয়াচ্ছি তোমাদের। খেয়ে বলতে হবে কি খেলে।
-ঠিক আছে। সব হবে আগে তুমি কি হয়েছে বলো।
-এতো মহা মুস্কিল।
-তুমি বাড়িতে একা রয়েছো। কেউ নেই। মিলি বললো।
-আরে বাবা আমিকি একা থাকতে পারিনা।
দেবাশীষ নির্মাল্য একইভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
-ও যখন বলতে চায়না তখন ওকে বিরক্ত করছো কেনো। ওতো আমাদের নিজের বলে মনে করে না।
-এইতো সেন্টুতে ঘা দিচ্ছিস।
আমার কথা বলার ঢঙে সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
-আমি বললে তোরা সহ্য করতে পারবিনা।
-ঠিক সহ্য করতে পারবো। বলো। টিনা বললো।
-তোর গলার স্বর তখন টিনার কাছে অপরিচিত লেগেছে। খালি তোর নামটা ওর মোবাইলে সেভ করা ছিলো বলে ও বুঝতে পেরেছে।
ছগনলাল একটা কাঁসার থালায় লেট্টি নিয়ে এলো। সঙ্গে চাটনি পেঁয়াজ লঙ্কা। দারুন গন্ধ বেরোচ্ছে।
-ছগনলাল।
-ছোটবাবু।
-লাগলে আর পাওয়া যাবে।
-লাগলে বলবেন আমি নিয়ে আসবো।
-একটু চা খাওয়াবে।
-করছি ছোটবাবু।
ছগনলাল বেরিয়ে গেলো।
-নে দেবা একটা খেয়ে দেখ। দারুন জিনিষ।
সবাই একটা করে তুলে নিলো।
-দাঁতে কামড়েই অদিতি বললো। দারুন জিনিষ অনিদা। নাম কি গো।
-এগুলোকে লেট্টি বলে পুরো ছাতু দিয়ে তৈরি। বিহারের লোকরা খুব ভালো বানায়।
-সত্যি দারুন টেস্ট।
-একটু তেঁতুলের চাটনি মুখে দাও আরো ভালো লাগবে।
-যাই করো তোমাকে ছারছিনা বলতে হবে। মিলি খতে খেতে বললো।
আমি খেতে খেতে কালকে থেকে যা যা হয়েছে ওদের সব বললাম। বড়মারা এখন কোথায় আছে কেনো গেছে সব বললাম। খালি মিত্রার পোর্সানটা এডিট করে বললাম।
আমার কথা শেষ হতে দেবাশীষ উঠে দাঁড়ালো। ওর হাত পা কাঁপছে।
-তুই শুয়োরের বাচ্চাটাকে ছেড়ে দিলি।
-বোস। সব সময় রাগ করলে হয়।
মিলি টিনা অদিতির চোখ কপালে উঠে গেছে।
-ডকুমেন্টসগুলো দেখবি।
-দেখা।
আমি ল্যাপটপ খুলে ওদের দেখালাম। ওরা হুমড়ি খেয়ে পরলো ল্যাপটপের ওপর।
আমি আলমারি খুলে ডাক্তারের সব দেখালাম।
টিনা আমার হাতটা চেপে ধরে বললো। তুমি এখনো কি করে ঠিক আছো অনিদা।
-কি করবো বলো টিনা।
মাথা নীচু করে ফেললাম। কথাগুলে মনে পরলেই গলাটা ধরে আসছে। চোখদুটো জ্বালা জ্বালা করছে।
-একা একা এখানে বসে সব হজম করছি। কাকে বলবো আমার কথা। দামিনী মাসি ইসলাম ভাই না থাকলে কি যে হতো কিছু বলতে পারিনা।
-তোর দামিনী মাসি কখন আসবে।
-আসবে বলেছে। কখন আসবে বলতে পারছানি।
-অদিতি দেখা করে যাবে। ভদ্রমহিলাকে ভীষণ দেখতে ইচ্ছে করছে।
-তোমরা দুজন কেনো। আমরাই বা বাদ যাবো কেনো। টিনা বললো।
-দাঁড়া মাসি চলে আসবে।
-তুই যা বললি, সত্যি অনি আমি হলে হার্টফেল করে যেতাম। তবে তুই গান্ডুটাকে আরো কেলাতে পারতিস।
-আমার মারাতে ওর লাগবেনা। রতন আবিদ বাড়িতে নিয়ে গিয়ে যা দিয়েছে তাতেই যথেষ্ট।
-এর পর কি হবে।
-জানিনা। দামিনী মাসির হাতে। আমাকে আজ থেকে এসব চিন্তা বন্ধ করতে বলেছে।
-অনিদা আমার খুব ভয় করছে। টিনার গলাটা ধরে এলো।
-না টিনা ভয় করলেই ভয়। তোমার মিত্রাদির কথাটা একবার চিন্তা করো।
-সত্যি কি ব্যাডলাক মেয়েটার। কলেজ লাইফে ওকে কত প্রানোচ্ছল দেখেছি। তোদের দুজনকে কি ভালো লাগতো।
-এখন দেখলে অবাক হয়ে যাবি। তোর সামনে হাসিখুশির অভিনয় করবে। রাতে আমাকে জড়িয়ে ধরে সারারাত কাঁদে। অনি তুই না থকেলে আমি স্যুাইসাইড করতাম।
-কি বলছিস তুই।
-আমি একটা কথাও মিথ্যে বলছিনা দেবা। তোরা আমার কাছের লোক। তোদের কাছে আমি বার বার সাহায্যের জন্য ছুটে গেছি। সেই সময় মনটা ভীষণ খারাপ লাগলো। বুকের মধ্যে কে যেন পাথর চাপা দিয়ে রেখেছিলো। ভাবলাম তোকে ফোন করি।
-করতে পারতিস।
-তুই যদি ব্যস্ত থাকিস।
-গান্ডু।
টিনা ফিক করে হেসে ফেললো।
-হেসোনা টিনা মাঝে মাঝে অনির কথা শুনলে পায়ের থেক মাথার চুল পর্যন্ত খাঁড়া হয়ে যায়। মিত্রাকি তোর একার বন্ধু আমার বন্ধু ছিলোনা।
আমি মাথা নীচু করে আছি।
-তোমাদের আরো অনেক কথা বলিনি। আগের কেশটা সম্বন্ধে বললে তোমরা সত্যি সত্যি হার্টফেল করবে।
-তার মানে।
-মালিক হওয়ার পর থেকে ও শান্তিতে নেই। একটার পর একটা ঝামেলা চলছে। মলের কেশটা তো এই কয়েকদিন আগের ঘটনা।
-গত সপ্তাহের। আমি বললাম।
মিলি অদিতি আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।
-সত্যি অনিদা তুমি কি পাথর। অদিতি বললো।
-পাথর না হলে সহ্য করবো কি করে।
-সেটাও তো খয়ে যায়।
-হয়তো যাচ্ছে। তোমরা দেখতে পাচ্ছ না।
-ছোটোবাবু মাজি আয়া।
আমি তড়াক করে বিছানা থেকে উঠে গেলাম। বারান্দায় দাঁড়ালাম। দেখলাম দামিনীমাসি আর কবিতা গাড়ি থেকে নামলো। দুটো গাড়ি নিয়ে দামিনী মাসি এসেছে। আমি ছুটে নীচে নেমে গেলাম।
দামিনী মাসি আমাকে দেখে বললো। কিরে মন ভালো হয়েছে।
মাথা নীচু করে রইলাম।
-কারা এসেছে।
দামিনী মাসিকে বললাম।
-চল চল তোর বন্ধুদের সঙ্গে আলাপ করি।
আমি দামিনী মাসিকে নিয়ে ওপরে উঠে এলাম। ঘরে ঢুকেই দামিনী মাসির গলাটা জড়িয়ে ধরে বললাম, দেবা এখুনি তোদের যার গল্প করছিলাম, আমার মা বলতে পারিস মাসি বলতে পারিস যেটা খুশি।
কবিতা আমাদের দুজনের পাশে দাঁড়িয়ে মিটি মিটি হাসছে।
ওরা অবাক হয়ে কিছুক্ষণ দামিনী মাসির দিকে তাকিয়ে রইলো।
দামিনী মাসি সকালের সাজেই সেজে এসেছে। কাপড়টা খালি বদলে ফেলেছে। এখনও একটা তাঁতের শাড়ি পরেছে। সেই আটপৌড়ে ঢঙে। দামিনী মাসিকে কেউ এখন দেখলে বলতে পারবেনা দামিনী মাসি ওই এলাকায় দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর কাটিয়েছে।
দামিনী মাসি মিটি মিটি হাসছে। অনি ওরা আমাকে ঠিক বুঝতে পারছেনা।
আমি মাসির গালে গাল ঘসলাম।
টিনা স্থানুর মতো উঠে এসে দামিনী মাসির পায়ে হাত দিয়ে ঠক করে একটা প্রণাম করলো। ওর দেখা দেখি সবাই একে একে এসে দামিনী মাসিকে প্রণাম করলো। দামিনী মাসি কোনো বাধা দিলোনা। ওদের প্রণাম শেষ হতেই কবিতা দেবাদের সকলকে প্রণাম করতে শুরু করলো। অদিতি কবিতার হাত ধরে বললো না।
-কেনো গো আমি নষ্ট মেয়ে বলে।
দামিনী মাসির চোখের চেহারা বদলে গেলো। কবিতার দিকে তাকাতেই কবিতা মুখ নীচু করলো।
-কতদিন শেখাবো।
-ভুল হয়ে গেছে মাসি।
-আর জীবনে যেনো না হয়।
-হবেনা মাসি।
আমি বুঝলাম পরিবেশটা একটু ভারি হয়ে যাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলাম। একটা জিনিষ খাবে মাসি।
-কিরে।
-টিনা থালাতে আছে?
-আছে।
অদিতি ছুটে গিয়ে নিয়ে এলো।
মাসিকে বললাম হাঁ করো।
-কি বলনা।
-আগে হাঁ করো।
মাসি হাঁ করলো আমি মাসির মুখে একটা ঢুকিয়ে দিয়ে বললাম কামড়াও। মাসি কামড় দিলো। বাকিটা আমি নিয়ে খেলাম।
-বলোতো কি ?
-লেট্টি?
-হ্যাঁ।
-কে বানালোরে?
-ছগনলাল।
-অনেকদিন পর খেলাম।
টিনা একটা নিয়ে এসে কবিতার হাতে দিয়েছে।
-ছোটবাবু।
পেছন ফিরে তাকালাম। ছগনলাল আর একটা কাঁসার থালায় আরো কয়েকটা লেট্টি নিয়ে এসেছে। মাসিকে নিয়ে এসে খাটে বসালাম। আবার হৈ হৈ করে খাওয়া শুরু হয়ে গেলো। খাওয়ার সাথে সাথে আমি সকলের সঙ্গে মাসির পরিচয় করিয়ে দিলাম।
-ওরে বাবা এরা তো সব বড় বড় লোকরে। আমিতো এদের কাছে চুনোপুঁটি।
-অনিদা তো আমাদের থেকেও বড়লোক। টিনা অভিযোগের সুরে বললো।
মাসি হো হো করে হেসে ফেললো।
-ওকে কিছু বলো।
-দেখেছিস অনি।
আমি হাসছি।
কবিতা যা না মা, ছগনলালকে একটু চায়ের কথা বল।
কবিতা নাচতে নাচতে চলে গেলো।
-এই মেয়েটা কবিতা! দেবাশীষ বললো।
-তুই এতোক্ষণ যার গল্প শোনাচ্ছিলি!
-হ্যাঁ।
মাসি মাসি মুচকি মুচকি হাসছে।
ওরে ও আমাদের প্রণাম করল কিরে ওকে বরং আমরা সকলে প্রণাম করবো।
-কেনো। মাসি বললো।
-জানোনা মাসি ওর কথা শুনতে শুনতে আমাদের কান গরম হয়ে গেছিল। ওর এতো তেজ। দেখে বোঝাই যায়না।
-আমরা পরিবেশের দাসত্ব করি দেবাশীষ।
দেবাশীষ মাসির মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে।
-কি বললে মাসি আর একবার বলো।
মাসি হাসতে হাসতে আবার বললো।
-দারুন কথা বললে। আমরা সব বেচুবাবু বুঝলে মাসি। সারাদিন খালি হিসেব করি। তোমার কাছে গিয়ে কয়েকদিন ক্লাস করতে হবে। কিছু ভালো ভালো কথা শেখা যাবে।
-কিরে অনি তোর বন্ধুরা কি বলে।
আমি হাসছি।
আস্তে আস্তে আড্ডাটা বেশ জমে উঠলো। চা এলো। হাসি ঠাট্টা ইয়ার্কি ফাজলামো সব হলো। দেবাশীষ কবিতার পেছনে খানিকটা লাগলো। কবিতা হাসছে।


![[+]](https://xossipy.com/themes/sharepoint/collapse_collapsed.png)