14-04-2022, 11:15 AM
*মূল্যায়ন- ইংলিশ মিডিয়াম কলেজ*
আজ একটি খ্যাতনামা ইংলিশ মিডিয়াম কলেজের বার্ষিক অনুষ্ঠান। গেটের চারিধারে নামীদামী সারীবদ্ধ গাড়ী। তারই মাঝদিয়ে একটি নীলবাতিওলা গাড়ী সোজা কলেজে প্রবেশ করলো। গেটকিপাররা স্যালুট জানালো। বডিগার্ড কারের গেটটা খুলতেই নেমে এলেন ডিস্ট্রিক ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবা মিস অনুপমা সেন। আজকের আমন্ত্রিত চিফ গেস্ট।
অতিথি আপ্যায়নে খামতি না রেখে সোজা নিয়ে যাওয়া হলো স্টেজে। স্টেজে আরও বিশিষ্ট অতিথিরা আছেন। সামনের সারিবদ্ধ চেয়ারগুলোতে সকল অভিভাবক সমেত ছাত্রছাত্রীরা এবং সকল কলেজ স্টাফেরা বসে। সরগরম কলেজ প্রাঙ্গন।
প্রিন্সিপাল ম্যাডাম কিছু উদ্বোধনী ভাষন দেওয়ার পরই ঘোষক প্রধান অতিথিকে কিছু বলার জন্য অনুরোধ করলেন।
পুষ্পস্তবকটি টেবিলে রেখে পোডিয়ামের লাউড স্পিকারের সামনে দাঁড়ালেন অনুপমাদেবী, অনুপমা সেন, ডিস্ট্রিক ম্যাজিস্ট্রেট।
বহু সম্বোর্ধনা সভা বা প্রশাসনিক কাজে স্পিচ দিয়েছেন। ভাষন দেওয়াটা তার কাছে নিত্যকার ব্যাপার । কিন্তু আজ তাকে কেমন যেন একটু অন্যমনস্ক দেখালো। সামান্য শ্রদ্ধাজ্ঞাপনপূর্বক কথা বলেই বললেন, আজ আপনাদের একটি গল্প বলতে চাই....
"ভবেশবাবু একজন অবসর
প্রাপ্ত শিক্ষক ছিলেন।ভবেশবাবু ও তার স্ত্রীর একটি মাত্র কন্যা সন্তান ছিল। অনেক আদরের একমাত্র কন্যাকে যথোপযুক্ত উচ্চ শিক্ষিত করে যথাসময়ে একটি উপযুক্ত ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিলেন। অবসরের কয়েক বছর আগেই বিপত্নীক হন। তাঁর বাড়িতেই এক মহিলা মালতীদেবী, মালতী দাস তার একমাত্র কন্যা সন্তানকে নিয়ে ওনার বাড়িতে কাজ করতেন। একা ভবেশবাবুর রান্নাবান্না বাড়ির কাজ এককথায় ভবেশবাবুর দেখভালের কাজ করতেন। ক্রমেই স্বামীহারা মালতীদেবীও ঐ বাড়ির মেয়ে হয়ে গিয়েছিলেন। ভবেশবাবুও মালতীদেবীকে ও ওনার কচি কন্যা সন্তানকে মেয়ে ও নাতনির মতোই দেখতেন। মালতীদেবীও পিতৃতুল্য ভবেশবাবুকে বাবা বলে সম্মোধন করতেন। তার ছোট্ট মেয়েটি ওনাকে দাদু বলতে অজ্ঞান। ঘরে সাজানো বইগুলো থেকে দাদু ছোট্ট মেয়েটিকে ছোট ছোট নীতিমুলক গল্প, কবিতা শোনাতেন। বেশ আনন্দেই কাটে। নাতনিটির পড়ার আগ্রহ দেখে দাদু তাকে বড় কলেজে ভর্তি করার মনস্থ করলেন। একদিন এলো সেই ভর্তির দিন। মালতীদেবী সকাল সকাল রান্নাবান্না সেরে মেয়েকে সাজিয়ে গুছিয়ে দিলেন। আজ তার কি আনন্দের দিন তা বলে বোঝানো মুশকিল। দাদুকেও একটি সাদা ধুতি পাঞ্জাবি আলমারি থেকে বার করে দিলেন। গলি পেরিয়ে বড় রাস্তার মাইল খানেক দূরেই ইকলেজটি। তাই দাদু নাতনি মিলে গল্প করতে করতে পায়ে হেঁটেই গেল কলেজে। কলেজের গেটের সামনে বড় বড় গাড়ী। সুট টাই পরা অভিভাবকরা তাদের ছেলে মেয়েদের নিয়ে কলেজে ঢুকছেন। দাদু নাতনিও ঢুকলেন। এক বড় অডিটোরিয়াম হলে সবাই বসে। তারাও বসলেন। এক এক করে নাম কল হতে লাগলো। এক এক করে যাচ্ছে। এক সময় তাদেরও ডাক পড়লো। দাদু নাতনি আনন্দে ঢুকলেন সেই ইন্টারভিউ নেওয়ার ঘরে। এসি ঘরে বিশাল গোল টেবিলে বেশ কয়েকজন ম্যাডামের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দাদু নাতনির দিকে। হয়তো তাদের সাধারন পোশাক দেখে। দাদুও হয়তো মনে মনে ভেবেছিলেন এই টুকু টুকু বাচ্ছাদের ভর্তির জন্য এতো আয়োজন কেন! দুজনেই দুটি চেয়ারে বসলেন। প্রিন্সিপাল ম্যাম প্রশ্ন করলেন মেয়েটির দিকে তাকিয়ে.........
তোমার নাম কি?
মেয়েটি নাম বললো।
কিসে করে এলে কলেজে?
পায়ে হেঁটে।
এরপর দাদুর দিকে তাকিয়......
আপনি কে হন মেয়েটির?
দাদু।
ওর ফাদার মাদার আসেনি কেন?
আমার নাতনিটির বাবা ইহজগতে নেই। মা ঘরের কাজে ব্যাস্ত। তাই আমিই নিয়ে এলাম।
আমিই তার অভিবাবক।
কিন্তু বাবা মায়ের আর্থিক সঙ্গতি তো আমাদের জানা দরকার। তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা জানা দরকার। তাই...
আমার নাতনির মা গৃহকর্ত্তী। আমি তার অভিবাবক। আমিই তাকে বাড়িতে পড়াবো।
এটা একটা ইংলিশ মিডিয়াম কলেজ। বৃটিশ ইংলিশে পড়ানো হয়। অনেক বড় বড় পোষ্টের ব্যক্তিরা এখানে বড় বড় এ্যমাউন্টের ডোনেশান দিয়েও তাদের চিল্ড্রেনদের ভর্তি করাতে চায়। বাচ্ছাদের পড়ানোর জন্যও বাড়িতে টিউটর দিতে হবে। পারবেন তো সামলাতে।
আমি একাই ওকে পড়াবো। সামলে নেবো ঠিক।
একা সামলানো আপনার পক্ষে মুশকিল হবে। তার ওপর আপনি রিটায়ার করেছেন। তাই বলছি আপনি অন্য কলেজে চেষ্টা করে দেখতে পারেন। বলেই প্রিন্সিপাল ম্যাডাম বক্রচাউনি চেয়ে চোখ ঘোরাতে যাবে, এমন সময় দাদু প্রশ্ন করলেন ম্যাডামকে......
আপনার এখানে কোনো মন্তেসরি কোর্স পাস করা শিক্ষক বা শিক্ষিকা আছেন?
ম্যাডাম একটু ইতঃস্ততঃ বোধ করে....না নেই। তবে ডঃ পারমিতা সেন ম্যাডামের বই ফলো করি। ওনার ভিডিও লেকচার দেখানো হয়।
ডঃ পারমিতা সেনকে চেনেন আপনারা?
হ্যাঁ, উনি রাষ্ট্রপতি এওয়ার্ড প্রাপ্ত অধ্যাপিকা। উনি মন্তেসরি কোর্সে পি.এইচ.ডি করেছেন। ওনার লেখা অনেক বই আমাদের লাইব্রেরীতে আছে। ওনাকে আমাদের কলেজে আনা হয়েছিল স্পিচ দিতে। স্পিচ দিয়ে অমূল্য সময় ব্যায় করে আমাদের ধন্য করেছেন। ওনাকেই আমাদের শিক্ষক শিক্ষিকারা ফলো করেন।
ও আচ্ছা.....। ডঃ পারমিতা সেন আমারই মেয়ে। আমিই তাকে কলেজ শিক্ষায় শিক্ষিত করেছি।
এই কথা শুনে সকল শিক্ষক শিক্ষিকারা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন....স্যরি স্যার!!!!
দাদু তখন বললেন.....কোনো মানুষকে দেখে তার মূল্যায়ন করা ঠিক নয়। বিদ্যালয়কে কখনো বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিনত করাও ঠিক নয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষা প্রদানের জন্যই হওয়া উচিত।
দাদু নাতনীর দিকে তাকিয়ে বললেন......চল, অনু। আমি তোকে সাদামাটা কলেজেই ভর্তি করে পড়াবো।
দাদু নাতনীর হাত ধরে বাড়ীর পথে রওনা দিলেন।"
গল্পটা বলে গ্লাসের জলটায় একটু চুমুক দিয়ে বললেন.......
আমিই সেই অনু, অনুপমা সেন। *সেদিনের পর আজ দ্বিতীয় বার এই কলেজে এলাম ! সেদিন আপনারা আমাকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন আর আজ আমাকে বক্তৃতা করতে ডেকেছেন। দাদু নেই, তিনি নিশ্চয়ই উপর থেকে হাসছেন* এখন সবাই প্রশ্ন করবেন..... আমার পদবী দাস হওয়া উচিত। সেন হল কি করে। উনি আমার অভিভাবক হয়ে সকল সময় আমার পাশে আপনজন হয়ে ছিলেন। উনিই আমাকে অনুপমা সেন(I.A.S) বানিয়েছেন।
আজ উনি নেই। কিন্তু সকল সময় ওনাকে স্মরণ করে আমি কাজ শুরু করি। প্রনাম দাদু?
আজ আমিও তাই বলবো....প্রকৃত শিক্ষায় কোনো চাকচিক্যর দরকার হয় না। সৎ ইচ্ছাটাই বড় কথা। সকল শিক্ষক শিক্ষিকা ও আমার প্রিয় ছাত্রছাত্রীদের বলবো কলেজ বা শিক্ষা যেন অহংকার না হয়। শিক্ষায় নম্রতা ও সৎ ইচ্ছার দরকার। তবেই প্রকৃত শিক্ষালাভ হয়। তবেই একটা বিদ্যালয় বড় হয়। বড় মাপের মানুষ হওয়া যায়। ঠিক আমার দাদু শ্রী ভবেশ সেনের মতো।
সকলকে নমষ্কার জানিয়ে বক্তব্য শেষ করলাম।
আজ একটি খ্যাতনামা ইংলিশ মিডিয়াম কলেজের বার্ষিক অনুষ্ঠান। গেটের চারিধারে নামীদামী সারীবদ্ধ গাড়ী। তারই মাঝদিয়ে একটি নীলবাতিওলা গাড়ী সোজা কলেজে প্রবেশ করলো। গেটকিপাররা স্যালুট জানালো। বডিগার্ড কারের গেটটা খুলতেই নেমে এলেন ডিস্ট্রিক ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবা মিস অনুপমা সেন। আজকের আমন্ত্রিত চিফ গেস্ট।
অতিথি আপ্যায়নে খামতি না রেখে সোজা নিয়ে যাওয়া হলো স্টেজে। স্টেজে আরও বিশিষ্ট অতিথিরা আছেন। সামনের সারিবদ্ধ চেয়ারগুলোতে সকল অভিভাবক সমেত ছাত্রছাত্রীরা এবং সকল কলেজ স্টাফেরা বসে। সরগরম কলেজ প্রাঙ্গন।
প্রিন্সিপাল ম্যাডাম কিছু উদ্বোধনী ভাষন দেওয়ার পরই ঘোষক প্রধান অতিথিকে কিছু বলার জন্য অনুরোধ করলেন।
পুষ্পস্তবকটি টেবিলে রেখে পোডিয়ামের লাউড স্পিকারের সামনে দাঁড়ালেন অনুপমাদেবী, অনুপমা সেন, ডিস্ট্রিক ম্যাজিস্ট্রেট।
বহু সম্বোর্ধনা সভা বা প্রশাসনিক কাজে স্পিচ দিয়েছেন। ভাষন দেওয়াটা তার কাছে নিত্যকার ব্যাপার । কিন্তু আজ তাকে কেমন যেন একটু অন্যমনস্ক দেখালো। সামান্য শ্রদ্ধাজ্ঞাপনপূর্বক কথা বলেই বললেন, আজ আপনাদের একটি গল্প বলতে চাই....
"ভবেশবাবু একজন অবসর
প্রাপ্ত শিক্ষক ছিলেন।ভবেশবাবু ও তার স্ত্রীর একটি মাত্র কন্যা সন্তান ছিল। অনেক আদরের একমাত্র কন্যাকে যথোপযুক্ত উচ্চ শিক্ষিত করে যথাসময়ে একটি উপযুক্ত ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিলেন। অবসরের কয়েক বছর আগেই বিপত্নীক হন। তাঁর বাড়িতেই এক মহিলা মালতীদেবী, মালতী দাস তার একমাত্র কন্যা সন্তানকে নিয়ে ওনার বাড়িতে কাজ করতেন। একা ভবেশবাবুর রান্নাবান্না বাড়ির কাজ এককথায় ভবেশবাবুর দেখভালের কাজ করতেন। ক্রমেই স্বামীহারা মালতীদেবীও ঐ বাড়ির মেয়ে হয়ে গিয়েছিলেন। ভবেশবাবুও মালতীদেবীকে ও ওনার কচি কন্যা সন্তানকে মেয়ে ও নাতনির মতোই দেখতেন। মালতীদেবীও পিতৃতুল্য ভবেশবাবুকে বাবা বলে সম্মোধন করতেন। তার ছোট্ট মেয়েটি ওনাকে দাদু বলতে অজ্ঞান। ঘরে সাজানো বইগুলো থেকে দাদু ছোট্ট মেয়েটিকে ছোট ছোট নীতিমুলক গল্প, কবিতা শোনাতেন। বেশ আনন্দেই কাটে। নাতনিটির পড়ার আগ্রহ দেখে দাদু তাকে বড় কলেজে ভর্তি করার মনস্থ করলেন। একদিন এলো সেই ভর্তির দিন। মালতীদেবী সকাল সকাল রান্নাবান্না সেরে মেয়েকে সাজিয়ে গুছিয়ে দিলেন। আজ তার কি আনন্দের দিন তা বলে বোঝানো মুশকিল। দাদুকেও একটি সাদা ধুতি পাঞ্জাবি আলমারি থেকে বার করে দিলেন। গলি পেরিয়ে বড় রাস্তার মাইল খানেক দূরেই ইকলেজটি। তাই দাদু নাতনি মিলে গল্প করতে করতে পায়ে হেঁটেই গেল কলেজে। কলেজের গেটের সামনে বড় বড় গাড়ী। সুট টাই পরা অভিভাবকরা তাদের ছেলে মেয়েদের নিয়ে কলেজে ঢুকছেন। দাদু নাতনিও ঢুকলেন। এক বড় অডিটোরিয়াম হলে সবাই বসে। তারাও বসলেন। এক এক করে নাম কল হতে লাগলো। এক এক করে যাচ্ছে। এক সময় তাদেরও ডাক পড়লো। দাদু নাতনি আনন্দে ঢুকলেন সেই ইন্টারভিউ নেওয়ার ঘরে। এসি ঘরে বিশাল গোল টেবিলে বেশ কয়েকজন ম্যাডামের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দাদু নাতনির দিকে। হয়তো তাদের সাধারন পোশাক দেখে। দাদুও হয়তো মনে মনে ভেবেছিলেন এই টুকু টুকু বাচ্ছাদের ভর্তির জন্য এতো আয়োজন কেন! দুজনেই দুটি চেয়ারে বসলেন। প্রিন্সিপাল ম্যাম প্রশ্ন করলেন মেয়েটির দিকে তাকিয়ে.........
তোমার নাম কি?
মেয়েটি নাম বললো।
কিসে করে এলে কলেজে?
পায়ে হেঁটে।
এরপর দাদুর দিকে তাকিয়......
আপনি কে হন মেয়েটির?
দাদু।
ওর ফাদার মাদার আসেনি কেন?
আমার নাতনিটির বাবা ইহজগতে নেই। মা ঘরের কাজে ব্যাস্ত। তাই আমিই নিয়ে এলাম।
আমিই তার অভিবাবক।
কিন্তু বাবা মায়ের আর্থিক সঙ্গতি তো আমাদের জানা দরকার। তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা জানা দরকার। তাই...
আমার নাতনির মা গৃহকর্ত্তী। আমি তার অভিবাবক। আমিই তাকে বাড়িতে পড়াবো।
এটা একটা ইংলিশ মিডিয়াম কলেজ। বৃটিশ ইংলিশে পড়ানো হয়। অনেক বড় বড় পোষ্টের ব্যক্তিরা এখানে বড় বড় এ্যমাউন্টের ডোনেশান দিয়েও তাদের চিল্ড্রেনদের ভর্তি করাতে চায়। বাচ্ছাদের পড়ানোর জন্যও বাড়িতে টিউটর দিতে হবে। পারবেন তো সামলাতে।
আমি একাই ওকে পড়াবো। সামলে নেবো ঠিক।
একা সামলানো আপনার পক্ষে মুশকিল হবে। তার ওপর আপনি রিটায়ার করেছেন। তাই বলছি আপনি অন্য কলেজে চেষ্টা করে দেখতে পারেন। বলেই প্রিন্সিপাল ম্যাডাম বক্রচাউনি চেয়ে চোখ ঘোরাতে যাবে, এমন সময় দাদু প্রশ্ন করলেন ম্যাডামকে......
আপনার এখানে কোনো মন্তেসরি কোর্স পাস করা শিক্ষক বা শিক্ষিকা আছেন?
ম্যাডাম একটু ইতঃস্ততঃ বোধ করে....না নেই। তবে ডঃ পারমিতা সেন ম্যাডামের বই ফলো করি। ওনার ভিডিও লেকচার দেখানো হয়।
ডঃ পারমিতা সেনকে চেনেন আপনারা?
হ্যাঁ, উনি রাষ্ট্রপতি এওয়ার্ড প্রাপ্ত অধ্যাপিকা। উনি মন্তেসরি কোর্সে পি.এইচ.ডি করেছেন। ওনার লেখা অনেক বই আমাদের লাইব্রেরীতে আছে। ওনাকে আমাদের কলেজে আনা হয়েছিল স্পিচ দিতে। স্পিচ দিয়ে অমূল্য সময় ব্যায় করে আমাদের ধন্য করেছেন। ওনাকেই আমাদের শিক্ষক শিক্ষিকারা ফলো করেন।
ও আচ্ছা.....। ডঃ পারমিতা সেন আমারই মেয়ে। আমিই তাকে কলেজ শিক্ষায় শিক্ষিত করেছি।
এই কথা শুনে সকল শিক্ষক শিক্ষিকারা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন....স্যরি স্যার!!!!
দাদু তখন বললেন.....কোনো মানুষকে দেখে তার মূল্যায়ন করা ঠিক নয়। বিদ্যালয়কে কখনো বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিনত করাও ঠিক নয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষা প্রদানের জন্যই হওয়া উচিত।
দাদু নাতনীর দিকে তাকিয়ে বললেন......চল, অনু। আমি তোকে সাদামাটা কলেজেই ভর্তি করে পড়াবো।
দাদু নাতনীর হাত ধরে বাড়ীর পথে রওনা দিলেন।"
গল্পটা বলে গ্লাসের জলটায় একটু চুমুক দিয়ে বললেন.......
আমিই সেই অনু, অনুপমা সেন। *সেদিনের পর আজ দ্বিতীয় বার এই কলেজে এলাম ! সেদিন আপনারা আমাকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন আর আজ আমাকে বক্তৃতা করতে ডেকেছেন। দাদু নেই, তিনি নিশ্চয়ই উপর থেকে হাসছেন* এখন সবাই প্রশ্ন করবেন..... আমার পদবী দাস হওয়া উচিত। সেন হল কি করে। উনি আমার অভিভাবক হয়ে সকল সময় আমার পাশে আপনজন হয়ে ছিলেন। উনিই আমাকে অনুপমা সেন(I.A.S) বানিয়েছেন।
আজ উনি নেই। কিন্তু সকল সময় ওনাকে স্মরণ করে আমি কাজ শুরু করি। প্রনাম দাদু?
আজ আমিও তাই বলবো....প্রকৃত শিক্ষায় কোনো চাকচিক্যর দরকার হয় না। সৎ ইচ্ছাটাই বড় কথা। সকল শিক্ষক শিক্ষিকা ও আমার প্রিয় ছাত্রছাত্রীদের বলবো কলেজ বা শিক্ষা যেন অহংকার না হয়। শিক্ষায় নম্রতা ও সৎ ইচ্ছার দরকার। তবেই প্রকৃত শিক্ষালাভ হয়। তবেই একটা বিদ্যালয় বড় হয়। বড় মাপের মানুষ হওয়া যায়। ঠিক আমার দাদু শ্রী ভবেশ সেনের মতো।
সকলকে নমষ্কার জানিয়ে বক্তব্য শেষ করলাম।