14-04-2022, 10:31 AM
(This post was last modified: 14-04-2022, 10:32 AM by ddey333. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
হাবলু এখন সেলিব্রিটি চোর। এই ঘটনা বড় বড় করে সব পেপারে ছাপা হয়েছে। হাবলু কে একটা ভদ্রস্থ সেলে রাখা হয় যেখানে অপেক্ষাকৃত 'ভালো' আসামীরা থাকে। পঞ্চা জিজ্ঞেস করে - "হাবলু তুই এতটা বোকামি কি করে করলি? তুই তো না বলে দিলেই তো ছাড়া পেয়ে যেতিস"। হাবলু একটা বিড়ি ধরায়। দেওয়ালে ঠেস দিয়ে বসে একবার সুখটান দিয়ে ধোঁয়াটা বের করতে করতে বলে - "পঞ্চা, সে তুই বুঝবি না"। কিছুক্ষন পর বিড়িটা মেঝেতে টিপে আঙ্গুল দিয়ে আগুনের বাকি স্ফুলিঙ্গ গুলো ঝেড়ে আধপোড়া বিড়িটা কানে গুঁজে রাখে। দেখতে দেখতে ছাড়া পাবার দিন এগিয়ে আসে। সই-সাবুদ করে বেরোতে যাবে দেখে মৃণালবাবু দাঁড়িয়ে আছেন, বলেন - " তোকে নিতে এলাম। চল হাবলু আমার বাড়ি চল।" এই বলে হাবলু মৃণালবাবুর সাথে ওঁর বাড়ি আসে। দুজনেই একা। খাওয়া দাওয়ার পর বেশ কিছুক্ষন গল্প হয়। হাবলু বলে
- আমি এই লাইনে অনেকদিন ধরেই আছি। পাঁচ মিনিটেই আমি যে কোন তালা খুলে দিতে পারি। তবে আমি পুরো গান্ধীবাদী চোর - অহিংসায় বিশ্বাসী, আজ অবধি কাউকে একটা চড় পর্যন্ত মারিনি। গর্ব করে বলতে পারি এখনো পর্যন্ত একবারও ধরা পড়িনি।
- বাবা তুই তো একটা শিল্পী চোর রে! এতো সূক্ষ্ম হাতের কাজ। চল আমরা একটা খেলা খেলি। আমি কাল কিছু টাকা তুলে আনবো ব্যাঙ্ক থেকে, তুই যদি রাস্তা থেকে টাকাটা চুরি করতে পারিস তাহলে টাকাটা তোর।
- জ্যাঠা, আমি আর চুরি করব না ।
- তুই এটাকে চুরি ভাবছিস কেন? আমি দেখতে চাই তুই কত বড় শিল্পী!
- আমি আর চুরি করব না।
- তাহলে তুই চ্যালেঞ্জটা নিতে ভয় পাচ্ছিস। বল না পারবি না। তুই যদি এটাকে চুরি ভাবিস, তাহলে বলি জীবনের শেষ চুরিটা এই চ্যালেঞ্জের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাক।
- ঠিক আছে। আপনি যখন চ্যালেঞ্জই দিলেন, তাহলে সেটা তো নিতেই হয়। যেখানে আমার সম্মানের প্রশ্নও জড়িত।
আসলে হাবলু মৃণালবাবুর প্রাণ বাঁচিয়েছে তাই তিনি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ হাবলুর কাছে। কোথাও যেন মনে হয় সরাসরি টাকা দিলে হয়তো হাবলু নেবে না বা তাকে ছোট করা হবে। তাই একটু ঘুরিয়ে নাক দেখানোর চেষ্টা।
পরের দিন মৃণালবাবু ব্যাঙ্কে টাকা তুলতে যান। ফেরার পথে একটা চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে চায়ের অর্ডার দেন আর ভাবতে থাকেন কখন হাবলু আসবে। হয়তো একটু অমনোযোগীও হয়ে পড়েছিলেন। ঠিক সেই সময় মৃণালবাবুকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে টাকার ব্যাগটা হাত থেকে কেড়ে নিয়ে কেউ একজন ছুটে পালায়। আরে এতো হাবলু নয়! মৃণালবাবু "চোর চোর" বলে চেঁচিয়ে ওঠেন। কিন্তু তার আগেই চোরবাবাজী পগার পার। মৃণালবাবু ভাবেন - ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তোলার কথা হাবলুই একমাত্র জানত। তাহলে কি এটা হাবলুরই কাজ? নিজে না করে কোন শাগরেদকে দিয়ে করিয়েছে। তাই বলে এমনি করে ধাক্কা দিয়ে, ছি ছি! মৃনালবাবুর মনটা বেশ খারাপ। সন্ধ্যেবেলা একা বাড়িতে বসে। হটাৎ কলিং বেলের আওয়াজ। এই সময় আবার কে এল? দরজা খুলে দেখেন হাবলু দাঁড়িয়ে আছে। হাবলুকে দেখে হটাৎ খুব রেগে যান মৃণালবাবু। বলেন - "তুই অন্যকে দিয়ে টাকাটা চুরি করালি? যে নাকি আমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছিল।" হাবলু বলে - "জ্যাঠা আমি পুরো ঘটানটাই দেখেছি। আমি সামনের একটা গলিতে লুকিয়ে ছিলাম। তুমি এলেই পেছন থেকে ব্যাগটা কেটে ঠিক টাকাটা বের করে নিতাম। কিন্তু দেখলাম ব্যাটা অন্য একটা চোর টাকাটা নিয়ে ছুটে পালাচ্ছে। আমি ছুটি পেছন পেছন। চোরটা যে বাসে উঠল, আমিও সেই বাসে। আর ভিড়ের মধ্যে আমার হাত আবার কথা বলা শুরু করল। পরের স্টপেজে আমি ব্যাগটা কেটে টাকাগুলো বের করে নেমে পড়ি। এই নিন আপনার টাকা। গুনে নিন ঠিক আছে কিনা?" বলে টাকার বান্ডিলটা মৃণালবাবুর হাতে তুলে দিতে যায়। মৃণালবাবু বলেন
-তুই যখন পেয়েছিস ওটা তো তোর টাকা। তুই রেখে দে।
- না না সেরকম তো কথা ছিল না। আপনার টাকা তো আমি চুরি করতে পারি নি। তাই আপনাকেই দিয়ে গেলাম।
এই বলে মৃণালবাবুর হাতটা টেনে টাকার বান্ডিলটা গুঁজে দেয় হাবলু। যাবার সময় বলে - "জীবনের শেষ চুরিটাই আমার জীবনে সেরা চুরি। কখনো চোরের ওপর বাটপারি করিনি। আজ সেটাও করলাম আপনার জন্যে।" এই বলে হাঁটা দেয় হাবলু। মৃণালবাবু তাকিয়ে থাকেন হাবলুর চলে যাবার দিকে, যতক্ষণ না সে অন্ধকারে মিলিয়ে যায়।
_____________
- আমি এই লাইনে অনেকদিন ধরেই আছি। পাঁচ মিনিটেই আমি যে কোন তালা খুলে দিতে পারি। তবে আমি পুরো গান্ধীবাদী চোর - অহিংসায় বিশ্বাসী, আজ অবধি কাউকে একটা চড় পর্যন্ত মারিনি। গর্ব করে বলতে পারি এখনো পর্যন্ত একবারও ধরা পড়িনি।
- বাবা তুই তো একটা শিল্পী চোর রে! এতো সূক্ষ্ম হাতের কাজ। চল আমরা একটা খেলা খেলি। আমি কাল কিছু টাকা তুলে আনবো ব্যাঙ্ক থেকে, তুই যদি রাস্তা থেকে টাকাটা চুরি করতে পারিস তাহলে টাকাটা তোর।
- জ্যাঠা, আমি আর চুরি করব না ।
- তুই এটাকে চুরি ভাবছিস কেন? আমি দেখতে চাই তুই কত বড় শিল্পী!
- আমি আর চুরি করব না।
- তাহলে তুই চ্যালেঞ্জটা নিতে ভয় পাচ্ছিস। বল না পারবি না। তুই যদি এটাকে চুরি ভাবিস, তাহলে বলি জীবনের শেষ চুরিটা এই চ্যালেঞ্জের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাক।
- ঠিক আছে। আপনি যখন চ্যালেঞ্জই দিলেন, তাহলে সেটা তো নিতেই হয়। যেখানে আমার সম্মানের প্রশ্নও জড়িত।
আসলে হাবলু মৃণালবাবুর প্রাণ বাঁচিয়েছে তাই তিনি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ হাবলুর কাছে। কোথাও যেন মনে হয় সরাসরি টাকা দিলে হয়তো হাবলু নেবে না বা তাকে ছোট করা হবে। তাই একটু ঘুরিয়ে নাক দেখানোর চেষ্টা।
পরের দিন মৃণালবাবু ব্যাঙ্কে টাকা তুলতে যান। ফেরার পথে একটা চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে চায়ের অর্ডার দেন আর ভাবতে থাকেন কখন হাবলু আসবে। হয়তো একটু অমনোযোগীও হয়ে পড়েছিলেন। ঠিক সেই সময় মৃণালবাবুকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে টাকার ব্যাগটা হাত থেকে কেড়ে নিয়ে কেউ একজন ছুটে পালায়। আরে এতো হাবলু নয়! মৃণালবাবু "চোর চোর" বলে চেঁচিয়ে ওঠেন। কিন্তু তার আগেই চোরবাবাজী পগার পার। মৃণালবাবু ভাবেন - ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তোলার কথা হাবলুই একমাত্র জানত। তাহলে কি এটা হাবলুরই কাজ? নিজে না করে কোন শাগরেদকে দিয়ে করিয়েছে। তাই বলে এমনি করে ধাক্কা দিয়ে, ছি ছি! মৃনালবাবুর মনটা বেশ খারাপ। সন্ধ্যেবেলা একা বাড়িতে বসে। হটাৎ কলিং বেলের আওয়াজ। এই সময় আবার কে এল? দরজা খুলে দেখেন হাবলু দাঁড়িয়ে আছে। হাবলুকে দেখে হটাৎ খুব রেগে যান মৃণালবাবু। বলেন - "তুই অন্যকে দিয়ে টাকাটা চুরি করালি? যে নাকি আমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছিল।" হাবলু বলে - "জ্যাঠা আমি পুরো ঘটানটাই দেখেছি। আমি সামনের একটা গলিতে লুকিয়ে ছিলাম। তুমি এলেই পেছন থেকে ব্যাগটা কেটে ঠিক টাকাটা বের করে নিতাম। কিন্তু দেখলাম ব্যাটা অন্য একটা চোর টাকাটা নিয়ে ছুটে পালাচ্ছে। আমি ছুটি পেছন পেছন। চোরটা যে বাসে উঠল, আমিও সেই বাসে। আর ভিড়ের মধ্যে আমার হাত আবার কথা বলা শুরু করল। পরের স্টপেজে আমি ব্যাগটা কেটে টাকাগুলো বের করে নেমে পড়ি। এই নিন আপনার টাকা। গুনে নিন ঠিক আছে কিনা?" বলে টাকার বান্ডিলটা মৃণালবাবুর হাতে তুলে দিতে যায়। মৃণালবাবু বলেন
-তুই যখন পেয়েছিস ওটা তো তোর টাকা। তুই রেখে দে।
- না না সেরকম তো কথা ছিল না। আপনার টাকা তো আমি চুরি করতে পারি নি। তাই আপনাকেই দিয়ে গেলাম।
এই বলে মৃণালবাবুর হাতটা টেনে টাকার বান্ডিলটা গুঁজে দেয় হাবলু। যাবার সময় বলে - "জীবনের শেষ চুরিটাই আমার জীবনে সেরা চুরি। কখনো চোরের ওপর বাটপারি করিনি। আজ সেটাও করলাম আপনার জন্যে।" এই বলে হাঁটা দেয় হাবলু। মৃণালবাবু তাকিয়ে থাকেন হাবলুর চলে যাবার দিকে, যতক্ষণ না সে অন্ধকারে মিলিয়ে যায়।
_____________