Thread Rating:
  • 60 Vote(s) - 3.33 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance মায়া - আমরা সবাই বাঁধা যেখানে (সমাপ্ত)
#93
পর্ব- নয়




মেসেজ টা যে নাম্বার থেকে এসেছে নাম্বার টা সেভ করা তথার মোবাইলে, নাম পার্থ। 

এমনিতে কলেজে বা টিউশনে খুব বেশি একটা কথা বলে না তথা। সত্যি বলতে তেমন বড় কোন বন্ধু সার্কেল বা গ্রুপ ওর নেই। প্রয়োজনের তাগিদে যে কজনের সাথে ওর কথা বলার দরকার তারা ছাড়া তেমন কেউ নেই। কেউ কথা বলতে আসলেও সে কথোপকথন গুলো সংক্ষিপ্ত রাখার চেষ্টা করে আর আগ বাড়িয়ে কারও সাথে কথা বলতে যায় না তথা। কলেজে বা টিউশনে খুব চুপচাপ স্বভাবের তথার পরিবর্তন টা আসে মাস দুয়েক আগে।

আগের দিন টিউশনে স্যার একটা নোট ফটোকপির দোকান থেকে সংগ্রহ করতে বলেছিল, কিন্তু বৃষ্টির জন্য তথা সেটা নিয়ে আসতে পারে নি। পরদিন গিয়ে জানতে পারে দোকানে কোন হার্ড কপি নেই তাই ওকে আবার ফটোকপি করে দিতে পারবে। খু্ব হতাশ হয়ে পড়ে তথা। খুবই দরকারী ছিল নোট টা। দুদিন পর টিউটোরিয়াল এক্সাম আছে কলেজে। আজ নোট টা না পেলে ফিজিক্সের প্রবলেম গুলো সলভ করা সম্ভব হবে না। ওর মুখ জুড়ে অমাবস্যার অন্ধকার নেমে আসে। 
হঠাৎ পাশে এসে একজন বলে

-আমার কাছে নোট টার একটা কপি আছে তুমি চাইলে ফটোকপি করে নিতে পারও। (একটা নোট বাড়িয়ে দেয় তথার দিকে)

কথাটা শুনেই মুখ তুলে তাকায় তথা৷ ওর মাথার উপর থেকে বুঝি একটা পাহাড় সমান ভার লাঘব হলো। ধন্যবাদ বলেই হাত থেকে ছোঁ মেরে নোট টা নিয়ে ফটোকপি করতে বলে দেয়।
এমন ভাবে সাহায্য করার জন্য ভদ্রতার খাতিরে আর কৃতজ্ঞতা বোধ থেকে আবারও ধন্যবাদ জানায় তথা।

- নোট দিয়ে অনেক উপকার করলে। নইলে চ্যাপ্টার প্রবলেম গুলো নিয়ে অনেক ঝামেলা পোহাতে হতো।

- আরে এর জন্য ধন্যবাদ দেবার দরকার নেই। একসাথে পড়ি, এতটুকু তো করতেই পারি। তা তুমি কোন কলেজে পড়?

- (অনিচ্ছা সত্ত্বেও উত্তর দিতে থাকে)সরকারী মহিলা কলেজ তুমি?

-ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ। তোমার নামটাই তো জানা হলো না।
-
তথা, তোমার?

-পার্থ।

ফটোকপি শেষে পার্থ'র নোট টা ওকে ফিরিয়ে দেয়। বিদায় নিয়ে নিজের বাইকে করে চলে যায় পার্থ। 
ওকে কখনো টিউশনে খেয়াল করে নি তথা, হয়তো নতুন এসেছে। আর ওতো নিজেও তেমন একটা নজর দেয় না অন্য দিকে। তবে ছেলেটা ভালই দেখতে, উচ্চতা হয়তো ৬ ফিটের কাছাকাছি হবে, গায়ের রঙ ফর্সা, নতুন স্টাইল করা চুলের কাট, হালকা দাঁড়ি আছে, সবচেয়ে আকর্ষণীয় জিনিসটা হলো ওর চোখ দুটো হালকা নীলাভ চোখের মণি দুটো।

এরপর আরও কবার দেখা হয়েছে টিউশনিতে ওদের দুজনের। আস্তে আস্তে বন্ধুত্ব গড়ে উঠে দুজনের মাঝে। দারুন গুছিয়ে কথা বলে পার্থ। কথা বলার স্টাইলে কিছু একটা আছে যেটা ওর কথা শোনার জন্য আগ্রহ তৈরী করে রাখে। সবসময় প্রাণোচ্ছল থাকে, আর হাসিমাখা কথা বলে মাতিয়ে রাখে। বিভিন্ন সাবজেক্টের প্রবলেম সলভ করতে সাহায্য করে তথাকে। মাঝে মাঝে সার্কিট হাউজ পার্কে, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে  ঘুরতে যায় দুজন। বন্ধুত্ব টা গাঢ় হতে থাকে।

মনীষীরা বলেছে, দুজন ছেলে মেয়ে কখনই দীর্ঘ সময় শুধু বন্ধু হয়ে থাকতে পারে না। তথা-পার্থের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।

দিন পনের আগে টিউশন থেকে ফেরার পথে তথাকে প্রপোজ করে পার্থ। তাৎক্ষণিকভাবে তথা সেটা এড়িয়ে গেলেও বেশি সময়ের জন্য নিজেকে আগলে রাখতে পারে না সে। জীবনের এই সময়টাতে এমন কিছু জিনিস আসে যেটা চাইলেও এড়িয়ে যাওয়া যায় না। প্রেম-ভালবাসাটাও তেমনি, এমন ভাবে এমন সময়ে জীবনে আসে যেন সেটা ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে যায় রন্ধ্রে রন্ধ্রে। শত চাইলেও সেটা থেকে আলাদা করা যায় না। যত ছাড়াতে চাওয়া হয় ততই জড়িয়ে যেতে থাকে আরও শক্ত ভাবে।

তথা যেদিন নিজের সম্মতির কথা জানিয়েছিল সেদিন থেকে ওর দুনিয়াটাই যেন বদলে গেছে। চারপাশের সবকিছুর মাঝে নতুনত্ব ভাব আসে। একটা ঘোরের মত লাগে সবকিছু। যেটাই করতে যায় না কেন সেটাতেই পার্থের সংস্পর্শ, পার্থের উপস্থিতি অনুভব করতে থাকে সে। অন্যরকম এক উত্তেজনা কাজ করে মনের ভিতর। সারাক্ষণ ওর সাথেই কথা বলতে ইচ্ছে করে তথার। একদিন দেখা না হলেই মনে হয় কতটা কাল পার হয়ে গেছে যেন পার্থ কে দেখে নি সে। পড়তে বসে পড়াতে মন দিতে পারে না সে। নিজের মাঝে পরিবর্তন গুলো সে টের পায়। তবে ভাল লাগের তথার নিজের বদলে যাওয়া টা। এখন সারাক্ষণ হাসিখুশি ভাবটা কাজ করে ওর মাঝে। অনেকটা সময় ধরে আয়নার সামনে নিজেকে দেখে, নিজের সাথে নিজে কথা বলে। গুনগুন করে গান গাইতে থাকে সবসময়। যেই রোমান্টিক গান গুলো আগে তেমন ভাল লাগতো না সেগুলোও এখন ভাল লাগে। নিজের ভেতরের সত্ত্বাটা যেন সবসময়ই নেচে বেড়ায় নিজের ভেতর। এমনটা তো আগে হয়নি, তবে এখন কেন এমন লাগে। ভাবে প্রেম বুঝি এমনি যখন আসে তখন এমন করেই পাল্টে দেয় সবকিছু।

বান্ধবীদের কাছে জেনেছে ভালবাসার সময় প্রেমিকের অনেক চাহিদা থাকে প্রেমিকার কাছে। এখানে সেখানে স্পর্শের অধিকার কিংবা জড়িয়ে ধরে চুমু খাওযার আকুলতা প্রেমিকার কাছে চায় প্রেমিক। সেদিক থেকে পার্থ কে অনেক আলাদা লাগে তথার। এ কদিনে তেমন কোন চাহিদা সে তথার কাছে রাখে নি। তবে মাঝে মাঝে হাতে ওর হাত ঠেকিয়েছে বা একটু হাত ধরার চেষ্টা করেছে ঐটুকুতেই সীমাবদ্ধ। কথা বলার সময় তেমন কোন ইঙ্গিত দিয়ে কথা বলে না। তথাও নিজ থেকে ততটা সায় দেয়নি তাই হয়তো।
তবে গতকাল কি হলো কে জানে, টিউশন থেকে ফেরার পথে ওর হাত টা ধরে আকুল প্রার্থনা জানায় তথার হাতে একটা চুমু খেতে। পার্থের এমন মায়াভরা আবেদন আর নিঃস্ব মুখশ্রী দেখে অগ্রাহ্য করতে পারে না তথা।ও ভাবে এটা আর এমন কি শুধু হাতেই তো চুমু খেতে চেয়েছে, আজকাল কি কারণে যেন পার্থের কথা গুলো ফেলতে পারে না সে। মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায় সে। সাথে সাথেই টুকুস করে তথার হাতে ছোট্ট করে একটা চুমু খায় পার্থ। সারা শরীরে শিহরণ জেগে উঠে তথার৷ সারা গায়ের লোম গুলোতে ছড়িয়ে পড়ে সেই শিহরণ। এই প্রথম কোন পুরুষের উষ্ণ ঠোঁটের স্পর্শে হৃদয় গলতে শুরু করে।  চোখ বন্ধ করে এখনও সেই শিহরণ অনুভব করছে সে।

চা নিয়ে ঘরে ঢুকে নিলয়। তথাকে আনমনে বসে থাকতে দেখে খুশকো কাশি দিয়ে নিজের আগমনের জানান দেয়।

-কি ব্যাপার পড়তে না বসে এত কি ভাবছো।

নিলয়ে কথায় ভাবনার জগত থেকে বাস্তবে ফিরে আসে তথা 
-হ্যাঁ এইতো পড়তে বসছি।

চা টেবিলে দিয়ে নিজের ঘরে চলে আসে নিলয়।
বই খুলতে খুলতে আবারও হাসি খেলে তথার মুখে। সেই শিহরণ দৌড়াতে থাকে ওর হাত থেকে সারা শরীরে।
Shy হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
 দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।। Shy
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মায়া - আমরা সবাই বাঁধা যেখানে - by nextpage - 13-04-2022, 07:18 PM



Users browsing this thread: 20 Guest(s)