12-04-2022, 01:39 AM
(This post was last modified: 12-04-2022, 01:39 AM by Shoumen. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
(11-04-2022, 04:00 PM)bourses Wrote: আমি মৃদু হাঁসি ওনার কথায়… উনি আসলে আমার চরিত্র ঠিক ঠাওর করে উঠতে পারেন নি… পারাটা সম্ভবও নয়… দেখে তো নিশ্চয় বড়লোকের আদুরে দুলালি ভেবে নিয়েছেন… আধুনিক পোষাক… চেহারাও সেই রকম… ভাববেন কি করে, এই মেয়ের ভেতরেই এতটা আগুন থাকতে পারে বলে… সে যাই হোক… আমি ওনাকে আস্বস্থ করার চেষ্টা করি… বলি, “দেখুন আমি মেডিকাল স্টুডেন্ট… আমি জানি কতক্ষনে কি হলে সেপ্টিসিজম ধরতে পারে… আপনি চিন্তা করবেন না শুধু শুধু… আমি এই ভাবেই চালিয়ে নেব… আশা করি হাওড়াতে পৌছানোর পর একটু হসপিটালে নিয়ে যেতে পারবেন আমায়…”
তাড়াতাড়ি জিভ কাটেন অফিসার… “ছি ছি… এটা তো আমাদের ডিউটি… তবে এবার আর আপনাকে একা ট্র্যাভেল করতে হবে না… বাকি রাস্তাটা কামরায় আমি নিজে থাকবো, সাথে আরো বেশ কিছু সিপাইও যাবে…” তারপর একবার মেঝেতে পড়ে থাকা টেকোটার দিকে দেখে নিয়ে বলল, “আর তাছাড়া এদেরও একবার হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে… বেশ ভালোই ব্লিড করছে দেখছি… ভাগ্য ভালো এর যে গুলিটা কাঁধে লেগেছে… বুকে লাগলে তো এতক্ষনে আমাদের অনেকটাই কাজ হাল্কা হয়ে যেত…” বলতে বলতে হটাৎ করে কি মনে হতে আমার দিকে মুখ তুলে উনি বললেন, “কিন্তু আপনার হাতের ফায়ার আর্মসটা তো আমায় সিজ করতে হবে… আশা করি এটার লাইসেন্স আছে আপনার…”
ওই আগের জাকির ভাইয়ের ঘটনার পরেই কাকা আমার নামে লাইসেন্সটা ট্রান্সফার করিয়েই দিয়েছিল… তাই এই ব্যাপারটায় আমি নিশ্চিন্তই ছিলাম… ওনার কথায় ঘাড় নাড়ি… “হ্যা… এটা আমার নামেই রিনিউড হয়েছে… সে নিয়ে কোন চিন্তা নেই…”
হাত ওল্টান অফিসার… “বেশ… তাহলে তো আর কোন চিন্তাই নেই… আর তাছাড়া আপনি গুলিটা চালিয়েছেন সেলফ ডিফেন্সের জন্য… তাই এতে আপনার দিকে কোন প্রবলেম ক্রিয়েটেড হবে না…” তারপর থেমে বললেন, “কিন্তু এটা এই মুহুর্তের জন্য আমি সিজ করবো… ওটা পরে আপনি পেয়ে যাবেন…”
শুনে মাথা হেলাই আমি… লুগারটা ওনার হাতে তুলে দিয়ে বলি, “এই তো নিন… আপনি আপনার ডিউটি করছেন, তাতে আমার কিছু বলার নেই… শুধু একবার আমার কাকাকে যদি একটা যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন, খুব ভালো হয়…”
অফিসারের ভ্রূ কোঁচকায় আমার কথায়… “কাকা? কে আপনার কাকা?”
আমি তখন কাকার পরিচয় দিই… তাতে উনি দেখি একটু বিস্মিত হন… “সেকি? আপনি চন্দ্রনারায়ণ চৌধুরীর ভাইঝি? আগে বলবেন তো…”
আমি ওনার কথায় এবার সত্যিই হেসে ফেলি খিকখিকিয়ে… কোন রকমে হাসি থামতে বলি, “আমি কি সুযোগ পেয়েছি কিছু বলার, সেই তখন থেকে?”
আমার কথায় অফিসার এবার নিজেই অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন… “হ্যা… সেটাও অবস্য ঠিক… সেই থেকে যা গেলো আপনার উপর দিয়ে… ওকে… ওকে… আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন… আমি মেসেজ রিলে করিয়ে দিচ্ছি হেড কোয়ার্টারে… আমাদের ট্রেন ওখানে পৌছবার সাথে সাথেই যাতে আপনার বাড়ির লোক এসে যায়…”
আমি তাড়াতাড়ি হাত তুলে থামাই ওনাকে… “না না… ওই ভুলটা একদম করবেন না… আপনি আলাদা করে শুধু মাত্র কাকাকে খবরটা দেবার ব্যবস্থা করুন… আমি চাইনা কোন মতেই আমার বাড়ির বাকিরা কেউ এই ব্যাপারটার সম্বন্ধ জানুক… তাহলে আর রক্ষে থাকবে না আমার… বোঝেনই তো…”
মাথা নাড়েন অফিসার, আমার কথায়… হেসে বলেন, বুঝতে পারছি আপনার পরিস্থিতি… কিন্তু আপনার কাকা খবর পেলে, বাড়ির বাকিরা আসবেন কি না জানি না… তবে আমার মনে হয় না বাড়ির লোকের কাছ থেকে এটা লুকোতে পারবেন বলে…” বলে নিজেই হা হা করে হেসে ওঠেন… আমি ও যোগ দিই ওনার হাসিতে…
হাওড়ায় পৌছাতে দেখি কাকা হাজির… আর শুধু কি কাকা? সেই সাথে আমার জাঠতুতো ভাই, বাপিও এসে গিয়েছে স্টেশনে… আমায় দেখেই তো তড়িঘড়ি এগিয়ে এলো ওরা… আমি হাত তুলে ওদেরকে আস্বস্থ করার চেষ্টা করলাম ঠিকই কিন্তু সেকি আর ওরা মানে? ওখানেই ওদের হম্বিতম্বি শুরু হয়ে গেলো… বললাম আমাদের সাথে আসতে… সেই যখন এলিই তখন আমাদের সাথে না আসার কি ছিল? তোকে নিয়ে আর পারা যায় না… এক একটা কান্ড করে বসিস… আমি তখন ওদের কথার উত্তর দেবো কি, পায়ে ততক্ষনে বেশ যন্ত্রনা শুরু হয়ে গিয়েছে… সেটা বোধহয় সাথে থাকা অফিসার আমার মুখ দেখেই বুঝতে পেরেছিলেন… উনিই বাপিদের বললেন, “দেখুন… উনি যা করেছেন, তা একেবারে অসাধ্য সাধন… ওনার সহযোগিতাতেই এই এত বড় একটা স্মাগলার আমরা ধরতে পেরেছি… কিন্তু আমার মনে হয় এখন এই সময় ওনাকে না বকে ওনার যাতে ট্রেটমেন্টটা তাড়াতাড়ি হয়, তার ব্যবস্থা করা উচিত…”
তাতে কাকা দেখি বাপিকে বলল, “দাদা, এখন তিতাসকে কিছু বলো না… আমি দেখছি ব্যাপারটা…” তারপর অফিসারকে বলল, “ওকে এখান থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হসপিটাল শিফট করা উচিত…”
কাকার কথায় অফিসার মাথা নাড়েন… “আমিও সেটাই বলতে চাইছিলাম স্যর…” তারপর পাশে থাকা ওনার একজন সিপাইকে ডেকে একটা মাল বওয়াবার ট্রলি আনতে বললেন…
মাল বওয়াবার ট্রলি শুনে আমি নাক কুঁচকাই… তাতে হেসে ফেলেন উনি… বলেন, “কি করবো ম্যাডাম… এখন এটাই ভরসা… আপনার যা পায়ের অবস্থা, তাতে আপনাকে হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে না… আর হুইল চেয়ার আনতে টাইম লাগবে… তার থেকে হাতের কাছে যখন এটা আছে, তখন এটাতেই কাজ চালিয়ে নিই না হয়…”
আমি শুনে কাঁধ ঝাঁকাই… অগত্যা… এখন যে সত্যিই কিছু করার নেই, সেটা বুঝতে পারি… একটা কুলি ওর সেই মালের ট্রলি নিয়ে এলে উঠে বসি ওটার উপরেই অতি কষ্টে… পা’টাকে সাবধানে সামনে দিকে সোজা করে রেখে… বাকিরা আমায় নিয়ে দৌড় দেয় রেল হসপিটালের দিকে… আমি একবার অফিসারের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করি, “ওই লোক দুটো?”
অফিসার বলেন, “ওদের নিয়ে ভাববেন না ম্যাডাম… ওদের চালান করে দেওয়া হয়েছে এতক্ষনে… অনেক ভুগিয়েছে এরা… সহজে এরা আর পার পাবে না… অনেক কেস ঝুলে আছে ওদের উপরে…”
পাশ থেকে বাপি ধমকে ওঠে, “এখন কি তোর ওদের কথা না শুনলেই নয়… নিজের পায়ের যা অবস্থা করেছিস… আগে চল, এটাকে ঠিক করি… কতটা কি হয়ে আছে কে জানে…”
উত্তরে কিছু বলি না আমি আর… জানি, বুঝতেই পারছি, বাপির মনের উদবেগটা… এখানে চুপ করে থাকাই শ্রেয় বুঝতে পারি…
হসপিটালে ছুরিটা বের করে ভালো করে ড্রেসিং করে দিল আমায়… বলেছিল অ্যাডমিট করার জন্য… কিন্তু আমি বেঁকে বসি… নিজের পরিচয় দিয়ে বলি, “আমায় ড্রেসিং করে ছেড়ে দিন, আমি কলেজে গিয়ে ভালো করে দেখিয়ে নেবো…”
আমায় মেডিকাল স্টুডেন্ট জেনে আর জোর করেন না ইমার্জেন্সির ডাক্তার… ছেড়ে দেন ফার্স্ট এড করে দিয়ে…
হসপিটাল থেকে বেরিয়ে আসার পর বাপি বলে আর তোর কোন কথা শুনবো না, এবার আমাদের সাথে সোজা বাড়ি যাবি…
কিন্তু আমার সেই জেদ… না মানে না… আমি বলি, “আমায় নিয়ে ভেবো না… আমি ঠিক চলে যেতে পারবো… কালকে আমার একটা ভিষন ইম্পর্টেন্ট ক্লাস আছে… আমাকে অ্যাটেন্ড করতেই হবে…” তারপর ভাইকে বলি, “তুই আমায় একটা শুধু ট্যাক্সি ধরিয়ে দে স্ট্যান্ড থেকে… আমি চলে যেতে পারবো…”
এবার বাপি সত্যিই রেগে যায় আমার উপরে… গম্ভীর গলায় ভাইকে বলে, “এই… তুই গাড়িটা এখানে আনতে বল… তিতাস গাড়িতেই যাবে…” তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলে, “ঠিক আছে… তোকে বাড়ি যেতে হবে না… আমরা তোকে হোস্টেলেই নামিয়ে দিয়ে আসছি…”
বাপির কথার উপরে আর জেদ করি না… চুপ করে মেনে নিই… গাড়ি আসতে ওরা সেই রাতেই আমায় হোস্টেলে নামিয়ে দিয়ে আসে…
.
.
.
“এটা কে? মেয়ে? নাকি অন্য কিছু?” ডায়রিটা বন্ধ করে চুপ করে বসে ভাবে খানিক পর্ণা… “সত্যি বলতে, আমি হলে তো যে কি করতাম ওই রকম সিচুয়েশনে পড়ে! উফফফফফফ… ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিচ্ছে এখনও আমার… নাহ! ওকে বলতেই হবে… একবার অন্তত কান্তার সাথে কথা বলিয়ে দিতে আমায়… দেখা হবে কি না কোনদিন জানি না… তবে কথা বলতে তো আর দোষ নেই… আমি বলবো… ঠিক কথা হলে… গড় করি তোমায় আমি… এযে একেবারে রণচন্ডী… তবে এটাও ঠিক… মেয়েদের এমনই হওয়া উচিত… না হলে এই পুরুষশাষিত সমাজে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকা যায় না… একদম ঠিক করে কান্তা… কাউকে পাত্তা না দিয়ে… কেনই বা দেবে? মেয়েরাই বা কিসে কম?”
ভাবতে ভাবতেই উঠে পড়ে বিছানা ছেড়ে পর্ণা… ডায়রিটা আলমারির মধ্যে ঢুকিয়ে রেখে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে…
ক্রমশ…
বাহঃ অসাধারণ একটা আপডেট,,, খুব ভালো লাগলো,,, প্রথমে বলতে গেলে আপনজন এর মৃত্যু,, সেই মৃত্যুর শোক,,,তার উপর আবার সেই রাতেই একটা ভয়ানক এডভেঞ্চার,,, ফিল্মের নায়কের মতো একশন,,, আবার যখম,,,, অসাধারণ,,, খুব চমৎকার,,, তবে সেক্স টা মিস করছি চন্দ্রকান্তার,,,, ?,,, তবে উপন্যাস পড়ে খুবই ভালো লাগছে,,, সত্যি দাদা অসাধারণ লেখক আপনি,,, চমৎকার গল্পকার,,, আপনি প্লিজ সব সময় লিখুন,,, সবার মন জয় করবেন ???,,, ভালো থাকবেন।