08-04-2022, 08:18 PM
পর্ব- পাঁচ
এভাবেই সময় কাটতে থাকে। অন্য দিন গুলোর মতই সকালের নাস্তা শেষ করে নিলয় তৈরী হতে থাকে, অন্যদিকে কলেজে যাবার জন্য তৈরী হয় তথা। আজকে যে এরিয়াতে নিলয় সেলসে যাবে সেদিকেই তথার কলেজ। রাস্তায় ধারে অটোর অপেক্ষা করছে তথা। নিলয় হয়তো হেঁটেই চলে যেত কিন্তু তথা যে পর্যন্ত অটো না পাচ্ছে ততক্ষণ ও দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। মিনিট পাঁচেক হয়ে গেল, যে অটো গুলো আসছে কোনটাতেই সিট খালি নেই। দুজনের নিস্তব্ধতা ভাঙে নিলয়ে ডাকে
-আজ না হয় রিক্সাতেই চলে যাও। আমিও ওদিকেই যাবো। দুজনে একসাথেই যাওয়া যাবে।
চোখ দুটো ছোট করে নিলয়ের দিকে তাকিয়ে কি যেন ভেবে তথা সম্মতি জানায় মাথা নাড়িয়ে।
রিক্সায় উঠে পড়ে দুজনে। রিক্সায় বসার পর দুজনের মাঝখানে যতটুকু ফাঁকা থাকার কথা তার চেয়ে একটু বেশিই ফাঁকা থাকা ওদের মাঝে। কলেজ থেকে কিছুটা দূরে থাকতেই তথা নিলয় কে নেমে যেতে বলে। নিলয়ও কোন উচ্চবাক্য না করেই নেমে যায়। ও জানে তথা চায় না কলেজের কেউ দুজনকে একসাথে দেখে কোন কানাঘুষো করুক।
ফুটপাত ধরে হাঁটতে থাকে নিলয়, হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠে। পকেট থেকে ফোনটা বের করতেই দেখে কোম্পানির টিএসএমের ফোন। ফোন রিসিভ করে কথা বলা শেষে ফোনটা আবার পকেটে রেখে দেয়। মেজাজটা বিগড়ে যায় নিলয়ের। সেই আবার নতুন মান্থলি টার্গেট, সেলস আরও বাড়ানো এটা সেটা বলার জন্যই অফিসার গুলো ফোন করে। ওরা এসি রুমে বসে টার্গেট চাপিয়ে দিয়েই খালাস। সেই টার্গেট ফিলাপ করতে কত কাঠখড় পোড়াতে হয় সেটা তো ফিল্ডে যে কাজ করে সে জানে। আনমনে রাস্তা পার হতে চলে নিলয়।
-নীইইলু দাঁড়া...
ফুটপাত থেকে বা পা রাস্তায় নামাতে গিয়েও থমকে দাঁড়ায় ও। চোখের সামনে খুব জোরে ব্রেক কসে দাঁড়ায় একটা বাইক আর কিছু একটা বলে চলেছে বাইক চালক। হয়তো গালি টালি দিচ্ছে ওকে। কিন্তু ওসবের দিকে খেয়াল নেই ওর। নিলয় ভাবে আমি কি ঠিক শোনলাম। না না আমার মনের ভুল হয়তো। এ নামে এখানে কে ডাকবে আমাকে, এসব ভাবতেই ভাবতেই আবার পা বাড়াতে চায় ও। কিন্তু পারে না
-প্লিজ নীলু একবার দাঁড়া।
না না আমি তো ভুল শুনছি না। এবার তো স্পষ্ট শুনতে পেলাম আমাকে ডাকছে। এতদিন পর কোথা থেকে এলো ও।
নিলয় পিছন ফিরে তাকাতে পারে না। ওর শরীর অবশ হয়ে যাচ্ছে। ও জানে না কি ভাবে ওর সামনে দাঁড়াবে। পা দুটো অসার হয়ে গেছে মনে হচ্ছে, এই বুঝি দমবন্ধ হয়ে আসবে। স্পষ্ট অনুভব করছে পেছনে এসে দাড়িয়েছে একজন। কাঁধে একটা হাতের স্পর্শ পায় নিলয়৷ সাথে সাথে শ্বাসের গতি বেড়ে গেছে ওর। কেউ যেন প্রাণপণে হাঁপড় টেনে চলেছে ওর বুকে। চোখ বন্ধ করে নেয় নিলয়।
বারান্দা ধরে হেটে আসছে মুকুল স্যার। বাঘের মত ভয় পায় সবাই স্যার কে। যেমন কড়া শাসনে তেমনি ভাল পদার্থ বিজ্ঞান আর উচ্চতর গণিতে মুকুল স্যার। ৯ম শ্রেণিতে প্রবেশ করে স্যার, পুরো ক্লাসের শিক্ষার্থীরা উঠে দাঁড়ায়। কিন্তু তৃতীয় সারির একটা বেঞ্চে বসা তিনজন উঠে দাঁড়ায় না, ওখানেই বসা নিলয় সাথে তার দুই সহপাঠি। এটা ওদের নৈমিত্তিক ব্যাপার। আর সেটাতে স্যারের চোখ ফাকি দেবার জন্যই ইচ্ছে করে দুসারি বেঞ্চ পরে বসে ওরা।
বয়সটাই তখন এমন ডেয়ারিং কিছু করে দেখানোর। হঠাৎ শরীরের পরিবর্তন আর কিছু ইঁচড়েপাকা বন্ধুর পাল্লায় পরে ছেলেদের জীবনটাই অনেকটা বদলে যায়। নতুন নতুন বিষয়ের সাথে চেনাজানা হতে থাকে। কেউ সেটা হজম করে এগিয়ে যেতে পারে আবার কেউ বদহজমে গোল্লায় যায়। এই বয়ঃসন্ধিতেই আমুল বদলে যেতে থাকে সব। গলার স্বর থেকে শুরু করে নাকের নিচে গোফের অস্তিত্ব সেই সাথে শারীরিক পরিবর্তন। সেসব সামলাতে সামলাতেই ইঁচড়েপাকাদের পাল্লায় যৌন শিক্ষাতেও হাতে খড়ি শুরু হয়ে যায় অধিকাংশের। লুকিয়ে পর্ণ দেখা কিংবা চটি গল্প পড়ে আনকোরা শরীরে কামোত্তেজনার আবির্ভাব ঘটতে থাকে। শুরু হয় বিপরীত লিঙ্গের প্রতি অদ্ভুত এক আকর্ষণ।
সেই সব কিছুই ঘটে গেছে নিলয়ের সাথেও। হয়তো একটু বেশিই ঘটে গেছে। কারণ ওকে তখন এসব বিষয়ে বুঝিয়ে বলার মত কিংবা ওর কিশোর মনে শান্ত পথ দেখানোর অভিভাবক কেউ ছিল না। নিলয়ও আকর্ষণ বোধ করতো বিপরীত লিঙ্গের দিকে। ছেলেদের যেমন পরিবর্তন আসে তেমনি পরিবর্তন মেয়েদেরও আসে। সেই বদল গুলো ভীষণ ভাবেই দৃষ্টি কাড়ে। যেমন এখন নিলয়ের কাড়ছে। ক্লাসে বসে লুকিয়ে লুকিয়ে মেয়েদের শরীর বিশ্লেষণে ব্যস্ত নিলয় আর ওর বন্ধুরা। কার বুকটা বেশি বড় দেখাচ্ছে, কার পিছনটা বেশি ভারী সেসবের চুলচেরা গবেষণা। স্যার যে ক্লাসে চলে এসেছে সেদিকে ওদের খেয়ালই নেই। আর অগত্যা ওদের অমনোযোগী ভাব স্যারের কাছে ধরা পড়তেই বেধম প্রহার।
নিলয়রা যখন মাধ্যমিকে সে সময়টাতেই কলকাতার মুভি ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন নতুন নায়কের আগমন সে সাথে রোমান্টিক ছবির জয়জয়কার। এসব রোমান্টিক ছবির রোমান্স গুলো ওদেরও ছুয়ে যেত। বয়ঃসন্ধির হরমোনে প্রেম জেগে উঠে ছেলে মেয়ের নরম হৃদয়ে। এটা আসলে সে অর্থে কোন প্রেম ভালবাসা না। যেটা হয় সেটা হলো শরীরের প্রতি আকর্ষণ। নিলয়ের ক্লাসের অনেকেই সেই আকর্ষণের মায়ার জালে বন্দী পড়েছে। কিন্তু ওর তো তেমন কেউ নেই। ক্লাসের ফাঁকে কিংবা টিফিনে সবাই তাদের জুটিতে ব্যস্ত হয়ে যায়। শুধু ওর কোন ব্যস্ততা নেই। মনে মনে ভাবে এখন একটা প্রেম করা ভীষন ভাবে জরুরি হয়ে দাড়িয়েছে। নইলে বাকিদের কাছে মুখ দেখানো যাবে না, প্রেস্টিজ বলে আর কিছুই থাকবে না।
ক্লাসে এমনিত ওর বন্ধু বান্ধবী নেহাত কম নয়৷ তবে ওদের মাঝে একজনের সাথে নিলয় একটু বেশিই সহজ৷ ওরা কাছে সহজেই সব বলে দিতে পারে, পড়াশোনাের বিষয়ে আলোচনা হোক কিংবা দুষ্টুমির কোন বিষয় ওর সাথেই সব থেকে বেশি শেয়ার করে। একটা সময় ভাবতে থাকে ওকেই প্রপোজ করে দেখি। যদি কপাল ভাল থাকে তবে আমারও একটা প্রেম হয়ে গেলে বেঁচে যাই।
সেদিন সকাল থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে। যতই বৃষ্টি হোক, বৃষ্টির ক্লাস না হলেও ওদের গ্রুপটার কলেজে আসা চাই। দুতলার ওদের ক্লাসের সামনের বারান্দার গ্রিলের ওপাশে দুটো আকাশি গাছ। আকাশি পাতায় বৃষ্টির ফোটা গুলো পড়ে গ্রিলের এপাশে হালকা করে আসছে। একটু দূরে একটা আরেকটা গাছ, তাতে ফুল ধরেছে। কি ফুল সেটা জানা নেই তবে ছোট ছোট সাদা ফুল গুলো থেকে বেশ সুন্দর গন্ধ ছড়াছে। মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। ওখানেই নিলয় আরেক বন্ধু কে দিয়ে ওর প্রিয় বান্ধবীকে ডেকে আনায়।
- কিরে কি হলো ডাকলি কেন?
- একটা কথা বলবো শুধু হ্যাঁ না তে জবাব দিবি।
-কি বলবি, সিরিয়াস কিছু হয়েছে।
- না তেমন কিছু না, মাআ মাআনে বিষয়টা হলো ইয়ে আমি তো তোকে বল বলতে চাই
-কি বলতে চাস সেটা বলবি তো
-আমি তোকে ভালবাসি, তুইও কি আমাকে ভালবাসিস (এই ঝড়ো বাতাসের শীতলতার মাঝেও কপালে ঘামবিন্দু দেখা দেয় ওর)
-কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নিলয় কে বলে দেখ তুই আমার বন্ধু। তোকে আমি...
-তুই হ্যাঁ না তে বলে দে।
- তুই বুঝার চেষ্টা কর, আমি তোকে বন্ধু হিসেবে... বাকি কিছু বলার আগেই নিলয় ওখান থেকে হাটা শুরু করে সোজা সিড়ি বেয়ে নিচতলায় নেমে যায়।
ইশ কি ভুল করে বসলাম। আগেই বুঝা উচিত ছিল, এখন তো বাকিরা বিষয়টা জেনে গেলে আর মুখ দেখাতে পারবো না, কি কারণে যে পাগলামি টা করতে গেলাম। ও যদি এবার বন্ধুত্ব টাও না রাখে কি হবে তখন। ভাবতে ভাবতে হল ঘরের দিকে এগিয়ে যেতে গিয়ে হঠাৎ ধাক্কা খায়।
-ওফফ দেখে যেতে পার না।
চোখ খোলে যায় নিলয়ের। কাঁধে হাতের স্পর্শ টা এখনো পাচ্ছে ও।
এভাবেই সময় কাটতে থাকে। অন্য দিন গুলোর মতই সকালের নাস্তা শেষ করে নিলয় তৈরী হতে থাকে, অন্যদিকে কলেজে যাবার জন্য তৈরী হয় তথা। আজকে যে এরিয়াতে নিলয় সেলসে যাবে সেদিকেই তথার কলেজ। রাস্তায় ধারে অটোর অপেক্ষা করছে তথা। নিলয় হয়তো হেঁটেই চলে যেত কিন্তু তথা যে পর্যন্ত অটো না পাচ্ছে ততক্ষণ ও দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। মিনিট পাঁচেক হয়ে গেল, যে অটো গুলো আসছে কোনটাতেই সিট খালি নেই। দুজনের নিস্তব্ধতা ভাঙে নিলয়ে ডাকে
-আজ না হয় রিক্সাতেই চলে যাও। আমিও ওদিকেই যাবো। দুজনে একসাথেই যাওয়া যাবে।
চোখ দুটো ছোট করে নিলয়ের দিকে তাকিয়ে কি যেন ভেবে তথা সম্মতি জানায় মাথা নাড়িয়ে।
রিক্সায় উঠে পড়ে দুজনে। রিক্সায় বসার পর দুজনের মাঝখানে যতটুকু ফাঁকা থাকার কথা তার চেয়ে একটু বেশিই ফাঁকা থাকা ওদের মাঝে। কলেজ থেকে কিছুটা দূরে থাকতেই তথা নিলয় কে নেমে যেতে বলে। নিলয়ও কোন উচ্চবাক্য না করেই নেমে যায়। ও জানে তথা চায় না কলেজের কেউ দুজনকে একসাথে দেখে কোন কানাঘুষো করুক।
ফুটপাত ধরে হাঁটতে থাকে নিলয়, হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠে। পকেট থেকে ফোনটা বের করতেই দেখে কোম্পানির টিএসএমের ফোন। ফোন রিসিভ করে কথা বলা শেষে ফোনটা আবার পকেটে রেখে দেয়। মেজাজটা বিগড়ে যায় নিলয়ের। সেই আবার নতুন মান্থলি টার্গেট, সেলস আরও বাড়ানো এটা সেটা বলার জন্যই অফিসার গুলো ফোন করে। ওরা এসি রুমে বসে টার্গেট চাপিয়ে দিয়েই খালাস। সেই টার্গেট ফিলাপ করতে কত কাঠখড় পোড়াতে হয় সেটা তো ফিল্ডে যে কাজ করে সে জানে। আনমনে রাস্তা পার হতে চলে নিলয়।
-নীইইলু দাঁড়া...
ফুটপাত থেকে বা পা রাস্তায় নামাতে গিয়েও থমকে দাঁড়ায় ও। চোখের সামনে খুব জোরে ব্রেক কসে দাঁড়ায় একটা বাইক আর কিছু একটা বলে চলেছে বাইক চালক। হয়তো গালি টালি দিচ্ছে ওকে। কিন্তু ওসবের দিকে খেয়াল নেই ওর। নিলয় ভাবে আমি কি ঠিক শোনলাম। না না আমার মনের ভুল হয়তো। এ নামে এখানে কে ডাকবে আমাকে, এসব ভাবতেই ভাবতেই আবার পা বাড়াতে চায় ও। কিন্তু পারে না
-প্লিজ নীলু একবার দাঁড়া।
না না আমি তো ভুল শুনছি না। এবার তো স্পষ্ট শুনতে পেলাম আমাকে ডাকছে। এতদিন পর কোথা থেকে এলো ও।
নিলয় পিছন ফিরে তাকাতে পারে না। ওর শরীর অবশ হয়ে যাচ্ছে। ও জানে না কি ভাবে ওর সামনে দাঁড়াবে। পা দুটো অসার হয়ে গেছে মনে হচ্ছে, এই বুঝি দমবন্ধ হয়ে আসবে। স্পষ্ট অনুভব করছে পেছনে এসে দাড়িয়েছে একজন। কাঁধে একটা হাতের স্পর্শ পায় নিলয়৷ সাথে সাথে শ্বাসের গতি বেড়ে গেছে ওর। কেউ যেন প্রাণপণে হাঁপড় টেনে চলেছে ওর বুকে। চোখ বন্ধ করে নেয় নিলয়।
বারান্দা ধরে হেটে আসছে মুকুল স্যার। বাঘের মত ভয় পায় সবাই স্যার কে। যেমন কড়া শাসনে তেমনি ভাল পদার্থ বিজ্ঞান আর উচ্চতর গণিতে মুকুল স্যার। ৯ম শ্রেণিতে প্রবেশ করে স্যার, পুরো ক্লাসের শিক্ষার্থীরা উঠে দাঁড়ায়। কিন্তু তৃতীয় সারির একটা বেঞ্চে বসা তিনজন উঠে দাঁড়ায় না, ওখানেই বসা নিলয় সাথে তার দুই সহপাঠি। এটা ওদের নৈমিত্তিক ব্যাপার। আর সেটাতে স্যারের চোখ ফাকি দেবার জন্যই ইচ্ছে করে দুসারি বেঞ্চ পরে বসে ওরা।
বয়সটাই তখন এমন ডেয়ারিং কিছু করে দেখানোর। হঠাৎ শরীরের পরিবর্তন আর কিছু ইঁচড়েপাকা বন্ধুর পাল্লায় পরে ছেলেদের জীবনটাই অনেকটা বদলে যায়। নতুন নতুন বিষয়ের সাথে চেনাজানা হতে থাকে। কেউ সেটা হজম করে এগিয়ে যেতে পারে আবার কেউ বদহজমে গোল্লায় যায়। এই বয়ঃসন্ধিতেই আমুল বদলে যেতে থাকে সব। গলার স্বর থেকে শুরু করে নাকের নিচে গোফের অস্তিত্ব সেই সাথে শারীরিক পরিবর্তন। সেসব সামলাতে সামলাতেই ইঁচড়েপাকাদের পাল্লায় যৌন শিক্ষাতেও হাতে খড়ি শুরু হয়ে যায় অধিকাংশের। লুকিয়ে পর্ণ দেখা কিংবা চটি গল্প পড়ে আনকোরা শরীরে কামোত্তেজনার আবির্ভাব ঘটতে থাকে। শুরু হয় বিপরীত লিঙ্গের প্রতি অদ্ভুত এক আকর্ষণ।
সেই সব কিছুই ঘটে গেছে নিলয়ের সাথেও। হয়তো একটু বেশিই ঘটে গেছে। কারণ ওকে তখন এসব বিষয়ে বুঝিয়ে বলার মত কিংবা ওর কিশোর মনে শান্ত পথ দেখানোর অভিভাবক কেউ ছিল না। নিলয়ও আকর্ষণ বোধ করতো বিপরীত লিঙ্গের দিকে। ছেলেদের যেমন পরিবর্তন আসে তেমনি পরিবর্তন মেয়েদেরও আসে। সেই বদল গুলো ভীষণ ভাবেই দৃষ্টি কাড়ে। যেমন এখন নিলয়ের কাড়ছে। ক্লাসে বসে লুকিয়ে লুকিয়ে মেয়েদের শরীর বিশ্লেষণে ব্যস্ত নিলয় আর ওর বন্ধুরা। কার বুকটা বেশি বড় দেখাচ্ছে, কার পিছনটা বেশি ভারী সেসবের চুলচেরা গবেষণা। স্যার যে ক্লাসে চলে এসেছে সেদিকে ওদের খেয়ালই নেই। আর অগত্যা ওদের অমনোযোগী ভাব স্যারের কাছে ধরা পড়তেই বেধম প্রহার।
নিলয়রা যখন মাধ্যমিকে সে সময়টাতেই কলকাতার মুভি ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন নতুন নায়কের আগমন সে সাথে রোমান্টিক ছবির জয়জয়কার। এসব রোমান্টিক ছবির রোমান্স গুলো ওদেরও ছুয়ে যেত। বয়ঃসন্ধির হরমোনে প্রেম জেগে উঠে ছেলে মেয়ের নরম হৃদয়ে। এটা আসলে সে অর্থে কোন প্রেম ভালবাসা না। যেটা হয় সেটা হলো শরীরের প্রতি আকর্ষণ। নিলয়ের ক্লাসের অনেকেই সেই আকর্ষণের মায়ার জালে বন্দী পড়েছে। কিন্তু ওর তো তেমন কেউ নেই। ক্লাসের ফাঁকে কিংবা টিফিনে সবাই তাদের জুটিতে ব্যস্ত হয়ে যায়। শুধু ওর কোন ব্যস্ততা নেই। মনে মনে ভাবে এখন একটা প্রেম করা ভীষন ভাবে জরুরি হয়ে দাড়িয়েছে। নইলে বাকিদের কাছে মুখ দেখানো যাবে না, প্রেস্টিজ বলে আর কিছুই থাকবে না।
ক্লাসে এমনিত ওর বন্ধু বান্ধবী নেহাত কম নয়৷ তবে ওদের মাঝে একজনের সাথে নিলয় একটু বেশিই সহজ৷ ওরা কাছে সহজেই সব বলে দিতে পারে, পড়াশোনাের বিষয়ে আলোচনা হোক কিংবা দুষ্টুমির কোন বিষয় ওর সাথেই সব থেকে বেশি শেয়ার করে। একটা সময় ভাবতে থাকে ওকেই প্রপোজ করে দেখি। যদি কপাল ভাল থাকে তবে আমারও একটা প্রেম হয়ে গেলে বেঁচে যাই।
সেদিন সকাল থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে। যতই বৃষ্টি হোক, বৃষ্টির ক্লাস না হলেও ওদের গ্রুপটার কলেজে আসা চাই। দুতলার ওদের ক্লাসের সামনের বারান্দার গ্রিলের ওপাশে দুটো আকাশি গাছ। আকাশি পাতায় বৃষ্টির ফোটা গুলো পড়ে গ্রিলের এপাশে হালকা করে আসছে। একটু দূরে একটা আরেকটা গাছ, তাতে ফুল ধরেছে। কি ফুল সেটা জানা নেই তবে ছোট ছোট সাদা ফুল গুলো থেকে বেশ সুন্দর গন্ধ ছড়াছে। মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। ওখানেই নিলয় আরেক বন্ধু কে দিয়ে ওর প্রিয় বান্ধবীকে ডেকে আনায়।
- কিরে কি হলো ডাকলি কেন?
- একটা কথা বলবো শুধু হ্যাঁ না তে জবাব দিবি।
-কি বলবি, সিরিয়াস কিছু হয়েছে।
- না তেমন কিছু না, মাআ মাআনে বিষয়টা হলো ইয়ে আমি তো তোকে বল বলতে চাই
-কি বলতে চাস সেটা বলবি তো
-আমি তোকে ভালবাসি, তুইও কি আমাকে ভালবাসিস (এই ঝড়ো বাতাসের শীতলতার মাঝেও কপালে ঘামবিন্দু দেখা দেয় ওর)
-কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নিলয় কে বলে দেখ তুই আমার বন্ধু। তোকে আমি...
-তুই হ্যাঁ না তে বলে দে।
- তুই বুঝার চেষ্টা কর, আমি তোকে বন্ধু হিসেবে... বাকি কিছু বলার আগেই নিলয় ওখান থেকে হাটা শুরু করে সোজা সিড়ি বেয়ে নিচতলায় নেমে যায়।
ইশ কি ভুল করে বসলাম। আগেই বুঝা উচিত ছিল, এখন তো বাকিরা বিষয়টা জেনে গেলে আর মুখ দেখাতে পারবো না, কি কারণে যে পাগলামি টা করতে গেলাম। ও যদি এবার বন্ধুত্ব টাও না রাখে কি হবে তখন। ভাবতে ভাবতে হল ঘরের দিকে এগিয়ে যেতে গিয়ে হঠাৎ ধাক্কা খায়।
-ওফফ দেখে যেতে পার না।
চোখ খোলে যায় নিলয়ের। কাঁধে হাতের স্পর্শ টা এখনো পাচ্ছে ও।
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।