08-04-2022, 11:44 AM
কিছু কিছু মানুষ থাকে যাদের আপনি কোনো ক্যাটাগরিতেই ফেলতে পারবেন না। এরা যদি ২+২=২২ বলে তো চমকানোর কিছুই নেই। মানে তার লজিক এমনই। ষাঁড় সব রং ছেড়ে দিয়ে লাল দেখলে কেন দৌড়ায় তার যেমন কোনো লজিক নেই, নেতা হলেই চোর কেন হতে হবে তারও যেমন কোনো লজিক নেই তেমনই এরাও কেন ২+২=২২ বলবেন তারও কোনো লজিক নেই।
তো লোকাল ট্রেনের লেডিসে যাচ্ছি। একজন ভদ্রমহিলা উঠলেন। পরনে ব্লু কালারের খাদির শাড়ি। চুলটা একটা হাতখোপা করা। মধ্যবয়সেও তিনি রীতিমত সুন্দরী। ছিপছিপে ফিগার, কপালে চোখে পড়ার মত বড় টিপ।
মহিলা আমার কম্পার্টমেন্টেই উঠলেন। ভাবখানা এমন যেন, আমার পারসোনাল ড্রয়িংরুমে এমন ভিড় কেন? উফ, কে এদের অ্যালাও করল!
ভদ্রমহিলা নিজের বড় ব্যাগটা বাংকে তুলে দিলেন।
একটা ঠান্ডা জলের আরেকটা গ্লুকোজের বোতল পাশের ফাঁকা সিটটাতে রাখলেন। তার পাশের সিটটাতে নিজে বেশ আরাম করে বসলেন। তারপরেই সামনে বসে থাকা আমারই মত কয়েকজন অতি অকিঞ্চিতকর মানুষের দিকে একটা অবজ্ঞার দৃষ্টি ফেলে তাকালেন।
মনে হল, আবার এরা কেন আমার জমিদারিতে! যতসব দখলবাজ লোকজন। লেঠেল ডেকে এদের তুলে দেওয়াই উচিত।
পরের স্টেশনে ট্রেনে আরও বেশ কিছু অর্বাচীন মানুষ উঠলেন। এর মধ্যে একটি শান্ত শান্ত স্বভাবের মেয়ে এসে খুব স্বাভাবিক গলায় বলল, দিদিভাই আপনার জলের বোতল আর ভ্যানিটি ব্যাগটা একটু সরাবেন ? তাহলে ফোর্থ সিটে আমি বসতে পারি।
মহিলা যেন শুনতেই পাননি এমনভাবে অন্যদিকে তাকালেন। এসব মশা, মাছিসম মানুষকে উনি যে দেখতে পান না সেটাও বুঝিয়ে দিলেন।
মেয়েটি আবারও বলল, দিদিভাই প্লিজ বোতলগুলো তুলে নেবেন একটু ?
মহিলা অত্যন্ত বিরক্তির গলায় বললেন, অদ্ভুত মেয়ে তো তুমি! আরে আমি যদি মোটা হতাম তাহলে তুমি এখানে বসতে পারতে? পারতে না। ওই যে ঐ সিটে তিনজন বসে আছে। পারবে ওখানে বসতে? কারণ ওরা তিনজনেই মোটা। আমি না খেয়ে খেয়ে নিজেকে রোগা রেখেছি। নিজের বসার জায়গাটুকুর মধ্যেই বোতল দুটো আর ভ্যানটি ব্যাগ রেখেছি। অন্যের জায়গা নিইনি। তাই সরাতে পারব না।
মেয়েটা কী বলবে বুঝতে পারছিল না। মানে ওই ২+২=২২ উনি বুঝিয়ে দিলেন এভাবে।
ধৈর্য্য আমার কোনো কালেই খুব বেশি নয়। আমার কাছের মানুষরা ভাল করেই জানেন।
মেয়েটা মুখ নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে। পাশে যারা বসে আছেন তারা অন্যের ঝামেলায় কেন ঢুকবেন ভেবে চুপ করে আছেন। আরেকজন ভদ্রমহিলা সামান্য প্রতিবাদ করে বললেন, আপনার জিনিসগুলো আমি ধরছি, ওকে বসতে দিন।
উনি হিটলারি মেজাজে বললেন, এত দরদ হলে নিজের সিটটা ছেড়ে দিন।
আমি তখন ব্যাগ হাতড়ে চলেছি। এই এক রোগ আমার। সময়ের জিনিস সময়ে পাই না।
যাইহোক ব্যাগের চারটে গেব খুঁজে অবশেষে পেনটা পেলাম। ওনার সামনে ধরে বললাম, ম্যাডাম একটা অটোগ্রাফ প্লিজ।
উনি অবাক হয়ে বললেন, কেন? অটোগ্রাফ কেন? আমি তো কোনো সেলিব্রিটি নই।
আমি এক মুখ হেসে বললাম, এমন অদ্ভুত আজব লজিকের গোঁয়ার মানুষের অটোগ্রাফ সংগ্রহ করাটা আমার নেশা বলতে পারেন। আসলে আপনাদের সংখ্যা তো খুবই কম। রোজকার যাতায়াতের পথে এমন পাই কোথায়! আজ যখন পেয়েছি একটা অটোগ্রাফ নেবই।
ভদ্রমহিলা কিছু না বলে জলের বোতল দুটো নিজের কোলে নিয়ে সরে বসলেন। মেয়েটা ফোর্থ সিটে বসে মুচকে মুচকে হেসেই যাচ্ছিল। আমি গম্ভীর। ভদ্রমহিলা জানালার দিকে তাকিয়ে বাইরের লু বওয়া ওয়েদারে মনোনিবেশ করলেন।
©️ এক চিলতে রোদ্দুর-কলমে-অর্পিতা সরকার
সত্য ঘটনা
তো লোকাল ট্রেনের লেডিসে যাচ্ছি। একজন ভদ্রমহিলা উঠলেন। পরনে ব্লু কালারের খাদির শাড়ি। চুলটা একটা হাতখোপা করা। মধ্যবয়সেও তিনি রীতিমত সুন্দরী। ছিপছিপে ফিগার, কপালে চোখে পড়ার মত বড় টিপ।
মহিলা আমার কম্পার্টমেন্টেই উঠলেন। ভাবখানা এমন যেন, আমার পারসোনাল ড্রয়িংরুমে এমন ভিড় কেন? উফ, কে এদের অ্যালাও করল!
ভদ্রমহিলা নিজের বড় ব্যাগটা বাংকে তুলে দিলেন।
একটা ঠান্ডা জলের আরেকটা গ্লুকোজের বোতল পাশের ফাঁকা সিটটাতে রাখলেন। তার পাশের সিটটাতে নিজে বেশ আরাম করে বসলেন। তারপরেই সামনে বসে থাকা আমারই মত কয়েকজন অতি অকিঞ্চিতকর মানুষের দিকে একটা অবজ্ঞার দৃষ্টি ফেলে তাকালেন।
মনে হল, আবার এরা কেন আমার জমিদারিতে! যতসব দখলবাজ লোকজন। লেঠেল ডেকে এদের তুলে দেওয়াই উচিত।
পরের স্টেশনে ট্রেনে আরও বেশ কিছু অর্বাচীন মানুষ উঠলেন। এর মধ্যে একটি শান্ত শান্ত স্বভাবের মেয়ে এসে খুব স্বাভাবিক গলায় বলল, দিদিভাই আপনার জলের বোতল আর ভ্যানিটি ব্যাগটা একটু সরাবেন ? তাহলে ফোর্থ সিটে আমি বসতে পারি।
মহিলা যেন শুনতেই পাননি এমনভাবে অন্যদিকে তাকালেন। এসব মশা, মাছিসম মানুষকে উনি যে দেখতে পান না সেটাও বুঝিয়ে দিলেন।
মেয়েটি আবারও বলল, দিদিভাই প্লিজ বোতলগুলো তুলে নেবেন একটু ?
মহিলা অত্যন্ত বিরক্তির গলায় বললেন, অদ্ভুত মেয়ে তো তুমি! আরে আমি যদি মোটা হতাম তাহলে তুমি এখানে বসতে পারতে? পারতে না। ওই যে ঐ সিটে তিনজন বসে আছে। পারবে ওখানে বসতে? কারণ ওরা তিনজনেই মোটা। আমি না খেয়ে খেয়ে নিজেকে রোগা রেখেছি। নিজের বসার জায়গাটুকুর মধ্যেই বোতল দুটো আর ভ্যানটি ব্যাগ রেখেছি। অন্যের জায়গা নিইনি। তাই সরাতে পারব না।
মেয়েটা কী বলবে বুঝতে পারছিল না। মানে ওই ২+২=২২ উনি বুঝিয়ে দিলেন এভাবে।
ধৈর্য্য আমার কোনো কালেই খুব বেশি নয়। আমার কাছের মানুষরা ভাল করেই জানেন।
মেয়েটা মুখ নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে। পাশে যারা বসে আছেন তারা অন্যের ঝামেলায় কেন ঢুকবেন ভেবে চুপ করে আছেন। আরেকজন ভদ্রমহিলা সামান্য প্রতিবাদ করে বললেন, আপনার জিনিসগুলো আমি ধরছি, ওকে বসতে দিন।
উনি হিটলারি মেজাজে বললেন, এত দরদ হলে নিজের সিটটা ছেড়ে দিন।
আমি তখন ব্যাগ হাতড়ে চলেছি। এই এক রোগ আমার। সময়ের জিনিস সময়ে পাই না।
যাইহোক ব্যাগের চারটে গেব খুঁজে অবশেষে পেনটা পেলাম। ওনার সামনে ধরে বললাম, ম্যাডাম একটা অটোগ্রাফ প্লিজ।
উনি অবাক হয়ে বললেন, কেন? অটোগ্রাফ কেন? আমি তো কোনো সেলিব্রিটি নই।
আমি এক মুখ হেসে বললাম, এমন অদ্ভুত আজব লজিকের গোঁয়ার মানুষের অটোগ্রাফ সংগ্রহ করাটা আমার নেশা বলতে পারেন। আসলে আপনাদের সংখ্যা তো খুবই কম। রোজকার যাতায়াতের পথে এমন পাই কোথায়! আজ যখন পেয়েছি একটা অটোগ্রাফ নেবই।
ভদ্রমহিলা কিছু না বলে জলের বোতল দুটো নিজের কোলে নিয়ে সরে বসলেন। মেয়েটা ফোর্থ সিটে বসে মুচকে মুচকে হেসেই যাচ্ছিল। আমি গম্ভীর। ভদ্রমহিলা জানালার দিকে তাকিয়ে বাইরের লু বওয়া ওয়েদারে মনোনিবেশ করলেন।
©️ এক চিলতে রোদ্দুর-কলমে-অর্পিতা সরকার
সত্য ঘটনা