12-04-2022, 08:06 AM
(This post was last modified: 15-04-2022, 08:40 PM by MNHabib. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
এ বাড়িতে আমি এখন একা। ছগনলাল গেট বন্ধ করে নিজের ঘরে চলে গেলো। আমি নিচের ঘরগুলো বন্ধ করে ওপরে উঠে এলাম। ছোটমার ঘরে ঢুকলাম। সব কাগজ-পত্র আস্তে আস্তে গুছিয়ে নিজের ঘরে নিয়ে এলাম। ছবির খাম থেকে মিত্রার অর্ধ উলঙ্গ ছবিগুলো আলাদা করে সরিয়ে রেখেছিলাম। সেই খামটা বার করলাম। আলমারি খুলে সমস্ত ডকুমেন্টস ঢুকিয়ে রাখলাম। ল্যাপটপটা খাটের ওপর নিয়ে বসলাম।
আমি কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে বসে রইলাম। নানা আজেবাজে চিন্তা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। মোবাইলের ঘরিটার দিকে তাকালাম। সাড়ে চারটে বাজে। তারমানে দাদারা এখন ওই ধাবার কাছাকাছি।
খাম থেকে মিত্রার ছবিগুলো বার করলাম। মনটা খারাপ হয়ে গেলো। কলেজ লাইফে এই মেয়েটা কতো ইনোসেন্ট ছিলো। আর কি অবস্থার পরিপেক্ষিতে এই মেয়েটা এই রকম করতে বাধ্য হয়েছিলো। ছবিগুলো দেখতে দেখতে মাথাটা গরম হয়ে গেলো। মিত্রার চোখ মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে অনিচ্ছা সত্বেও এসব করতে বাধ্য হয়েছিল। মানুষ কতটা নীচ হলে নিজের বউকে এই কাজে বাধ্য করতে পারে।
আমার মিত্রার মার কথাটা মনে পরছে। ভদ্রমহিলা কি একবারেই বুঝতে পারেন নি এই ভদ্রলোককে। না নিজের আত্মীয় বলে সম্পূর্ণ বিশ্বাস করেছিলেন। না মেয়ের প্রতি জেলাস। অনেক মাকে দেখেছি মেয়ের প্রতি জেলাস করতে। অনুভব করেছি। মিত্রা স্বভাবে একটু নরম প্রকৃতির ছিলো। কলেজ লাইফে ওর সঙ্গে মিশে যতটুকু বুঝেছিলাম।
আচ্ছা ওর বাবাই বা কি রকম ছিলো। তিনি কি মেয়ের ভালো বুঝতে পারেন নি। মিত্রা বলেছিলো ওর বাবা ওকে ভীষণ ভালোবাসতেন। তাহলে উনিই বা কেন মেনে নিলেন। তাহলে কি মিত্রার মা সেইরকম ভদ্রমহিলা ছিলেন যে কারণে মিত্রার বাবা তাকে ভয় পেতেন। না মিত্রার বাবার কোনো দুর্বলতা ছিল যাতে বাবার প্রতি ওর মা রিভেঞ্জ নিতে না পেরে তার মেয়ের প্রতি নিলেন।
ছবিগুলো দেখতে দেখতে চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে এলো। মিত্রা বড়মা ছোটমার সামনে আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউ হাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলো তুই বড়মা ছোটমাকে বেরিয়ে যেতে বল। আমি বড়মা ছোটমাকে সব বলিনি। তাহলে এই কথাই কি মিত্রা বড়মা ছোটমার কাছে গোপন করেছিলো। করতেই পারে। আমি হলেও করতাম। মিত্রা কোনো অন্যায় করেনি।
আচ্ছা আমি এইসব নিয়ে এতো ভাবছি কেনো। আমার মনের মধ্যে কি মিত্রার প্রতি কি কোনো সন্দেহ জাগছে। মিত্রা আমাকে বার বার বলেছে তোর কাছে আমি কনফেস করবো। তারপর আবার বলেছে তুই নিজেই সব জানতে পেরে যাবি। আমাকে বলতে হবেনা। নিজের মুখেই টোডির কথা বলেছে। তাহলে এই ব্যক্তিই কি টোডি! আমাকে খোঁজ খবর নিতে হবে। দামিনী কি করে আগে দেখি। তারপর আমাকে খুঁজে বার করতে হবে। ইসলাম ভাইকে জানানো যাবেনা।
নিজেই নিজেকে মোটিভেট করলাম। আগামী এক মাসের মধ্যে এই কাজটা আমাকে শেষ করতে হবে। আমি কিছুটা কাজ এগিয়েছি। এখনো অনেক বাকি আছে। মিত্রার কাছ থেকে আগে জানতে হবে এই ব্যক্তিই সেই টোডি কিনা। যদি হয় তাহলে ওর কপালে অনেক দুঃখ আছে। মল এবং ডাক্তারের থেকেও।
-ছোটবাবু।
নিচ থেকে ছগনলালের গলা পেলাম। ছবিগুলো খামের মধ্যে ঝটপট ঢুকিয়ে আমার আলমারির একবারে নিচের খোপে ঢুকিয়ে দিলাম। বাইরের বারান্দায় এসে মুখ বারালাম। দেখলাম গেটে কবিতা দাঁড়িয়ে আছে। আমি ছগনলালাকে বললাম খুলে দাও। ছগনলাল গিয়ে গেট খুলে দিলো। কবিতা গাড়ি নিয়ে ভেতরে এলো।
একলাই নামলো। হাতে একটা খাম। বুঝতে পারলাম না ভেতরে কেউ আছে কিনা। ছগনলাল গেট বন্ধ করলো। কবিতা আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো।
-ওপরে আয়।
কবিতা ওপরে উঠে এলো।
আমি নিজের ঘরে এসে খাটে বসলাম।
ল্যাপটপটা খুললাম।
কবিতা ঘরে ঢুকলো।
-মাসি এই খামটা তোমায় দিলো।
হাতে নিয়ে বুঝলাম এতে একটা সিডি আছে। ওর দিকে তাকালাম ভাবলেশহীন মুখ।
-কোথায় গেছিলি।
-ডাক্তারের বাড়ি। কি হারামীগো লোকটা।
-কেনো।
-শালার বিএফের ব্যবসা। ওতেই শালা কোটি কোটি টাকা বানিয়েছে।
-কি করে জানলি?
-মাসি ওর বাড়িতে নিয়েগিয়ে রতনকে দিয়ে উদম কেলালো। সব গড় গড় করে বলে দিলো। তারপর মাসি ওকে নিয়ে একটা ঘরে গেলো। অনেকক্ষণ ছিলো।
-ডাক্তার এখন কোথায়?
-ওর বাড়িতে নজরবন্দি।
-মাসি।
-মাসির জায়গায়। ফেরার পথে আমাকে এটা দিয়ে বললো। অনিকে দিয়ে আয়। সব বলা আছে। আমাকে একবার ফোন করতে বলবি।
-তুই চলে যাবি।
-হ্যাঁ। আমাকে অনেক কাজ দিয়েছে। করতে হবে।
-বলা যাবেনা।
-শুনতে হবেনা। তোমার কাজ তুমি করো। এসব নোংরা কাজ তোমার জন্য নয়।
-আমার জন্য তোদের কতো ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে।
-একবারে ওসব কথা বলবেনা। মাসির কানে গেলে বুঝতে পারছো কি বলবে।
-ঠিক আছে, তুই যা।
কবিতা চলে গেলো। ছগনলাল গেট বন্ধ করলো। আমি আবার নিজের জায়গায় এসে বসলাম।
খাম খুলে সিডিটা বার করলাম। ল্যাপটপে চালালাম। সত্যিই মিত্রাকে নিয়ে তোলা ছবি। ভালো করে পুঙ্খানুপুঙ্খ রূপে দেখলাম। ব্লু-ফ্লিম নয়, এককথায় বলা যায় রেইপ। মিত্রাকে সম্পূর্ণ নগ্ন করতে পারেনি। নব্বইভাগ নগ্ন করেছে। ধস্তা ধস্তি হয়েছে। তারপর মিত্রা লোকটার বুকে একটা লাথি মেরেছে। একটা মেয়ে এই মুহূর্তে বাঁচার জন্য যা যা করার দরকার তাই করেছে। খুব চেঁচামিচির শব্দ। খেস্তা খিস্তি। বোঝা যাচ্ছে। ঘরের মধ্যে ফিট করা গোপন ক্যামেরায় ছবি তোলা হয়েছে। অস্পষ্ট। বোঝা যাচ্ছে এটা ডাক্তারের চাল। এ ছবি বাজারে বিক্রি হবে না। এটা তোলা হয়েছে মিত্রাকে নিঃশেষ করে দেবার জন্য।
এই কারণেই কি মিত্রা ডিভোর্সের পরও মাথায় সিঁদুর রাখতো। ডাক্তারের সঙ্গে নিত্য যোগাযোগ রাখতো। যখন বুঝেছে এখন ওর আশ্রয় হারানোর ভয় নেই তখন থেকে সিঁদুর মুছে দিয়েছে। নানা চিন্তা মাথার মধ্যে খেলা করছে। সবচেয়ে কষ্ট হচ্ছে মিত্রার জন্য। কুড়ি মিনিট উনিশ সেকেন্ডের সিডি।
আমি কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে বসে রইলাম। নানা আজেবাজে চিন্তা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। মোবাইলের ঘরিটার দিকে তাকালাম। সাড়ে চারটে বাজে। তারমানে দাদারা এখন ওই ধাবার কাছাকাছি।