Thread Rating:
  • 63 Vote(s) - 2.92 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়)
ঘরের দরজা বন্ধ করে নিচে নামতে গেলাম। দেখলাম ছগনলাল চায়ের কাপ নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠে আসছে।
-তুমি চা করতে গেলে কেনো।
-আরিবাবা। দাদাবাবুর হুকুম।
আমি ছগনলালের হাত থেকে চায়ের কাপটা নিয়ে নিলাম। ছগনলাল নিচে নেমে গেলো। আমি আবার ঘরে এলাম। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে। দামিনী মাসিকে ফোন করলাম।
-হ্যালো। একটা মহিলা কন্ঠস্বরগলা শুনে মনে হচ্ছেনা মাসি।
-মাসি।
-কে বলছেন।
-অনি।
-অনিদা তুমি। আমি লক্ষ্মী
-মাসি কোথায় রে।
-একটু বেরিয়েছে।
-ঠিক আছে আমি পরে ফোন করছি।
-তুমি কেমন আছো অনিদা।
-ভালো আছি।
-কতদিন আসোনি।
-যাবো।
-কবে আসবে।
-একটু কাজগুলো সেরে নিয়ে যাবো।
-আচ্ছা।
 
উঠে গিয়ে টেবিলের ওপর থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা নিয়ে এলাম। একটা সিগারেট ধরালাম। মিত্রার নম্বরে একটা ম্যাসেজ করলাম। একটু দূরে কোথাও পালিয়ে যা কথা বলবো। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে উত্তর এলো। আমি নীপা বাসুর দোকানে যাচ্ছি। অপেক্ষা কর সুযোগ বুঝে ফোন করবো।
ভাবলাম দেবাশীষকে একবার ফোন করি। তারপর কি ভেবে মনে হলো না দেবাশীষকে নয় টিনাকে একটা ফোন করি। করলাম।
-কিগো ভুল করে ফোন করে ফেললে।
আমি চুপ থাকলাম।
-কিগো কথা বলবেনা।
-না টিনা খুব বাজে অবস্থার মধ্যে আছি।
-তোমার গলাটা এরকম ধরা ধরা লাগছে কেনো। টিনার গলায় উৎকন্ঠা।
-ফোনের ভয়েজটা সমস্যা করছে হয়তো।
-তুমি কোথায়।
-বাড়িতে।
-বাড়িতে! এই সময়।
-একটু কাজ করছি।
-ওখান থেকে কবে এলে।
-গতকাল।
-অফিসে যাওনি।
-না।
-বাড়িতে আর কে আছে।
-কেউ নেই। আমি একা।
-সামথিংস রং।
-না। এমনি।
-তুমিকি এখন বাড়িতেই থাকবে।
-হ্যাঁ।
-ঠিক আছে তুমি রাখ। পরে তোমায় ফোন করছি।
-আচ্ছা।
সিগারেটের প্যাকেট থেকে আবার একটা সিগারেট নিয়ে ধরালাম। নেটটা খুললাম। আমার মেইল বক্স খুললাম। দেখলাম তানিয়া কতগুলো মেইল পাঠিয়েছে। আমি খুললাম দেখলাম আরো অনেক ডকুমেন্টস পাঠিয়েছে। পড়ে যেটুকু উদ্ধার করতে পারলাম তাতে বুঝলাম। ডাক্তার ওখানে খুব ঘৃণ্য কাজ করতে গিয়ে তার ডিগ্রীটা খুইয়েছে। তার ডকুমেন্টস তনু পাঠিয়েছে। আমি একে একে সব ডাউনলোড করতে আরম্ভ করলাম। ফোনটা বেজে উঠলো। দেখলাম দামিনী মাসির ফোন।
হ্যালো বলতেই দামিনী মাসি বললো

-দেখেছিস।

-হ্যাঁ।

-কি দেখলি।

-ওরই।

-ঠিক বলছিস।

-হ্যাঁ। বিশ্বাস হচ্ছে না।

-কতো বড় খানকির ছেলে হতে পারে সেটা ভাবছি। সাধে কি অনি কেঁদে ফেলেছিলো। তুই বিশ্বাস কর…….

-কিগো কথা বলছোনা কেনো।

-ও আমার ছেলের বউকে…..

-কেঁদোনা মাসি। ওর ভাগ্যে যা লেখা ছিলো তাই হবে। কেনো তোমাকে সব কথা বলতে পারিনি এবার বুঝতে পারছো।

-ওই লোকটাকে দেখাতে পারবি।

-ছবিতে দেখাতে পারবো। মনে হয় ইসলাম ভাই চেনে। ইসলাম ভাই এই সব ঘটনার সাক্ষী। যেহেতু তখন ও জানতোনা আমার সঙ্গে মিত্রার একটা সম্পর্ক আছে তাই ও সেইভাবে বাধা দেয়নি। তবে ইসলাম ভাই আমার কাছে সব স্বীকার করেছে। ওরা আরো কিছু করতে পারতো ইসলাম ভাই-এর জন্য করতে পারেনি।

-এই মিত্রাই কি সেই মিত্রা যার কথা তুই আমায় বলেছিলি।

-হ্যাঁ। ডাক্তার এখন কোথায়।

-ওর বাড়িতেই রেখেছি। আবিদকে রেখে দিয়েছি।

-ইসলাম ভাই খুব কষ্ট পাচ্ছে।

-জানি। ওকে বার বার বারণ করেছি এই সব কাজ হাতে নিবিনা।

-ইসলাম ভাই-এর কোনো অপরাধ নেই। যদি বলো তুলনায় আমি বেশি অপরাধ করেছি।

-কেনো।

-মিত্রা আমাকে অনেক দিন আগে ওর বাড়িতে যেতে বলেছিলো। আমি অভিমানে ওর বাড়িতে যাই নি।

মাসি চুপ করে রইলো।

-একটা মেয়ের কতটুকু ক্ষমতা তুমি জানো।

-কি করবি চিন্তা করলি।

-ওকে মারবোনা। ও নিজে আত্মহত্যা করবে।

-পারবি।

-অনি মুখে যা বলে তাই করে দেখাবে। এর প্রমাণ তুমি আগে পেয়েছো।

-ওই লোকটা।

-ওটা আমাকে জোগাড় করতে হবে। তবে আমার মন বলছে ইসলাম ভাই এতোক্ষণে কাজ শুরু করে দিয়েছে।

-তুই ঠিক বলছিস।

-ওই যে তখন বললো আমার জন্য একটু রেখো। ওর প্রশ্নের মধ্যেই উত্তর লুকিয়ে আছে।

-তুই এতো ভাবিস।

-ভাবি বলেই কষ্ট পাই মাসি। আমার যে কথা শোনার কেউ নেই।

বুঝতে পারলাম মাসি কাঁদছে।

-আবার কাঁদে। তোমার কাছে আঠারো মাস থাকার অভিজ্ঞতা এখন কাজে লাগাচ্ছি।

চুপচাপ।

-কথা বলছোনা কেনো।

-অনিদা মাসি আমার হাতে ফোনটা দিয়ে চলে গেলো।

-কেরে লক্ষী।

-হ্যাঁ।

-ঠিক আছে এখন রাখ।

ফোনটা কেটে দিলাম। মনটা খারাপ হয়ে গেলো।



কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইলাম। বাইরের আলো কমে এসেছে। ঘরটা সামান্য অন্ধকার। দাদারা আমায় কোনো ফোন করেনি। আমিও ফোন করিনি। ল্যাপটপটা খোলা রয়েছে। ভীষণ চা খেতে ইচ্ছে করছে। নিচে গিয়ে করতে ভালো লাগছেনা। সিগারেটের প্যাকেট থেক একটা সিগারেট বার করে ধরালাম। টান টান হয়ে শুলাম। জানলার ফাঁক দিয়ে কমলা রংয়ের সূর্য আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। এখন এই সূর্যের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায়। অসুবিধে হয়না। মাথার ভেতরটা কেমন শূন্য শূন্য মনে হচ্ছে। হিমাংশুকে সকাল থেকে ফোন করা হয়নি। ছেলেটা কি ভাবছে।

মোবাইলটা টেনে নিয়ে হিমাংশুকে ফোন করলাম।

-কোথায় রে বাড়িতে না অফিসে।

-বাড়িতে।

-কি করছিস।

-শুয়ে আছি।

-একটু ঘুমোবার চেষ্টা কর।

-ঘুম আসছেনা।

-শোন মিত্রার চেকগুলো আজই ব্যাঙ্কে ফেলে দিয়েছি।

-খুব ভালো করেছিস। আগামী সপ্তাহে বোঝা যাবে ওর ব্যাঙ্কের পজিসন।

-মালটা এখন কোথায়।

-দামিনী মাসির হেফাজতে চলে গেছে। ওর বাড়িতে আছে। তবে নজর বন্দি।

-সত্যি কতো মানুষ জীবনে দেখলাম। এরকম হারামী মানুষ দেখিনি।

-তুই কি দেখেছিস। দামিনী তার সারাজীবনে অন্ততঃ লাখ খানেক মানুষকে তার শরীরে আশ্রয় দিয়েছে মাসি পর্যন্ত কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেললো।

-খুব খারাপ লাগছে।

-খারাপ সবার লাগছে। কিন্তু করার কিছু আছে। মেনে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।

-শোন আমি সনাতনবাবুর সঙ্গে আজ কথা বলে এসেছি। আগামী সপ্তাহ থেকে দুটো ছেলে তোর অফিসে গিয়ে বসবে।

-বেশ করেছিস। তুই প্রেসার কনটিনিউ কর। আমি সামলে নেবো।

-আচ্ছা। এখন একটু ঘুমোবার চেষ্টা কর।

-দেখি।
হিমাংশু ফোনটা কেটে দিলো।
[+] 2 users Like MNHabib's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - by MNHabib - 13-04-2022, 11:43 PM



Users browsing this thread: