Thread Rating:
  • 63 Vote(s) - 2.92 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়)
ওই ঘর থেকে হাসাহাসির শব্দ শুনলাম।
বুঝলাম দামিনী মাসি বেশ জমিয়ে নিয়েছে। কবিতা সিঁড়ি দিয়ে উঠে ওই ঘরে চলে গেলো। আবার কিছুক্ষণ পরে বেরিয়ে এলো। রতন গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। ডাক্তারকে কোন গাড়িতে রেখেছে বুঝতে পারলাম না। সব গাড়িরি কাঁচ তোলা। রতন কাকে যেনো ফোন করছে।
-তুই কয়েকদিন কাগজটা টেনে দিতে পারবি।
-তুই নিশ্চিন্তে থাক। এখন কাগজের যা পরিস্থিতি যাকে যা বলবো তাই করবে।
-কেনো।
-তোর সঙ্গে আমার রিলেসন।
-ব্যাপারটা ভারি মজার তাই না।
-মজার মানে। সুনিতের মালগুলোও তোকে ধসে।
-আমি, দাদা, মল্লিকদা নিশ্চিন্তে যেতে পারি।
-যা।
-আর পারছিনা।
-জানি। তুই বলে তবু টানছিস। অন্য কেউ হলে পটকে যেতো।
-আমি বললে ভুল হবে। আমার সঙ্গে আরো অনেকে আছে। দামিনী মাসী তার মধ্যে প্রথম। জানিস এই দামিনী মাসিকে নিয়ে একটা সম্পূর্ণ উপন্যাস লিখে ফেলা যায়।
-তোর মুখ থেকে ভদ্রমহিলার গল্প শুনেছি। আজ চাক্ষুষ দেখলাম।
-কি বুঝলি।
-তোর গল্পশুনে ওনার সম্বন্ধে একটা ছবি চোখের সামনে ছিল আজ সেটা একেবারে মিললোনা।
হাসলাম।
-দাদা নিচে বলছিলেন ওনার সম্বন্ধে। শুনলাম। ডাক্তার সামন্ত খুব ইমপ্রেসড হয়ে গেলেন ওঁর কথা শুনতে শুনতে।
সন্দীপ সিগারেটে সুখ টান দিলো।
-কি জানিস অনি আমরা বাইরে থেকে একটা মানুষকে খুব তাড়াতাড়ি বিচার করে ফেলি। কিন্তু যখন ভেতরে ঢুকি তখন সাগর মহাসাগর। এপার ওপার দেখা যায়না।
-ডাক্তার দাদাকে দেখেছিস?
-দেখলাম। অতোবড়ো একজন ডাক্তার কি সিমপিল।
-এরা কোনোদিন আমাদের সমাজে দাম পেলোনা। আর গান্ডুটাকে দেখ।
সন্দীপ সিগারেটটা আঙুলের ডগা দিয়ে বাগানে ছুঁড়ে ফেলে দিলো।
-যতো ভাববি তত জালে জড়াবি। তার থেকে কাজ করে যাই কপালে যা লেখা আছে তা হবে।
-কপালের নাম গোপাল।
সন্দীপ আমার মুখের দিকে তাকিয়ে হাসলো।
-অনিদা, চা।
পেছন ফিরে দেখলাম কবিতা। চায়ের কাপটা ওর হাত থেকে নিলাম। মুচকি মুচকি হাসছে।
-হাসছিস কেনো।
-তোমার হবে দাঁড়াও।
-কেনো।
-ওখানে সব তোমাকে নিয়ে আলোচনা চলছে। আজ থেকে তোমার সমস্ত ব্যাপার দামিনী মাসি দেখবে।
-সাগির অবতারের খবর কিরে।
-তুমি বললেও ওরা বাঁচবেনা। দামিনী মাসিকে আমার থেকে তুমি ভালো করে চেনো।
-জানি। খুব খারাপ লাগছে।
-তুমি ভালো মানুষ তাই।
হাসলাম।
কবিতা চলে গেলো।
সন্দীপ আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
-কি পরিষ্কার ভাবে বলে দিলো মাইরি।
-ওরা পথের কাঁটাকে কখনো জিইয়ে রাখেনা। বিশ্বাসঘাতককে প্রশ্রয় দেয় না।
-ওর কথার সারমর্ম তাই বলে।
আমার ঘর থেকে সবাই হাসতে হাসতে বেরোলো। আমি ওদের দিকে তাকালাম।
-এদিকে আয়।
দামিনী মাসি ডাকলো।
আমি এগিয়ে গেলাম। দাদারা কথা বলতে বলতে পাশ দিয়ে চলে গেলো। মল্লিকদা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।
-সকাল থেকে কিছু খাসনি।
-কেউই খাইনি।
-স্নান করে খেয়ে নে। দাদারা এখন চলে যাক। তুই কাল সকালে যাবি। আমি সন্ধ্যের সময় একবার আসবো। বাড়িতে থাকবি।
মাথা নীচু করে রইলাম।
-দাদারা তোর সম্বন্ধে সব বলেছে। অনেক অজানা কথা শুনলাম। আমাকে আগে বললে তোকে এতো কষ্ট পেতে হতোনা।
রতন বারান্দায় উঠে এলো।
-'র ব্যাগটা এই ঘরে রেখে যা। দাদারা যাবার সময় নিয়ে যাবে। গলার টিউনটা সঙ্গে সঙ্গে চেঞ্জ হয়ে গেলো।
রতন ছুটে নিচে নেমে গেলো।
-ইসলাম ভাইকে ফোন করেছো।
-হ্যাঁ। তোর বউয়ের সঙ্গে কথা হলো। তুইতো দেখালিনা।
মাথা নীচু করে রইলাম।
-অনেক কাজ এখন যাই। রাতে এসে গল্প করবো।
আমি দামিনী মাসিকে গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিলাম। ওরা চলে গেলো। ডাক্তারকে কোনো গাড়িতেই দেখতে পেলামনা।
ফিরে এলাম। দাদা নিচের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। সন্দীপ গুছিয়ে নিয়ে নেমে এলো।
-স্ক্যানার প্রিন্টার তোর মেসিনের সঙ্গে লাগানো রয়েছে। কাগজপত্র সব ছোটমার ঘরে। পারলে রাতে আসছি।
-আয়।
সন্দীপ চলে গেলো। বুঝলাম দাদার সঙ্গে কথা হয়ে গেছে। আশে পাশে সামন্ত ডাক্তারকে দেখতে পেলামনা।
-যা তাড়াতাড়ি স্নান সেরে নে একসঙ্গে খাবো। অনেকটা পথ যেতে হবে।
আমি সিঁড়ি দিয়ে ওপরে চলে এলাম।
সবাই একসঙ্গে খেতে বসলাম। দাদা বেশ হাসি মস্করা করলো আমার সঙ্গে। আমি আজ প্রাণখুলে ওদের এই আড্ডায় যোগ দিতে পারলামনা। মাঝে মাঝে দামিনী মাসির কথা উঠে আসছে।
-তুইতো ঢোকার সময় দেখিসনি। যেনো রাজরাণী। গট গট করে ওপরে উঠে এলো। রতনকে দিলো এক ধমক। রতন দেখেই নেতিয়ে গেলো। ওনার ধমক খেয়ে যেনো অজ্ঞান হয়ে যায়।
-অনিকে খুব ভালবাসে। নিরঞ্জনদা বললো।
-ভালবাসে মানে। গাঢ়ল। শুনলিনা বলে কিনা আমার ছেলের গায়ে হাত পরলে বেঁচে থাকা মুস্কিল।
-ইসলাম মনে হয় ওনাকে খুব ভয় পায়। মল্লিকদা বললেন।
-ফোন করলো যখন ইসলাম কিরকম ত ত করছিলো। কি দাপট বলতো।
আমি চুপচাপ একটা কথারও উত্তর দিচ্ছিনা। চুপচাপ খেয়ে উঠে চলে গেলাম। বুকের মধ্যে কে যেনো পাথর চাপা দিয়ে রেখেছে। মনটা ভীষণ খারাপ লাগছে। নিজের থেকেও বেশি খারাপ লাগছে মিত্রার জন্য। নিশ্চই রতন ওদের সব শুনিয়েছে। কি ভাবলো। ওর অনেক অজানা কথা ওরা আজ জানতে পেরে গেছে। ভাবছে হয়তো বুবুন কেনো এসব কথা বলতে গেলো। নিজের মাথার তখন ঠিক ছিলোনা। না বললেই পারতাম। সেই সময় মনে হচ্ছিলো যেনো ওকে ছিঁড়ে খেয়ে নিই।
-কিরে ওখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি করছিস।
পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখলাম দাদা গেটের মুখে দাঁড়িয়ে আছে। কাপড় জামা পরে রেডি।
-এমনি দাঁড়িয়ে আছি।
-আমাদের সঙ্গে যাবি।
-না। তোমরা যাও।
-কেনো চলনা। সন্দীপ ঠিক গুছিয়ে নেবে বলেছে।
-আমি কাল সকালে যাবো। তোমরা এখন বেরোচ্ছ।
-হ্যাঁ।
আমি এগিয়ে এলাম।
-মন খারাপ করছিস কেনো।
আমি দাদার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলাম।
-গাড়ি এসে গেছে?
-হ্যাঁ। নিরঞ্জনের গাড়িতে যাচ্ছি।
পায়ে পায়ে দাদার সঙ্গে নিচে নেমে এলাম। দেখলাম সামন্ত ডাক্তার সঙ্গে আছে।
আমাকে দেখে একগাল হেসে বললো। তোমার গ্রামটা একটু ঘুরে আসি। এডিটার বললো না বলতে পারলামনা।
মুখ নীচু করে হাসলাম।
মল্লিকদা পিঠ চাপরে বললো তোকে শুকনো শুকনো দেখলে মনটা ভালো লাগে না।
-না ঠিক হয়ে গেছি।
-কাল কখন যাবি।
-সকালে বেরোবো।
-অফিসে যাবি নাকি।
-না। সন্দীপকে বলেছি সামলে নে। প্রয়োজন হলে ফোন করিস।
-আচ্ছা।
আমি সকলকে প্রণাম করলাম।
নিরঞ্জনদা বললো একেবারে রেজিস্ট্রি অফিসে যাবি না তারপরে যাবি।
-বেরোবার সময় ফোন করবো।
-আচ্ছা।
-ইসলাম ভাই-এর ব্যাগটা নিয়েছো।
-হ্যাঁ।
-ব্যাঙ্কের কাজটা একেবারে সেরে নেবে।
-ঠিক আছে।
ওরা বেরিয়ে গেলো।
[+] 6 users Like MNHabib's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - by MNHabib - 09-04-2022, 07:46 AM



Users browsing this thread: