05-04-2022, 08:01 PM
পর্ব-তিন
ওর মুখ দেখে কেউ বলতে পারবে না যে তথা এত রগচটা মেয়ে। কথায়
কথায় রেগে যাওয়াটা ওর হিমোগ্লোবিনের সাথে মিশে গেছে। কিন্তু সেটার খুব কম প্রভাবই নিলয়ের উপর পরে। ওদের মাঝে দরকার ব্যতীত তেমন কোন কথাই হয় না৷ এক সকালে নাস্তার টেবিলে আর রাতে খাবার সময়। তাছাড়া দুজন দুটি ভিন্ন জগতের বাসিন্দা।
আর আট-দশটা বাঙালীর মতই উচ্চতা তথার। ঐ কত হবে ৫ ফুট কিংবা ১/২ ইঞ্চি বেশি। গায়ের রঙে দুধে আলতা ফর্সা সেটা বলার উপায় নেই, তবে এ ফর্সা মানান সই। চোখ দুটি বড় বড়, হালকা লম্বা নাক। তবে রেগে গেলে যখন নাকের পাটা দুটো ফুলে উঠে তখন বেশ লাগে দেখতে। সুন্দর ঠোঁটে হালকা গোলাপি আভার সাখে এমন শেইপ যে আলদা করে লিপ লাইনার না ব্যবহার করলেও চলে। লম্বা ঘন চুল কোমড় অব্দি। আজকাল অনেকেই আবার চুল লম্বা রাখতে শুরু করেছে, হালের ফ্যাশন বলে কথা। স্বাস্থ্য মাঝারী গড়নের। রোগাও না আবার মোটাও না। বুক আর নিতম্বের কম্বিনেশন চোখ জোড়ানো। মাঝারী আকারের স্তন দুটো ভারী নয়, কোমড়ের কাছটা সরু হয়ে নেমে গেছে।
সিড়ি দিয়ে আসার সময় যে হালকা হাসি ভাব টা ছিল ঘরের সামনে পৌঁছে নিলয় কে দাড়িয়ে থাকতে দেখে সেটাও নিভে গেল। দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো তালা এখনো ঝুলছে। নিচু সুরে বললো
-আজ একটা নোট নিতে দেরি হয়ে গেল। রাস্তায় জ্যামও ছিল। তা এতক্ষণ এখানে না দাড়িয়ে থেকে দরজা টা কি খোলা যেত না? চাবি তো দুজনের কাছেই আছে। নাকি এটা আমাকেই করতে হবে।
শেষের দিকে গলার স্বরটা হঠাৎ উঁচু হয়ে গেল। কোন তর্ক চায় না নিলয়। কোন কথা না বলে এগিয়ে যায় দরজার তালা খুলতে। তালা খোলার পর যে যার রুমে চলে যায়। ছোট্ট দুটি রুম, আসলে দুটো মিলে একটা রুম হলে মানান সই হতো। ছাদঘরে এর চেয়ে বড় আশা করা বোকামি। দুবছর ধরে ওরা এখানেই আছে। সকালের নাস্তাটা নিলয় রান্না করে। দুপুরে রান্নার জন্য এক খালা আসে, সে দুবেলার রান্না একসাথেই তৈরি করে রেখে যায়। রাতে নিলয় ভাতটা রান্না করে নেয় আর খাবার গুলোও গরম করে নেয়। নিলয় চায় না তথার পড়াশোনায় কোন ব্যাঘাত ঘটুক, আর তথা নিজ থেকেও কখনো রান্না ঘরের দিকে পা মাড়ায় নি। তাই ঐ কাজটা নিলয় নিজ থেকেই করে নেয়।
ফ্রেশ হয়ে চুলায় চা বসায় নিলয়। চোখ বন্ধ করে কিছু একটা চিন্তা করছে ও। সেই বাচ্চার মুখটা ভেসে উঠে সামনে। ওদের হাসিটা নির্ভেজাল, পবিত্র। এর পিছনে কোন স্বার্থ বা অভিসন্ধি লুকিয়ে নেই। বাচ্চাটার মুখের সাথে আরেকজনের মুখটা খুব করে মিলে যাচ্ছে। সেই হাসিটাও ছিল নির্ভেজাল, পবিত্র। আর ভাবতে চায় না ও। চোখ খুলে দেখে চা ফুটে উপচে পড়তে চলেছিল এখন। দু'কাপ চা নিয়ে ও তথার রুমে দিকে এগিয়ে যায়। দরজায় নক করতে ভিতর থেকে আওয়াজ আসে ভেতরে যাবার। এক কাপ চা তথা হাতে দিয়ে দাড়িয়ে থাকে নিলয়।
-পড়াশোনা কেমন চলছে?
-ভাল।
-এ মাসের কলেজ ফি, টিউশন ফি গুলো ক্লিয়ার হয়েছে।
-হুম।
-স্যারের সঞ্চয় পত্রের মাসিক ইন্টারেস্ট টা তুলেছিলে।
-গতকালই তুলে নিয়েছিলাম। আমার কিছু কেনাকাটা ছিল।
-তোমার হাতে কি টাকা আছে? যদি প্রয়োজন হয় আমাকে জানাবে।
-না না। যেটা আছে চলবে। তুমি যেটা করছো সেটাই অনেক। আমার আর লাগবে না। বাকিটা ম্যানেজ করে নেব।
-এরপরও,(নিলয় কিছু বলার আগেই)
-(বেজার মুখশ্রী ভঙ্গিতে) ঠিক আছে ঠিক আছে সে না হয় দরকার হলে চেয়ে নেব। আর কিছু বলার আছে??
নিলয় বুঝতে পারে ওর উপস্থিতি তথা পছন্দ করছে না। ও ঘর থেকে বেরিয়ে খোলা ছাদের দিকে এগিয়ে যায়। অন্ধকার আকাশটার দিকে তাকিয়ে চায়ের কাপে চুমুক দেয়। তথাকে ওর কাছে নিয়ে আসার পর থেকে ওর কলেজ, কলেজের ফি, টিউশন ফি, কোচিং ফি এসব নিলয় নিজের বেতনের টাকা থেকে খরচ করে।
স্যারের মৃত্যুর পর পেনশনের ৫ লাখ টাকায় ৫ বছরের সঞ্চয় পত্র কিনে রাখে। সেটা থেকে মাসে মাসে সাড়ে চার হাজারের কিছু বেশি টাকা আসে। সেই টাকা নিজের খরচে ব্যবহার করে তথা। বেশিরভাগটাই খরচ হয় জামাকাপড়ের পেছনে। সময়ের সাথে তাল মেলাতে নিত্যনতুন ড্রেস কিনে চলে। আর এছাড়াও মেয়েদের আরও কত খরচ। ওসব নিয়ে মাথা ঘামায় না নিলয়।
ঝিরিঝিরি বাতাস বইছে। শরীর জুড়িয়ে যায় নিলয়ের, শান্তির আবেশে চোখ বন্ধ হয় আসে।
কানে বেজে উঠে সেই ডাক টা আবার
-নীইইইইইইলু।
ওর মুখ দেখে কেউ বলতে পারবে না যে তথা এত রগচটা মেয়ে। কথায়
কথায় রেগে যাওয়াটা ওর হিমোগ্লোবিনের সাথে মিশে গেছে। কিন্তু সেটার খুব কম প্রভাবই নিলয়ের উপর পরে। ওদের মাঝে দরকার ব্যতীত তেমন কোন কথাই হয় না৷ এক সকালে নাস্তার টেবিলে আর রাতে খাবার সময়। তাছাড়া দুজন দুটি ভিন্ন জগতের বাসিন্দা।
আর আট-দশটা বাঙালীর মতই উচ্চতা তথার। ঐ কত হবে ৫ ফুট কিংবা ১/২ ইঞ্চি বেশি। গায়ের রঙে দুধে আলতা ফর্সা সেটা বলার উপায় নেই, তবে এ ফর্সা মানান সই। চোখ দুটি বড় বড়, হালকা লম্বা নাক। তবে রেগে গেলে যখন নাকের পাটা দুটো ফুলে উঠে তখন বেশ লাগে দেখতে। সুন্দর ঠোঁটে হালকা গোলাপি আভার সাখে এমন শেইপ যে আলদা করে লিপ লাইনার না ব্যবহার করলেও চলে। লম্বা ঘন চুল কোমড় অব্দি। আজকাল অনেকেই আবার চুল লম্বা রাখতে শুরু করেছে, হালের ফ্যাশন বলে কথা। স্বাস্থ্য মাঝারী গড়নের। রোগাও না আবার মোটাও না। বুক আর নিতম্বের কম্বিনেশন চোখ জোড়ানো। মাঝারী আকারের স্তন দুটো ভারী নয়, কোমড়ের কাছটা সরু হয়ে নেমে গেছে।
সিড়ি দিয়ে আসার সময় যে হালকা হাসি ভাব টা ছিল ঘরের সামনে পৌঁছে নিলয় কে দাড়িয়ে থাকতে দেখে সেটাও নিভে গেল। দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো তালা এখনো ঝুলছে। নিচু সুরে বললো
-আজ একটা নোট নিতে দেরি হয়ে গেল। রাস্তায় জ্যামও ছিল। তা এতক্ষণ এখানে না দাড়িয়ে থেকে দরজা টা কি খোলা যেত না? চাবি তো দুজনের কাছেই আছে। নাকি এটা আমাকেই করতে হবে।
শেষের দিকে গলার স্বরটা হঠাৎ উঁচু হয়ে গেল। কোন তর্ক চায় না নিলয়। কোন কথা না বলে এগিয়ে যায় দরজার তালা খুলতে। তালা খোলার পর যে যার রুমে চলে যায়। ছোট্ট দুটি রুম, আসলে দুটো মিলে একটা রুম হলে মানান সই হতো। ছাদঘরে এর চেয়ে বড় আশা করা বোকামি। দুবছর ধরে ওরা এখানেই আছে। সকালের নাস্তাটা নিলয় রান্না করে। দুপুরে রান্নার জন্য এক খালা আসে, সে দুবেলার রান্না একসাথেই তৈরি করে রেখে যায়। রাতে নিলয় ভাতটা রান্না করে নেয় আর খাবার গুলোও গরম করে নেয়। নিলয় চায় না তথার পড়াশোনায় কোন ব্যাঘাত ঘটুক, আর তথা নিজ থেকেও কখনো রান্না ঘরের দিকে পা মাড়ায় নি। তাই ঐ কাজটা নিলয় নিজ থেকেই করে নেয়।
ফ্রেশ হয়ে চুলায় চা বসায় নিলয়। চোখ বন্ধ করে কিছু একটা চিন্তা করছে ও। সেই বাচ্চার মুখটা ভেসে উঠে সামনে। ওদের হাসিটা নির্ভেজাল, পবিত্র। এর পিছনে কোন স্বার্থ বা অভিসন্ধি লুকিয়ে নেই। বাচ্চাটার মুখের সাথে আরেকজনের মুখটা খুব করে মিলে যাচ্ছে। সেই হাসিটাও ছিল নির্ভেজাল, পবিত্র। আর ভাবতে চায় না ও। চোখ খুলে দেখে চা ফুটে উপচে পড়তে চলেছিল এখন। দু'কাপ চা নিয়ে ও তথার রুমে দিকে এগিয়ে যায়। দরজায় নক করতে ভিতর থেকে আওয়াজ আসে ভেতরে যাবার। এক কাপ চা তথা হাতে দিয়ে দাড়িয়ে থাকে নিলয়।
-পড়াশোনা কেমন চলছে?
-ভাল।
-এ মাসের কলেজ ফি, টিউশন ফি গুলো ক্লিয়ার হয়েছে।
-হুম।
-স্যারের সঞ্চয় পত্রের মাসিক ইন্টারেস্ট টা তুলেছিলে।
-গতকালই তুলে নিয়েছিলাম। আমার কিছু কেনাকাটা ছিল।
-তোমার হাতে কি টাকা আছে? যদি প্রয়োজন হয় আমাকে জানাবে।
-না না। যেটা আছে চলবে। তুমি যেটা করছো সেটাই অনেক। আমার আর লাগবে না। বাকিটা ম্যানেজ করে নেব।
-এরপরও,(নিলয় কিছু বলার আগেই)
-(বেজার মুখশ্রী ভঙ্গিতে) ঠিক আছে ঠিক আছে সে না হয় দরকার হলে চেয়ে নেব। আর কিছু বলার আছে??
নিলয় বুঝতে পারে ওর উপস্থিতি তথা পছন্দ করছে না। ও ঘর থেকে বেরিয়ে খোলা ছাদের দিকে এগিয়ে যায়। অন্ধকার আকাশটার দিকে তাকিয়ে চায়ের কাপে চুমুক দেয়। তথাকে ওর কাছে নিয়ে আসার পর থেকে ওর কলেজ, কলেজের ফি, টিউশন ফি, কোচিং ফি এসব নিলয় নিজের বেতনের টাকা থেকে খরচ করে।
স্যারের মৃত্যুর পর পেনশনের ৫ লাখ টাকায় ৫ বছরের সঞ্চয় পত্র কিনে রাখে। সেটা থেকে মাসে মাসে সাড়ে চার হাজারের কিছু বেশি টাকা আসে। সেই টাকা নিজের খরচে ব্যবহার করে তথা। বেশিরভাগটাই খরচ হয় জামাকাপড়ের পেছনে। সময়ের সাথে তাল মেলাতে নিত্যনতুন ড্রেস কিনে চলে। আর এছাড়াও মেয়েদের আরও কত খরচ। ওসব নিয়ে মাথা ঘামায় না নিলয়।
ঝিরিঝিরি বাতাস বইছে। শরীর জুড়িয়ে যায় নিলয়ের, শান্তির আবেশে চোখ বন্ধ হয় আসে।
কানে বেজে উঠে সেই ডাক টা আবার
-নীইইইইইইলু।
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।