02-04-2022, 07:15 PM
এক বন্ধুর কাছ থেকে পাওয়া ভালো লাগল পড়ে ।
আপনাদের সাথে শেয়ার করছি
*********
*চলার পথে*
সুদীপ মজুমদার
_(সুদীপ ক্যালিফোর্নিয়াতে থাকেন, Oracle-এ বহুদিন কাজ করছেন)_
জীবনে চলার পথে তো কত মণিমুক্তোর সঙ্গে পরিচয় হয়, আজ একটা অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। কিছুদিন আগে বন্ধু দীপেশ মানে প্রফেসর দীপেশ চক্রবর্তী এসেছিলেন শিকাগো থেকে Berkeley-র Haas ম্যানেজমেন্ট কলেজে ওয়ার্কশপ-এর জন্য। ব্যস্ত মানুষ, ওনার সঙ্গে সময় কাটানো একটা খুব সুন্দর অভিজ্ঞতা আমার জন্য। বললাম, আপনাকে এয়ারপোর্ট থেকে বার্কলে নিয়ে যাবো আর পরের দিন ভোরে Haas কলেজ এর গেস্ট হাউস থেকে নিয়ে এয়ারপোর্টে দিয়ে আসব। দীপেশ খুব ইন্টারেস্টিং (আমার দীপেশদা বলা উচিত কিন্তু বলি না, সেখানেও প্রচুর লজিক আছে)। উনি ফিজিক্সের খুব ভালো ছাত্র। সেখান থেকে IIM কলকাতা। ঐখানে প্রফেসর বরুন দে-র সঙ্গ পেয়ে একদম সুইচ -ইতিহাসে ! এখন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ঐতিহাসিক। জ্ঞানের অজস্র পরিবেশে ঘোরাফেরা। আনন্দ পুরস্কার পেয়েছেন। তাই সেই সব খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে জিজ্ঞেস করছিলাম। নিজের কথা কিছুতেই বলতে চান না - "বিদ্যা দদাতি বিনয়ম।" খুব সুন্দর কাটলো সময়টা।
পরের দিন ভোর ৫:৩০-এ Haas কলেজ এর গেস্ট হাউসে পৌঁছে গেছি। দীপেশ বলল, আমার এক বন্ধুও যাবে airport-এ আমাদের সঙ্গে, প্রফেসর ব্রায়ান হ্যাচার। ব্রায়ান আমার পাশে বসলেন আর পেছনের সিটে দীপেশ। কথায় কথায় জিজ্ঞেস করলাম কী সাবজেক্ট পড়ান ? বললেন, আগে কেমিস্ট্রি পড়াতাম এখন থিওলজি পড়াই Boston-এর Tuft University-তে। ওরে ব্বাস, ভাবছি transitionটা কি রকম সাংঘাতিক! বুঝলাম অন্য স্তরের মানুষ - দীপেশ-এর মতোই। জানতাম না 'পিকচার আভি বাকি হ্যায়।' বললেন, "তুমি মারাঠি না বাঙালি?" বললাম বাঙালি। কষ্ট করে মুখ বন্ধ করে রাখলাম। যারা আমাকে চেনে তাদের মতে সেটা খুব কঠিন। বিশেষ করে ভাবলাম বন্ধু চয়নে দীপেশ-এর খ্যাতি যেন অক্ষত থাকে। কিছুক্ষণ পর পরিষ্কার বাংলাতে শুনি "বীরসিংহের সিংহ শিশু বিদ্যাসাগর বীর।" চমকে উঠে দেখলাম প্রফেসর হ্যাচার আবৃত্তি করছেন। বিরাট চমকানোর পালা ; আমতা আমতা করছি। এতো সুন্দর বাংলা - তার উপর বিদ্যাসাগর ! গান্ধী হলেও এদেশে তবু বোঝা যেত। বললেন Yale-এ থেকে যখন কেমিস্ট্রি পড়ছি তখন সিনথেটিক কেমিস্ট্রিতে প্রফেসর পি সি রায়-এর পেপার পড়তে হয়েছে (উনি বলছেন আর আমি 'প্রসেস' করছিলাম আচার্য্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় -ক'জন শিক্ষিত ভারতীয় আজকাল জানে এনাদের নাম বা কাজ?)। প্রফেসর হ্যাচার বলে চলেছেন - "তখন একটা অদ্ভুত ভাব এলো! Colonial জায়গাতে এই রকম অসাধারণ অরিজিনাল কাজ কিভাবে সম্ভব হল? তারপর গেছি Harvard-এ মাস্টার্স করতে। সেখানে সোশ্যাল সায়েন্স-এর কোর্সে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সমাজ চেতনা নিয়ে পড়তে হলো। দেখলাম এরা সবাই বাঙালী। ভাবলাম জায়গাটা দেখে আসি। কী কারণে এই ধরণের ব্রাইট মাইন্ড-রা colonized ছিলেন! তাই মাস্টার্স-এর সময় Overseas study নিয়ে চলে গেলাম শান্তিনিকেতনে বাংলা শিখবো বলে। যাতে এই বাংলা আর বাঙালিকে ঠিকঠাক বুঝতে পারি কি কারণে colonialism গেঁড়ে বসেছে। আমার একটা সুবিধে আছে। ৩-৪ মাস চেষ্টা করলে একটা নতুন ভাষা শিখে যেতে পারি। ওই শান্তিনিকেতনেই বিদ্যাসাগর মশাই-এর নাম প্রথম শুনি। ভাবি, খুব ইন্টারেষ্টিং চরিত্র তো। ওনাকে তো তাহলে স্টাডি করতে হচ্ছে। তারপর রিসার্চ করি। এক বছরের জায়গায় তিন বছর থেকে গেলাম বিদ্যাসাগরকে কিছুটা বুঝতে। পুরোটা বোঝা এক জন্মে সম্ভব নয়!"
আমি বাকরুদ্ধ বললেও কম বলা হয়। Accident বাঁচিয়ে slowest স্পীডে গাড়ি চালাচ্ছি। যতটা সময় পাওয়া যায়, আমার পক্ষে ততই সুখকর। আমার হাঁ মুখটা বন্ধ হবার পর বললেন, "বিদ্যাসাগর-এর ওপর ৫ খন্ডের বই বেরিয়েছে হার্ভার্ড প্রেস থেকে।" বললাম "বিদ্যাসাগর-এর জেলার ছেলে বলে মনে মনে একটা সূক্ষ্ম গর্ব আছে। আপনার কথা শোনার পর, আমি আর কথা বলার মতো অবস্থাতে নেই।" পরিষ্কার বাংলায় বললেন, "আমার কেমিস্ট্রি থেকে থিওলজিতে সুইচ-এর কারণ এই বিদ্যাসাগর। ওনার ব্যাগ থেকে বের করলেন বিদ্যাসাগর এর head shot এর সেই বিখ্যাত ছবি। এয়ারপোর্ট এসে গেলো।
দীপেশ বললো, “মন ভরল না তো?” বললাম, "আপনারা সরস্বতীর বরপুত্র। আমাদের এই যে সঙ্গ প্রসাদ দিচ্ছেন তাই আমার কাছে অনেক!" তাকিয়ে রইলাম প্রফেসর Hatcher এর চলে যাওয়া - “স্বদেশে পূজ্যতে রাজা,
বিদ্বান সর্বত্র পূজ্যতে।“ আর ভাবছিলাম পাঁচ ফুট চার ইঞ্চির ওই নিঃসঙ্গ, যিনি নিজের চরিত্র ও লক্ষ্য নিজেই গড়তেন, ওই মানুষটির কথা।
বিদ্যাসাগর-এর দুশো বছরের জন্মদিনে দীপেশ, প্রফেসর Hatcher-এর কথা মনে পড়ে গেলো, তাই ভাবলাম চটপট লিখে ফেলি।
Ohh, yes the book referred to is titled: *Vidyasagar : Life and afterlife of an Eminent Indian*
আপনাদের সাথে শেয়ার করছি
*********
*চলার পথে*
সুদীপ মজুমদার
_(সুদীপ ক্যালিফোর্নিয়াতে থাকেন, Oracle-এ বহুদিন কাজ করছেন)_
জীবনে চলার পথে তো কত মণিমুক্তোর সঙ্গে পরিচয় হয়, আজ একটা অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। কিছুদিন আগে বন্ধু দীপেশ মানে প্রফেসর দীপেশ চক্রবর্তী এসেছিলেন শিকাগো থেকে Berkeley-র Haas ম্যানেজমেন্ট কলেজে ওয়ার্কশপ-এর জন্য। ব্যস্ত মানুষ, ওনার সঙ্গে সময় কাটানো একটা খুব সুন্দর অভিজ্ঞতা আমার জন্য। বললাম, আপনাকে এয়ারপোর্ট থেকে বার্কলে নিয়ে যাবো আর পরের দিন ভোরে Haas কলেজ এর গেস্ট হাউস থেকে নিয়ে এয়ারপোর্টে দিয়ে আসব। দীপেশ খুব ইন্টারেস্টিং (আমার দীপেশদা বলা উচিত কিন্তু বলি না, সেখানেও প্রচুর লজিক আছে)। উনি ফিজিক্সের খুব ভালো ছাত্র। সেখান থেকে IIM কলকাতা। ঐখানে প্রফেসর বরুন দে-র সঙ্গ পেয়ে একদম সুইচ -ইতিহাসে ! এখন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ঐতিহাসিক। জ্ঞানের অজস্র পরিবেশে ঘোরাফেরা। আনন্দ পুরস্কার পেয়েছেন। তাই সেই সব খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে জিজ্ঞেস করছিলাম। নিজের কথা কিছুতেই বলতে চান না - "বিদ্যা দদাতি বিনয়ম।" খুব সুন্দর কাটলো সময়টা।
পরের দিন ভোর ৫:৩০-এ Haas কলেজ এর গেস্ট হাউসে পৌঁছে গেছি। দীপেশ বলল, আমার এক বন্ধুও যাবে airport-এ আমাদের সঙ্গে, প্রফেসর ব্রায়ান হ্যাচার। ব্রায়ান আমার পাশে বসলেন আর পেছনের সিটে দীপেশ। কথায় কথায় জিজ্ঞেস করলাম কী সাবজেক্ট পড়ান ? বললেন, আগে কেমিস্ট্রি পড়াতাম এখন থিওলজি পড়াই Boston-এর Tuft University-তে। ওরে ব্বাস, ভাবছি transitionটা কি রকম সাংঘাতিক! বুঝলাম অন্য স্তরের মানুষ - দীপেশ-এর মতোই। জানতাম না 'পিকচার আভি বাকি হ্যায়।' বললেন, "তুমি মারাঠি না বাঙালি?" বললাম বাঙালি। কষ্ট করে মুখ বন্ধ করে রাখলাম। যারা আমাকে চেনে তাদের মতে সেটা খুব কঠিন। বিশেষ করে ভাবলাম বন্ধু চয়নে দীপেশ-এর খ্যাতি যেন অক্ষত থাকে। কিছুক্ষণ পর পরিষ্কার বাংলাতে শুনি "বীরসিংহের সিংহ শিশু বিদ্যাসাগর বীর।" চমকে উঠে দেখলাম প্রফেসর হ্যাচার আবৃত্তি করছেন। বিরাট চমকানোর পালা ; আমতা আমতা করছি। এতো সুন্দর বাংলা - তার উপর বিদ্যাসাগর ! গান্ধী হলেও এদেশে তবু বোঝা যেত। বললেন Yale-এ থেকে যখন কেমিস্ট্রি পড়ছি তখন সিনথেটিক কেমিস্ট্রিতে প্রফেসর পি সি রায়-এর পেপার পড়তে হয়েছে (উনি বলছেন আর আমি 'প্রসেস' করছিলাম আচার্য্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় -ক'জন শিক্ষিত ভারতীয় আজকাল জানে এনাদের নাম বা কাজ?)। প্রফেসর হ্যাচার বলে চলেছেন - "তখন একটা অদ্ভুত ভাব এলো! Colonial জায়গাতে এই রকম অসাধারণ অরিজিনাল কাজ কিভাবে সম্ভব হল? তারপর গেছি Harvard-এ মাস্টার্স করতে। সেখানে সোশ্যাল সায়েন্স-এর কোর্সে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সমাজ চেতনা নিয়ে পড়তে হলো। দেখলাম এরা সবাই বাঙালী। ভাবলাম জায়গাটা দেখে আসি। কী কারণে এই ধরণের ব্রাইট মাইন্ড-রা colonized ছিলেন! তাই মাস্টার্স-এর সময় Overseas study নিয়ে চলে গেলাম শান্তিনিকেতনে বাংলা শিখবো বলে। যাতে এই বাংলা আর বাঙালিকে ঠিকঠাক বুঝতে পারি কি কারণে colonialism গেঁড়ে বসেছে। আমার একটা সুবিধে আছে। ৩-৪ মাস চেষ্টা করলে একটা নতুন ভাষা শিখে যেতে পারি। ওই শান্তিনিকেতনেই বিদ্যাসাগর মশাই-এর নাম প্রথম শুনি। ভাবি, খুব ইন্টারেষ্টিং চরিত্র তো। ওনাকে তো তাহলে স্টাডি করতে হচ্ছে। তারপর রিসার্চ করি। এক বছরের জায়গায় তিন বছর থেকে গেলাম বিদ্যাসাগরকে কিছুটা বুঝতে। পুরোটা বোঝা এক জন্মে সম্ভব নয়!"
আমি বাকরুদ্ধ বললেও কম বলা হয়। Accident বাঁচিয়ে slowest স্পীডে গাড়ি চালাচ্ছি। যতটা সময় পাওয়া যায়, আমার পক্ষে ততই সুখকর। আমার হাঁ মুখটা বন্ধ হবার পর বললেন, "বিদ্যাসাগর-এর ওপর ৫ খন্ডের বই বেরিয়েছে হার্ভার্ড প্রেস থেকে।" বললাম "বিদ্যাসাগর-এর জেলার ছেলে বলে মনে মনে একটা সূক্ষ্ম গর্ব আছে। আপনার কথা শোনার পর, আমি আর কথা বলার মতো অবস্থাতে নেই।" পরিষ্কার বাংলায় বললেন, "আমার কেমিস্ট্রি থেকে থিওলজিতে সুইচ-এর কারণ এই বিদ্যাসাগর। ওনার ব্যাগ থেকে বের করলেন বিদ্যাসাগর এর head shot এর সেই বিখ্যাত ছবি। এয়ারপোর্ট এসে গেলো।
দীপেশ বললো, “মন ভরল না তো?” বললাম, "আপনারা সরস্বতীর বরপুত্র। আমাদের এই যে সঙ্গ প্রসাদ দিচ্ছেন তাই আমার কাছে অনেক!" তাকিয়ে রইলাম প্রফেসর Hatcher এর চলে যাওয়া - “স্বদেশে পূজ্যতে রাজা,
বিদ্বান সর্বত্র পূজ্যতে।“ আর ভাবছিলাম পাঁচ ফুট চার ইঞ্চির ওই নিঃসঙ্গ, যিনি নিজের চরিত্র ও লক্ষ্য নিজেই গড়তেন, ওই মানুষটির কথা।
বিদ্যাসাগর-এর দুশো বছরের জন্মদিনে দীপেশ, প্রফেসর Hatcher-এর কথা মনে পড়ে গেলো, তাই ভাবলাম চটপট লিখে ফেলি।
Ohh, yes the book referred to is titled: *Vidyasagar : Life and afterlife of an Eminent Indian*