Thread Rating:
  • 114 Vote(s) - 2.66 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কিছু মনের সত্যি কথা
বাতানুকূল যন্ত্র

---------------------------------
- শোন , আর তো পারা যাচ্ছে না এবার একটা এসি না কিনলে গরমে এই ঘুপচি ফ্ল্যাটে আমি থাকব না বলে দিলাম     
গিন্নী এক মগ চা মাথার কাছের টেবিলে রেখে প্রথম অস্ত্র নিক্ষেপ করল সারা রাত গরমে হাঁসফাঁস করে ভোরের দিকে একটু ঘুমের আমেজ আসে গিন্নীর কথায় আমেজের বারোটা বেজে গেল এখুনি নিজেকে বাঁচাতে হবে বললাম
- এসি পোষার খরচ জানো ?
- তোমার মত হাড়কিপটের কাছে খরচ টা বেশি বলেই মনে হবে কিন্তু আমরা আর থাকতে পারছি না পাড়ায় সব বাড়িতে এসি আছে কেবল তুমি ব্যতিক্রম যত খরচই হোক এবার এসি লাগাতেই হবে বলে দিলাম  
আমার উত্তরের অপেক্ষা না করে দুম দুম করে পা ফেলে রান্নাঘরের দিকে চলে গেল বুঝলাম যুদ্ধ শুরুর আগেই পরাজিত হয়ে বসে আছি   
 সবে ঘুম থেকে উঠেছি সকালে এই এক মগ চা আর কাগজের হেডলাইনে রাজনীতির খবর পেটে গেলে তবেই পাকস্থলী ঠিকঠাক কাজ করে না হলে সারাদিনের অস্বস্তি হবে হবে অথচ হচ্ছে না সে এক বিচ্ছিরি ব্যাপার আজ বোধহয় আর হল না
জোগীরাজ থেকে গুরুজনসবাই বলেন এই ব্রাহ্ম মুহূর্ত দিনের সবচেয়ে দামী সময়   এই সময়ে একটু যোগাসন , নিদেনপক্ষে প্রাণায়াম বা ভাল মন্ত্র কিছুক্ষণ শুনলে চিত্ত শান্ত হয় বাজারে মাছ ওয়ালা বেশি দাম চাইলে রাগের বদলে ক্ষমার প্রবণতা বেশি করে প্রকাশ পায় নিজের অক্ষমতা কেযা ছেড়ে দিলামজাতীয় স্তোকবাক্যে ভুলিয়ে রাখা যায় কিন্তু আমার মত  ছাপোষা মধ্যবিত্তের সে সুযোগ নেই   
সকালে উঠে গান চালানো শুরু করেছিলাম দ্বিতীয় দিন চোখ বুজে লো ভল্যুমে ভজন শুনছিপ্রভু জী তুম চন্দন হাম.......” ফট করে শব্দ বন্ধ হয়ে গেল
- কি শুরু করলে বল তো ? পাশের বাড়ির মেয়েটার  মাধ্যমিক , সে খেয়াল আছে
যা ব্বাবা ! তেমন জোরে তো শুনছিলাম না ? আসলে ওর যা পছন্দ নয় তা বাড়িতে চলবে না কম্যুনিস্ট বাড়ির মেয়ে ইন্টার ন্যাশনাল বাজালে হয়ত আপত্তি করত না  
গরম আমারও পছন্দের কাল নয় বিশেষত: ঘাম আর ঘামাচির জ্বালায় আমি অস্থির হয়ে উঠি কিন্তু তাই বলে এসি ? আগেও নিয়ে আমাদের মধ্যে রসালাপ হয়েছে একবার তো সুর চড়ে যাওয়ায় পাড়ার অমল কাকু জানলা দিয়ে ডেকেই ফেলেছিলেন 
- কি বৌমা ? কি নিয়ে হচ্ছে ? মিষ্টি হেসে আমার বৌয়ের উত্তর 
- দেখুন না কাকাবাবু , আমাদের বাড়িতে এসি নেই বলে জামাইষষ্ঠীতে যাবে না বলছে  
মেয়েরা যে কখন কাকে কেস খাইয়ে দেয় তার ঠিক নেই কাকা আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন
- সব কি শুনছি হে ? তোমার কাছ থেকে এমন কথা আশা করি নি
কান এঁটো করা হাসি হেসে সেবার রেহাই পেয়েছিলাম কিন্তু গিন্নীর হাত থেকে এত সহজে আমার নিষ্কৃতি নেই পরের দিন কলেজ থেকে ফিরে  কোলে একটা কাগজ মোড়া বস্তু ফেলে দিল 
- নাও মুরোদ যখন নেই তখন এটা দিয়ে কাজ চালাও কাগজের মোড়ক খুলে দেখি অ্যালুমিনিয়ামের হ্যান্ডেল দেওয়া একটা প্লাস্টিকের হাত শুধু একবার বলেছিলাম 
- গো , পিঠে একটু পাউডার লাগিয়ে দেবে
তার প্রত্যুত্তরে এটা ! রাগের চোটে জিনিসটা নিয়ে পিঠে একটু জোরে ঘসতেই ছাল চামড়া উঠে গেল প্লাস্টিকের আঙুলে প্রেম নেই কি করে বুঝব ? তবে আমিও কম যাই না পরের দিনই মেঝেতে ঘসে ঘসে আঙুলগুলোকে ভোঁতা করে নিলাম এখন অনেকটা বৌয়ের হাতের এফেক্ট আসে  
যাক  এসব পারিবারিক দুঃখের কথা গিন্নীর মাথায় যখন ঢুকেছে তখন এসি কিনতেই হবে এখন চৈত্র সেল চলছে খবরের কাগজে প্রথম সোয়া দু পাতা জুড়ে শুধুই বিজ্ঞাপন কোন কাগজ বোঝাই যায় না একটা লম্বা পৌনে এক পাতা দিয়ে শুরু   এই কায়দাটা নতুন প্রথম যেদিন দিয়েছিল সেদিন ভেবেছিলাম কি রে বাবা ! ছেঁড়া কাগজ দিয়ে গেল ? তারপর বুঝলাম ওটাই কায়দা যারা খবর পড়তে ভালবাসেন  তারা জানেন লম্বা কাগজের ফালিটাকে ম্যানেজ করা কত কঠিন   
বিজ্ঞাপনে নানা রকম এসি দেওয়া আছে আমার মত আকাটের পক্ষে কোন টা ভাল বোঝা নিতান্তই অসম্ভব পাঁচজন কে জিজ্ঞাসা করে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেল বলে এটা ভাল তো বলে ধুর ! কারো কথা শুনিস না , ওটাই সবথেকে ভাল আজকাল টিভি দেখে হাফ বুদ্ধিজীবী হয়ে উঠেছি ঠিক করলাম যেটা সবথেকে দামি সেটাই কিনব মাসিক কিস্তির সুবিধে আছে , কোন চিন্তা নেই এই একটা ব্যাপার  মধ্যবিত্তকে বাঁচিয়ে রেখেছে আজ যদি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো একসঙ্গে বাকি ফেরৎ দিতে বলে তা হলে অধিকাংশ বাঙালির ফ্ল্যাট টিভি ফ্রিজ এসি সব চলে যাবে  
কিন্তু এসি কিনতে হলে আগে বাড়ির মিটারের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ইলেকট্রিক অফিসে আবেদন করতে হবে অন লাইনে আবেদনের সুবিধে আছে কিন্তু অসুবিধেটা আমার কম্পিউটার মুখে নিয়ে জন্মাই নি ছেলে মেয়ে অবশ্য অভ্যস্ত কিন্তু হোয়াটসঅ্যাপ থামিয়ে বাবাকে সাহায্য করবে তেমন ফুরসৎ কই ? অগত্যা পাড়ার ইলেক্ট্রিশিয়ান গদাই কে ধরলাম  
- তোমার লোড কত
প্রথম প্রশ্নেই মেজাজ খিচড়ে গেল আমার লোড সম্পর্কে তোর ধারণা কি রে ছোকরা ?     ছেলের সেমিস্টারের খরচ , গলদঘর্ম হয়ে অফিস থেকে ফিরে মেয়েকে টিউশনে নিয়ে যাওয়া , মার জন্য বাজার থেকে ফুল ছাড়া শুধু বেলপাতা নিয়ে আসা , সারা অঞ্চল খুঁজে তোর বৌদির কেক বানানোর জন্য স্ট্রবেরি সেন্ট কেনা , অফিসে প্রতিনিয়ত ইউনিয়ন কি প্যাঁচে ফেলবে সে চিন্তায় কাঁটা হয়ে থাকা  - আমার লোড স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা নিতে পারবেন কি না বলা শক্ত  
- ইলেকট্রিকের বিল টা দিও ওটাতে লোড লেখা আছে তার সঙ্গে ভোটার কার্ড এর এক কপি জেরক্স আর তোমার একটা পাসপোর্ট সাইজের ফটো
নাও , হয়ে গেল ! ফটো তোলাতে হবে বিকেলে সুমিতের দোকানে গিয়ে বললাম
- একটা ফটো তুলে দে  
- কি হল আবার ? কোথায় দরখাস্ত করছ
এই ফটোওয়ালাদের সব খবর জানতেই হবে একে তো এসির খরচ এবং মাসে মাসে কত বিল আসবে তাই ভেবে আধমরা হয়ে আছি , তার মধ্যে এই কৌতূহল মেজাজ বিগড়ে গেল হেসে বললাম 
- চাকরির চেষ্টা করছি ,   বিয়ের জন্য বিজ্ঞাপন দেব ,    হারিয়ে গেলে তোর বৌদি কাগজে হারানো প্রাপ্তিতে দেবে       – এর কোনটাই বিশ্বাস না হলে ধরে নে মারা গেলে বছরে একবার এই ফটো ছাপিয়ে নিচে লেখা হবে  “তোমার মৃত্যুতে আমরা কষ্টে আছি বাড়ির আজেবাজে কাজগুলো করার লোক পাওয়া যাচ্ছে না
- তুমি একেবারে যা তা ! দাঁড়াও বৌদিকে বলে দেব  
- যা যা! বল গে যা আমি তোর বৌদিকে ভয় পাই নাকি ? মুখে বললেও মনে ভয় রয়ে গেল এসব ইয়ার্কি একদম পছন্দ করে না  
সপ্তাহ খানেক পরে একদিন দুপুরবেলা ইলেকট্রিক অফিস থেকে জনা চারেক লোক এসে উপস্থিত গদাই আগে থেকে বলে রাখায় অফিস যাই নি নতুন মিটার লাগাতে লাগাতে একজন বলল
- আপনার ওয়্যারিং এর অবস্থা তো খুব খারাপ এসির জন্য আলাদা করে তার টানতে হবে না হলে আগুন লেগে যেতে  পারে জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছে করছিল কোথায় ? এসি তে না বাড়িতে ? কিন্তু পাশেই গিন্নী দাঁড়িয়ে আছে স্মার্টলি বলল
- আপনারা আপগ্রেড করে দিয়ে যান বাকি টা গদাই করে দেবে
- উঁ ! গদাই করে দেবে ! আর টাকাটা কে দেবে ? আমি মনে মনে বলি এক এসি আমার সংসার খরচের ডিঙির তলা ফুটো করে দিয়ে চলে গেল
এরপর এসি কেনার পালা ক্লাস ফাইভের জ্ঞান নিয়ে গেছি উচ্চমাধ্যমিকের এনট্রান্স দিতে প্রথম প্রশ্নেই সব গুলিয়ে গেল
- দাদা টন
- ঠিক বলতে পারব না , তবে এমন একটা দেবেন যেন একজনই খুলে নামাতে পারে আমি ভবিষ্যতের খরচের কথা ভেবেই বলি বৌ কনুইয়ে একটা রাম চিমটি কাটল, তারপর সেলস ম্যান ছেলেটাকে মিষ্টি করে বলল
- ভাই , বারো বাই চোদ্দ ঘরে কত লাগবে ? সুন্দর মুখের জয় সর্বত্র ছেলেটা আমাকে পাত্তা না দিয়ে বৌদিকে নিয়ে পড়ল  
- দেড় টন হলেই হয়ে যাবে কপার না অ্যালুমিনিয়াম ? আমি ফেকলু পার্টির মত দাঁড়িয়ে ভাবতে থাকি কপার সস্তা না অ্যালুমিনিয়াম ভাগ্যিস ছেলে মেয়ে সঙ্গে আসে নি ! বাবার বোকামি তে ওরা প্রেস্টিজে পড়ে যেত অবশেষে ম্যানেজার গোছের এক ভদ্রলোক আমার অবস্থা দেখে এগিয়ে এসে জলের মত এসির ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিলেন আমিও সাদা কাগজের মত সব বুঝে গেলাম  
এক শুভ দিনে ছোট হাতিতে করে এসি এলো তার দিন তিনেক পর কোম্পানি থেকে লোক এসে ফিট করে দিয়ে গেল আমি গামছা পরে ইয়াব্বড় থার্মোকোল আর প্যাকিং বাক্সটা লফটে ঢোকালাম ওটা নাকি মেয়ের প্রজেক্টের কাজে লাগবে
এখন আমার রাতের ঘুম গেছে ওরা নিশিন্তে ঘুমোয় আর আমি এসি বন্ধ করব বলে জেগে বসে থাকি রিমোট দিয়ে টাইমার লাগিয়ে নাকি বন্ধ করা যায় কিন্তু ঘুম চোখে কি টিপতে কি টিপব তার ঠিক নেই তাই সব গণ্ডগোলে না গিয়ে পাতি বাংলা পদ্ধতিতে ঘড়ি ধরে মাঝরাতে রোজ সুইচ অফ করে ফ্যান চালিয়ে দিই আপনারা হয়ত ভাবছেন রাত জেগে জেগে আমার হার্টের অসুখ হবে না , সে চিন্তা নেই কত টাকা সাশ্রয় করতে পারলাম ভেবে আমি রাত জাগার সার্থকতা খুঁজে পাই তবে কোনদিন যদি নিজে ঘুমিয়ে পড়িএই টেনশনে সুগারটা সামান্য বেড়েছে

Like Reply


Messages In This Thread
RE: কিছু মনের সত্যি কথা - by ddey333 - 02-04-2022, 07:19 AM



Users browsing this thread: 12 Guest(s)