30-03-2022, 10:47 AM
রাঘবের এই মূর্তি দেখে বাহাদুর একটু ভয় পেলেও তা প্রকাশ করে না, এস পির হুকুমে মাখনবাবু তারাতাড়ি দৌড়ে আসে আর গাড়ীতে চেপে যায়। মাখনবাবু বাহাদুরের পাশেই বসে আর রাঘবের চোখ এড়িয়ে শুধু মিচকি হাসি হাসে, রাঘবের রাগে থমথমে মুখ দেখে বাহাদুর যত না ভয় পেয়েছিল তাঁর থেকে অনেক বেশি ঘাবড়ে গেছে মাখনবাবুর মুচকি হাসি দেখে। রাস্তায় রাঘব একটিও কথা বলেনি শুধু একবার মাখনবাবুকে কড়া গলায় অর্ডার দিয়েছিল যে, ;কেউ যেন এই অপারেশনটার ব্যাপারে না জানে;, মাখনবাবু সঙ্গে সঙ্গে ঘাড় নেড়ে তার সম্মতি জানায়, যদিও রাঘব পাহাড়পুরে মাত্র কদিনই জয়েন করেছে কিন্তু মাখনবাবু তার এত বছরের পুলিসি অভিজ্ঞতায় এটা খুব ভালভাবেই অনুভব করতে পেরেছে যে রাঘব কি জিনিস, তাই মাখনবাবু এই কদিনে রাঘবকে একটু এড়িয়েই যাচ্ছিল, কারন রাঘবের চোখ, যা একদম ক্রিমিনালদের মত , মাখনবাবুর মত অভিজ্ঞ অফিসার অব্দি রাঘবের স্থির, ঠাণ্ডা চোখ দেখেই কেঁপে যায় এই রকম চোখের দৃষ্টি যাদের তারা যে খুব সহজেই আর ঠাণ্ডা মাথায় মানুষ মারতে পারে তা মাখনবাবু জানেন, তার উপর মহুয়ার মত বদমেজাজি অফিসার অব্দি রাঘব কে দেখলেই যখন নার্ভাস হয়ে যাচ্ছে তখন নিশ্চয় কোন ব্যাপার আছে রাঘবের মধ্য। তবুও মাখনবাবু আজ একটু খুশী কারন বাহাদুর কে সাহেব তোলায়। মাখনবাবু তার কুকুরের মত নাকে একটু আঁশটে গন্ধও পাচ্ছে এই ব্যাপারে কারন সাহেব প্রায় ঘণ্টা তিনেক হল বাহাদুর কে তুলেছে কিন্তু এখনও সরকারি ভাবে এ্যরেস্ট করেননি বা খাতায় এন্ট্রিও করেননি,তাই মাখনবাবু একটু হলেও সন্দিহান যে সাহেব বাহাদুর কে কি করবে? তার উপর আবার জঙ্গল ঘেঁষা সার্কিট হাউসে নিয়ে যাচ্ছে, তবে যদি সাহেব বাহাদুর কে এনকাউনটার সত্যি করে মেরেই দেয় তো মাখনবাবু মা কালী কে কচিপাঁঠা বলি দেবে, কারন মাখনবাবুর অনেকদিন ধরেই ইচ্ছা আছে যে সে বাহাদুরের ফর্সা সুন্দর বউ রেশমির চওড়া গাঁড়ে তাঁর কালো মোটা ইঁদুরটা ভরে। অনেকভাবেই চেষ্টা করেছিলেন মাখনবাবু এর আগে দুবছর ধরে কিন্তু কোনও উপায় করতে পারেননি, উল্টে বাহাদুর ব্যাপারটা আন্দাজ করে একদিন তাকে থানায় এসে খুব ভদ্রভাষায় শাসিয়ে যায়, মাখনবাবু সেইদিন বাহাদুর খানের চোখরাঙ্গানি চুপচাপ সহ্য করে কারন তিনি জানতেন যে বাহাদুর যাদের হয়ে কাজ করে তারা চাইলে তিনি হাপিস হয়ে যাবেন ও কেউ যানতেও পারবে না, কিন্তু আজ বাহাদুর খান অসহায়, তাই মাখনবাবু খুব খুশী আর তাই তিনি মাঝেমাঝেই বাহাদুরের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। যখন জঙ্গলের ধারে গাড়ি থামলো তখন বিকেল প্রায় শেষ হয়ে এসেছে, প্রচুর পাখি উড়ে যাচ্ছে তাদের বাসার দিকে নিরাপদে কিন্তু সেই পাখীরা নিচে তাকালে দেখতে পেত যে শুধু তাদের জন্যই নয় মানুষেরা মানুষ ধরারও ফাঁদ করে আর এখন সেই ফাঁদে আটক পড়েছে বাহাদুর খান আর তাঁর ব্যাধ রাঘব সময়ের অপেক্ষায় আছে কখন ফাঁদে আঁটকে পড়া পাখিটির শিকার সে করবে। রাঘবের হুকুমে মাখনবাবু বাহাদুর কে গাড়ি থেকে টেনে নামিয়ে তাঁর হাতকড়া পরা হাত ধরে তাকে সার্কিট হাউসের ভিতরে নিয়ে যায়। তারা দুজন ভিতরে চলে গেলেই রাঘব ড্রাইভার কে বলেন যে ;তুমি বাস ধরে চলে যাও আর আজকে থানায় যাওয়ার দরকার নেই,; বলেই তাঁর হাতে একটা পাঁচশর নোট দিয়ে বলেঃ কেউ যেন না জানে যে আমরা কথায়, আর জানলে? বলেই রাঘব তার দিকে শুধু একবার তাকায়, তাতেই ড্রাইভার যা বোঝার বুঝে যায় । এইবার রাঘব চারিদিকে তাকিয়ে দেখে যে আজ তিনি যে প্ল্যান করে এখানে এসেছেন তা নিরিবিলিতেই হবে বলে মনে হচ্ছে, সার্কিট হাউসটি এমনিতেই সারা বছর ফাঁকায় পরে থাকে তাঁর উপর রাঘব কাল রাত্রেই এখনকার ম্যানেজার কে ফোন করে তাঁর ছাড়া আর কারুর বুকিং নিতে বারন করে দিয়েছিলো তাই এখন এই জনমানব শূন্য সার্কিট হাউসে যে নাটকটি মঞ্চতস্থ হবে তাঁর তিনটি চরিত্রের মধ্য দুজন হাজির কিন্তু এখনও হিরোইনই আসে নি। তবে আজকের নাটকে রাঘবের কিন্তু কোন পার্ট নেই কারন আজ সে এই নাটকের দর্শক আর অতি অবশ্যই পরিচালক।