Thread Rating:
  • 63 Vote(s) - 2.92 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়)
-অনিদা!
দ্বীপায়নের দিকে তাকালাম।
-ডাক্তার ব্লু ফিল্মের স্যুটিং করছে তার ছবি দ্বীপায়ন স্ক্যান করছে। আমার দিকে তাকিয়ে ইশারা করলো। এগুলো পরে করলে হবে।
আমি বললাম
-না। একটু আড়াল করে কর। পারলে মল্লিকদার ঘরে চলে যা।
দ্বীপায়ন হাসলো।
-আমি ওই ঘরে চলে যাই।
-যা।
দ্বীপায়ন সব গুছিয়ে ও ঘরে চলে গেলো।
হিমাংশু আমার কাছে এসে বললো। তুই একবার দেখে নে।
-আমি এখন দেখতে পারবোনা তোরা দেখ। পারলে মল্লিকদা নিরঞ্জনদা আছে।
আমি বারান্দায় সন্দীপের কাছে গেলাম।
-কিরে বুদ্ধি খেলালি।
-হয়ে গেছে।
-কি হয়ে গেছে।
-ওরা আজ কলকাতারটা আর কলকাতার কাছের নার্সিংহোমগুলো মেরে দিচ্ছে।
-ঠিক আছে। বাকিগুলো?
-কাল দুজনে একসঙ্গে বেরিয়ে যাবে। প্রথমে শিলিগুড়ি সারবে তারপর সিকিম ভুটান রায়গঞ্জ হয়ে মালদহে ঢুকবে।
-দাদারা আজ থেকে থাকবেনা।
-তুই থাকবি তো।
-হ্যাঁ।
-তাহলে আর কি আছে। আমার কোনো চিন্তা নেই।
-আমি শুক্রবার যাবো।
-ঠিক আছে।
হিমাংশুকে বললাম তোকে কালকে যে জমিটার দলিল দিলাম ওটা করেছিস।
-হ্যাঁ ওটা হয়ে গেছে। ব্যাগে আছে।
-এখানে তিনজনে আছে। সই করিয়ে নে। বাকিটা নিরঞ্জনদাকে বুঝিয়ে দে। কালকে নিরঞ্জনদা সব ব্যবস্থা করবে।
হিমাংশু দাদাদের দিয়ে সব সই করিয়ে নিলো।
-কিরে তুই করবিনা।
-ওটা আমার নয় তোমাদের। আমারটা আমি করে দিয়ে চলে এসেছি।
-একিরে তারপর আমাদের বাঁশ দিবি।
-তোমাকে দেবোনা।
-যাক তোর মুখ থেকে এই কথাটা শুনে প্রাণ জুড়ালো। কি বলো হিমাংশু।
হিমাংশু হাসছে।
-নিরঞ্জনদা টাকা বড়মার কাছ থেকে নিয়ে নেবে। কোনো ধারবাকি রাখবেনা। কাল থেকেই ওখানে ডেভালপার কাজ শুরু করে দেবে। ওখানকার ব্যাঙ্কে একটা এ্যাকাউন্ট করবে। সইয়ের অথরিটি তুমি, দাদা, ইসলাম ভাই। যে কোনো দুজন হলেই চলবে। হিমাংশু রেজুলেসনগুলো কোথায়।
-সব ফাইলে আছে।
-দাদা তুমি একবার ওটা পড়ে নাও।
-দে বসে বসে তাই করি ডাক্তার কখন আসবে রে।
-চলে আসবে।
 
ছোটমার ঘরে গেলাম। দ্বীপায়ন তেড়ে স্ক্যান করে চলেছে। আমায় দেখে হেসে ফেললো।
-কি দ্বীপায়ন বাবু স্যার হাসছেন কেনো।
-তোমার কালেকশন দেখে।
-আমার কালেকশন! ঠিক বলেছো। জানো দ্বীপায়ন এই ভদ্রলোকের মালিকানায় আমরা কাজ করেছি। এটা বিশ্বাস করো।
-আজ এই মূহূর্তে এইসব দেখার পর বিশ্বাস করতে অসুবিধে হচ্ছে।
-ভদ্রলোককে দেখে বোঝা যায় তার ভেতরটা এতো কালো।
-একবারেই না।
-আমিও প্রথম দিন বুঝতে পারিনি। মিত্রা যেদিন আমায় ক্যালকাটা ক্লাবে প্রথম আলাপ করিয়ে দেয় তখন ওনাকে অনেক ব্রাইট মনে হয়েছিলো। ভেবেছিলাম এতোবড়ো ডাক্তার ওনার সান্নিধ্যে এলাম এটাই ভাগ্যের ব্যাপার।
-সত্যি অনিদা যত দেখছি তত অবাক হয়ে যাচ্ছি।
বুকের ভেতর থেকে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস বেরিয়ে এলো।
ফোনটা বেজে উঠলো।
পকেট থেকে বার করে দেখলাম মিত্রা ফোন করেছে। বাইরের বারান্দায় বেরিয়ে এলাম।
-হ্যালো।
-কাজ শেষ।
-শুরুই করলাম না।
-ইসলাম ভাই বড়মাকে বললো রতন নিয়ে চলে গেছে।
-এখনো এসে পৌঁছায়নি। তুই কোথায়। পাখির ডাক শুনতে পাচ্ছি।
-হো হো হো।
-হাসছিস কেনো।
-পুকুরপারে বাঁশবাগানের ভেতর।
-ওখানে কি করছিস।
-তোকে ফোন করবো তাই চলে এলাম।
-আমাকে ফোন করার জন্য বাঁশবাগানে!
-হ্যাঁ মশাই। ওরে আমাকে সবাই এখন ফলো করছে। তুই কাউকে কিছু বলছিসনা। এমনকি ছোটমা মল্লিকদাকে ফোন করেও কিছু বার করতে পারলোনা। দাদাতো বলেই দিলো অনিকে জিজ্ঞাসা করো।
আমি হো হো করে হেসে ফেললাম।
-সবাই ভাবছে কি জানিস।
-কি।
-আমাকে তুই সব বলেছিস। আমি চেপে যাচ্ছি।
-কালকের কেসটা মিলিয়ে দিলাম।
-তোকে বলতেই ভুলেই গেছি।
আমি হাসছি।
-সত্যি চিকনা কি জিনিষরে।
-কেনো।
-আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম। ও নিচ থেকে শুনেছে। কিন্তু পরিষ্কার শুনতে পায়নি বলে পেছনের চাল দিয়ে উঠে বারান্দার চালে এসে আমার কথা শুনেছে।
-তাহলে বুঝলি।
-বুঝলাম মানে। এবার তোর সঙ্গে কথা বলতে গেলে মাঝে মাঝে তোর মতো হতে হবে।
-কি রকম।
-এইযে বাঁশবাগানে চলে এসেছি।
-হাসছি।
-হাসিস না।
-বাঁশবাগান পার হয়ে তোর সেই খালের ধার পর্যন্ত চলে এসেছি। যেখান থেকে খাল পার হয়েছিলাম।
-ফিরে যেতে পারবি তো।
-পারবো। বড়মা কি বলে জানিস।
-কি।
-আমাকে সকালে জিজ্ঞাসা করলো অনি তোকে কি বললো। আমি ডিনাই করে গেলাম। দেখলাম হুঁ বলে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকালো। বুঝে ফেললাম খবর হয়ে গেছে। তারপর এক ফাঁকে চিকনাকে ধরলাম। কিছুতেই স্বীকার করবেনা। বললাম ঠিক আছে দাঁড়া তোর গুরু আসুক।
আমি হাসছি।
-তখন আমার পায়ে হাত দিয়ে বলে ম্যাডাম অন্যায় নেবেন না বড়মার হুকুম।
-ব্যাস তারপর থেকে এ্যাকটিং শুরু করে দিলাম।
-এইতো তুই পাকছিস।
-তোর মতো হতে পারবোনা।
-চেষ্টা কর ঠিক হবে।
-ঠিক।
-অবশ্যই। তারপর কাজ শেষ, সকলকে বলে দাও।
-তা বলে তোকে না বলে কোনো কাজ করবোনা।
-সেটা আলাদা ব্যাপার।
-রতন এলো বুঝলি। গেটে গাড়ি এসে দাঁড়িয়েছে। আমি এখন রাখি। তোর ঢ্যামনা বরটাও এলো।
-তুই এত নরম নরম গালাগাল দিস না আরো কঠিন কঠিন দে।
-ঠিক আছে। ঘন্টা খানেক বাদে করিস।
-আচ্ছা।
 
আমি আমার ঘরে এলাম। দেখলাম সিঁড়ি দিয়ে রতন আবিদ ওর সাগরেদরা ডাক্তারকে নিয়ে ওপরে উঠে আসছে। ডাক্তারকে দেখে বেশ ঝক ঝকে মনে হচ্ছে। দাদাকে বললাম
-তোমার সব পড়া হয়ে গেছে।
-হ্যাঁ। খুব সুন্দর হয়েছে।
-ওরা এসে গেছে।
-নে নে কাজ শুরু করে দে।
-হিমাংশু ম্যাডামকে আনার ব্যবস্থা কর।
-প্রত্যুষ ডাইরেক্ট চলে গেছে। এখুনি এসে পরবে।
রতন ঢুকলো। পেছন পেছন সবাই। কবিতাকে দেখতে পেলাম না। ডাক্তারকে দেখেই আমার মুখের জিওগ্রাফি বদলে গেলো। ডাক্তার ঘরে ঢুকেই দাদার পায়ে হাত দিয়ে ঝরঝর করে কেঁদে ফেললো। দাদাও ডাক্তারের ব্যবহারে কিংকর্তব্যবিমূঢ়।
-আমায় ক্ষমা করুন দাদা আমি অনেক পাপ করেছি।
মল্লিকদা গরম খেয়ে গেলো।
-আপনি পাপী নন নরকের কীট।
আবিদ তেড়ে এসেছিলো। রতন কোনো প্রকারে ধরে ফেললো।
দাদা মুখে কিছু বলতে পারছেনা। ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে আছে।
-আপনি আমাকে এদের হাত থেকে বাঁচান দাদা।
-আমি পারবোনা অনি পারবে।
-অনি আমাকে মেরে দেবে।
-আমি কি করবো। অন্যায় করেছেন। আপনারও শুনেছি প্রচুর ক্ষমতা।
-যাদের ওপর নির্ভর করে আমি ক্ষমতা দেখাতাম তারা অনির খাস লোক।
আমি আর থাকতে পারলাম না।
-উঠুন অনেক নখরামি করেছেন এবার ভালোয় ভালোয় সই করে দিন।
-তুমি যা বলবে সব সই করে দেবো। আমায় আজ ছেড়ে দাও।
-দেবো।
আবিদ টেনে হিঁচড়ে দাদার পা থেকে ডাক্তারকে তুললো।
-যা বলবে অনিদা মুখ বুঁজে তাই করে যা। কালকে থেকে অনেক কিছু সহ্য করছি।
-হিমাংশু।
-বল।
-ডাক্তারের সই সাবুদ আগে সেরে নে। ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে বললাম
-ওপাশে চলে যান। হিমাংশু যা যা বলছে সেখানে সই করুন।
আমার গলার স্বরে এমন কিছু ছিলো দাদা নিরঞ্জনদা মল্লিকদা আমার দিকে চমকে তাকালো। ডাক্তার সুরসুর করে হিমাংশুর দিকে চলে গেলো।
-একবার ভালো করে পড়িয়ে নিবি।
রতনের দিকে তাকিয়ে বললাম রতন এদিকে একবার আয়।
[+] 4 users Like MNHabib's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - by MNHabib - 06-04-2022, 07:29 AM



Users browsing this thread: