04-04-2022, 11:48 PM
……..কি করবো কচুরীটা মুখে দিয়েছিলাম। না গিলে কথা বলি কি করে….। হ্যাঁ অনি খেয়েছে। ……তুমি তাড়াতাড়ি কথা শেষ করো। …..হ্যাঁ ঘোড়ায় জিন দিয়ে আছি। …..যা চোলে আমি আবার কি করলাম….. পারবোনা তুমি মল্লিককে বলো….. ধর মল্লিক।
দাদা ফোনটা মল্লিকদার হাতে দিয়ে দিলো। মল্লিকদা আস্তে আস্তে বারান্দার দিকে চলে গেলো। হিমাংশু ঘরে ঢুকলো। হাঁসতে হাঁসতে আমাকে বললো।
-কাল সারারাত ঘুমোসনি।
হাসলাম।
-আমারও ঘুম হয়নি। রেবা যখন রাগারাগি শুরু করলো। তখন ওকে গল্পটা বললাম।
হাসতে হাসতে বললাম, রেবা কি বলে।
-আর কি অনিদার দম আছে।
-কচুরী খাবে হিমাংশু।
-হলে খারাপ হয়না। সকালে এক কাপ চা খেয়ে চলে এলাম।
-ওরে সন্দীপ হিমাংশুকে দে। দাদা বললো।
মল্লিকদা দেখি তখনো বারান্দায় দাঁড়িয়ে নীচু স্বরে কথা বলেই চলেছে। বুঝলাম ছোটমার সঙ্গে কথা বলছে।
-ড্রাফ্ট করেছিস না ফাইন্যাল করে নিয়ে এসেছিস।
-তুই পাগল হয়েছিস, ড্রাফ্ট বানিয়ে নিয়ে এসেছি। তোর সঙ্গে বসে ফাইন্যাল করবো।
-ভালো করেছিস।
-খেয়ে নে। তারপর কথা বলছি।
-সত্যি হিমাংশুর খিদে পেয়েছিলো একসঙ্গে দুটো করে কচুরি মুখে দিয়ে তাড়াতাড়ি প্লেটটা খালি করে দিলো।
মল্লিকদা ঘরে এলো। হাসি হাসি মুখ।
-কি রিলে করলে।
-পাগল হয়েছিস। ডজ করে বেরিয়ে গেলাম। খালি বললাম সব পজিটিভ। চিন্তার কোনো কারন নেই।
-মাথায় রাখবে। খবর আমার কাছে ঠিক চলে আসবে।
-যে যার মতো ঘুঁটি সাজাচ্ছে। সন্দীপ ছেলেদুটোকে নিয়ে আলাদা করে কথা বলছে। দ্বীপায়ন ল্যাপটপে বসে কাজ করে চলেছে। নিরঞ্জনদা চারিদিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে।
-বল তুই কি গল্প লিখেছিস। হিমাংশুর দিকে তাকিয়ে বললাম।
-দুটো গল্প আছে নার্সিংহোমের ব্যাপারে। এক তুই সবকটা নার্সিংহোমের শেয়ার লিখিয়ে নিতে পারিস। না হলে খালি আমাদের স্টেটেরগুলো লিখিয়ে নিতে পারিস।
-কেনো বলছিস বল।
-কালকে যা কাগজপত্র ঘাঁটলাম তাতে বাইরেরগুলো হলে বহুত ঝামেলায় পরবি।
আমি মাথা দোলাচ্ছি।
-কিরে তোর মনের কথা বলতে পেরেছি।
-হুঁ। তোর বুদ্ধি খুলেছে।
-তোর সঙ্গে থেকে থেকে।
-তাই কর। ডাক্তারের পাঁচটা বিয়ে। যে কটার সঙ্গে বিয়ে করেছে সে কটার সঙ্গে পার্টনারশিপে নার্সিংহোম বানিয়েছে। এই কাজ উদ্ধার করতে গেলে সারা জীবন লেগে যাবে। তার থেকে বরং কিছু টাকা খিঁচে নেবো এই তালে।
-সেই ভালো।
-বাড়িগুলোর ব্যাপারে।
-ওর বাড়িটা গন্ডগোলে। ওটা নিসনা। বরং মিত্রা যে বাড়িতে আছে সেটা লিখিয়ে নে।
-ঠিক আছে। নেক্সট।
-তোর শেয়ার ট্রান্সফারের সময় মিত্রাকে দিয়ে যেটা সাইন করিয়েছিলো সেটা রেজিস্ট্রি হয়নি। ওটা তোর নামে ডাইরেক্ট করে দিচ্ছি।
-সব ঘাঁত ঘুঁত বেঁধে কর। পরে যেনো ফেঁসে না যাই। আর একটা কাজ কর।
-বল।
-মিত্রার নামে ওর টোটাল প্রপার্টির একটা পাওয়ার অফ এ্যাটর্নি তৈরি কর। পরে বাকিটা আমি বুঝে নেবো।
-এটা মাথায় আসেনি। ভালো বুদ্ধি দিয়েছিস।
-নে কাজ শুরু করে দে। ওদিকে রতনরা ব্যস্ত হয়ে পরেছে। আমার ফোন বন্ধ। হেড অফিসে বার বার ফোন করছে। আমি বুঝতে পারছি। প্রিন্টার নিয়ে চলে এসেছি। তুই ঝট পট কাজ শেষ কর।
দাদার দিকে তাকিয়ে বললাম তুমি সব একবার ভালো করে পড়ে নাও। আমি বাথরুমে ঢুকি।
-যা।
আমি বাথরুমে চলে গেলাম। সারতে সারতে আধঘন্টা গেলো। বাইরে ওরা কথা বলছে। ছেঁড়া ছেঁড়া কথা আমার কানে আসছে। সব কথার মধ্যেই আমি আছি। হিমাংশু বেশ রসিয়ে কালকের ঘটনা সবাইকে বলছে। মাঝে মাঝে দাদা রেগে উঠে বলছে আরো ঘা দুচার দিতে পারতো। তবে কবিতা মেয়েটা বেশ স্টেট ফরোয়ার্ড। আমাকে বলে কিনা তুমি এর বেশি আর জানতে চেওনা। স্নান করি আর নিজের মনে নিজে হাসি। আজ আমার পাশে কতো লোক। য়াকেই বলছি সেই আমাকে সাহায্যের হাত বারিয়ে দিচ্ছে। একদিন কলকাতার রাস্তার কলের জল পেট ভরে খেয়ে সারাটা দিন কাটিয়ে দিয়েছি। সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়লে মনে হয়, না না এই জীবনে এই সব ঘটনা ঘটে নি। ওই ঘটনাগুলো আমার আগের জীবনের।
কাল সারারাত ঘুমোইনি শরীরে জল পরতে কেমন শিরশির করে উঠলো। মাঝে মাঝে মনে হয় আমি যা করছি সব ঠিক করছি তো। কোনো অন্যায় করছি নাতো। তারপর যখনি মিত্রার কথাটা মনে পরে যায়। ভেতরের সব রাগটা কেমন বাইরে বেরিয়ে আসে। আমি যা করছি ঠিক করছি। কোনো অন্যায় করছিনা। এক কথায় আমি নিজের জন্য কিছু করছিনা। আজ কেউ প্রশ্ন করলে কালকেই সব লিখে দিয়ে চলে যাবো।
বাথরুম থেকে বেরোলাম। দাদা ইজি চেয়ারে বসে হেলান দিয়ে হিমাংশুর লেখা ড্রাফ্ট পরছে। দ্বীপায়নকে জিজ্ঞাসা করলাম দেখতো আমার মোবাইলটা চার্জ হয়ে গেছে কিনা। ও হাতে নিয়ে বললো হয়ে গেছে।
আমি ছোটমার ঘরে গিয়ে জামা প্যান্ট পরে এলাম। মল্লিকদা হট ফ্লাস্ক থেকে চা ঢেলে দিলো।
-কিরে হিমাংশু রেডি।
-হ্যাঁ দাদাকে দিয়েছি দাদা একবার পরে নিচ্ছে।
-আমি তাহলে ফোন করি।
-কর
আমি রতনকে ফোন করলাম।
-কিগো তোমার ফোন সকাল থেকে অফ কেনো।
-আর বলিসনা চার্জে বসিয়েছিলাম। তুই কোথায়।
-হোটেলে।
-ডাক্তারকে নিয়ে চলে আয়।
-ঠিক আছে।
-শোন সঙ্গে একটা গাড়ি এক্সট্রা গাড়ি নিয়ে আসিস।
-তোমাকে ভাবতে হবেনা।
-চলে আয়।
হিমাংশুর দিকে তাকিয়ে বললাম। ম্যাডামকে একবার নক করে দে।
-নক করার দরকার নেই। প্রত্যুষ এখুনি চলে আসবে। ও নিয়ে আসবে সঙ্গে করে।
-দাদাকে বললাম তুমি রেডি হয়ে নাও।
-দাঁড়া আগে সই সাবুদ করি তারপর একবারে স্নান সারবো।
আমি ডাক্তারের স্যুটকেস বার করলাম। চেক বইগুলো বার করলাম। দেখলাম প্রত্যেকটা চেক বইয়ে একজনের সই করা আছে। বুঝলাম সেই সব ভদ্রমহিলার। খালি ডাক্তারের সই করলেই হয়ে যাবে। মনে মনে বললাম শালা কত বড় ধুরন্ধর। এইরকম মানুষও পৃথিবীতে থাকে। ঘাঁটতে গেলে দেখবো, ওই মেয়েগুলোর অবস্থাও মিত্রার মতো।