02-04-2022, 05:06 PM
বাথরুমে গেলাম। মুখে চোখে ভালো করে জল দিলাম। আবার এসে বসলাম। সন্দীপকে আবার ফোন করলাম। এবার ধরলো।
-কিরে ঘুমোচ্ছিস।
-তাহলে কি করবো।
-বউ পাশে।
-হ্যাঁ।
-মজমা নিচ্ছিস।
-শালা।
-সকাল বেলা নাম সংকীর্তন শোনালি।
-বল কি হয়েছে।
-একবার আসতে পারবি।
-আবার কি হলো।
-ফোনে বলা যাবে না।
-কাল দাদা তাড়াতাড়ি চলে গেলেন। তুই এলিনা। আবার ঘোটালা।
-আয় বোলবো।
-কখন বল।
-এখুনি চলে আয়। সঙ্গে তোর টিম।
-কি হয়েছে বলতো।
-আরে বাবা কিছু একটা হয়েছে তাই ফোন করে তোকে বিরক্ত করছি।
-একথা বলছিস কেনো।
-শোন আর একটা কাজ করবি।
-বল।
-অফিস থেকে একটা স্ক্যানার আর প্রিন্টার তুলে আনতে পারবি।
-তুই ঝেরে কাশ। টেনসনে রাখছিস কেনো।
-আয়না।
-ঠিক আছে যাচ্ছি।
ফোনটা রাখলাম।
আমার প্রয়োজনীয় কাগজগুলো আলাদা রেখে স্যুটকেশ গোছাতে আরম্ভ করলাম। দরজায় ধাক্কার আওয়াজ পেলাম। উঠে গিয়ে দরজা খুললাম। দেখলাম নিরঞ্জনদা দাদা দাঁড়িয়ে আছে। দরজা খুলে আমি খাটে এসে বসে পরলাম। ওরা ভেতরে এলো।
-কাল সারারাত নিশ্চই ঘুমোসনি।
-বোসো এখন কথা বলোনা।
-সারারাত তাহলে কি করলি।
-ঘাস কাটছিলাম।
নিরঞ্জনদা ফিক করে হেসে ফেললো।
-কি পেলিরে।
-অনেক কিছু, অপেক্ষা করো।
-নিরঞ্জন দেখতো মল্লিকের চা কতো দূর হলো।
-এসে পরবে দাঁড়াও না।
-এই খামগুলো কিরে।
-সব আলাদা আলাদা এক একটা আর্টিক্যাল।
-এও কি মল কেশ।
-আর একটু উচ্চ মানের।
মল্লিকদা চায়ের ট্রে নিয়ে ঢুকলো। নিরঞ্জনদা উঠে গেলো।
-মল্লিক আগে অনিকে চা দে।
-কেনো।
-অনেকগুলো আর্টিক্যাল লিখেছে সারারাত ধরে।
-তোমাকে বললো তুমিও বিশ্বাস করলে।
-ও মিছে কথা বলেনা।
-সত্যি কথাও বা কবে বলেছে।
আমি গম্ভীর হয়ে কাজ করে চলেছি। মল্লিকদা চায়ের কাপ এগিয়ে দিলো। চায়ের কাপে একটা চুমুক মেরে বিছানার ওপর রাখলাম।
-বড়মা ফোন করেছিলো।
-তোর বড়মা কোনোদিন আমাকে ফোন করে। আমি করলাম।
-কি বললো।
-তোর পাগলামোর কথা বললো। আর গাল দিলো।
-তুমি কি বললে।
-এ আমার কম্ম নয় তুমি পারলে ওকে বুঝিও।
-ব্যাস কথা শেষ।
-ওই হলো আর কি।
-মরণ বলেনি।
-দু’চারবার বলেছে।
কাজ করতে করতেই ফিক করে হাসলাম।
-আজ একটু দেরি করে অফিসে যাবে।
-কেনো।
-অনেকগুলো সই করতে হবে তোমাদের তিনজনকে।
-আবার কি করবি।
-সম্পত্তিগুলো গিলতে হবে না।
-কার।
-ডাক্তারের।
-ওটা ডাক্তার না পাষন্ড বলতো।
-ওনার নামে যা বলবে তাই ম্যাচ করে যাবে।
-দেখে বোঝা যায়না।
-আমায় দেখে বোঝা যায় আমি এত শয়তান।
-দাঁড়া তোর বড়মাকে ফোন করছি।
-কি হবে।
-দেখতে পাবি।
-অনেক হয়েছে আর ফোন করতে হবেনা। মল্লিকদা বললো।
-তুই কিছু খোলসা করে বলনা।
-শুনে কি করবে সমাধান করতে পারবে।
-তা পারবো না শুনতে তো ইচ্ছে করে।
-মল্লিকদা।
-বল।
-আমি এখন নিচে যেতে পারবোনা। নীচটা তুমি একটু ম্যানেজ করো।
-সে তোকে ভাবতে হবে না। কাজের মাসীকে পটিয়ে নিয়েছি।
-এইতো কাজের কাজ করেছো।
-কাল সারারাত এই কাজ করলি।
-তুমিও তো সারারাত গল্প করলে।
-তোকে আবার কে বললো।
-খবর পেলাম।
-খালি ঢিল ছোঁড়া। লেগে গেলে অনির থার্ড সেন্সেসন বলছে তাইনা।
-তাহলে ফোন করে খবর নিই।
-আর উপকার করতে হবেনা।
-থার্ড সেন্সে।
নিরঞ্জনদা হো হো করে হেসে ফেললো।
-হাসছো কেনো।
-তোর কথা শুনে।
-কাল কেমন ঝাড় খেলে। বড়মাকে পর্যন্ত একটা ফোন করলে না।
-তোকে কে বললো।
-আবার কে মিত্রা। মল্লিকদা বললো।
-আমি কিন্তু একবারও বলিনি আমার সঙ্গে কথা হয়নি।
-তুই বক বক না করে বলনা কি পেলি। দাদা বললো।
-শুনবে।
-মল্লিকদা দাদার পালস বিটটা একবার দেখোতো।
-থাম তুই।
-খুব ফুর্তিতে আছিস মনে হচ্ছে।
-তা একটু আছি।
দাদার ফোন বেজে উঠলো।
-নাও বড়মা।
-হ্যালো।
-আমার দিকে তাকিয়ে কিরে তোর ফোন বন্ধ।
-চার্জ শেষ হয়ে গেছে।
-চার্জে বসাসনি।
-বসাবো।
-তোর চার্জার কোথায়। মল্লিকদা বললো।
-টেবিলে আছে।
-ধর তোর বড়মা।
-তুমি কথা বলো।
-আমার সঙ্গে বললে তো।
-কি হয়েছে বলো।
-কাল সারারাত ঘুমোস নি কেনো।
-এ খবর কে দিলো।
-তুই খবর রাখতে পারিস আমি পারিনা।
-তোমার দম নেই। তোমাকে একজন লাগিয়েছে।
-কে বল।
-চিকনা।
-উরি বাবা তুই জানলি কি করে।
-ওই যে বললাম।
-কখন সই করাবি।
-সব চলে এলে হবে।
-ইসলাম ভাই আশেপাশে আছে।
-হ্যাঁ। তোর ফোন বন্ধ।
-চার্জ নেই।
-ধর।
-বল অনি।
-আমি কি বলবো তুমি লেটেস্ট নিউজ দাও।
-দামিনী বুড়ী আমার কথা শুনলোনা।
-কেনো মেরে দিয়েছে।
-দেয়নি তবে দিয়েছে।
-সে আবার কি কথা।
-বুঝে নে।
-কবিতা কোথায়।
-সেও দামিনীর সঙ্গে।
-তুমি আর কি করবে।
-ঠিক।
-বেঁচে আছে না মরে গেছে।
-রতনের কথা অনুযায়ী আশি ভাগ মৃত।
-রতন কি করছিলো।
-দামিনীর কাছে ও শিশু।
-বুঝলাম।
-আছে কোথায়।
-দামিনীর ছাদে।
-দেখি কাজ সেরে একবার যাবো।
-যা। তোর কথা দামিনী শুনবে।
-ডাক্তার।
-কাল শরীর খারাপ হয়েছিলো। রতন ডাক্তার এনে দেখিয়েছে।
-কি হয়েছিলো।
-প্রেসার হাই।
-টেঁসে গেলে গন্ডগোল।
-টাঁসবেনা।
-ছোট ফিট আছে।
-হ্যাঁ।
-খেজুর রস খেলে।
-খেলাম।
-আজ দাদাদের বিকেলের দিকে পাঠাবো। আমি যদি আজ যাই ভালো না হলে কাল সকালে।
-আজ চলে আয়।
-না হবে না। দাদারা যাবে আমার যাওয়া হবেনা।
-কেনো। আরো কিছু কাজ আছে।
-পারলে আয়।
-দেখছি।
-আমার একটা টেনসন গেলো।
-হ্যাঁ।
-ঠিক আছে। বড়দি খোঁচা মারছে।
-দাও।
-দাদার সঙ্গে কথা বলবে।
-তোকে বলেছি।
-ভাবলাম সেই জন্য তাড়াহুড়ো করছো।
-কি করবি বলনা।
-এইতো ঘ্যানর ঘ্যানর শুরু করলে।
-বলনা।
-সম্পত্তির মালিক হবো। আমার প্রচুর টাকার দরকার।
-বুঝেছি তুই বলবিনা। দে তোর দাদাকে দে।
-হ্যালো…..না আমি পারবোনা……..ও মল্লিককে বলেছে মল্লিক ম্যানেজ করেছে……নিরঞ্জনের আবার কি হবে…….দোষ করলে শাস্তি পেতে হবে……ঠিক আছে।
দাদা মোবাইলটা পকেটে রাখলো।
-মল্লিকদা এবার তোমরটা বাজবে।
-কি করে বুঝলি।
-কথা বলে শান্তি হলোনা।
নিরঞ্জনদা হো হো করে হেসে ফেললো।
-হ্যাঁরে সুরঞ্জনাকে তুই পরাস।
-না।
-ওই যে বললো তোর নোট।
-আমার কলেজের নোট গুলো দিয়েছি।
-তোর সঙ্গে আলাপ হলো কি করে।
-বুঝেছি তোমার খচ খচানিটা মনের মধ্যে রয়ে গেছে।
-মল্লিকদা আর এক রাউন্ড হবে।
-কিরে তোরা এত সকালে?
দেখলাম সন্দীপ দ্বীপায়ন আর সেই ছেলে দুটো ঘরে ঢুকলো।
-তুমি কিছু জানোনা!
-না।
-ও সকালে ফোন করে ঘুম থেকে তুললো। বললো চলে আয়।
-কিরে কখন ফোন করলি।
আমি বাক্স গোছাচ্ছি। সন্দীপ আমার পাশে এসে বসলো। কাজ করতে করতেই দ্বীপায়নকে বললাম।
-দ্বীপায়ন টেবিলটা একটু ঠিক করে আমার ল্যাপটপের সঙ্গে স্ক্যানার আর প্রিন্টারটা রেডি করো। কিরে তোরা ভালো আছিস।
-হ্যাঁ। অনিদা।
-বোস। মল্লিকদা এইবার একটু ব্যবস্থা করো।
-তুই আগে বল।
-বলবো কেনো চোখের সামনে দেখতে পাবে। চাটা নিয়ে এসো তারপর কাজ আরম্ভ করবো।
দাদা গুম হয়ে বসে আছে। আমি দাদার দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে ফেললাম।
-তোমরা পাঁচজনে এই পাঁচটা আর্টিক্যাল লিখবে।
-তারমানে।
-ডকুমেন্ট দিচ্ছি। লিখে নেবে।
-ও হবেনা। তুই লিখে দিবি।
-কেনো।
-আমরা এসবের কি জানি। কালকে দুম করে বললি। ডাক্তার তোমার সার্টিফিকেটটা ভুয়ো।
-যা সত্যি তাই বললাম।
-এতদিন প্র্যাক্টিস করলো কেউ জানতে পারলোনা তুই জেনে ফেললি।
-ডাক্তার আমার কথার উত্তরে কি বললো।
-কি করে বলবো তোর সঙ্গে কথা হচ্ছিলো।
-তোমার বিশ্বাস হয়না।
-অবিশ্বাসও হয়না।
ঘরের সবাই হো হো করে হেসে ফেললো।
খাট থেকে চিপটা তুলে সন্দীপকে বললাম দ্বীপায়নকে এটা দেতো নেটটা কানেকশন করুক।